দ্বিতীয় খন্ড
উত্তরপর্ব
2 of 3

ইন্দ্রের ঘোটকীদান

।। ইন্দ্র কা বরদান।।

ভীষমঃ সিংহস্থিতে গংগাকূলে শকপ্রজকঃ। শত্রুং সূর্যময়ং জ্ঞাত্বা তপষা সমতোষয়ৎ।।১।। মাসান্তে ভাবানিদ্রো জ্ঞাত্বা তদ্ভক্তি মুত্তমাম্। বরং বরয় চ প্রাহ শ্রুত্বা শূরোব্রবীদিদম্।।২।। দেহি মে বড়বাং দিব্যাং মদি তুষ্টো ভবান প্রভুঃ। ইতি শ্রুত্বা তদা তস্থৈ বড়বাং হরিনীং শুভাম্।।৩।। দদৌ স ভগবানিদ্রস্তত্রৈবাক্ত হিতো ভবৎ।।৪।। তস্মিন্ কালে পরিমলঃ পিতৃশোক পরায়ণঃ। পার্থিবৈ পূজয়ামাস মহাদেব মুমাপতিম্। পরীক্ষার্থে শিবঃ সাক্ষাৎ স্পরোগেন তং প্ৰসৎ।।৫।। ব্যতীতে পঞ্চমে মাসে নৃপের শক্তি বিবর্জিতঃ। ‘ন তত্যাজ মহাপূজাং মহাক্লেশ সমন্বিতঃ।।৬।। মরণায় যযৌ কাশীং স্বপত্ন্যা সহিতো নৃপঃ। উবাস বট মূলান্তে রাত্রৌ রোগপ্রপীড়িতঃ।।৭।। এতস্মিন্নন্তরে কশ্চিৎপন্নগো মূলসংস্থিতঃ। শব্দং চকার মধুরং শ্রুত্বা রুদ্রাহিরামযৌ।।৮।। রুদ্রাংহি পন্নগঃ প্রাহ ভবান্নিদয় মন্দধীঃ। শিবভক্তং নৃপমিযং পীড়য়েৎ প্রত্যহং খলঃ।।৯।। মুখোহয়ং ভূপতিঃ সাক্ষাদারনালং পিবেন্নহি। ইতি শ্রুত্বা স রুদ্রাহিরাহ রে পন্নগাধম।।১০।। রাজ্ঞো দেহে পরং হর্ষং প্রত্যহং প্রাপ্ত বাহনম্‌ম্ স্বগেহং দুঃখস্ত্যাজ্যং কথং ত্যাজং ময়াশঠ।।১১।। মূর্খোত্ৰ ভূপতিয়ো বৈ তৈলোষ্টং যন্ন দত্তবান্। ইত্যক্ত্বান্ তৰ্গতো দেহে শ্রুত্বা সামলনা সতী।।১২।। চ কার পন্নগোক্তং তদ্ গতরোপো নৃপোহভবৎ। তৈলষ্ণৈ বিলযা পূর্য চ খান্ চ সতী স্বয়ম্।।১৩।। ততো জাতং স্বয়ং লিংগমংষ্ঠাভং সনাতনম্। জ্যোতিরূপং বিদানন্দং সর্বলক্ষ্মণ সমান্বিতম্।।১৪।। নিশীথে তম উদভূতে দিক্ষু সূৰ্যত্বমাগতম্। দৃষ্ট্বা স বিস্থিতো রাজা পূজয়ামাস শংকরম্।।১৫।। মহিন্ম স্তবাপাঠৈশ্চ তুষ্টা গিরিজাপতিম্। তদা প্রসন্নো ভগবান্ বরং ব্রুহি তমব্রবীৎ।।১৬।। শ্ৰুবাহ নৃপতি দে যদি তুষ্টো মহেশ্বর। শ্রীপতিমৈ গৃহং প্রাপ্য বমেনমৎপ্রিয় কারকঃ।।১৭।।

।। ইন্দ্রের ঘোটকী দান।।

এই অধ্যায়ে ভীষ্মরাজের তপস্যায় সন্তুষ্ট ইন্দ্রদেবের বরদানের কথা বর্ণিত হয়েছে।

সূতজী বললেন–গঙ্গাতটে ভীষ্মসিংহ সূর্যময় শত্রুকে তপের দ্বারা সন্তুষ্ট করেছিলেন। একমাস পরে ভগবান্ ইন্দ্র তার সর্বোত্তম ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বললেন–বরদান প্রার্থনা কর। সেকথা শুনে সেই বীর বললেন–যদি আপনি আমার তপস্যায় প্রসন্ন হন তাহলে আমাকে দিব্য ঘোটকী প্ৰদান করুন। তার কথা শ্রবণ করে ইন্দ্র পরম সুন্দরী ঘোটকী তাকে দিলেন। সেই সময় রাজা পরিমল নিজ পিতার শোকে কাতর ছিলেন। তিনি পার্থিব শিবলিঙ্গ পূজন করেছিলেন। পরীক্ষার জন্য শিব তাকে সর্পরোগে গ্রাস করলেন। পাঁচমাস ব্যতীত হলে রাজা শক্তি বর্জিত হয়ে গেল। কিন্তু মহাক্লেশযুক্ত হয়েও তিনি মহাদেবের পূজা ত্যাগ করেন নি। নিজ পত্নীর সাথে রাজা মৃত্যুর জন্য কাশী চলে গেলেন। সেখানে বটমূলান্তে রোগ পীড়িত হয়ে বাস করতে লাগলেন। এতিমধ্যে কোনো পন্নগ মূলে পতঙ্গের শব্দ শুনে মহাদেবের স সেখানে এসে উপস্থিত হল। সেই মধুর শব্দ শ্রবণ করে পন্নগ বলল — তুমি তো অত্যন্ত নির্দয়ী, রাজাকে খলের ন্যায় নিত্য পীড়া দিচ্ছ। প্রত্যুত্তরে সর্পটি বলল–রে অধম পন্নগ, রাজা তো বড় মুর্খ, কেননা আরনাল তিনি সেবন করেন না। রাজার শরীরে আমি প্রত্যহ পরম হর্ষ প্রাপ্ত করি, নিজ গৃহ কোন্ দুঃখে ত্যাগ করব। রাজা এতই মূর্খ যে যিনি তৈলোষ্ণ দেন না। একথা বলে সে দেহে প্রবেশ করল। রাজপত্নী মলনাসতী একথা শ্রবণ করে রাজাকে বললেন। সেই কথা শ্রবণ করে রাজা রোগমুক্ত হলেন। উষ্ণ তৈলে বিল পূরিত করলে সেখানে অঙ্গুল পরিমাণ সনাতন লিঙ্গ উৎপন্ন হল। সেই লিঙ্গ জ্যোতিরূপ চিদানন্দ ও সমস্ত লক্ষণ সংযুক্ত ছিল। অর্ধরাত্রে অন্ধকারে উৎপন্ন হলে চতুর্দিকে সেই জ্যোতি ছড়িয়ে পড়ল। রাজা তা দেখে অত্যন্ত বিস্মিত হলেন। তিনি ভগবান্ শংকরের পূজা করলেন। মহিম্ন স্ত্রোত্রপাঠ পূর্বক তিনি গিরিজাপতির স্বরণ করলেন। তাতে করে ভগবান্ প্রসন্নচিত্তে তাঁকে বর দিলেন। রাজা ভগবানের কাছে বললেন — যদি আমার প্রতি আপনি প্রসন্ন তা হলে যেন শ্রীপতি প্রসন্ন হয়ে স্বয়ং আমার গৃহে অবস্থান করেন যাতে আমার ভালো হয়।।১-১৭।।

তথেত্যুক্ত্বা মহাদেবো লিংগরাপত্ব মাগতঃ। প্রত্যহং ভারসেবং চ সুবৰ্ণং সুষুবে তনোঃ।।১৮।। তদা মলস্তু সন্তুষ্ট প্রাপ্তোবোহং মহাবতীম্। ভীষ্ম সিংহেন সহিত পরমানন্দমাম্বযৌ।।১৯।। ততঃ প্রভৃতি বর্ষান্তে জয়চন্দ্র পুরী যযৌ। দৃষ্ট্বাপরিমলং রাজা কৃত কৃত্যত্বমাগতঃ।।২০।। দিষ্ট্যা তে সংক্ষিতো রোগো দিষ্ট্যা তে দর্শিতং মুখম্। ভবান্নিজপুরীং প্রাপ্য সুখী ভবতু মার্চিরক্ষ।।২১।। যদা মে বিঘ্ন আভূয়াত্তদা ত্বং মাং সমাচর। ইতি শ্রুত্বা পরিমলো গত্বা স্থান মবা সয়‍।।২২।। তদা তু লক্ষণো বীরো ভগবন্তমুমা পতিম্। জগন্নাথ মুপাগম্য সমভ্যর্চ্চাপরোহ ভবৎ।।২৩।। পক্ষ মাত্রান্তরে বিষ্ণুজগন্নাথ উষাপতিঃ। বরং ব্রুহি বচশ্চেতি লক্ষণং প্রাহ হৰ্ষতঃ।।২৪।। ইত্যুক্তঃ স তু তং দেবং নত্বোবাচ বিনস্রধীঃ। দেহি মে বাহনং দিব্যং সর্বশত্রুবিনাশনম্।। ২৫।। ইতি শ্রুত্বা জগন্নাথর শক্তি মেরাবতাদ গজাৎ। সযু পাদ্য দদৌ তস্থৈ দিব্যামৈরাবতীং মুদ্ধা।।২৬।। আরুহ্যৈরাবতীং রাজা লক্ষণো গেহমাযযৌ। সর্বৈ পরিমলো রাজা জগাম চ মহাবতীম্।।২৭।। এতস্থিনন্তরে বীরাস্তালনাদ্যা মদোকটাঃ। মহাবতীং পুরীং প্রাপ্য দদৃশুস্তং মহীপতিম্।।২৮।। তেন সার্দ্ধং চ মহতীং প্রীতিং কৃণ্বান্য বাসয়ন। মাসান্তে চ পুনস্তে বৈ রাজানো বিনয়ান্বিতাঃ।।২৯।। উচুস্তা শূনু ভূপাল চয়ং গচ্ছামেহে পুরীঃ। তদা রাজাপি তান প্রাহ স্বার্নক্ষতি পতীনথ।। দত্ত্বাধিকারং পুত্রেভ্যদাহ হস্মাস্যানি বোহন্তিকম্।।৩০ তথেত্যুক্তাস্তু তে রাজ্ঞা স্বগেহং পুনরাযঃ। সীনুঙ্গে দেশরাজস্ত দ্বিজেভ্যঃ স্বপুরং দদৌ।।৩১।।

‘তাই হোক’–একথা বলে ভগবান্ শংকর লিঙ্গ স্বরূপ প্রাপ্ত হলেন। তিনি প্রত্যহ একভার সুবর্ণ নিজ দেহ থেকে প্রসব করতে লাগলেন। মলনা নিজগৃহে ফিরে এলেন ও রাজার সঙ্গে প্রভূত আনন্দিত হলেন। একবর্ষ পরে তাঁরা জয়চন্দ্রের পুরে গেলেন। রাজা পরিমল দেখলেন ও কৃতকৃত্যত্ব হলেন তিনি বললেন তোমার রোগমুক্তি ও সুখ দেখে আমার প্রভূত আনন্দ হচ্ছে। এখন নিজ পুরীতে গমন কর। কোনোরূপ বিঘ্ন এলে আমাকে স্মরণ করবে।।১৮-২১।।

একথা শ্রবণ করে পরিমল নিজ স্থানে ফিরে এলেন। সেই সময় বীর লক্ষণ জগন্নাথপুরীতে গিয়ে উমাপতি ভগবানকে অভ্যর্চন করলেন। একপক্ষের মধ্যে উমাপতি জগন্নাথ বিষ্ণু তাঁকে বর দিলেন। তখন তিনি ভগবান্ বিষ্ণুর কাছে শত্রুনাশকারী দিব্যবাহন প্রার্থনা করলেন। তখন পরম প্রসন্ন বিষ্ণু তাঁকে ঐরাবত হস্তীর শক্তি সম্বলিত ঐরাবতী শক্তি প্রদান করলেন। রাজা লক্ষণ সেই হস্তীতে আরোহণ করে নিজ রাজ্যে ফিরে এলেন এবং রাজা পরিমল ও নিজ রাজ্যে ফিরে এলেন।।২২-২৭।।

এই সময় তালনাদিবীর অত্যন্ত মদোৎকট হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা মহাবতীপুরে গিয়ে রাজাকে দেখলেন। তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সেখানে থাকতে লাগলেন। মাসান্তে সবিনয়ে রাজাকে বললেন–হে ভূপাল, আমরা এখন নিজ পুরীতে যাচ্ছি। রাজাও তখন সেই সমস্ত ক্ষিতিপতিকে বললেন–পুত্রের অধিকারে আমি তোমাদের কাছে যাব। ‘তাই হবে’– বলে তারা নিজরাজ্যে ফিরে গেল।।২৮-৩১।।

পুত্রেভ্য স্তালনোবীরো দদৌ বারানসীং পুরীম্। অলিকোল্লামতিঃ কাল পত্রঃ পুষ্পোদরী বরী।।৩২।। করীনরী সুললিতস্তেষাং নামনি বৈক্রমাৎ। দ্বৌ দ্বৌ পুত্রৌ স্মৃতৌ তেষাং পিতুস্তল্যপরাক্রমৌ। ৩৩ সর্বৈ পুত্রাজ্ঞয়া শূরস্তালনো রাক্ষসপ্রিয়াঃ। যাতুধানময়ং দৈবং তুষ্টাব ম্লেচ্ছপূৰ্বনেঃ।।৩৪।। তথা বসুমতঃ পুত্রৌ ভূপতী দেশবৎসজৌ। শত্রুং সূর্যং সমারাধ্য কৃতকৃত্যৌ বভূ বতুঃ।।৩৫।। সিংহিনীং নাম বড়বাং মাতু দত্তা ভয়ানকা। আরুহ্য বলাবঙ্কুরো গমনায় মনো দধৌ।।৩৬।। পঞ্চশব্দং মহানাগমিন্দ্ৰদত্তং মনোরমম্। দেশরাজসত্তমারুহ্য গমনায় মনো দধো।।৩৭।। হয়ং পপীহবাং নাম সূর্যদক্তং নরস্বরম্। বৎসরাজস্তমারুহ্য গমনায় মনো দধে।।৩৮।। এয় শূরাঃ সমাগম্য নগরীং তে মহাবতীম্। উযুস্তত্র মহাত্মানো বহুমানেন সৎকৃতাঃ।।৩৯।। সেনাষষ্টিস্থস্রং তত্তেযোং স্বামী স তালনঃ। মন্ত্রিনো ভ্রাতরো তৌ চ নৃপতেশ্চন্দ্রবংযিনঃ।। ৪০।। তৈবীরৈ রক্ষিতো রাজা কৃত কৃত্যত্বমাগতঃ।।৪১।।

বীর তালন পুত্রদের জন্য বারাণসী পুরী দিয়েছিলেন। তাদের নাম হল অলিকোল্লামতি, কাল, পত্র, পুষ্পোদরী, বরা, কারী, নরী, এবং সুললিত। তাদের দুইপুত্র পিতৃতুল্য পরাক্রমী ছিলেন।।৩২-৩৩।।

সিংহিনী নামক ঘোটকীতে ত’লন ইন্দ্ৰদত্ত পঞ্চশব্দ মহানাগ অশ্বে দেশরাজ আরোহণ করে গমন কবলেন। তিনবীর মহাবতী নগরীতে এসে বহু মানুষের দ্বারা সৎকৃত হয়ে বাস করতে লাগলেন। সেখানে ষাট হাজার সেনার রাজা ছিলেন তালন এবং চন্দ্রবংশী দুই ভাই হলেন মন্ত্রী। তাদের দ্বারা রক্ষিত রাজা সফল হলেন।।৩৬-৪১।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *