আজও যা রহস্য
ফ্রান্সের ইতিহাসে সব থেকে রহস্যজনক প্রেতের আগমন ঘটেছিল সম্ভবত মেরি অ্যান্টয়নেটের উপস্থিতি। ভার্সাই-এর প্রাসাদ সংলগ্ন বাগানে দু-জন সম্ভ্রান্ত ইংরেজ মহিলা একবার হারিয়ে যান। সেই বাগানে প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁরা কাকে দেখেছিলেন? মেরি অ্যান্টয়নেটকে? নাকি এ সবই তাঁদের দেখার ভুল? এটি একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা, যার রহস্য আজও আমাদের কাছে অনাবিষ্কৃত। কিন্তু তদানীন্তনকালে এ ঘটনা খুব আলোড়ন তুলেছিল একথা সবাই স্বীকার করেছেন। পরবর্তীকালেও সেই দুই ইংরেজ রমণীর চাক্ষুস অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে কিছু গবেষণা নতুন করে আলোকপাত করলেও— সত্যই সে-দিন মেরি অ্যান্টয়নেট এসেছিলেন কি না তা আজও রহস্য এবং সন্দেহের পর্যায়ে রয়ে গেছে।
ভার্সাই-এর বাগানে সে-দিন দুই মহিলা যা দেখেছিলেন তা নির্ভরযোগ্য সত্য কিনা তা কেউ হলফ করে বলতে না পারলেও, গবেষকরা যে এই দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণকে এত মূল্য কেন দিয়েছিলেন তাও একটি ভাববার বিষয়। এই দুই মহিলা ছিলেন পেশায় সম্মানিতা। বয়েস এবং বংশমর্যাদায় ছিলেন রানি ভিক্টোরিয়ার সমগোত্রীয়। এঁদের এক জনের নাম শার্লো অ্যানি মোবারলি। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৬ সালে। পনেরোটি ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দশম। লেখাপড়াতেও তিনি ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। মেধায় ছিলেন অত্যন্ত তীক্ষ্ন। এর জন্যে তাঁর পারিবারিক পরিবেশ তাঁকে খুবই সাহায্য করেছিল। বাবা ছিলেন উইনচেস্টার কলেজের কৃতি প্রধান শিক্ষক এবং স্যালিসবেরির বিশপ। অন্য ইংরেজ মহিলার নাম ছিল এলিনর জর্ডেন। বংশমর্যাদায় তিনিও খুব একটা হেলাফেলার নন। তাঁর পিতা ছিলেন ডার্বিশায়ারের অন্তর্গত অ্যাসবোর্ন-এর ধর্মযাজক। যাই হোক শার্লোর সঙ্গে জর্ডেনের বয়েসের বেশ কিছু পার্থক্য সত্ত্বেও দু-জন ছিলেন দু-জনের পরম মিত্র।
১৮৬৬ সাল। মিস মোবারিল অক্সফোর্ডের সেন্ট হুগস হলে অধ্যক্ষা হয়ে এলেন। তখন তাঁর বয়েস চল্লিশ। বিবাহও করেননি। দিনরাত পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। অবসর সময় কাটান দেশ ভ্রমণে। সেন্ট হুগস হলটি ছিল মেয়েদের আবাসিক হোস্টেল। বিদেশ থেকে বা দূর দূর অঞ্চল থেকে যারা লেখাপড়া করতে আসত তারাই ওখানে বসবাস করত। রাশভারী অধ্যক্ষা হিসেবে মিস মোবারলিকে প্রত্যেকেই বেশ সমীহ করে চলত।
দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর ওই হোস্টেলে প্রধান অধ্যক্ষা হিসেবে কাটিয়ে দিলেন মিস মোবারলি। আসলে তিনি হয়তো ওই পেশাটিকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ছিলেন। তাই এতদিন তাঁর মধ্যে কোনো কর্মশৈথিল্য আসেনি। কিন্তু বয়েস সবসময় মনের ইচ্ছা পূরণ করে না। শরীর এসে বাদ সাধে। দেখতে দেখতে প্রায় পঞ্চান্ন বছর বয়েস হয়ে গেল। কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি আবেদন জানালেন এক সহকারিণীর জন্য। আবেদন মঞ্জুর হল। নতুন সহকারিণী হয়ে এলেন মিস জর্ডেন। মিস মোবারলির থেকে ইনি বয়েসে অনেক ছোটো। জর্ডেনকে প্রথম সাক্ষাতে মোবারলির বেশ ভালো লাগল। বেশ চটপটে আর করিতকর্মা। তবুও হোস্টেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উভয়কে একইসঙ্গে একটি ছোট্ট ভ্রমণে বের হতে হল।
ঠিক হল পনেরো দিনের ছুটিতে উভয়ে প্যারিস যাবেন। যদিও মিস জর্ডেনের অনেক বারই প্যারিস ভ্রমণ করা ছিল তবুও তিনি নতুন সহকারিণীর সঙ্গিনী হলেন। কারণ মিস মোবারলির এক বারও প্যারিস যাওয়া হয়নি। বলা বাহুল্য জর্ডেন ছিলেন বেশ মিশুকে ধরনের মহিলা। আর মোবারলির তো মিস জর্ডেনকে ভালোই লেগেছিল। ট্রেনে ওঠার পর উভয়ের বন্ধুত্ব হতে বেশি সময় লাগল না।
এর পরের কাহিনি সেই ঐতিহাসিক রহস্যময় ভ্রমণ বৃত্তান্ত। সেই বৃত্তান্ত শোনার আগে আমার মনে হয় একবার ইতিহাসের পাতায় কিছুক্ষণের জন্যে ঘুরে আসা দরকার। মেরি অ্যান্টয়নেটের জীবন ইতিহাস সামান্য জানা থাকলে পরবর্তী কাহিনির রহস্যময়তা অনুধাবন করতে সাহায্য করবে।
মেরি অ্যান্টয়নেট— পৃথিবীর ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। বিশেষ করে ফ্রান্সের ইতিহাসে তৎকালীন সভ্যতায় মেরি অ্যান্টয়নেট রানি হয়েও জীবদ্দশায় তিনি জনখ্যাতি পাননি। বরং জনমানসে তিনি ছিলেন বিলাসী, খামখেয়ালি এবং হঠকারিনী।
মেরি অ্যান্টয়নেট যখন ফ্রান্সের রানি তখন ফ্রান্সের ঘোর দুর্দিন। ফ্রান্সের জনগণ মনে করত তাদের দুঃখদুর্দশার জন্যে রানির দায়িত্বও কিছু কম ছিল না।
১৭৫৫ সালের ২ নভেম্বর অ্যান্টয়নেট ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস এবং মারিয়া থেরেসার কন্যা ছিলেন এই মেরি অ্যান্টয়নেট।
সম্রাট দুহিতা অ্যান্টয়নেট আজন্ম সুখ আর ভোগে লালিতা পালিতা। তার ওপর বাবা-মায়ের চোখের মণি তিনি। দুঃখ এবং দারিদ্রতা যে কী জিনিস সেটুকু বোঝার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনোটাই ছিল না মেরির। আর তার খোঁজ রাখার প্রয়োজনই বা কী? ফলে খুব ছোটো থেকেই মেরি হয়ে উঠলেন খামখেয়ালি আর বিলাসী প্রকৃতির। যখন যেটি দরকার সেই মুহূর্তেই সেটি হাতের সামনে পাওয়া চাই। নইলে? নইলে যে কী তা বলার কোনো প্রয়োজন নেই।
কন্যার এই খামখেয়ালিপনা আর অতি আদুরে স্বভাব বাবা-মা’ও লক্ষ করেছিলেন। তাই তাঁরা বেশি দিন কন্যাকে নিজেদের কাছে রাখতে চাইলেন না। মাত্র পনেরো বছর বয়েসে মেরির বিয়ে দিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন বিয়ের পর স্বামীর গৃহে গেলে হয়তো বা কন্যার স্বভাব পালটাতে পারে।
বিয়ে হল ফ্রান্সের যুবরাজের সঙ্গে। ১৭৭৪ সালে ফ্রান্সের রাজার মৃত্যুর পর যুবরাজ সিংহাসনে বসলেন রাজা ষষ্টদশ লুইস নামে। ফ্রান্সের নতুন রানি হলেন মেরি অ্যান্টয়নেট।
মেরির বাবা-মা ভেবেছিলেন স্বামীর গৃহে গেলে মেয়ের হয়তো মতি ফিরবে। কিন্তু তা হল না। পনেরো বছর বয়েসে যুবরাজের পত্নী হলেন আর উনিশ বছর বয়েসে হলেন রানি। জীবনের দুঃখকষ্টের দিক তাঁর দেখা হয়নি। আশপাশের জগতে কেবল স্বচ্ছলতা আর স্বাচ্ছন্দ্যের জোয়ার। উনিশ বছরের রানির পক্ষে তাই বেহিসেবি হওয়া ছাড়া অন্য কোনো গতি ছিল না। নিত্যনতুন উপায়ে তিনি সুখ খুঁজে বেড়াতেন।
ফ্রান্সের তখন ঘোর দুর্দিন। বিশেষ করে রাজা ষষ্টদশ লুইসের রাজত্বকালে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দারিদ্র্য চরমে উঠেছিল। বিশেষ করে দিনমজুর আর চাষি সম্প্রদায়ের মধ্যে অভাবের জ্বালা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। অনাহার আর রোগ একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদের ওপর। এক বেলাও পেটপুরে খাবার সংস্থান তাদের ছিল না।
জনগণের ক্রোধ আর রোষ বেশি দিন চাপা রইল না। প্রতিদিন অবস্থা সঙ্গিন থেকে সঙ্গিনতর হয়ে উঠল। আর শেষপর্যন্ত সেই জনরোষ একদিন ‘ফরাসি বিপ্লবে’ রূপান্তরিত হল।
মাত্র ক-টা বছর। ১৭৭৪ থেকে ১৭৭৯। পাঁচ বছরের মধ্যে সারা দেশ একসঙ্গে জ্বলে উঠল। ১৭৭৯ সালে অক্টোবরে ভার্সাই-এর রাজপ্রাসাদে বিপ্লবের আগুন ধরে গেল। ক্রুদ্ধ জনতার রোষ রাজ পরিবারকে প্রাসাদ থেকে প্যারিসে পলায়ন করতে বাধ্য করল। সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে তাঁরা পালাতে চেয়েছিলেন উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচার জন্যে। কিন্তু তা হল না। রাজা-রানিকে আশ্রয় দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। দেশের আপামর জনতা যে রাজার শত্রু। উভয়েই শেষপর্যন্ত জনতার হাতে বন্দি হলেন। সশস্ত্র প্রহরা বসল বন্দিনিবাসের দরজায়। বিদ্রোহী এবং দেশপ্রেমিক বিপ্লবীরা চাইল প্রকাশ্যে তাঁদের বিচার করা হোক।
অবশেষে বিচার শুরু হল। ফল কী হবে তা জানাই ছিল। ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি গিলোটিনের করাত রাজা ষষ্ঠদশ লুইসের মাথাটি কেড়ে নিল।
মুক্তি পেলেন না রানি অ্যান্টয়নেট।
অবশেষে ১৭৯৩ সালের ১৬ অক্টোবর। রাজা ষষ্ঠদশ লুইসের মতো তিনিও নিজের মাথা দিয়ে গেলেন গিলোটিনের নীচে।
এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটেছে অনেক বিবর্তন। জীবনের সব ঋণ শোধ করে মেরি অ্যান্টয়নেট হয়েছেন একটি চাঞ্চল্যকর এবং করুণ নাম। মেরির জীবন ইতিহাস বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় স্বেচ্ছাচারিতার পরিণাম। কিন্তু সেইটাই কি শেষ কথা? সত্যিই কি মৃত্যুর পর আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকে না? অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে কেউ মারা গেলে আমরা দেখেছি সেসব আত্মারা বার বার পৃথিবীর আশেপাশে ফিরে আসতে চেয়েছে। মেরিরও কি অতৃপ্ত বাসনা কিছু ছিল? তাঁরও কি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পুনর্বার বাঁচার বাসনা জেগেছিল? অন্তত ষষ্ঠদশ লুইসের জীবদ্দশায় আমরা দেখেছি মেরি বাঁচার জন্য শেষ সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু রাজার মৃত্যুর পর মেরিকে আমরা পেয়েছি শান্ত এবং স্থির উদাসীন এক মূর্তির মতো। অনেক ঝড়ের শেষে পৃথিবী যেমন শান্ত হয়, মেরিও ঠিক তেমনি সারাজীবন ভোগবিলাসের শেষে হয়ে পড়েছিলেন নির্বিকার। শান্তভাবে এসেছেন নিজের বিচারের এজলাসে। দৃঢ় উন্নত ভঙ্গিতে শুনেছেন নিজের মৃত্যু পরোয়ানা। তারপর রানির মতো বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন গিলোটিনের নীচে।
তবু যেন মনে হয় সব শেষ হয়েও সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। অন্তত পরবর্তী ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে ধরে নিতে হবে মেরি অ্যান্টয়নেটেরও ছিল কিছু শেষ কথা বলার যা তিনি জীবদ্দশায় বলে যেতে পারেননি।
সেদিন ১০ আগস্ট। ১৯০১ সাল। এই শতাব্দীর বছর শুরু। রানির মৃত্যুর পর কেটে গেছে এক-শো আট বছর। পৃথিবীর মানুষ ইতিহাসের পাতা ব্যতিরেকে তাঁর সব কিছু ভুলে গেছে। সচরাচর মনে পড়ে না তাঁর জীবনের করুণ আলেখ্য।
মিস মোবারলি আর মিজ জর্ডেন গেছেন প্যারিস ভ্রমণে। বাড়িতে বসে না থেকে দুই অসমবয়েসি নারী প্রতিদিন বিকেলে বেড়িয়ে পড়েন। আজ এখানে কাল সেখানে। কখনো ট্রেনে কখনো অন্য কোনও যানে। সে-দিন হঠাৎ মিস জর্ডেনের খেয়াল হল ভার্সাই-এর বিখ্যাত রাজপ্রসাদ দেখতে যাবেন। মিস মোবারলির প্যারিস ঘোরা হয়নি এর আগে। ভার্সাই-এর রাজপ্রাসাদের ঐতিহাসিক মূল্যও আছে যথেষ্ট। দুই মহিলা ট্রেনে চেপে উপস্থিত হলেন ভার্সাইতে। যতটা উৎসাহ নিয়ে তাঁরা এসেছিলেন, ভার্সাই-এর রাজপ্রাসাদ তাঁদের তেমন মুগ্ধ করল না। তখন মিস মোবারলিই জানালেন তিনি প্রের্টিট ট্রায়ানোঁতে যাবেন। বিখ্যাত ‘প্রের্টিট ট্রায়ানোঁ’ মেরি অ্যান্টয়নেটের সাধের বাড়ি। ভার্সাই রাজপ্রাসাদ থেকে কিছুদূরে বাগানের মধ্যে অবস্থিত এই প্রের্টিট ট্রায়ানোঁ।
পায়ে হেঁটেই তাঁরা রওনা হলেন। সাধারণত অন্যান্য দর্শনার্থীরা কোনো পথ নির্দেশককে সঙ্গে নেন। অপরিচিত স্থান। পথ ভুল হতেই পারে। সঙ্গে পথ নির্দেশক থাকলে অনেক পরিশ্রম আর হায়রানি লাঘব হয়। কিন্তু মহিলাসুলভ লজ্জায় তাঁরা কোনো পথ নির্দেশক অথবা কোনো পথ নির্দেশিকার বইও কিনলেন না। তাঁরা ভাবলেন, বিখ্যাত স্থান, স্থানীয় লোকজনদের জিজ্ঞাসা করলেই তাঁরা প্রের্টিট ট্রায়ানোঁতে পৌঁছে যাবেন।
আগেই বলেছি অপরিচিত স্থানে পথ ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রতি পদে পদে। অচিরেই তাঁরা রাস্তা ভুল করলেন এবং পথ হারালেন। বড়ো রাস্তা ছেড়ে তাঁরা একটি গলির মধ্যে ঢুকে পড়লেন। ফলে প্রের্টিট ট্রায়ানোঁতে পৌঁছোনোর বদলে এসে উপস্থিত হলেন একটি গ্রাম্য আর মেঠো বাড়ির সামনে। মিস মোবারলির হঠাৎ কেমন যেন সন্দেহ হল, হয়তো তাঁরা ঠিক রাস্তায় আসেননি। সেই কুঁড়ে ঘরটির জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তখন একটি গ্রাম্য মহিলা কাপড় থেকে জল ঝাড়ছিলেন। এবার তাঁর মনে হল মহিলাটিকে প্রের্টিট ট্রায়ানোঁ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু তিনি ফরাসি ভাষা জানতেন না। তবে আশ্চর্য হলেন মিস জর্ডেন যৎসামান্য ফরাসি ভাষা জানা সত্ত্বেও গ্রাম্য মেয়েটিকে কিছু জিজ্ঞাসাই করলেন না। আসলে মিস জর্ডেন বোধ হয় মেয়েটিকে লক্ষই করেননি।
যে গলি ধরে ওঁরা যাচ্ছিলেন কিছুদূর এগোবার পরই দেখলেন গলিটি তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে।
দু-জনে এক বার থমকে দাঁড়ালেন। দু-জনে দু-জনের মুখের দিকে তাকালেন। দু-জনের মুখে তখন একটা প্রশ্নই আটকে আছে এবার কোন রাস্তায়? কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করতে-না-করতেই তাঁরা মধ্যবর্তী রাস্তায় দু-জন লোককে দেখতে পেলেন। তাদের দেখে প্রাসাদের মালি বলেই মনে হয়েছিল। সুতরাং আর কিছু চিন্তা না করে মাঝের রাস্তা ধরে এগিয়ে চললেন।
মিস মোবারলি পরে অবশ্য বলেছিলেন, লোক দুটোকে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল সাধারণ মালি নয় এরা। নিশ্চয় সৈন্যবিভাগের কোনো উচ্চপদস্থ অফিসার হবেন। তাঁদের পরনে ছিল ধূসর সবুজ রঙের লম্বা কোট। আর মাথায় ছিল তিন কোণা টুপি। মিস জর্ডেনও পরবর্তীকালে বলেছিলেন তিনিও ওইরকম দু-জন লোককে দেখেছিলেন। এমনকী তাদের হাতে যে ছড়ি জাতীয় কিছু ছিল তারও উল্লেখ করেছিলেন। যাই হোক, লোক দুটিকে দেখার পর মিস মোবারলিই এগিয়ে গিয়ে প্রের্টিট ট্রায়ানোঁ কোন রাস্তায় পড়বে তার হদিস জিজ্ঞাসা করেছিলেন। লোক দুটি ইংরেজি প্রশ্নের কী মানে করিছেলেন কে জানে। তারা ফরাসি ভাষায় উত্তর দিয়েছিল, ‘টুট্য ড্রাআ’ (Tout Droit)।
ভুল হয়েছিল এখানেই। Droit শব্দটির ইংরেজি আভিধানিক অর্থ হল right. মানে দাবি বা অধিকার। কিন্তু মিস মোবারলি ধরে নিলেন তাঁদের বুঝি ডান দিকের গলিতে যেতে বলা হচ্ছে। কালবিলম্ব না করে তাঁরা ডান দিকের রাস্তা ধরে কিছুদূরে এগিয়ে গেলেন। একটু পরেই মিস জর্ডেনেরই প্রথম নজরে এল একটি ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। বাড়িটির নির্মাণ কৌশল ছিল বহু পুরোনো আমলের ফরাসি কায়দায়। কুঁড়ে ঘরটির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল এক জন মধ্যবয়েসি স্ত্রীলোক ও একটি অল্পবয়েসি কুমারী মেয়ে। সম্ভবত ছোটো মেয়েটি ওই বয়স্কা মহিলারই কন্যা হবে। মিস মোবারলি আর মিস জর্ডেন দু-জনেই একটু আশ্চর্য হলেন। কারণ ওই দু-জন গ্রাম্য মহিলার পরনে ছিল অতি পুরোনো দিনের পোশাক-আশাক। কম করে এক শতাব্দীর আগের পরিচ্ছদ। এসব পোশাকের চলন ১৯০১ সালে ছিল না। কিন্তু বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে তাঁরা একটা জিনিস লক্ষ করে বেশ চমকেই উঠেছিলেন। মেয়ে দুটির মুখে কোনো কথা ছিল না। বয়স্ক মহিলাটিকে দেখে মনে হল সে যেন হাতে একটা বালতি জাতীয় কিছু নিয়ে কোমর ভেঙে নীচু হয়ে কী যেন করছে। কিন্তু তার ওই ভঙ্গির মধ্যে জীবনের কোনো স্পন্দনই ছিল না। মনে হল কেউ যেন তাকে শাস্তি দিয়ে ওইভাবে আজন্মকাল ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। মিস জর্ডেন তো অস্ফুটে বলেই ফেললেন, দেখে মনে হচ্ছে ‘ট্যাবলো ভিভাঁ’র মতো জীবন্ত কোনো প্রতিমূর্তি। কেউ যেন মোম দিয়ে জ্যান্ত মানুষের মতো প্রতিকৃতি তৈরি করে রেখেছে।
