একদিন অমিতাভ – রাধানাথ মণ্ডল
একদিন সকালে উঠে অমিতাভ মিত্র কথা বলার চেষ্টা করছিল।
সকাল হওয়ার তখনও কিছু বাকি। অন্ধকার এবং আলোর মাঝামাঝি একটা অবস্থার মধ্যে ইতস্তত করছে ঘরটা, তখন কাজের মেয়ে পদ্মাকে ডাকতে গিয়ে অমিতাভ বুঝতে পারল, শব্দ আসছে না।
সর্দি-টর্দি হল নাকি? খকখক কারে একটু কাশল, শ্বাস টানল জোরে। না, গলায় শ্লেষ্মা জমে নেই। দুবার ঢোঁক গিলে বুঝতে চাইল, কোনও ব্যথা হয়েছে কিনা। জিভটা বের করে একটু ছুঁল আঙুল দিয়ে। সব ঠিক আছে, তবে কথা বলতে পারছি না কেন?
আস্তে আস্তে অমিতাভ চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে থাকল। কাল রাত পর্যন্ত অনেক কথা বলেছে সে। শুতে আসার সময়ই বলেছে, জল রেখেছিস তো পদ্ম? কাল আমি খুব সকালে উঠব। তোর ঘুমটা যেন তাড়াতাড়ি ভাঙে। রমলা তার নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিল। মশারির গায়ে তার হাতটা লেগেছিল, অমিতাভ হেঁকে বলল, রমলা, তোমার হাতটা ভিতরে রাখো। এরপর বিছানায় বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে শুয়ে থেকে কখন ঘুমিয়ে পড়ে। কাল রাত পর্যন্ত যত কথা বলেছে সে, সবই সহজভাবে, অবলীলায় উচ্চারণ করে গেছে। কিন্তু আজ সকালে কথা বলতে চেষ্টা করতে হচ্ছে?
পদ্মকে ঘুম থেকে ডাকতে হবে, চা করতে বলা দরকার। পদ্ম, এই পদ্ম ওঠ—আপাতত এটা বলতে পারা চাই। অমিতাভ খাটে বসে চারটে শব্দ বারবার রপ্ত করতে থাকল মনে মনে। তার ঠোঁটগুলো দুবার স্পর্শ করল নিজেদের, জিভ গিয়ে লাগল দাঁতে, গলা থেকে বেরিয়ে এল খানিকটা বাষ্প, কথা এল না।
রাস্তার দিকে একটা জানালা ফাঁক করা ছিল, সেদিকে চেয়ে খুব আশ্চর্য হয়ে গেল অমিতাভ। এই রাতটুকুর মধ্যে, চিন্তাটা থামিয়ে রেখে হিসেব করল, ছ’ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে আমি কথা বলা ভুলে গেলাম?
চা খাওয়া এখনই আর হচ্ছে না। পদ্ম যখন ওঠে উঠুক, তারপর সে চা করে দেবে। সাতটায় অর্ঘ্যর সঙ্গে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল গড়িয়াহাটার মোড়ে। সেখানে তারা দেখা করে একসঙ্গে ডায়মন্ডহারবার যাবে। যাওয়া হচ্ছে না। বাসে কনডাকটারকে যদিও শুধুই পয়সা দিয়েই চালিয়ে দেওয়া যায়, অর্ঘ্যর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে? আজ সকাল থেকে আমি কথা বলতে পারছি না রে অর্ঘ্য—ইশারায় এইটুকু বোঝাতে পারলেও বাকি রাস্তা অসহ্য নীরবতায় কাটবে। তা ছাড়া সে কথা বলতে পারছে না, এটা নিশ্চয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, ডায়মন্ডহারবারে যাওয়া এক্ষেত্রে স্থগিত রাখাই ভাল।
বিছানা থেকে আর উঠল না অমিতাভ। মশারির ভিতরে বসে থাকল। কিছু কি ঘটে গেল রাত্রির মধ্যে? অমিতাভ তার দুটো হাত সামনে তুলল। না, ঠিকই আছে। দশটা আঙুল, হাতের রেখা, সব। দেওয়ালের সাদা রং, ক্যালেন্ডারের ছবির দিকে তাকাল, চোখ ঠিকই দেখছে। পা দুটো মেলে ধরল সামনে, সেখানেও কোনও গোলমাল নেই। চুল মুঠো করে ধরল, ঘ্রাণ নিল জোরে, কোথাও কোনও রকম বৈকল্য টের পেল না।
তা হলে কথা আসছে না কেন? একবার গলা-খাঁকারি দিয়ে শব্দ বের করার চেষ্টা করল, একটা আওয়াজ হল, কিন্তু কোনও কথা নেই তাতে। অমিতাভ বলল, রমলা। জিভ নড়ল, ঠোঁট নড়ল, কোনও শব্দ নেই। বলল, সুনীল। বলল, গাভাসকর। বলল, কলকাতা। একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারল না সে। নিজের ভিতরটাকে তোলপাড় করে যে-কোনও একটা শব্দ তুলে আনতে চাইল অমিতাভ। কিছুতেই হল না।
একটু পরে অমিতাভর কান্না পেতে থাকল। আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠল সে। জানালাগুলো খুলে দিল। দরজাগুলো খুলল, মশারি তুলল। ঘরের বাইরে এল। সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। টেবিলের জায়গায় টেবিল, সোফার জায়গায় সোফা। বাড়ির বাইরে একইভাবে হেলে আছে খেজুর গাছ, পুকুরে স্থির হয়ে আছে জল, পুব দিকটা রঙিন হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে, শুধু আমিই কথা বলা ভুলে গেছি।
রোজ সকালে এই সময় অমিতাভ একটু বেড়ায়। কাছের মাঠ থেকে দূরেব বাস-রাস্তা অবধি তার বেড়ানোর দুই সঙ্গী তাপসদা আর রবীনবাবু। শ্বাস ভরে অক্সিজেন নিতে নিতে নানা বিষয় নিয়ে তারা কথা বলে। আজ সে কাউকে সুপ্রভাত জানাতে পারবে না, যোগ দিতে পারবে না কোনও আলোচনায়। বেড়ানোর থেকে ছুটি নিয়ে সে আপাতত চুপচাপ বসে থাকে তার ঘরে।
অমিতাভ হিসেব করে দেখল, তার বয়স এখন চৌত্রিশ বছর তিন মাস। মাত্র ছ’ মাস বয়সে সে নাকি মা, বাবা আর কাক—এই তিনটে কথা শেখে। যখন তার বয়স সাড়ে তিন, তখন যে সব কথা সাধারণত বলা হয়, সে সবই শিখে যায়। বড় হয়ে সে শুনেছে, তার মুখে পাকা পাকা কথা শুনে তাকে তোতাপাখি বলত কেউ কেউ। স্কুলে পড়ার সময় সে অনেক অশ্লীল শব্দ শেখে। অপরাধ জগতের ভাষা-বিষয়ে বইটা পড়ে তার কলেজ জীবনে।
একদা অমিতাভ রাজনীতি করত। সামান্য কারণে অনেক গরম গরম কথা চলে আসত তার মুখে। বক্তৃতার সময় বিশেষ কিছু শব্দ অত্যন্ত জোরালো ভঙ্গিতে উচ্চারণ করত সে। নাটকে অভিনয়ও করেছে অমিতাভ। এক সময় সাজাহান নাটকে দিলদারের সব সংলাপ তার মুখস্থ ছিল।
এ ছাড়া কতবার কত কারণে যে সে নানা ধরনের কথা বলেছে তার হিসেব নেই। যখন সে ডেলি প্যাসেনজারি করত, তখনই প্রায় কোট করত খবরের কাগজের হেডলাইন। যখন প্রেম করেছে রমলার সঙ্গে, তখন কত রোমানটিক কথাই না বলেছে তার কানে কানে। আবার যখন তাদের সম্পর্ক ক্রমশ আটপৌরে হয়ে উঠেছে, তখন সাদা-মাটা কথায় ভরিয়ে তুলেছে তাদের ঘরকন্না। এ ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে, অফিসে, রাস্তাঘাটে, চলায়-ফেরায় অজস্র কথা বলে গেছে সে। একবার কোলে বিলডিং-এর পাঁচতলার উপর থেকে নীচের চায়ের দোকানে সাত কাপ চায়েব অর্ডার দিয়েছিল।
আর আজ, এই সকালবেলা, চৌত্রিশ বছর কথা বলায় অভিজ্ঞ অমিতাভ তার চেনা, অতি চেনা একটা শব্দও ধরতে পারছে না! কী করে বলেছি তা হলে এতদিন? অমিতাভ ভাবল। আলমারির ভিতর থেকে সঞ্চয়িতাটা বের করে আনল সে। বাঁ হাতে বইটা ধরে জানালার ধারে গিয়ে আবৃত্তি করার ভঙ্গিতে পড়তে গেল। পারল না।
বড় হতাশ হয় অমিতাভ। আমি কিছুই পারছি না। সমস্ত শব্দ আমার কণ্ঠ ছেড়ে গেছে। আমার কোনও কথা আমি শোনাতে পারব না কাউকে।
একটু পরে পদ্ম চা দিয়ে গেল। রমলা উঠল আরও খানিক বাদে। অমিতাভ বসে থাকল। কাগজ এল। বাক স্বাধীনতা বিষয়ে একটা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে চারের পাতায়। চোখ বুলিয়ে গেল অমিতাভ। রমলা এসে জিজ্ঞেস করল বাজার যাবে না? ঘাড় নেড়ে না বলল সে।
একটু পরে উঠে দাঁড়াল অমিতাভ, একটা কাগজ এনে তাতে লিখল, রমলা, আজ সকাল থেকে আমি কথা বলতে পারছি না।
কাগজটা পড়ে বিস্মিত হয়ে গেল রমলা। কথা বলতে পারছ না তুমি? সত্যি? কিন্তু কেন?
অমিতাভ মাথা নেড়ে জানাল: জানি না।
রমলা বেশ কিছুক্ষণ অমিতাভর দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। সত্যিই কথা বলতে পারছ না। তুমি?
অমিতাভ করুণ হাসে। সত্যি।
॥ দুই ॥
এমন অনেক সময় কাটিয়েছে অমিতাভ, যখন কোনও কথা বলেনি। সকালে উঠেছে, চা খেয়েছে, কাগজ পড়েছে, রমলার কোনও কথার জবাব হু হাঁ করে দিয়ে গেছে। এক-একদিন একটাও কথা বলেনি, এমন ঘটনাও ভেবে দেখলে পাওয়া যাবে। কিন্তু এই যে বাধ্য হয়ে এখন চুপ করে আছে, এটা বড় অস্বস্তিকর। মনে হচ্ছিল, রমলাকে তার এখনও বলা হয়নি এমন অনেক কথা অবশিষ্ট আছে। এখুনি রমলাকে কিছু বলা দরকার। যে-কোনও কথা।
অস্থিরভাবে যখন পায়চারি করছে অমিতাভ, বাইরে যাওয়ার পোশাকে রমলা এল। বলল চলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় অমিতাভ। কোথায়? রমলা উত্তর দেয়: ডাক্তারের কাছে।
রাস্তায় রমলাকে অনুসরণ করে চলে অমিতাভ। যেতে যেতে তার মনে হয়, ছোটবেলায় সে যেমন মায়ের সঙ্গে, বাবার সঙ্গে কোথাও যেত, এও তেমনি। রমলা অমিতাভকে একজন ই-এন-টি স্পেশালিস্টের কাছে নিয়ে যায়। একটা ঘোরানো চেয়ারে বসতে হয় তাকে। অমিতাভ তাকিয়ে দেখে ডাক্তারের বয়স ষাটের কম নয়। কানের উপরে গুচ্ছ গুচ্ছ চুল। পাকা। কথা বললে সামনের দাঁত বেরিয়ে পড়ে। দুটো দাঁতের মাঝখানে ইঞ্চিখানেক ফাঁকা। কথাগুলো সেজন্যে সামান্য হাওয়া মাখিয়ে বেরিয়ে আসে। একটু ভোলা শোনায়।
ডাক্তার অমিতাভকে হাঁ করতে বলেন, সে হাঁ করে। জিভ দেখাতে বলেন, সে দেখায়। ঝকঝকে সাঁড়াশির মতো একটা যন্ত্র তার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন ডাক্তারবাবু, তার চেয়ালে বেশ লাগে। ওঁর কপালে লাগানো একটা টরচ, তার আলো পড়ে অমিতাভর মুখের ভিতরে। উঁকি দিয়ে গলার কাছটা দেখেন, জিভের তলা দেখেন। টনসিলাইটিসে ভুগেছিলেন কখনও? জিজ্ঞেস করেন। অমিতাভ ঘাড় নাড়ে না। দুটো কানের তলায় টিপে প্রশ্ন করেন: লাগছে? অমিতাভ আবারও জানায়;আবারও জানায় না। কানে শুনতে পাচ্ছেন সব? অমিতাভ মাথা নেড়ে সায় দেয়। নাকের ভিতরে সরু চিমটে চালিয়ে দেন ডাক্তার, অমিতাভর ব্যথা লাগে। তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে বসে পড়েন ডাক্তারবাবু। রমলার দিকে হতাশ চোখে চেয়ে বলেন, সব কিছু তো ঠিকই আছে। আপনি বরং কোনও সাইকিয়াট্রিস্ট-এর কাছে নিয়ে যান।
মনোরোগবিশারদ ডাঃ বসুর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় পরের দিন বিকেলে। অমিতাভ সারা দিন কোথাও বের হয় না। বাড়িতে বসে থাকে। যথারীতি স্নান করে, ভাত খায়, দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেলে একটা পত্রিকার পাতা উলটে কাটিয়ে দেয়, সন্ধ্যায় আকাশ দেখার জন্য একবার ছাদে যায়, নিঃশব্দ তারাগুলিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে বোবার কোনও শত্রু নেই প্রবাদটা মনে পড়ে যায়, হঠাৎ।
পরের দিন একই সময় সকাল হয়, অমিতাভ ওঠে, মুখ ধোয়, বেড়াতে যায়, ইশারায় পদ্মকে চা দিতে বলে, চা খেতে খেতে একবার শুধু ভাবে, নির্বাক একটি দিন, চব্বিশটি ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছে। এদিনও কোথাও বেরোয় না অমিতাভ। বাড়িতে শুয়ে বসে কাটায়, কোনও কিছুতে অসুবিধে হয় না, শুধু বাথরুমে একবার গুনগুন করে গান করতে গিয়েছিল ভুলে।
বিকেল হলে রমলাকে কিছু না জানিয়ে অমিতাভ বেরিয়ে পড়ে। ডাঃ বসুর চেম্বারে যায় না। তার বদলে সে যাদবপুর স্টেশনে চলে যায়। এখানে অনেক দিন আগে কয়েকটি যুবককে নানা অঙ্গভঙ্গি করতে দেখেছিল। দূরে দাঁড়িয়ে সে তাদের কাজকর্ম লক্ষ্য করে। এরা কেউ কথা বলে না। তার বদলে তারা দু-হাত নাচায়, চোখ-মুখ ঘোরায়, মুদ্রায়, মুদ্রার ভঙ্গিতে তুলে ধরে দশটা আঙুল। অমিতাভ অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে তাদের প্রতিটি অভিব্যক্তি দেখে। সংখ্যায় তিন-চার জন যুবক এরা। অজস্র কোলাহল-মুখর এই প্ল্যাটফরমে একটি দ্বীপের মতো ছোট্ট বৃত্ত রচনা করেছে। দূর থেকেও অমিতাভ যেন তাদের ভাষা বুঝতে পারে, তাদের কণ্ঠস্বর এসে পৌঁছয় তার কানে। বড় লোভ হয় তার ওদের সঙ্গে মিশে যেতে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে অমিতাভ। আমিও তোমাদের একজন, আমিও। মনে মনে সে বলে।
সন্ধে হয়ে গেলে অমিতাভ পায়ে পায়ে ফেরে। একটা ফাঁকা ন’ নম্বর বাস পেয়ে তাতে চড়ে বসে। জানালা দিয়ে দূরে ও কাছে অজস্র মানুষের দিকে সে তাকায়। এরা সবাই কথা বলছে। দোকানের ভিতরে লোকেরা কথা বলছে। বাইরেও বলছে নানা কথা। এত দূর থেকে কী কথা বোঝা যায় না। শুধু একটা মিশ্রিত আওয়াজ কানে ভেসে আসে। আর সকলের চোখ-মুখ-হাত দেখা যায়। কোনও কথার সঙ্গে মৃদূ হাসি ঝরে পড়ছে, কোনও কথায় শক্ত হয়ে উঠছে চোয়াল। অমিতাভ অন্যমনস্কভাবে এই সব দেখে যায়। বাসটা একটা মন্দির পার হয়। খোল-করতাল নিয়ে নাচতে নাচতে কিছু লোক এখানে কীর্তনের ভঙ্গিতে কী যেন গায়। সুরটা ভেসে আসে, কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারে না অমিতাভ।
কালীঘাট পার্কের কাছে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে বাসটা। অনেক লোক ওঠানামা করে। অন্য দিকে পার্কের ভিতরেও লোকজন, হাঁটছে, বসে আছে, ফুচকাঅলার সঙ্গে কী যেন বচসা করছে একজন। আর তার ওপারে, স্থির চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মাইম অ্যাকাডেমি।
আরও অনেক দৃশ্যের ভিতর দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে অমিতাভ। এবং অনেক শব্দের ভিতর দিয়ে। কোটি কোটি শব্দে মুখর এই কলকাতাকে কেমন যেন দূরের বলে মনে হয়। সবাই কথা বলতে চাইছে একসঙ্গে। হাজার হাজার কথা। কিন্তু সে এ-সবের কোনও মানে বুঝতে পারছে না। সকলের থেকে আলাদা হয়ে একক কোনও কণ্ঠস্বর কানে এসে পৌঁছচ্ছে না তার। নিজেকে তার বড় অসহায় বোধ হয়।
কলিং বেল টিপলে রমলা দরজা খুলে দেয়। ডাঃ বসুর কাছে গেলে না? প্রথমেই সে জিজ্ঞেস করে। অমিতাভ হাসে। লজ্জার হাসি। ঘাড় নেড়ে বলে, না। কিন্তু কেন? রমলার এই ব্যাকুল প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ শুধু তার একটা হাত নিজের হাতে তুলে নেয়। আর তখনই সে বুঝতে পারে অনেক কথা বলছে তার হাত। ফিস ফিস করে উঠছে সমস্ত রেখা, চিৎকার করে উঠছে প্রতিটি আঙুল। চৌত্রিশ বছরের পর আবার কি শুরু হল নতুনভাবে কথা বলা? অমিতাভ বুঝতে পারল না। রমলার হাতটা সে ধরেই থাকল।
১৭ অক্টোবর ১৯৮২