রাজপাট – ২৪

২৪ 

কয়্যা গেছে ফিরা আইব
অঘ্রানে অঘ্রানে। 
কথা না রাখিলা বন্ধু 
ব্যথা বাজে প্রাণে॥  
অঘ্রানে সাইলের ধান
সুবাসে বাড়ি ভরা। 
কি খায়্যা বিদেশে থাকে
না পায় দিশারা ॥ 

রাগ নয়। কেবল এক জটিল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মন নিয়ে বাড়ি এলেন সহদেব। শুনছিলেন ক’দিন ধরেই। পোদ্দারের ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশছে তুলতুলি। কিন্তু সেরকম গুরুত্ব দিয়ে ভাবেননি কখনও। কেন ভাবেননি? মেয়ে সর্বনাশের পথে পা বাড়ালে বাপের যে আর সব ফেলে মেয়েকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ার কথা। কিন্তু কখন যে কী গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে মানুষের কাছে, কিংবা উল্টোটা, হঠাৎ গুরুত্ব দাবি করে বসে কোনও বিষয়, আগে থেকে তার আঁচ পাওয়া যায় না। উচিৎ-অনুচিৎ জেনেও মন চলে না যন্ত্রবৎ। 

চাষ-বাসের ব্যবস্থা করতে উদয়-অস্ত চলে যায়। সংসারের অন্য সমস্যাগুলির কথা মনে থাকে না। সূর্যমুখীর চাষ করতে গিয়ে সহদেব ব্যর্থ হয়েছেন পর পর দু’বছর। তারপর থেকে ঋণে ডুবে আছে গলা অবধি। আর ঋণ ওই পোদ্দারের কাছেই। 

ছেলেমেয়েকে শিক্ষিত করে তুলবেন—কত স্বপ্ন। তার জন্য প্রাণপাত করছেন নিত্যদিন! কী করে দুটো রোজগার বাড়ে এই ভাবনায় বুঁদ থেকে সর্বনাশ ঘটিয়েছেন সংসারের। আজ তাঁর মনে হচ্ছে, এই মেলামেশাকে বাড়তে দেওয়া উচিৎ হয়নি। নাকি তুলতুলিকে কলেজে পড়তে পাঠানোই উচিৎ হয়নি তাঁর? আশা বারণ করেছিলেন। বলেছিলেন—স্কুল পাশ করেছে। এবার পাত্র দেখ। অত পড়িয়ে কী হবে? 

সহদেব মানেননি। মাস্টার দিতে পারেননি। সময়মতো বই কিনে দিতে পারেননি, তবু মেয়েটা ভালভাবে পাশ করে গেছে। আশার সময় আর তুলতুলির সময় আলাদা —সহদেব তা বিশ্বাস করেন। আজকাল তো মেয়েরা কত কিছুই করছে! বিয়ের আগে এমন খোলাখুলি মেলামেশার স্পর্ধা তারই ইঙ্গিত। এই সময়ের যা ধারা তুলতুলি সেইমতোই কাজ করেছে। ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা যুগে যুগে পাল্টে যায়। তার সঙ্গে মনমানির চেষ্টা করাই উচিৎ। এই চেষ্টা করতে করতেই যায় জীবন। সম্ভবে-অসম্ভবে জড়াজড়ি করে কাটে। দিন আসে, দিন যায়। এক বোধ অন্য বোধের গলা জড়িয়ে ধরে। পাল্টায় উপলব্ধি। যে-উপলব্ধি নিয়ে একজন জীবন শুরু করেছিল, সে তার বয়ঃক্রমের সঙ্গে সঙ্গে তা আর ধরে রাখতে পারে কই! এভাবেই চলে বেঁচে থাকা। বাঁচন-প্রক্রিয়া। 

