।। অনন্তচতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য।।
অনন্তব্রতমসত্যন্যৎ সর্বপাপহরং শিবম্। সর্বকামপ্রদং নৃণাং স্ত্রীণাং চৈব যুধিষ্ঠির।।১।। শুক্লে পক্ষে চতুৰ্দশ্যাং মাসি ভাদ্রপদে শুভে। তস্যানুষ্ঠান মাত্রেণ সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে।।২।। কৃষ্ণ কোহ্যং ত্বয়াখ্যাতো হ্যনং হরি বিশ্রুতঃ। কিং শেষনাগ আহোম্বিদনন্তস্তক্ষকঃ স্মৃতঃ।।৩।। পরমাত্মাথ বণিজ্য উতাহো ব্ৰহ্ম উষ্যতে। ক এষোহনত্তসঙ্গে বৈ তথ্যং ব্রুহি কেশব।।৪।। অন্তত ইত্যেহং পার্থমম নাম নিবোধয়। আদিত্যাদিষু বারেষু যঃ কাল উপপদ্যতে।।৫ ॥
।। অনন্ত চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য।।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন–হে যুধিষ্ঠির, সমস্ত পাপ হরণকারী অনন্ত ব্রত মনুষ্য তথা স্ত্রীগণের সমস্ত কামনা প্রদানকারী।। ১।।
ভাদ্রপদ মাসের শুক্ল পক্ষে পরম শুভ চতুর্দশী তিথিতে সেই ব্রত অনুষ্ঠিত হয়, তার ফলে মানুষের সমস্ত পাপ দূরীভূত হয়।।২।।
যুধিষ্ঠির বললেন -হে শ্রীকৃষ্ণ, এই ব্রত সম্পর্কে আপনি এখনই বলুন, কি কারণে এই ব্রত ‘অনন্ত’ নামে প্রসিদ্ধ এই ব্রত কি শেষনাগ অথবা অনন্ত নাগের নামের তক্ষক।। অথবা এই অনন্ত পরমাত্মা কিম্বা ব্রহ্মের অনন্ত নামে পরিচিত। এই অনন্ত সংজ্ঞা কি? হে কেশব, এতে যা কিছু তথ্য আছে, তা কৃপা পূর্বক আমাকে বলুন।। ৩-৪।।
কলাকাষ্ঠামুহূর্তাদিদিনরাত্রিশরীরবান্ পক্ষমাসতু বর্ষাদিযুগ কল্পব্যস্থয়া।।৬।। যোহয়ং কালোময়াখ্যাতস্তব ধর্মভূতাং বর। সোহহং কালোহবতীর্নোহত্র ভুবো ভারাবতারণাৎ।।৭। এবং সমস্তং বিস্তার্য ব্রৃহ্যনন্তব্রতং হরে। আসীৎপুরা কৃতযুগে সুমন্তো নাম বৈ দ্বিজঃ।।৮।। বশিষ্ঠগোত্রে চোৎপন্নঃ সুরুপশ্চ ভূগো সুতাম্। দীক্ষাং নমোপযেমে তাং বেদোক্তবিধিনা ততঃ।।৯।। তস্যা কালেন সঞ্জাতা দুহিতান্ততলক্ষণা। শীলানাম সুশীলা সা বর্ধতে পিতৃসম্মণি।।১০।। মাতা চ তস্যাঃ কালেন হরদাহেন পীড়িতা। বিনানাস নদীতীরে মৃতা স্বর্গরপুরং যযৌ।।১১।।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন পার্থ, এই অনন্ত আমিই এবং তা আমারই নাম তা জানুন। আদিত্য আদিকারে যে কাল উৎপন্ন হয়। যেকলা -কাষ্ঠা-মুহুর্তাদি দিন এবং রাত্রির শরীর রূপী তথা পক্ষ-মাস-ঋতু–বর্ষ প্রভৃতি যুগ এবং কল্পব্যবস্থাতে সেই কালস্থিত এরূপ মানা হয়।। ৫-৬।।
হে শ্রেষ্ঠ ধর্মধারী, যে কাল আমি আপনাকে বলব তা আমি, এই ভূমিভার -উত্তরণের জন্য অবতীর্ণ হয়েছি।। ৭।।
যুধিষ্ঠির বললেন- হে হরে, এই প্রকারে এই সম্পূর্ণ অনন্ত ব্রত বিস্ত ারিত ভাবে আমাকে বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন-পূর্বে কৃত যুগে সুমন্ত নামক কোনো এক দ্বিজ ছিলেন। তিনি বশিষ্ঠ গোত্রে জাত হন এবং তিনি অনেক সুন্দর রূপী ছিলেন। তিনি ভৃগুর দীক্ষা নাম্নী পুত্রীকে বিবাহ করেন।। ৮- ৯।।
সুমনেতাপি ততোন্যাং বৈ ধর্মপুতংমস সুতাং পুনঃ উপমেনে বিধানেন কৰ্কশাং নাম নামতঃ।।১২। দুঃশীলাং কর্কশং চন্ডীং নিত্যং বালহকারিনীম। সাপিশীলা পিতৃর্গেহে গৃহাচনরতা বিভৌ।।১৩।। কুড়য়স্তম্ভতুলাধারদেহলী তোরণাদিষু। চাতুর্বর্ণকরং বৈশ্যনীলপীতসিতাসিতৈঃ।।১৪।। স্বস্তিকৈঃ শংখপদ্মৈশ্চ অৰ্চয়ন্তী পুনঃ পুনঃ। পিত্ৰা দৃষ্টা সুমন্তেন স্ত্রীচিহ্না যৌবনে স্থিতা।।১৫।।
যথা সময়ে তীর অনন্ত লক্ষন যুক্ত কন্যা জাত হয়। তাঁর নাম শীলা, তিনি পিতৃগৃহে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।। তার মাতা হরদাহ কাল পীড়িত হয়ে এরুনদী তীরে বিনাশ প্রাপ্ত হন। সুমন্ত পুনরায় অন্যধর্ম প্রমাণ পুত্রীকে বিবাহ করেন। তার নাম কর্কশা এবং তিনি পূর্ণরূপে কর্কশ ছিলেন।। ১০-১২।।
প্রচন্ড কুৎসিৎ স্বভাবা কর্কশ চন্ডী এবং নিত্য কলহকারী ছিলেন। সেই শীলা পিতৃগৃহে অর্চনে রত হলেন।। ১৩।।
কুম্ভ্য-স্তম্ভ-তুলাধর- দেহলী এবং তোরণ প্রভৃতি বৈশ্য নীলাসিত এবং অসিত বর্ণের চাতুর্বর্ণ করে তথা স্বস্তিক এবং শংখ পদ্মে বারংবার অর্চনা করলেন। পিতা সুমন্ত তাকে একবার দেখলেন যে তার পূর্ণ যৌবনা স্ত্রীর সমস্ত চিহ্ন বিদ্যমান। সেই শীলা কন্যাকে কাকে প্রদান করব -এই বিচার পূর্বক চরম দুঃখিত হলেন। পুনরায় পিতা কোনো শুভ দিনে মুনীন্দ্র কৌন্ডিন্যকে তাকে দান করলেন। সেই সময় স্মৃতিতে বর্ণিত শাস্ত্র বিধানুসারে তার বিবাহ দিলেন। ঔদ্বাহিক সবকৃত্য নিবৃত হয়ে পুনরায় দ্বিজ নিজ পত্নী কর্কশাকে বললেন- জামাতার জন্য কিছু আয়াদিক পারিতোষিক দেওয়া উচিত, একথা শ্রবণ করে কর্কশা অত্যন্ত ক্রদ্ধ হলেন এবং তিনি গৃহ মন্ডপ প্রোদ্ধৃত করে কপাট সুস্থির করে দিয়ে বললেন- যান, ভোজ্যা বশিষ্ট যে চুন ছিল, তা তার পাথেয় করে দিয়েছি।। ১৪-১৫।।
কস্মৈ দেয়াময়াশীলা বিচায়ৈবং সুদুঃখিতঃ। পিতা দদৌ মুনীন্দ্ৰায় কৌন্ডিন্যায় শুভে দিনে।। ১৬। মৃত্যুক্তশাস্ত্রবিধিনা বিবাহমকরোত্তদা নির্বত্যো দ্বাহিকং সর্বংপ্রোক্তাবান্ কর্কশাং দ্বিজঃ।।১৭। কিঞ্চিদায়দিবাং দেয় জামাতুঃ পারিতোষিকম্। তচ্ছুত্বা কৰ্কশা ক্রদ্ধা প্রোদ্ধৃত্য গৃহমন্ডপম্।।১৮।। কপাটে সুস্থিরং কৃত্বা গম্যতামিত্যুবাচ হ। ভোজ্যাবশিষ্ট চূর্নেন পাথেয়ং চ চকার সা।।১৯। কৌন্ডিন্যোপি বিবহ্যৈনাং পথি গচ্ছঞ্জনৈঃ শনৈঃ। শীলাং সুশীলামাদায় নবোঢ়াং গোরথেন হি।। ২০।। মধ্যাহ্নে ভোজ্যবেলাভাং সমুতীর্থ সরিওটে। দদর্শ শীলা সা স্ত্রীণাং সমূহং রক্তবাস্সাম্।।২১।। চতুৰ্দশ্যামচয়ন্তং ভক্ত্যা দেবং পৃথক্ পৃথক্। উপগম্য শনৈঃ শীলা পপ্ৰচ্ছ স্ত্রীকন্দবকম্।।২২।। নার্য কিমেতলে ব্রত কিংনাম ব্রতমীদৃশম্। তা উচুর্ঘোষিতঃ সর্বা অনন্তো নাম বিশ্রুতঃ।।২৩।। সা ব্রবীদহমপ্যেং করিষ্যে ব্রতমুত্তমম্। বিধান কীদৃশং তত্র কিংনদানং কস্য পূজনম্।।২৪।।
কৌস্তিন্য ও বিবাহ করে মার্গে ধীরে ধীরে যেতে যেতে গোরথ দ্বারা ‘সেই নিজ নববিবাহিতা সুশীলাবতী শীলাকে নিয়ে চলে গেলেন।। ২০।।
মধ্যাহ্নে ভোজনের সময় বেলা নদীতটে অবতীর্ণ হলে শীলা রক্ত বস্ত্র ধারনকারী স্ত্রীগণকে দেখেছিলেন। সেই চতুর্দশী তিথিতে পৃথক ভক্তি ভাবে অর্চনকারী দেবগণের সমীপে পৌছে শীলা সেই নারীগণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন হে নারীগণ, এই ব্রত কি তা আমাদেরও বর। এই ব্রতের নাম কি সেই সকল স্ত্রীগন বললেন -এই ব্রত অনন্ত ব্রত নামে বিখ্যাত।। তিনি বললেন- আমিও এই ব্রত পালন করব। এই ব্রত পালনের বিধান কি, কি দান এবং কার পূজন করা হয়।। ২১-২৪।।
শীলে পঞ্চান্ন প্রস্থস্য পুত্রান্মঃ সুকৃতস্য তু। অৰ্দ্ধং বিপ্রায় দাতব্যমৰ্দ্ধমাত্মনি ভোজনম্।।২৫।। কর্তব্যং তু সরিতীরে কথাং শ্রুত্বা হরেরিমাম্। অনন্তানন্তমভ্যর্চ্য মন্ডলেগন্ধদীপকৈঃ।।২৬।। ধূপৈঃ পুষ্পৈ সনৈবেদ্যৈ পীতাল ক্তৈশ্চতুঃশতৈ। তস্যাগ্রতো দৃঢ়ং সূত্রং কু্যুমাক্তং সুদোরকম্।।২৭।। চতুর্দকাগ্রন্থিযুতং বামে স্ত্রী দক্ষিণে পুমান্। মন্ত্রেণানেন রাজেন্দ্র যাবদ্ববর্ষং সমাপ্যতে।।২৮।।
অনন্ত সংসারমহা সমুদ্রে মগ্নান্ সমভ্যুদ্বর বাসুদেব। অনন্তরূপে বিনিয়োজিতাত্মা হ্যনন্তরূপায় নমোনমস্তে।।২৯।
অনেন দোরকং বদ্ধা ভোক্তব্যং স্বস্থ মানসৈঃ। ধ্যাত্বা নারায়ণং দেবমনন্ত বিশ্বরূপিনাম্।।৩০।
হে শীলে, একপ্রস্থ পক্কান্ন পুন্নায় সুকৃতের অর্ধভাগ বিপ্রগণকে দেবে এবং অর্ধ ভাগ নিজে ভোজন করবে। সবিতা তীরে হরি কথা শ্রবণ করে মন্ডলে গন্ধক দীষাক প্রভৃতি অনন্তানন্ত ভগবানকে অভ্যর্থন করা উচিৎ ।। ২৫-২৬।।
ধূপ-দীপ-নৈবেদ্য -পুষ্প এবং তার আগে পীতালক চতুর শত থেকে দৃঢ় কুঙ্কুমাক্ত সদোরক সূতত্র করবে।। ২৭।।
হে রাজেন্দ্র, একবর্ষ পর্যন্ত চতুর্দশ গ্রন্থিযুক্ত সূত্র স্ত্রীগণ বামভাগে ও পুরুষগণ দক্ষিণভাগে রাখবে।।২৮।।
হে বাসুদেব, এই অনন্ত সংসার সাগর থেকে আমাকে উদ্ধার কর। অনন্তরূপী, অনন্তাত্মা আপনাকে বারংবার নমস্কার। এই মন্ত্রে প্রত্যেকে সূত্রবন্ধন করে স্বস্থ মনে বিশ্বরূপ নারায়ণের ধ্যান করে ভোজন করবে।।২৯- ৩০।।
ভুক্ত্বা চানেত ব্ৰজেদ্ বেশ হৃদং প্রোক্তং ব্রতং তব। সাপি শ্রুত্বা ব্ৰতং চক্রে শীলা বদ্ধা সুদোরকম্।।৩১ ভর্তা তস্যাঃ সমাগত্য তাং দদর্শ মহাধনম্। পাথেরশেষং বিপ্রায় দত্তা ভুক্ত্বা তথৈব চ।।৩২।। পুনর্জগাম সা হৃষ্টা গোরথেন স্বমাশ্রমম্ ভর্তা সহৈব শাবকৈঃ প্রত্যক্ষং তৎক্ষণাদভূৎ। তেনানন্ত প্রভাবেন শুভগোধন সংকুলঃ।।৩৩।। গৃহাশ্রমঃ শ্রিয়া যুক্তো ধনধান্য সমাযুতঃ। আকুলো ব্যাকুলো রম্যঃ সর্বত্রাতিথিপূজনঃ।।৩৪।। সাপি মাণিক্য কাঞ্চীভি মুক্তাহার বিভূষিতা। দিব্যাংগ বস্ত্র সংছন্না সাবিত্রী প্রতিমাভবৎ।।৩৫।। কদাচিদুপবিষ্টেন দৃষ্টং বদ্ধং সুদোরকম্।
শীলয়া হস্তমূলে তু সাক্ষেপং ত্রোটিতং রুষা।।৩৬।। তেন কৰ্মবিপাকেন তস্য সা শ্ৰীঃ ক্ষয়ং গতা। গোধনং তস্করনীতং গৃহং চাগ্নিবিদাহিতম্।।৩৭।।
ভোজনান্তে গৃহে গমন করবে — এই ব্রতই তোমাকে বললাম। এই ব্রত শ্রবণ করে শীলা সুদোরককে সূত্রবন্ধন করে সবিধি ব্রত পালন করেছিলেন। তার স্বামী সেই মহান ধনীকে দেখেছিলেন। পাথেয়ের শেষভাগ বিপ্ৰকে দিয়ে স্বয়ং ভোজন করেছিলেন। পুনঃ গোরথে চড়ে পরম প্রসন্ন হয়ে নিজ আশ্রমে ফিরে গেলেন। পরম ভগবানের প্রসাদে তিনি প্রভূত গোধন লাভ করলেন। তাঁর গৃহাশ্রম ধনধান্য সমৃদ্ধ হয়ে পরমরম্য হয়ে গিয়েছিল। সেই শীলা ও মাণিক্য কাঞ্চি দ্বারা ও মোতিহার দ্বারা, পরমদিব্য অঙ্গবস্ত্র দ্বারা সংচ্ছন্ন হয়ে সাবিত্রী প্রতিমাতুল্যা হয়ে গিয়েছিলেন।।৩১-৩৫।।
যদ্যদেবাগতং গেহে তত্ৰতত্রৈব নশ্যতি। স্বজনৈঃ কলহো মিত্রৈবচনং ন জনৈস্তথা।।৩৮।। অনতাক্ষেপদোষেণ দারিদ্যং পতিতং গৃহে। ন কশ্চিদবদতে লোকস্তেন সার্দ্ধং যুধিষ্ঠির।।৩৯।। ততো জগাম কৌন্ডিন্যো নির্বেদাদ্ বনগহ্বরম্। মনসা ধ্যায়তেনন্তং কদা দ্রক্ষ্যামি কেশবম্।।৪০।। ব্রতং নিরশনং গৃহয় ব্রহ্মচর্যং জপন্ হরিম্। বিহ্বলঃ প্রযমৌ পার্থ অরণ্যং জনবর্জিতম্।।৪১। তত্রাপশ্যন্ মহাবৃক্ষং ফলিতং পুষ্পিতং তথা। তমপ্চ্ছত্ত্বয়ানন্তঃ কচ্ছিদৃষ্টো মহাক্রম। তাহি সোপ্যুবাচেদং নানন্তং বেক্যহং দ্বিজ।।৪২। এবং নিরীক্ষিতস্তেন গাং সবৎসকম্। জনমধ্যে প্রধাবন্তীমিতশ্চৈতশ্চ পান্ডব।।৪৩।।
কোনো একসময় উপবিষ্ট শীলার হস্তমূলে সুদোরকে বদ্ধ অবস্থায় দেখে সাক্ষেপে তা ছিন্ন করেছিলেন। সেই কর্ম বিপাকে তার শ্রী ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। গোধন চোরে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। ঘর অগ্নি দগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। গৃহে আগত সমস্তলোক বিনাশ প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন। স্বজন, মিত্রগণের সঙ্গে কলহ হতে লাগল।।৩৬-৩৮।
সোব্রবীধেনুকে ব্রৃহি যদ্যনস্তত্ত্বয়েক্ষিতঃ। গৌরুবাচাথ কৌন্ডিনং নাশুভং বেদ্ম্যহং বিভো।।৪৪ ততৌ জগামাথ বনে গোবৃযং শাদ্বলে স্থিত্তম্। দৃষ্ট্বা পপ্ৰচ্ছ গোস্বামিন্ননত্তো লক্ষিতত্ত্বয়া।।৪৫।। গোবৃষস্তমুবাচাথ নানন্তো বীক্ষিতো ময়া। ততো ব্রজন্ দদর্শাগ্রে রম্যং পুস্করিনীদ্বয়ম্।।৪৬।। অন্যোন্যজলকল্লোলবীচিভিঃ পরিশোভিতম্।। ছত্রং কমুদকারৈঃ কুমুদোৎপলমন্ডিতম্।।৪৭। সেবিতং ভ্রমবৈহসৈশ্চক্রৈঃ কারন্ডবৈর্বকৈঃ। তে অপৃচ্ছদ্বিহোনন্তো ভবভ্যাং নোপলক্ষিতঃ।।৪৮। উঃ পুষ্করিন্যো তং তানস্তং বিদ্বহে দ্বিজ্য। ততো ব্ৰহ্মন্ দর্শাগ্রে গদর্ভং কুজ্ঞরং তথা।।৪৯।। তাবপ্যক্তৌ সুমন্তেন তস্যাপি বিনিবেদিতম্। নাবাভ্যাং বীক্ষিতোনস্তস্তচ্ছু ত্বা নিষসাদ হ।।৫০ । তস্মিন্ ক্ষণে মুনিবরে কৌন্ডিন্যে ব্রাহ্মণোত্তমে। কৃপয়নিস্তদেবোপি প্রত্যক্ষঃ সমজায়ত।।৫১।। বিভূতি ভেদেশ্চানন্তমনন্তং পরমেশ্বরম্। তং দৃষ্ট্বা তু বিদ্বজোনন্তমুবাচ পরয়া মুদা।।৫২।।
ভগবান্ অনন্তের উপর আক্ষেপ করার প্রভাবে ঘরে দরিদ্রতা এসে গেল। হে যুধিষ্ঠির, তার এইরূপ দশা দেখে কেউ বার্তালাপ করত না। অতঃপর তিনি কৌন্ডিল্য নির্বেদ হওয়ার কারণে গভীর বনে চলে গেলেন। মনে মনে অনন্ত প্রভুর ধ্যান কেশব দর্শনের জন্য ব্যাকুল হলেন। অনশন ব্ৰত গ্রহণ করে তিনি ব্রহ্মচর্য পালন করেছিলেন এবং হরির জপ করতে লাগলেন। হে পার্থ, পরম বিহ্বল চিত্তে তিনি জনহীন অরণ্যে চলে গেলেন। সেখানে একটি ফলিত মহাবৃক্ষ দেখেছিলেন। তিনি সেই বৃক্ষকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মহাদ্রুম, আপনি ভগবান্ অনন্তকে দেখেছেন? সেই বৃক্ষ প্রত্যুত্তরে বলল, হে দ্বিজ, আমি অনন্তকে জানি না। এইভাবে তিনি তৃণমধ্যে ধাবমান্ বৎস সহিত গাভীকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ধনুকে, তুমি ভগবান্ অনন্ত প্রভুকে দেখেছ কি বল? সেই গাভী বলল — হে বিপ্ৰ, আমি অনন্তকে জানিনা। এরপর তিনি বনমধ্যে শাদ্বলস্থিত গোবৃষকে দেখলেন। তাকে দেখে সেই একই প্রশ্ন করলেন। সে বৃষ বলল যে সে অনন্তপ্রভুকে দেখেনি। আগে গিয়ে তিনি দুটি কুমুদ কন্থারপূর্ণ, তরঙ্গশোভিত পুষ্করিণী দেখলেন। ভ্রমর ও হংসপূর্ণ সেই জলাশয় দুটিকে তিনি ভগবান্ অনন্তের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তারাও প্রভু অনন্তের কোনো সন্ধান দিতে পারল না। পরে তিনি একটি কুঞ্জরকে দেখে একই প্রশ্ন নিবেদন করলে সেও জানাল যে সে প্রভুকে দেখেনি। সে কথা শুনে সেই ব্রাহ্মণ সেখানে বসে পড়লেন। তারপর ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ কৌন্ডিন্যের প্রতি কৃপাপূর্বক অনন্তদেব তৎক্ষণাৎ স্বয়ং প্রত্যক্ষ হলেন।।৩৯-৫১।।
অদ্য মে সফলং জন্মজীবিতং চ সুজীবিতম্। চূতবৃক্ষো বৃষঃ কস্তু কা গৌঃ পুষ্করিনীদ্বয়ম্। গর্দভং কুঞ্জরং চৈব দেব মে ব্রুহি ত ত্ততঃ।।৫৩।। চূতবৃক্ষো হি বিপ্রোসৌ বিদ্বন্যো বেদগর্বিতঃ। বিদ্যাদানং নোপকুর্বচ্ছিষ্যেভ্যস্তরুতং গতঃ।।৫৪।। সা গোর্বসুন্ধরা দৃষ্টা নিষফলা যা ত্বয়েক্ষিতা। স হৰ্যো বৃষভো দৃষ্টো লাভর্থং যত্ত্বয়া বৃতঃ।।৫৫।। ধর্মাধর্মব্যবস্থানং তচ্চ পুষ্করিনীদ্বয়ম্। খরঃ ক্রোধস্ত্বয়া দৃষ্টঃ কুজ্ঞরো ধর্মদূষকঃ। ব্রাহ্মণোসাবনস্তোহং গৃহসংসারগহ্বরে।।৫৬।। ইত্যুক্তংতে ময়া সর্ব বিপ্ৰগচ্ছ পুনগৃহম্।।৫৭। চরানত্তব্রতং তত্ত্বং নব বর্ষানি পঞ্চ চ। ততত্ত্বষ্টঃ প্রদাস্যামি নক্ষত্রস্থানমুত্তমম্।।৫৮।। ভুক্ত্বা বিপুলান্ ভোগান্ সর্বানুকামান্যখেপ্সিতান্ পুত্রপৌত্রেঃ পরিবৃতস্ততো মোক্ষমাপদ্যসি।।৫৯।। ইতি দত্তা বরং দেস্তমৈত্রবান্তর্হিতোহ ভবৎ। কৌন্ডিন্যোপ্যাগতো গেহং চচারানন্ত সতম্।।৬০।।
তাঁকে দেখে সেই ব্রাহ্মণ বললেন, হে প্ৰভু, আজ আমার জীবন সফল হল। হে দেব, আম্রবৃক্ষ, বৃষ, কুঞ্জর, পুষ্করিণীদ্বয় কে তা আজ আমাকে কৃপাপূর্বক বলুন। ভগবান্ বললেন — আম্র পরম বিদ্বান্ বিপ্র ছিলেন, যাঁর বেদ বিষয়ে প্রভূত গর্ব ছিল। তিনি বিদ্যাদান করতেন, তাই বৃক্ষযোনি প্রাপ্ত হন।
গো বসুন্ধরা নিষ্ফলা ছিল সে বৃষকে দেখে নামের জন্য তাকে বরণ করেছিল। ধর্মাধর্মের ব্যবস্থা হল পুষ্করিণীদ্বয়। কুঞ্জর ছিল স্বরক্রোধী। হে ব্রাহ্মণ, আমিই অনন্ত, যে সসার গহ্বরে স্থিত। হে বিপ্র আমি তোমাকে সকল বৃত্তান্তই বললাম। এখন তুমি তোমার গৃহে গমন কর। নিরন্তর চতুর্দশ বৎসর অনন্তব্রত পালন কর। তারপর আমি প্রসন্ন হয়ে নক্ষত্রগণের মধ্যে তোমাকে পরমস্থান প্রদান করব। সেখানে বিপুল ভোগের সঙ্গে যথা ঈন্সিত কামনা প্রাপ্ত হবে। পুত্র পৌত্র পরিবৃত্ত হয়ে অন্তে মোক্ষ প্রাপ্ত হবে। একথা বলে তিনি অন্তর্হিত হলেন। অতঃপর কৌন্ডিন্য নিজগৃহে এসে অনন্তব্রত পালন করলেন।।৫২-৬০।।