গোয়েন্দা আর গোয়েন্দা – রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় ও সিদ্ধার্থ ঘোষ সম্পাদিত
একশো বছরের গোয়েন্দা কাহিনী সংকলন
প্রথম সংস্করণ: এপ্রিল ১৯৯১ (বৈশাখ ১৩৯৮ বঙ্গাব্দ)
.
প্রসঙ্গ: গোয়েন্দা আর গোয়েন্দা – রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়/সিদ্ধার্থ ঘোষ
রহস্য কাহিনীর প্রতি মানুষের একটা দুর্নিবার আকর্ষণ আছে। ডাক্তার, এঞ্জিনীয়ার, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব কম ব্যক্তিই আছেন যিনি রহস্য কাহিনীতে কৌতুহলী নন, কিংবা জীবনে কোন-না-কোন সময়ে এক-আধখানা রহস্য কাহিনীর পাতা ওল্টাননি।
রহস্য কাহিনী বলতে অবশ্য পৃথিবীর অনেক কিছুকেই বোঝায়, কিন্তু আমরা বলতে চাইছি সেই সব কাহিনী যার মধ্যে খুন-জখম চুরি-ডাকাতি আছে, শঠ-কপট মানুষের আনাগোনা আছে, জটিল-কুটিল ঘটনার সমাবেশ আছে এবং সর্বোপরি আছে গোয়েন্দা নামে এক সুচতুর চরিত্র, যার কাজ খড়ের গাদা থেকে ছুঁচ বার করার মত বুদ্ধির মারপ্যাঁচে হাজার জনের মধ্যে থেকে আসল দুষ্কৃতকারীটিকে টেনে বার করা।
জগতে গোয়েন্দা গল্পের সর্বপ্রথম সৃষ্টি কে করেছিলেন বলা কঠিন। তবে পুঁথিগত ভাবে আজ থেকে সাড়ে তিন হাজার বছর আগে বৈদিক যুগে ঋগবেদের দশম মণ্ডলের একটি সুক্ত থেকেই আমরা পেলাম প্রথম গোয়েন্দার সন্ধান। এবং আশ্চর্য, সেই প্রথম গোয়েন্দাটি হল একটি কুক্কুরী, যার নাম সরমা। দেবতাদের গরু, চুরি করেছিল একদল ভিনদেশী ডাকাত—যাদের বলা হত ‘পণি’। সরমাকে গোয়েন্দা নিযুক্ত করা হয় এবং বলা বাহুল্য, শেষ পর্যন্ত তারই নির্দেশিত পথে হারানো গরু উদ্ধার করেন দেবতারা।
প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের প্রাচীন বইপত্তর ঘাঁটলে এমন নজীর আমরা অনেকই পাব। তবে আধুনিক গোয়েন্দা কাহিনী বলতে যা বোঝায়, তার জন্ম এই সেদিন অর্থাৎ দেড়শো বছর আগে। মার্কিন মুলুকের অপ্রাকৃত ও উদ্ভট রসের স্রষ্টা প্রখ্যাত এডগার অ্যালান পো-র লেখা দুপ্যাঁর কীর্তি-কাহিনী থেকেই আমরা পেলাম এমন একটি আদর্শ ছক যা পরবর্তীকালের বহু লেখককেই প্রভাবান্বিত করেছে। তারপর এলেন এমিল গ্যাবোরিও, উইলকি কলিন্স, জি·কে·চেস্টারটন, ই·সি·বেন্টলি, স্যার আর্থার কনান ডয়েল, অস্টিন ফ্রিম্যান, আগাথা ক্রিস্টি, ডরোথি সেয়ার্স—এমনি আরও কত।
উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যপাদ থেকে যেমন ওদেশে শুরু, এদেশে গোয়েন্দা কাহিনীর শুরু তেমনি ওই শতাব্দীরই শেষপাদ থেকে। অথাৎ ১৮৯২ সাল থেকে। শুরু করলেন সরকারী ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের একজন চাকুরে। নাম প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়। সিরিজের নাম ‘দারোগার দপ্তর’। প্রথম বই ‘বনমালী দাসের হত্যা’। বেরোয় ১৮৯২ সালের এপ্রিল থেকে। সিরিজের গ্রন্থ সংখ্যা ২০৬। প্রিয়নাথবাবু ছিলেন নেহাৎই গল্পকার, সাহিত্যিক নন। একশো বছর আগে যে ধরণের ভাষা চলতি ছিল, তাই সম্বল করে তিনি সাদামাটা ভাবে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কাহিনীগুলি লিপিবদ্ধ করতেন।
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘দারোগার দপ্তর’ যখন চলছে, ঠিক সেই সময়েই আরেকজন দক্ষ দারোগার গল্প শোনালেন কালীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়। সেই দক্ষ দারোগাটি হলেন বরকতউল্লা। সেকালে এদেশে ‘ঠগ’ নামক দস্যু সম্প্রদায়কে দমন করার জন্যে কমিশনার শ্লীম্যান যে-ক’জন দারোগাকে নিযুক্ত করেন, বরকতউল্লা তাঁদেরই একজন। ইনি ছিলেন ভদ্রবংশীয় এক বাঙালী যুবক। অসামান্য চাতুর্য এবং ধূর্ততার জন্যে লোকের মুখে মুখে এঁর নামটি দাঁড়িয়ে যায় ‘বকাউল্লা’, পরে বাঁকাউল্লা। ঠগী কমিশনের রিপোর্ট থেকে বরকতউল্লার ‘আশ্কারা’ করা বারোটি কৌতুহলোদ্দীপক কাহিনী সংগ্রহ করে ১৮৯৬-এ ‘বাঁকাউল্লার দপ্তর’ নামে পাঠক-দরবারে হাজির করেন কালীপ্রসন্নবাবু। পুলিশী দক্ষতার আরো একটি বই ‘সেকালের দারোগা কাহিনী’ লিখেছিলেন গিরিশচন্দ্র বসু। অক্ষয় সরকারের ‘নবজীবন’ পত্রিকায় ১৮৯৩-৯৪ সালে লেখাটি বেরোয়।
সেই সময়কার উল্লেখ্য আরেকটি ঘটনা—গোয়েন্দা কাহিনী রচনায় ‘ভারতী’ সাহিত্যপত্রের সম্পাদিকা স্বর্ণকুমারী দেবীর অনুপ্রেরণা দান। তখনকার প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত ১২৯৪ সালের বৈশাখ সংখ্যায় লিখলেন ‘চুরি না বাহাদুরি’ নামে একটি গোয়েন্দা কাহিনী। পরবর্তীকালে ইনি আরও কয়েকটি গোয়েন্দা কাহিনী রচনা করেছেন। মুখ্যত ঐতিহাসিক উপন্যাসপ্রণেতা ও ‘কলিকাতা—একালের ও সেকালের’ গ্রন্থকার রূপে পরিচিত হরিসাধন মখোপাধ্যায়েরও গোয়েন্দা কাহিনীর হাতেখড়ি এই ‘ভারতী’-তে। ১২৯৭-এর বৈশাখে প্রকাশিত হয় তাঁর গল্প ‘হত্যাকারী কে?’ তৎকালীন ‘সখা ও সাথী’তে হরিসাধনবাবুর ‘আশ্চর্য হত্যাকাণ্ড’ নামে যে কাহিনীটি প্রকাশিত হয়, গবেষক বিশেষের মতে সেটিই প্রথম বাংলা কিশোর থ্রিলার। উত্তরকালে আরও কয়েকটি গোয়েন্দা উপন্যাস তিনি রচনা করেছেন। ‘রবার্ট ব্লেক’ খ্যাত দীনেন্দ্রকুমার রায়েরও হাতেখড়ি ‘ভারতী’ পত্রিকাতে। তাঁর প্রথম মৌলিক রচনাটি বেরোয় ১২৯৯ সালের চৈত্র সংখ্যায়। নাম ‘উদোর ঘাড়ে বুদোর বোঝা’। এর পরেও অনেকগুলি মৌলিক কাহিনী তিনি এই পত্রিকায় লিখেছেন।
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়েরও অনেক কাল আগে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারী ও ক্রাইম ঘটনা নিয়ে বৃহদায়তন রহস্য কাহিনী ‘হরিদাসের গুপ্তকথা’ লিখেছিলেন ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৬-এ প্রকাশিত ‘মার্কিন পুলিশ কমিশনার’ (৬ খণ্ডে) গ্রন্থটি তাঁর উল্লেখযোগ্য। হরিসাধন এবং ভুবনচন্দ্রের সমকালীন লেখক ছিলেন ক্ষেত্রমোহন ঘোষ এবং সুরেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য। সাধারণ গল্প উপন্যাস ছাড়াও এঁরা লিখেছিলেন ডিটেকটিভ কাহিনী।
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের সাফল্যে উৎসাহিত শরচ্চন্দ্র সরকার ১৩০১ সালে ‘গোয়েন্দা কাহিনী’ নামে একটি ডিটেকটিভ সিরিজ প্রকাশ করলেন। শরচ্চন্দ্র নিজে ছাড়াও এই ‘গোয়েন্দা কাহিনী’র আরও কয়েকজন লেখক ছিলেন। এই সিরিজ বছর চারেক চলেছিল। ১৩০০ সালের গোড়ার দিকে “হিতবাদী’ পত্রিকাতেও রহস্যমূলক গল্প ছাপা হয়েছিল। পরে সেগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন নীরোদবরণ দাস, কালিঘাট থেকে। সিরিজের নাম ‘ডিটেকটিভের গল্প’। বইয়ে লেখকের কোন নাম নেই।
বিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার দিকে বাংলা গোয়েন্দা কাহিনীর জগতে চমক আনলেন পাঁচকড়ি দে। প্রিয়নাথবাবু লিখতেন অভিজ্ঞতার গল্প, আর পাঁচকড়িবাবু শুরু করলেন কল্পনার রঙ চড়ানো কাহিনী। পাঁচকড়িবাবুর রচনাগুলিকে অবশ্য মৌলিক বলা চলে না। দেশী পোশাক পরানো বিদেশী কাহিনী। গোবিন্দরাম, দেবেন্দ্রবিজয়, অরিন্দম বসু চরিত্রাঙ্কিত ‘মায়াবিনী’, ‘মনোরমা’, ‘নীলবসনা সুন্দরী’, ‘হত্যাকারী কে?’, ‘মায়াবী’ ইত্যাদি মোট আটাশখানি বই তিনি লিখেছিলেন।
গোয়েন্দা কাহিনীকে বাংলা সাহিত্যের মূল স্রোতের মধ্যে টেনে আনার কৃতিত্ব স্বর্ণকুমারী দেবীর সঙ্গে সমানভাবে দাবী করতে পারেন ‘কুন্তলীন’, ‘দেলখোস’ প্রভৃতি সুগন্ধী নির্মাতা যন্ত্রবিশারদ উদ্যোগী হেমেন্দ্রমোহন বসু (এইচ বসু)। ১৩০৩ সালে তিনি ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ প্রবর্তন করেন। প্রতি বছর পুরস্কারপ্রাপ্ত গল্পগুলিকে নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হত। ভৌতিক গল্প, রূপকথা, কৌতুক কাহিনীর সঙ্গে ডিটেকটিভ কাহিনীও আহ্বান করা হত। এই সংকলনে গোয়েন্দা কাহিনীকারদের মধ্যে খ্যাত ও অখ্যাত দুই শ্রেণীরই সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। শ্রীহট্ট বেজুড়া স্কুলের হেডমাস্টার রজনীচন্দ্র দত্ত একবার প্রথম পুরস্কার লাভ করেন, দীনেন্দ্রকুমার রায় লাভ করেন দ্বিতীয় পুরস্কার, শান্তিনিকেতনের বিজ্ঞানশিক্ষক ও বিজ্ঞান-লেখক জগদানন্দ রায় পান সপ্তম পুরস্কার এবং অমৃতবাজার পত্রিকার সরলাবালা দাসী (সরকার) লাভ করেন দুটি পুরস্কার—একবার নবম, আরেকবার ষষ্ঠ। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে সরলাবালাই এদেশে গোয়েন্দা কাহিনীর প্রথম মহিলা লেখিকা।
ঐতিহাসিক হরিহর শেঠ একবার একটি গোয়েন্দা কাহিনী লিখেছিলেন ১৩১১ সালের ‘প্রদীপ’ পত্রিকায়। লেখাটির নাম ‘অদ্ভুত গুপ্তলিপি’। সাহিত্যিক অম্বিকাচরণ গুপ্তও গোয়েন্দা কাহিনীর সেবায় এগিয়ে এসেছিলেন ১৩১৫ নাগাদ। ‘গোয়েন্দার গল্প’, নামে একটি মাসিক পত্রিকা তিনি প্রকাশ করেন। তাঁর ডিটেকটিভ উপন্যাস ‘স্বর্ণবাঈ’ প্রকাশিত হয়েছিল এই পত্রিকাতেই।
পাঁচকড়ি দে-র বই চলাকালীনই রহস্য সাহিত্যের দরবারে প্রবেশ করেছেন দীনেন্দ্রকুমার রায়। ১৩০৮ সালে উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রকাশিত ক্রাইম কাহিনীর পত্রিকা ‘নন্দন কানন’-এর সম্পাদক হন। এক বছর পরে পত্রিকাটি মাসিক ক্রাইম সিরিজে পরিণত হয়। এই সিরিজে দীনেন্দ্রকুমার বহু কাহিনী লিখেছেন, তবে কোনটিতেই তাঁর নাম থাকত না। এ ছাড়া, কয়েকটি বিলিতি উপন্যাস অবলম্বনে রহস্য কাহিনী লিখে দীনেন্দ্রকুমার সেই সময় কিছুটা খ্যাতি অর্জন করেন। বইগুলি হলঃ ‘আয়েষা’, ‘শী’, ‘রূপসী মরুবাসিনী’, ‘ভূতের জাহাজ’, ‘পিশাচ পুরোহিত’, ‘জাল মোহান্ত’, ‘চীনের ড্রাগন’ ইত্যাদি। প্রথম মহাযুদ্ধের পর দীনেন্দ্রকুমার রায় নিজেই একটি ডিটেকটিভ সিরিজ বের করলেন ‘রহস্য লহরী’ নামে। রবার্ট ব্লেক ও স্মিথের যাত্রা শুরু হল। প্রথম বই ‘বিধির বিধান’। মোট বইয়ের সংখ্যা ২১৭। দীনেন্দ্রকুমারের বইগুলি ছিল ইংরিজি বইয়ের অনুবাদ। যদিও আক্ষরিক নয় এবং প্রয়োজন বোধে পাত্র-পাত্রীর নামও বদলে দিতেন তিনি। ‘ইউনিয়ান জ্যাক’ নামে একটি বিলিতি পত্রিকা আর ‘সেক্সটন ব্লেক’ সিরিজের বইগুলি ছিল ‘রহস্য লহরী’ সিরিজের মূল উৎস। দীনেন্দ্রকুমার রায়ের ভাষা ছিল অত্যন্ত প্রাঞ্জল।
রচনা-রীতির দিক থেকে আজ অনেক পিছিয়ে পড়েছে সন্দেহ নেই, তবু গোয়েন্দা সাহিত্যের আদি পর্বে প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, পাঁচকড়ি দে এবং দীনেন্দ্রকুমার রায় প্রমুখের দানকে কোন মতেই অস্বীকার করা চলে না। ১৮৯০ থেকে ১৯৩০—এই চার দশক ধরে অসংখ্য পাঠকের মনের খোরাক যুগিয়ে এসেছেন সে যুগের লেখকরা। সমাজের অনেক অন্ধকার দিক এঁরা তুলে ধরেছেন সাধারণের কাছে, অপরাধ-জগতের বহু চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, এবং সর্বোপরি খুন থাকলেও শেক্সপীয়রের ‘হ্যামলেট’ কিংবা বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’-এর সঙ্গে রহস্য কাহিনীর যে কি তফাৎ, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন।
সাহিত্যে বঙ্কিমী কাল শেষ হয়ে তখন রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের অবাধ রাজত্ব চলেছে। তাঁদের ভাষার যাদু, গল্প তৈরির দক্ষতা, মনোবিশ্লেষণের মুন্সিয়ানার প্রভাব পড়ল একদিন গোয়েন্দা সাহিত্যের ওপরেও।
হেমেন্দ্রকুমার রায় তখন তরুণ কবি, ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার। তাঁর নজর পড়ল শিশুসাহিত্যের ওপর। বিশের দশকে দুঃসাহসিক অভিযান কাহিনী ‘যকের ধন’ (কিশোর-পত্রিকা ‘মৌচাকে’ প্রকাশিত) দিয়ে শুরু করলেন তাঁর অভিযান এবং শেষ করলেন জয়ন্ত-মাণিক-সুন্দরবাবুর মিলিত জুটির গোয়েন্দা কাহিনীতে। ‘জয়ন্তের কীর্তি’, ‘মানুষ পিশাচ’, ‘শনি-মঙ্গল রহস্য’, ‘সাজাহানের ময়ূর’, ‘পদ্মরাগ বুদ্ধ’ প্রমুখ বইগুলি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করল। জয়ন্ত-মাণিকের জুটি ছাড়াও হেমন্ত-রবীন এবং ইন্সপেক্টর সতীশবাবুকে নিয়ে হেমেন্দ্রকুমার রচনা করলেন কয়েকখানি গ্রন্থ। বিদেশী কাহিনীর ছায়া নিয়ে লেখা হলেও হেমেন্দ্রকুমারের বিন্যাসটি ছিল মৌলিক।
স্বল্পায়ু মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য গোয়েন্দা ‘হুকাকাশি’কে (জাপানী) নিয়ে ১৯২৮ সালে রামধনু’ পত্রিকায় লিখলেন ‘পদ্মরাগ’ নামে একখানি উপন্যাস এবং তার পরে ‘ঘোষ চৌধুরীর ঘড়ি’ এবং ‘সোনার হরিণ’। হুকাকাশিকে নিয়ে অনেকগুলি ছোট গল্পও তিনি লিখেছিলেন এবং সেগুলিও তাঁর মৌলিক রচনা। হেমেন্দ্রকুমারের মত প্রথম জীবনে তিনিও ছিলেন বড়দের লেখক।
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের যেমন ‘হুকাকাশি’, পরবর্তীকালে ‘কল্কেকাশি’ নামে একটি চরিত্র সৃষ্টি করে কয়েকটি হাস্যরসাত্মক গোয়েন্দা কাহিনী রচনা করেছিলেন শিবরাম চক্রবর্তী। হুকাকাশির মত কল্কেকাশিও তখনকার দিনে পাঠকমনে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল।
তিরিশের দশকের প্রথমার্ধে মনোরঞ্জন চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘রহস্যচক্র’ নামে একটি সিরিজ বেরোয়। এই সিরিজের বইগুলি লিখতেন বিভিন্ন লেখক। সাধারণ গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাত গজেন্দ্রকুমার মিত্রের প্রথম পদার্পণ গোয়েন্দা কাহিনী মারফৎ। তাঁর প্রথম গোয়েন্দা উপন্যাস ‘রেশমী ফাঁস’ বেরোয় রহস্যচক্র সিরিজের দ্বিতীয় গ্রন্থ হিসেবে। পরে ‘শমনসভার কীর্তি’ এবং ‘কাটামুণ্ডর কারসাজি’ বেরোয় ‘কাত্যায়নী গোয়েন্দা গ্রন্থমালা’য়। গোয়েন্দা তরুণ গুপ্তকে নিয়ে কয়েকটি ছোট গল্পও ইনি লিখেছেন।
‘রহস্যচক্র’ সিরিজের সমসাময়িক ‘রহস্য-রোমাঞ্চ-অ্যাডভেঞ্চার’ সিরিজটি বেরোয় রাধারমণ দাসের সম্পাদনায়। পরবর্তীকালে এই সংস্থা থেকেই বেরোয় ‘নব-কথা গ্রন্থমালা’ সিরিজ, যার দ্বিতীয়টি হল প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের লেখা গোয়েন্দা কাহিনী ‘আরাম-বাগ’। এই লেখকের আর একটি কাহিনী ‘ঋষিমশাই’ এই সিরিজের সপ্তম উপন্যাস।
১৯৩৫ সাল নাগাদ নৃপেন্দ্রকুমার বসুর সম্পাদনায় বেরোয় ‘কাত্যায়নী গোয়েন্দা গ্রন্থমালা’। এই সিরিজটি লিখতেন বিভিন্ন লেখক। সপ্তম গ্রন্থ ‘মরণ গোলাপ’ লিখেছিলেন পরবর্তীকালের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুমথনাথ ঘোষ।
এই দশকেরই শেষার্ধে দেবসাহিত্য কুটীর থেকে বেরোল ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা সিরিজ। রোমাঞ্চ-কাহিনীর সঙ্গে কয়েকখানি গোয়েন্দা-উপন্যাসও বেরিয়েছিল এই সিরিজে। লিখেছিলেন প্রথিতযশা লেখক-লেখিকারা: হেমেন্দ্রকুমার রায়, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, শৈলবালা ঘোষজায়া, প্রভাবতী দেবী সরস্বতী। এর মধ্যে কয়েকখানি বিদেশী কাহিনীর ছায়া-অনুসৃত হলেও সুলিখিত এবং সুখপাঠ্য।
প্রভাবতী দেবী সরস্বতীকে দিয়ে ‘কৃষ্ণা সিরিজ’ নামে আর একটি সিরিজ বার করেছিলেন দেবসাহিত্য কুটীর। এই সিরিজটির বৈশিষ্ট্য—এর গোয়েন্দা একজন মহিলা। পঞ্চাশের দশকে দেবসাহিত্য কুটীরের আর একটি উদ্যোগ: ‘বিশ্বচক্র’ সিরিজ। লেখক শ্রীস্বপনকুমার। সিরিজটি কিশোর-মহলে এক সময় খুব চালু ছিল। কৃতী সাহিত্যিক সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় ‘সব্যসাচী’ ছদ্মনামে দেবসাহিত্য কুটীরের ‘প্রহেলিকা’ সিরিজটি লিখতেন। ইংরিজি কাহিনীর ঝরঝরে বাংলা রূপ এই বইগুলি।
ধর্মতলা স্ট্রীটের জেনারেল প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স লিমিটেড থেকে মিহিরকুমার সিংহের সম্পাদনায় ১৯৩৮ সালে বেরিয়েছিল ‘বিচিত্র রহস্য’ সিরিজ। ১৯৪২ সালে এল ‘মোহন সিরিজ’। মোহন ছিল এককথায় যাকে বলে বাংলার রবীনহুড। এই রবীনহুড মোহনের লেখক ছিলেন শশধর দত্ত। তৎকালে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই সিরিজ। সিরিজের মোট বইয়ের সংখ্যা ২০৬। ১৯৫২ সালে শশধর দত্ত মারা যাবার পর এই সিরিজ বন্ধ হয়ে যায়। সিরিজটি বেরোত শিশির পাবলিশিং হাউস থেকে।
মোহন সিরিজের পর পাঠকের দৃষ্টি গিয়ে পড়ল ‘কালো ভ্রমর’-এর লেখক ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্তর ওপর। রহস্যভেদী কিরীটী আর তার সহকারী সুব্রতকে নিয়ে লেখা তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় আশি।
গোয়েন্দা কাহিনী কি শুধুই অবসর বিনোদনের খোরাক? শ্রেণীবিশেষের উন্নাসিকতার উপকরণ? রসিকের যথার্থ স্বীকৃতি লাভের সৌভাগ্য কি এর হবে না?
এ প্রশ্নের জবাব একদিন মিলল অপ্রত্যাশিতভাবেই। ১৩৩৯ সালে ‘বসুমতী’র পাতায় ‘পথের কাঁটা’ দিয়ে শুরু করে একটির পর একটি গোয়েন্দা কাহিনী লিখে চললেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। গল্পের নায়ক ব্যোমকেশ বক্সী। রসিক পাঠকসমাজ মুগ্ধ হল, বিস্মিতও হল। গোয়েন্দা নামে এতদিন যে সব কাহিনী চলে আসছে, তার থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র—কি গল্প বয়নে, চরিত্র চিত্রণে, কিংবা ভাষার মাধুর্যে!
ব্যোমকেশ গোয়েন্দা নয়, শরদিন্দুবাবুর ভাষায় সত্যান্বেষী। এবং খাঁটি বাঙালী বলতে যা বোঝায়, হুবহু তাই। পোশাকে-আশাকে, আচারে-আচরণে, কথায় বার্তায় অতি সাধারণ একটি মানুষ। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে খুবই বিচক্ষণ, রসিক এবং প্রসন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দুটি যেন রঞ্জনরশ্মির মত মানুষের অন্তর ভেদ করে। মাদুর পেতে মেঝেয় বসে, গড়গড়ায় তামাক খায়, অভিনিবিষ্ট হয়ে মক্কেলের সমস্যা শোনে। প্রয়োজন হলে অকুস্থলে যায়, নয়তো কথার ফাঁকে ফাঁকে দু’চারটে প্রশ্ন করে শুধু মক্কেলকে। তারপর কমলালেবুর খোসা ছাড়ানোর মত একটার পর একটা সমস্যার জট ছাড়ায়। শেষে প্রকৃত আসামীর দিকে যখন ব্যোমকেশ আঙুল বাড়িয়ে দেয়, বিস্ময়ে হতচকিত হয়ে যেতে হয়। বন্দুক-পিস্তল নেই, ছোরা-ছুরি নেই, রোমহর্ষক সংঘর্ষও নেই। অথচ কেমন নিঃশব্দেই না ব্যোমকেশ উইনিং পোস্ট পার হয়ে গেছে।
এই হল ব্যোমকেশের চরিত্র। বিদেশী যে-কোন গোয়েন্দার, তা সে শার্লক হোমস, ফাদার ব্রাউনই হোক, অথবা ডাক্তার থর্নডাইক কি এর্ক্যুল পোয়ারো হোক, সবার সঙ্গে যোগ্যতার দিক দিয়ে ব্যোমকেশ এক আসনে বসার উপযুক্ত।
কিন্তু হঠাৎ একদিন দীর্ঘকালের জন্যে লেখা বন্ধ করে দিলেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে মোহন সিরিজ এল, বিদায় নিল, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে গোয়েন্দা কিরীটীকে জনপ্রিয় করে তুললেন নীহাররঞ্জন। কিছু আগে ও পরে, এই সময় কলকাতার চিৎপুর ও কলেজ স্ট্রীটের বিভিন্ন প্রকাশন সংস্থা থেকে বেরোল অসংখ্য সিরিজ। অনেক খ্যাতিমান লেখকও ছিলেন এই সিরিজগুলির লেখক-তালিকায়, কিন্তু বলা বাহুল্য, বইগুলির বেশির ভাগই অন্তঃসারশূন্য।
চল্লিশের দশকের শেষার্ধে রহস্য-রোমাঞ্চ-গোয়েন্দা কাহিনী নির্ভর নিয়মিত মাসিক হিসেবে বেরোল কয়েকখানি পত্রিকা। তার মধ্যে অন্তত তিনটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্যে আজও নিঃসন্দেহে উল্লেখ্যঃ ‘রহস্য রোমাঞ্চ’ (সম্পাদনা: সাহিত্যিক বিমল কর ও কবি অরুণ ভট্টাচার্য), ‘রহস্যচক্র’ (সম্পাদনা: অধ্যাপক শ্রীকৃষ্ণ গোস্বামী) আর তৃতীয়টি হল ‘ডিটেকটিভ’ (সম্পাদক শ্রী ধ্রুব সরকার)। ‘উল্টোরথ’ পরিকল্পনার আগে, এই দশকেরই একেবারে শেষের দিকে প্রসাদ সিংহ-র সাহিত্য পত্রিকা ‘চলন্তিকা’র রূপান্তর ঘটেছিল গোয়েন্দা পত্রিকায়। এই গোয়েন্দা পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন শক্তি দত্ত প্রমুখ অনেকেই।
গোয়েন্দা পত্রিকা ‘রোমাঞ্চ’র জন্ম হয় ১৯৩২-এ। হরীতকী বাগানের এক বৈঠকী আসরে যেদিন এখম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, গৃহস্বামী নাট্যকার মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও সেদিন উপস্থিত ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, প্রণব রায়, পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়, সুনীলকুমার ধর, ফণীন্দ্র পাল, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রবোধকুমার সান্যাল প্রমুখ ‘কালিকলম’ ও ‘কল্লোল’ খ্যাত কবি ও সাহিত্যিকবৃন্দ এবং পরবর্তীকালের প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা সোমনাথ লাহিড়ী। প্রস্তাব দেন মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এবং সর্বসম্মতিক্রমে সেটি মেনে নেন সবাই। বত্রিশ পৃষ্ঠার ছোট আকারের রঙীন কাগজে ছাপা সাপ্তাহিক ‘রোমাঞ্চ’ বেরোল, ৯ই জানুয়ারি ১৯৩২-এ। দাম এক আনা। প্রতি সংখ্যায় একজন লেখক, একটি গল্প। নায়ক প্রতুল লাহিড়ী, গোয়েন্দা। সহকারী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ওরফে বিশু। প্রথম দুটি সংখ্যার (ইয়াংসু হোটেলের কাণ্ড ও সিঙ্গাপুর কাফে) লেখক কবি প্রণব রায়। তারপর পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়, পৃথ্বীশ ভট্টাচার্য। এমনভাবে পালা করে অনেকেই এবং প্রত্যেকেই।
দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ‘রোমাঞ্চ’র পুরো দায়িত্বভার পড়ে মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ওপর। সহযোগী হিসেবে মণি বর্মা, পরেশচন্দ্র বসু এবং হেমেন্দ্র মল্লিক থাকলেও বহুনামী হয়ে বেশির ভাগ বইই লিখেছেন তিনি। বইয়ের সংখ্যা একশোর কাছাকাছি। ১৯৫২ সালে ‘রোমাঞ্চ’ রূপান্তরিত হয় মাসিকে।
‘রোমাঞ্চ’র মাধ্যমেই গোয়েন্দা কাহিনীর দরবারে দেখা দিলেন কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র, গীতিকার প্রণব রায়। নীহাররঞ্জন গুপ্ত শুরু করলেন বড়দের উপযোগী গোয়েন্দা কাহিনী। এবং দীর্ঘকাল যিনি গোয়েন্দা কাহিনী লেখা ছেড়ে দিয়েছেন, সেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৫৬ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র আমদানি করলেন পরাশর বর্মাকে। প্রথম গল্প ‘গোয়েন্দা কবি পরাশর’। বিচিত্র চরিত্রের মানুষ পরাশর। পেশায় সে গোয়েন্দা, কিন্তু নেশা তার কবিতা লেখা—যে কবিতার স্থান ওয়েস্ট পেপার বাস্কেট ছাড়া আর কোথাও নয়। গোয়েন্দা কাহিনীর যে বিশেষ ছকটি চলে আসছে দীর্ঘকাল ধরে (অর্থাৎ বুদ্ধিমান গোয়েন্দা, তার সহকারী এবং বোকা পুলিশ ইন্সপেক্টর) প্রেমেন্দ্র মিত্র চেষ্টা করেছেন সেই ছক থেকে বেরিয়ে আসতে। চরিত্রানুগ কৌতুকরসান্বিত পরাশর বর্মার গল্প বাংলা সাহিত্যে একটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
প্রখ্যাত গীতিকার প্রণব রায় প্রথম জীবনে ছিলেন গল্পলেখক। পরে দীর্ঘ বিশ বছরের বিরতির পর তিনি যখন আবার গদ্যসাহিত্যে ফিরে এলেন, লিখলেন শুধু রহস্য রোমাঞ্চ আর গোয়েন্দা কাহিনী। রচনা করলেন একটির পর একটি ভিন্ন স্বাদের বই।
আনন্দবাজার পত্রিকার মারফৎ এই দশকেই পরশুরাম আমাদের সামনে হাজির করলেন রাখাল মুস্তৌফিকে—স্বয়ং শার্লক হোম্স যাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
এই সময়কার একটি উল্লেখযোগ্য নাম: ডক্টর পঞ্চানন ঘোষাল। ব্যক্তিগত জীবনে ইনি ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার। ফলে প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের মত এঁর কাছ থেকেও আমরা পেয়েছি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার দলিল। ‘রক্তনদীর ধারা’, ‘পকেটমার’, ‘বিখ্যাত তদন্ত কাহিনী’ ইত্যাদি ছাড়াও তাঁর বহু পরিশ্রমের ফসল—কয়েক খণ্ডে লেখা ‘অপরাধ বিজ্ঞান’ বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে এক অমূল্য সম্পদ।
বিশের দশক থেকে পঞ্চাশের দশকের মধ্যে গোয়েন্দা কাহিনীর যে রূপান্তর ঘটেছে, তা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। এক সময়ে গোয়েন্দা কাহিনী সীমাবদ্ধ ছিল বড়দের মধ্যে। সেই বড়দের এলাকা থেকে গোয়েন্দাকে পুরোপুরি কিশোরদের রাজ্যে এনে ফেললেন হেমেন্দ্রকুমার রায় এবং মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। দ্বিতীয়ত গোয়েন্দা কাহিনীকে হাস্য ও কৌতুকরসাপ্লুত করে প্রথম পরিবেশন করলেন শিবরাম চক্রবর্তী ও প্রেমেন্দ্র মিত্র। এবং তৃতীয়ত, গোয়েন্দা কাহিনীকে পুরোপুরি জাত সাহিত্যের মর্যাদা দিয়ে সর্বজনপাঠ্য করে তুললেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রণব রায় সংযোজন করলেন একটি নতুন মাত্রা: অপরাধীকে মানুষ হিসেবে দেখা এবং সমবেদনার দৃষ্টিতে তার বিচার করা।
সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে শরদিন্দু একবার বলেছিলেন : ‘রহস্য রোমাঞ্চ গল্প নিশ্চয়ই সাহিত্যে স্থান পেতে পারে। কারণ এখানেও মনুষ্যচরিত্র এবং মানবীয় ধর্ম নিয়ে রচনা। শুধু একটু রহস্য থাকে বলেই কেন নিম্নশ্রেণীর হবে? নোবেল পুরস্কার পাওয়া কোন কোন লেখকও এই জাতের লেখা লিখেছেন।····ভাষা হচ্ছে গল্পের বাহন। সেই বাহন যদি ভাল না হয়, তাহলে গল্পও ভাল ভাবে বলা যায় না। হোক না গোয়েন্দা গল্প, তবু সেটা গল্প তো! সুতরাং মনোজ্ঞ করে বলা চাই।’
১৮৯২ সালে প্রকাশিত প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘দারোগার দপ্তর’কে যদি আমরা গোয়েন্দা কাহিনীর প্রথম সূত্রপাত হিসেবে চিহ্নিত করি, তাহলে দেখা যাচ্ছে, ধাপে ধাপে আমরা এসে পৌঁছেছি গোয়েন্দা কাহিনীর শততম বর্ষে। এই একশো বছরের দশকে দশকে এসেছেন একেকজন, যাঁরা গোয়েন্দা কাহিনীকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
পঞ্চাশের দশকের দ্বিতীয় গোয়েন্দা মাসিক ‘রহস্য পত্রিকা’র কর্ণধার গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায় স্বনামে বেনামে বিভিন্ন গোয়েন্দা সৃষ্টি করে অনেক গল্প-উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর মূল গোয়েন্দার নাম দিলীপ সান্যাল এবং তার সহকারী ত্রিদিব চৌধুরী। এই দশকে বিচিত্র এক গোয়েন্দার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পরিমল গোস্বামী। ব্রজবিলাস—প্রয়োজনবোধে যে অনায়াসেই যে-কোন ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। এমন কি কুকুর পর্যন্ত। সেই সঙ্গে মোহিতমোহন চট্টোপাধ্যায় আনলেন দুই বোকা গোয়েন্দাকে—ভোম্বলদাস এবং কেবলরাম। এ ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা আনলেন বিধায়ক ভট্টাচার্য, ধীরেন্দ্রলাল ধর, সন্তোষকুমার ঘোষ, সুধাংশুকুমার গুপ্ত, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সমরেশ বসু, যজ্ঞেশ্বর রায়, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অদ্রীশ বর্ধন। এঁদের মধ্যে গোয়েন্দা কাহিনীকে জীবনভর আঁকড়ে রইলেন অদ্রীশ বর্ধন। গোয়েন্দা ইন্দ্রনাথ রুদ্রকে নিয়ে ইনি অসংখ্য গল্প আর উপন্যাস লিখেছেন। অনুবাদে সিদ্ধহস্ত মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৌলিক গোয়েন্দা উপন্যাস কয়েকখানি থাকলেও মূলত ইনি অনুবাদক-সাহিত্যিক হিসেবেই খ্যাত। পঞ্চাশের দশকের শেষার্ধের আরেকজন শক্তিমান লেখক গৌরাঙ্গপ্রসাদ বসু। ‘কন্যা-কলঙ্ক কথা’, ‘নীলিমা নিঃশেষে নিহত’, ‘গীতা কাপুরের আত্মহত্যা’ ইত্যাদি কয়েকখানি মাত্র বই লিখেই পাদপ্রদীপের সামনে থেকে তিনি সরে দাঁড়ালেন কি-এক অজ্ঞাত কারণে।
ষাটের দশকে কৃশানু বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে এলেন বাসবকে। গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে কমপক্ষে পঞ্চাশটি বাসব-গ্রন্থের তিনি জনক। কবি আনন্দ বাগচীর গোয়েন্দা সত্যপ্রিয় একজন বাঙালী গোয়েন্দা কাহিনীকারের চরিত্র অনুসরণে সৃষ্ট। সত্যপ্রিয়কে নিয়ে অনেকগুলি গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন তিনি। প্রথম বই ‘যাদুঘর’। কবি তারাপদ রায় আনলেন গর্জন গোয়েন্দাকে। সংখ্যায় বেশি না হলেও সার্থক গোয়েন্দা কাহিনী। শোভন সোমেরও লেখক-জীবন শুরু কবিতা এবং গল্প দিয়ে। গোয়েন্দা শুভ চৌধুরীকে নিয়ে তাঁর প্রথম বই বেরোয় ‘টোপ’। লেখক রবীন দেবের গোয়েন্দাও রবীন দেব। শ্রীধর চৌধুরীর গোয়েন্দার নাম শঙ্কর চৌধুরী। বহু উপন্যাস এবং গল্প লিখেছেন ইনি। মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের পথ অনুসরণ করে গোয়েন্দা প্রতুল লাহিড়ীকে নিয়ে অনেক গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন অমিত চট্টোপাধ্যায়। বইও বেরিয়েছে অনেকগুলি। হীরেন চট্টোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা দু’জন—সুধাময় এবং ম্যাক চৌধুরী। প্রবীরগোপাল রায়ের নির্দিষ্ট কোন গোয়েন্দা নেই, তবে গোয়েন্দাগিরি আছে। একজন অবাঙালীর পক্ষে বাংলা শিখে সেই ভাষায় গল্প লেখা নিশ্চয়ই খুব ক্ষমতার পরিচয়। গুরণেক সিং নিঃসন্দেহে সেই ক্ষমতার অধিকারী। গোয়েন্দা অমরেশকে নিয়ে তিনি অনেক গল্প লিখেছেন। কার্টুনিস্ট এবং হাসির গল্পের লেখক হিসেবে পরিচিত হিমানীশ গোস্বামী গোয়েন্দা দে ও দাঁ-কে নিয়ে অনেক সরস কাহিনী লিখেছেন। ষাটের দশকের আরও দুজনের নাম এইসঙ্গে যুক্ত করলাম। দুজনেই বহু গ্রন্থের লেখক। সুনীলকুমার ঘোষ এবং “নিশাচর’। এইসঙ্গে আরও একটি নাম: সুখময় মুখোপাধ্যায়। ইনিও কয়েকখানি গোয়েন্দা-গ্রন্থ লিখেছেন।
আজকের গোয়েন্দা কাহিনীর পাঠকমহলে একটি বিশেষ ভূমিকায় আছেন বিশ্ববিখ্যাত চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়। পিতা-পিতামহের পত্রিকা ‘সন্দেশ নব পর্যায়ে প্রকাশিত হবার কিছু পরেই ষাটের দশকে তিনি শুরু করলেন গোয়েন্দা কাহিনী রচনা। আনলেন প্রদোষ মিত্র ওরফে ফেলুদা আর তার সহকারী তোপ্সেকে। সেই সঙ্গে অভিনব চরিত্র রহস্য-রোমাঞ্চের লেখক জটায়ুকে। হেমেন্দ্রকুমার রায়ের পর কিশোর-জগতকে পুনরুজ্জীবিত করলেন যেন তিনি। সেই সঙ্গে বয়স্কদেরও। ভাষার প্রসাদগুণে এবং কাহিনীর চিত্রধর্মিতায় একাদিক্রমে পঁচিশ বছর ধরে তিনি সর্বশ্রেণীর পাঠক-পাঠিকাকে মুগ্ধ করে চলেছেন।
সত্তরের দশকে হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় নিয়ে এলেন ব্যোমকেশ বক্সীর ভাইপো পারিজাত বক্সীকে, সমরেশ বসু অশোক ঠাকুরকে, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ কর্নেল সরকারকে, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় অনুকূল বর্মাকে, প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায় পার্থ গুপ্তকে। সেই সঙ্গে ইন্দ্রজিৎ রায়ের সঙ্গে এলেন রাকেশ, কালীকিঙ্কর কর্মকারের সঙ্গে চিত্ত চ্যাটার্জি, অমল রায়ের সঙ্গে সুনন্দ রায়, মঞ্জিল সেনের সঙ্গে সদাশিব। প্রদীপ্ত রায় হাজির করলেন জগাপিসিকে, মনোজ সেন দময়ন্তীকে। জানি না এই মহিলা দুজনকে সামাল দিতে কিনা, পেছন পেছন হিমাংশু সরকার পাঠিয়ে দিলেন একজন মস্তান গোয়েন্দাকে—হিমাদ্রী সরকার। গোয়েন্দাগিরির অনেক কাহিনী লিখলেও অনীশ দেব এখনও কোন নির্দিষ্ট গোয়েন্দার আমদানি করেননি। ‘খুনের সংখ্যা এক’ দিয়ে শুরু করে এই দশকে কবিতা সিংহও কয়েকখানি গোয়েন্দা-গ্রন্থ রচনা করেছেন। যাট এবং সত্তরের দশকে সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন শার্লক হেবো আর পি·কে·বাসু, বার-অ্যাট-ল’র।
ছেলেবেলা থেকে গোয়েন্দা কাহিনীর পোকা ডক্টর সুকুমার সেন সত্তরের দশকে গোয়েন্দা হিসেবে নিয়ে এলেন কবি কালিদাসকে। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে যে সমস্যাগুলি তিনি সর্বসমক্ষে তুলে ধরেছেন, সেগুলি বর্তমান কালেরই। গোয়েন্দা কালিদাসকে নিয়ে তাঁর কয়েকখানি বইও বেরিয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে শেখর বসুর পরিচিতি অনেক দিনের, কিন্তু গোয়েন্দা-রাজ্যে তাঁর অনুপ্রবেশের কাল বেশি দিনের নয়। তবু এরই মধ্যে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছেন। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বরাবরই গোয়েন্দা কাহিনীর বিশেষ ভক্ত। ষাটের দশকে কিছু কিছু গল্প লিখলেও, বর্তমানে অন্যান্য লেখার ফাঁকে একটির পর একটি গোয়েন্দা কাহিনী লিখে চলেছেন তিনি। কিশোর-বয়স থেকে যে গোয়েন্দা কাহিনীর বিশেষ অনুরাগী ছিলেন শ্রদ্ধেয় প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত, দেশী ও বিদেশী গোয়েন্দাদের নিয়ে লেখা তাঁর কয়েকটি রম্যরচনাই তা প্রমাণ করে। পরিণত বয়সে সদুঠাকুমাকে নিয়ে গোয়েন্দা গল্পও তিনি ফাঁদতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু হঠাৎ-প্রয়াণের ফলে বেশি লিখতে পারেননি। অভ্র রায় এবং রমানাথ রায়কেও ইদানীং দেখা যাচ্ছে গোয়েন্দা কাহিনী লিখতে।
একটি লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ঘটেছে আশির দশকে। এই দশকে এসে গোয়েন্দা কাহিনী একটা আশ্চর্যরকম বাঁক নিয়েছে। বড়দের চেয়ে ছোটদের বইই এখন লেখা হচ্ছে বেশি। এবং পাঠকসমাজের কাছে তার চাহিদাও ক্রমবর্ধমান। কিশোরদের রাজ্যে যে সব লেখকের আগমন ঘটছে বর্তমানে, তাঁরা বেশির ভাগই সাহিত্যক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত শক্তিমান লেখক। এই শক্তিমান লেখকদের হাতে গোয়েন্দা কাহিনীর পরিধি আজ অনেক বেড়ে যাচ্ছে, সংযোজিত হচ্ছে নতুন এক মাত্রা। আজকের গোয়েন্দা কাহিনীতে ঢুকছে ভূগোল, ইতিহাস, আর বিজ্ঞান—কিশোর-মনে বোধ-বিকাশের আর জ্ঞান বিস্তারের ক্ষেত্রে যেগুলি অপরিহার্য অঙ্গ।
আশি এবং নব্বই দশকের প্রারম্ভের তিনটি ঘটনা বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে এই প্রসঙ্গে। শ্রীসুকুমার সেনের প্রধান উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গোয়েন্দা-সাহিত্য-চক্র ‘হোমসিয়ানা’। নষ্টচন্দ্র তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের চৌর্যবৃত্তির সম্মানার্থে শার্লক হোম্সের কয়েকজন বাঙালী অনুরাগী প্রথম সভা ডেকেছিলেন ১৯৮৩-র ২৭শে আগস্ট। ‘হোমসিয়ানা’র আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সন্তোষকুমার ঘোষ, সমরেশ বসু, দেবীপদ ভট্টাচার্য, শ্রীঅরুণকুমার মিত্র, শ্রীজগন্নাথ চক্রবর্তী, শ্রীনীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শ্রীসুভদ্রকুমার সেন, শ্রীরঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়, শ্রীআনন্দ বাগচী, শ্ৰীবাদল বসু প্রমুখ অনেকেই।
বাঙালী পাঠক চিরকাল মনে রাখবেন শ্রীসুকুমার সেনই প্রথম উপহার দিয়েছেন দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা কাহিনীর প্রথম ইতিহাস ‘ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি’।
তৃতীয় ঘটনা: পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বাংলা সহায়ক পাঠে গোয়েন্দা কাহিনীর অনুপ্রবেশ। পাঠ্য হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হল শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লোহার বিস্কুট’।
সমাজের সর্বস্তরের মানুষই গোয়েন্দা কাহিনীর পাঠক, কিন্তু সাহিত্যের সর্বস্তরের লেখক এর সেবক নন। গোয়েন্দা কাহিনীর ধারা অনুশীলন করলে আমরা দেখতে পাই, নিজস্ব একটি ছক আছে এর এবং সে ছকটি সাধারণ গল্প-উপন্যাসের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই স্বাতন্ত্রটুকু সব লেখকের চোখে ধরা পড়ে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, গোয়েন্দা কাহিনী লেখকে-পাঠকে একটা তীব্র বুদ্ধির প্রতিযোগিতার খেলা ছাড়া আর কিছু নয়, কিংবা শুধুমাত্র অবসর বিনোদনের খোরাক, কিন্তু এ কথা কোনক্রমেই অস্বীকার করা চলে না যে, এই খেলার মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে একটা সামাজিক কর্তব্য, মানবিক দায়বদ্ধতা।
বাংলা গোয়েন্দা কাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর শেষ দশকে। সুতরাং বর্তমান শতাব্দীর এই দশকে তার একশো বছর পূর্ণ হল। এই একশো বছরে শুধু কাল পাল্টায়নি, জীবন বদলেছে, সমাজ-ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের স্রোত অনিবার্যভাবেই এসে ধাক্কা দিয়েছে সাহিত্যকে। সাহিত্যের সহশাখা গোয়েন্দা কাহিনীও স্বাভাবিক ভাবেই তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। বর্তমান সংকলনে পরিবর্তনশীল সেই কালটিকে ধরে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। এবং লেখক-সূচীটিও সাজানো হয়েছে দশকের ধারাবাহিকতায়। অনবধানবশতঃ হয়তো দু-এক জায়গায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে গেল, তার জন্যে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা আমরা জানিয়ে রাখছি। কালের প্রবাহ ধরে রাখার জন্যে আমরা সেকালের লেখকদের সেকালের ভাষাটিকেই যথাযথ অনুসরণ করবার চেষ্টা করেছি।
নানান কারণে এই সংকলনে সম্মানিত অনেক লেখকেরই লেখা আমরা ছাপতে পারলাম না। এই ত্রুটি সংকলনটিকে যেমন সম্পূর্ণতা দিল না, তেমনি প্রচণ্ড ক্ষোভেরও কারণ ঘটালো আমাদের মনে। স্ফীত আয়তনের এই সংকলন প্রকাশে লেখকরা কিংবা তাঁদের উত্তরাধিকারীরা প্রায় সকলেই সমান আগ্রহে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় শ্রীসুকুমার সেন মশাই লিখে দিয়েছেন একটি মূল্যবান মুখবন্ধ। এঁদের প্রত্যেকের কাছেই আমরা অশেষ ঋণী। গল্প সংগ্রহ ও প্রুফ সংশোধনে সহায়তা করে বিশেষভাবে ঋণী করেছেন শ্রীমতী বীথি চট্টোপাধ্যায়।
রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়
সিদ্ধার্থ ঘোষ
Leave a Reply