তাঁদের এই প্রথম অদ্ভুত অভিজ্ঞতাটি পরবর্তীকালে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মেয়ে দুটিকে ওইভাবে নিশ্চল এবং নিথর অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দু-জনেই বেশ হতভম্ব হয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। তখন তাঁরা ভাবছিলেন এর পর কী করবেন, ঠিক তখনি অকল্পনীয় ঘটনা ঘটতে শুরু করল। মুহূর্ত মধ্যেই সুস্পষ্ট তাঁরা অনুভব করলেন, চারিদিকের প্রকৃতির মধ্যে অভাবনীয় সব পরিবর্তন। আকাশের রং একটু আগেও ছিল নীল। হঠাৎই কেমন যেন সেই রং হয়ে উঠল বিবর্ণ হলুদ। আশপাশে সমস্ত প্রকৃতির বুকে নেমে এল রাতের নিস্তব্ধতা।
এমন একটা পরিবেশ, চারিদিক অসহ্য নিস্তব্ধ, আশেপাশে একটা জীবন্ত প্রাণী পর্যন্ত নেই, এমনকী গাছে গাছে যেসব পাখিরা ওড়াউড়ি করছিল তারাও ছবির মতো স্থির; মিস মোবারলি আর মিস জর্ডেনের মতো শিক্ষিত দুই মহিলা রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলেন। তাঁরা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ওই অভিশপ্ত জায়গাটি পার হয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক পা এগিয়েই আবার থমকে দাঁড়াতে হল।
কুঁড়ে ঘরটার ঠিক পিছনেই ছিল একটা জঙ্গল। কিন্তু জঙ্গলটাকে দেখে তাঁদের মনে হল কে যেন থিয়েটারের জন্যে একটা চিরকালীন দৃশ্যপট এঁকে দিয়েছে। সেখানেও মৃত্যুর শীতলতা ছড়িয়ে রয়েছে। তারপর হঠাৎই তাঁরা দেখতে পেলেন মাটির একটা ছোট্ট ঢিপি। সেখানে বসে আছে একটি মাঝবয়েসি লোক। লোকটির পরনে রয়েছে একটা পুরোনো আমলের কালো আলখাল্লা। আর মাথায় ঢাউস টুপি।
অন্য সময়ে হলে এই লোকটিকে দেখে তাঁদের এমন কিছুই মনে হত না। কিন্তু সেই অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে দু-জনেই তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মনে মনে তাঁরা দু-জনেই যখন ভাবছেন এখন কী করা যায় ঠিক সেই মুহূর্তে সামনের সেই বসে থাকা লোকটি হঠাৎ যেন নড়ে উঠল। অনেকক্ষণ পর এই প্রথম মৃত্যুপুরীর শীতলতায় প্রাণের স্পর্শ লাগল যেন। লোকটি বসা অবস্থায় ধীরে ধীরে ওদের দিকে ফিরে তাকাল।
ওঃ, সে কী বিভৎস মুখ! আর কী জঘন্য চাউনি লোকটির। মিস মোবারলি তো আঁতকে দু-পা পিছিয়ে এলেন।
অবশ্য অত ভয়ের মধ্যেও দু-জনের মনেই একটা কথার উদয় হয়েছিল। লোকটা তাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিল বটে কিন্তু তার দৃষ্টি ঠিক তাঁদের দিকে নিবদ্ধ ছিল না। তার ওই কুৎসিত শয়তানি দৃষ্টিটা যেন বার বার বলছিল— কেন, কেন তোমরা এখানে? তোমরা এখান থেকে যাও। পালাও এখান থেকে।
সেই মায়াময় পরিবেশে, সেই রহস্যময় বিকেলে রাস্তা হারিয়ে ফেলা দুই ইংরেজ মহিলা মনে মনে হয়তো এটাই চাইছিলেন যে এই ভয়াবহ পরিবেশ থেকে এক্ষুনি পালিয়ে যাওয়া উচিত। নইলে যেকোনো মুহূর্তে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটে যেতে পারে।
ঠিক তখনি ঘটল আরও এক অদ্ভুত কাণ্ড। আশেপাশে কোনো জনমানবের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু হঠাৎ যেন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এল আর এক জন লোক। অবশ্য এই লোকটির মধ্যে অত ভীতিজনক তেমন কিছু ছিল না। তবে লোকটি যেভাবে হাঁপাতে-হাঁপাতে এসে হাজির হল তাতে মনে হল সে যেন অনেক দূর থেকে ছুটতে ছুটতে আসছে। লোকটি তখন রীতিমতো উত্তেজিত। চিৎকার করে সে বলে উঠল, ‘মহাশয়রা, অপনারা এখনও কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছেন? আর এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়াবেন না। আপনারা যা দেখতে চাইছেন সেটা এদিকে নয়, ওদিকে।’ বলেই হাত তুলে অন্য রাস্তা দেখিয়ে দিল। মিস জর্ডেন বোধ হয় কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু লোকটি সে অবকাশই দিল না।
লোকটির দেখিয়ে দেওয়া রাস্তা ধরে উভয়ে কিছুদূর এগিয়ে গেলেন। সামনেই পড়ল অতি প্রাচীন একটি গ্রাম্য সেতু। সেতুটি পার হতেই এসে পড়লেন বাগান ঘেরা একটি বাড়ির সামনে। তখন কিন্তু আর সেই আগের থমথমে অবস্থাটা ছিল না। প্রকৃতিও অনেক স্বাভাবিক। চারদিকের পরিবেশ দেখে মনে হল তাঁরা যেন কোনো ব্যারাকে এসে পড়েছেন। যে বাড়িটার সামনে এসে ওঁরা দাঁড়ালেন ওটাই সেই বিখ্যাত প্রের্টিট ট্রায়ানোঁ। মেরি অ্যান্টয়নেটের সাধের বাড়ি।
অস্বাভাবিকতা পার হয়ে স্বাভাবিক এবং জাগতিক পরিবেশের মধ্যে আসতে পেরে উভয়েই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। প্রাণভরে প্রকৃতির নির্মল বাতাস নিলেন। কিন্তু এখানেই মিস মোবারলির জন্যে সব থেকে বেশি চমক আর বিস্ময় অপেক্ষা করে ছিল।
সবুজ ঘাসে মোড়া শান্ত লনটির দিকে চোখ ফিরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলেন দু-জনেই। সামনে প্রের্টিট ট্রায়ানোঁ। মেরি অ্যান্টয়নেটের প্রিয় আবাসস্থল। ঐতিহাসিক মূল্যেও এ-স্থান বেশ উল্লেখযোগ্য। সহসা, বিকেলের অর্ধম্রিয়মান অলোয় চমকে উঠলেন মিস মোবারলি। কোনো ভুল ছিল না তাঁর দেখায়। বিকেলের আলোয় দৃশ্য অপেক্ষাকৃত কম উজ্জ্বল হলেও মিস মোবারলির চোখের দৃষ্টি খুবই প্রখর। তিনি দেখলেন বাড়ির দিকে পিছন ফিরে এক সুবেশা রমণী ছোট্ট একটি টুলের ওপর বসে আছেন। তাঁর হাতে ধরা একটি কাগজ। বাঁ-হাতটিকে সোজা টানটান রেখে কাগজটি চোখের সামনে ধরে আছেন। দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেন ছবি আঁকার স্কেচ করছেন। মিস মোবারলি বেশ আশ্চর্য হলেন। এই পরিবেশে এখন এক জন মহিলাকে একা একা বসে থাকতে দেখা একটু অস্বাভাবিক। কনুই-এর ঠেলা দিয়ে তিনি পাশে দাঁড়ানো মিস জর্ডেনকে বললেন, ‘কী ব্যাপার বল তো? এমন এক নির্জন জায়গায় ওই মহিলা একা একা বসে কী করছেন?’
মিস জর্ডেন বেশ অবাক হয়ে চারদিক দেখে বললেন, ‘কার কথা বলছেন মিস মোবারলি? কে বসে আছেন?’