তুলতুলিকে এ কালের ব্যবস্থাপনার অংশীদার করেছেন তিনি তাকে কলেজে পাঠিয়ে। অথচ তার কাছে প্রত্যাশা করবেন জবুথবু লজ্জাবতী আচরণ-তা কী করে হয়! সহদেবের স্নেহশীল হৃদয়ে তুলতুলির প্রতি ক্ষমা জেগে ওঠে। কিন্তু আশঙ্কা হৃদয় ঘিরে আসে। সহদেব দাস ভয় পাচ্ছেন তুলতুলির পাত্র-নির্বাচন দেখে। পোদ্দারের ছেলের সঙ্গে সহদেব দাসের মেয়ের বিয়ে হয় না। হতে পারে না। উত্তমর্ণের সঙ্গে অধমর্ণের বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপিত হবে কীভাবে! আজও বিবাহ এক বৈষয়িক আদান-প্রদান। পাত্রী- পাত্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এখানে আজও গৌণ। পাল্টি-ঘরের ধারণা ও আকাঙ্ক্ষা দেশ থেকে উঠে যায়নি মোটেই। শহরে কী হচ্ছে-না-হচ্ছে তার দ্বারা গ্রাম প্রভাবিত হয় সামান্যই। এবং ধীরে। গ্রামীণ সংস্কৃতি আজও তার নিজস্ব ব্যাকরণ রচনা করে চলে। এই গ্রাম শহর-সংলগ্ন বলে তবু কিছু খোলামেলা। কিন্তু যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি আজও, সেখানে কেমন করে পৌঁছবে ভুবনজোড়া প্রগতির ধ্যানধারণা, সংস্কৃতি? এবং গোটা ভুবনেই যে ঘটে গেছে বিবাহ বিষয়ক বিপ্লব, তা-ও তো নয়। শিক্ষিত, সংস্কৃতিসম্পন্ন, আধুনিক মানুষ বিবাহ ব্যাপারে সমান বেরাদরির সন্ধানই করে। কেউ জোর করে ভাঙল তো ভাঙল, কিন্তু মনুষ্য সমাজে রীতি-নীতিই এমন। শ্রেণির বিবিধ অস্তিত্বে তার সমান দৃষ্টি। 

অতএব তাঁর ভয় করে। সুকুমার পোদ্দার ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। পঞ্চায়েতের মাথা। তাঁর সঙ্গে সহদেব দাসের মতো ছোট চাষির বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তা যেমন হয় না, তেমনই শত্রুতাও হয় না। 

তবু সহদেব দাস নিজেকে দৃঢ় করেন। কয়েকটি পদক্ষেপ তাঁকে নিতে হবে। এই পদক্ষেপ নেওয়া বা না-নেওয়া নিরপেক্ষভাবে ঘটনাগুলি এতকাল ঘটে এসেছে। ঘটবে ভবিষ্যতেও। তবু তাঁকে হতে হবে ওইসব ঘটনার অংশীদার। কেননা এ জগতে প্রত্যেক মানুষেরই কিছু দায়িত্ব নির্ধারিত আছে। কন্যার পিতা হিসেবে তাঁরও কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। 

মেয়ের মুখোমুখি হলেন তিনি। টের পেলেন, ভয়ে শুকিয়ে গেছে তুলতুলির মুখ। তাঁর ইচ্ছে হল, মেয়েকে স্নেহবাক্য বলেন। অভয় দেন। কিন্তু সংস্কার তাঁকে জড় করে রাখল। মুখে গাম্ভীর্য মেখে দাঁড়ালেন তিনি। 

আশা কিছু না বুঝে অবাক হয়ে স্বামী এবং মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। এই অসময়ে তাঁর স্বামীর বাড়ি ফেরার কথা ছিল না। 

সহদেব কোনও ভূমিকা না করে বললেন-কলাবাগানে কী করতে গিয়েছিলি?

তুলতুলি নীরব। তার মুখ নিচু 

আশা বললেন— কলাবাগান? কলাবাগান কেন? 

সহদেব বললেন—সঙ্গে কে ছিল? পোদ্দারের ছেলেটা? 

আশা বললেন—কে? অনির্বাণ? ওর সঙ্গে কলাবাগান গেছিলি তুই? কেন? 

তুলতুলি নীরব হয়ে আছে। অনড়। তার মধ্যে কাজ করছে জেদ। জেনে যাচ্ছে সবাই। জানুক। সে কারওকে পরোয়া করে না। সে কোনও অন্যায় করেনি। ভালবাসা অন্যায় নয়। বাবা কি মারবেন তাকে? সে মার খাবে। মা মারবেন? সে মার খাবে। অনুদা, অনুদা। তোমার জন্য আমি সব পারি। ভাবছে সে। ভেবে যাচ্ছে মেঝের দিকে তাকিয়ে। 

সহদেব আর কোনও ভনিতার মধ্যে না গিয়ে বললেন—তোরা যে মেলামেশা করছিস, পোদ্দারের ছেলে তোকে বিয়ে করবে? 

থমকে গেল তুলতুলি। কঠিন প্রহার যে আশা করেছিল, যা পেলে তার প্রেমের অঞ্জলি পূৰ্ণ হত, যার মধ্যে দিয়ে এক সংগ্রাম করতে প্রস্তুত ছিল সে, কিন্তু অসহায় ও নির্মম এই প্রশ্নে, সরল এই প্রশ্নে সে বিভ্রান্ত হয়ে গেল। সে কী করে বাবাকে বলবে যে অনির্বাণ তাকে কতখানি চায়। সে অল্প মাথা হেলাল। আশা বিমূঢ় হয়ে গেলেন। মেয়ের এই নির্লজ্জতা অভাবনীয় তাঁর কাছে।

সহদেব বললেন ক্লান্ত গলায়—কাজটা ভাল করিসনি তুলি। আমরা হলাম মেটে কলসি। সোনার কলসিতে গা লাগালে ভেঙে যাব। 

বড় অসহায় শোনায় তাঁর স্বর। ওই অসহায়তা অশ্রু হয়ে ফুটে ওঠে তুলতুলির চোখে এবং আশার মনে ক্রোধ হয়ে দেখা দেয়। চড় মারেন তিনি মেয়েকে। একের পর এক। তুলতুলি প্রতিবাদ করে না। শব্দ করে না একফোঁটা। শুধু তার চোখ ফেটে জল পড়ে অবিরল। সহদেবের অসহায়তা সেই জল আশ্রয় করে ভূমি স্পর্শ করে। 

তুলতুলি যখন ভালবাসতে শুরু করেছিল অনির্বাণকে তখন কেবল অনির্বাণকেই দেখেছিল। সমাজ সংসার পরিবার পরিচয় —কিছুই ভাবেনি। ভাবনা শুরু করেছিল যখন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনির্বাণের সঙ্গে তখন আর বিচ্ছেদ্য সে নয়। 

ভালবাসা অন্তঃস্থ রাখে এক অন্ধ ও বধির বস্তু। অথবা এক আলো। চোখ ধাঁধানো আলো। যা শুধু নিজেকেই দেখায় আর ঢেকে দেয় অন্য সব। এই অন্ধ-করা আলো যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ প্রেম মধুর। ধীরে ধীরে সেই মধুরে বিষ প্রবেশ করে। অন্ধ-করা আলো বিলীয়মান হয়ে ধরা পড়ে জগতের ক্লেদ ক্লিষ্টতা। ভালবাসা উধাও হয় কি তখন? না। কেবল রূপ পাল্টায়। কত শঙ্কা ও সন্দেহ! কত ভয় ও বিতৃষ্ণা! সব ঘিরে ধরে তাকে। আলো ঘিরে অন্ধকার অপার হয়ে থাকা যেমন। তখন ভালবাসা বড় বেদনার। সহস্র কঠিনের কাছে বড় বেশি নিজেকে প্রমাণ করবার। 

তুলতুলি নামের এই মেয়ে, সে বিশ্বাস করে সে কোনও অন্যায় করেনি। তবু এই মুহূর্তে বড় অপরাধী লাগছে তার নিজেকে। দ্রুত হেঁটে আসায় ধুলো-পা, পরিষ্কার করা হয়নি এখনও। সেই অপরিচ্ছন্নতা তার হৃদয়ের কানায় কানায়। কোনও অন্যায় না করেও যে অপরাধী হতে পারে মানুষ—এই বোধ তার হচ্ছে প্রথম। সে বুঝতে পারছে, একটি প্রেমকর্মের সঙ্গে সে জড়িয়েছে তার পারিবারিক সম্মান। এই সম্মান আঘাতপ্রাপ্ত হলে মানুষ মরমে মরে। 

আশা আর্তনাদ করেন—মুখ পুড়িয়েছিস তো আমাদের? যা যা! দূর হয়ে যা চোখের সামনে থেকে। পেটের শত্রু সব। 

ঠেলে দেন তিনি মেয়েকে। আর তাঁর চোখে জল এসে যায়। হাজার অনিষ্ট সম্ভাবনা তাঁর মাতৃহৃদয় আলোড়িত করে তাঁকে কাঁদিয়ে তোলে। 

এত খোলাখুলি মিশেছে ওরা যে কলাবাগানে গিয়ে বসে ছিল? খোলাখুলি মিশেছে যখন, সারা গ্রামের কি আর জানতে বাকি আছে কিছু? যদি বিয়ে না করে অনির্বাণ ওকে, তবে অন্য জায়গায় কী করে মেয়ের বিয়ে দেবেন? তাঁর গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধে যায় তুলতুলির পরিস্থিতি। 

আশা বিশ্বাস করেন, লেখাপড়া করুক, আর যা-ই করুক, একটি শুভ-সুন্দর বিবাহই মেয়ের জীবনে শান্তি আনতে পারে। সবকিছু ভেবে অসুস্থ বোধ করেন তিনি। দুপুরের খাওয়া বাকি ছিল। সব কাজ সেরে খাবেন ভেবেছিলেন। এখন সে-ইচ্ছে চলে গেছে। মেয়ে বেরিয়েছিল কলেজ যাবে বলে। আর ফিরল দেখ! আপন মনে বিড় বিড় করেন তিনি। আরও দুই সন্তান, আকাশ আর আশিস, একজন এগারো ক্লাসে, একজন নবম— তাদের কথা এই মুহূর্তে আশার মনে পড়ল না। বড় সন্তানের অকল্যাণ আশঙ্কা জল হয়ে ঢুকে পড়ল হাঁড়িতে। অভুক্ত থেকে ভোগের ভাতে জল ঢেলে দিলেন তিনি। তিল তিল করে গড়া এ সংসার। দাঁতে কামড়ে পায়ে-পায়ে টেনে চলা। সুখ না থাক, শান্তি আর স্বস্তি ছিল। আশা টের পান, সেই শাস্তি দীর্ঘকালের জন্য বিঘ্নিত হল। 

বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে সহদেব আশাকে ডাকলেন—শুনছ 

—বলো। 

—খেয়েছ তুমি? 

—আর খাওয়া! মরণ হয় না কেন আমার? 

—এত অধৈর্য হলে চলবে কেন আশা? আজকালকার ছেলেমেয়ে। ওরা ওদের মতো চলে।

—তুমিই ওর মাথাটা খেয়েছ। কত করে বললাম আর পড়িয়ো না। বিয়ে দিয়ে দাও। না। মেয়েকে পণ্ডিত করবে। করো এবার! 

—আমাদের চেষ্টা করতে হবে আশা। 

—কী চেষ্টা করবে? 

—আমি যাব পোদ্দারের বাড়ি। বলব। মেয়ে যখন আমার, দায়ও আমার। 

—নিজে থেকে গিয়ে বলবে? যদি অপমান করে দেয়? 

সহদেব দাস চুপ করে থাকেন। অপমান করতেই পারেন সুকুমার পোদ্দার। এবং হয়তো করবেনই। তবু। যেতে তো হবেই। তাঁর নীরবতার মধ্যে আশা বুক বাঁধার চেষ্টা করেন। মানুষ তো প্রত্যাশা নিয়েই বাঁচে। অসম সম্বন্ধে ভালবাসাবাসি করেছে। এমন বিয়ে কোথাও হয় না তা তো নয়। মাতৃহৃদয় শুভ আঁকড়ে ধরতে চায়। শুভাকাঙ্ক্ষা করে। 

আশা বলেন—হ্যাঁ গো! কী মনে হয়? 

কীসের? 

—ওরা নেবে আমাদের মেয়ে? 

—জানি না। 

—তোমার কথায় যদি রাজি না হয় আমি গিয়ে পোদ্দারগিন্নির পায়ে ধরব। 

—না। 

—কেন না? আমার মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে যাবে? 

আশা ফুঁপিয়ে ওঠেন। 

সহদেব দাস বলেন—জীবন কেন শেষ হবে আশা? তুলি তো অবুঝ নয়। ওকে বোঝাব। যাও তুমি খেয়ে এসো। 

—খাওয়ায় রুচি নেই আমার। 

—যাও খেয়ে এসো। আমাকে কষ্ট দেবে? 

আশা উঠলেন। রান্নাঘরে গিয়ে থালা পেতে বসলেন। জল-ঢালা ভাত থেকেই চেপে-চেপে তুলে নিলেন খানিক। বিস্বাদ ব্যঞ্জনে শেষ করলেন বিস্বাদ আহার। বুকের মধ্যে হাহাকার হতে থাকল তাঁর! কী করল মেয়েটা! কী করল! 

খাওয়া শেষ করে স্বামীর পাশে গিয়ে শুলেন। সারা দুপুর এপাশ-ওপাশ করে কাটালেন দু’জনে। তুলতুলির সাড়া-শব্দ নেই। 

সন্ধেবেলা সুকুমার পোদ্দারের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন সহদেব। আজই বলবেন। যা হবার হোক। এই অশান্তি নিয়ে কোনও কাজ করা সম্ভব নয়। 

সুকুমার পোদ্দার গাঁয়ের আরও পাঁচজনকে নিয়ে মজলিশ করছিলেন তখন। এই মজলিশে সহদেব আসেন না সাধারণত। তিনি অরাজনৈতিক সংসারী মানুষ। অতএব তাঁর এই উপস্থিতিকে প্রত্যেকেই দেখল বাঁকা নজরে। একটি চাপা, অনুচ্চারিত সংবাদ জানে প্রত্যেকেই—প্রেম জমেছে। প্রেম। নিজেদের মধ্যে তারা আলোচনা করেছে বহুবার এবং আকার-প্রকারে তুলেছে সুকুমার পোদ্দারের কানেও। নিজেদের মধ্যেকার মন্তব্যগুলি বিরস। কুরুচিকর। 

.

সহদেবের মেয়েটা চালাক। রুই-কাতলা তুলেছে। 

মেয়ে চালাক না বাপ-মায়ে! দেখেছে ঘটি ডুববে, মেয়েকে দিয়েছে লেলিয়ে। 

আরে দাস তো ধারে পোদ্দারবাবুর কাছে। সেবার সুয্যমুখীর চাষ করতে গিয়েছিল না? তৈলবীজে নাকি অনেক টাকা। মর এবার। 

মরছে আর কোথায়? ঘরে অমন ডবকা বেটি থাকলে ছিপ ফেলবে। এখন যেমন ফেলছে। 

তা যা বলেছ। মেয়েকে কলেজে দিয়েছে। ঢং কত। আমাদের ইস্কুলে এবার ও-ই মাস্টারনি হবে নাকি? 

হতে পারে! মেয়েরা আজকাল করছে অনেক কিছু। 

আর পোদ্দার যদি শ্বশুর হয় তো কিছুতে বাধা নেই। 

ছোঃ! কী ভাবো কী পোদ্দারবাবুকে অ্যাঁ? ওই হাইলা চাষা দাসের মেয়ে ঘরে নেবে?

এই, চাষাকে গালি দিস না। আমরাও সবাই চাষা। 

আমরা চাষা তো কী! আমরা ইজ্জত রেখেছি। ঘরের মেয়েকে বাপু ধিঙ্গিপনা করতে বাইরে পাঠাইনি। 

সেই মেয়েগুলানকে দেখে কিন্তু খারাপ লাগে না কী বল? 

কোন মেয়ে? 

আরে এসেছিল না? এন জি ও না কী বলে? 

আরে ওরা শহরের মেয়ে সব। খুব লেখাপড়া জানা। 

তা ওরা যদি পারে আমাদের গাঁয়ের মেয়েই বা পারবে না কেন? পেয়ার মহৎ করেছে, এ তো বয়সের ধর্ম। 

রাখ দেখি। বয়সের ধর্ম। তা সমান ঘরে আর ছেলে ছিল না? একেবারে পোদ্দারবাবুর ছেলে ধরতে হল? চুনোমাছে রুচি নেই, রুই-কাতলা মাগি। 

.

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মেয়েরা মাঝে-মাঝে আসে এ গ্রামে। জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা বোঝায় বাড়ির মহিলাদের। ঝরঝরে সুবেশ মেয়েরা। তাদের সঙ্গে মেলানো যায় না গ্রামের মেয়েদের। এবং রুই-কাতলা ধরা মেয়ে তুলতুলিকে নিয়ে আড্ডায় কত না সমালোচনা। এই সমালোচনার মধ্যে মিশে থাকে কিছু ঈর্ষা, কিছু বিরক্তি। অকারণ ক্রোধও কিছু কিছু। সহদেব দাসের মেয়ের কপালেই শিকে ছিঁড়বে কেন? অনির্বাণের সঙ্গে তুলতুলির বিয়ে হলে গ্রামের একটি লোকও খুশি হবে না। 

সেই রুই-কাতলা তোলা মেয়ের বাপ যখন এলেন মজলিশে তখন উপস্থিত সকলের ভ্রূ-কুঞ্চিত হল। রসালো খবরের আশায় লালা ভরে উঠল মুখে। কেবল পোদ্দারকে দেখেই বোঝা গেল না কিছু। তিনি নির্বিকার। সহদেব দাস এলেন, বসলেন কোনও আবাহন ছাড়াই। অনুমান করার চেষ্টা করলেন, কতদূর জানেন সুকুমার পোদ্দার। তাঁর সরল অরাজনৈতিক বুদ্ধি এটুকু অন্তত উপলব্ধি করল যে সুকুমার পোদ্দার সম্ভবত তাঁর চেয়ে অধিক জানেন এই মেলামেশার খবর। কারণ গ্রামের কোনও ঘটনাই তাঁর অজানা থাকে না। অজানা থাকলে তাঁর চলেই বা কী করে! 

অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন সহদেব। সময় চলে যাচ্ছে। নানান প্রসঙ্গে কথা হয়ে চলেছে। সুকুমার পোদ্দার কোনও প্রশ্ন করছেন না যেহেতু, সহদেব বললেন— আমার কিছু কথা ছিল পোদ্দার। একান্তে হলে… 

সুকুমার পোদ্দার বললেন—বসতে হবে। 

বসলেন। বসে থাকলেন সহদেব। বড় দায়ে। বড় দুর্ভাবনায়। তিনি অস্বীকার জেনেই এসেছেন। অগ্রাহ্য জেনেই এসেছেন। অতএব বসে থাকলেন। 

তাঁদের বয়স প্রায় কাছাকাছি। ছেলেবেলায় এই গ্রামের ধুলোমাটি মেখে একত্রে খেলেছেন। তখন ছিল তুই-তোকারি সম্পর্ক। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবস্থানের পার্থক্য তাঁদের সম্বোধনে এনেছে সম্ভ্রম, সম্পর্কে দূরত্ব। সেই দূরত্ব কোলে বসিয়ে অপেক্ষা করে চললেন সহদেব। করেই চললেন একটানা দেড়ঘণ্টা। এর মধ্যে আর একটিও কথা হয়নি তাঁর সুকুমার পোদ্দারের সঙ্গে। কারও সঙ্গেই হয়নি। অপমান যেন শুরু হয়ে গেছে এ বাড়ির আঙিনায় পা দেবার সঙ্গে সঙ্গে। 

অবশেষে, শেষ লোকটিও চলে গেলে সুকুমার পোদ্দার তাকালেন সহদেবের দিকে। বললেন—কী ব্যাপার? 

সহদেব দ্বিধাগ্রস্ত। বললেন— এই, মানে… একটু দরকার… 

—টাকাপয়সা দিতে পারব না কিন্তু 

—না। না। টাকার কথা না। মানে… 

—এসেছিস ভাল হয়েছে। 

সুকুমার পোদ্দার গম্ভীর মুখে বলেন। তাঁর দীর্ঘ ও সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন দেহটি সোজা হয়ে ওঠে। ভ্রূ দুটি কপালে তোলা। বলেন—এসেছিস ভাল হয়েছে। আমিই না হলে খবর পাঠাতাম। 

সহদেব অপেক্ষা করেন। খবর কেন পাঠাতেন পোদ্দার তার হেতু জানা দরকার। পোদ্দার বলেন—অনেকগুলো টাকা পাওনা আছে তোর কাছে। কিছু তো দিতে হবে। আমার টাকার দরকার। 

সহদেবের বুক কাঁপে। আসন্ন যুদ্ধাভাস স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি জানেন তাঁর ওই টাকা এখুনি না পেলে পোদ্দারের কিছুই যায় আসে না। তবু, এটা মনে করিয়ে দেওয়া তিনি অধমর্ণ। ঋণী। তাঁর হাত আপনিই জোড় হয়ে আসে। সুকুমার পোদ্দার বলেন—এবার তো ভাল ধান হয়েছে! 

সহদেব কীভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না। তার মনে হল, তাঁর আগমনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন পোদ্দার। তিনি বললেন—পোদ্দার! তোমার দেনা আমি মিটিয়ে দেব। হ্যাঁ। ধান এবার হয়েছে ভালই। 

—কবে পাব? 

—অ্যাঁ? 

—বলছি, অনেকদিন তো হল। 

—হ্যাঁ। দেখছি। এ মাসেই। তোমার সঙ্গে অন্য একটা প্রয়োজন ছিল আমার। 

—বলেছি না। ধার-কর্জ নিতে চাইলে হবে না! টাকাপয়সা আর আমি দিতে পারব না। আমবাগানে ভাঙন লেগেছে। আমার বড় ক্ষতির সময় যাচ্ছে, সহদেব। 

সহদেব বিচলিত হয়ে উঠলেন। ক্ষতির সময়— কথাটি বড় কঠিনভাবে উচ্চারণ করলেন সুকুমার পোদ্দার। বার বার ধারের কথা তুলছেন। যেন হিসেব করে মনে করিয়ে দেওয়া— সহদেব দাস অধমর্ণ। তিনি একবার গলা ঝেড়ে বললেন—টাকার কথা নয়। আসলে পোদ্দার, আমাদের সময়, সে ছিল অন্যরকম। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক আলাদা। মানে আমি অনু আর আমাদের তুলির মেলামেশার কথা বলছি। দু’জনেই বড় হয়েছে। পরস্পরকে পছন্দ করেছে। 

সুকুমার পোদ্দারের মুখ কালো ও কঠিন দেখায়। তিনি বলেন—পছন্দ যখন হয়েছে তখন আর কী, মাথায় করে নাচি কেমন? 

—না না সে কথা না। 

—মেয়েকে শাসন করা উচিত ছিল তোর সহদেব। মেয়ে ধিঙ্গিপনা করে বেড়াচ্ছে আর চোখ ফোটে না তোদের? গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করে ছাড়ল মেয়েটা। 

—ও তো একা কিছু করেনি। 

—দোষ তা হলে আমার ছেলের? হ্যাঁ? 

—না। দোষের কথাই যদি হয় তা হলে দোষ দু’জনেরই। আমার মেয়ের দোষ নেই তা তো আমি বলি না। 

সুকুমার পোদ্দার রুক্ষ হয়ে ওঠেন। হিসহিস করে তাঁর স্বর। এত উত্তেজনা সত্ত্বেও তাঁর স্বরগ্রাম মাত্রা ছাড়ায় না। তিনি বলেন—দোষ তোর মেয়েরই। একটা বয়স্থা মেয়ে সারাক্ষণ একটা ইয়ং ছেলের পিছে পিছে ঘুরলে কার মাথার ঠিক থাকে? 

—আমার মেয়ে অনির্বাণের পিছে পিছে ঘুরেছে? এসব কী বলছ তুমি? 

—হ্যাঁ ঘুরেছে। আমি সব জানি। মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছিস তোরা। 

—লেলিয়ে দিয়েছি? 

—হ্যাঁ। দিয়েছিস। ভাবলি এভাবে যদি টাকাটা গাপ করা যায়! অত সহজ হ্যাঁ? সুকুমার পোদ্দারকে হাত করা অত সহজ? 

—ছি ছি! এসব কী কথা! মেয়ে কলেজে যায়। দেখাশোনা হয়েছে, মিশেছে। 

—শাসন করতে পারিসনি? চোখে কি ঠুলি বাঁধা তোদের? 

মেয়ে বাইরে কী করে তা কি সবসময় জানা সম্ভব পোদ্দার? কলেজে দিয়েছি… 

—হ্যাঃ! কলেজ! কলেজে আর ছেলে ছিল না! একটা কথা আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই। যে-আশায় এসেছিস তা হবে না। ছেলের বিয়ে এখানে দেব না আমি। 

—পোদ্দার ব্যাপারটা বোঝ। গ্রামের সবাই ওদের মেলামেশার কথা জানে। অনু ওকে বিয়ে না করলে আমি মেয়ের বিয়ে দিতে পারব আর? 

—তার আমি কী জানি! আমাকে জিগ্যেস করে মেয়ে প্রেম করেছিল? অনুমতি নিয়েছিল আমার? 

দারুণ অপমানে ক্ষত-বিক্ষত হয়েও সহদেব দাসের হৃদয়ে মেয়ের জন্য রক্ত চুঁইয়ে পড়ে। এইভাবে মেয়েটাকে অভিযুক্ত করা ঠিক নয়। তিনি যেন গভীর জলে ডুবে যেতে থাকেন। জলের চাপ সর্বাঙ্গে। তাঁর শ্বাসকষ্ট হয়। তবু মেয়ের জন্য তিনি নত হয়ে যান। ক্ষুদ্র হয়ে যান। নিজের সম্মানের পরোয়া না করে কাতর গলায় প্রশ্ন করে বসেন। 

—আমার মেয়েটার কী হবে পোদ্দার? 

—গলায় দড়ি দিক। জলে ডুবে মরুক। 

—পোদ্দার! তুমি বড় মানুষ! তোমাকে আমি জোর করতে পারি না। কিন্তু তুমি ভাল করে জানো, তুমি যেভাবে আমাদের অভিযুক্ত করছ তার মধ্যে সত্য নেই। তুমি অনির্বাণকে ডাকো। সে বলুক। 

—সে কী বলবে? অ্যাঁ? সে কী বলবে? কী বুদ্ধি হয়েছে তার? 

—বাঃ! চমৎকার! আমার মেয়ের চেয়ে অন্তত চার বছরের বড় সে। তার বুদ্ধি নেই। কিন্তু আমার মেয়ে সবেতে ওস্তাদ। 

সুকুমার পোদ্দার চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন—যে পরিবারের যেমন শিক্ষা! মেয়ের বুদ্ধি তো তোরা দিচ্ছিস। যেই দেখলি টাকা-পয়সা আছে বাপটার, ওমনি লেলিয়ে দিলি! 

সহদেব দাসের আর সহ্য হয় না। তাঁর কণ্ঠে অসহায় মিনতি ঝরে পড়ে। 

—না না! বিশ্বাস করো! বিশ্বাস করো! 

—কীসের বিশ্বাস? তোর যদি এই মতলব না-ই হবে আগে আসিসনি কেন আমার কাছে? মেয়েকে শাসন করিসনি কেন? তাকে চড়-থাপ্পড় মেরে শাসন করলে তার এতখানি সাহস হত? 

—আমি তো…আগে মানে…আগে তো… 

—জানিস না? মিথ্যা কথা। তোকে বলা হয়েছে। তুই সব জেনেশুনে ব্যাপারটা ভালভাবে পাকতে দিয়েছিস। চুপ করে ছিলি কারণ ভাবলি লোক জানাজানি হলে আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে কাজটা হাসিল করা যাবে। শোন। অত সোজা না। ছেলের বিয়ে আমি এখানে দেব না আর তার জন্য যতদূর যেতে হয় আমি যাব। 

সহদেব চুপ করে রইলেন। বলেছিল তো। বলেছিল আনি মিঞা। বলেছিল কাদের বিশ্বাস। বলেছিল—তুমার মেয়েডারে দ্যাখলাম পোদ্দারবাবুর পোলার লগে…. 

বলেছিল—তুলিটা বড় হয়ে গেল দেখতে দেখতে। মাঝে মাঝে দেখি পোদ্দারবাবুর ছেলের সঙ্গে… 

সহদেব শুনেও শোনেননি। বুঝেও বোঝেননি। কেন? তা হলে কি পোদ্দারের কথাই সত্যি? তাঁর লোভ হয়েছিল? লোভের বশে তিনি মেয়েকে ঠেলে দিয়েছিলেন? না না না। তাঁর অন্তর আত্মধিক্কারে সংকুচিত হয়ে যায়। তখন সুকুমার পোদ্দার কিছু শান্তভাবে বলেন—সহদেব। মেয়েকে শাসন কর। সময় আছে এখনও। লোক এখন দু’ কথা বলছে। মেলামেশা বন্ধ করলে সব আপনি থেমে যাবে। তোর মেয়ে আমারও মেয়ের মতো। তার অনিষ্ট আমি চাই না। অন্যত্র তার সম্বন্ধ দেখ। আমি দেব তার বিয়ে। কিন্তু আমার পরিবারে হাত বাড়াতে চাইলে আমি সহ্য করব না। 

তিনি উঠে দাঁড়ান। অগত্যা সহদেবকেও দাঁড়াতে হয়। একজন সর্বস্ব খোয়ানো মানুষের মতো বেরিয়ে আসেন তিনি। হতমান। মাথা নিচু-করা মানুষ। কিন্তু এত শাসানি, এত অপমানের পরেও কাঙালের মতো একটি কথা সন্তর্পণে নাড়াচাড়া করেন তিনি—আমি দেব ওর বিয়ে- তা হলে মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়া যাবে? অন্যত্র? হয়তো মেয়েটার একটা গতি হবে কোথাও। বড়মানুষের সহায়তা পেলে কেন হবে না? 

অন্ধকারে হোঁচট খেতে খেতে এত কষ্টের মধ্যেও তাঁর মনে হয়—সুকুমার পোদ্দার লোক খারাপ নয়। এ গ্রামের বহু ছেলে, কৃষক তাঁর কাছে ঋণী। তাঁর দ্বারা উপকৃত। এমনকী এত অপমান করার জন্যও সুকুমার পোদ্দারকে দোষ দিতে পারেন না তিনি। তাঁর মনে হয়। এমনই হওয়ার কথা ছিল। পোদ্দারের জায়গায় তিনি থাকলেও ঠিক এরকমই করতেন। 

পোদ্দারই ঠিক। তাঁরই উচিত ছিল মেয়েকে শাসন করা। নিজের মধ্যেকার ক্রোধকে শান দিতে থাকেন তিনি। শাসন করবেন! মেয়েকে শাসন করবেন! কিন্তু ক্রোধ জমে না। মেয়ের সরল নিষ্পাপ মুখখানায় লেগে থাকা করুণ অসহায়তা তাঁকে নরম করে রাখে। মেয়ের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদে, নিজের জন্যও। তুলতুলিকে শাসন করে তিনি কী করবেন? তিনি বললেই কি ওর মন চলে যাবে অনির্বাণের থেকে? তা কি হয়? সেই কাঁচা বয়স হতে শুধু হাল-বলদ আর জমি চিনেছেন। বীজ আর ফসল আর সার চিনেছেন। শিখেছেন আকাশ দেখে ঠাহর করা—এ বছর বর্ষণ হবে কেমন! এসবের মধ্যে প্রেম ভালবাসা নিয়ে ভাববার অবকাশ কখনও হয়নি। আজ মেয়ের জন্য নিজের মধ্যে ভালবাসা নাড়াচাড়া করতে গিয়ে বড় শূন্য লাগল তাঁর। মেয়েকে শাসন করতে ইচ্ছে করল না শেষ পর্যন্ত। ঘরে আশা তাঁর মুখোমুখি দাঁড়ালেন। কোনও কথা এল না সহদেবের মুখে। শুধু দুটি চোখের কোলে জল ভরে এল। আশা বললে— কী? অপমান হয়ে এলে তো? 

—হল না আশা! হল না! কী বলল? 

—সে আর শুনে কী করবে? 

—খুব অপমান করল তোমাকে? হ্যাঁ গো! পাজি নচ্ছার মেয়ে! চল! আজ তোকে মেরে তবে আমি মরব। 

মেয়ের সন্ধানে ছুটে গেলেন আশা। মেয়ে! তুলতুলি! সহদেবের আদরের দুলালি! ভয়ে সে ঘরের কোণে সেঁধিয়ে আছে তখন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *