একটি সঙ্কেতের ইতিহাস – সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়
পিয়ারীলাল নির্দিষ্ট বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াল। রাত এখন ঠিক সাড়ে দশটা। বর্ষার রাত বলেই রাস্তায় বড় একটা লোকজনের আনাগোনাও নেই। শুধু জলমাখা রাস্তা বেয়ে মাঝে-মাঝে দানবের মতো ছুটে যাচ্ছে দু-একটা ট্যাক্সি।
পিয়ারীলাল এরকম রাতই পছন্দ করে। কাজের পক্ষে এরকম রাতই ভালো। লোকজনের চোখে যত কম পড়া যায় ততই মঙ্গল। পিয়ারীলালের প্রফেশনের নীতিও তাই।
পিয়ারীলাল প্রফেশনাল কিলার—অর্থাৎ, পেশাদার খুনি। টাকার বিনিময়েই এ-কাজ করে সে। কিন্তু এখানেও তার একটু বিশেষত্বের উল্লেখ করতে হয়। সে নিরীহ মানুষের কোনও ক্ষতি করে না। তার কারবার অপরাধীর সঙ্গে। অর্থাৎ, এমন অপরাধী—যে পুলিশ বা দেশের আইন ফাঁকি দিয়ে বেহালতবিয়তে সমাজের বুকে ঘুরে বেড়ায়। সেরকম কোনও ক্রিমিনালকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পিয়ারীলাল দ্বিধা করে না—তাও অবশ্য সেই টাকার বিনিময়ে এবং কেউ কাজে লাগালে।
আজ রাতে পিয়ারীলাল এরকম একটা কাজ সমাধা করে তার মক্কেলের, অর্থাৎ, নিয়োগকর্তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। অর্ধেক টাকা আজ পাওয়ার কথা—অর্ধেকটা অবশ্য আগেই ও নিয়েছে।
পিয়ারীলালকে মক্কেল জানিয়েছিল, সে নিজেই তাকে টাকাটা পৌঁছে দেবে—কিন্তু রাজি হয়নি ও। এটাও পিয়ারীলালের প্রফেশনের একটা গোপনীয়তা। নিজের ডেরার খবর কখনও ও কাউকে জানতে দেয় না। একটা নিরাপদ ব্যবস্থা ছাড়া এটা আর অন্য কিছু না। কাউকে বিশ্বাস করে না ও—এ-ধরনের কাজে বিশ্বাস করাও চলে না। তবে অন্য কারও চেয়ে পিয়ারীলাল অতিমাত্রায় সাবধানী। তাই সে মক্কেল মিশিরলালজিকে জানিয়ে দেয়, ও নিজেই রাত সাড়ে দশটার পর তাঁরই বাড়িতে হাজির হবে। দরজা যেন খোলাই থাকে।
পিয়ারীলাল এবার হাতের ঘড়িটার দিকে তাকাল।
দশটা পঁয়ত্রিশ। এবার যাওয়া যেতে পারে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে গোপন অস্ত্রটা একবার অনুভব করে নিল পিয়ারী-লাল। বলা তো যায় না—এটাই ওর বন্ধু। একটা ছোট্ট ক্যালিবারের লুগার। সাক্ষাৎ কালনাগিনী। এটা ওর একদিকে ব্যবসা আর অন্যদিকে আত্মরক্ষারও হাতিয়ার। তেমন-তেমন বিপদে এটাই ওর বিপদত্রাতার ভূমিকা নেয়।
বৃষ্টি এখন নেই। পিয়ারীলাল বাড়িটার সামনে গিয়ে সামনের দরজায় হাত দিতেই সেটা খুলে গেল। চারদিকে একবার নজর বুলিয়ে ঢুকে গেল পিয়ারীলাল।
মস্ত বড় বাড়ি। মালিক বিখ্যাত ব্যবসায়ী মিশিরলালজি। লোকে তাকে ওই নামেই একডাকে চেনে।
বাড়িতে ঢুকতেই পিয়ারীলালের নজরে পড়ে বারান্দার শেষপ্রান্তে একটা ঘরে আলোর শিখা। ওর মনে পড়ল, আগের দিনও ওই ঘরেই ও এসেছিল।
পিয়ারীলাল তাই এগিয়ে গেল। ঘরে এসে পৌঁছতেই ওর চোখে পড়ল, একটা সোফায় বসে আছেন স্বয়ং মিশিরলালজি।
চমৎকার মেদবিহীন চাবুকের মতো চেহারা—দেহে সাহেবি পোশাক। চুরুটের গন্ধে ঘরটা ভরপুর।
পিয়ারীলাল সামনে এসে দাঁড়াতেই মিশিরলালজি বলে উঠলেন, ‘এসো, পিয়ারীলাল। তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। তবে সময়টা বড় বেয়াড়া বেছে নিয়েছ।’
ঘরে ঢুকে একটা সোফায় বসতে-বসতে পিয়ারীলাল বলে, ‘যে-কাজের যেমন দস্তুর, মিশিরলালজি।’
‘কথাটা মন্দ বলোনি।’
‘তাহলে কাজের ব্যাপারটা সেরে নেওয়া যাক।’ পিয়ারীলাল বলে এবার।
‘ব্যস্ত কেন? একটু গলা ভিজিয়ে নিতে আপত্তি আছে নাকি তোমার, পিয়ারী?’ মিশিরলালজি উঠে দাঁড়ালেন।
‘না, ইচ্ছে নেই।’ একটু সন্দিগ্ধ স্বরে জবাব দিল পিয়ারীলাল।
‘তোমার সন্দেহ হচ্ছে, পাছে কাজের সাক্ষীকে সরিয়ে দিই? না? মদে বিষ মেশানো আছে ভাবছ?’ হো-হো করে হেসে উঠলেন মিশিরলালজি।
‘যেমন মনে করেন,’ সতর্ক ভঙ্গিতে বলে পিয়ারীলাল, ‘আমার কাজটাই আমাকে এরকম করে তুলেছে। নিজের মনকেও তাই মাঝে-মাঝে অবিশ্বাস করে ফেলি।’
‘তুমি মজার মানুষ, পিয়ারীলাল। এরকম মানুষ আমার জীবনে আমি কখনও দেখিনি।’ মিশিরলাল পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট তুলে নিয়ে লাইটার দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে প্যাকেটটা এগিয়ে দিলেন এবার।
পিয়ারীলালকে ইতস্তত করতে দেখে মিশিরলালজি আবার বলে উঠলেন, ‘কী পিয়ারীলাল, সিগারেটে বিষ মিশিয়ে দিয়েছি ভাবছ নাকি? তুমি হাসালে।’
পিয়ারীলাল আর দ্বিধা করল না, একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে গুঁজে নিয়ে দেশলাই জ্বালিয়ে ধরিয়ে নিল।
ভকভক করে নাক-মুখ দিয়ে একগাদা ধোঁয়া ছেড়ে সিগারেটের প্যাকেটটা ঘুরিয়ে দেখল ও। তারপর বলে, ‘বিলিতি ব্র্যান্ড দেখছি। কোথায় পান এগুলো?’
‘কলকাতার বুকে পয়সা ছড়ালে, জানোই তো, বাঘের দুধও মেলে। এই ব্র্যান্ড আমার নেশা—অবশ্য চুরুটও তাই।’ মিশিরলালজি বললেন।
পিয়ারীলাল এবার ঘড়ির দিকে তাকাল : ‘মিশিরলালজি, অনেক রাত হল। এবার কাজটা শেষ করুন।’
‘ও, হ্যাঁ।’ মিশিরলালজি অ্যাটাচি খুলে এক বান্ডিল নোট বের করে টেবিলে এগিয়ে দিলেন ‘পাঁচ হাজারই আছে।’
পিয়ারীলাল বান্ডিলটা পকেটে ঢুকিয়ে নিল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, ‘চলি, মিশিরলালজি। সিগারেটের প্যাকেটটাও নিচ্ছি, বেড়ে মাল।’
‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, পিয়ারীলাল।’ দয়ার অবতার বলেই মনে হল মিশিরলালজিকে : ‘আবার দরকার হলে এসো।’
‘গুড বাই।’
‘গুড বাই।’
পিয়ারীলাল বেরিয়ে যেতেই ওর গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিশিরলালজি, মুখে একটা রহস্যময় হাসি।
এবার কাজ করে বেজায় খুশি পিয়ারীলাল। টাকাটাও কাজে লাগবে। অনেকদিন একটু দেশভ্রমণের শখ, এবার সেটা প্রাণভরে মিটিয়ে নেওয়া যাবে।
পকেট থেকে মিশিরলালজির কাছ থেকে আনা বিলিতি সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে একটা সিগারেট ধরাল এবার পিয়ারীলাল।
নাঃ, সিগারেটটা সত্যিই ভালো। মিশিরজির টেস্ট আছে বলতে হয়।
আরাম করে একটা জোরালো টান মারল পিয়ারীলাল।
হঠাৎ মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠল পিয়ারীলালের। ঘুরে পড়তে-পড়তে ও নিজেকে সামলে নিল।
এ কী! এরকম কেন হল? নিশ্বাস নিতেও দারুণ কষ্ট হচ্ছে। দম আটকে আসছে যেন!
পিয়ারীলাল উঠে দাঁড়াতে গিয়ে সটান শুয়ে পড়ল মাটিতে। অসম্ভব মাথা ঘুরছে। বুকের মাঝখানে একটা অসহ্য যন্ত্রণা।
দারুণ ঘাবড়ে গেল ও।
ওই সিগারেটটা! ওটাতেই কিছু ছিল নিশ্চয়ই! মিশিরলালেরই শয়তানি সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন কী করা উচিত, ভেবে পেল না পিয়ারীলাল। দু-চোখে অন্ধকার নেমে আসছে বুঝতে পারছে ও।
তাহলে কি ও মরে যাচ্ছে? গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল পিয়ারীলালের। মিশিরলাল ওকে এমনভাবে শেষ করল!
হাত-পা-শরীর সব যে ঠান্ডা হয়ে আসছে! যে-লোক এতদিন অম্লানবদনে মানুষ খুন করেছে, মৃত্যু আসছে বুঝতে পেরে তার ছেলেমানুষের মতো কান্না এসে গেল।
‘কে আছ, বাঁচাও!’ বলতে গেল পিয়ারীলাল।
কিন্তু এ কী, গলা দিয়ে যে স্বরও বেরোল না তার! সত্যিই ও মরে যাচ্ছে?
সিগারেটের প্যাকেটটা নজরে পড়ল পিয়ারীলালের। কোনওরকমে হাত বাড়িয়ে সেটা টেনে নিল ও। এখনও সাতটা সিগারেট আছে।
ও মরে যায় যাক, শয়তান মিশিরলালকেও শেষ করতে হবে। যে-কোনও একটা সঙ্কেত কি পুলিশের জন্য রেখে যেতে পারবে না?
প্রায় অসাড় হাতে প্যাকেটটা খুলে মেঝেয় সিগারেটগুলো ঢেলে ফেলল পিয়ারীলাল।
পুলিশ এল তিনদিন পরে।
এলাকার কয়েকজনই খবরটা দেয়। দরজা ভেঙে পুলিশ যখন ঘরে ঢুকল, পিয়ারীলালের দেহে তখন পচন ধরেছে।
পুলিশ দেখল, দেহের পাশে সিগারেট সাজিয়ে লেখা ইংরাজি বর্ণমালার দুটো অক্ষর—’এম’ আর ‘এল’।
সিগারেটের প্যাকেটটাও পাশেই পড়েছিল। পুলিশ সেটাও তুলে নিল। পোড়া সিগারেটের ক’টা টুকরোও।
ময়না তদন্তে জানা গেল, পিয়ারীলালের মৃত্যু হয়েছে মারাত্মক কোনও বিষে। সিগারেটগুলো পরীক্ষা করে কিছুই পেল না পুলিশ। বিষপ্রয়োগ কেমন করে হল, আবিষ্কার করাও সম্ভবপর হবে বলে মনে হল না। তবে পুলিশ সার্জনের মতে মারাত্মক বিষ ফুসফুসে ঢুকেছিল—আর তার সম্ভাবনা কোনও কিছু শ্বাসের মধ্যে গ্রহণ করেই।
তাহলে সিগারেটই দায়ী? গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর প্রশান্ত লাহিড়ীর সন্দেহ তাই-ই। হত্যাকারী চমৎকার সুযোগ নেয়। অনেক সিগারেটের মধ্যে মাত্র একটাতেই বিষ ছিল। পিয়ারীলাল সেটা খাওয়ামাত্রই মৃত্যুবরণ করেছে। একটা টুকরোতে বিষের সন্ধান মিলল।
কিন্তু হত্যাকারী কে হতে পারে? পিয়ারীলালের মতো মানুষের শত্রুর সংখ্যা সম্ভবতই অগণিত।
তবে একটা সূত্রই হাতে আছে! ইংরেজি এম ও এল।
মৃত্যু নিকটবর্তী দেখে পিয়ারীলাল অবশ্যই হত্যাকারীর নামটা সঙ্কেতের মধ্যে দিয়ে জানাতে চাইছিল। এ ছাড়া এ-রহস্যের অন্য ব্যাখ্যা চলে না।
অবশ্য সূত্র হিসেবে সিগারেটের প্যাকেটটাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়—কারণ ওরকম দামি সিগারেট পিয়ারীলালের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। সিগারেটের ওই প্যাকেট কেউ পিয়ারীলালকে দিয়েছে এবং সেটা অল্প ক’দিনের মধ্যেই।
এবার এই সিগারেটের প্যাকেট কোথায় পাওয়া যায়, সেই পথেই অনুসন্ধান চালাবেন ঠিক করলেন প্রশান্ত লাহিড়ী। রহস্যটা তাঁকে ভেদ করতেই হবে, একটা জেদ চেপে গেল লাহিড়ীর।
অনুসন্ধান অবশ্য সহজ নয়। কলকাতায় যারা চোরাই মালের ব্যবসা চালায়, তাদের কাছেই খোঁজ শুরু করতে হবে। ইনফরমারেরাই পারবে। লাহিড়ী লোভের জাল ছড়ালেন।
অচিরেই ফল মিলল। মধ্য কলকাতার একটা দোকানে ওই বিদেশি সিগারেটের ব্র্যান্ড প্রচুর দামে বিক্রি হয়। লাহিড়ী নিজেই এবার মাঠে নামলেন।
মধ্য কলকাতার সেই দোকানে ছদ্মবেশে একদিন পৌঁছলেন প্রশান্ত লাহিড়ী। দামি স্যুট পরনে। দেখলেই বোঝা যায়, পয়সাওয়ালা কোনও কাপ্তেন।
দোকানে লোকজন তেমন নেই। প্রশান্ত লাহিড়ী এটা-ওটা কিছু কিনে সেই প্যাকেটটা বের করলেন ‘পাঁচ প্যাকেট চাই। হবে?’
দোকানদার একবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এসবের কারবার আমরা করি না।’
লাহিড়ী বলে উঠলেন, ‘খবর নিয়েই এসেছি। যা দাম চান দেব।’
লোকটা নিচু গলায় বলে, ‘কার কাছে খবর পেলেন, মিশিরলালজি?’
প্রশান্ত লাহিড়ীর পক্ষে ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে দশ সেকেন্ডের বেশি লাগেনি—মিশিরলাল! এম আর এল। সঙ্গে-সঙ্গেই তিনি মাথা নোয়ালেন : ‘ঠিক। উনিই।’
‘পাঁচ প্যাকেটের দাম পঞ্চাশ টাকা পড়বে।’ লোকটা বলে।
‘তাই দেব। আনুন।’
লোকটা কিছুক্ষণ পর ফিরে আসতেই নিজ মূর্তি ধরলেন প্রশান্ত লাহিড়ী।
‘তোমরা নিষিদ্ধ বস্তুর কারবার চালাচ্ছ? তোমাদের গ্রেপ্তার করছি।’
লোকটা প্রায় ককিয়ে ওঠে, ‘স্যার, আপনি? কিন্তু স্যার, কোনও অপরাধ আমরা করিনি, স্যার। জাহাজের একজন—।’
‘ছেড়ে দেব এক শর্তে।’ লাহিড়ী বললেন।
‘বলুন, স্যার। আমরা যে-কোনও সাহায্য করব।’
‘মিশিরলালজি কে?’
‘চেনেন না স্যার? মস্ত কারবার। সোল অ্যাভিনিউতে বাড়ি। একখানা গাড়ি আছে—লাল রং! গাড়ির নম্বর ৭৮৪২।’
‘চমৎকার। ভয় নেই। তবে মিশিরলাল যেন এ-ঘটনা জানতে না পারে, সাবধান।’ খুশি-মনে বেরিয়ে এলেন লাহিড়ী।
মিশিরলাল! এম আর এল তো তার নামেরই আদ্যক্ষর। তবে কি সে-ই হত্যাকারী?
খুব সাবধানে এগোতে হবে।
মারাত্মক একটা প্রমাণই হাতে আছে। পিয়ারীলালের দেহের পাশে পড়ে থাকা সেই সিগারেট প্যাকেটের ওপর আঙুলের ছাপ। দু-রকম ছাপ পেয়েছে পুলিশ—একটা অবশ্য পিয়ারীলালের। অন্যটা কার? মিশিরলালের?
যাচাই করার জন্য মিশিরলালের হাতের ছাপ চাই।
সেই দোকানে নজর রাখল পুলিশ। আটঘাট বেঁধেই এগোতে হবে।
সাত দিনের মাথায় দেখা মিলল, লাল গাড়ি আর তার মালিক মিশিরলালজির। দোকানের মধ্যেই গোপনে ছিল পুলিশের লোক।
সওদা করে মিশিরলাল বেরিয়ে যেতেই পুলিশ হাতের ছাপ তুলল কাউন্টারের ওপর থেকে।
বিশেষজ্ঞরা ছাপ দুটো মেলাতেই নিঃসন্দেহ হলেন। দুটো ছাপই অবিকল এক—অর্থাৎ, মিশিরলালের।
প্রশান্ত লাহিড়ী এবার সোজা হাজির হলেন মিশিরলালজির বাড়িতে। করলেন সোজাসুজি আক্রমণ ‘পিয়ারীলালের হত্যাপরাধে আপনাকে গ্রেপ্তার করছি।’
মিশিরলাল শক্ত ধাতের লোক। তিনি বলে উঠলেন, ‘কে পিয়ারীলাল? জীবনে নাম শুনিনি।’
‘নাম শোনেননি, তবু আপনার দেওয়া সিগারেট খেয়েই মৃত্যু হল তার। ভারি আশ্চর্যের কথা, মিশিরলালজি। সিগারেটের প্যাকেটটা বিশ্বাসঘাতকতা করবে ভাবেননি। তা ছাড়া, পিয়ারীলালকেও ধন্যবাদ, সে সঙ্কেতে আপনার নাম চিনিয়ে দিয়েছে।’ প্রশান্ত লাহিড়ী বললেন, ‘প্যাকেটে আপনার আঙুলের ছাপ অস্বীকার করবেন কেমন করে?’
ফাঁসির দড়িটা যেন এবার চোখের সামনে দেখতে পেয়ে গলায় হাত বোলাতে চাইলেন মিশিরলালজি।
মাসিক রোমাঞ্চ
আগস্ট, ১৯৭৮