তখন রাত্রি আঁধার হল , সাঙ্গ হল কাজ— আমরা মনে ভেবেছিলেম আসবে না কেউ আজ । মোদের গ্রামে দুয়ার যত রুদ্ধ হল রাতের মতো , দু - এক জনে বলেছিল , ‘ আসবে মহারাজ । ' আমরা হেসে বলেছিলেম , ‘ আসবে না কেউ আজ । ' দ্বারে যেন আঘাত হল শুনেছিলেম সবে , আমরা তখন বলেছিলেম , ‘ বাতাস বুঝি হবে । ' নিবিয়ে প্রদীপ ঘরে ঘরে শুয়েছিলেম আলসভরে , দু - এক জনে বলেছিল , ‘ দূত এল - বা তবে । ' আমরা হেসে বলেছিলেম , ‘ বাতাস বুঝি হবে । ' নিশীথরাতে শোনা গেল কিসের যেন ধ্বনি । ঘুমের ঘোরে ভেবেছিলেম মেঘের গরজনি । ক্ষণে ক্ষণে চেতন করি কাঁপল ধরা থরহরি , দু - এক জনে বলেছিল , ‘ চাকার ঝনঝনি । ' ঘুমের ঘোরে কহি মোরা , ‘ মেঘের গরজনি । ' তখনো রাত আঁধার আছে , বেজে উঠল ভেরী , কে ফুকারে , ‘ জাগো সবাই , আর কোরো না দেরি । ' বক্ষ ' পরে দু হাত চেপে আমরা ভয়ে উঠি কেঁপে , দু - এক জনে কহে কানে , ‘ রাজার ধ্বজা হেরি । ' আমরা জেগে উঠে বলি , ‘ আর তবে নয় দেরি । ' কোথায় আলো , কোথায় মাল্য কোথায় আয়োজন । রাজা আমার দেশে এল কোথায় সিংহাসন । হায় রে ভাগ্য , হায় রে লজ্জা , কোথায় সভা , কোথায় সজ্জা । দু - এক জনে কহে কানে , ‘ বৃথা এ ক্রন্দন— রিক্তকরে শূন্যঘরে করো অভ্যর্থন । ' ওরে , দুয়ার খুলে দে রে , বাজা , শঙ্খ বাজা ! গভীর রাতে এসেছে আজ আঁধার ঘরের রাজা । বজ্র ডাকে শূন্যতলে , বিদ্যুতেরই ঝিলিক ঝলে , ছিন্ন শয়ন টেনে এনে আঙিনা তোর সাজা । ঝড়ের সাথে হঠাৎ এল দু:খরাতের রাজা ।