আমি যে বেশ সুখে আছি অন্তত নই দুঃখে কৃশ , সে কথাটা পদ্যে লিখতে লাগে একটু বিসদৃশ । সেই কারণে গভীর ভাবে খুঁজে খুঁজে গভীর চিতে বেরিয়ে পড়ে গভীর ব্যথা স্মৃতি কিম্বা বিস্মৃতিতে । কিন্তু সেটা এত সুদূর এতই সেটা অধিক গভীর আছে কি না আছে তাহার প্রমাণ দিতে হয় না কবির । মুখের হাসি থাকে মুখে , দেহের পুষ্টি পোষে দেহ , প্রাণের ব্যথা কোথায় থাকে জানে না সেই খবর কেহ । কাব্য প'ড়ে যেমন ভাব কবি তেমন নয় গো । আঁধার ক'রে রাখে নি মুখ , দিবারাত্র ভাঙছে না বুক , গভীর দুঃখ ইত্যাদি সব হাস্যমুখেই বয় গো । ভালোবাসে ভদ্রসভায় ভদ্র পোশাক পরতে অঙ্গ , ভালোবাসে ফুল্ল মুখে কইতে কথা লোকের সঙ্গ । বন্ধু যখন ঠাট্টা করে মরে না সে অর্থ খুঁজে , ঠিক যে কোথায় হাসতে হবে একেক সময় দিব্যি বুঝে । সামনে যখন অন্ন থাকে থাকে না সে অন্যমনে , সঙ্গীদলের সাড়া পেলে রয় না বসে ঘরের কোণে । বন্ধুরা কয় ‘ লোকটা রসিক' , কয় কি তারা মিথ্যামিথ্যি ? শত্রুরা কয় ‘ লোকটা হাল্কা' , কিছু কি তার নাইকো ভিত্তি ? কাব্য দেখে যেমন ভাব কবি তেমন নয় গো । চাঁদের পানে চক্ষু তুলে রয় না পড়ে নদীর কূলে , গভীর দুঃখ ইত্যাদি সব মনের সুখেই বয় গো । সুখে আছি লিখতে গেলে লোকে বলে , ‘ প্রাণটা ক্ষুদ্র ! আশাটা এর নয়কো বিরাট , পিপাসা এর নয়কো রুদ্র । ' পাঠকদলে তুচ্ছ করে , অনেক কথা বলে কঠোর— বলে , ‘ একটু হেসে - খেলেই ভরে যায় এর মনের জঠর । ' কবিরে তাই ছন্দে বন্ধে বানাতে হয় দুখের দলিল । মিথ্যা যদি হয় সে তবু ফেলো পাঠক চোখের সলিল । তাহার পরে আশিস কোরো রুদ্ধকণ্ঠে ক্ষুব্ধবুকে , কবি যেন আজন্মকাল দুখের কাব্য লেখেন সুখে । কাব্য যেমন কবি যেন তেমন নাহি হয় গো । বুদ্ধি যেন একটু থাকে , স্নানাহারের নিয়ম রাখে , সহজ লোকের মতোই যেন সরল গদ্য কয় গো ।