অনাহত

দাঁড়িয়ে আছ আধেক - খোলা 
      বাতায়নের ধারে 
      নূতন বধূ বুঝি ? 
আসবে কখন চুড়িওলা 
      তোমার গৃহদ্বারে 
      লয়ে তাহার পুঁজি । 
দেখছ চেয়ে গোরুর গাড়ি 
      উড়িয়ে চলে ধূলি 
      খর রোদের কালে ; 
দূর নদীতে দিচ্ছে পাড়ি 
      বোঝাই নৌকাগুলি— 
      বাতাস লাগে পালে । 
  
আধেক - খোলা বিজন ঘরে 
      ঘোমটা - ছায়ায় ঢাকা 
      একলা বাতায়নে , 
বিশ্ব তোমার আঁখির'পরে 
      কেমনে পড়ে আঁকা , 
      তাই ভাবি যে মনে । 
ছায়াময় সে ভুবনখানি 
      স্বপন দিয়ে গড়া 
      রূপকথাটি - ছাঁদা , 
কোন্‌ সে পিতামহীর বাণী— 
      নাইকো আগাগোড়া , 
      দীর্ঘ ছড়া বাঁধা । 
  
আমি ভাবি হঠাৎ যদি 
      বৈশাখের এক দিন 
      বাতাস বহে বেগে— 
লজ্জা ছেড়ে নাচে নদী 
      শূন্যে বাঁধনহীন , 
      পাগল উঠে জেগে— 
যদি তোমার ঢাকা ঘরে 
      যত আগল আছে 
      সকলি যায় দূরে— 
ওই - যে বসন নেমে পড়ে 
      তোমার আঁখির কাছে 
      ও যদি যায় উড়ে— 
  
তীব্র তড়িৎহাসি হেসে 
      বজ্রভেরীর স্বরে 
      তোমার ঘরে ঢুকি 
জগৎ যদি এক নিমেষে 
      শক্তিমূর্তি ধ ' রে 
      দাঁড়ায় মুখোমুখি— 
কোথায় থাকে আধেক - ঢাকা 
      অলস দিনের ছায়া , 
      বাতায়নের ছবি , 
কোথায় থাকে স্বপন - মাখা 
      আপন - গড়া মায়া— 
      উড়িয়া যায় সবি । 
  
তখন তোমার ঘোমটা - খোলা 
      কালো চোখের কোণে 
      কাঁপে কিসের আলো , 
ডুবে তোমার আপন - ভোলা 
      প্রাণের আন্দোলনে 
      সকল মন্দ ভালো । 
বক্ষে তোমার আঘাত করে 
      উত্তাল নর্তনে 
      রক্ততরঙ্গিণী । 
অঙ্গে তোমার কী সুর তুলে 
      চঞ্চল কম্পনে 
      কঙ্কণকিঙ্কিণী । 
  
আজকে তুমি আপনাকে 
      আধেক আড়াল ক'রে 
      দাঁড়িয়ে ঘরের কোণে 
দেখতেছ এই জগৎটাকে 
      কী যে মায়ায় ভরে , 
      তাহাই ভাবি মনে । 
অর্থবিহীন খেলার মতো 
      তোমার পথের মাঝে 
      চলছে যাওয়া - আসা , 
উঠে ফুটে মিলায় কত 
      ক্ষুদ্র দিনের কাজে 
      ক্ষুদ্র কাঁদা - হাসা । 
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *