কলুটোলার মতিলাল শীল ও তাঁর পরিবারবর্গ
চৈতন্যচরণ শীলের পুত্র বাবু মতিলাল শীল ছিলেন বাংলার সুপরিচিত ধনী ও জমিদার। জাতিতে এঁরা সুবর্ণবণিক। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় তাঁর জন্ম হয়। শৈশবে, মাত্ৰ পাঁচ বছর বয়সে, তিনি পিতৃহীন হন। বাংলা এবং ইংরেজিতে তিনি কাজ চালাবার মতো জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। বাবু বীর চাঁদ শীল তাঁর বিবাহ দেন বাবু মোহন চাঁদ দে-র এক কন্যার সঙ্গে।
তিনি ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়ামের মিলিটারি অফিসারদের মালপত্র সরবরাহের কারবার শুরু করেন। কিছু দিন তিনি আবগারী দারোগারূপেও কাজ করেন। ১৮২০তে তিনি স্মিথসন এবং আরও সাত-আটটি ইউরোপীয় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের বেনিয়ানের কাজ শুরু করেন। মেসার্স মূর হিকি অ্যান্ড কোং নাম দিয়ে তিনি প্রথম নীল ব্যবসায়ের একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন এবং ফাটকা ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করেন। এই সবের মাধ্যমে তিনি প্রচুর অর্থ উপায় করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশে কয়েকটি জমিদারী কেনেন; কলকাতা এবং আশেপাশে বেশ কয়েকটি বাড়ি প্রভৃতিও নির্মাণ করেন।
সকলেই জানেন বাবু মতিলাল শীল নিজ ভাগ্য নিজে গড়ে তুলেছিলেন। সীমাহীন দান ও ধর্মকর্মের জন্য তিনি সকলেরই সুপরিচিত ছিলেন। ১৮৪১-এ তিনি বেলঘরিয়ায় একটি ভিক্ষুক নিবাস স্থাপন করেন; এটি এখনও চালু আছে। ‘কলকাতা ফিভার হাসপাতাল’ নির্মাণের জন্য বিস্তৃত একখন্ড জমি তিনি সরকারকে দান করেন; এই জন্য তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে একটি ওয়ার্ড তাঁর নামে উৎসর্গ করা হয়; ওয়ার্ডটির নামকরণ করা হয় ‘মতিলাল শীলস্ ওয়ার্ড’। বিদ্যোৎসাহী মতিলাল নিজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন; এবং এর পরিচালনার জন্য ‘জেসুইট্’ মিশনারীদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন; এই কলেজটি এখনও শীলস্ কলেজ নামে পরিচিত। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রের বিবাহের সময় তিনি দেওয়ানা অপরাধে অপরাধী কয়েদীদের কারামুক্ত করান। তিনি নিষ্ঠাবান হিন্দু ছিলেন। অপরপক্ষে, সঙ্গীত, এঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্যবিদ্যা তাঁর জ্ঞান ছিল।
১৮৫৪-র ২০ মে বাবু মতিলাল পরলোক গমন করেন। তাঁর মৃত্যুকালে পাঁচ পুত্র হীরালাল, চুণিলাল, পান্নালাল, গোবিন্দলাল ও কানাইলাল বর্তমান ছিলেন। কয়েক বছর পূর্বে প্রথম তিনজন পরলোক গমন করেন। মতিলালের মধ্যম পুত্র চুণিলাল ফিভার হাসপাতালকে ৫০,০০০ টাকা দান করেন।
ধর্মতলার নতুন পৌরবাজারটি এই পরিবারেরই সম্পত্তি ছিল। মানী এই পরিবারের এখনও কলকাতা ও শহরতলীতে বিস্তৃত ভূসম্পত্তি আছে।