প্রথম খণ্ড (শ্রদ্ধেয় ফণিভূষণ আচার্যকে)
1 of 2

ওলিম্পিক গোল্ড

ওলিম্পিক গোল্ড

আপনারা সকলে উঠে দাঁড়ান। ঘড়ি ধরে, ঘাড় গুঁজে পেঙ্গুইনের মতো তিন মিনিট নীরবতা পালন করুন।

কার শোকে? কোনও বিপ্লবী কি দেহ রাখলেন?

বিপ্লবী? হ্যাঁ বিপ্লবীও বলা চলে। অন্ধকারে আলোর বিপ্লব এনেছিলেন। বন্ধুগণ! আমাদের সব পাওয়ার প্ল্যান্ট অকালে, আমাদের এই ভয়ঙ্কর প্রয়োজনের দিনে পটল তুলেছ। অকালই বা বলি কী করে! যাওয়ার সময় হয়েছিল। সেরিব্রাল অ্যাটাকে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল দীর্ঘকাল।

গত সপ্তাহে সবক’টা বুড়ো গঙ্গাযাত্রা করেছে। আপদ বিদায় হয়েছে। বন্ধুগণ প্ল্যান্ট মানে কী? চারাগাছ। পাওয়ার প্ল্যান্ট মানে শক্তির চারাগাছ। কোনও সময়েই আমরা পাওয়ার ট্রি মানে শক্তি-বৃক্ষ বলিনি কোনও দিন। বললেই জনগণ, আমাদের পেয়ারি, লাডলি জনগণ, আমাদের পুঁটকিপাঁট করে দিত। আমাদের বিবেক এখন কত মুক্ত! একগাল হেসে, বাঁধানো দুধের দাঁত বের করে বলতে পারব—চারাগাছ গরুতে মুড়িয়ে খেয়ে গেছে রে পাগলা। আমরা কী করব মানিক! আরও বলব, আমার কথাটি ফুরোল নটেগাছটি মুড়োল। কেন রে নটে মুড়োলি?প্রশ্নের উত্তর আর আমাদের দিতে হবে না। নটেই দেবে, গরুতে কেন খায়! কেন রে গরু খাস? রাখাল কেন চরায় না! কেন রে রাখাল চরাস না? বন্ধুগণ লক্ষ করে দেখুন, এই প্রশ্নোত্তরের কোথাও আমরা নেই। এই নটঘটের মধ্যে থাকা মানেই জনপ্রিয়তার বারোটা বাজা। একেই বলে হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন টেকনিক। স্বর্গীয় শিব্রামবাবুকে স্মরণ করুন। কী প্রতিভা ছিল মানুষটির! কী অসাধারণ বুদ্ধি! কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন হর্ষবর্ধনের কাছ থেকে, তাগাদা ছাড়া কেউ ধার শোধ করে? করে না। জনগণের ঋণ আমরা কেউ শোধ করেছি? তবে! হর্ষর তাগাদা শুরু হল। তখন শিব্রামবাবু করলেন কী গোবর্ধনের কাছে হাত পাতলেন। গোবরার কাছে ধার নিয়ে হর্ষকে দিলেন। এইবার গোবর্ধন যেই তাগাদা শুরু করল অমনি হর্ষবর্ধনের কাছে হাত পাতলেন। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন দুই ভাই। মাসের পর মাস এই চলতে লাগল। শেষে বিরক্ত হয়ে শিব্রামবাবু একদিন দুই ভাইকে সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘ভাই, এ তো তোমাদের দুজনের ব্যাপার, আমি আর মাঝখান থেকে কেন অশান্তি করি, হর্ষ মাসের প্রথম টাকাটা তুমি গোবরাকে দেবে, আর গোবরা, মাসের শেষে তুমি আবার দাদাকে দিয়ে দেবে। আমার দায়িত্ব খালাস।

বন্ধুগণ! শক্তির ব্যাপারে আমরা মুক্ত পুরুষ। ওই যে নটেগাছটি মুড়ল বলে দিয়েছি! এইবার নটেতে, গরুতে, রাখালেতে কেলোর কীর্তি চলুক। আসুন আমরা বরং গান ধরি :

অন্ধকারে অন্তরেতে অশ্রুবাদল ঝরে

কোথায় সীতা, কোথায় সীতা!

ইওর অনার, আমার একটা প্রশ্ন আছে। অন্ধকার, ঘন অন্ধকার চারপাশে। শ্রাবণের ধারা আকাশ ফুটো হয়ে ঝরছে। ঠিক আছে। সীতাকে খুঁজতে হবে কেন? এটা কী রামরাজত্ব! এ তো মগের মুল্লুক।

মাই ডিয়ার লানের্ড মেম্বার, সীতাকে আমাদের ভীষণ প্রয়োজন।

সেই মহিলাকে আপনি পাচ্ছেন কোথায়? বড়জোর বর্ধমানে গেলে সীতাভোগ পেতে পারেন।

মূর্খ! ভোগ যখন তৈরি হচ্ছে তখন বুঝতে হবে যিনি ভোগ করবেন তিনি এখনও আছেন। কোথাও না কোথাও আছেন। এই যে বাড়িতে তোমার গিন্নি এখন ভোগ রাঁধছেন, কেন রাঁধছেন? তুমি তো বসে আছ আমার সামনে। তিনি জানেন তুমি ফিরবে এবং যথাসময়ে গিলবে।

বেশ বাবা, তর্ক করব না। গুরুজনের মুখে-মুখে চোপা করতে নেই। তা সীতাকে প্রয়োজন কেন? আমাদের প্রজারা তো রামরাজত্ব চান। আর কথায় কথায় বলেন, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।

সীতার কাছ থেকে আমাদের পাতাল প্রবেশের টেকনিকটা জানতে হবে। একমাত্র তেনারই জানা আছে। টাইমলি ঢুকে যাওয়া। বড় কায়দার জিনিস হে।

ওরা বলছিল ওলিম্পিক দেখতে পাচ্ছে না। টিভির পরদায় মোমবাতি কাঁপছে।

ওরা কারা?

ওই যে যারা ভোট দেয়।

ওদের কথায় কান দিও না। হ্যাংলো, হাঘরের দল। ভারত একটাও স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ কিছুই পায়নি। ঘুঁটের মেডেল পরে, কোটি টাকা প্যাসিফিকের জলে ফেলে ফিরে আসছে। আমরা তবু লোডশেডিং-এ এই মওকায় একটা গোল্ড মেডেল পেয়ে গেলুম।

ওরকম কোনও আইটেম তো প্রতিযোগিতায় নেই।

থাকলে নিশ্চয়ই পেতুম। তা ছাড়া মডার্ণ ডেকাথেলনে সামনের বার আমরা দল পাঠাব।

মডার্ণ ডেকাথেলান কী জিনিস?

কিছুটা পথ দৌড়। তারপর, বাধা। বাধার পর বাধা। কাঁটা ঝোপ। দুর্ভেদ্য জঙ্গল। এবড়োখেবড়ো মাঠ। পাঁক। পেছল পথ। টিলার পর টিলা। শেষে একটা দেওয়াল। দেওয়াল টপকে জলা। জলা পেরিয়ে আবার দৌড়। কী, যারা রোজ অফিস করতে আসে তারা পারবে না?

খুব পারবে, স্যার। আর কানে-কানে যদি একবার বলে দেওয়া হয় আজ মাইনের দিন, তাহলে তো কথাই নেই।

যাও, আর একটা স্বর্ণপদক ঝুলিয়ে দিলুম জাতির গলায়। আরও একটা দিতে পারি।

আর কীসে দেবেন?

ভারোত্তোলন নয় ভারবহন। পিঠে কে কত লোড নিতে পারে। বাসে আমাদের একটা রোগাপটকা পিঠে দু-দশটা ভোঁদকার ভার অক্লেশে নিতে পারে। যত চাপই আসুক শুয়ে পড়ে না। আর সামনের আসনে যদি লেডিজ থাকে তাহলে ধোলাইয়ের ভয়ে একেবারে খাড়া। মুখে শুধু করুণ আর্তনাদ—উ: আর চাপাবেন না দাদা।

ঠিক বলেছেন। একেবারে অটল।

তাহলে তৃতীয় পদকটিও পেলে। আর একটা চাই না কি?

পেলে কে ছাড়ে?

তাহলে নাও, চতুর্থ পদকটিও ঝুলিয়ে দিলুম গলায়। প্রতিযোগিতার নাম, কে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে? বাসের জন্যে, কেরোসিনের জন্যে, র‌্যাশনের জন্যে, দুধের জন্যে, রিটায়ারমেন্টের পর পেনশন আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্যে। অপেক্ষা। পারবে? কোনও দেশ পারবে আমাদের সঙ্গে?

অসম্ভব। হেরে ভূত হয়ে যাবে।

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *