বিরাটরাজের কন্যা। অর্জুন-পুত্র অভিমন্যুর সঙ্গে ওঁর বিবাহ হয়। ওঁর পুত্র পরীক্ষিত্ পাণ্ডবরা মহাপ্রস্থানে গমন করলে সিংহাসনে বসেন। পাণ্ডবরা যখন অজ্ঞাতবাস করছিলেন, তখন অর্জুন বৃহন্নলা সেজে উত্তরা ও তাঁর সখীদের নৃত্যগীত শেখাতেন। কৌরবরা যখন বিরাট রাজের গোহরণ করছেন, তখন উত্তরার অনুরোধে বৃহন্নলা উত্তরের সারথ্য গ্রহণ করেন। অর্জুন নিজেও সেটা চেয়েছিলেন, সেইজন্য সৈরিন্ধ্রী-বেশী দ্রৌপদীকে দিয়ে অন্তঃপুরবাসিনীদের মধ্যে প্রচার করিয়েছিলেন যে, বৃহন্নলা একজন ভালো সারথি। উত্তরা ও তাঁর সখীরা বৃহন্নলাকে বলেছিলেন, ওঁদের পুতুলের জন্য কৌরবদের সুন্দর বস্ত্রগুলি আনতে। বৃহন্নলা তাঁদের সেই অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন। পাণ্ডবদের আত্মপ্রকাশের সময়ে অর্জুন উত্তরাকে তাঁর পুত্র অভিমন্যুর জন্য চাইলে, বিরাটরাজ সানন্দে সেই প্রস্তাবে সন্মতি দিলেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অভিমন্যু যখন নিহত হন, তখন উত্তরা সন্তানসম্ভবা। যুদ্ধশেষে পাণ্ডবদের শিবিরে ঢুকে নিদ্রিত বীরদের হত্যাকরে অশ্বত্থমা যখন আত্মগোপন করার চেষ্টা করছেন, তখন পাণ্ডবরা তাঁর সন্মুখীন হন। অশ্বত্থমা পাণ্ডবদের উদ্দেশ্যে ভয়ানক অস্ত্র ব্রহ্মশির নিক্ষেপ করলেন। অর্জুনও সেটিকে প্রতিহত করার জন্য ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। দুই মহা অস্ত্রের তেজে প্রলয় উপস্থিত হচ্ছে দেখে মহর্ষি ব্যাস আর দেবর্ষি নারদ দুজনকেই অস্ত্র প্রত্যাহার করতে বললেন। অর্জুন পারলেও অশ্বত্থমা পারলেন না। নিরুপায় হয়ে অশ্বত্থমা তাঁর অস্ত্র উত্তরার গর্ভস্থ সন্তানকে বিদ্ধ করতে বললেন। কৃষ্ণ তখন বললেন, যে তিনি নিজে উত্তরার অস্ত্রদগ্ধ সন্তানকে ভূমিষ্ঠ হবার পর বাঁচিয়ে তুলবেন। যথা সময়ে উত্তরা মৃত সন্তান প্রসব করলেন। পুরনারীরা যখন সবাই কাঁদছেন, তখন কৃষ্ণ এসে সেই সন্তানকে পুনর্জীবিত করলেন। কুরুবংশ ক্ষীণপ্রায় হচ্ছে বলে এঁর নাম রাখা হল পরীক্ষিৎ। পাণ্ডবরা যখন ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও কুন্তিকে দেখতে আশ্রমে গিয়েছিলেন তখন উত্তরাও তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। ব্যাসদেবের বরে তিনিও পিতা, ভ্রাতা ও স্বামীকে আবার দেখতে পান। পরে ব্যাসদেবের বরেই গঙ্গায় নিজের দেহরক্ষা করেন।