অসমাপ্ত
কয়েক জন নবীন সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রকে ঘিরিয়া বসিয়াছিল।
তিনি অর্ধমুদিত নেত্রে গড়গড়ার নলে একটি দীর্ঘ টান দিলেন; কিন্তু যে পরিমাণ টান দিলেন, সে পরিমাণ ধোঁয়া বাহির হইল না। তখন নল রাখিয়া তিনি বলিলেন—
‘আজকাল তোমাদের লেখায় ‘প্রকৃতি’ কথাটা খুব দেখতে পাই। পরমা প্রকৃতি এই করলেন; প্রকৃতির অমোঘ বিধানে এই হল, ইত্যাদি। প্রকৃতি বল্তে তোমরা কি বোঝো তা তোমরাই জানো; বোধ হয় ভগবানের নাম উচ্চারণ করতে লজ্জা হয়, তাই প্রকৃতি নাম দিয়ে একটা নূতন দেবতা তৈরি করে তার ঘাড়ে সব কিছু চাপিয়ে দিতে চাও। ভগবানের চেয়ে ইনি এককাঠি বাড়া, কারণ ভগবানের দয়া-মায়া আছে, ধর্মজ্ঞান আছে। তোমাদের এই প্রকৃতিকে দেখলে মনে হয়, ইনি একটি অতি আধুনিকা বিদুষী তরুণী—ফ্রয়েড্ পড়েছেন এবং কুসংস্কারের কোনও ধার ধারেন না। মানুষের ভাগ্য ইনি নির্দয় শাসনে নিয়ন্ত্রিত করছেন, অথচ মানুষের ধর্ম বা নীতির কোনও তোয়াক্কা রাখেন না।
এই অত্যন্ত চরিত্রহীন স্ত্রীলোকটির তোমরা নাম দিয়েছ—প্রকৃতি। এঁকে আমি বিশ্বসংসারে অনেক সন্ধান করেছি কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি। একটা অন্ধ শক্তি আছে মানি, কিন্তু তার বুদ্ধি-সুদ্ধি আক্কেল-বিবেচনা কিচ্ছু নেই। পাগলা হাতির মতো তার স্বভাব, সে খালি ভাঙ্তে জানে, অপচয় করতে জানে। তার কাজের মধ্যে কোনও নিয়ম আছে কি না কেউ জানে না; যদি থাকে তাও তোমাদের ঐ মাধ্যাকর্ষণের নিয়মের মতো—অর্থাৎ নিয়ম আছে বটে কিন্তু তার কোন মানে হয় না।’
চাকর কলিকা বদলাইয়া দিয়া গিয়াছিল, শরৎচন্দ্র নলে মৃদু মৃদু টান দিলেন। —
‘সব চেয়ে পরিতাপের কথা তোমাদের প্রকৃতি আর্টিস্ট নয়; কিংবা তোমাদের মতো আর্টিস্ট। তার সামঞ্জস্য-জ্ঞান নেই, পূর্বাপর জ্ঞান নেই। কোথায় গল্প আরম্ভ করতে হবে জানে না, কোথায় শেষ করতে হবে জানে না, নোংরামি করতে এতটুকু লজ্জা নেই, মহত্ত্বের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই—ছন্নছাড়া নীরস একঘেয়ে কাহিনী ক্রমাগত বলেই চলেছে। একই কথা হাজার বার বলেও ক্লান্তি নেই। আবার কখনও একটা কথা আরম্ভ হতে না হতে ঝপাং করে শেষ করে ফেলছে। মূঢ়—বিবেকহীন—রসবুদ্ধিহীন—
একবার একটা গল্প বেশ জমিয়ে এনেছিল; ক্লাইম্যাক্সের কাছাকাছি পৌঁছে হঠাৎ ভণ্ডুল করে ফেললে।
গল্পটা বলি শোনো। গৃহদাহ পড়েছ তো, কতকটা সেই ধরনের; তফাৎ এই যে, এ গল্পটা বলেছিল তোমাদের প্রকৃতি—অর্থাৎ সত্য ঘটনা।
পানা-পুকুরের তলায় যেমন পাঁক, আর ওপরে শ্যাওলা, সমাজেরও তাই। পাঁক কুশ্রী হোক, তবু সে ফসল ফলাতে পারে; শ্যাওলার কোনও গুণ নেই। নিষ্কলতার লঘুত্ব নিয়ে এরা শুধু জলের ওপর ভেসে বেড়ায়।
