হেমলকের নিমন্ত্রণ – সুজন দেবনাথ
অন্বেষা প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ : অমর একুশে বইমেলা ২০২০
প্রকাশক – মো. শাহাদাত হোসেন
প্রচ্ছদ : আদনান আহমেদ রিজন
অক্ষর বিন্যাস : ইমন খান
.
উৎসর্গ
আমার মা শ্রীমতি মিরা দেবনাথ
বাবা জনাব সুধাংশু দেবনাথ
যাদের আশীর্বাদ আর স্নেহস্পর্শ
এই সুদূর এথেন্সে আমার দুঃখ রাতের ধ্রুবতারা
.
পূর্বকথা
আমি মনে করি মানুষ গল্পজীবী প্রাণী। মানুষের জীবন একটি গল্প। মানুষ প্রতি মুহূর্তে গল্প বানায়। প্রয়োজনে বানায়, এমনি এমনি ও বানায়। মানুষ গল্প শুনতেও ভালোবাসে। মানুষ গল্পভুক। মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি যে মানুষ কোনো বিষয়ের শুধু গল্পটুকু মনে রাখে। বাকি সবকিছু ভুলে যায়। আমাদের জীবনের প্রথম দিন থেকে যা কিছু ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলোকে আমরা কোনো না কোনোভাবে গল্প বানিয়ে ফেলতে পেরেছি, শুধু সেগুলোই আমাদের মনে আছে।
সেজন্য আমি যা কিছু বলি, গল্পের মতো বলি। যা কিছু লিখি, গল্পের মতো লিখি। আমি নিজে একটি গল্পজীবী প্রাণী— এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সেজন্য গল্পেই নিয়ে এসেছি পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল একটি সময়কে। সেই সময় যখন ইউরোপের সভ্যতা ছিল আঁতুড়ঘরে। আঁতুড়ঘরের নাম এথেন্স। এথেন্স শহরে মাত্র দুটি প্রজন্মে জন্ম নিয়েছিল বিজ্ঞান, ইতিহাস, গণতন্ত্র, সাহিত্যের ট্র্যাজেডি ও কমেডি, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র, স্থাপত্য, নৈতিকতাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখা। সেই জন্মের গল্পই ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’।
আমি তখন স্কুলে পড়ি। যে বই হাতে নিই, একটি জিনিস কমন। বইটিতে যদি জ্ঞানের কোনো কথা থাকে, তবে সেই জ্ঞানের জন্ম হয়েছে গ্রিসে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেকোনো শাখার ব্যাপারে একটি কথা নিশ্চিত, সেই শাখার জনক গ্রিসের কোনো এক মানুষ। ভাবতাম— গ্রিসের মানুষের কি অন্য কোনো কাজ নেই, শুধু একটির পর একটি বিদ্যার জন্ম দিয়েছে?
ঘটনা আসলেই তাই। সেই সময় সত্যিই গ্রিসের কিছু মানুষের কোনো কাজ ছিল না। সব কাজ করত দাসেরা। ধনীদের ছিল অফুরন্ত সময়। মানুষের স্বভাব হলো— কাজ না থাকলে, মানুষ আমোদ-ফূর্তি করে, বিলাসে গা ভাসায়। কিন্তু গ্রিকরা তাদের অফুরন্ত সময় ভোগ-বিলাসে নষ্ট করেননি। অনেকেই শুধু জ্ঞানচর্চা করেছেন। সেই চর্চার ফলে জন্ম নিয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখা। সময়টি ছিল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম ও চতুর্থ শতক। ঐ সময় এথেন্স এবং আশেপাশের কয়টি শহরে জন্ম নেয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা। একটি সময়ে একটি শহরে বুদ্ধিবৃত্তির ঐ রকম সমাবেশ পৃথিবীর ইতিহাসে আর হয়নি।
সেই সময়ের প্রায় আড়াই হাজার বছর পরে আমি চাকরি করতে এলাম এথেন্সে। মাত্র এয়ারপোর্টে নেমেছি। আমার স্ত্রী নিবেদিতা বলল, ‘আচ্ছা, এখানে হেমলক কোথায় খায়?’ প্রশ্ন শুনে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। হেমলকের মতো মারাত্মক বিষ খেতে হবে নাকি! ভয়ে ভয়ে নানান প্রশ্ন করে বুঝলাম, ‘হেমলক কোথায় খায়’ মানে হলো— সক্রেটিস কোন জায়গায় হেমলক পান করেছিলেন? তো খুঁজতে শুরু করলাম- সক্রেটিসের হেমলক পানের জায়গাটি। সেই খোঁজ থেকেই এই বইয়ের শুরু।
আমার অনুসন্ধান ছিল মোটামুটি তিনভাবে। সেই সময়টিকে পড়ে ফেলা, তারপর নিজের চোখে ঘটনার জায়গাগুলো দেখা, এরপর জটিলতা থাকলে কোনো গ্রিক বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা। এই অনুসন্ধান থেকেই ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’। গল্পের পটভূমি খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক। বছর হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব ৫১০ থেকে ৩৯৯ অব্দ পর্যন্ত। গণতন্ত্রের জন্ম হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫০৮ অব্দে আর সক্রেটিসের মৃত্যু হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম ও চতুর্থ শতককে পণ্ডিতগণ বলেন গ্রিসের ক্লাসিক্যাল সময়। আমি ঐ সময়টাকে ধরতে চেয়েছি।
অনুভব করতে চেয়েছি— সক্রেটিস কীভাবে এথেন্সের আগোরার পথে খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে কঠিন দর্শনের কথা সহজ করে বলতেন। কারা কোন আদালতে ঠিক কীভাবে বিচারের নামে হত্যা করল সক্রেটিসকে। হেরোডোটাস কোথায় বসে কোন অবস্থায় লিখতে শুরু করলেন পৃথিবীর প্রথম ‘ইতিহাস’। গণতন্ত্রের মতো একটি অভিনব ব্যবস্থা কোন মানুষগুলো কীভাবে আবিষ্কার করল। চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিপোক্রাটিস ঠিক কোন সময় ডাক্তারদের জন্য লিখলেন তাঁর চমৎকার ‘হিপোক্রাটিক শপথ’।
পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্যের কাঠামো গ্রিক ট্র্যাজেডি আর কমেডি। এই গল্পে আমি দেখতে চেয়েছি সেই থিয়েটার, যেখানে গ্রিক ট্র্যাজেডি জন্ম নিয়েছিল। কথা বলতে চেয়েছি পৃথিবীর প্রথম অভিনয়শিল্পীদের সাথে। ঢুকতে চেয়েছি হোমারের অন্ধ কুঠুরিতে, সফোক্লিসের নাটক লেখার মনে, ইউরিপিডিসের ট্র্যাজেডির গুহায়। আমি তাদের লেখাকে তাদের মতো করে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছি। খ্রিস্টপূর্ব ৪৭২ অব্দে ইউরোপের প্রথম ট্র্যাজেডি লেখেন এস্কিলাস। ট্র্যাজেডির নাম ‘Persia বা পারস্য’। মানুষ যত সুখেই থাকুক না কেন, মানুষের অন্তরে চিরকালের একটি দুঃখ-কোঠা আছে, মানুষ নিজের অজান্তেই নিজের হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগায়। তাই বেদনার সাহিত্যই মানুষের মনে গভীরভাবে থেকে যায়। সেজন্য আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কালজয়ী সাহিত্যের প্রায় সবই আসলে ট্র্যাজেডি। সেই ট্র্যাজেডি কীভাবে লেখা শুরু করলেন এস্কিলাস, কী ছিল তার প্রেক্ষাপট, সেগুলোই গল্পের মধ্যে নিয়ে এসেছি।
এরিস্টটলের মতে, পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ট্র্যাজেডি সফোক্লিসের ‘রাজা ইদিপাস’। রাজা ইদিপাসের কাহিনি পড়েছে আর ধাক্কা লাগেনি, এমন মানুষ পৃথিবীতে নেই। আমি মানতেই পারতাম না— নিজের মাকে বিয়ে করে ফেলার মতো নির্মম আর ভয়াবহ কাহিনি সফোক্লিসের মতো একজন বিশাল লেখক কেন লিখলেন! সেই প্রশ্নটি আমার একেবারে ছোট্টকালের। এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে কেউ দিতে পারেনি এই গল্পে আমি সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি। আমি দেখতে চেয়েছি, ঠিক কখন সফোক্লিস উচ্চারণ করলেন, ‘আমি পৃথিবীতে এসেছি শুধুই ভালোবাসার জন্য, কখনই ঘৃণা করার জন্য নয়।’
প্লেটো ছিলেন একজন কবি। সক্রেটিসের ছোঁয়ায় সেই কবি প্লেটো কবিতা ছুড়ে ফেলে হয়ে গেলেন কঠিন নির্দয় দার্শনিক। তার কল্পনার ‘আদর্শ রাষ্ট্র’ থেকে কবি-সাহিত্যিকদের দিলেন নির্বাসন। প্লেটোর কবি থেকে দার্শনিকে বিবর্তন পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসকেই বদলে দিয়েছে। প্লেটো দর্শন না লিখলে পৃথিবীই হতো অন্যরকম। প্লেটোর এই পরিবর্তনকে আমি খুঁজতে চেয়েছি।
ইউরোপে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের বদলে যাওয়া দেখতে চেয়েছি। কীভাবে মিশরের অনুভূতিহীন ভাস্কর্য বদলে গিয়ে মানুষের মতো হলো, ঠিক কখন পাথরগুলো হাত-পা বাঁকা করে আড়চোখে তাকাতে শুরু করল, সেটি খুঁজতে চেয়েছি।
ঐ সময় এক ঝাঁক মনীষী মেতে উঠেছিলেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। আমি সেই উল্লাসটাকে একটি গল্পে ধরতে চেয়েছি। সৃষ্টিশীল মানুষের জীবন এবং সৃষ্টিকে একটি মাত্র কাহিনিতে আনতে চেয়েছি। তাতে আমি আশ্রয় করেছি সক্রেটিসের ওপর। সক্রেটিসই এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র।
এই উপন্যাসের কোনো চরিত্রই কাল্পনিক নয়। অন্যান্য চরিত্র হচ্ছে : দার্শনিক প্লেটো; ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস; ট্র্যাজেডি নাটকের তিন পিতা— সফোক্লিস, ইউরিপিডিস ও এস্কিলাস; কমেডি নাটকের জনক এরিস্টোফানিস; চিকিৎশাস্ত্রের জনক হিপোক্রাটিস; এথেন্সের গণতন্ত্র ও জ্ঞানচর্চার প্রধান পৃষ্ঠপোষক পেরিক্লিস; নারী দার্শনিক আসপাশিয়া; স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের প্রধান শিল্পী ফিডিয়াস; সক্রেটিসের স্ত্রী জেনথিপি এবং তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু দার্শনিক ক্রিতো, চেরোফোন এবং সিমন। এছাড়া গল্পের ছায়ায় আছেন দার্শনিক পিথাগোরাস, বিজ্ঞানের জনক থেলিস এবং নগর পরিকল্পনা শাস্ত্রের জনক হিপোডেমাস।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র যেহেতু সক্রেটিস, তাকে নিয়ে লেখার উৎস বলা প্রয়োজন। সক্রেটিস নিজে তার জীবনে একটি অক্ষরও লিখেননি। সক্রেটিস বিষয়ে প্রধান রেফারেন্স অবশ্যই প্লেটোর রচনাবলি। প্লেটো ছাড়া সক্রেটিসকে দেখেছেন এবং তাকে নিয়ে লিখেছেন এমন মানুষ আছেন দুজন। তারা হলেন— সক্রেটিসের ছাত্র জেনোফোন এবং নাট্যকার এরিস্টোফানিস। এই তিনজনের লেখায় সক্রেটিস তিন রকম। প্লেটোর সক্রেটিস অসাধারণ এক বিপ্লবী। তিনি যুগের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে থাকা একজন মানুষ। আর জেনোফোনের সক্রেটিস খুবই সাধারণ, তিনি কারও সাতে-পাঁচে নেই। উল্টোদিকে এরিস্টোফানিসের সক্রেটিস ভয়াবহ জঘন্য একজন মানুষ, তিনি দোকান দিয়ে চিন্তা বিক্রি করেন, তরুণদের ভয়ংকর রকম কুপথে নিয়ে যান। তাই এদের লেখা থেকে কে যে প্রকৃত সক্রেটিস, তা কেউ জানে না। প্লেটোর অসাধারণ গদ্য আর তীক্ষ্ণ যুক্তির কারণে আমরা তার রচনার সক্রেটিসকেই প্রকৃত সক্রেটিস হিসেবে ধরে নিই। কিন্তু সমস্যা হলো— প্লেটো পৃথিবীর সর্বকালের সেরা সাহিত্যিকদের একজন। তিনি দর্শন লিখেছেন সাহিত্যের মতো সংলাপ দিয়ে। সেই সংলাপের মূল বক্তা সক্রেটিস। পণ্ডিতেরা মনে করেন, প্লেটো তার কিছু বইয়ে সক্রেটিসের প্রকৃত জীবনকথা লিখেছেন আর বেশিরভাগ বইয়ে প্লেটোর নিজের ধারণা সক্রেটিসের মুখে সংলাপ হিসেবে বসিয়ে দিয়েছেন। তাই প্লেটোর লেখার কোনটি সক্রেটিসের কথা আর কোনটি প্লেটোর নিজের কথা, সেটি প্লেটো ছাড়া অন্য কেউ বলতে পারেন না। সেজন্য প্রকৃত সক্রেটিসকে কোনোভাবেই নিশ্চিত করে জানা সম্ভব নয়। সক্রেটিস সব সময়ই একটি ধোঁয়াশা। সক্রেটিসকে নিয়ে এই ধোঁয়াশাকে পণ্ডিতগণ বলেন ‘সক্রেটিস সমস্যা’। এই সমস্যাকে মেনে নিয়েই আমি মানুষ সক্রেটিসকে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।
প্লেটোর রচনা ছাড়া হেরোডোটাসের ইতিহাস, হোমারের ইলিয়াদ ও অডিসি, এরিস্টটলের রচনা এবং তখনকার নাট্যকারদের লেখা নাটকগুলোই সেই সময়কে বোঝার একমাত্র উপায়। এরপরে আড়াই হাজার বছর ধরে সেই সময়কে নিয়ে যারাই লিখেছেন, লেখকের নিজের কল্পনা মিশে গেছে তাদের লেখায়। সেখান থেকে শুদ্ধ কাহিনি বের করা অসম্ভব। তাই আমার কাহিনি একশভাগ শুদ্ধ বলে দাবি করব না। তবে আমি জেনে বুঝে কোনো ভুল তথ্য দেইনি। আমি কোনো সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনকে বদলে দেইনি। একটিও কাল্পনিক চরিত্র নেইনি। এরপরেও যে ভুল রয়ে গেল, তার জন্য বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সক্রেটিসের মুখের কথাটিই বলি— ‘আমি শুধু একটি জিনিসই জানি, সেটি হলো— আমি আসলে কিছুই জানি না।’
এই গল্পে সক্রেটিস একইসাথে একজন দার্শনিক এবং প্রেমিক। অনেক পণ্ডিত সক্রেটিসকে সমকামী বলেন। এটি নিয়ে পড়াশুনা করে আমার মনে হয়েছে, সেই সময়ে সমাজে সমকামিতা ছিল। কিন্তু সক্রেটিস বিষয়টির বিরোধী ছিলেন। প্রেম নিয়ে প্লেটোর লেখায় ছেলে চরিত্র আছে, কিন্তু সক্রেটিসের প্রেমের গুরু হলেন ডিওটিমা নামের একজন নারী এবং তার প্রেম নারী-পুরুষের প্রেম। শরীরের আকর্ষণ ছাড়া সাধু- সন্ন্যাসী ধরনের এক প্রেমের কথা প্লেটো বলেছেন, যেটিকে ‘প্লেটোনিক প্রেম’ বলা হয়। আমার মনে হয়েছে সেটি প্লেটোর নিজের ধারণা। সক্রেটিস একজন তুমুল প্রেমিক এবং তিনি নারী-পুরুষের প্রেমকেই গুরুত্ব দিতেন। তিনি প্রেমের সুযোগকে অবহেলা করেননি। প্লেটোর ‘সিম্পোজিয়াম’ ডায়ালগে সক্রেটিস বলেছেন, ‘আমি শুধু একটি জিনিসেই বিশ্বাস করি, সেটি হলো ভালোবাসা’।
আমাকে যেটি কষ্ট দিয়েছে, সেটি হলো— এথেন্সের এমন সৃষ্টিশীল সময়ে কোথাও মেয়েরা নেই। মেয়েদের প্রতি এমন অবিচার অন্য কোনো যুগের মানুষ করেননি। আমার ধারণা— মেয়েদের অংশ নিতে দেওয়া হয়নি বলেই, এথেন্সের অবিশ্বাস্য সুন্দর যাত্রাটি মাত্র দুটি প্রজন্মেই শেষ হয়ে গেছে। এই বই লিখতে গিয়ে নারী চরিত্র খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু নারী ছাড়া কি সাহিত্য হয়? অবশেষে অনেক খুঁজে দুজন নারীকে নিয়েছি। একজন সেই সময়ের সবচেয়ে বিদুষী নারী দার্শনিক আসপাশিয়া, আরেকজন সক্রেটিসের স্ত্রী জেনথিপি। আসপাশিয়া এই বইয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সেই নারীবিবর্জিত জ্ঞানীদের ভিড়ে শুধু নিজের বুদ্ধি দিয়ে সময়টিকে বাজিয়েছিলেন আসপাশিয়া। আর সক্রেটিসের স্ত্রী জেনথিপির বিষয়ে আমার মনে হয়— প্লেটো থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সব লেখক তার ওপর অন্যায় করেছেন। প্লেটো সারা জীবনে এক লাখের বেশি শব্দ লিখেছেন, সবগুলোই সক্রেটিসকে নিয়ে, কিন্তু জেনথিপির কথা বলেছেন মাত্র দুইটি জায়গায়। সব লেখক জেনথিপিকে শুধুই একজন মুখরা নারী বলেছেন। কিন্তু আমার গল্পে তিনি শুধু মুখরা নারী নন; অভিমান ও প্রেমমাখা রক্ত-মাংসের একজন নারী যিনি স্বামীকে তীব্রভাবে ভালোবাসেন, কিন্তু স্বামীর অবহেলা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিতে সারাদিন বকাঝকা করেন।
আর একটি বিষয় : দর্শন বোঝাতে প্লেটো তার লেখায় সক্রেটিসের সাথে অনেক পার্শ্ব-চরিত্র এনেছেন। আমি এসব চরিত্রকে এই বইয়ে আনিনি। সক্রেটিসের বন্ধু ক্রিতো, চেরোফোন, সিমন, এলসিবিয়াডিস এবং প্রধান শিষ্য প্লেটো এই পাঁচজনের সংলাপ দিয়েই তার দর্শনকে আনার চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রিক শব্দগুলোর আমরা ইংরেজি থেকে যে উচ্চারণ পেয়েছি, গ্রিক উচ্চারণ তার থেকে আলাদা। যেমন গ্রিকরা সক্রেটিস বলে না, বলে সক্রাতুস। আমার মনে হয়েছে, ইংরেজিতে যেভাবে উচ্চারণ হয় সেভাবেই রেখে দিলে বাংলাভাষীদের জন্য উপযোগী হবে। আমার ইচ্ছা ছিল এই বইতে মিথোলজির কিছুই থাকবে না। কিন্তু ইতিহাসের মধ্যে যে মিথগুলো জড়িয়ে গেছে, যেমন— অলিম্পিক গেমস কীভাবে শুরু হলো, এথেন্স নগর কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো, কিংবা সক্রেটিসের বিচারের রায় হওয়ার পরেও যে মিথের কারণে তিনি ঊনত্রিশ দিন বেঁচে রইলেন— এমন কিছু মিথ বলতেই হয়েছে। গল্পের প্রয়োজনে হোমারের ইলিয়াদ ও অডিসির ব্যাকগ্রাউন্ড বলতে হয়েছে।
ভাষার ব্যাপারে আমি এই বইয়ে অত্যন্ত সচেতনভাবে একুশ শতকের তরুণদের মুখের ভাষাটিকে প্রমিতভাবে আনতে চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি সব যুগেই একটি প্রমিত মানদণ্ড রেখে সেই যুগের মুখের ভাষাটিই সাহিত্যের ভাষা হয়ে ওঠে। এছাড়া আমার মনে হয়েছে সক্রেটিস সব সময় wit আর রসিকতা মিশিয়ে তরুণদের সাথে কথা বলতেন। সেজন্য এই বইয়ে আমি ইচ্ছে করেই এই সময়ের তরুণদের মুখের প্রাঞ্জল ভাষা ও শব্দ ব্যবহার করেছি।
এই বইয়ের গবেষণার কাজে গ্রিসের অনেক প্রতিষ্ঠান আমাকে সাহায্য করেছে। যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের নাম না বললে অন্যায় হবে, সেগুলো হলো— এথেন্স একাডেমি, আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম অব এথেন্স, হিপোক্রাটিস ফাউন্ডেশন এবং এক্রোপলিস মিউজিয়াম। সক্রেটিস মানুষটিকে বুঝতে ‘সক্রেটিস কমিউনিটি’ নামক এথেন্সের একটি সংগঠনের ড. ইফস্ট্রাটিওস সুব্বাসাকিস, এভমিখানোস মোসকোনাস এবং এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ডিমিত্রি ভাসিলিয়াদিস আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। মোসকোনাস সাহেব হলেন একমাত্র জীবিত মানুষ যিনি সক্রেটিসের সময়ের ডায়ালেক্টে কথা বলতে পারেন।
বইটি শুরু করার পেছনে নিবেদিতার জ্বালাতন অনেকখানি দায়ী। প্ৰথম পাঠক এবং পরামর্শকও সে। বইয়ের সার্বিক বিষয়ে অসংখ্য গঠনমূলক পরামর্শ ও প্রেরণা দিয়েছেন গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব মোঃ জসীম উদ্দিন। প্রকাশক জনাব মো. শাহাদাত হোসেন অতি স্বল্প সময়ে বইটি প্রকাশে যে আগ্রহ ও মমত্ব দেখিয়েছেন, তাতে আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। বইটি প্রকাশের জন্য আমি যার কাছে সর্বান্তঃকরণে ঋণী, তিনি হলেন কবি অনিকেত রাজেশ। তার কবিত্বমাখা ভালোবাসা ছাড়া এই বই আলোর মুখ দেখত না।
‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ শেষ হয়েছে সক্রেটিসের মৃত্যু দিয়ে। প্লেটোর একাডেমি প্রতিষ্ঠা, এরিস্টটলের দর্শন-বিজ্ঞান এবং আলেকজান্ডারের বিশ্ববিজয় এখানে আসেনি। সেই সময়টি নিয়ে ভবিষ্যতে লিখব আশা করি।
সুজন দেবনাথ
ফেব্রুয়ারি ২০২০, এথেন্স, গ্রিস
.
পরিমার্জিত সংস্করণের কিছু কথা
‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ বাংলাভাষী মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছে। সেই সাথে সক্রেটিসের নগর এথেন্সের সক্রেটিস অনুরাগীরাও গল্পটি অনেক পছন্দ করেছেন। ‘সক্রেটিস কমিউনিটি’ নামে এথেন্সের একটি সংগঠন ‘হেমলকের নিমন্ত্রণ’ এর গল্পকে সক্রেটিস বিষয়ে এই বছরের সেরা বই হিসেবে নির্বাচিত করে এবং গল্পটি নিয়ে এই বছর সক্রেটিসের জন্মদিনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দেশ-বিদেশের মানুষ গল্পটি এত বেশি পছন্দ করায় অন্য রকম ঝামেলা হয়েছে। সৃষ্টিশীল মানুষদের কাহিনি নিয়ে অনেক পরামর্শ এবং প্রশ্ন এসেছে। আমি বাধ্যগত ছাত্রের মতো সেগুলো রিভিউ করতে চেষ্টা করেছি এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। তাতে দ্বিতীয় সংস্করণে বেশকিছু পরিমার্জন এসেছে, নতুন করে যুক্তও হয়েছে কিছু বিষয়। এর ফলে প্রথম সংস্করণ থেকে বই বড় হয়ে গেছে। তবে একটি পরামর্শ সঠিক মনে হলেও আমি নেইনি। সেটি হলো, এথেন্সের সক্রেটিস বিশেষজ্ঞ জনাব মোসকোনাস সাহেবের মতে, ‘সক্রেটিস পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ কিনা সেটি জানতে ডেলফির ওরাকলের কাছে তার বন্ধু চেরোফোন একা গিয়েছিলেন, সক্রেটিস সাথে যাননি। ডেলফিতে একজন নাকি দুজন গিয়েছিলেন, সেটি স্পষ্ট করে আমি কোনো ইংরেজি বইয়ে কিছুই পাইনি। তবুও জনাব মোসকোনাস সাহেবের কথাই সঠিক ধরে নিয়েছি। কিন্তু এই গল্পে ডেলফিতে চেরোফোন আর সক্রেটিসের যে হিউমারটুকু আছে, সেটি পাল্টাতে মন চাইল না। থাকুক না, চেরোফোনের কিছু মজা।
বইটি দ্বিতীয় সংস্করণে পরিমার্জনের সময় গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান মান্যবর রাষ্ট্রদূত জনাব আসুদ আহমেদ-এর স্নেহপূর্ণ পরামর্শ ও উৎসাহ আমি কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
বইটি সাহিত্যানুরাগীদের সাথে সাথে গবেষকদের কাছেও সমাদৃত হয়েছে। তাতেও একটি সমস্যা হয়েছে। পণ্ডিত বন্ধুদের স্বভাব হলো সব সময় কঠিন কঠিন কাজ ধরিয়ে দেওয়া। তাদের কথা বেশি শুনলে জীবন কয়লা হয়ে যেতে পারে। কয়েকজন পণ্ডিত বন্ধুর কথায় এই সংস্করণে অনেকগুলো ফুটনোট (টিকা) দিয়েছি। ফুটনোটে ইংরেজি নামও সংযুক্ত করলাম।
সুজন দেবনাথ
নভেম্বর ২০২০, এথেন্স, গ্রিস
.
