কবিতাসমগ্র ১ – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রথম সংস্করণ – জানুয়ারি ১৯৯২
প্রচ্ছদ – সুনীল শীল
.
প্রকাশিত হল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কবিতাসমগ্র’র প্রথম খণ্ড, যার মধ্যে গ্রথিত হয়েছে তাঁর ছ’টি কাব্যগ্রন্থ : ‘একা এবং কয়েকজন’, ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’, ‘বন্দী, জেগে আছো’, ‘আমার স্বপ্ন’, ‘সত্যবদ্ধ অভিমান’ ও ‘জাগরণ হেমবর্ণ’। বাংলা কবিতার যাঁরা প্রেমিক পাঠক, তাঁদের কাছে এ এক মস্ত খবর সন্দেহ নেই। কেননা, বাংলা কথাসাহিত্যের সেরা একজন লেখক যিনি, সেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যে বাংলা কবিতারও এক অতিশক্তিমান স্ৰষ্টা, তা কে না জানে।
এই কথাটাও সবাই জানে যে, পঞ্চাশের দশকে ‘কৃত্তিবাস’ নামক যে আন্দোলন একদিন বাংলা কবিতার মোড় একেবারে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল, সুনীলই ছিলেন তার নেতৃস্থানীয় কবি। পাঠক, সমালোচক—সবাই সেদিন অবাক মেনেছিলেন। সবাই লক্ষ করেছিলেন যে, এই কবি কোনও পুরনো কথা শোনাচ্ছেন না; তিনি যা কিছু লিখছেন, তারই ভিতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এক ঝলক টাটকা বাতাস, আর সেই বাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে এমন এক সৌরভ, যা তার আগে পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
কথাসাহিত্য ও কবিতার দাবি একই সঙ্গে মেটানোর কাজটা বড় শক্ত। এ কাজ সবাই পারে না। সুনীল যে পেরেছেন, তার কারণ বোঝা কঠিন নয়। যৎপরোনাস্তি সফল একজন কথাসাহিত্যিক হয়েও এই সরল সত্য তিনি কখনও বিস্মৃত হননি যে, মূলত তিনি কবিই, এবং গদ্য নয় কবিতাই তাঁর প্রথম প্রেম। সেই প্রেমের দাবি আজও তিনি সমানে মিটিয়ে যাচ্ছেন, এবং অসামান্য সব উপন্যাস ও গল্পের সঙ্গে-সঙ্গে লিখে যাচ্ছেন এমন অনেক কবিতা, পাঠকের আগ্রহকে যা নিমেষে অধিকার করে নেয়।
তাঁর ‘কবিতাসমগ্র’র এই প্রথম খণ্ডেও রয়েছে এমন বহু কবিতা, যার নানা পঙক্তি একদিন পাঠকদের মুখে-মুখে ফিরত। এমন কবিতা, দু’দিন বাদেই যা বাসী হয়ে যায় না, যা চিরকালই নতুন থেকে যায়।
.
ভূমিকা
বেশ কিছুদিন আগে আমার কবিতার বইগুলি কাব্যসংগ্রহ নামে প্রকাশিত হতে শুরু করে এবং দুটি খণ্ড প্রকাশের পর থেমে যায়। এখন সেগুলিই আবার নতুন ভাবে সামঞ্জস্য করে খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম যে খণ্ডটি কবিতাসমগ্র নামে প্রকাশিত হচ্ছে, তার অন্তর্ভুক্ত কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে ‘সত্যবদ্ধ অভিমান’ নামে বইটির আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘যুগলবন্দী’ নামে যে-সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছিল, তার একটি অংশের নাম ছিল ‘সত্যবদ্ধ অভিমান’। পরে ঐ সংকলনের কিছু কিছু কবিতা অন্য কাব্যগ্রন্থে যুক্ত হয়েছে, সেগুলি বাদ দিয়ে অন্য কবিতাগুলি এখানে স্থান পেয়েছে।
.
কাব্যপরিচয়
একা এবং কয়েকজন
পৌষ ১৩৬৪ সালে সাহিত্য প্রকাশক (২২ শ্যামপুকুর স্ট্রীট, কলকাতা ৪) থেকে প্রকাশ করেন সমীর রায়চৌধুরী। কবিতার সংখ্যা ৪৮, দাম ২ টাকা, পৃষ্ঠা ৬৪, বোর্ড বাঁধাই। প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী। ‘আমার প্রিয় কবিদের প্রতি উৎসর্গীকৃত। পরে (আষাঢ়, ১৩৮১) সম্পূর্ণ বইটি বিশ্ববাণী প্রকাশনীর ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাব্যসংগ্রহ’ সংকলনে প্রকাশিত হয়। বইটির পুনর্মুদ্রণ হয়নি।
আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি
মধ্যচৈত্র ১৩৭২-এ কৃত্তিবাস প্রকাশনী (৩২/২-যোগীপাড়া রোড, কলকাতা ২৮) থেকে প্রকাশ করেন শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়। ৭১টি কবিতার এই বই উৎসর্গ করা হয় ‘সমীর রায়চৌধুরী-কে’। পৃষ্ঠাসংখ্যা ৯৬, বোর্ড বাঁধাই, দাম ৩ টাকা ৫০ প। প্রচ্ছদশিল্পীর নাম উল্লেখ নেই। দ্বিতীয় সংস্করণ ‘নতুন (বি) সংস্করণ’ হিসাবে প্রকাশিত হয় বিশ্ববাণী প্রকাশনী থেকে, জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৯-এ। এই সংস্করণটিতেও প্রচ্ছদশিল্পীর নাম নেই। পৃষ্ঠাসংখ্যা ৯০। দাম ৫ টাকা। প্ৰথম সংস্করণে একটি ছোট ভূমিকা ছিল, সেটি দ্বিতীয় সংস্করণেও ছাপা হয়। ভূমিকাটি এই : অনেক কবিতার কপি হারিয়ে গেছে। আট বছর আগে বেরিয়েছিল আমার প্রথম কবিতার বই। তার পর ছাপা যতগুলি কবিতার কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, সেগুলি টেবিলের উপর নিয়ে বসেছিলাম। অসীম ধৈর্যের সঙ্গে ওষ্ঠাধর সঙ্কুচিত করে পড়তে হয় নিজের পুরনো কবিতা। যেগুলি পছন্দ হয় না ও শরীর রি-রি করে, সেগুলি মাটিতে ফেলে দিই। ক্রমে আমার ঘরময় বিবর্ণ কাগজ উড়তে থাকে, ঘরের মেঝেতে ও হাওয়ায় ব্যর্থ কবিতা ছড়িয়ে যায়। টেবিলে যখন আর তিন-চারটি মাত্র বাকি, তখন থেমে যাই, খুব ক্লান্ত ও অসহায় লাগে, অবশ ভয় হয়, এত বেশি ব্যর্থতায় নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেও সন্দেহ জাগে। কেউ দেখছে না এই জেনে, পরাজিত ভঙ্গিতে, ঘাড় হেঁট করে মাটি থেকে আবার অনেকগুলি কাগজ তুলে আনি।
জানি, যে-কবিতা আমি লিখতে চাই, এখনো তার মর্ম স্পর্শ করতে পারিনি। আমি কবিতায় সত্যি কথা লিখতে গিয়ে দেখেছি, পৃথিবীর সত্য প্রতিনিয়ত বদলে যায়। এখানে আমার ধারাবাহিক ভুলগুলি। যে-কবিতা জীবনের, সে-কবিতার জন্য জীবনকে যোগ্য করে নিতে হবে। এ জীবন সজ্ঞানে, আত্মত্যাগে নয়, সর্বগ্রাসে সর্বভুক কবিতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি না পারে, তবে কবিতা লেখা ছেড়ে, সেই দিকভ্রান্ত জীবন তখন নিজেকে নিয়ে কী করবে জানিনা।
বন্দী, জেগে আছো
ফাল্গুন ১৩৭৫-এ অরুণা প্রকাশনী (৭ যুগলকিশোর দাস লেন, কলকাতা ৬) থেকে প্রকাশ করেন বিভাসচন্দ্র বাগচী। উৎসর্গ ‘নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শ্রদ্ধাস্পদেষু। কবিতার সংখ্যা ৪৬, পৃষ্ঠাসংখ্যা ৬৪, বোর্ড বাঁধাই, দাম ৩ টাকা ৫০ প। প্রচ্ছদ পূর্ণেন্দু পত্রীর আঁকা। বইটির পরিবেশক : সিগনেট বুকশপ।
আমার স্বপ্ন
এপ্রিল ১৯৭২-এ আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড (৪৫ বেনিয়াটোলালেন কলকাতা ৯) থেকে ফণিভূষণ দেব প্রকাশ করেন। উৎসর্গ ‘দেবারতি মিত্র, বেলাল চৌধুরী, সুব্রত রুদ্র-কে আমার বিনীত উপহার’। কবিতার সংখ্যা ৪০, পৃষ্ঠা ৮+৫৬। দাম ৩ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী।
সত্যবদ্ধ অভিমান
শ্রাবণ ১৩৭৯-এ ময়ূখ বসু বেঙ্গল পাবলিশার্স লিমিটেড (১৪ বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রীট, কলকাতা ১২) থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা এবং কবিতাসংক্রান্ত দুটি গদ্যরচনা নিয়ে প্রকাশ করেন ৭২ পৃষ্ঠার বই ‘যুগলবন্দী। বইটি দুটি আলাদা নামে বিভক্ত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা-অংশের নাম ‘সত্যবদ্ধ অভিমান’। এই নামে কবির আলাদা কোনও বই নেই। এখানে ২১টি কবিতার সঙ্গে ‘কবিতার সুখদুঃখ’ নামে একটি নিবন্ধ ছিল। প্রচ্ছদশিল্পী গৌতম রায়। দাম ৩ টাকা ৫০ প.। বইটি উৎসর্গ করা হয় ‘দু’জনের প্রিয় বন্ধু সুনন্দ গুহঠাকুরতা-কে’।
জাগরণ হেমবর্ণ
২৫ বৈশাখ ১৩৮১ তারিখে অরুণা প্রকাশনী (৭ যুগলকিশোর দাস লেন, কলকাতা ৬) থেকে অরুণা বাগচী প্রকাশ করেন। উৎসর্গ ‘বুদ্ধদেব বসু স্মরণে’। প্রচ্ছদশিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী। মোট ৪৩টি কবিতা। পৃষ্ঠা ৬৪। বোর্ড বাঁধাই। দাম ৪ টাকা ৫০ প। পরিবেশক : সিগনেট বুকশপ।
Leave a Reply