দেশ শারদীয় গল্প-সংকলন (১৯৪৩-১৯৮৮)
সম্পাদক – সাগরময় ঘোষ
প্রথম সংস্করণ: জানুয়ারি ১৯৯০
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
প্রচ্ছদ: গণেশ পাইন
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও অঙ্গসজ্জা বিপুল গুহ, অমিতাভ ভট্টাচার্য্য
প্রাক্কথন
দেশ পত্রিকার অর্ধশতবর্ষপূর্তির স্মারকনিধিরূপে ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়েছিল দেশ সুবর্ণজয়ন্তী গিল্প-সংকলন। তাতে ছিল তদবধি দেশ-এ প্রকাশিত গল্পসমুদয় থেকে আহৃত পঞ্চাশটি নির্বাচিত গল্প। গল্পগুলি নেওয়া হয়েছিল মুখ্যত সাপ্তাহিক দেশ থেকে। কয়েকটি ক্ষেত্রে অবশ্য শারদীয় সংখ্যার দ্বারস্থ হতে হয়েছিল আমাদের। সেটা নিরুপায় ব্যতিক্রম। দেশ সুবর্ণজয়ন্তী গল্প-সংকলন প্রকাশিত হওয়া মাত্রই রুচিমান পাঠকমহলে অভূতপূর্ব সমাদর লাভ করে। এক ‘দেশ’হিতৈষী উচ্ছ্বসিত পাঠক তো চিঠিই লেখেন—‘খনি থেকে সমাহৃত উজ্জ্বল মণি দিয়ে এই যে মালাটি সযত্নে গেঁথে আপনারা বঙ্গসাহিত্য-সরস্বতীর গলায় পরিয়েছেন তার দ্যুতি চির-অমলিন থাকবে।’ আবার অনেকে এমন অনুযোগও করেন যে, শারদীয় সংখ্যার গল্প যখন নেওয়াই হল তখন আরও কয়েকটি বিখ্যাত গল্প নিলে ক্ষতি ছিল কী! অনুরোধ জানালেন, শুধু শারদীয় দেশ থেকে বাছাই গল্প নিয়ে অনুরূপ একটি সংকলন প্রকাশ করা হোক। বাসনার সেরা বাসা যেমন রসনায় তেমনি বাংলা ছোটগল্পের সেরা বাসা তো শারদীয় সংখ্যাই। সুতরাং শারদীয় দেশ-এর একটি সেরা গল্প-সংকলন থেকে কেন বঞ্চিত হবে নতুন প্রজন্মের পাঠক! সুবর্ণজয়ন্তী গল্প-সংকলনের অটুট ও ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা আর পাঠকদের অনুরোধ-উপরোধ—এই দুইয়ের মিলনেই শারদীয় গল্প-সংকলন প্রকল্পের জন্ম। সুবর্ণজয়ন্তীর পর আরও পাঁচ বছর আয়ুষ্কাল অতিক্রম করেছে ‘দেশ’, তাই এই সংকলনে স্থান পেল পঞ্চান্নটি গল্প। এক্ষেত্রেও যথাসাধ্য সতর্কতা ও শুদ্ধতার সঙ্গে গল্পগুলি নির্বাচন করা হয়েছে। ফলে সর্বথা পারম্পর্য অক্ষুন্ন রাখা যায়নি। কোনও-কোনও শারদীয় সংখ্যার গল্প মনোনয়নের মানদণ্ডে এই সংকলন থেকে নির্বাসিত, আবার কোনও-কোনও শারদীয় সংখ্যা থেকে একাধিক গল্প নির্বাচিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে যেমন সব মরসুমে সুফলন হয় না, কৃষ্টিক্ষেত্রেও তাই, অতএব এই বৈষম্য পাঠকরা মেনে নেবেন বলে আশা রাখি। তবে সেকাল-একালের প্রতিনিধিস্থানীয় যুগন্ধর গল্পকাররা প্রায় সবাই স্ব-মহিমায় উপস্থিত আছেন এই সংকলনে। ১৩৫০ বঙ্গাব্দে (১৯৪৩ খ্রী) স্বতন্ত্র আকারে দেশ পত্রিকার প্রথম শারদীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সেই থেকে ১৩৯৫ বঙ্গাব্দ (১৯৮৮ খ্রী) পর্যন্ত প্রকাশিত পঞ্চান্নটি শারদীয় গল্প নিয়ে এই সম্ভার। বলা নিষ্প্রয়োজন, বঙ্গমনীষার ঐতিহ্য-উত্তরাধিকারবাহী দেশ পত্রিকার শারদ সংখ্যার লেখকরা তাঁদের সেরা গল্পটিই উপহার দিয়েছেন।
সুবর্ণজয়ন্তী সংকলনে আমরা রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছিলাম, শারদ সংকলনে তাঁকে আমরা হারিয়েছি। ১৯৪১ সালে তাঁর তিরোধান, ‘দেশ’ শারদীয় সংকলন প্রথম প্রকাশিত হয় তার দু বছর পরে, ১৯৪৩ সালে। আবার বাংলা সাহিত্যের আর এক দিকপাল শরৎচন্দ্রকে সুবর্ণজয়ন্তী সংকলনে আমরা পাইনি—পেয়েছি শারদীয় সংকলনে। এই সংখ্যার গৌরব বৃদ্ধি করেছে তাঁর হৃদয়দ্রাবী বড় গল্প ‘কোরেল’ এবং কমলকুমার মজুমদারের কঠোর-কোমল বিস্ময়কর গল্প ‘আমোদ বোষ্টুমী’। দু’টি গল্পই লেখকদ্বয়ের জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত ছিল। অল্পকথার ভূমিকায় এই সুবৃহৎ সংকলনের গল্পকথার আনুপূর্বিক আলোচনার অবকাশ নেই। উপসংহারে শুধু এইটুকুই বলা যায় যে, কান্না-হাসির দোল-দোলানো পঞ্চান্নটি রত্নকল্প গল্প নিয়ে এই ‘দেশ শারদীয় গল্প-সংকলন’ উৎসুক পাঠকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলেই আমরা ধন্য হব।
সাগরময় ঘোষ
১ জানুয়ারি ১৯৯০
Leave a Reply