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
১. The Last Days of Socrates, Plato, Penguin Books
(Euthyphro, Apology, Crito, Phaedo, Translated by Christofher Rowe, Penguin Books)
২. Early Socratic Dialogues, Plato, Penguin Books
(Ion, Translated and introduced by Trevor J. Saunders.
Laches, Translated and introduced by Iain Lane.
Lysis, Charmides, Translated by Donald Watt.
Hippias Major, Hippias Minor, Euthydemus, Translated by Robin Waterfiel.)
৩. সক্রেটিসের জবানবন্দি, প্লেটো, অনুবাদ-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া, পাঠক সমাবেশ
৪. ক্রিতো, প্লেটো, অনুবাদ-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া, পাঠক সমাবেশ
৫. ফিদো, প্লেটো, অনুবাদ-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া, পাঠক সমাবেশ
৬. The Republic, Plato, Translated by Desmond Lee, Penguin Books
৭. রিপাবলিক, প্লেটো, অনুবাদ-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া, পাঠক সমাবেশ
৮. Lives of the Eminent Philosophers: by Diogenes Laertius, Edited by James Miller, Oxford University Press
৯. Socrates-A Man for Our Times, Paul Johnson, Penguin Books
১০. Xenophon, Conversations of Socrates, Translated by Hugh Tredennick and Robin Waterfield, Penguin Books
১১. A History of Western Philosophy, Bertrand Russell, Publised Simon & Schuster
১২. সক্রেটিস, হাসান আজিজুল হক, অনুষ্টুপ
১৩. প্রাচীন গ্রিসের ইতিবৃত্ত, ড. অলোককুমার চক্রবর্তী, প্রোগ্রেসিড বুক ফোরাম
১৪. The Hemlock Cup: Socrates, Athens and the Search for the Good Life, Bettany Hughes, Jonathan Cape, London
১৫. Histories, Herodotus, Translated by George Rawlinson Wordsworth Classics of world literature.
১৬. Thucydides, History of the Peloponnesian War, Translated by C.F. Smith, Harvard University Press
১৭. The Man who Invented History, Justin Marozzi, Publisers John Murray
১৮. The Bloomsbury Companion To Socrates, John Bussanich & Nicholas D. Smith, Bloomsbury Companions.
১৯. রাজা ইদিপস, এন্টিগনি এবং ইদিপাস কলোনাসে, The Theban Plays, সফোক্লিস, পেঙ্গুইন বুকস
২০. Media and Other Plays, Euripides, Penguin Books
২১. Words of Wisdom from Ancient Greece, Translated by Alexander Zaphiriou, Aiora Publication.
২২. The Complete Plays, Aristophanes, Penguin Books
২৩. ইউরোপীয় নাটক ইতিহাস ও গল্প কথা, অমিতাভ চৌধুরী, এন. ই. পাবলিশার্স
২৪. লাইসিস, প্লেটো, অনুবাদ-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া,
২৫. বিশ্ব সাহিত্যে গ্রিক পৌরাণিক গল্প, বদরে আলম খান, পলল প্রকাশী
২৬. দি স্টোরি অফ ফিলোজফি, প্রথম খণ্ড, উইল ডুরান্ট, দীপায়ন
২৭. গ্রিক নাটক সংগ্রহ, শিশিরকুমার দাশ, দে’জ পাবলিশিং
২৮. ইউরিপিদেস : ট্রয়ের মেয়েরা, দেবেশ রায়, এবং মুশায়েরা
২৯. Ancient Athens on Five Drachmas a Day, Philip Matyszak, Thames & Hudson
৩০. Prometheus Bound, Translated by Deborah H. Roberts, Hackett Publishing Company, Inc.
৩১. Plato At The Goodleplex, Why Philosophy Won’t Go Away, Rebecca Newberger Godkstein, Atlantic Books.
৩২. Plato The Man and His Work, A.E Taylor, Dover Publications, Inc. . The Story of Philosophy, Bryan Magee, DK
৩৩. Euripides, Andromache Hecuba Trojan Women, Translated by Diane Arnson Svarlien Introduction, Hackett Publishing Company, Inc.
৩৪. A Companion to Aristotle, Georgios Anagnostopoulos, Wiley-Blackwell
৩৫. Homer, The Odyssey, Translated By Emily Wilson, W.W Norton & Company, Inc.
৩৬. The Odyssey, Homer with illustrations after John Flaxmax, Translated by Alexndrs pope
৩৭. Stephanides Brothes, Greek Mythology, Heracles, Retold By Menelaos Stephanides, Translation, Bruce Walter, Sigma
৩৮. A History of Ancient Greece in Fifty Lives (David Stuttard) Thames & Hudson.
৩৯. 8.500 Years of Civilization Greece, Between Legend and History, Haitalis
৪১. In Search of the Greeks, Second Edition, James Renshaw, Bloomsbury Publishing Plc.
৪২. The Greeks, National Geographic, Diane Harris Cline, National Geographic.
৪৩. The Rise of Athens, Anthony Everitt, Random House.
৪৪. Ancient Greece, Great Men, Papadogeorgos Georgios, Michael Toubis Publicaton S.A.
৪৫. Homer The Essential Iliad, Translated By Stanley Lombardo, Hackett
৪৬. Electra and Other Plays, Sophocles, Translated by David Raeburn, Penguin Books
৪৭. The Electra Plays, Aeschylus, Euripides, Sophocles, Translated by Peter Meinneck, Cecelia Eaton Luschnig and Paul Woodruff, Hackett Publishing Company
৪৮. Aphorisms, Hippocrates, Translated by W.H.S Jones, Aiora
৪৯. The Golden Verses, Pzthagoras, David Connolly, Aiora
৫০. Geek Mythology The Iliad The Trojan War, Translation by Bruce Walter, Sigma
৫১. The Ancient Greeks, Ten ways they Shaped the Modern world, Edith Hall, Vintage.
৫২. Oresteia, Aeschylus, (Translated by Peter Meineck) Hackett Publishing Company, Inc.
৫৩. The Bacchae and Other Plays, Ion the women of thoy Helen the Bacchae, Translated by Philip Vellacott, Penguin Books
৫৪. Four Tragedies, Sophocles, Ajax Women of Trachis Electra Philoctetes, Translated by Peter Meineck and Paul Woodruff, Hackett Publishing Company, Inc.
৫৫. Selected Dialogues of Plato, the Benjamin fowett Translation The Modern Library.
৫৬. The Three Theban Plays, Sophoicles, Traslated by Robert Fagles, Penguin Books
৫৭. A Traveller’s History of Greece, Tim Boatswain & Colin Nicolson, Armchair Traveller.
৫৮. Aristotle, His Life and School Carlo Natali, Edited by D.S Hutchinson, Princeton University Press.
৫৯. The Parthenon Enigma, Joan Breton Connelly, Head Zeus.
৬০. The Parthenon and its Impact in Modern Times, Panagotis Tournikiotis, Milissa Publishing.
৬১. Ithaca and Homer, The Truth, Christos I. Tzakos, Translated by Geoffrey Cox
৬২. The Rise and Fall of Athens, Nine Greek lives by Plutarch, Translated by Ian Scott-Kilvert, Penguin Books
৬৩. Introducing Plato, Dave Robinson & Judz Groves by Clays Ltd.
৬৪. The Odyssey Stephanides Brothers Greek Mythology, Yannis Stephanides, Translation by Bruce Walter, Sigma
৬৫. Why Socrates Died, Dispelling the Myths Robin Waterfield, Faber and Faber.
৬৬. Mystery Greece, George Katselis, Iguana Jones, Hartini poli
৬৭. Books and Ideas the Library of Plato and the Academy, Translated by Nikos Koutras, Oak knoll Press.
৬৮. Works and Days, Theogony and The shield of Heracles, Hesiod, Translated by Hugh G Evelyn- White, Dover Publications. Inc
Leave a Reply