1 of 2

কলকাতার রাস্তার নামাবলী

কলকাতার রাস্তার নামাবলী 

কলকাতায় মোট ২১৪২ টা বড় রাস্তা ও গলি আছে। অধিকাংশ রাস্তার ইতিহাসই আমাদের জানা ছিল না। এ সম্বন্ধে বিশেষ অনুশীলন করে আমি ১৯৮১ খ্রীষ্টাব্দে আমার ‘কলকাতা : পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস’ (জেনারেল প্রিনটারস, ১৯৮১) গ্রন্থতে সন্নিবেশিত করি। সেই গ্রন্থে রাস্তাগুলিকে আমি দশ ভাগে ভাগ করেছি। এ দশটা ভাগ হচ্ছে— 

(১) অধিকাংশ রাস্তাই কোন বিশিষ্ট লোকের নামে নামাঙ্কিত, (পরে দেখুন) 

(২) কতকগুলো রাস্তার নাম জাতি বা পদবী বা বৃত্তিবাচক। যথা—আহিরীটোলা স্ট্রীট, আহিরীপুকুর রোড, উড়িয়াপাড়া লেন, কপালিটোলা রোড, কপালিবাগান লেন, কলুটোলা স্ট্রীট, কসাই পাড়া লেন, কাঁসারিপাড়া রোড, কামারডাঙ্গা রোড, কুণ্ডু লেন, কুমারটুলি স্ট্রীট, কুমারপাড়া লেন, খালাসীতলা রোড, গোঁসাই লেন, গোপ লেন, গোয়াবাগান লেন, গোয়ালটুলি লেন, জেলিয়াপাড়া লেন, তাঁতিবাগান রোড, দর্জিপাড়া লেন, নাথের বাগান স্ট্রীট, পটুয়াটোলা লেন, পার্শিবাগান লেন, প্রামাণিক ঘাট রোড, বেদিয়াডাঙ্গা রোড, বেনিয়াটোলা স্ট্রীট, বেনিয়াপুকুর রোড, বেপারীপাড়া লেন, ব্রাহ্মণপাড়া লেন, মেছুয়াবাজার লেন, যোগীপাড়া মেন রোড, শাঁখারীটোলা স্ট্রীট, শেঠপুকুর রোড, শেঠবাগান লেন, সৎচাষীপাড়া রোড, সাঁতরাপাড়া লেন, সিকদারপাড়া লেন, সিকদার বাগান স্ট্রট, স্যাকরাপাড়া লেন, হালদার লেন, হালদার বাগান লেন ও ছুতোরপাড়া লেন ইত্যাদি। 

(৩) কতকগুলি রাস্তা উদ্যান বা ফলফুলের নাম বা কোন আঞ্চলিক বড় বৃক্ষের নাম বহন করছে—যথা ইডেন গার্ডেন রোড, একডালিয়া রোড, কলাবাগান লেন, কেয়াতলা রোড, ক্যাসুরিনা অ্যাভেন্যু, চাঁপাতলা লেন, ঝাউতলা রোড, ডালিমতলা লেন, ইণ্টালী রোড, দেওদার স্ট্রীট, নারিকেলডাঙ্গা মেন রোড, নিউ কাশিয়াবাগান লেন, নিমতলা ঘাট স্ট্রীট, পানবাগান লেন, পাম অ্যাভেন্যু, ফার্ণ রোড, ফুলবাগান রোড, বকুলতলা রোড, বকুলতলা লেন, বাঁশতলা গলি, বাগবাজার স্ট্রীট, বালিগঞ্জ গার্ডেন, তালতলা স্ট্রীট, বেলগাছিয়া রোড, ম্যাণ্ডেভিনা গার্ডেন, শীলস্ গার্ডেন লেন, সবজিবাগান লেন, আমড়াতলা লেন, মথুর সেন গার্ডেন লেন, সিংহিবাগান লেন, মোহনবাগান লেন, নন্দনবাগান লেন, হোগলকুড়িয়া, সিমুলিয়া ইত্যাদি। 

(৪) কতকগুলি রাস্তার সঙ্গে ঠাকুরদেবতার বা সাধুসন্ত বা দেবায়তনের নাম সংশিষ্ট। যথা—ওলাইচণ্ডী রোড, কারবালা ট্যাঙ্ক লেন, কালী টেম্পল লেন, কালীঘাট রোড, গুরু নানক সরণী, ঘোড়বিবি লেন, গৌরাঙ্গ মন্দিররোড, গ্রীকচার্চ রো, ক্যাথিড্রাল রোড, চণ্ডীতলা লেন, চৌরঙ্গী রোড, চ্যাপেল রোড, জগন্নাথ টেম্পল রোড, ধর্মতলা স্ট্রীট, পঞ্চাননতলা রোড, পাশিচার্চ স্ট্রীট, বদ্রিদাস টেম্পল স্ট্রীট, বুদ্ধিষ্ট টেম্পল লেন, মদনমোহন তলা স্ট্রীট, মনসাতলা রো, শীতলা লেন, ষষ্টিতলা রোড, সর্বমঙ্গলা লেন, চিৎপুর রোড, সিদ্ধেশ্বরী রোড, হনুমানজী লেন, হরিসভা স্ট্রীট, ব্রাহ্মসমাজ রোড ইত্যাদি। 

(৫) কতকগুলি রাস্তার নাম মিস্ত্রী, ওস্তাগর, খানসামা, মুদি, ধোপানি প্রভৃতির নাম থেকে উদ্ভুত। যেমন আসগর মিস্ত্রী লেন, গুলু ওস্তাগর লেন, চমরু খানসামা লেন, ছকু খানসামা লেন, ছিদাম মুদী লেন, রানীমুদির গলি, পাঁচি ধোপানীর গলি, বুদ্ধু ওস্তাগর লেন, মিস্ত্রীপাড়া লেন, রহিম ওস্তাগর রোড, রামহরি মিস্ত্রীর লেন ইত্যাদি। 

(৬) কতকগুলি রাস্তা ও জায়গার নামকরণ করা হয়েছে পন্যদ্রব্য অনুযায়ী। যথা— কটন স্ট্রীট, তুলাপটি, কাঠগোলা লেন, দইহাটা স্ট্রীট, খ্যাংড়াপটি, সিন্দুরিয়াপটি, গরাণহাটা স্ট্রীট, চাউলপটি রোড, দরমাহাটা স্ট্রীট, মীনাপাড়া রোড, সুরতীবাগান স্ট্রীট, মুরগীহাটা ও চিংড়িহাটা লেন। 

(৭) কতকগুলি রাস্তা ও জায়গা এককালের পুকুরের নাম বহন করে, যেমন কাঁটাপুকুর লেন, চুনাপুকুর লেন, ঝামাপুকুর লেন, তনুপুকুর রোড, তালপুকুর রোড, নলপুকুর লেন, পদ্মপুকুর রোড, শ্যামপুকুর স্ট্রীট, জোড়াপুকুর লেন, হেদুয়া, গোলদিঘি ও লালদিঘি। 

(৮) কতকগুলি রাস্তার একটু অদ্ভুত ধরনের নাম আছে, যেমন চোরবাগান লেন, হাতিবাগান রোড, হাতিবাগান লেন ইত্যাদি। 

(৯) ছ’টি রাস্তার নাম সাংস্কৃতির বিশিষ্টতা বহন করছে। বইয়ের নামে দু’টো রাস্তা আছে, যথা—বিশ্বকোষ লেন ও স্বর্ণলতা স্ট্রীট। আর চারটা রাস্তা হচ্ছে লাইব্রেরী রোড, সাহিত্য পরিষদ স্ট্রীট ও ন্যাশনাল লাইব্রেরী রোড, বয়েজ ওন লাইব্রেরী রো। 

(১০) আনেক রাস্তার নামের উৎপত্তির খেই আমরা হরিয়ে ফেলেছি, যেমন গরিয়া, গরচা, গোবরা, তিলজলা, ঢাকুরিয়া, শিয়ালদহ, তপসিয়া, ট্যাংরা, চেতলা, নৈনান ও সিঁথি। এগুলির উৎপত্তি সম্বন্ধে অনেক কলকাতা বিশারদ অনেক আজগুবি গল্প ফেঁদেছেন, কিন্তু সে সবের কোন ভিত্তি নেই। 

এবার কতকগুলো রাস্তা সম্বন্ধে বলব। 

(১) অকটারলনী রোড—রানী রাসমনি অ্যাভেন্যু দ্রষ্টব্য। 

(২) অরবিন্দ সরণী— প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা, দার্শনিক যোগী ও পণ্ডিচেরী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ ঘোষের (১৮৭২-১৯৫০) নামে চিহ্নিত। রাস্তাটি পুরাতন গ্রে স্ট্রীটের (দ্রঃ) পরিবর্তিত নাম। এর বর্দ্ধিত অংশ এখন গ্রে স্ট্রীট এক্সটেনশন নামে পরিচিত। উত্তর কলকাতায় অবস্থিত। 

(৩) অশ্বিনী দত্ত রোড—দক্ষিণ কলকাতার এই রাস্তাটি প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ্ ও রাজনৈতিক নেতা অশ্বিনী কুমার দত্তের (১৮৫৬-১৯২৬) নামে চিহ্নিত। দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত রাস্তাটা ৭৪ নং মহানির্বাণ রোড থেকে বেরিয়েছে। 

(৪) আচার্য জগদীশচন্দ্র রোড—বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ ও জীববিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্ৰ বসুর ( ১৮৫৯-১৯৩৭) নামে চিহ্নিত। পুরাতন লোয়ার সারকুলার রোডের পরিবর্তিত নাম। বৌবাজারের মোড় থেকে শুরু হয়ে ৫৮ নং চৌরঙ্গী রোডে গিয়ে শেষ হয়েছে।

আবদুল হামিদ স্ট্রীট। পুরাতন ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান স্ট্রীটের পরিবর্তিত নাম। ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান স্ট্রীট দেখুন। 

আমহার্স্ট স্ট্রীট—বর্তমান নাম রামমোহন সরণী (দ্রঃ)। ১৬৭ নং বিপিন বিহারী গাঙ্গ লী স্ট্রীট থেকে বেরিয়ে উত্তর দিকে মানিকতলা পর্যন্ত গিয়েছে। ১৮২৮ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ রাস্তাটি নির্মিত হয় ও তৎকালীন বড়লাট লর্ড আমহার্স্টের (১৮২৩-১৮২৮) নামে অভিহিত হয়। 

আরকুহার্ট স্কোয়ার—হেদুয়ার পূর্বদিকের রাস্তা। পুরাতন নাম কর্নওয়ালিস স্কোয়ার। আরকুহার্ট স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। 

আশুতোষ মুখার্জি রোড—পুরাতন রসা রোডের এক অংশের নাম। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৮৬৪-১৯২৪) প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ভবানীপুরে অবস্থিত। 

ইলিয়ট রোড—জন ইলিয়ট সেকালের কলকাতা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট এবং পুলিশ ও কনজারভেনসীর বড়কর্তা ছিলেন। আগে এই রাস্তার নাম ছিল ‘আহম্মদ জমাদারের রাস্তা।’ 

উড স্ট্রীট—হেনরী উড ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর একজন পদস্থ কর্মচারী ছিলেন। এই রাস্তারই এক বাড়িতে ‘হিন্দু স্টুয়ার্ট’ (কনেল স্টুয়ার্ট) বাস করতেন। বাঙলার ছোটলাটও কিছুকাল ওই বাড়িতে বাস করতেন। ২২ নম্বর পার্ক স্ট্রীট থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

ওলড্ কোর্ট হাউস স্ট্রীট—পুরাতন আদালতের (এখন যেখানে সেণ্ট এ .জ গির্জা) সামনের রাস্তা বলে একে ওলড্ কোর্ট হাউস স্ট্রীট বলা হয়। ১৭৮১ খ্রীষ্টাব্দে এই রাস্তাটির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। রাজভবনের পূর্বদিক থেকে বেরিয়ে রাস্তাটা রাইটার্স বিল্ডিং- এর সামনে এসে শেষ হয়েছে। 

ওলড্ পোষ্ট অফিস স্ট্রীট—বর্তমান হাইকোর্টের কাছে সেকালের বড় ডাকঘর ছিল আগে এখানে অনেক বড় বড় লোকের বাসভবন ছিল। ১৭৮৪ খ্রীষ্টাব্দে বর্তমান অধিকৃত স্থানে নূতন কোর্ট হাউস (সুপ্রিম কোর্ট) নির্মিত হয়। তারপর থেকে এটা এটর্নীপাড়া হয়। ১৮৬২ থেকে ১৮৭২ সময়ে বর্তমান হাইকোর্ট নির্মিত হয়। বর্তমান হাইকোর্টের পশ্চিমাংশেই সুপ্রিম কোর্ট ছিল। ৫ নং কিরণশঙ্কর রায় রোড থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

ওলড্ মেয়রস্ কোর্ট—শোভাবাজার রাজবাটির পিছনের রাস্তা। নবকৃষ্ণ দেবের আমলে শোভাবাজার রাজবাটিতে যে জাতিমালা কাছারী ছিল, এ তার স্মৃতি বহন করছে। ৮২ নং যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেন্যু থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

কয়লাঘাট স্ট্রীট—কয়লার সঙ্গে কোন সম্বন্ধ নেই। এটা কেল্লার ঘাটে যাবার রাস্তা ছিল। তা থেকেই বিকৃত উচ্চারণে বর্তমান নামকরণ হয়েছে। ১৮নং স্ট্র্যাণ্ড রোড থেকে বেরিয়ে রাস্তাটা বি-বা-দী বাগের সামনে এসে শেষ হয়েছে। 

ওয়েস্টন স্ট্রীট—চার্লস ওয়েস্টনের নামে এই গলির নামকরণ হয়েছিল। ওয়েস্টন কলকাতার একজন নামজাদা ব্যক্তি ছিলেন, এবং নন্দকুমারের মামলায় একজন জুরি ছিলেন। তিনি তাঁর দানের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। ৭২ নম্বর বেন্টিঙ্ক স্ট্রীট থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

এণ্টণী বাগান লেন—ইংরেজরা আসবার আগে এণ্টণী ছিলেন একজন বড় লবণ ব্যবসায়ী। পরে তিনি সাবর্ণ চৌধুরীদের নায়েব ছিলেন। এখানে এণ্টনী সাহেবের বাসভবন, বাগান ও গদি ছিল। এন্টনী পরে কাঁচরাপাড়ায় বাস করতেন। ৬৩ নং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড থেকে বেরিয়েছে। 

এসপ্ল্যানেড রো—বর্তমান রাজভবন নির্মিত (১৮০৩) হবার পূর্বে এই রাস্তাটি ধর্মতলার মোড় থেকে বরাবর চাঁদপাল ঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। জনপ্রবাদ এই রাস্তার ওপর ওয়ারেন হেস্টিংস-এর বাসভবন ও কাছারী ছিল। ব্যারনেস ইম্পফকে বিয়ে করবার পর তিনি হেস্টিংস স্ট্রীটের বাড়িতে উঠে যান। তাঁর এই হেস্টিংস স্ট্রীটের বাড়িতেই পরে বার্ন কোম্পানির অফিস ছিল। ১৭ নং গভর্নমেন্ট প্লেস ইষ্ট থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট—বিধান সরণী (দ্রঃ) পূর্ব নাম। বড়লাট লর্ড কর্ণওয়ালিসের নামে অভিহিত এই রাস্তাটি কলকাতার লটারী কমিটি (১৮২০-৪০) কর্তৃক নির্মিত হয়। আগে শহরের কেন্দ্রস্থলে এটাই সবচেয়ে বড় রাস্তা ছিল। 

কাউনসিল হাউস স্ট্রীট—আগে (১৭৫৮ খ্রীষ্টাব্দ থেকে) এখানে একটি কাউনসিল হাউস বা মন্ত্রণাগৃহ ছিল। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দে সে বাড়িটা ভেঙে ফেলা হয়। ১নং হেয়ার স্ট্রীট থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

কাজি নজরুল ইসলাম অ্যাভেন্যু—কলকাতার পূর্বপ্রান্তে ভি. আই. পি. রোডের নাম। ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজি নজরুল ইসলামের (১৮৯৮-১৯৭৬) নামে রাস্তাটি নামাঙ্কিত। 

কালীচরণ ঘোষ রোড—কলিকাতা করপোরেশনের এটাই উত্তরতম রাস্তা। এখানেই করপোরেশনের সীমানা শেষ। ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড থেকে বেরিয়ে রাস্তাটি সর্পিলগতিতে দমদম রেল স্টেশনের সিঁড়িতে গিয়ে শেষ হয়েছে। 

কালীঘাট রোড—২-বি শ্যামাচরণ মুখার্জি রোড থেকে বেরিয়ে কালীঘাট মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়েছে। ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট কর্তৃক রাস্তাটি বর্তমান শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে। আগেকার Road to colligot থেকে রাস্তাটি স্বতন্ত্র। 

কাশীনাথ দত্ত রোড—ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড থেকে বেরিয়ে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে বরানগর বাজার পর্যন্ত গিয়েছে। পূর্ব দিকে কালীচরণ ঘোষ রোডের ন্যায় পশ্চিম দিকে রাস্তাটি কলিকাতা করপোরেশনের উত্তরতম সীমানা। 

কিড স্ট্রীট—বর্তমান নাম মহম্মদ ইশাক রোড(দ্রঃ)। বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা লেফটানেন্ট কর্ণেল রবার্ট কিডের নামে এর নামকরণ হয়েছিল। এঁর ছেলে জনস কিড ১৮০৭ খ্রীষ্টাব্দে খিদিরপুরে এক ডক্ প্রতিষ্ঠা করেন। কিড সাহেবের নাম থেকেই ‘কিডারপুর’ বা খিদিরপুর হয়। ৩০ নং জহরলাল নেহেরু রোড থেকে রাস্তাটি বেরিয়েছে। 

কিরণশঙ্কর রায় রোড—পূর্ব নাম হেস্টিংস স্ট্রীট(দ্রঃ)। রাজনীতিজ্ঞ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (বিধান চন্দ্র রায়ের আমলে) কিরণশঙ্কর রায়ের (১৮৯১-১৯৪৯) নামে পরিবর্তিত। ৫ নং স্ট্র্যাণ্ড রোড থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

কৃষ্ণরাম বসু স্ট্রীট—কৃষ্ণরাম পলাশী যুদ্ধের আমলের লোক। লবণের ব্যবসায়ে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেন। পরে তিনি হুগলির দেওয়ান হন। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় কৃষ্ণরাম বসু লাখ টাকার চাল বিতরণ করেন। রাস্তাটি শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর পিছনে 

ক্যানিং স্ট্রীট—বর্তমান বিপ্লবী রাসবিহারী স্ট্রীট(দ্রঃ)। ক্যানিং স্ট্রীটের পুরাতন নাম মুরগীহাটা ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে রাস্তাটি তৈরী হয় ও বড়লাট লর্ড ক্যানিং-এর নামে নামাঙ্কিত হয়। 

ক্যামাক স্ট্রীট—উইলিয়াম ক্যামাক, লর্ড কর্ণওয়ালিস ও লর্ড ওয়েলেসলীর আমলের একজন সিনিয়র মার্চেন্ট ছিলেন। এই রাস্তার আশেপাশে তাঁর বহু সম্পত্তি ছিল। ১৭৮৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ঢাকা ও ত্রিপুরা জেলার জজ নিযুক্ত হন। আগে এই রাস্তার নাম ছিল ‘ডানকান বস্তিকা রাস্তা’। 

ক্রস স্ট্রীট—বর্তমান নাম যমুনালাল বাজার স্ট্রীট (দ্রঃ)। নয়নচাঁদ মল্লিক বড়বাজারে একটা পাকা রাস্তা তৈরি করে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দান করেন। সেটাই ক্রস স্ট্রীট। 

ক্লাইভ স্ট্রীট–বর্তমান নাম নেতাজী সুভাষ রোড (দ্রঃ)। পুরাতন কেল্লা থেকে বড়বাজারে শেঠদের বাড়ি যাবার রাস্তা। সেটাই বিস্তৃত করে ক্লাইভ স্ট্রীট হয়। (লর্ড স্লাইভের নামে অভিহিত)। বর্তমান শতাব্দীর চল্লিশের দশকে সেই নাম পরিবর্তিত করে নেতাজী সুভাষ রোড রাখা হয়। এটাই ইংরেজ আমলে কলকাতার ব্যবসাপাড়া ছিল। এখনও অংশত তাই। 

গরিয়াহাট রোড—১৯নং আশুতোষ চৌধুরী অ্যাভেন্যু থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। ঢাকুরিয়া ব্রীজ থেকে রাস্তাটার নাম গরিয়াহাট রোড সাউথ। 

আশুতোষ চৌধুরীর অ্যাভেন্যু–১/১ সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেন্যু থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। (পরে দেখুন) 

গান ফাউণ্ডারী রোড—বর্তমান নাম খগেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী রোড। ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের চিড়িয়ামোড় থেকে রাস্তাটা পশ্চিম দিকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত চলে গিয়েছে। এই রাস্তার ওপর কাশীপুর গান অ্যাণ্ড শেল ফ্যাকটরী ও সর্বমঙ্গলা এবং চিত্তেশ্বরী দেবীর মন্দির। চিড়িয়ামোড় থেকে পূব দিকের রাস্তাটার নাম দমদম রোড 

গিরিশ অ্যাভেন্যু—১১৪নং যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেন্যু (দ্রঃ) থেকে রাস্তাটা আরম্ভ। রাস্তাটি চিত্তরঞ্জন অ্যাভেন্যু ও যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেন্যুর বিস্তৃতি। অনন্য সাধারণ অভিনেতা ও নাট্যকার এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের একান্ত শিষ্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের (১৮৪৬- ১৯১২) নামে রাস্তাটি অভিহিত। 

গ্রান্টস্ লেন—কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী চার্লস গ্রাণ্টের নামে এর নামকরণ। ১৭৮৪ খ্রীষ্টাব্দের ম্যাপে দেখতে পাওয়া যায় যে তখন মাত্র কয়েক ঘর ইংরেজ এই রাস্তার ধারে বাস করত। ৮২নং বেন্টিঙ্ক স্ট্রীট থেকে রাস্তাটি বেরিয়েছে। 

গ্রে স্ট্রীট—বর্তমান নাম অরবিন্দ সরণী। ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে রাস্তাটি তৈরি হয়। গ্রে সাহেব তখন বাঙলার ছোটলাট ছিলেন। 

চার্ণক প্লেস—জি: পি. ও.-র সামনে পূর্বদিকের রাস্তা। 

চিৎপুর রোড–বর্তমান নাম রবীন্দ্র সরণী (দ্রঃ)। এটা অতি পুরানো কালের পথ। মুঘল বাদশাহদের আমল থেকেই রাস্তাটির অস্তিত্ব। তখন এটা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে অপ্রশস্ত বন্যপথ ছিল। এই রাস্তা দিয়ে কাপালিক ও শান্ত সন্ন্যাসীরা চিত্তেশ্বরী দেবীর কাছে পূজা দিয়ে কালীঘাটে যেতেন। ইংরেজ আমলে চিৎপুর রোড প্রশস্ত ও সুগম করা হয়েছিল। কলকাতার রাজপথে জল দেওয়া এই চিৎপুর রোডেই শুরু করা হয় ১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দ থেকে। ১৯৬৩ খ্রীষ্টাব্দের ৩ মে তারিখ থেকে রবীন্দ্র সরণী নামে অভিহিত। 

চিত্তরঞ্জন অ্যাভেন্যু—১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট গঠিত হবার পর এই রাস্তাটি তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় এটা বৌবাজার স্ট্রীট পর্যন্ত আসে। তখন বাঙলার প্রথম ছোটলাট স্যার ফ্রেডেরিক হ্যালিডের নামে (এর পুরাতন নাম অনুযায়ী) হ্যালিডে স্ট্রীটই ছিল। পরে এটা বিডন স্ট্রীট পর্যন্ত এলে এর নাম রাখা হয় সেন্ট্রাল অ্যাভেন্যু। পরে ১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ মে থেকে ওই নাম পরিবর্তন করে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নামে চিত্তরঞ্জন অ্যাভেন্যু রাখা হয়। শ্যামবাজার ভূপেন বসু অ্যাভেন্যুর মোড় থেকে উত্তর অংশের নাম ‘যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেন্যু’ ও তার উত্তর অংশের নাম ‘গিরিশ অ্যাভেন্যু’। 

চোরবাগান—মুক্তারামবাবু স্ট্রীট (দ্রঃ)। 

চৌরঙ্গী প্লেস—১৮নং জহরলাল নেহেরু রোড থেকে বেরিয়েছে। 

চৌরঙ্গী রোড—৬০ নং জহরলাল নেহেরু রোড থেকে বেরিয়েছে। 

চৌরঙ্গী স্কোয়ার—‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকা বিলিডিং-এর সামনের রাস্তা। স্টেটসম্যান’ পত্রিকার পাশের রাস্তার নাম ‘চৌরঙ্গী অ্যাপ্রোচ’। 

চৌরঙ্গী লেন ২ নং সদর স্ট্রীট থেকে বেরিয়েছে। 

জহরলাল নেহেরু রোড—আগের নাম চৌরঙ্গী রোড। চৌরঙ্গী রোডই ইংরেজদের নির্মিত কলকাতার প্রথম রাস্তা যেটা ‘রোড’ অ্যাখ্যা পায়। ১৭৮৫ খ্রীষ্টাব্দের উঢ সাহেবের ম্যাপে ধর্মতলা থেকে পার্ক স্ট্রীট পর্যন্ত ‘চৌরঙ্গী রোড’ বলে দেখানো হয়েছে। ওর দক্ষিণের অঞ্চলকে চৌরঙ্গী গ্রাম বলা হত। ১৭৯৪ খ্রীষ্টাব্দের আপজনের ম্যাপে ওই অঞ্চলকে ‘ডিহি বিরজি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা প্রয়োজন যে ১৭৬৭ খ্রীষ্টাব্দ থেকেই চৌরঙ্গীর জঙ্গল কাটানো শুরু হয়েছিল। 

জানবাজার রোড—সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি (দ্রঃ) রোডের পুরাতন নাম। আগে সমগ্ৰ করপোরেশন স্ট্রীট (পরে সুরেন্দ্র ব্যানার্জি রোড দ্রঃ) জানবাজার রোড নামে পরিচিত ছিল। জানবাজার ‘জান বাজার’ (John’s Bazar) শব্দের অপভ্রংশ। জন নামে এক সাহেব এখানে একটা বাজার স্থাপন করেছিলেন। 

জেলিয়াপাড়া লেন—২নং হিদারাম ব্যানার্জি লেন থেকে বেরিয়েছে। কলকাতার প্রাচীন জেলিয়াদের বসতি। এক সময় বছরের শেষ দিনে ‘জেলিয়াপাড়ার সঙ’ প্রসিদ্ধ ছিল। 

ডিঙ্গাভাঙ্গা লেন—৩৯ ও ৪০ নং লেনিন সরণীর মাধ্যের গলি। এই বইয়ে ‘কলকাতার প্রাচীন খাল’ অধ্যায় দেখুন। 

ডেকার্স লেন——কলকাতার কালেকটর (১৭৭২) পি. এম. ডেকার্স সাহেবের নামে এটার নামকরণ হয়। ১নং ওয়াটারলু স্ট্রীট থেকে গলিটা বেরিয়েছে। এই ডেকার্স লেনেই এক সময় বাস করত একটি সুন্দরী মেয়ে যে শাড়ি পরত ও দিদিমার সঙ্গে কালীমন্দিরে যেত। পরে আত্মগোপন করে সে হলিউডে পালিয়ে গিয়ে হয়েছিল প্রখ্যাতা অভিনেত্রী মারল আবেরন। 

ডোমতলা স্ট্রীট—১৪ ও ১৫ রাধাবাজার ষ্ট্রীটের মধ্যের গলি। 

তিলজলা রোড—৮নং রামেশ্বর সাউ রোড (হাতিবাগান, এন্টালী) থেকে বেরিয়েছে। 

থিয়েটার রোড—বর্তমান নাম শেকস্পীয়ার সরণী (দ্রঃ)। ৪৬ নং চৌরঙ্গী রোড থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। চৌরঙ্গী ও থিয়েটার রোডের মিলনস্থলে ১৮২৩ থেকে ১৮৩৯ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত একটা থিয়েটার ছিল। সেজন্য এর নাম হয়েছিল থিয়েটার রোড। ১৮৩৯ খ্রীষ্টাব্দের ৩১ মে তারিখে আগুন লেগে থিয়েটার বাড়িটা ভস্মীভূত হয়ে যায়। কলিকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত জজ (১৮৬৬-১৮৭৭) মার্কবী সাহেব ওই জায়গায় নির্মিত এক বাড়িতে বাস করতেন। 

দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রীট—মহারাজ যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের বৃদ্ধপ্রপিতামহ দর্পনারায়ণ ঠাকুর ফরাসী গভর্ণমেণ্টের দেওয়ানী করে বহু পয়সা উপার্জন করেছিলেন। রাস্তাটি পাথুরিয়াঘাট অঞ্চলে অবস্থিত। 

দিল্লীপটি—ক্যানিং স্ট্রীটের (বিপ্লবী রাসবিহারী স্ট্রীট ) সামনে কলুটোলার (বর্তমান নাম মৌলানা সউকত আলি স্ট্রীট) শেষাংশ। 

ডাঃ দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লেন—দুর্গাচরণ সেকালের নামজাদা ডাক্তার ও স্বনামধন্য সুরোন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা। রাস্তাটি তালতলা অঞ্চলে অবস্থিত। 

দমদম রোড—ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের চিড়িয়ামোড় হতে রাস্তাটি পূব দিকে নাগের বাজার পর্যন্ত চলে গিয়েছে। 

দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রীট—দুর্গাচরণ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের সুপ্রসিদ্ধ শিক্ষাব্রতী তারিণীচরণ মিত্রের পিতা। রাস্তাটি দর্জিপাড়ায় অবস্থিত। 

দুর্গাচরণ মুখোপাধ্যায় স্ট্রীট—দেওয়ান দুর্গাচরণ কোম্পানির পার্টনার আফিম এজেন্সীর সর্বেসর্বা ছিলেন। রাস্তাটি বাগবাজারে। 

দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন—দ্বারকানাথ রবীন্দ্রনাথের পিতামহ। প্রথমে শুল্ক, লবণ ও অহিফেন বোর্ডের দেওয়ান ছিলেন। পরে স্বাধীন ব্যবসা করেন। ‘কার টেগোর কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা। রাস্তাটি জোড়াসাঁকোয় অবস্থিত। এই রাস্তারই ৬নং বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যু হয়। 

ধর্মতলা স্ট্রীট–বর্তমান নাম লেনিন সরণী (দ্রঃ)। হর্নেল সাহেবের মতে আগে জানবাজারে বৌদ্ধদের একটি কেন্দ্র ছিল, এবং তা থেকেই ধর্মতলা নাম হয়েছিল।, অন্য মত অনুযায়ী ওই অঞ্চলে ধর্ম ঠাকুরের এক আস্তানা ছিল। অপর মত হচ্ছে এই রাস্তার মোড়ে যে মসজিদ আছে এবং হার্ট ব্রাদারস্-এর যেখানে ঘোড়ার আস্তাবল ছিল, সেখানে আগে একটা মসজিদ ছিল, তা থেকেই এর নাম ধর্মতলা হয়েছে। ধর্মতলায় শীলবাবুদের একটা বাজার ছিল। তাদের দখলের আগে ওখানে মেম্বা পীরের বাজার ছিল। আর ধর্মতলা ও চৌরঙ্গী রোডের মিলনস্থলেও একটা বাজার ছিল। ১৮৮৭ সালে যদুনাথ মল্লিক ওই বাজারটা কিনেছিলেন। চাদনীচকের কাছেও একটা বাজার ছিল। ১৮২১ খ্রীষ্টাব্দের ‘ক্যালকাটা গেজেট-এ দেখা যায় যে তখন ওয়েলিংটন স্কোয়ারের নাম ছিল ‘ধর্মতলা স্কোয়ার’। 

নরদারণ অ্যাভেন্যু—১৭ ও ১৮ নং রাজা মনীন্দ্র রোড থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে ও দমদম রোডে গিয়ে শেষ হয়েছে। 

নিমতলা ঘাট স্ট্রীট—১ নং স্ট্র্যাণ্ড রোড থেকে বেরিয়েছে। এই রাস্তারই ৫৮ নং থেকে নিমতলা লেন বেরিয়েছে। 

নিমু গোস্বামী লেন—আহিরীটোলার গোঁসাই বংশের নিমাইচাঁদ গোস্বামীর নামে অভিহিত। তাঁর চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত রাস সেকালের কলকাতায় এক দর্শনীয় ব্যাপার ছিল। এ থেকেই প্রবাদ হয়েছে— ‘জন্মের মধ্যে কর্ম, চৈত্র মাসে রাস’। রাস্তাটি আহিরীটোলায় অবস্থিত। 

নীলমণি মিত্রের গলি—সিরাজ কর্তৃক কলকাতা লুণ্ঠনের (১৭৫৬) পর ইংরেজরা যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল, তা এদেশীয় লোকদের মধ্যে বণ্টনের জন্য যে কমিশন গঠিত হয়েছিল নীলমণি মিত্র তার সদস্য ছিলেন। 

নেতাজী সুভাষ রোড—আগের নাম ‘ক্লাইভ স্ট্রীট দ্রষ্টব্য। 

পার্ক স্ট্রীট—সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এলিজা ইম্পের এখানে এক সুবৃহৎ বাগান (পার্ক) সহ বাড়ি ছিল। সেজন্যই এর নাম পার্ক স্ট্রীট হয়েছিল। এখানে গভর্ণর ভানসিটার্টেরও বাগানবাড়ি ছিল। ‘পার্ক স্ট্রীট’ নামকরণের পূর্বে এর নাম ছিল ‘বেরিং গ্রাউণ্ড রোড’ কেননা এই রাস্তা দিয়ে সাহেবদের শবাধার কবরখানায় নিয়ে যাওয়া হত। ৩০ সি জহরলাল নেহেরু রোড থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। এই রাস্তায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ অবস্থিত। আগে ওই বাড়িতে Sans Souci” থিয়েটার ছিল। এই থিয়েটারে ১৮৪৩ খ্রীষ্টাব্দের ২ নভেম্বর তারিখে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী মিসেস ইসথার লীচ আগুনে পুড়ে মারা যান পার্ক ষ্ট্রীটের মোড়ে ২ নং বাড়িতে ‘এসিয়াটিক সোসাইটি’ অবস্থিত। 

পার্সিবাগান লেন—৯২ নং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড় থেকে গলিটা বেরিয়েছে। এই গলির মুখে দক্ষিণে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজ ও উত্তরে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ‘বোস ইনষ্টিটিউট’ অবস্থিত। এখন যেখানে সায়েন্স কলেজ নির্মিত হয়েছে আগে ওখানে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমসাময়িক বিখ্যাত বণিক রুস্তমজী কাওয়াসজীর এক সুন্দর বাগানবাড়ি ছিল। তা থেকেই গলিটার নাম পার্সিবাগান লেন হয়েছে। 

প্যারীচরণ সরকার স্ট্রীট—প্যারীচরণ সরকার (১৮২৩-১৮৭৫) হেয়ার স্কুলের হেডমাষ্টার ছিলেন। প্যারীচরণ শিক্ষক হিসাবে শিক্ষাদান ও শিক্ষা সম্বন্ধীয় পুস্তকাদি প্রণয়নেই জীবন শেষ করে গেছেন। তাঁর প্রসিদ্ধ পুস্তক ‘ফার্স্ট বুক অভ রিডিং’ বহুকাল ইংরেজি শিক্ষার প্রথম সোপান ছিল। রাস্তাটি কলেজ স্ট্রীটে হেয়ার স্কুল ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী রাস্তা। 

প্রতাপাদিত্য রোড—দক্ষিণ কলকাতায় ৭০ নং রাসবিহারী অ্যাভেন্যু থেকে বেরিয়েছে। রাজা প্রতাপাদিত্যের নামে রাস্তাটি অভিহিত। 

প্রফুল্ল সরকার স্ট্রীট—পূর্ব নাম সুটারকিন স্ট্রীট। বেলী সাহেবের ম্যাপে রাস্তাটি সুটারকিন লেন’ নামে দেখানো হয়েছে। তখন রাস্তাটি কসাইটোলা থেকে বেরিয়ে চাঁদনী চক লেনে গিয়ে পড়েছিল। এটা ওলন্দাজ শব্দ। এখন রাস্তাটি ৪৩ নং বেন্টিঙ্ক স্ট্রীট থেকে বেরিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভেন্যু অতিক্রম করে চাঁদনী চক পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রফুল্ল সরকার ‘আনন্দবাজর পত্রিকা’র প্রথম সম্পাদক ছিলেন। 

প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড—রাস্তাটি দক্ষিণ কলকাতায় ৭১ নং দেশপ্রাণ শাসমল রোড (টালিগঞ্জ ব্রস্ ব্রেজ হতে নির্গত রাস্তা) থেকে বেরিয়েছে। আনোয়ার শাহ টিপু সুলতানের বংশধর ছিলেন। 

প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রীট—আগে নাম ছিল হারকাটা গলি ও নিমু খানসামা সেন। রাস্তাটি ১৮/১ কলেজ স্ট্রীট থেকে বেরিয়েছে। 

ফৌজদারী বালাখানা—চিৎপুর রোড ও কলুটোলার সংযোগস্থলের সন্নিহিত স্থান। এখানে হুগলির ফৌজদারের কলকাতার বাসভবন (বালাখানা) অবস্থিত ছিল। 

ফ্রি স্কুল স্ট্রীট–বর্তমান নাম মির্জা গালিব স্ট্রীট। ১৭৮০ খ্রীষ্টাব্দের আগে ওখানে ছিল বাঁশের জঙ্গল। ১৭৮৬ খ্রীষ্টাব্দে জায়গাটা পরিষ্কার করে সাহেবদের জন্য অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তবে থেকেই এর নাম ফ্রি স্কুল স্ট্রীট। ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দে এটাকে বাড়িয়ে ধর্মতলা স্ট্রীটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই রাস্তার এক বাড়িতে ইংলণ্ডের সুপ্রসিদ্ধ উপন্যাসকার উইলিয়াম থ্যাকারের জন্ম হয়। তাঁর পিতা রিচমণ্ড থ্যাকারে ২৪ পরগণার কলেকটর ছিলেন। 

ফ্যান্সি লেন—আগে এখানে একটি ফাঁসিমঞ্চ ছিল। তা থেকে এর নাম ফ্যান্সি লেন হয়েছে। এর ওপর দিয়ে প্রাচীন কলকাতার পুরানো খাল লবণ হ্রদ পর্যন্ত গিয়েছিল। গলিটা ৫ নং গভর্নমেন্ট প্লেস উত্তর থেকে বেরিয়েছে। 

বড়বাজার—মনে হয় বড়বাজারের অস্তিত্ব ইংরেজ আমলের আগে থেকেই। কেননা ১৭০২-০৩ খ্রীষ্টাব্দের ইংরেজদের আয়-ব্যয়ের হিসাব বইয়ে একে ‘গ্রেট বাজার’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা বাহুল্য এটা বড়বাজারেরই ইংরেজি ভাষান্তর। প্রাণকৃষ্ণ দত্ত বড়বাজারের উৎপত্তি সম্বন্ধে একটা গালগল্প ফেঁদেছেন। 

বণ্ডেল রোড—২৫ নং আশুতোষ চৌধুরী অ্যাভেন্যু থেকে বেরিয়েছে। 

আশুতোষ চৌধুরী অ্যাভেন্যু—১/১ সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেন্যু থেকে বেরিয়েছে। স্যার আশুতোষ চৌধুরী (১৮৬০-১৯২৪) ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের একজন প্রখ্যাত ব্যারিষ্টার ও বিচারপতি এবং বেঙ্গল ল্যাণ্ডহোলডারস্ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। 

বনমালী সরকারের স্ট্রীট—তিনি প্রথমে পাটনার রেসিডেন্ট-এর দেওয়ান ও পরে কলকাতার ‘ডেপুটি ট্রেডার’ ছিলেন। কুমারটুলিতে তাঁর প্রাসাদতুল্য বাড়ি সেকালের এক দ্রষ্টব্য জিনিষ ছিল। 

বাঁকশাল স্ট্রীট—এই রাস্তার মোড়ে ওলন্দাজদের বাঁকশাল বা ‘টোল’ অফিস ছিল। তা থেকেই এর নামকরণ হয়েছে। 

বাগবাজার স্ট্রীট—যেখানে বাগবাজার সার্বজনীন পূজা হয়, সেখানে সেকালে পেরিন সাহেবের বাগান ছিল। এটা সেকালের ইংরেজদের সখের ভ্রমণের স্থান ছিল। ‘বাগান ‘ শব্দ থেকেই ‘বাগ’ শব্দের উৎপত্তি। প্রাণকৃষ্ণ দত্তের মতবাদ এটা ‘বাগুয়াবাজার’ থেকে উদ্ভূত, ধোপে টেকে না। ১৭৫২ খ্রীষ্টাব্দে হলওয়েল বাগবাজার নামের উল্লেখ করেছেন। ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দে বাগবাজার অঞ্চলে প্রজাবিলি করা হয়। ১৭৫৫ খ্রীষ্টাব্দে কোম্পানি গঙ্গ ার ওপর প্রহরা দেবার জন্য বাগবাজারের সান্দিধ্যে ৩৩৮ টাকা ব্যয়ে এক রক্ষামঞ্চ নির্মাণ করে। এখানে গোরা ও দেশীয় উবয় শ্রেণীরই সৈন্য রাখা হত। ১৭৫৬ খ্রীষ্টাব্দে সিরাজউদ্দৌলা যখন কলকাতা আক্রমণ করে, তখন কোম্পানির সৈন্যরা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে এ জায়গাটাকে রক্ষা করবার চেষ্টা করেছিল। আগে এখানে কোম্পানির বারুদখানাও ছিল। সেজন্য এর সামনের রাস্তাকে ‘ওলড্ পাউডার মিল রোড’ বলা হতো। কিছুকাল আগে পর্যন্ত বাগবাজারের বাজারটি কাঞ্চনপুর এস্টেটের সম্পত্তি ছিল। এখন অবাঙালী ‘মোদী’দের হাতে গিয়েছে। (আগে পেরিন সাহেবের বাগান দেখুন)। 

বারাণসী ঘোষ স্ট্রীট—‘আইন-ই-আকবরীর অনুবাদক গ্লাডউইন সাহেবের দেওয়ান ছিলেন বারানসী ঘোষ। তাঁর খুল্লতাত পুত্র বলরাম ঘোষ চন্দননগরের ফরাসী গভর্ণমেন্টের দেওয়ান ছিল। বলরাম ঘোষের নামেও রাস্তা আছে। বলরামের ছেলে হরিঘোষ। তার নামেই হরি ঘোষের স্ট্রীট। হরি ঘোষ কোম্পানির দেওয়ানি করে বহু পয়সা উপার্জন করেছিলেন। তাঁর আবাসবাটিতে অনাহুতদের অন্নপ্রাপ্তির বিঘ্ন ঘটত না। সেজন্যই প্রবাদ আছে ‘হরি ঘোষের গোয়াল’। 

বিডন স্ট্রীট–বর্তমান নাম স্বামী অভেদানন্দ রোড। বাঙলার ছোটলাট স্যার সিসিল বিডনের নামে অভিহিত। ১৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দে এই নামকরণ হয়। 

বিধান সরণী—কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট দ্রষ্টব্য। প্রখ্যাত চিকিৎসক, রাজনীতিজ্ঞ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের (১৮৮২-১৯৬২) নামে কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীটের নাম পরিবর্তিত করা হয় 

বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রীট—বৌবাজার ষ্ট্রীটের পরিবর্তিত নাম। সেকালে এর নাম ছিল ‘পূর্বদিকের পথ’ (Avenue to the Eastward)। লর্ড কর্ণওয়ালিসের আমলে এর নাম ছিল বৈঠকখানা স্ট্রীট। বৌবাজারের প্রসিদ্ধ বেনিয়ান বিশ্বনাথ মতিলাল তাঁর এক পুত্রবধূকে বৌবাজারের বাজারটি দান করেন। ১৭৮৪ খ্রীষ্টাব্দের ম্যাপে লালবাজার থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত এই রাস্তাটি বৈঠকখানা স্ট্রীট বা বৌবাজার’ বলে চিহ্নিত। বিশ্বনাথ মতিলাল ১৯ শতকের দ্বিতীয় পাদ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। 

বিপ্লবী রাসবিহারী স্ট্রীট—ক্যানিং স্ট্রীট দ্রষ্টব্য। 

বৃন্দাবন পাল লেন—ভূপেন বোস অ্যাভেন্যু থেকে বেরিয়েছে। এই গলির ভিতর বৃন্দাবন পালের বাড়ি। গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, ধর্মদাস সুর প্রমুখ অভিনেতারা এঁর বাড়িতেই প্রথম অভিনয় করতেন। 

বেন্টিঙ্ক ষ্ট্রীট—বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের নামে এই রাস্তার নামকরণ হয়েছে। আগে এর নাম ছিল কসাইটোলা এবং কসাইটোলাতেই শহরের বড় বড় দোকান অবস্থিত ছিল (১৭৮৪-১৭৮৮)। এই রাস্তার ওপর এক সময় অস্থায়ী ‘গভর্ণমেন্ট হাউস অবস্থিত ছিল। 

বৈষ্ণবচরণ শেঠ স্ট্রীট—ইংরেজদের গোড়ার দিকের দালাল জনার্দন শেঠের পুত্র। তিনি বড়বাজারের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন। 

বৌবাজার স্ট্রীট—বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রীট দ্রষ্টব্য। 

ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান স্ট্রীট—প্রাচীন নাম রাণী মুদীর গলি। বর্তমান নাম আবদুল হামিদ স্ট্রীট। গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের উত্তর দিয়ে ওলড কোর্ট হাউস স্ট্রীট থেকে বেন্টিঙ্ক ষ্ট্রীটে গিয়ে পড়েছে। কলকাতার প্রাচীন খালটা এর গা দিয়ে গিয়েছিল। 

ব্র্যাবর্ন রোড-৪৩এ বিপ্লবী রাসবিহারী বোস রোড থেকে বেরিয়েছে। লর্ড ব্র্যাব বাঙলার গভর্নর ছিলেন। ব্যর্থ অস্ত্রোপচারের ফলে কলকাতাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। রাস্তাটির বর্তমান নাম বিপ্লবী ত্রৈলোক্য মহারাজ রোড। 

ভীম ঘোষের লেন—ভীম ঘোষ সেকালের একজন বড়লোক ছিলেন। কিন্তু কৃপণ স্বভারের জন্য তাঁর অপবাদ ছিল। 

ভূপেন বোস অ্যাভেন্যু—ভূপেন বোস (১৮৫৯-১৯২৪) কলকাতার প্রসিদ্ধ অ্যাটর্ণী ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে স্যার সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জির অনুগামী ছিলেন। কিছুকাল বিলাতে ভারত সচিবের সহকারী হিসাবে কাজ করেন। ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ মার্চ তারিখে গান্ধীজি যখন সস্ত্রীক প্রথম কলকাতায় আসেন, তখন এঁর বাড়িতেই (বলরাম ঘোষ স্ট্রীটে অবস্থিত) ছিলেন। মন্টেগু সাহেবের শাসন সংস্কার আইন প্রণয়নে সহায়তা করেছিলেন। পুরানো শ্যাম বাজার স্ট্রীটের খানিকটা অংশ বিস্তৃত করেই রাস্তাটি নির্মিত হয়েছিল। রাস্তাটি শ্যামবাজারের পাঁচমাথা থেকে শুরু হয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভেন্যু ও যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেন্যুতে গিয়ে পড়েছে। 

মটস্ লেন—মট সাহেব প্রাচীন কলকাতার একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী ছিলেন। পরে তিনি পুলিশের বড়কর্তা হিসাবে কাজ করেন। বর্তমান নাম মণিলাল সাহা লেন। 

মতিলাল শীল স্ট্রীট—মতিলাল শীলের (১৭৯২-১৮৫৪) নামে অভিহিত। রাস্তাটি ধর্মতলা অঞ্চলে অবস্থিত। 

মথুর সেনস্ গার্ডেন লেন—মথুর সেন তেজারাতি ও ব্যাঙ্কিং কারবারে বহু পয়সা উপার্জন করেন। লাট সাহেবের বাড়ির ফটকের অনুকরণে তাঁর চারফটকওয়ালা প্রাসাদতুল্য বাড়ি ছিল। 

মদনমোহন বর্মন স্ট্রীট—১৩৬ রবীন্দ্র সরণী থেকে বেরিয়েছে। 

(ডঃ) মহম্মদ ইশাক্ রোড—কিড স্ট্রীট দ্রষ্টব্য। 

মহাত্মা গান্ধী রোড—হ্যারিসন রোডের পরিবর্তিত নাম। ১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দে এর নির্মাণ আরম্ভ হয়ে ১৮৯২ খ্রীষ্টাব্দে শেষ হয়। এই রাস্তা কলকাতার বিখ্যাত ধনী ব্যবসায়ী নয়নচাঁদ মল্লিকের সাত মহল বসতবাড়ি গ্রাস করে। কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান স্যার হেনরি হ্যারিসনের নামে এর নামকরণ হয়। হাওড়া ব্রিজের সামনে স্ট্র্যাণ্ড রোড থেকে শিয়ালদহ ষ্টেশনের সামনে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড পর্যন্ত রাস্তাটি বিস্তৃত। ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দের ৩১ আগষ্ট থেকে এই নূতন নামকরণ হয়। 

মহানির্বাণ রোড—৩৩-এ মনোহরপুকুর রোড থেকে বেরিয়েছে। 

মিডলটন স্ট্রীট—৪২ নং জহরলাল নেহেরু রোড থেকে রাস্তাটি বেরিয়েছে। এই রাস্তার নামকরণ সম্বন্ধে মতভেদ আছে। কেউ বলেন কলকাতার প্রথম বিশপ মিডলটন (১৮১৪-১৮২২), আবার অনেকে বলেন কলকাতার পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেট ও পরে সুন্দবনের কমিশনার (১৭৯২) স্যামুয়েল মিডলটনের নামে রাস্তাটির নামকরণ হয়েছিল। স্যামুয়েল মিডলটনের এই অঞ্চলে বহু জমিজমা ছিল। 

মির্জা গালিব স্ট্রীট—ফ্রি স্কুল স্ট্রীট দেখুন। 

মুক্তারাম বাবুর স্ট্রীট—মুক্তারাম বাবুর পুরা নাম মুক্তারাম দে। ইনি সুপ্রিম কোর্টের দেওয়ান ছিলেন। ১৮৬২ খ্রীষ্টাব্দে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা হলে, তিনি অবসর গ্রহণ করেন। 

এই অঞ্চলের অপর নাম চোরবাগান। 

ডঃ মেঘনাদ সাহা রোড—দক্ষিণ কলকাতার সার্দান অ্যাভেন্যুর পরিবর্তিত নাম।

যমুনালাল বাজার স্ট্রীট—ক্রস স্ট্রীট দেখুন। 

রতন সরকার গার্ডেনস্ লেন—রতন সরকার ইংরেজ ক্যাপটেন ষ্ট্যাফোর্ডের দোভাষী ছিলেন। 

রবীন্দ্র সরণী—চিৎপুর রোড দেখুন। 

রয়েড স্ট্রীট—সুপ্রিম কোর্টের পিউনি জজ স্যার জন রয়েডের নামে এই রাস্তা অভিহিত। ৪২ নং মির্জা গালিব স্ট্রীট থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

রাজা গুরুদাস স্ট্রীট—রাজা গুরুদাস মহারাজ নন্দকুমারের পুত্র। জনপ্রবাদ, বর্তমান বিডন স্কোয়ারের নিকট মহারাজ নন্দকুমারের কলকাতার আবাস ভবন ছিল। আগে এ জায়গাটা চড়কডাঙ্গা নামে পরিচিত ছিল। রাজা গুরুদাস বাঙলার পঞ্চম নবাব নাজির মোবারক উদ্দৌলার দেওয়ান ছিলেন। 

রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীট—শ্যামবাজার আর. জি. কর রোড থেকে বেরিয়ে ২নং ডাক্তার এস. এন. চ্যাটার্জি সরণীতে গিয়ে শেষ হয়েছে। 

রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রীট—৪৮৬ নং রবীন্দ্র সরণী থেকে শুরু হয়ে হাতিবাগান বাজারের অদূরে অরবিন্দ সরণীতে এসে পড়েছে। মহারাজ নবকৃষ্ণ নিজ ব্যয়ে এই রাস্তাটা তৈরি করেছিলেন। 

রাজা বসন্ত রায় রোড—৮৬ নং রাসবিহারী অ্যাভেন্যু থেকে বেরিয়েছে।

রাজা মনীন্দ্র রোড—৬৯ নং ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড থেকে বেরিয়েছে।

রাণী মুদির গলি—ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান স্ট্রীট দেখুন। 

রাণী রাসমণি অ্যাভেন্যু—আগেকার অকটারলনী রোড ও লরেন্স রোডের নূতন নাম। অদূরে জানবাজারে রাণী রাসমণির (১৭৯৩-১৮৬১) বাড়ি। তিনি কলকাতার বিরাট ধনী প্রীতিরাম দাসের (মাড়ের) পুত্র রাজচন্দ্রের বিধবা স্ত্রী এবং দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরের (১৮৫৫) প্রতিষ্ঠাতা। 

রামমোহন সরণী—আমহার্ষ্ট স্ট্রীট দেখুন। 

রাসবিহারী অ্যাভেন্যু—খ্যাতনামা ব্যবহারজীবী স্যার রাসবিহারী ঘোষের (১৮৪৫- ১৯২১) নামে অভিহিত। রাসবিহারী বহু লক্ষ টাকা কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গেছেন। 

রাসেল স্ট্রীট—সেকালের সুপ্রিম কোর্টের জজ স্যার হেনরি রাসেলের (১৮০৬-১৩) নামে এই রাস্তাটির নাম হয়েছে। এই রাস্তার ধারেই রাসেলের বাড়ি ছিল। ৫ নং বাড়িতে বিশপ হেবার শেষের দিকে বাস করতেন। ১২ নং পার্ক স্ট্রীট থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে।

রিপন স্ট্রীট—বড়লাট লর্ড রিপনের নামে এর নামকরণ করা হয়েছিল। ৫৫ এ মির্জা গালিব স্ট্রীট থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। বর্তমান নাম মুজাফফর আহমেদ স্ট্রীট। 

লরেন্স রেঞ্জ —রাণী রাসমণি অ্যাভেন্যু দেখুন। 

নায়নস্ রোড—যেখানে আজ রাইটারস্ বিল্ডিং অবস্থিত ওটা একটা পতিত জমি ছিল। ১৭৭৬ খ্রীষ্টাব্দে টমাস লায়নস্ ওই জমিটা কোম্পানির জুনিয়র কর্মচারীদের বাসগৃহ নির্মাণের জন্য লীজ নেন। টমাস লায়নস্ সেকালের একজন বিখ্যাত স্থপতি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। কোম্পানির কর্মচারীদের বাসস্থান নির্মাণের পর ওখানে তিনি এক সারি বুটিকের মত ঘর তৈরি করেছিলেন। পিছনের রাস্তাটা লায়নস্ রেঞ্জ নামে অভিহিত হয়। এই রাস্তার ওপরই কলিকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ অবস্থিত। 

লারকিনস্ লেন—কোম্পানির অ্যাকাউন্টটেণ্ট-জেনারেল উইলিয়াম লারকিনসের নামে এই গলির নামকরণ। ১৭৮৪ খ্রীষ্টাব্দের উডের ম্যাপে এ গলিটা দেখান আছে। ২০ নং ওলড কোর্ট হাউস থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। 

লিওসে স্ট্রীট—রবার্ট লিওসের (১৭৫৪-১৮৩৬) নামে এই রাস্তা অভিহিত হয়েছিল। তিনি কোম্পানির অধীনে একজন কর্মচারী ছিলেন। ১৭৭৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ঢাকার কালেকটর নিযুক্ত হন। ২২ নং জহরলাল নেহেরু রোড থেকে রাস্তাটা বেরিয়েছে। বর্তমান নাম নেলী সেনগুপ্ত সরণী। 

লেনিন সরণী—ধর্মতলা স্ট্রীট দেখুন। 

শঙ্কর ঘোষ লেন—আরপুলির রামশঙ্কর ঘোষ শঙ্কর ঘোষ’ নামেই সাধারণে পরিচিত ছিলেন। বেনিয়ানের কাজ করে প্রচুর পয়সা করেছিলেন। রাস্তাটার নিকটে অবস্থিত ঠনঠনিয়া কালীবাড়ীর প্রতিষ্ঠাতা। এই রাস্তার মুখেই বিদ্যাসাগর কলেজ অবস্থিত। 

শম্ভুনাথ পণ্ডিত লেন—সর্বপ্রথম রাজা রামমোহন রায়ের পুত্র রমাপ্রসাদ রায় (১৮১৭-১৮৬২) হাইকোর্টের প্রথম বাঙালী জজ নিযুক্ত হন। কিন্তু তার অকালমৃত্যুতে শম্ভুনাথ পণ্ডিত (১৮২০-৬৭) ওই জজিয়াতিটা পান। তিনি কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ ছিলেন। রাস্তাটি ভাবানীপুরে অবস্থিত। 

শশিভূষণ দে স্ট্রীট—১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দে নেবুতলা লেনের নাম শশিভূষণ দে স্ট্রীট করা হয়। শশিভূষণ (১৮৬৮-১৯৫৮) কলিকাতা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ছিলেন। একমাত্র পুত্র মারা যাবার পর তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি নানারূপ জনহিতকর কাজের জন্য পৌরসংস্থার হাতে তুলে দেন। 

যদুলাল মল্লিক রোড—৩৪ নং কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রীট থেকে বেরিয়েছে। যদুলাল মল্লিক পাথুরিয়াঘাটার মল্লিক বংশের লোক। তাঁর নির্ভীক বাগ্মীতার জন্য ইংরেজ সমাজে তিনি কলকাতার ‘ফাইটিং কক’ নামে অখ্যাত ছিলেন। (আগে দেখুন)। 

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড—১৪৪ নং আশুতোষ মুখার্জী রোড থেকে বেরিয়েছে। শ্যামাপ্রসাদ (১৯০১-১৯৫৩) হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধার ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শিল্প ঢও বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন। 

শ্যামবাজার স্ট্রীট—এ নামের উৎপত্তি সম্বন্ধে মতভেদ আছে। পুরানো শ্যামবাজার ষ্ট্রীটের এক অংশ এখন প্রশস্ত করে ভূপেন বোস অ্যাভেন্যু হয়েছে। 

সদর স্ট্রীট—এই রাস্তার ওপর সদর দেওয়ানী আদালত ছিল। ২৬ নং জহরলাল নেহেরু রোড থেকে বেরিয়েছে। এই রাস্তার ১০ নম্বর বাড়িতে বাসকালীন রবীন্দ্রনাথ ‘নির্ঝরের স্বপ্নভগ্ন’ রচনা করেছিলেন। 

সাদার্ন অ্যাভেন্যু—কলকাতার সবচেয়ে চওড়া (১৫০ ফুট) রাস্তা। বর্তমান নাম মেঘনাদ সাহা রোড (দ্রঃ)। 

সাহিত্য পরিষদ রোড-পুরানো নাম হোগলকুরিয়া লেন। 

সুন্দরীমোহন অ্যাভেন্যু—প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ডাক্তার সুন্দরী মোহন দাসের (১৮৫৭-১৯৫০) নামে অভিহিত 

সুরেন্দ্র ব্যানার্জি রোড—আগে নাম ছিল জানবাজার রোড, পরে কর্পোরেশন স্ট্রীট। ১৯২৬ সালের ২৯ আগষ্ট থেকে বর্তমান নাম। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি (১৮৪৮-১৯২৫) প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। 

সুরেশ সরকার রোড—প্রখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। ১৫০ নং আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস রোড থেকে বেরিয়েছে। 

স্ট্র্যাণ্ড রোড—১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দে লটারী কমিটি গঙ্গার ধারে এই রাস্তাটি তৈরি করে। হরিণবাড়ী লেন—এখানে পুরানো জেলখানা ছিল। 

হরিশ মুখার্জি রোড—ইনি একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সমাজসেবক (১৮২৪- ১৮৬১)। ২৪৩ নং আচার্য জগদীশচন্দ্র মুখার্জি রোড থেকে বেরিয়েছে। 

হাজরা রোড—৫১-এ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড থেকে বেরিয়েছে, 

হেয়ার স্ট্রীট—স্বনামধন্য ডেভিড হেয়ারের (১৭৭৫-১৮৪২) নামে অভিহিত হেস্টিংস স্ট্রীট—কিরণ শঙ্কর রায় রোড দেখুন। 

হো চি মিন সরণী—আগে নাম ছিল হ্যারিংটন স্ট্রীট। ৪৪ নং জহরলাল নেহেরু রোড থেকে বেরিয়েছে। 

হ্যারিসন রোড—মাহাত্মা গান্ধী রোড দেখুন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *