ঈগল ও শৃগালী।
এক ঈগল ও এক শৃগালী, উভয়ের অতিশয় সদ্ভাব ছিল। ঈগল এক উচ্চ বৃক্ষের শাখায় নীড় নির্ম্মাণ করিয়া, তন্মধ্যে থাকিত; আর শৃগালী, সেই বৃক্ষের মূলদেশে এক গর্ভে অবস্থিতি করিত।
একদিন, শৃগালী আহারের চেষ্টায় বহির্গত হইয়াছে, এমন সময়ে, ঈগল অতিশয় ক্ষুধাৰ্ত্ত হইয়া, নীড় হইতে নির্গত হইল; এবং, “আমি যেরূপ উন্নত স্থানে থাকি, শৃগালী আমার কিছুই করিতে পারিবে না,” এই ভাবিয়া, আহারের নিমিত্ত তাহার একটি শাবক লইয়া, নিজ নীড়ে প্রবিষ্ট হইল। কিঞ্চিৎ পরেই শৃগালী আবাসে আসিয়া জানিতে পারিল, ঈগল তাহার একটি শাবক লইয়া গিয়াছে। তখন সে মিত্রদ্রোহী বলিয়া, ঈগলের যথেষ্ট ভর্ৎসনা করিল; এবং অনেক বিনয় করিয়া, আপন শাবকটিকে ফিরাইয়া দিতে বলিল। ঈগল শাবক ফিরাইয়া দিতে কোনও মতে সম্মত হইল না।
ঈগলের এইরূপ অসৎ আচরণ দেখিয়া, শৃগালী অত্যন্ত কুপিত হইল, এবং অবিলম্বে শুষ্ক তৃণ ও কাষ্ঠের আহরণ করিয়া, বৃক্ষের চতুর্দ্দিকে সাজাইয়া, আগুন লাগাইয়া দিল। ক্রমে ক্রমে ধূম ও অগ্নিশিখা বৃক্ষের অনেক দূর পর্য্যন্ত উঠিল। তখন ঈগল আপনার ও আপন শাবকগণের প্রাণনাশের সম্ভাবনা দেখিয়া, অতিশয় ভীত ও অস্থির হইল, এবং তৎক্ষণাৎ শৃগালীর শাবকটি ফিরাইয়া দিয়া বিনয়বাক্যে বারংবার এই বলিতে লাগিল, “আমি না বুঝিয়া অসৎ কর্ম্ম করিয়াছি। তুমি ক্ষমা ও দয়া করিয়া অগ্নি নির্ব্বাণ করিয়া দাও। আমি শপথ করিয়া বলিতেছি, আর কখনও এরূপ অসৎ কর্ম্ম করিব না।” ঈগলের বিনয়-বাক্য ও প্রার্থনা শুনিয়া, শৃগালীর অন্তঃকরণে দয়ার উদয় হইল। তখন সে, অতিশয় যত্ন ও পরিশ্রম করিয়া, অবিলম্বে অগ্নি নির্ব্বাণ করিয়া দিল।