কলকাতার বাজার-হাট
ইংরেজরা যখন প্রথম কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করে, তখন কলকাতায় অন্তত দুটো বাজার ছিল। একটা বড়বাজার ও আর একটা সুতানটীর হাট বা হাটখোলার বাজার। এ দুটো বাজারেরই উৎপত্তি ইংরেজদের এখানে আসবার অনেক আগে থেকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর একেবারে সূচনায় ইংরেজদের আয়-ব্যয়ের খাতায় বড়বাজার নামটা ইংরেজিতে ভাষান্তরিত হয়ে ‘গ্রেট বাজার’ নামে উল্লিখিত হয়েছে। ১৭০৬ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতার কালেকটর বেনজামিন বাউচার কলকাতা শহরের একটা জরীপ করিয়েছিলেন। ওই জরীপের প্রতিবেদনে বড়বাজার অঞ্চলটা ‘বাজার কলকাতা’ নামে অভিহিত হয়েছিল। ওর দক্ষিণে ছিল ‘ডিহি কলকাতা’ বা ‘টাউন কলকাতা’, আর উত্তরে সুতানটী গ্রাম। ডিহি কলকাতার দক্ষিণে ছিল গোবিন্দপুর গ্রাম। ১৭০৪ খ্রীষ্টাব্দে গোবিন্দপুর গ্রামেও একটা বাজার স্থাপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া, ১৭০৬ খ্রীষ্টাব্দে বড়বাজার অঞ্চলে একটা ‘নতুন বাজার’ খোলা হয়েছিল। তবে ‘নতুন বাজার’টা ঠিক কোন জায়গায় খোলা হয়েছিল, তার অবস্থান ইংরেজদের খাতায় পরিষ্কারভাবে লেখা নেই।
এরূপ চিন্তা করবার যথেষ্ট কারণ আছে যে বড়বাজারের চেয়ে সুতানটীর বাজার আরও পুরানো। এটা সকলেরই জানা আছে যে সরস্বতী নদী শুকিয়ে যাবার পর সপ্তগ্রামের বণিক সমাজভুক্ত শেঠ-বসাকরা এসেই গোগিন্দপুর গ্রামের পত্তন করেছিল। প্রথমে তাদের উদ্দেশ্য ছিল বেতোরের বাণিজ্যে অংশ গ্রহণ করা। গোবিন্দপুরের পাঁচ মাইল উত্তরে বরানগরের তাঁতিদের দিয়ে তারা কাপড় বয়ন করিয়ে, সেই কাপড় বেচত বেতোরের পোর্তুগীজ বণিকদের। বরানগর, তখন বাপ্তা কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৬৩২ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত শেঠরা বরানগরের তাঁতিদের দিয়ে কাপড় তৈরী করিয়ে নিত। তারপর একদল তাঁতি এনে নিজেরাই গোবিন্দপুরে বর্তমান শহীদ মিনারের কাছে একটা বস্ত্র বয়নের কারখানা স্থাপন করে। গোড়া থেকেই এরা গোবিন্দপুরের এক ক্রোশ উত্তরে হাটতলায় সুতার লুটি কেনাবেচা করত। সেজন্যই ওই জায়গাটার নাম হয় ‘সুতালুটি’, ও হাটতলার নাম ‘হাটখোলা’। প্রতি শনিবার এখানে হাট বসত।
সমসাময়িককালে আর দুটো বাজারের উদ্ভব হয়েছিল। একটা রাধাবাজার ও আর একটা লালবাজার। এ দুটা বাজারের উৎপত্তি সম্বন্ধে যে কিংবদন্তী চালু আছে তা হচ্ছে—শেঠেরা জাঁকজমক করে লালদিঘিতে দোলযাত্রা করত। লাল দিঘির উত্তরে ও দক্ষিণে দুটো দোলমঞ্চ স্থাপন করা হত। দক্ষিণের দোলমঞ্চে স্থাপন করা হত গোবিন্দজীকে। আর উত্তরের দোলমঞ্চে রাধারাণীকে। আবীর বিক্রির জন্য এখানে বসত একটা বাজার। সেই বাজারই পরবর্তীকালে রাধাবাজার নামে খ্যাত হয়েছিল। আর সন্নিকটে শেঠদের কর্তা লালমোহন শেঠ একটা বাজার স্থাপন করেছিল। সেটাই লালবাজার নামে খ্যাত। ১৭৬৮ খ্রীষ্টাব্দে ওই বাজার বর্তমান ছিল। পরে বাজারটা উঠে যায়। এখন শুধু নামটাই আছে।
১৭৫৬-৫৭ খ্রীষ্টাব্দের এক বিবরণী থেকে আমরা জানতে পারি যে তখন সুতানটীর হাট সপ্তাহে দুদিন বসত—প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার। যে সকল পণ্য সুতানটীর বাজারে বিক্রয় হত ও তা থেকে শুল্ক তোলা হত সেগুলি হচ্ছে—(১) কড়ি, (২) সূতা, (৩) ঔষধ বা ভেষজ, (৪) সরষে প্রভৃতির তেল, (৫) লোহালক্কড়, (৬) তেওর (tyer) বা কলাই, (৭) দুধ, (৮) তালের গুড় (৯) মিঠাই, (১০) লোহার জিনিষ, (১১) রূপার জিনিষ, (১২) পান, (১৩) ফলমূল, (১৪) গাছ, (১৫) তাঁতের কাপড়, (১৬) নুন, (১৭) চাউল, (১৮) মাংস, (১৯) ধনে মশলা, (২০) চুন, (২১) তামাক, (২২) জ্বালানি কাঠ, (২৩) খড় বিচালি, (২৪) মাদুর, (২৫) বাঁশ, (২৬) কাঁসার জিনিষ, (২৭) সুপারি, (২৮) শাক-সবজি, (২৯) আখ, (৩০) কলা, (৩১) তেঁতুল, (৩২) মাছ, (৩৩) সিদ্ধ চাউল, (৩৪) হাঁড়িকলসি, (৩৫) কাপড় ও (৩৬) জুতা।
১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় ৩৩টা পুলিশ থানা ছিল। এই সকল থানার নামগুলির মধ্যেও কতকগুলি বাজারে নাম পাওয়া যায়। থানাগুলির নাম হচ্ছে—১। আরমেনিয়ান চার্চ, ২। ওল্ড ফোর্ট, ৩। চাঁদপাল ঘাট, ৪। লালদীঘির দক্ষিণ দিক, ৫। ধর্মতলা, ৬। ওল্ড কোর্ট হাউস, ৭। ডোমতলা, ৮। আমড়াগলি, ৯। পঞ্চাননতলা, ১০। চীনাবাজার, ১১। চাঁদনীচক, ১২। তুরুলবাজার, ১৩। গৌমাপুকুর, ১৪। চড়কডাঙ্গা, ১৫। সিমলাবাজার, ১৬। নুনলঙ্কাবাজার, ১৭। মলঙ্গা, ১৮। পটলডাঙ্গা, ১৯। কুবেরডাঙ্গা, ২০। বৈঠকখানা, ২১। শ্যামপুকুর, ২২। শ্যামবাজার, ২৩। পদ্মপুকুর, ২৪। কুমারটুলী, ২৫। জোড়াসাঁকো, ২৬। মেছুয়াবাজার, ২৭। জানবাজার, ২৮। ডিঙ্গাভাঙ্গা, ২৯। সুতানটী-হাটখোলা, ৩০। দয়েহাটা, ৩১। হাঁসপুকুরিয়া, ৩২। কলিঙ্গা, ৩৩। জোড়াবাগান। এই তালিকা থেকে যে বাজারগুলির নাম আমরা পাই, সেগুলি হচ্ছে—১। চীনাবাজার, ২। চাঁদনীচক, ৩। তুরুলবাজার,
সিমলাবাজার, ৫। নুনলঙ্কাবাজার, ৬। শ্যামবাজার, ৭। মেছুয়াবাজার, ৮। জানবাজার, ৯। সুতানটী- হাটখোলা বাজার ও ১০। দয়েহাটা। লক্ষণীয় এখানে শোভাবাজারের নাম নেই। না থাকাই স্বাভাবিক, কেননা তখন শোভাবাজারের জন্ম হয় নি। তখন ওই অঞ্চলের নাম ছিল রাসপল্লী, শোভাবাজারের জন্ম হয় ১৭৬৬ খ্রীষ্টাব্দে রাজা নবকৃষ্ণদেব ‘মহারাজ বাহাদূর’ উপাধি ও ছ’হাজারী মনসবদারের পদ পাবার পর। সেজন্য ১৭৬৮ খ্রীষ্টাব্দের এক তালিকায় আমরা প্রথম শোভাবাজারের নাম পাই। ওই তালিকায় কলকাতার মোট ১৮টি বাজারের নাম পাই। এই ১৮টি বাজার হচ্ছে (১) হাটখোলার বাজার, (২) সুতানটি বাজার, (৩) বড়বাজার, (৪) রামবাজার, (৫) সিমলাবাজার, (৬) চার্লসবাজার, (৭) বৈঠকখানা, (৮) আরকলি বাজার, (৯) শোভাবাজার, (১০) জানবাজার, (১১) ধর্মতলা বাজার, (১২) কলুটোলা বাজার, (১৩) মেছুয়াবাজার, (১৪) কলিঙ্গ বাজার, (১৫) জননগর বাজার, রাজানগর বাজার, (১৭) লালবাজার ও (১৮) বৌবাজার। বাজারগুলি সবই ইজারা দেওয়া ছিল, এবং ওই তালিকায় ইজারা গ্রহীতাদের নামও দেওয়া আছে। একমাত্র শোভাবাজারের ক্ষেত্রে কোন গ্রহীতার নাম নেই। সেজন্য মনে হয় শোভাবাজার তখন সবেমাত্র হয়েছে, এবং তখনও কোনও গ্রহীতার আবির্ভাব ঘটেনি। আরও এক কথা, ১৭৬০ খ্রীষ্টাব্দের তালিকায় আমরা শ্যামবাজারের নাম পাই। কিন্তু ১৭৬৮ খ্রীষ্টাব্দের তালিকায় এর কোন উল্লেখ নেই। শ্যামবাজারের ক্রমিকতা বর্তমান কাল পর্যন্ত চলে এসেছে। সুতরাং ১৭৬৮ খ্রীষ্টাব্দে এটা লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, এরূপ অনুমান করবার কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। তবে কি এটা ‘রামবাজার’ বা ‘চার্লসবাজার’ এরূপ কোন নামের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন ছিল?
এর পরে আমরা কলকাতার বাজারসমূহের নাম জানতে পারি ১৭৮৪-৮৫ খ্রীষ্টাব্দে লেফটানেন্ট-কর্ণেল মার্ক উডের অঙ্কিত নকসার ভিত্তিতে ১৭৯২ খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম বেইলী কর্তৃক প্রকাশিত কলকাতা শহরের মানচিত্র থেকে। এই মানচিত্র থেকে আমরা কলকাতার যে সকল বাজারের নাম পাই, সেগুলি হচ্ছে (১) শ্যামবাজার, (২) বাগবাজার, (৩) শোভাবাজার, (৪) সুতালুটি-হাটখোলা বাজার, (৫) রাজা নবকৃষ্ণের বাজার, (৬) বড়বাজার, (৭) মেছুয়াবাজার, (৮) টিরেটার বাজার, (৯) শোরবোরন-এর বাজার, (১০) শর্টস বাজার, (১১) রাধাবাজার, (১২) চীনাবাজার, (১৩) চাঁদনী চক, (১৪) বৌবাজার, (১৫) তালপুকুর বাজার, (১৬) কলিঙ্গ বাজার, (১৭) মুরগীহাটা, (১৮) জানবাজার, (১৯) বনবাজার, (২০) ফেনউইকস বাজার ও (২১) রুইহাটা। এ ছাড়া, ওই মানচিত্রে গরানহাটার নামও আছে। নাম থেকেই প্রকাশ পায় যে ওই অঞ্চলে এক সময় গরানখুঁটির ব্যবসা চালু ছিল।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে চীনাবাজারে ষ্টেশনারী জিনিষপত্তরই বিক্রি হত। চীনাবাজারের দোকানদাররা অধিকাংশই বাঙালী ছিল। তারা সততার ধার ধারতো না। চীনাবাজারের এই সকল দোকানদারদের আচরণ সম্বন্ধে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন অ্যাটর্নি উইলিয়াম হিকি এক বিবরণ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন—— মতীর একদিনের বাজার করার অভিজ্ঞতার কথা আমার মনে আছে। জনৈকা বন্ধুপত্নীর সঙ্গে তিনি একদিন কলকাতার চীনাবাজারে বাজার করতে গিয়েছিলেন। চীনাবাজারে তখন বাঙালীদের অনেক দোকান ছিল। বাজারে গিয়ে তাঁর সঙ্গিনী একটির পর একটি দোকান ঘুরে জিনিষপত্র একেবারে তছনছ করে ফেললেন, কিন্তু একটি পয়সারও কিছু জিনিষ কিনলেন না। দোকানদাররা অত্যন্ত বিরক্ত হল। শার্লত (উইলিয়াম হিকির স্ত্রী) আদৌ খুশি হন নি। অবশেষে দোকানদারদের কাছে সম্মান বাঁচাবার জন্য শার্লত কয়েকটি বিলাতী রিবন কেনেন। ব্যাপারটা আমি কিছুদিন পরে জানতে পারলাম, যখন ব্যবসায়ী গোপীদের তরফ থেকে অ্যাটর্নি হ্যামিলটন চিঠি লিখে জানালেন যে দু টুকরা রিবনের জন্য তাঁর ক্লায়েন্টের বত্রিশ সিক্কা টাকা অবিলম্বে আমাকে দিতে হবে, আরও পাঁচ টাকা তাঁর চিঠির খরচ সহ। তা না দিলে সুপ্রিম কোর্টে ওই টাকার জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’ তৎকালীন চীনাবাজারের আরও যে সব বাঙালী দোকানদারদের নাম আমরা জানি তাঁরা হচ্ছেন রেজকিওয়ালা বিপিন বিহারী রায়, ক্যাবিনেট বিক্রেতা কালীপ্রসাদ মুখুয্যে, পাঞ্চ-হাউসের মালিক কৃষ্ণদত্ত, পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যবসায়ী কালাচাঁদ ঠাকুর, হুঁকোওয়ালা ভগবতী চরণ ঘোষ ও মিষ্টান্ন বিক্রেতা রামচন্দ্র দাস। এ ছাড়া চিল বাঙালীদের ভাল ভাল বইয়ের দোকান। এ সকল দোকানে পাওয়া যেত সদ্য প্রকাশিত বিদেশ থেকে আনীত ইংরেজি সাহিত্য ও বিজ্ঞানের বই। রামগোপাল ঘোষের পিতা গোবিন্দচন্দ্র ঘোষেরও চীনাবাজারে একটি বইয়ের দোকান ছিল। পরবর্তীকালে চীনাবাজারের এক বিখ্যাত বই আমদানীকারক ছিল সুর অ্যাণ্ড কোম্পানি। এটা এখনও জীবিত আছে।
বর্তমান রাইটার্স বিল্ডিং-এর পিছনে লায়ন্স রেঞ্জ ও ইণ্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্রেস-এর মধ্যবর্তী যে স্থানে জেমস ফিনলে কোম্পানির অফিস আছে, ওখানে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে একটা থিয়েটার ছিল। ওই থিয়েটারটা ১৮০৮ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল। তখন গোপীমোহন ঠাকুর ওই থিয়েটার বাড়ীটা ও তার আশপাশের জমিগুলা কিনে নিয়ে ওখানে একটা বাজার স্থাপন করেন। তার নামকরণ হয়েছিল নূতন চীনাবাজার। সেজন্যই রয়েল এক্সচেঞ্জ প্রেসের (বর্তমান ইণ্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্লেসের আগের নাম) নাম ছিল ‘নিউ চীনাবাজার স্ট্রীট’। ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে রয়েল এক্সচেঞ্জের বাড়ী তৈরীর সময় পর্যন্ত এর নাম ‘নিউ চীনাবাজার স্ট্রীট’-ই ছিল। এই নাম অতীতে গোপীমোহন ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বাজারের স্মৃতি বহন করত। ওই বাজারের গায়ে অবস্থিত এক মাঠে নিমগাছের তলায় কলকাতার প্রথম শেয়ার বাজার বসত।
কলকাতার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় আরও অনেক বাজার স্থাপিত হয়। এমন কি ১০০/২০০ গজের ব্যবধানে একাধিক বাজারের অস্তিত্বও আমাদের নজরে পড়ে। এ পরিস্থিতিটা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল। কেননা, ধর্মতলা-চৌরঙ্গীর মোড় থেকে চাঁদনী চকের মধ্যে তিনটা বাজার ছিল, যথা শোরবরণ বাজার, চাঁদনী চক ও চৌরঙ্গীর বাজার। চৌরঙ্গীর বাজারকে অনেকে ধর্মতলার বাজারও বলত। তিনটা বাজারই অবশ্য বেশ বড় রকমের বাজার ছিল। চাঁদনী চক তো এখনও বিদ্যমান আছে। শোরবরণ বাজার লুপ্ত হয়ে গেছে। এটার অবস্থান ছিল চাঁদনী চকের কিছু পশ্চিমে, বর্তমান ‘ষ্টেটস্ম্যান হাউস’ ও ধর্মতলা স্ট্রীটের অন্তর্বর্তী জায়গায়। আর চৌরঙ্গীর বাজার ১৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে নীলামে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এর বিবরণ আমরা সমসাময়িক সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন থেকে জানতে পারি। এই বাজারটা বিক্রয়ের জন্য ১৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল তারিখে নীলামদার টুলো অ্যাণ্ড কোম্পানি একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। ওই বিজ্ঞাপন থেকে আমরা জানতে পারি যে, যে জমির ওপর বাজারটা অবস্থিত ছিল তার আয়তন ছিল নয় বিঘা। ওই বাজারে ২০৭টি পাকা দোকান ঘর, ১৪৩টা পাকা খিলানযুক্ত দোকান ঘর ও ৩৬টা খুব বড় কাঁচা গুদাম ঘর ছিল। আমরা আরও জানতে পারি ওই বাজার থেকে মাসিক ১০৪৩ টাকা ভাড়া আদায় হত। তৎকালীন মুদ্রামানের দিক থেকে এ টাকা কম নয়। বাজারের চৌহদ্দী সম্বন্ধে ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল যে এটি “bounded by General Shibbert’s house on the east, by the Dhurrmtolah Road to the north, by the Chowringhee Road to the west, and by the Jaun Bazar Road to the south’’. তার মানে, বাজারটার পূর্ব দিকে ছিল জেনারেল শিবারটের বাড়ী, উত্তর দিকে ছিল ধর্মতলা রোড, পশ্চিম দিকে ছিল চৌরঙ্গী রোড ও দক্ষিণে জানবাজার রোড (বর্তমান সুরেন্দ্র ব্যানার্জি রোড)। ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে পাথুরিয়াঘাটার যদুলাল মল্লিক এ বাজারটা কিনে নিয়েছিলেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে আমরা সমসাময়িক পত্রিকা থেকে গঙ্গার ধারে হাটখোলার কাছে একটা বাজারের নাম শুনি, যার নাম ছিল সুরের বাজার’। খুব সম্ভবত এ বাজারটা হাটখোলার ধনী পরিবার (যদের বাড়ীতে দুর্গাপূজায় ১০৮টা মহিষ বলি হত) সুরেদের বাজার ছিল। এই সময় ‘পোস্তা’ বন্দী করে ষ্ট্রাণ্ড রোডটা তৈরী হয়েছিল, এবং পোস্তার বাজারেরও উদ্ভব ঘটেছিল।
আগে উল্লিখিত বাজারসমূহ ছাড়া, আরও একটা বাজারের নাম আমরা সমসাময়িক পত্রিকা থেকে পাই। সেটা হচ্ছে ঠনঠনিয়া বাজার। জানবাজারে যে একটা বাজার ছিল, তা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। ১৮২৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ মার্চ তারিখের সংবাদপত্র থেকে আমরা জানতে পারি যে দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়ে জানবাজারে পশুপক্ষী ও মাংস বিক্রির জন্য আর একটা বাজার তৈরী হবে, এবং এ বাজারটা স্থাপনের জন্যে যে টাকার প্রয়োজন হবে তা ৩০০ অংশে বিভক্ত হয়ে সংগৃহীত হচ্ছে। এর অংশীদারদের মধ্যে মিষ্টার বেলী, স্যার চার্লস মেটকাফ ও কলকাতার সওদাগরী অফিসসমূহের অন্যান্য সাহেবদের নামের উল্লেখ ছিল। ১৮৪১ খ্রীষ্টাব্দের এক গেজেটিয়ার থেকে আমরা তৎকালীন বাজারগুলির নাম পাই। তবে সে সব বাজারের অধিকাংশই এখন উঠে গেছে। বাজারগুলির নাম—এন্টালি সাউথ রোডে অবস্থিত আরমেনিয়ান বাজার, বালিগঞ্জ বডিগার্ড লাইনের উত্তরে বালিগঞ্জ কা হাট, বাগবাজারে বাগবাজার, পদ্মপুকুর-এণ্টালির দক্ষিণ-পূর্বকোণে বীরু শীলের বাজার, বৌবাজার স্ট্রীটের দক্ষিণে বিশ্বনাথ মতিলালর বাজার, বৈঠকখানা গির্জার দক্ষিণে বৈঠকখানার বাজার, ৬০ নং বৌবাজার স্ট্রীটে বৌবাজার, ৩৪৪ নং চিৎপুর রোডে বোষ্টমচরণ মল্লিকের বাজার, ১৬ নং ধর্মতলা স্ট্রীটে চাঁদনি চক বাজার, গার্ডেনরীচে কর্ণেল পীয়ার্সের বাজার, কলিঙ্গের পশ্চিমে চাউলহাট্টাতে কলিঙ্গ বাজার, সিমলার কলভিন বাজার, মৌলালীর উল্টো দিকে দেবনারায়ণ দাসের বাজার, খিদিরপুরে দেওয়ান গোকুল ঘোষালের বাজার, ১নং ধর্মতলা স্ট্রীটে ধর্মতলা বাজার, হাড়িয়াবাগানের পূর্ব দিকে ফেনউইক বাজার, ফৌজদারী বালাখানার বাজার, ৩৩ মং চিৎপুর রোডে গোপাল মল্লিকের বাজার, ধর্মতলা ও জানবাজারের মাঝখানে গোপীবাবুর বাজার, ভবানীপুর রোডের উল্টো দিকে গঙ্গানারায়ণ সরকারের বাজার, পটলডাঙ্গায় হাজী কারবালাইয়ের বাজার, জানবাজার, ১৩ নং লোয়ার সারকুলার রোডে কাশী মল্লিকের বাজার, ৩৩৩ নং চিৎপুর রোডে লালবাবুর বাজার, ২০৯ নং মেছুয়াবাজার স্ট্রীটে মেছুয়াবাজার, কলেজ স্কোয়ারের পশ্চিমে মাধববাবুর বাজার, আপার সারকুলার রোডে মুনশী আমিলুদ্দিনের বাজার। মাধববাবুর বাজার এই সময়েই স্থাপিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কলুটোলার অন্যতম ধনকুবের মাধবচন্দ্র দত্ত। তিনি ও কলুটোলার অপর ধনকুবের মতিলাল শীল (উভয়েই সুবর্ণবণিক সমাজের লোক) কলুটোলা অঞ্চলে ড্রেন তৈরী করে দিয়েছিলেন। মাধববাবুর বাজার বিংশ শতাব্দীর বিশের দশক পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। ওই বাজারটা ভেঙেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ বিল্ডিং তৈরী করা হয়েছে।
উনিশ শতকে বিশ্বনাথ মতিলাল বৌবাজার অঞ্চলে একাধিক বাজার স্থাপন করেছিলেন। তার মধ্যে একটা বাজার স্থাপিত হয়েছিল, আজ যেখানে ‘কোলে মার্কেট’ অবস্থিত। কোলে মার্কেট বিংশ শতাব্দীতে নফর কোলের ছেলে ভূতনাথ কোলে স্থাপন করে। পাইকারী তরিতরকারি বিক্রয়ের জন্য এটা এখন কলকাতার সবচেয়ে বড় বাজার। কাছাকাছি আর দুটো বাজার আছে। একটা বৈঠকখানার বাজার ও আর একটা শিয়ালদহের বাজার।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যাহ্রে আমহার্ষ্ট স্ট্রীটে দুটো বাজার ছিল। একটা মানিকতলা স্ট্রীটের কাছে চন্দ্র মুখার্জির বাজার ও আর একটা চাঁপাতলা সেকেণ্ড লেনের কাছে চাঁপাতলার ‘নতুন’ বাজার। সমসাময়িক কালেই ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজার (এখন বিকৃত হয়ে জগুবাবুর বাজার হয়েছে) স্থাপিত হয়। ওখানে আগে একটা প্রকাণ্ড বাগানবাড়ী ছিল, সেটা রানী রাসমণি কিনে তাঁর দৌহিত্র (রানী রাসমণির দ্বিতীয় কন্যা কুমারী দাসীর ছেলে) যদুনাথ চৌধুরীকে দান করেন। তিনিই ওখানে একটা বাজার বসান। একটা বাজার বেলেঘাটায় ছিল, নাম পামার বাজার। এটা ক্যাপটেন ফ্রাঙ্ক পামার স্থাপন করেছিলেন। ওরই নিকটে এখন আছে মুনশী বাজার। খিদিরপুরেও কয়েকটা বাজার ছিল, যথা কুলীবাজার, অরফানগঞ্জ বাজার প্রভৃতি। গড়িয়াতেও একটা বাজার ছিল, যা থেকে গড়িয়াহাটার নাম হয়েছে।
কলকাতার বাজারসমূহের ইতিহাসে এক নূতন পর্ব শুরু হয় যখন ১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দের পয়লা জানুয়ারী তারিখে প্রথম মিউনিসিপাল মার্কেট খোলা হয়। কলকাতার অভিজাত পল্লী চৌরঙ্গীর লিওসে স্ট্রীট ও বার্টরাম স্ট্রীটের সংযোগ স্থলে একটা স্থাপিত হয়। নূতন বাজার বলে এটাকে ‘নিউ মার্কেট’ বলা হত। (এখনও বলা হয়)। কিন্তু ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর থেকে এর নামকরণ করা হয় ‘স্যার স্টুয়ার্ট হগ মার্কেট। স্যার স্টুয়ার্ট হগ ছিলেন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (১৮৬৬ খ্রীষ্টাব্দে ৫ এপ্রিল থেকে ১৮৭৬ খ্রীষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত)। ১৯০৯ খ্রীষ্টাব্দে হগ মার্কেটের বিস্তৃতিকরণ করা হয়। তারপর থেকে করপোরেশন আরও নয়টা বাজার স্থাপন করেছে। এ নয়টা বাজার হচ্ছে— (১) সার চার্লস অ্যালেন মার্কেট, চিৎপুর রোড (রবীন্দ্র সরণী) ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত, (২) কলেজ স্ট্রীট মার্কেট (১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত), (৩) এনটালী মার্কেট (১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত), (৪) লেক রোড মার্কেট (১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত), (৫) পার্ক সার্কাস মার্কেট (১৯৪০ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত), (৬) গড়িয়াহাট মার্কেট (১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত), (৭) নিউ আলিপুর মার্কেট (১৯৬৩ খ্ৰীষ্টাব্দে স্থাপিত), (৮) মানিকতলা মার্কেট (১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত), (৯) বাঁশদ্রোণী বাজার।
এই নয়টা মিউনিসিপাল মার্কেট ছাড়া, কলকাতায় বর্তমানে যে সব প্রাইভেট মার্কেট আছে, তাদের নাম যথাক্রমে—(১) বরানগর বাজার, (২) সিঁথির বাজার, (৩) দমদম বাজার, (৪) সাতপুকুর বাজার, (৫) চিৎপুর বিবি বাজার, (৬) চুনীবাবুর বাজার, (৭) আশুবাবুর বাজার, (৮) ইন্দ্র বিশ্বাস রোডের বাজার, (৯) শ্যামবাজার, (১০) অমিয়বাবুর বাজার, (১১) বাগবাজার, (১২) হাতিবাগান বাজার, (১৩) হরি সাহার বাজার, (১৪) উল্টাডাঙ্গা বাজার, (১৫) বাগমারী বাজার, (১৬) শোভাবাজার, (১৭) কাঁকুড়গাছির বাজার, (১৮) মানিকতলার সরকার বাজার, (১৯) রানী রাসমণির বাজার, (২০) বেনিয়াপুকুর বাজার, (২১) ফুলবাগান বাজার, (২২) মুচিবাজার, (২৩) ফেউইক বাজার, (২৪) মুনশীর বাজার, (২৫) ধাপার বাজার, (২৬) জয় হিন্দ বাজার, (২৭) টেরেটি বাজার, (২৮) বেলেঘাটার বাজার, (২৯) ঘোষবাগান বাজার, (৩০) ফুলবাগান বি সরকারের বাজার, (৩১) মল্লিক বাজার, (৩২) সুকিয়া স্ট্রীটের বাজার, (৩৩) সাতুবাবুর বাজার, (৩৪) মানী মার্কেট, (৩৫) রাজাবাজার, (৩৬) শিয়ালদহ বাজার, (৩৭) বৈঠকখানা বাজার, (৩৮) নেবুতলার বাজার, (৩৯) কোলে বাজার, (৪০) নতুন বাজার, (৪১) বর্মণ মার্কেট, (৪২) বড়বাজার, (৪৩) বৌবাজার, (৪৪) পোস্তার বাজার, (৪৫) চেতলার বাজার, (৪৬) কালীঘাটের বাজার, (৪৭) চেতলার C.I.T. মার্কেট, (৪৮) ক্ষীরোদ ঘোষের বাজার, (৪৯) সাদার্ন মার্কেট, (৫০) থিয়েটার রোডের এয়ারকনডিশনড্ বাজার, (৫১) কুলীবাজার, (৫২) কেওড়াতলা শ্মশান বাজার, (৫৩) ল্যান্সডাউন মার্কেট, (৫৪) খিদিরপুর বাজার, (৫৫) বেহালা বাজার, (৫৬) চারু বাজার, (৫৭) যদুবাবুর বাজার, (৫৮) টালিগঞ্জ বাজার, (৫৯) আনন্দ পালিত রোডের বাজার, (৬০) চাঁদনীর বাজার, (৬১) জানবাজার। এ ছাড়া, আরও ১০০টা বাজার আছে। সবগুলোর নাম দেওয়া সম্ভবপর নয়। তবে এখানে উল্লেখ করবার মত একটা কথা আছে। কলকাতার কোন কোন বাজার বাঙালীর হাত থেকে অবাঙালীর হাতে চলে যাচ্ছে। যেমন বাগবাজার। আগে এটা কাঞ্চনপুর এষ্টেটের হাতে ছিল। এখন অবাঙালী ‘মোদী’-দের হাতে, পাশের সমস্ত জমিগুলোও চিৎপুর রোডের মোড় পর্যন্ত হালওসিয়াদের হাতে গেছে।
কতকগুলো জায়গায় বিশেষ রকমের পণ্য বিক্রয় হয়। সেগুলোকে সেই সেই জিনিষের বাজার বলা যেতে পারে। যেমন প্রতিমা তৈরী ও বিক্রি হয় কুমার টুলীতে। ছানা বিক্রি হয় সাতুবাবুর বাজারে। অগে বৌবাজারের মোড়েই ছানাপটি ছিল কিন্তু আজকাল ওখানে ছানার দোকান ক্রমশ হ্রাস পেয়ে আসছে। ক্ষীর পাওয়া যায় নতুন বাজার ও বড়বাজারে। চিনির বিক্রয় কেন্দ্র হচ্ছে বড়বাজার চিনিপটীতে। সোনারূপা বিক্রি হয় সোনাপটীতে। মেয়েদের অলঙ্কার নানা জয়গায় পাওয়া যায়, বিশেষ করে বৌবাজার অঞ্চলে। মেয়েদের শাড়ীও পাওয়া যায়, তবে নানা জায়গায়, ময়দান মার্কেটে, বিধান সরণীতে, গড়িয়াহাট রোডের মোড়ে, ঘড়ি বিক্রি হয় রাধাবাজার ও ডালহাউসী স্কোয়ার (বি-বা-দি বাগ অঞ্চলে। কাগজ ও ষ্টেশনারী জিনিস রাধাবাজারে। কাঁচ সোয়ালো লেনে। নানারকম আমদানীকৃত জিনিষ আগে বিক্রি হত মুরগীহাটায় ও দিল্লীপটীতে। এখন আমদানীকৃত জিনিষ হ্রাস পাওয়ায় এরা হরেকরমক জিনিষ বিক্রি করে। তবে এখন ওসব জিনিষ বিক্রির দোকানসমূহ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে ওখানকার বাগরী মার্কেটে। তুলা বিক্রি হয় তুলাপটীতে। কাপড় বিক্রি হয় সদাসুখ কাবরা ও বড়বাজারে। ফুল ও ফুলের মালা ফুলপটীতে। কাঠের ফারনিচার বৌবাজার ও শিয়ালদহে। আগে কাঠের খাট তৈরী ও বিক্রি হত এন্টালিতে। দোকানগুলো এখন স্থানান্তরিত হয়েছে আরও দক্ষিণে সি. আই. টি. রোডে। লোহালক্কড় বিক্রি হয় দর্মাহাটায় ও স্যানিটারী জিনিষ কলেজ স্ট্রীটে। পুরানো লোহালক্কড় বিক্রি হয় ঠনঠনিয়া ও মানিকতলায়। পুরানো মোটর পার্টস মল্লিক বাজারে। কাঠ বিক্রি হয় নিমতলায়। মশারী বিক্রি হয় চিৎপুর মশারীপটীতে ও চাঁদনীতে। বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হয় চিৎপুরে লালবাজারের কাছে। বই বিক্রি হয় কলেজ ষ্ট্রীটে ও গরাণহাটায়। শেয়ার বিক্রি হয় ষ্টক এক্সচেঞ্জে। পাট ও চটের কেনাবেচা হয় জুট ও হেসিয়ান এক্সচেঞ্জে। চায়ের কেনাবেচা হয় মিশন রো-তে চায়ের নীলাম ঘরে। আর টাকার বাজার ছড়িয়ে আছে শহরের ব্যাঙ্কসমূহে।
তবে শহরের ফুটপাতসমূহে এখন সব জিনিষই পাওয়া যায়, এবং ফুটপাতগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে যে এ শহরটা একটা বিরাট বাজারে পরিণত হয়েছে। ফুটপাত ও রাস্তাজুড়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাজার বসে রয়েছে।