আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।
And when My slaves ask you (O Muhammad SAW) concerning Me, then (answer them), I am indeed near (to them by My Knowledge). I respond to the invocations of the supplicant when he calls on Me (without any mediator or intercessor). So let them obey Me and believe in Me, so that they may be led aright.
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُواْ لِي وَلْيُؤْمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
Wa-itha saalaka AAibadee AAannee fa-innee qareebun ojeebu daAAwata alddaAAi itha daAAani falyastajeeboo lee walyu/minoo bee laAAallahum yarshudoona
YUSUFALI: When My servants ask thee concerning Me, I am indeed close (to them): I listen to the prayer of every suppliant when he calleth on Me: Let them also, with a will, Listen to My call, and believe in Me: That they may walk in the right way.
PICKTHAL: And when My servants question thee concerning Me, then surely I am nigh. I answer the prayer of the suppliant when he crieth unto Me. So let them hear My call and let them trust in Me, in order that they may be led aright.
SHAKIR: And when My servants ask you concerning Me, then surely I am very near; I answer the prayer of the suppliant when he calls on Me, so they should answer My call and believe in Me that they may walk in the right way.
KHALIFA: When My servants ask you about Me, I am always near. I answer their prayers when they pray to Me. The people shall respond to Me and believe in Me, in order to be guided.
১৮৬। যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো প্রকৃতই [তাদের] অতি নিকটে। যখন আহবানকারী আমাকে ডাকে, আমি প্রত্যেক আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক; যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে; ১৯৪।
১৮৭। সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হলো। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ [স্বরূপ], তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ [স্বরূপ] ১৯৫। আল্লাহ্ জানেন তোমরা পরস্পরের সঙ্গে গোপনে যা করতে। কিন্তু তিনি তোমাদের দিকে ফিরেছেন এবং ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তাদের সাথে সঙ্গত হও, এবং আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর ১৯৬। এবং আহার কর এবং পান কর যতক্ষণ না ঊষার শুভ্র রেখা রাত্রির কৃষ্ণরেখা থেকে স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত হয় ১৯৭। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর ১৯৮। কিন্তু মসজিদে ই’তিকাফের সময়ে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সঙ্গত হয়ো না ১৯৯। এগুলি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা। সুতরাং এগুলির নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ্ মানব জাতির নিকট তাঁর নিদর্শনাবলী সুস্পষ্ট করেন; যেনো তারা আত্মসংযম শিক্ষা লাভ করে।
১৯৪। আয়াত [২:১৮৬] এবং আয়াত [২:১৮৮] দু’টি রমজানের রোজার সাথে সংশ্লিষ্ট, ১৮৬ তে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে রমজানের আধ্যাত্মিক দিকটির প্রতি। রোজা সংক্রান্ত ইবাদতে অবস্থা বিশেষে অব্যহতি দান এবং বিভিন্ন সহজতা সত্ত্বেও কিছু কষ্ট বিদ্যমান রয়েছে। এ কষ্টকে সহজ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্র বিশেষ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, আমি বান্দাদের সন্নিকটে রয়েছি। আল্লাহ্ আমাদের প্রার্থনার জবাবে তাঁর সান্নিধ্যের আশ্বাস দিচ্ছেন। এর থেকে বড় পাওয়া আর বান্দার জীবনে কি হতে পারে? আয়াত [২:১৮৮] তে বলা হচ্ছে যে, অন্যায়ভাবে যেন অন্যের সম্পত্তি গ্রাস না করি অর্থাৎ হারাম খাবার না খাই।
১৯৫। এই আয়াতটি থেকে বোঝা যায় ইসলামে নারী ও পুরুষকে আল্লাহ্ সমান মর্যাদা দিয়েছেন। নারী ও পুরুষ একে অপরের ভূষণ। অর্থাৎ পরস্পরের বন্ধু, সুখে-দুঃখে পরস্পরের অংশীদার, বিপদে-আপদে পরস্পরের সান্ত্বনা ও অবলম্বন। অর্থাৎ একে অপরের সম্পূরক বা অংশ। পোষাক যেরূপ শরীরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্কও তাই, একে অপরের পোষাকের ন্যায়। কেউই বড় নয় বা কেউই ছোট নয়। এখানে পোষাকের উপমা দেয়া হয়েছে কারণ পোষাকের ব্যবহার হচ্ছে লজ্জা নিবারণ ও সৌন্দর্য্যবৃদ্ধির জন্য। ঠিক সেরকম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদ সবকিছুতে পরস্পর সমতার ভিত্তিতে জীবনের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও বাহিরের নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে আত্মরক্ষা করা। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে সমঝোতার (Mutuality) ভিত্তিতে।
স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে সহবাসের প্রশ্নটিও এসে যায়। এটা অত্যন্ত জটিল ব্যাপার, তাই আল্লাহ্র হুকুম হচ্ছে এ ব্যাপারে সততা এবং স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গীর (Openness) আশ্রয় নিতে। মিথ্যা এবং আত্মবঞ্চনাকে পরিহার করতে বলা হয়েছে। যৌন অনুভূতিকে খাদ্য এবং পানীয় এর সাথে এক শ্রেণীভূক্ত করা হয়েছে। কারণ খাদ্য, পানীয় এবং যৌন অনুভূতি এ তিনটিই পশু এবং মানুষ উভয়েরই মধ্যে সমভাবে বর্তমান। সুতরাং এ তিনটি প্রবৃত্তিকে পশু প্রবৃত্তি বলা চলে। সুতরাং রমজান মাসে দিনের বেলায় এই প্রবৃত্তিগুলিকে অবদমিত রাখতে হবে, তবে রাতের বেলায় এসবে নিষেধ নাই এবং এর জন্য লজ্জিত হওয়ার কোন কারণ নাই। কারণ প্রবৃত্তির জন্য আমরা দায়ী নই। এটা আল্লাহ্ প্রদত্ত। আমাদের প্রতি আল্লাহ্ আদেশ দিয়েছেন প্রবৃত্তি ও রিপুসমূহকে নিজের আয়ত্বে আনতে। আমরা যেনো প্রবৃত্তি ও রিপুর দাস না হই। তাই রমজানের একমাস এর চর্চা হয়।
১৯৬। ‘এবং আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর’। এই লাইনটি সম্বন্ধে বিভিন্ন মতবাদ আছে। বিভিন্ন অনুবাদক একে বিভিন্ন ভাবে অনুবাদ করেছেন। কেহ কেহ বলেন এর অর্থ এই যে ঊষা সমাগমের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার এবং যৌনসঙ্গম বৈধ। আবার অনেকের মতে এর অর্থ হচ্ছে তোমাদের জন্য যা বৈধ করা হয়েছে তা ভোগ কর এবং রোজার যা মূল উদ্দেশ্য তার অনুসন্ধান কর। রোজার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রিপুর দমন করা যাতে আত্মার উন্নতি লাভ ঘটে, ফলে আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভ সহজ হয়। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের চেষ্টা করাই হচ্ছে রোজার মূল উদ্দেশ্য।
১৯৭। যারা প্রকৃতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত তারা জানে, প্রতুষ্যের রূপমাধুর্য কী মনোহর। প্রথমে দেখা দেয় পূর্বদিগন্তে সাদা অনির্দিষ্ট আলোকের চিকন চিকন রেখা তারপর একটি অন্ধকার সবকিছু গ্রাস করে ফেলে, পরে এই অন্ধকারের বুক চিরে ধীরে ধীরে দেখা দেয় একটি রক্তিমাভ সাদা সুনির্দিষ্ট আলোক রেখা। এটিই হচ্ছে সত্যিকার প্রভাত বা ‘সুবহ্ সাদিক’। এরপর থেকেই রোজার সময় শুরু হয়।
১৯৮। ‘নিশাগম’ আরবীতে এই অর্থই হয়। তবে রাসূলের (সাঃ) শিক্ষা ও প্রত্যক্ষ রোজা রাখার নিয়ম থেকে জানা যায় যে এর সঠিক অর্থ হবে, ‘সূর্যাস্ত পর্যন্ত’।
১৯৯। এই আয়াতটি দ্বারা ‘ইহ্তিকাফ’ এর উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে মসজিদে অবস্থান করে এবাদত বন্দেগীতে মশগুল হওয়া। আমাদের নবী (সাঃ) রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদেই অবস্থান করতেন।