অশ্ব ও বৃদ্ধ কৃষক

অশ্ব ও বৃদ্ধ কৃষক

এক কৃষকের একটি টাটু ঘোড়া ছিল। সে এক দিবস, আপন পুত্রকে সঙ্গে লইয়া, ঐ ঘোড়া বাজারে বিক্রয় করিতে যাইতেছে, এই সময়ে, সেই পথ দিয়া, কতকগুলি বালক, হাস্য ও কৌতুক করিতে করিতে, চলিয়া যাইতেছিল। তাহাদের মধ্যে এক জন, কৃষক ও তাহার পুত্রকে উদ্দেশ করিয়া, আপন সহচরদিগকে কহিল, তোমরা ইহাদের মত নির্বোধ কখনও দেখেছ। অনায়াসে ঘোড়ায় চড়িয়া যাইতে পারে; না হইয়া, আপনারা অনর্থক, ঘোড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হাঁটিয়া যাইতেছে।

 বৃদ্ধ শুনিয়া, আপন পুত্রকে ঘোড়ায় চড়াইয়া দিল, আর আপনি সঙ্গে সঙ্গে চলিল। কিঞ্চিৎ পরেই, পথের ধারে কয়েক জন বৃদ্ধ, দাঁড়াইয়া, কোনও বিষয়ে বাদানুবাদ করিতেছিল। তাহাদের মধ্যে এক জন, কৃষকের পুত্রকে অশ্বে আরোহণ করিয়া, আর কৃষককে অশ্বের সঙ্গে হাটিয়া, যাইতে দেখিয়া কহিল, দেখ! আমি যাহা বলিতেছিলাম, তাহা যথার্থ কি না। এ কালে বৃদ্ধের আদর নাই। ঐ দেখ, বেটা ঘোড়ায় চড়িয়া যাইতেছে, আর বুড়া বাপ সঙ্গে সঙ্গে হাঁটিয়া, যাইতেছে। এই বলিয়া, সে কৃষকের পুত্রকে ধমকাইয়া কহিল, অরে পাপিষ্ঠ! বৃদ্ধ পিতা চলিয়া যাইতেছে, আর তুই ঘোড়ায় চড়িয়া যাইতেছিস; তোর কিছুই বিবেচনা নাই।

 কৃষকের পুত্র শুনিয়া লজ্জিত হইল, এবং আপনি ঘোড়া হইতে নামিয়া, পিতাকে চড়াইয়া লইয়া চলিল। খানিক দূর গেলে পর, কতকগুলি স্ত্রীলোক উপস্থিত হইল। তাহারা কহিল, কে জানে, এ মিন্সের কেমন আক্কেল, আপনি ঘোড়ায় চড়ে যাচ্চে, আর ছোট ছেলেটিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্চে। বৃদ্ধ শুনিয়া, লজ্জিত হইয়া, পুত্রকেও ঘোড়ায় চড়াইয়া লইল।

 এইরূপে খানিক দূর গেলে পর, এক ব্যক্তি বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসিল, ওহে ভাই! তোমায় জিজ্ঞাসা করি, এ ঘোড়াটি কার। বৃদ্ধ কহিল, এ আমার ঘোড়া। তখন সে ব্যক্তি কহিল, তোমার আচরণ দেখিয়া, তোমার বলিয়া বোধ হইতেছে না। তোমার হইলে, তুমি উহার উপর এত নির্দয় হইতে না। কোন বিবেচনায়, এমন ছোট ঘোড়ার উপর, বাপ বেটা দুজনে চড়িয়া বসিয়াছ। ঘোড়াটিকে এত ক্ষণ যেমন কষ্ট দিয়াছ, অতঃপর উহাকে কাঁধে করিয়া লইয়া যাওয়া উচিত।

 এই ভর্ৎসনা শুনিয়া, তাহারা পিতা পুত্রে ঘোড়া হইতে নামিল, দড়ি দিয়া ঘোড়র পা বাঁধিল, এবং পায়ের ভিতরে বাঁশ দিয়া, কাঁধে করিয়া লইয়া চলিল। বাজারের নিকটে একটি ছোট খাল ছিল। তাহারা ঐ খালের পুলের উপর উঠিলে, বাজারের লোক এই তামাসা দেখিতে উপস্থিত হইল, এবং মানুষে জিয়ন্ত ঘোড়া কাঁধে করিয়া লইয়া যাইতেছে দেখিয়া, সকল লোকে এত হাসি তামাসা করিতে ও হাততালি দিতে লাগিল যে, ঘোড়া ভয় পাইয়া, জোর করিয়া, পায়ের দড়ি ছিঁড়িয়া ফেলিল, এবং দড়ি ছিঁড়িবা মাত্র, এক বারে খালের জলে পড়িয়া পঞ্চত্ব পাইল।

 বৃদ্ধ, লোকের ঠাট্টা তামাসায়, যৎপরোনাস্তি বিরক্ত ও লজ্জিত হইল, এবং হতবুদ্ধি হইয়া, কিয়ৎ ক্ষণ সেই স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল; পরে, এই ভাবিতে ভাবিতে চলিয়া গেল, আমি, সকলকে সন্তুষ্ট করিতে চেষ্টা পাইয়া, কাহাকেও সন্তুষ্ট করিতে পারিলাম না, লাভের মধ্যে ঘোড়াটি গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *