ধর্মান্ধের ধর্ম নেই, আছে লোভ, ঘৃণ্য চতুরতা
যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ,
তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
জাতির শরীরে আজ তেমনি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি
ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ী রূপে
ক্রমশঃ উঠছে ফুটে ক্ষয়রোগ, রোগের প্রকোপ।
একদার অন্ধকারে ধর্ম এনে দিয়েছিল আলো,
আজ তার কংকালের হাড় আর পচা মাংসগুলো
ফেরি করে ফেরে কিছু স্বার্থাণ্বেষী ফাউল মানুষ–
সৃষ্টির অজানা অংশ পূর্ণ করে গালগল্প দিয়ে।
আফিম তবুও ভালো, ধর্ম সে তো হেমলক বিষ।
ধর্মান্ধের ধর্ম নেই, আছে লোভ, ঘৃণ্য চতুরতা,
মানুষের পৃথিবীকে শত খণ্ডে বিভক্ত করেছে
তারা টিকিয়ে রেখেছে শ্রেণীভেদ ঈশ্বরের নামে।
ঈশ্বরের নামে তারা অনাচার করেছে জায়েজ।
হা অন্ধতা! হা মূর্খামি! কতো দূর কোথায় ঈশ্বর!
অজানা শক্তির নামে হত্যাযজ্ঞ কতো রক্তপাত,
কত যে নির্মম ঝড় বয়ে গেল হাজার বছরে!
কোন সেই বেহেস্তের হুর আর তহুরা শরাব?
অন্তহীন যৌনাচারে নিমজ্জিত অনন্ত সময়?
যার লোভে মানুষও হয়ে যায় পশুর অধম!
আর কোন দোজখ বা আছে এর চেয়ে ভয়াবহ?
ক্ষুধার আগুন সে কি হাবিয়ার চেয়ে খুব কম?
সে কি রৌরবের চেয়ে নম্র কোন নরম আগুন?
ইহকাল ভুলে যারা পরকালে মত্ত হয়ে আছে
চলে যাক সব পরপারে বেহেস্তে তাদের।
আমরা থাকবো এই পৃথিবীর মাটি জলে নীলে,
দ্বন্দ্বময় সভ্যতার গতিশীল স্রোতের ধারায়
আগামীর স্বপ্নে মুগ্ধ বুনে যাবো সমতার বীজ।।
কথা ছিলো সুবিনয়
কথা ছিলো রক্ত-প্লাবনের পর মুক্ত হবে শস্যক্ষেত,
রাখালেরা পুনর্বার বাঁশিতে আঙুল রেখে
রাখালিয়া বাজাবে বিশদ।
কথা ছিলো বৃক্ষের সমাজে কেউ কাঠের বিপনি খুলে বোসবে না,
চিত্রর তরুন হরিনেরা সহসাই হয়ে উঠবে না
রপ্তানিযোগ্য চামড়ার প্যাকেট।
কথা ছিলো , শিশু হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সম্পদের নাম।
নদীর চুলের রেখা ধরে হেঁটে হেঁটে যাবে এক মগ্ন ভগীরথ,
কথা ছিলো, কথা ছিলো আঙুর ছোঁবো নাকোনোদিন।
অথচ দ্রাক্ষার রসে নিমজ্জিত আজ দেখি আরশিমহল,
রাখালের হাত দুটি বড় বেশি শীর্ণ আর ক্ষীণ,
বাঁশি কেনা জানি তার কখনোই হয়ে উঠে নাই–
কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো।
একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে
সহজিয়া বাউলেরা,
তাদের মায়াবী আঙুরের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়-
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধরে বোলবে : উদ্ধার পেয়েছি।
কথা ছিলো, ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াবো ঘিরে
আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরন্য, জমিন, আমাদের
পাহাড় ও সমুদ্রের আদিগন্ত উপকূল–
আজন্ম এ-জলাভূমি খঁজে পাবে প্রকৃত সীমানা তার।
কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ-জমিন অনার্যের হবে।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের
ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।
মাতৃভূমি–খন্ডিত দেহের পরে তার থাবা বসিয়েছে
আর্য বণিকের হাত।
আর কী অবাক! ইতিহাসে দেখি সব
লুটেরা দস্যুর জয়গানে ঠাঁসা,
প্রশস্তি, বহিরাগত তস্করের নামে নানারঙা পতাকা ওড়ায়।
কথা ছিলো ’আমাদের ধর্ম হবে ফসলের সুষম বন্টন’,
আমাদের তীর্থ হবে শস্যপূর্ণ ফসলের মাঠ।
অথচ পান্ডুর নগরের অপচ্ছায়া ক্রমশ বাড়ায় বাহু
অমলিন সবুজের দিকে, তরুদের সংসারের দিকে।
জলোচ্ছাসে ভেসে যায় আমাদের ধর্ম আর তীর্থভূমি,
আমাদের বেঁচে থাকা, ক্লান্তিকর আমাদের দৈনন্দিন দিন।
* আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বন্টন–আল মাহমুদ
মাংশের মুখোশ
[পেজ #৩২০]
একটি মানুষ খুন কোরে এই তো এলাম আমি
প্রার্থনা ঘরে,
দ্যাখো শরীরে আমার কি মধুর আতরের ঘ্রান
কি মোহন স্বর্গীয় শোভা সারা অবয়ব জুড়ে,
আহা ঈশ্বরই সব মঙ্গল করেন!
এই দ্যাখো একজন কুমারীর যোনির মাংশ
আমার বুক পকেটে,
আমি কি বিশ্বাসযোগ্য নই, এখনো কি আমি নই ত্রাতা?
চোখে মুখে তোমরা কি দ্যাখো না আমার সেই অপূর্ব ছবি?
ঈশ্বরের শেষতম রক্ষক আমি এই কলুষিত পৃথিবীতে
আমাকে অবজ্ঞা কোরো না।
হে নরকবাসীগণ নিশ্চয়ই তোমাদের পথ ভুল।
এখনো হত্যার রক্তে করোনি স্নান, পূর্ন হওনি ঘৃণাবোধে?
এখনো সত্যের মতো ভ্রান্ত শবদেহ নিয়ে রয়েছো মুখর?
নিশ্চয়ই তোমরা নরকবাসী হবে।
এই দ্যাখো শিশুদের মাংশ কি সুস্বাদু, আহা
কি চমৎকার অসহায় মানুষের বেদনার্ত হৃদয়।
যতোটুকু পারো কেড়ে নাও মানুষের প্রাপ্যের ফল
যতো পারো যন্ত্রনা বিদ্বেষে ভরে তোলো পৃথিবীর জলবায়ু।
হে পুন্যার্থী মানুষেরা
মনে রেখো, ঈশ্বরই সব মঙ্গল করেন, তাঁর প্রতি নিবেদিত হও।
এই দ্যাখো, একজোড়া কাটা মাথা, একজন কুমারীর যোনির মাংশ
আমার বুক পকেটে,
আমি কি বিশ্বাসযোগ্য নই?
পুরো কাব্যগ্রন্থটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।