অ্যান্টিকুয়ারিয়ান
ভারতীয় নানা আদিবাসীদের এথনো-বায়োলজির ওপরে তখন প্রফেসর দিলুগুনের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করছিলাম। সেই সুবাদে কত পন্ডিতজনের সঙ্গে যে আলাপিত হবার সুযোগ ঘটেছিল, তা বলার নয়।
অবশ্য এ বিষয়ে যাঁরা দিকপাল তাঁদের মধ্যে অনেকেই আজ মৃত। ইংরেজ, বেলজিয়ান, জার্মান, স্ক্যাণ্ডিনেভিয়ান সব মিশনারি সাহেবরা এই দেশের জঙ্গল-পাহাড়ের গভীরের গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন আদিবাসীদের অতিকাছ থেকে দেখে, তাদের ভাষা শিখে, তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক সমস্ত জগৎ সম্বন্ধে কতরকম আলোকপাতই যে করে গেছেন তা জানলে ও পড়লে ভারতীয় হিসেবে লজ্জিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
অবশ্য শরৎচন্দ্র রায় এবং অধুনা ড. দিনেশ্বর প্রসাদ, ড. কে সুরেশ সিং, পি দাশ শর্মা, ড. রামদয়াল মুণ্ডা এবং আরও অনেকেই খুব ভালো কাজ করেছেন।
অ্যানথ্রোপলজিকাল বা এথনো-বায়োলজিকাল কাজ করার পথে আমার প্রধান অসুবিধে দাঁড়িয়েছিল পূর্বসূরিদের বই ও বিভিন্ন রচনার হদিশ না-পাওয়া। কলকাতায় থাকলে, ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গিয়ে হয়তো কিছু সুবিধে করা যেত। কিন্তু ভালুমারের জঙ্গলে থেকে ন্যাশানাল লাইব্রেরির স্বপ্ন দেখে লাভ ছিল না কোনো। তবুও চিঠি মারফত ন্যাশনাল লাইব্রেরির দুই লেখকবন্ধু অনেক সাহায্য করেছিলেন।
ফাদার পি পনেট, ফাদার হফম্যানের দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত করে আমাকে নানা রেফারেন্সের এক লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। সেই লিস্ট নিয়ে পাগলের মতো ঘোরাঘুরি করছি, এমন সময় একদিন অচিন্ত্যর সঙ্গে দেখা। রাঁচির অনন্তপুরের অচিন্ত্য গঙ্গোপাধ্যায়। অচিন্ত্য কাজ করত অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের বিহারের অফিসে। কিন্তু এরকম বহুমুখী উৎসাহসম্পন্ন সাংবাদিকসুলভ ঔৎসুক্য-জরজর ছেলে কমই দেখা যায়। বিহারের বিভিন্ন আদিবাসীদের সম্বন্ধে ওর অনেক পড়াশুনো ছিল। সবচেয়ে বড়ো কথা, ভালোবাসা ছিল। পড়াশুনোর চেয়েও ভালোবাসা অনেকই দামি। ড. মুণ্ডার সঙ্গেও ওর নাকি আলাপ ছিল। ড. মুণ্ডা সবে আমেরিকা থেকে ফিরেছিলেন। উনি এম এ করেছিলেন অ্যানথ্রোপলজিতে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এবং তারপর চিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিঙ্গুইস্টিকস-এও ডক্টরেট করেছিলেন।
অচিন্ত্য একদিন রাঁচির মেইন রোডে, এক চা-ফুলুরির দোকানে বসে চা খেতে-খেতে বলল, দিন-দুয়েকের জন্যে পাটনা যেতে পারেন দাদা?
পাটনা? কেন?
একজনের নাম ঠিকানা দিতে পারি। তাঁকে গিয়ে ধরতে যদি পারেন, তাহলে আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
একটু ভেবে বললাম, যাব। কিন্তু, সমস্যার সমাধান কী করে হবে?
হবে। বলছি তো হবে। হালিম স্যার হচ্ছেন একজন পুরোনো বইয়ের রহিস দোকানদার। গজাধর মন্ডীতে তাঁর বাড়ি। বাড়িতেই দোকান শুনেছি। আদিবাসীদের ওপর এ হেন আধুনিক গবেষক নেই, যাঁকে ওঁর শরণাপন্ন হতে না হয়েছে।
২
এক শনিবার রাঁচি থেকে ট্রেন ধরে পৌঁছোলাম গিয়ে পাটনা। একেবারে শীতের চুড়োয়। গঙ্গা থেকে হিম-করা বাতাস বইছে। বেজায় শীত। রোদ ঝকঝক আকাশ, তবু খদ্দরের জওহর কোটের ওপর খাদি গ্রামোদ্যোগের কম্বলের মতো আলোয়ান চাপিয়েও শীত যায় না।
পাটনা স্টেশনের পাশেই অনেক তিলের রেউড়ির দোকান। হাঁক-ডাক, শোরগোল, দেহাত থেকে আসা মানুষদের জন্যে অনেকই প্রলোভন। স্টেশনের ওয়েটিং-রুমে চান-টান সেরে নিয়ে বাইরে এসে পুরী আর আলুর চোকা, আমলার আচার দিয়ে গরমাগরম খেয়ে তারপর আদা ও এলাচ দেওয়া একভাঁড় জবরদস্ত চা গলায় ঢেলে যথাসম্ভব গরম হয়ে সাইকেলরিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম গজাধর মন্ডীর উদ্দেশে।
গজাধর-মন্ডী এলাকাতে রিকশা ছেড়ে দিয়ে যখন পায়ে হেঁটে ঠিকানা এবং হালিম সাব-এর নাম সম্বল করে এদিক-ওদিক ঘোরা শুরু করলাম, তখনও জানতাম না যে, কপালে এত হয়রানি আছে। যাকেই বলি, হালিমসাব, বইয়ের দোকানদার? সেই-ই মাথা নেড়ে বলে, ‘পাত্তা জরুর গলদ হ্যায়।’
যে-নম্বরে তাঁর থাকার কথা অনেক ঘুরে সেই নম্বরের একটা জরাজীর্ণ বাড়ির দেখাও পেলাম। জাহাঙ্গির অথবা বাহাদুর শা, কার আমলের বানানো বাড়ি যে, তা বোঝা গেল না। সে বাড়িতে যে, কোনো লোক থাকে বা থাকতে পারে তাও মনে হল না বাড়ির অবস্থা দেখে।
বাইরে একটি মরচে-পড়া মান্ধাতার আমলের ডিজাইনের নোনা-ধরা লোহার গেট। সেই গেটের ভেতরে ঢুকে একটি দরজা দেখা গেল। তা দিয়ে কোনোক্রমে একজন মানুষই ঢুকতে পারে। দরজা অবধি গিয়ে, ভেতরে উঁকি মেরে দেখলাম, অন্ধকার। ঝকঝকে রোদ-ওঠা মাঘের সকালেও অন্ধকার। এবং মৃত্যুর নিস্তব্ধতা।
ঝটপট আওয়াজ করে কতগুলো পায়রা অদৃশ্যভাবে উড়ে, চোখের আড়ালেই আবার বসে প্রমাণ করার চেষ্টা করল যে, আমি যা ভাবছি, তা নয়; প্রাণ আছে। সে বাড়িতেও প্রাণ আছে!
কোই হ্যায়? হালিমসাব? হালিমসাব?
বহু বার ডেকেও কোনো সাড়া পেলাম না। ওই দরজা দিয়ে ঢুকতেও সাহস হল না। যদি কেউ খুনও করে রেখে দেয়; কিছুই বলার নেই। কেউ জানতেও পারবে না। গতসপ্তাহেই সবে নতুন এইচএমটি হাতঘড়িটি কিনেছি।
কী করব, ভেবে না পেয়ে, আবার বাইরেই ফিরে এলাম। ওই বাড়িটির লাগোয়া দু-পাশের এবং উলটোদিকের দোকানে খোঁজ করলাম। না:। কেউ কখনো শোনেইনি অমন ভূতুড়ে বইয়ের-দোকানের কথা।
অচিন্ত্যর তো কোনো ক্ষতি করিনি আমি? জেনেশুনে এমন প্র্যাকটিক্যাল জোক করল কেন ও আমার সঙ্গে?
একটি অল্পবয়েসি ছেলে আমার হাতের চিরকুটের ঠিকানা পড়ে নিয়ে, পিচিক করে পানের পিক ফেলে হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল, আপ কাঁহাকা রহনেওয়ালা?
রাঁচিকা!
রাঁচি মতলব? কাঁকে রোডকা?
বলেই, মিচকে হেসে বলল, হুমম। মেরি আন্দাজ তব তো বিলকুল ঠিকই নিকলা।
এমন সময়, নোংরা ধুতি ও পাঞ্জাবি-পরা একজন বৃদ্ধ, হাতে লাঠি, মুখে লেগে-থাকা আশ্চর্য বিধুর এক হাসি নিয়ে পথ চলতে চলতে, ছেলেটির কথা শুনেই দাঁড়িয়ে পড়ে ছেলেটিকে শ্লেষমিশ্রিত গলায় বললেন: তুমলোগোঁনে পটনামে রহকে স্রিফ শত্রুঘন সিনহাকা খিদমদগারি জানতে হো। হালিমসাব ইস জমানেকে তমদদ্দুনকে লায়েক নেহি না হ্যায়!
ছেলেটি জিভের সমস্ত জোর জড়ো করে পিচিক করে বৃদ্ধর প্রায় মুখের ওপরই পিক ফেলল আরেকবার। ফেলে বলল, আজ সুব্বে সুব্বেই দুনিয়াকা সব মানহুস ইনসানোসে ভেট হো গ্যয়া। ইয়ে দিনকা নতীজা বহতই খরাব নিকলেগা হামারা লিয়ে।
বৃদ্ধ যুবকটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলেন, যেমন করে একমাত্র গর্বিত, বিজ্ঞ, বৃদ্ধরাই করতে পারেন। সামান্য ফিরে, একটু ঝুঁকে, লোহা-বসানো ছুঁচোলো লাঠিটি তুলে যে-দরজা দিয়ে আমি একটু আগেই বেরিয়ে এলাম, সেদিকেই নির্দেশ করে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন আমায়।
ওঁকে বলতে যাচ্ছিলাম…
আমাকে থামিয়ে দিয়েই উনি বললেন, জারা আন্ধারি পার হোকে দেখিয়ে না জনাব, সামনামে বড়া উজালা হ্যায়! আপ ক্যা শোচেথে যো, হালিমসাব গজাধর-মন্ডীকা শড়ক-পর বৈঠকে ফিলম গানাকা কিতাঁবো…
আমি লজ্জিত হয়ে, ওঁকে ধন্যবাদ দিয়ে আবার সাহস করে সেই সুড়ঙ্গের মতো দরজার মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম।
সঙ্গে সঙ্গে রোদ মরে গেল। আবার শোনা গেল চোখের আড়ালে পায়রার ডানার ঝটপটানি। মনে হল, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানকে অনেকদিন আগেই কে বা কারা এখানে অন্ধকারে গলা-টিপে খুন করে রেখে গেছে, অতীতের রাজত্বকে চিরদিন কায়েম করে রাখার জন্যে।
এক সময় বাঘের গুহাতেও সাহস করে ঢুকেছি, তাই অপ্রয়োজনের ফেলে-দেওয়া পুরোনো সাহসকে মনের, ওয়েস্ট-পেপার বক্স থেকে তুলে নিয়ে আর একটু এগোলাম। এবার অন্ধকার সুড়ঙ্গ পেরুনোর পর স্পষ্ট চোখে পড়ল একটি মস্ত উঠোন। চারকোনা। একতলাতে প্রাচীন কারুকার্যময় রেলিং-দেওয়া চারকোনা বারান্দা। চারদিকে ঘোরানো। দোতলাতেও তাই। উঠোনের একপাশে শীতের জাফরান-রঙা রোদ এসে নিস্তেজ পোষা-কুকুরের মতো শুয়ে আছে।
কী ধুলো!
কতদিনের ধুলো চারদিকে।
ধুলোগুলো কোথাও কোথাও জড়ো করে স্তূপাকার করা আছে। মনে হচ্ছিল, ধুলো নয়; কালো বারুদ। দেশলাই ঠুকে দিলেই, জ্বলে উঠবে দপ করে। পায়রাদের ডানার ঝটপট আর তাদের অস্ফুট স্বগতোক্তি ছাড়া আর কোনোই শব্দ নেই। ধুলোর বারুদও নিস্তব্ধ।
আবারও ওপরে তাকিয়েই চোখে পড়ল একটি বহুমূল্য কিন্তু শতচ্ছিন্ন পারসিয়ান গালিচা দোতলার রেলিঙের ওপর মেলে দেওয়া হয়েছে। রোদ এসে তাতে বসবে; সেই আশায়।
গলা চড়িয়ে, হালিমসাব! বলে ডাকতে যাব, ঠিক এমন সময় সারেঙ্গির মিষ্টি আওয়াজ ভেসে এল দোতলা থেকে। হরিণের খুরের আওয়াজের মতো ছন্দবদ্ধ তবলার আওয়াজও যেন শুনলাম মনে হল। এক তরুণীর গলার স্বর। স্বর শুনেই, কেন জানি না, মনে হল, কন্ঠস্বরের মালকিন খুবই সুন্দরী। সারেঙ্গির সুরের সঙ্গে স্বর মিলিয়ে প্রথম ভোরের পরিযায়ী পাখির চিকন ডাকের মতো নিষ্কলুষ, নিক্কণিত সুরেলা গলায় কে যেন হঠাৎ ধরল: ‘তুয়া চরণকমলপর মন ভ্রমর ভালভান যাঁউ চন্দ্র চকোর।’
আঃ! সব কিছু গোলমাল হয়ে গেল আমার সেই মুখরা শুনে। মনে পড়ে গেল, যশোয়ন্ত-এর সঙ্গে একবার গাড়োয়ান জঙ্গলের শিকারের ক্যাম্পে আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এক মির্জাপুরি বাইজি, রুকনি বাইয়ের মুখে শুনেছিলাম এই বিখ্যাত গানটি।
গান শুনতে শুনতে আমি কেন যে পাটনাতে এসেছি আজ সকালে, কেন যে গজাধর মন্ডীর এই আশ্চর্য প্রাগৈতিহাসিক আলো-আঁধারের উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছি; সবই ভুলে গেলাম। যাকে আত্মবিস্মরণ বলে, পুরোপুরিই তাই হল আমার।
আশাবরির এই পদটি ধ্রপদের মতোই গাইতে শুনেছিলাম গাড়োয়াতে সেই বাইজিকে। মন্ত্রমুগ্ধর মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই বুঝলাম, ধ্রপদ নয়; গায়িকা খেয়ালের ঢং-এই গাইছেন। অজানিতে, নিয়ম ভেঙে, অথবা ভুল করে কি, জানি না।
গায়িকা ধীরে ধীরে নিজেকে ফুলের মতো ফুটিয়ে তুলছিলেন! আর ঢং-এর সামান্য এদিক-ওদিক হয়ে যাওয়াতে ভৈরবী এবং জৌনপুরিও ছোঁয়া লাগছিল এসে। ব্যাকরণ হয়তো তাতে অশুদ্ধ হচ্ছিল। কিন্তু হলই বা!
পুরোনো বইয়ের খোঁজে এসে আজ সকালে যে অসামান্য অতীতের অন্ধকার পর্দা ফুঁড়ে সত্যিই এক অনন্তকালের আলোর মধ্যে অভাবনীয়ভাবে এসে পড়লাম, সেকথা মনে করেও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল।
ওই সুর-সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক অথবা প্রাগৈতিহাসিক পরিবেশে ডাকাডাকি চেঁচামেচি একেবারেই করা সম্ভব ছিল না।
কতক্ষণ যে ওইভাবেই দাঁড়িয়েছিলাম বলতে পারব না। পনেরো মিনিটও হতে পারে, তিন ঘণ্টাও হতে পারে। নিস্তেজ কুকুরের মতো উঠোনের কোনায় কোনাকুনি শুয়ে থাকা-রোদ এক সময় কখন যে নি:শব্দে উঠে চলে গেল তা খেয়াল পর্যন্ত করিনি। দোতলার বারান্দা থেকে তখনও রাশি রাশি নরম জুঁই ফুলের মতো, পাখির তলপেটের মসৃণ রেশমি পালকের মতো সুর ঝরছিল।
ঝরছে তো ঝরছেই। ভৈরবী ও জৌনপুরি মিশিয়ে দেওয়া আশাবরির তান শুনতে শুনতে আমি যেন সেই বহু যুগ আগের গাড়োয়ার জঙ্গলের সকালেই চলে গেছিলাম। যশোয়ন্ত যেন আমাকে ঠেলা মেরে বলছিল, ক্যা লালসাব? হালত খারাব?
হঠাৎই স্বপ্নভঙ্গ হল। কে যেন আমাকে প্রায় পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েই পাশে এসে দাঁড়াল। অসভ্যর মতো।
বলল, কওন হ্যায় আপ?
চমক ভেঙে ও সবিনয়ে আমার তারিফ পেশ করে দিয়ে বললাম যে, আমি হালিম সাব-এর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। রাঁচি থেকে আসছি।
ছেলেটি অল্পবয়েসি। তার পরনে ঘন লাল রঙের জিনস। গায়ে লাল এবং কালো রঙের চেক-চেক নাইলনের গেঞ্জি। পায়ে, সোনার জলের কাজ-করা চটি। শরীরে, সস্তা পাউডারের অশালীন গন্ধ। আমার দিকে এবং দোতলার দিকে একইসঙ্গে চেয়ে সে অদ্ভুত এক উপেক্ষা ও ঘেন্নামেশা হাসি হাসল।
তার পর বিদ্রূপাত্মক গলায় বলল, আপনি দাঁড়ান। আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি বুড়োকে। সকাল সকালই আজ গান চেগেছে। ম্যয়ফিল বসে গেছে। যেমন দোকান, তেমন দোকানদার, আর…তেমনই সব খদ্দের!
বলেই, আমার দিকে একবার অপাঙ্গে চেয়েই জাফরি-লাগানো সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উঠে গেল সে ওপরে।
কিন্তু ছেলেটি ওপরে যাওয়ার আগেই দোতলার বারান্দাতে এক বৃদ্ধ এসে দাঁড়ালেন। চেহারা দেখে, বয়েস আন্দাজ করা যায় না। পোশাকেও না। তবে মনে হল যে, আমরা যখন ছোটো ছিলাম, তখনও হয়তো উনি বৃদ্ধই ছিলেন।
উনি আমার দিকে চেয়ে, নিজের ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে চুপ করে থাকতে বললেন।
গান যেমন চলছিল; তেমনই চলছিল। বোধ হয় অমন কোমল স্বরের ছড়াছড়ির মধ্যে হঠাৎ বেসুরো ছেলেটির কর্কশ উচ্চকিত স্বরে বিরক্ত হয়েই উনি বারান্দাতে উঠে এসেছিলেন।
ছেলেটি নিশ্চয়ই ওঁকে বলে থাকবে, আমি কেন এবং কোথা থেকে আসছি। একটু পরই হালিম সাব নেমে এসে, উঠোনের অন্য কোণে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকলেন। কালো ধুলোর পাহাড়, উপত্যকা, সব সাবধানে পেরিয়ে সেখানে গিয়ে পৌঁছোতেই ধুলোর বাঁধ-দেওয়া একটি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কোমর থেকে লম্বা পেতলের চাবি বের করে অদ্ভুত দর্শন একটা তালা খুললেন। কী কাঠের দরজা, তা বোঝা গেল না। কিন্তু এমন কারুকার্যময় দরজা কখনো কোনো রাজারাজড়ার বাড়িতেও দেখেছি বলে মনে পড়ল না। যদিও সব কারুকাজই তখন ধুলোয় ঢাকা।
আগে নিজে ঢুকে, আমাকে বললেন, আইয়ে অন্দর। পাধারিয়ে।
চমকে উঠলাম আমি। আশ্চর্য তারুণ্য গলার স্বরে। কে বলবে যে, ইনি বৃদ্ধ!
ঘরটাতে ঢুকতে আমার ভয় করছিল। ছোট্ট ঘর। চারদিকে বইয়ের পাহাড়। পাহাড় না বলে, উইয়ের ঢিপিই বলা ভালো। কারণ, কোটি কোটি উইপোকার বাস সেখানে এবং কয়েক টন কালো ধুলো।
একটি চেয়ারে উনি নিজে বসে, আমাকে অন্য একটি চেয়ারে বসতে দিলেন। চেয়ারের চেহারা দেখেও মনে হল কলকাতার লেজারার্স কোম্পানির প্রথম আমলের চেয়ার।
হালিমসাহেবের পরনে মলিন চুড়িদার পাজামা। ওপরে কুর্তা। তার ওপরে জমকালো, কিন্তু ছেঁড়া একখানা শাল। শালটির ওজন হয়তো নতুন অবস্থায় শ-গ্রাম ছিল। এমন কারুকার্যময় পাতলা শালও আমি আগে দেখিনি। হালিম সাব-এর গা দিয়ে হালকা অম্বর আতরের গন্ধ বেরুচ্ছিল। এবং মুখ দিয়ে, অচেনা কোনো মদ-এর।
একটি কারুকাজ-করা জানালা খুলে দিলেন তিনি। কোথা থেকে যে আলো আসতে লাগল, বুঝলাম না। রোদ নয়; শুধু একটু আলো। সেই স্বপ্নালোকিত ঘরে বসে বহু যুগ আগে ক্ষরিত জমাটবাঁধা রক্তের মতো লাল আর সরষেফুলের মতো হলুদ রঙে-মেশা শাল গায়ে-দেওয়া চেস্ট-নাট রঙের বৃদ্ধর দিকে আমি অবাকচোখে চেয়েছিলাম।
আমি ওঁকে দেখছিলাম। উনিও আমাকে।
উনি যে-চেয়ারে বসে আছেন তার সামনে একটি রাইটিং-ব্যুরো। তাতে অসংখ্য পিজন-হোলস। তারমধ্যে হাজার হাজার চিঠি। চিঠিগুলোও ধুলোর বারুদে ঢাকা। একটি ওষুধের শিশি। হাকিমি-দাওয়াখানার রতিশক্তি-বর্ধক বটিকা। আরও নানা দাওয়াই। গ্লাসের মধ্যে ল্যাজ গজানো একমুঠো ছোলা—জলের ভেতর। রাইটিংব্যুরোর ওপরেই একটি সুইস টেবল-ক্লক। বন্ধ। তাতে বারোটা বাজতে একমিনিট দেখাচ্ছে সময়। অনেকক্ষণ পর সময়ের কথা মনে পড়াতে নিজের ঘড়ির দিকে দেখলাম, এগারোটা বেজেছে।
রাইটিং-ব্যুরোর ওপরের দেওয়ালে একটি ক্যালেণ্ডার। সেই ক্যালেণ্ডারে একজন খাইখাই চেহারার ইংরেজ মেয়ে ফরাসীয় ক্যান-ক্যান ডান্সারের মতো ফোলানো গাউন পরে, ছাতা মাথায় গাছতলায় দাঁড়িয়ে আছে ছবি হয়ে। ডিসেম্বর মাসের পাতা ঝুলছে। উনিশ-শো উনত্রিশ সালের। সে-বছরের চব্বিশে ডিসেম্বর তারিখের নীচে কালি দিয়ে কী যেন কী লেখাও আছে।
উৎসুক হয়ে দাঁড়িয়ে উঠে, পড়তে গেলাম আমি।
হালিমসাব হাসলেন। বললেন, লেখা মুছে যায়; শুধু ব্যথা আর স্মৃতি থাকে।
ইংরেজিতে যখনই কথা বলছিলেন, তখনই একেবারে অক্সোনিয়ান অ্যাকসেন্টে। এখনকার দিশি সাহেবদের মতো নয়। যাঁরা প্রথম দেড় মিনিট অক্সোনিয়ান অ্যাকসেন্টে কথা বলার পরই হয় হরিয়ানা, নয় তামিলনাড়ু, নয়তো রাজস্থানি, নয়তো নিউ মার্কেটের সিন্ধি দোকানদারদের অ্যাকসেন্টে ফিরে যান।
ইংরেজ মেয়েটির জন্যে ভারি কষ্ট হল। নাইনটিন টোয়েন্টি নাইনের ডিসেম্বর মাস থেকে প্রেমিক আসবে বলে সে সটান দাঁড়িয়ে আছে এই ছবিতে। প্যারাসোল খুলে, ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে।
এবার কাজের কথায় এলেন হালিমসাব। বললেন, আপনার ইন্টারেস্ট কী? হো, মুণ্ডা, সাঁওতাল, বীরহোর, চেরো, খড়িয়া, খাঁরওয়ার, খন্দ, অসুর, কোন আদিবাসীদের সম্বন্ধে? এবং কী নিয়ে কাজ করছেন আপনি? অ্যানথ্রোপলজি, এথনোলজি, সোশিয়ো-ইকনমিক ডেভলাপমেন্ট, স্পিরিচ্যুয়ালিটি, রিলিজন, ফোক-লোরস, উ্যন্সেজেস অ্যাণ্ড কাস্টমস? সংগস অ্যাণ্ড পোয়েমস? কী নিয়ে?
আমি ওঁকে বললাম, যা বলার; সংক্ষেপে।
আপনি বাঙালি? তা, শরৎ রায়ের নাম শোনেননি? শরৎবাবু নিজে উকিল ছিলেন, আদিবাসীদের হয়ে মামলা লড়তে লড়তে কখন যে তাদের ভালোবেসে ফেলেছিলেন, তা তিনি নিজেও হয়তো বুঝতে পারেননি। ওই উকিল ভদ্রলোক যা করে গেছেন অনেক ডিগ্রিধারী অ্যানথ্রোপলজিস্টও তা করেননি। শরৎ রায় আপনার রাঁচিতেই মারা গেলেন। এই তো সেদিন।
সেদিন? কই? কাগজে কিছু পড়িনি তো? আমি তো জানি উনি—
তিরিশে এপ্রিল। তারিখটাও মনে আছে আমার।
আর বছরটা?
হ্যাঁ। মনে থাকবে না? মাত্র সেদিনের তো কথা! নাইনটিন ফরটি টু!
তার পর বললেন, কী কী বই দরকার? তার লিস্ট করে এনেছেন?
আপনি কী কী সাজেস্ট করেন? কী কী পাব এখানে তা না জানলে! জানব কী করে।
মুণ্ডাদের সম্বন্ধে জানতে চান তো ভালো করে হফম্যানকে পড়ুন।
হালিমসাহেব বললেন।
কুড়ি বছরের জার্মান ছোকরা আঠারো-শো সাতাত্তর সনে এদেশে এসে নেমেছিল। উনিশ-শো পনেরোতে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড-ওয়ারের সময়ে তাকে ইংরেজরা ফেরত পাঠাল জার্মানিতে। ফাদার হফম্যানকে। কিন্তু জার্মান জাতটার মতোই ইংরেজ জাতটারও অনেকই গুণ ছিল। অনেকই গুণ!
বলেই বললেন, এশিয়াটিক সোসাইটি অফ লানডানের জার্নালের ব্যাক কপি চাই? নাইনটিন টোয়েন্টি ফাইভ থেকে? রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গলের সব ব্যাক নাম্বারও আছে। এই ধরুন, পি ও বডিং-এর ‘হাউ দ্য সান্টালস লিভ’, ভলিউম টেন, নাম্বার থ্রি। আজকালকার ছোকরা বলতে, মানে, যারা মুণ্ডাদের নিয়ে ভালো কাজ করেছে—যেমন পনেট, ফাকস, ভ্যান অ্যাক্সাম; জে ডিনি। এরা ছাড়াও অনেক দিশি ছোকরাও নিশ্চয়ই আছে।
চারধারের স্তূপীকৃত উইয়ে-কাটা, ধুলোভরা বইয়ের দিকে তাকিয়ে হাঁ করে বসেছিলাম আমি।
একটা মোটা বই দেখিয়ে বললাম, ওটা কী বই? ইশ। উইয়ে তো একেবারে—
উনি হাসলেন। বললেন, উইয়ে তো শুধু বই-ই কাটে! আর আমরা? আমরা যে সবকিছুই কাটি? সততা, স্মৃতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি যা কিছু ভালো; সবই কাটি!
বলেই বললেন, এই নিন! লুথারসাহেবের আঠারো-শো সাতাশ সনে চায়নাতে বাঘ শিকারের অ্যাডভেঞ্চার। শিকারে ইন্টারেস্টেড লোকেরা এ বইয়ের দাম দেবেন হাজার টাকা!
আমি বললাম, আমার কাছে দু-শো টাকা আছে। এতে কী কী বই হবে?
উনি হাসলেন।
তবে, অবজ্ঞা করে নয়।
বললেন, ওই টাকায় তো কোনো বই-ই হবে না জনাব। তবে, এক কাজ করতে পারেন। বিবলোগ্রাফি নিয়ে যান। পরে আমাকে লিখলে আমি ভি পি-তে পাঠিয়ে দেব এক এক করে।
তার পর প্রবোধ দিয়ে বললেন, এসব বইয়ের তো দাম হয় না। মানে, দামে দাম হয় না। তা ছাড়া, আমার দোকানে মাসে হয়তো একজন খদ্দের আসেন। এ তো দোকান নয়। নিভৃত কবরখানা।
বিবলোগ্রাফই নিলাম একটি। চটি বই। রং হলুদ হয়ে গেছে। অর্ধেক উইয়ে কাটা।
উনি বললেন, পোকার জন্যে চিন্তা নেই। কেরোসিন তেলের মধ্যে ন্যাপথলিনের বড়ি ফেলে ডিসলভ করে নিয়ে ন্যাকড়াতে তা ভিজিয়ে সেই ন্যাকড়া দিয়ে মুছে নেবেন বইয়ের পাতাগুলো। সব উই মরে যাবে।
এবার উঠতে হবে। কী বলব ভেবে না পেয়ে, হঠাৎ বললাম, ভারি ভালো গান।
হালিমসাহেব চমকে উঠলেন। বললেন, গান? এ গান আপনার ভালো লাগে?
জবাব না দিয়ে বললাম, কে গাইছিলেন?
আমার পাঁচ-নম্বরি বিবি।
আর যে ছেলেটি আমার আসার খবর নিয়ে ঢুকল, সে কে?
ছেলে? ওহো! আমারই ছেলে। তিন নম্বর বিবির চার নম্বর ছেলে।
কী করেন উনি? নিশ্চয়ই আপনার এই ব্যাবসা দেখেন না?
উনি? করেন অনেক কিছুই। সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করেন। নেপাল থেকে স্মাগলিং করে জিনিস আনেন। প্রয়োজনে, চাকু-বোমা চালান।
গানও ভালোবাসেন না মনে হল।
ওদের কি ধৈর্য আছে? ধৈর্যই ভালোবাসাকে গভীর করে। যে-কোনো ভালোবাসা। এসব গান ওদের জন্যে নয়।
কথা ঘুরিয়ে বললাম, হালিমসাহেব, আপনার বয়েস কত হল?
বলেই বললাম; কিছু মনে করবেন না।
আমার বয়েস?
বলে, হালিমসাহেব, যে জানালা দিয়ে আলোর আভাস আসছিল সেই দিকে অনেকক্ষণ নিস্তব্ধ হয়ে চেয়ে থাকলেন। অনেকদিন বোধ হয় এমন প্রশ্ন ওঁকে কেউ করেনি।
তার পর, আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, আমার মনের বয়েস কুড়ি। শরীরের বয়েসের হিসেব রাখি না। গাছ কি ঝরাপাতার হিসেব রাখে? তবে, নব্বই, এক-শো তো হবেই।
আপনার কি কোনো মন্ত্র-গুপ্তি জানা আছে হালিমসাহেব? এই বয়েসেও আশ্চর্য তরুণ আপনি!
আছে আছে!
বলে হেসে উঠলেন হালিমসাহেব।
তার পর বললেন, জওয়ান লেড়কিঁয়া। যারা আপনার চেয়ে কম করে কুড়ি বছরের ছোটো এমন যুবতীদের নজদিঁকিয়া। সৎসঙ্গ। এবং সৎসুরা। এই তিন মন্ত্র আমার। আনন্দে থাকাটাই মন্ত্র। আনন্দের দ্বার খুলে রাখার আর এক নামই বেঁচে থাকা। আনন্দের দ্বার যেই রুদ্ধ করবেন, মৃত্যু তখুনি সেই বন্ধ দরজায় এসে টোকা মারবে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
বললাম, চলি এবার।
হালিমসাহেবও উঠলেন। বললেন, খুদা হাফিজ, হরওয়াক্ত মজেমে রহিয়ে। ইস বেহেতরিন দুনিয়ামে হরওয়াক্ত খুশি ঔর ইনায়েত কি খুশবু ডালতে রহিয়ে ঔর উসসিমে ডুবকে রহিয়ে।
হালিমসাহেব একটা কার্ড দিলেন আমাকে। বললেন, প্রয়োজনে চিঠি লিখবেন। আসতে হবে না। হয় উর্দু, নয় ইংরেজিতে। আপনাদের হিন্দি-ফিন্দি আমি জানি না। শুনেছি, হিন্দি হিন্দুস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হয়েছে!
কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখলাম, সেটাও ঘি-রঙা হয়ে গেছে।
নাইনটিন ফর্টি-ফাইভে শেষ ছেপেছিলাম পাঁচ-শো কার্ড। এখনও তিন-শো রয়ে গেছে।
পড়ে দেখলাম, লেখা আছে, জনাব মহম্মদ হালিম বাহাদুর। অ্যান্টিকুয়ারিয়ান বুক সেলার। গজাধর মন্ডী। পাটনা।
কালো বারুদের মতো ধুলোর প্রাচীর তুলে তার ভেতরে বসে আছেন জনাব মহম্মদ হালিম খাঁ বাহাদুর। শান্তির নিভৃত ছোট্ট দ্বীপ গড়ে; এই অশান্ত সময়ের সমুদ্রে। নিজের নাতনির চেয়েও বয়েসে ছোটো কোনো গন্ধরাজিলেবু-নারীর শরীরে, সুরায় এবং উচ্চাঙ্গ সংগীতে বুঁদ হয়ে। ইতিহাসকে কৌটো-বন্দি করে রেখে দিয়েছেন। প্রেমিকার অপেক্ষায় ক্যান-ক্যান গাউন-পরে দাঁড়িয়ে থাকা নাইনটিন টোয়েন্টি-নাইনের ক্যালেণ্ডারের ছবির মেমসাহেবের মতো, বারোটা বাজতে একমিনিটে বন্ধ করে-রাখা ঘড়ির মতো; মৃত্যুকে, জরাকে দূরে সরিয়ে তাঁর সমকালীন সমস্ত কিছু সুন্দর মোহময়তাকে কৌটো-বন্দি করেই রেখে দিয়েছেন ওই অন্ধকারের ধুলোর বারুদ-কালো আব্রুর মধ্যে। ‘ওয়াক্ত কা সাঁপ কি নিগাহ’ এড়াবার জন্যে, ওয়াক্তকেই থামিয়ে রেখেছেন উনি।
বাইরে বেরিয়ে, লোক-গিস-গিস, আওয়াজ-ঘর্ঘর নব্য পাটনার পথে পা দিয়েই, আলোতে চোখ ধেঁধে গেল। অনেক আলো। কিন্তু এ আলো অন্যরকম আলো।
পথিক বৃদ্ধ তীক্ষ্ণ লাঠি তুলে পথ নির্দেশ করে আমাকে ঠিকই বলেছিলেন
‘জারা আন্ধার পার হোকে দেখিয়ে না জনাব, বড়া উজালা হ্যায়।’