কিন্তু তাই বলে এদের জীবনে তীব্রতার কিছুমাত্র অভাব নেই। বরঞ্চ কৃত্রিম উপায়ে এরা অনুভূতিকে এমন তীব্র করে তুলেছে যে, পঞ্চরংয়ের নেশাতেও এমন হয় না। সত্যিকার আনন্দ কাকে বলে তা এরা জানে না, তাই প্রবল উত্তেজনাকেই আনন্দ বলে ভুল করে; সত্যের সঙ্গে এদের পরিচয় নেই, তাই স্বেচ্ছাচারকেই এরা পরম সত্য বলে ধরে নিয়েছে।
ভূমিকা শুনে তোমরা ভাবছ গল্পটা বুঝি ভারি লোমহর্ষণ গোছের একটা কিছু। মোটেই তা নয়। ইংরেজিতে যাকে বলে চিরন্তন ত্রিভুজ, এও তাই—অর্থাৎ দুটি যুবক এবং একটি যুবতী। সেই সুরেশ, মহিম আর অচলা।
কিন্তু এদের চরিত্র একেবারে আলাদা। এ গল্পের অচলাটি সুন্দরী কুহকময়ী হ্লাদিনী—-হৃদয় বলে তাঁর কিছু ছিল কি না তা তোমাদের প্রকৃতি দেবীই বলতে পারেন। ছিল ভোগ করবার অতৃপ্ত তৃষ্ণা, আর ছিল ঠমক, মোহ, প্রগল্ভতা—পুরুষের মাথা খাওয়ার সমস্ত উপকরণই ছিল।
ওদিকে মহিম ছিল দুর্দান্ত একরোখা গোঁয়ার; যুদ্ধের মরসুমে সে টাকা করেছিল প্রচুর—ধনকুবের বললেও চলে। আর সুরেশ ছিল অতন্তি সুপুরুষ, ভয়ানক কুচুটে—কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যাপারে মধ্যবিত্ত। টাকার দিক দিয়ে মহিমের সঙ্গে যেমন তার তুলনা হত না, চেহারার দিক দিয়ে তেমনি তার সঙ্গে মহিমের তুলনা হত না। দু’জনে দু’জনকে হিংসে করত, বাইরে লৌকিক ঘনিষ্ঠতা থাকলেও ভিতরে ভিতরে তাদের সম্পর্কটা ছিল সাপে-নেউলে।
এই তিনজনকে নিয়ে পানা-পুকুরের ওপর ত্রিভুজ রচনা হল। কিন্তু বেশী দিনের জন্যে নয়। কিছুদিন অচলা এদের দু’জনকে খেলালে, তারপর ঠিক করে নিলে কাকে বেশী দরকার। সেকালে কি ছিল জানি না, কিন্তু আজকালকার দিনে যদি কুবের আর কন্দর্প কোনও রাজকন্যের স্বয়ংবর-সভায় আসতেন, তাহলে কুবেরের গলাতেই মালা পড়ত, কন্দর্পকে তীরধনুক গুটিয়ে পালাতে হত।
মহিমের সঙ্গেই অচলার বিয়ে হল। সুরেশ বেশ হাসিমুখে পরাজয় স্বীকার করে নিল; কারণ সে বুঝেছিল, এ পরাজয় শেষ পরাজয় নয়, মুষ্টিযুদ্ধের প্রথম চক্কর মাত্র। হয়তো সে অচলার চোখের চাউনি থেকে কোনও আভাস পেয়েছিল।
একটা কথা বলি। প্রেমিকেরা চোখের ভাষা বুঝতে পারে, এমনি একটা ধারণা আছে—একেবারে মিথ্যে ধারণা। প্রেমিকেরা কিছু বোঝে না। স্ত্রীজাতির চোখের ভাষা বুঝতে পারে শুধু লম্পট।
বিয়ের পরে একদিন মহিমের বাগানে চায়ের জলসা ছিল। জমজমাট জলসা, তার মাঝখানে সুরেশ বললে, “মহিম, তুমি শুনে সুখী হবে আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। তবে নেহাৎ সিপাহী সেজে নয়; ঠিক করেছি পাইলট হয়ে যাব।”
একটু শ্লেষ করে মহিম বললে, “তাই না কি! এ দুর্মতি হল যে হঠাৎ?”
সুরেশ হেসে উত্তর দিলে, “হঠাৎ আর কি, কিছুদিন থেকেই ভাবছি। এ যুদ্ধটা তো তোমার আমার মতো লোকের জন্যেই হয়েছে; অর্থাৎ আমার মতো লোক যুদ্ধে প্রাণ দেবে, আর তোমার মতো লোক টাকার পিরামিড তৈরি করবে।”
মহিমের মুখ গরম হয়ে উঠল, কিন্তু সে উত্তর দিতে পারলে না। সে ভারী একরোখা লোক কিন্তু মিষ্টভাবে কথা কাটাকাটিতে পটু নয়।
আকাশে একটা এরোপ্লেন উড়ছিল; তার পানে অলস কটাক্ষপাত করে সুরেশ বললে, “আমার পাইলটের লাইসেন্স আছে কিন্তু প্লেন নেই। তোমার প্লেনটা ধার দাও না—যুদ্ধ করে আসি। যদি ফিরি প্লেন ফেরৎ পাবে; আর যদি না ফিরি, তোমার এমন কিছু গায়ে লাগবে না। বরং নাম হবে।”
রাগে মহিম কিছুক্ষণ মুখ কালো করে বসে রইল, তারপর কড়া একগুঁয়ে সুরে বলে উঠল, “তোমাকে প্লেন ধার দিতে পারি না, কারণ আমি নিজেই যুদ্ধে যাব ঠিক করেছি।”
বলা বাহুল্য, দু’মিনিট আগেও যুদ্ধে যাবার কল্পনা তার মনের ত্রিসীমানার মধ্যে ছিল না।
মাস দু’য়ের মধ্যে মহিম সব ঠিক-ঠাক করে এরোপ্লেনে চড়ে যুদ্ধে চলে গেল। যাবার সময় উইল করে গেল, সে যদি না ফেরে অচলা তার সমস্ত সম্পত্তি পাবে।
সুরেশের কিন্তু যুদ্ধে যাওয়া হল না। বোধ করি, ধারে এরোপ্লেন পাওয়া গেল না বলেই তার যুদ্ধে প্রাণ-বিসর্জন দেওয়া ঘটে উঠল না।
বর্মার আকাশে তখন যুদ্ধের কাড়া-নাকাড়া বাজছে; বেঁটে বীরেরা হু-হু করে এগিয়ে আসছে। ভারতবর্ষেও গেল-গেল রব। যারা পালিয়ে আসছে তাদের মুখে অদ্ভুত রোমাঞ্চকর গল্প।
মহিম ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে। তিন মাস কাটল। এ দিকে মহিমের বাড়িতে প্রায় প্রত্যহই উৎসব চলেছে; গান-বাজনা নাচ নৈশ-ভোজন। স্বামীর কথা ভেবে ভেবে অচলার মন ভেঙে না পড়ে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে তো! সেদিকে সুরেশ খুবই দৃষ্টি রাখে, সর্বদাই সে অচলার সঙ্গে আছে। দুপুর রাত্রে যখন আর সব অতিথিরা চলে যায়, তখনও সুরেশ অচলাকে আগলে থাকে। যেদিন অতিথিদের শুভাগমন হয় না, সেদিন সুরেশ একাই অচলার চিত্তবিনোদন করে। ক্রমে লোকলজ্জার আড়াল-আবডালও আর কিছু থাকে না, তোমাদের প্রকৃতি দেবী ব্যাপারটাকে নিতান্ত নির্লজ্জ এবং শ্রীহীন করে তোলেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে মহিম নিয়মিত চিঠি পায়, বন্ধু-বান্ধবের চিঠি, অচলার চিঠি। বন্ধু-বান্ধবের চিঠিতে ক্রমে ক্রমে নানা রকম ইসারা-ইঙ্গিত দেখা দিতে লাগল। নিতান্ত ভাল মানুষের মতো তাঁরা অচলার জীবনযাত্রার যে বর্ণনা লিখে পাঠান তার ভিতর থেকে আসল বক্তব্যটা ফুটে ফুটে বেরোয়। মহিম গোঁয়ার বটে কিন্তু নিবোধ নয়; সে বুঝতে পারে। অচলার চিঠিতে মামুলি শুভাকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগের বাঁধা গৎ ছাড়া আর বিশেষ কিছু থাকে না, তাও ক্রমশ এমন শিথিল হয়ে আসতে লাগল যে মনে হয়, ঐ মামুলি বাঁধা গৎ লিখতেও অচলার ক্লান্তিবোধ হয়। মহিমের কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। সে মনে মনে গর্জাতে লাগল।
সে ছুটির জন্যে দরখাস্ত পাঠাল, কিন্তু আবেদন মঞ্জুর হল না। যুদ্ধের অবস্থা সঙীন; এখন কেউ ছুটি পাবে না।
এই সময় মিত্রপক্ষের এক দল বিমান শত্রুর একটা ঘাঁটির বিরুদ্ধে অভিযান করল। মহিমকে যেতে হল সেই সঙ্গে। তুমুল আকাশ-যুদ্ধ হল। মিত্রপক্ষের কয়েকটা বিমান ফিরে এল, কিন্তু মহিম ফিরল না। তার জ্বলন্ত প্লেনখানা উল্কার মতো যুদ্ধের আকাশে মিলিয়ে গেল।
মহিমের মৃত্যু-সংবাদ যখন কলকাতায় পৌছল, তখন পানা-পুকুরের মাঝখানে ঢিল ফেলার মতো বেশ একটা তরঙ্গ উঠল। কিন্তু বেশী দিনের জন্য নয়, আবার সব ঠাণ্ডা হয়ে গেল। অচলা কালো রঙের শোক-বেশ পরল কিছু দিনের জন্য, তারপর মহিমের উইল অনুসারে আদালতের অনুমতি নিয়ে তার সম্পত্তির খাস মালিক হয়ে বসল। সুরেশ এত দিন একটা আলাদা বাড়ি রেখেছিল, এখন খোলাখুলি এসে মহিমের বাড়িতে বাস করতে লাগল। যার টাকা আছে তাকে শাসন করে কে? দু’জনে মিলে এমন কাণ্ড আরম্ভ করে দিলে যা দেখে বোধ করি ‘ভেলু’রও লজ্জা হয়।
মহিম কিন্তু মরেনি। তার আহত প্লেনখানা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে এসে আসামের জঙ্গলের মধ্যে ভেঙে পড়েছিল। মহিমের চোট লেগেছিল বটে, কিন্তু গুরুতর কিছু নয়। তারপর সে কি করে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আশি মাইল হাঁটা-পথ চলে শেষ পর্যন্ত রেলপথে কলকাতা এসে পৌঁছল, তার বিশদ বর্ণনা করতে গেলে শিশু-সাহিত্য হয়ে দাঁড়ায়। মোট কথা, সে কলকাতায় ফিরে এল। সে যে মরেনি এ খবর সে মিলিটারি কর্তৃপক্ষকে জানাল না; তার বেঁচে থাকার খবর কেউ জানল না।
কলকাতায় এসে সে একটা তৃতীয় শ্রেণীর হোটেলে ছদ্মনামে ঘর ভাড়া করে রইল।
সেই দিনই সে সংবাদপত্রে একটা খবর দেখল—মহিমের বিধবা স্ত্রী রেজেস্ট্রি অফিসে সুরেশকে বিয়ে করেছে, আজ রাত্রে তার বাড়িতে এই উপলক্ষে ভোজ। শহরের গণ্যমান্য সকলেই নিমন্ত্রিত হয়েছেন।
মহিম ঠিক করল, আজ রাত্রে ভোজ যখন খুব জমে উঠবে, তখন সে গিয়ে দেখা দেবে।
ভেবে দেখো ব্যাপারটা। চরিত্রহীনা স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর দু’মাস যেতে না যেতেই স্বামীর প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিয়ে করেছে, প্রতিহিংসা-পরায়ণ স্বামী চলেছে প্রতিশোধ নিতে। গল্প জমাট হয়ে একেবারে চরম ক্লাইম্যাক্সের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপর কি হল বল দেখি?
কিছুই হল না।
মহিম সন্ধ্যার পর নিজের বাড়িতে যাবার জন্য যেই রাস্তায় পা দিয়েছে অমনি এক মিলিটারি লরি এসে তাকে চাপা দিলে। তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হল, তার মুখখানা এমনভাবে ঘেঁতো হয়ে গেল যে, তাকে সনাক্ত করবার আর কোনও উপায় রইল না।
ওদিকে অচলার বাড়িতে অনেক রাত্রি পর্যন্ত ভোজ চলল। গণ্যমান্য অতিথিরা আশি টাকা বোতলের মদ খেয়ে রাত্রি তিনটের সময় হর্ষধ্বনি করতে করতে বাড়ি ফিরলেন। কত বড় একটা ড্রামা শেষ মুহূর্তে এসে নষ্ট হয়ে গেল, তা তারা জানতেও পারলে না।
তাই বলছিলুম, তোমাদের প্রকৃতি সত্যিকার আর্টিস্ট নয়। ক্লাইম্যাক্স বোঝে না, poetic justice জানে না—কেবল নোংরামি আর বাজে কথা নিয়ে তার কারবার। সত্যি কি না তোমরাই বল।’
শরৎচন্দ্র নলটা তুলিয়া লইয়া তাহাতে একটা বিলম্বিত টান দিলেন; কিন্তু কলিকাটা গড়গড়ার মাথায় পুড়িয়া পুড়িয়া নিঃশেষ হইয়া গিয়াছিল, ধোঁয়া বাহির হইল না।
৮ অগ্রহায়ণ ১৩৫১