নাগরাজ কৌরব্যের কন্যা। বিবাহের অল্প পরেই এঁর স্বামীকে সুপর্ণ অপহরণ করেন। পুত্রহীনা উলুপী পিত্রালয়েই বসবাস করতেন। এক ব্রাহ্মণের গোধন রক্ষা করার জন্যে অস্ত্র খুঁজতে যুধিষ্ঠির ও দ্রৌপদীর শয়নঘরে প্রবেশ করায়, ভ্রাতাদের মধ্যে পূর্বস্থাপিত নিয়মে অর্জুন বারো বৎসরের জন্য ব্রহ্মচর্য পালন করতে বনবাসে যান। এই বনবাসের সময়ে উনি হরিদ্বারে গঙ্গায় যখন স্নান করছিলেন, তখন তাঁর রূপে মোহিত হয়ে উলুপী ওঁকে জলের নিচে নাগলোকে নিয়ে যান। সেখানে অর্জুনকে বলেন যে, তিনি অর্জুনকে পতিরূপে পেতে চান। অর্জুন জানান যে, তিনি ব্রহ্মচর্য পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। উলুপী তখন বলেন যে, তিনি অর্জুনের ব্রতের কথা জানেন। অর্জুনের ব্রহ্মচর্য শুধু দ্রৌপদীর জন্যই। ওঁর সঙ্গে মিলিত হলে কোনও ব্রতভঙ্গ হবে না। উলুপী শরণাগতা নারী, তাঁর অভিষ্ট পূর্ণ করাই হবে ধর্মযুক্ত কর্ম। অর্জুন তখন উলুপীর ইচ্ছা-পূরণ করলেন। বিদায়কালে উলুপী অর্জুনকে বর দেন যে, তিনি জলের ভেতর অজেয় হবেন এবং জলচররা সবাই ওঁর বশীভূত থাকবে। উলুপীর পরপূর্বা হওয়ায় তাঁর গর্ভজাত পুত্র ইরাবান্, ওঁর পূর্বপতির ক্ষেত্রজ পুত্র হিসেবেই পরিচিত হন। যদিও ইন্দ্রলোকে গিয়ে ইরাবান্ অর্জুনের কাছে নিজেকে অর্জুন-পুত্র বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও পাণ্ডবদের হয়ে যুদ্ধ করে তিনি প্রাণ দান করেন। উলুপী অর্জুনের সংবাদ সব সময়ে রাখতেন। অর্জুন শিখণ্ডীকে সন্মুখে রেখে ভীষ্মকে শরশয্যায় শায়িত করেছিলেন বলে বসুগণ যখন গঙ্গাদেবীর সামনে অর্জুনকে নরকাবাসের অভিশাপ দিচ্ছেন, উলুপী তখন সেটা শুনতে পান। তাঁর অনুরোধে পিতা কৌরব্য শাপমোচনের জন্য বসুগণকে অনুরোধ করলে বসুগণ বলেন যে, পুত্র বভ্রুবাহনের বাণে পরাস্ত হয়ে রণভূমিতে শয্যাশায়ী হলেই অর্জুনকে আর নরকাবাস করতে হবে না। যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ-যজ্ঞের অশ্বকে নিয়ে যুদ্ধার্থী অর্জুন যখন মণিপুরে এসে পৌঁছলেন, তখন পুত্র বভ্রুবাহন যুদ্ধ না করে ভক্তি সহকারে অর্জুনকে অভ্যর্থনা জানালেন। অর্জুন পুত্রের এই কাপুরুষতা দেখে যখন ধিক্কার দিচ্ছেন, তখন উলুপী ভূমিতল থেকে উঠে এসে নিজেকে বভ্রুবাহনকে বিমাতা বলে পরিচয় দিয়ে পুত্রকে বললেন যুদ্ধ করতে। বিমাতার আদেশে বভ্রুবাহন যুদ্ধ শুরু করলেন এবং তাঁর বাণে অর্জুন ভূমিশয্যা নিলেন। তখন উলুপী সঞ্জীবন-মণি এনে অর্জুনকে সুস্থ করে বসুগণের শাপের কথা সবাইকে বললেন। অশ্বমেধ যজ্ঞে অর্জুনের আমন্ত্রণে চিত্রাঙ্গদা ও বভ্রুবাহনের সঙ্গে উলুপীও এসেছিলেন এবং পাণ্ডবদের মহাপ্রস্থানে যাওয়া পর্যন্ত উলুপী পাণ্ডবদের সঙ্গেই ছিলেন। পাণ্ডবরা চলে গেলে তিনি আবার গঙ্গা-গর্ভে ফিরে যান। পরপূর্বা হওয়া সত্বেও উলুপীকে অর্জুন ভার্যার সন্মান দিয়েছেন।