‘সে কি, তুমি দেখতে পাচ্ছ না? ওই তো এক মহিলা ওখানে বসে কিছু বোধ হয় আঁকছেন।’
‘আপনি যে কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি তো কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। তবে… হ্যাঁ, হ্যাঁ, আবছা মতো একটা কিছু ওখানে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
‘আবছা! কী বলছ তুমি? তোমার কি চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে! আমি তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ওই তো উনি আমাদের দিকে মুখ ফেরালেন— ওঃ, ঈশ্বর! এ আমি কী দেখছি— উনি, উনি তো মেরি অ্যান্টয়নেট—’
মিস মোবারলি পরবর্তীকালে তাঁর জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ‘সেই অভিশপ্ত বিকেলে আমি যা দেখেছিলাম তা বিস্ময়ের হলেও বেশ স্পষ্ট।’
এই ঘটনার কিছু পরেই মিস মোবারলি এবং মিস জর্ডেনের আর সেখানে দাঁড়াবার মতো মানসিক ক্ষমতা ছিল না। তাঁরা চটপট বাগান সংলগ্ন বাড়িটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। এমন সময় বাড়ির ভেতর থেকে খুব প্রাণবন্ত এবং হাসিখুশি ভরা এক তরুণ এসে তাঁদের সামনে দাঁড়াল। জিজ্ঞাসা করল তাঁরা কোথায় যেতে চান। তরুণটিই শেষপর্যন্ত তাঁদের প্রের্টিট ট্রায়ানোঁর প্রধান ফটকের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণ অন্যরকম। এই যে এতক্ষণের দেখা অলৌকিক সব কাণ্ডকারখানা তার কোনো চিহ্নই ছিল না। প্রের্টিট ট্রায়ানোঁর প্রধান ফটক পার হতেই তাঁরা দেখলেন হাসিখুশি ভরা বহু দর্শনার্থীর ভিড়। সেই মুহূর্তে তাঁদের মনে হয়েছিল মৃত্যুপুরী থেকে তাঁরা ফিরে এসেছেন।
মেরি অ্যান্টয়নেটের ঐতিহাসিক বাড়ি দেখে একসময় ওঁরা দু-জনে অন্যান্য দর্শনার্থীদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে ফিরে এসেছিলেন প্যারিসে।
এই ঘটনার সপ্তাহকাল পরেও মিস মোবারলিকে বেশ চিন্তাচ্ছন্ন এবং ভারাক্রান্ত দেখাত। তাঁকে দেখে মনে হত তিনি সর্বদাই কী যেন ভাবেন। এমনকী মনের ভাব হালকা করার জন্যে তিনি ইংল্যান্ডে তাঁর বোনকে সব কিছু জানিয়ে চিঠিও লিখেছিলেন।
একদিন কথায় কথায় মিস জর্ডেনকেও জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আচ্ছা জর্ডেন, তোমার কি মনে হয় প্রের্টিট ট্রায়ানোঁর বাড়িটা ভূতুড়ে বাড়ি? মিস জর্ডেন এককথায় উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ, মিস মোবারলি। কোনো সন্দেহ নেই ও-বাড়িতে ভূত আছে।’
এরপর ওই দুই ইংরেজ মহিলা অনেকদিন ধরে সে-দিনের ঘটনার মানে খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। পুরোনো দিনের শোনা সব ভূতের গল্পের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা বার বার মিলিয়ে দেখেছিলেন। তাঁরা দু-জনেই একমত হয়েছিলেন যে সে-দিন তাঁরা যা দেখেছিলেন, তাতে তাঁরা দু-জনেই একইসঙ্গে ভয়চকিত হয়েছিলেন। দু-জনেই সেই বিকেলে একইসঙ্গে এক অজানা শিহরনে শিহরিত হয়েছিলেন। এমনকী দু-জনে আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের বক্তব্য আর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন। পরে মিলিয়ে দেখেছিলেন দু-জনের বক্তব্য আর অভিজ্ঞতা হুবহু এক। সেদিনটা ছিল ১০ আগস্ট। পুরোনো ইতিহাসে ওই দিনটার একটি ঐতিহাসিক ঘটনাও তাঁরা পেয়েছিলেন। ১০ আগস্ট ১৭৯২ সাল। রাজার সুইস রক্ষীদল সে-দিন সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছিল যার ফলে আর রাজার পক্ষে নিজের রাজতন্ত্রবাদ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
এরপর তাঁরা দু-জনে তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা স্মরণ করে এবং মেরি অ্যান্টয়নেটের জীবন ইতিহাসের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে লিখলেন একটি বই। বইটির নাম দিলেন— অ্যান অ্যাডভেঞ্চার।
অ্যান অ্যাডভেঞ্চার প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১১ সালে। আর ওই একই বছরে বইটির এডিসন হু হু করে বিক্রি হয়ে যায়।