ইসলামী ইনকুইজেশন
মনির হোসেন অনন্ত বিজয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, একসঙ্গে যুক্তি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল নামে এক সংগঠন গড়েছিলেন সিলেটে। অনন্তর মতো মনিরও ব্লগ লিখতেন মুক্তমনায়। অনন্ত বিজয় আর মনির দুজনকেই ইসলামী সন্ত্রাসীরা হুমকি দিতো ফোনে। অনন্তর জন্য তারপরও একটা ব্যবস্থা হয়েছিলো। সুইডেনের লেখক-কবিদের সংগঠন পেন থেকে একটা আমন্ত্রণ পত্র যোগাড় হয়েছিল। মনির অনন্তর সঙ্গে ঢাকায় গিয়েছিলো যেদিন সুইডেনের ভিসার জন্য আবেদন করেন অনন্ত, ১২ এপ্রিল তারিখে সুইডেনের দূতাবাস অনন্তর সাক্ষাৎকার নেয়, ২২ এপ্রিল তারিখে জানিয়ে দেয়, তারা অনন্তকে ভিসা দেবে না। সিলেটে ফিরে আসার পর ১২ মে তারিখে অনন্তকে দিন দুপুরে কুপিয়ে মেরে ফেলে ইসলামী জঙ্গিরা। অনন্তকে খুন করার পর মনিরকে ফোনে হুমকি দিচ্ছে। অচেনা কণ্ঠ বলছে, রেডি হয়ে যা। নেক্সট তুই। কেউ আবার কোনও কথা না বলে ফোনে কোরানের সুরা বাজাচ্ছে। মনির সিলেটের একটা কলেজে বাংলা পড়াতেন। এখন চাকরি বাকরি সব ফেলে। সিলেট ছেড়েছেন মনির। ঢাকায় বন্ধুর বাড়িতে লুকিয়ে আছেন। ঘর থেকে কোথাও বের হচ্ছেন না। চেষ্টা করছেন দেশের বাইরে চলে যাওয়ার। যোগাযোগ করছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে। ভিসা এখনও জুটছে না। সিদ্ধার্থ ধরও হুমকি পাচ্ছেন। কিছুদিন আগে আমেরিকার দূতাবাস থেকে ঘুরে এসেছেন। ভিসা পাননি। নিলয় নীল আর সন্ন্যাসী রতনের বাড়িতে তল্লাশি চলেছে, ওঁরা পালিয়ে গেছেন অচেনা গ্রামে। সম্ভবত চেহারা বদলে নিয়েছেন। দাড়ি রাখছেন। বেশভুষা নাম ধাম। সব বদলে ফেলেছেন। ভিসা না পেলে মনিরও চলে যাবেন গহীন গ্রামে। যেখানে কেউ তাঁকে চিনতে পারবে না। শহরে আছেন অনন্য আজাদ, তিনিও দেশ ছাড়তে চাইছেন। মাথায় হেলমেট পরে ঘর থেকে বেরোন। অতর্কিতে কোপাতে এলে যেন হেলমেটের কারণে মাথাটা বাঁচে। কোপ খেয়েও আসিফ মহীউদ্দিন প্রাণে বেঁচেছিলেন, মোটা শীতের কাপড় পরা ছিল বলে। মুক্তচিন্তক ব্লগারদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আতংক। মোহাম্মদ ইসলামের মতো দেশের অনেক মুক্তচিন্তক ব্লগার লেখালেখি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ইউরোপ-আমেরিকায় বাস করছেন যাঁরা, তাঁরাই শুধু নির্ভয়ে লিখতে পারছেন। মসিউর রহমান (মরহুম আল্লামা শয়তান)এর নাম ৮৪ জনের তালিকায়, হাসিনার সরকার তাঁকে জেলেও রেখেছিলো কয়েকমাস। সঙ্গে ছিলেন আসিফ মহীউদ্দিন আর সুব্রত শুভ। আসিফ আর সুব্রত দেশ ছেড়েছেন। মসিউর রহমান এখনও সুযোগ পাননি দেশ ছাড়ার। এখনও ফেসবুকে লিখছেন। তবে ধার কমিয়ে দিয়েছেন লেখায়। তাতে কি ক্ষমা পাবেন? ধর্মান্ধদের অভিধানে দয়া মায়া ক্ষমা এসব নেই।
সবাই ভাবছে কোপ এবার তাকেই খেতে হবে। প্রায় প্রতিমাসেই একজনকে কুপিয়ে মারা হচ্ছে। হুমকি পেয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করতে গেছেন কিছু ব্লগার, পুলিশ রিপোর্ট নিচ্ছে না, সোজা বলে দিচ্ছে, বাঁচতে চাইলে দেশ থেকে পালাও। খুনীদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ, কেন করছে না জিজ্ঞেস করলে বলছে, ওপরের নির্দেশ নেই। কুপিয়ে মারার জন্য সন্ত্রাসীরা নতুন তালিকা বানিয়েছে। ৮৪ জনের পুরোনো তালিকায় ওয়াশিকুর ছিলেন না। ওই তালিকায় মনির এবং অন্যান্য যাঁরা হুমকি পাচ্ছেন এখন, তাঁরা নেই। পুরোনো তালিকায় ছিলেন নাস্তিকের ধর্মকথা। চাপাতি চালানো খুনীরা তাঁরও পিছু নিয়েছে। শুধু ফেসবুক ব্লগারদের নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিউল ইসলামকে সেদিন কুপিয়ে মেরে ফেললো ইসলামী সন্ত্রাসীরা। শফিউল ইসলাম তাঁর ক্লাসের ছাত্রীদের বোরখা পরে আসতে বারণ করেছিলেন, বলেছিলেন মুখ ঢাকা থাকলে পড়াতে অসুবিধে হয়। পরের দিন ইসলামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে মেরে ফেলেছে শফিউল ইসলামকে।
শেখ হাসিনা অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান আর অনন্ত বিজয় দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর একটি বিবৃতিও দেননি। শুনেছি তিনি পরের নির্বাচনে জেতার জন্য মৌলবাদী পটাচ্ছেন। মুক্তমনা ব্লগারদের নিরাপত্তা তো দেবেনই না, খুনীদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেবেন না। এই দুঃসহ অবস্থায় দেশ ত্যাগ করা ছাড়া ওঁদের আর কোনও উপায় নেই। আপাতত বাঁচুক। দেশের অবস্থা ভালো হলে না হয় ফিবে দেশে। কিন্তু মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা শাহরিয়ার কবির চান না ব্লগাররা দেশ ছাড়ুক। তিনি বলছেন, দেশ ছেড়ে লাভ কিছু হবে না, লাভ হবে জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে। জামাতে ইসলামি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত, কিন্তু নিষিদ্ধ হলে সন্ত্রাসীরা নাস্তিকদের খুন করবে না, এ হলফ করে কে বলতে পারে? এতকাল যাবৎ জামাতে ইসলামির বাইরেও লক্ষ লক্ষ মৌলবাদী-সন্ত্রাসীর জন্ম হয়েছে, তারা জামাতের চেয়েও বেশি ভয়ংকর। তারা আইসিস-আলকায়দার নির্দেশে চলে। শাহরিয়ার কবির বললেন তাঁর হাতে পিস্তল আছে, এবং তিনি একা বাইরে বেরোন না। শাহরিয়ার কবির না হয় লাইসেন্স সহ পিস্তল যোগাড় করতে পারেন। কিন্তু অল্প বয়সী নাস্তিক ব্লগাররা পিস্তল কোত্থেকে যোগাড় করবে, লাইসেন্সই বা তাদের কে দেবে? যে সরকার তাদের কোনও দেহরক্ষী দেয় না, সে সরকার তো লাইসেন্স দেবে না। কিছুদিন আগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। যে দল খুন করে এসে গোটা দেশকে জানিয়ে দিচ্ছে তারা খুন করেছে, তারপরও তাদের টিকিটি পর্যন্ত স্পর্শ করছে। না সরকার। তাদের নিষিদ্ধ করলেই কী, বা না করলেই কী!
হুমকি আমিও পাচ্ছিলাম। ঢাকার গোয়েন্দা রিপোর্ট বলেছে, আমাকে খুন করার জন্য আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুতিনটে স্লিপার সেলকে নাকি পাঠানো হচ্ছে। দিল্লিতে। আমি কি তাই পালিয়ে আমেরিকা চলে এসেছি? পালিয়ে আসার মানুষ তো কোনওদিনই ছিলাম না। বাংলাদেশে বাস করছিলাম যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার ফাঁসি চাওয়ার জন্য মিছিল করতো। দেশ থেকে তাড়ানো হয়েছিল আমাকে। পশ্চিমবঙ্গে আমার বিরোধী মৌলবাদীর সংখ্যা নেহাত কম ছিল না, বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদেরও বেশ যাতায়াত ছিল, সেই পশ্চিমবঙ্গে থেকে আমি বেরোইনি, আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ জায়গা ফেলে আমি তো সারা জীবন অনিরাপদ জায়গাতেই বাস করেছি, শুধু নির্যাতিত মানুষদের, যাদের নিয়ে লিখি, তাদের পাশে থাকার জন্য। আমি এসেছি আমেরিকায়, কাজ করছি আমেরিকার সেকুলার মানববাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে, আমেরিকার সরকারকে বলে যেন বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগারদের ভিসার ব্যবস্থা করে, এবং এখানেই তাদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেয়। সবচেয়ে ভালো হতো ওরা যদি দেশে নিরাপত্তা পেতে। কিন্তু মুশকিল হলো সরকার মৃত্যুর হুমকি পাওয়া কোনও নাস্তিককে নিরাপত্তা দেবে না। নাস্তিকদের মৃত্যুতে সহানুভূতিও দেখাবে না। এতে যদি আবার সরকারকে নাস্তিক বলে মনে হয়। তাহলে সব্বনাশ। ভোট তো পাবে না ধর্মান্ধদের।
নিজের সুবিধের জন্য, নিজের বাঁচার জন্য, আজ অবধি কোনওদিন কিছু করিনি আমি। লক্ষ লক্ষ মৌলবাদীরা যখন দেশ জুড়ে তাণ্ডব করছিলো, আমার ফাঁসি চাইছিল, আমি দেশ ছাড়িনি, সরকার আমাকে তাড়িয়েছে। আজ একুশ বছর নির্বাসনে, সারা পৃথিবীতে আমার নিজের কোনও ঘর নেই। দিল্লিতে অন্যের বাড়িতে থাকি। যে কোনও দিন পাততাড়ি গুটোতে বললে গুটোতে হবে। আক্ষরিক অর্থে গৃহহীন যাকে বলে, সে আমিই। প্রায় কুড়ি বছর আগে যখন চারদিকে আমার নাম ডাক, ইসলামী মৌলবাদীরা হাতের নাগালে পেলে কাঁচা খেয়ে ফেলবে, এই খবর যখন বিশ্বের সর্বত্র প্রচার হচ্ছে, ইউরোপের সরকার, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করা হতো, তোমাকে কী করে সাহায্য করতে পারি বলো। আমি সবাইকেই বলেছি, ব্যক্তি আমাকে সাহায্য করতে হবে না। বাংলাদেশের মেয়েদের সাহায্য করো। আমাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে বলে কিছু দাতা দেশ বলেছিলো তারা বাংলাদেশকে দান দেওয়া বন্ধ করে দেবে কিনা। আমি বলেছি, ও কাজটি কখনও করো না। বাংলাদেশের দরিদ্র মেয়েরা তোমাদের সাহায্য পেলে খেয়ে পরে বাঁচবে, শিক্ষিত আর স্বনির্ভর হতে পারবে। না, নিজের জন্য আজও ভাবছি না। আমার জন্য যে ফাগু তোলা হচ্ছে আমেরিকায়, তা খরচ করা হবে দেশের মুক্তমনা ব্লগারদের আমেরিকায় আসার আর থাকার খরচে।
আমার ভয় হচ্ছে, যুক্তিবাদী মুক্তমনা লেখকদের আবার ছুট্টি হয়ে যাচ্ছে না তো! দেশে কমপিউটার বন্ধ। বিদেশে পালিয়ে এসে জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত হয়ে উঠবে। লেখালেখি হয়তো আর হবে না অনেকের। ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কার থেকে সমাজকে মুক্ত করার কাজে কেউ আর হয়তো আগের মতো এগিয়ে আসবে না। সবাই তো আর আমার মতো নয়। যুগ যুগ ধরে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভাসমান জীবন কাটিয়ে হলেও, জীবনের ঝুঁকি নিয়েও, ফতোয়া সয়ে, নির্যাতন সয়ে, ঘাড়ধাক্কা, অন্যায়, অপমান, নিষেধাজ্ঞা, ঘৃণা সয়েও মানবাধিকারের জন্য, নারীর সমানাধিকারের জন্য, বাক স্বাধীনতার জন্য, সহিষ্ণুতার জন্য, সমতার জন্য, যা হয় হোক, লড়াই করে যাবে!
সমাজ যেভাবে আছে, সেভাবেই যদি থাকে, ঘটে বুদ্ধি আছে এমন কাউকেও চাপাতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব নয়। সমাজকে বদলাতে হলে ধর্মান্ধদের অনুভূতিতে আঘাত করাটা খুব জরুরি, বিশেষ করে ধর্মানুভূতিতে। অন্য কোনও অনুভূতিতে আঘাত লাগলে মানুষ এত বীভৎস-বর্বর হয়ে ওঠে না, কেবল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলেই হিতাহিত জ্ঞান হারায়। যারা বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার বিরুদ্ধে, তারা অনেকই ব্লগারদের পক্ষ নিতে গিয়ে বলছেন যে ওরা কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়নি। তাহলে কি তারাও ধর্মান্ধদের মতো মনে করেন ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়া অন্যায়? মুশকিলটা ঠিক এই জায়গায়। লক্ষ্য করেছি, এটা মেনে নিতে গণ্যমান্য মনীষীদেরও অসুবিধে হচ্ছে যে, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়াটা অন্যায় নয়।
এমন কে আছে যার কোনও অনুভূতিতে আজ অবধি কোনও আঘাত লাগেনি। অনুভূতিতে কোনওরকম আঘাত ছাড়াই পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাওয়ার দাবি অত্যন্ত অন্যায় দাবি। সব মানুষের মত এক নয়। মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করলে অনুভূতি একবার কেন, বাবার আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে অনুভূতির ওপর আঘাত নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকতেই হবে যদি গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রাখতে হয়।
ধর্মানুভূতির রাজনীতি অনেককাল ধরে চলছে। ধর্মানুভূতির সঙ্গে সংঘাত লাগছে গণতন্ত্রের, শুভবুদ্ধির, জ্ঞজ্ঞানের, বিজ্ঞানের, নারীর অধিকারের, মানবাধিকারের, সমানাধিকারের। যে কোনও একটি পক্ষ আমাদের নিতেই হবে। আমরা ধর্মানুভূতি রক্ষা করতে চাই নাকি গণতন্ত্র, শুভবুদ্ধি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, নারীর অধিকার, মানবাধিকার, সমানাধিকার ইত্যাদি রক্ষা করতে চাই?
ধর্মানুভূতি নিয়ে রাজনীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এখন। এর সমাধান কিন্তু ধর্মানুভূতিতে আঘাত না করা নয়। বরং উল্টো। ধর্মানুভূতিতে ক্রমাগত আঘাত করে যেতে হবে। মুহুর্মুহু আঘাতের ফলেই এই আঘাত গা সওয়া হবে। ধর্মানুভূতিকে নিয়ে ধর্ম ব্যবসা এক্ষুণি বন্ধ না করলে অসং ধর্মব্যবসায়ীরা সমাজের যেটুকু বাকি আছে ধ্বংস হওয়ার সেটুকুও ধ্বংস করবে।
পৃথিবীর কোথাও নারীবিদ্বেষীদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও মানবাধিকারবিরোধী লোকদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্র বিরোধী লোকদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও ধর্মান্ধদের অনুভূতিকে আঘাত না দিয়ে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও মানুষের ধর্মানুভূতিকে ক্রমাগত আঘাত না দিয়ে ধর্মানুভূতির নামে ধর্মব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হবে না, ধর্মীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা সম্ভব হবে না, ইসলামি ইউকুইজেশন বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
নাস্তিক ব্লগারদের পক্ষ নিতে চাইলে ওরা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেনি, এটা বলাটা ঠিক নয়। বরং বলা উচিত, ওরা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে, কারণ আঘাতটা জরুরি ছিল। বিজ্ঞানের সঙ্গে সংঘাত ধর্মের চিরকালের। বিজ্ঞানীরা, বিজ্ঞান যে মানে না, তাদের ধারালো ছুরি শানিয়ে কোপাতে যায় না। কিন্তু ধার্মিকরা, ধর্ম যে মানে না তাদের কোপাতে যায়। এ মহানবীর আদর্শ। তিনি এভাবে কুপিয়ে বিধর্মী মারতেন, অবিশ্বাসীদের মারতেন। তাঁর অনুসারীদের এভাবেই মারতে শিখিয়ে গেছেন তিনি। এই একবিংশ শতাব্দিতে চৌদ্দশ বছর আগের বর্বরতাকে প্রশ্রয় দেবো না আমরা। কোপানোর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ না হলে কোপানো চলতে থাকবে। আজ বিজ্ঞানীদের, মুক্তমনাদের কোপাবে, কাল হিজাব না পরলে, নামাজ না পড়লে, রোজা না করলে কোপাবে।