৯. হোটেলে আত্মহত্যা

॥ ৯ ॥

টাইম্‌সের বিজ্ঞাপনের ফল যে মিস্টার ক্রিপ্‌স-এর আসাতেই শেষ হয়ে গেল তা নয়। কেমব্রিজ যাবার পরদিনই ফেলুদা টেলিফোন পেল এক ভারতীয় ভদ্রলোকের কাছ থেকে—নাম সত্যনাথন। মাদ্রাজী, তাতে সন্দেহ নেই। ভদ্রলোক বললেন পিটার ডেক্সটর সম্বন্ধে কিছু তথ্য তিনি দিতে পারেন। ‘আমি এগারোটা নাগাদ তোমাদের হোটেলে পৌঁছতে পারি।’

‘খুব ভালো কথা,’ বলল ফেলুদা, ‘চলে আসুন।’

সত্যনাথন কথা মতো এলেন। বেশ গাঢ় কালো রং, মাথার চুল একেবারে সাদা। একটা চেয়ারে বসে বললেন, ‘বিজ্ঞাপনটা পড়েই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব ভেবেছিলাম, কিন্তু কয়েকটা কাজে একটু আটকা পড়ে গিয়েছিলাম।’

‘আপনি লন্ডনেই থাকেন?’

‘না। কিলবার্নে। এখান থেকে বেশি দূর নয়। ওখানে একটা ইস্কুলে মাস্টারি করি। পিটার ডেক্সটরের সঙ্গে একসঙ্গে আমি কেমব্রিজে ছিলাম।’

‘তার মানে রঞ্জন মজুমদারও আপনার সহপাঠী ছিল?’

‘তাত বটেই।’

‘তাকে মনে আছে?’

‘স্পষ্ট। পিটারের খুব বন্ধু ছিল। অবিশ্যি দু’জনের মধ্যে ঝগড়াও হত প্রায়ই।’

‘কী নিয়ে?’

‘পিটার ভারতীয়দের একেবারে পছন্দ করত না। রঞ্জনকে দেখে একেবারে সাহেব বলে মনে হত, তাই পিটার তাকে বন্ধু হিসেবে মেনে নেয়। বলত—ইউ আর নট ইন্ডিয়ান, ইউ আর হাফ ইংলিশ।’

‘আপনার সঙ্গে পিটারের কিরকম সম্পর্ক ছিল?’

‘আমার গায়ের রং ত দেখতেই পাচ্ছেন। আমাকে সে বহুবার ডার্টি নিগার বলে সম্বোধন করেছে। আমি ব্যাপারটা হজম করে নিতাম।’

‘পিটারের মৃত্যুর কথা মনে আছে?’

‘তা থাকবে না? এমন কি দিনটাও মনে আছে—হুইট-সানডের আগের দিন। পিটার যখন সাঁতার জানত না তখন ওর নৌকোয় চড়া অত্যন্ত ভুল হয়েছিল।’

‘ওর সঙ্গে আর কে ছিল?’

‘রঞ্জন।’

‘সে বিষয় আপনি নিশ্চিত?’

‘অ্যাবসোলিউটলি। রঞ্জনের সর্বাঙ্গ জলে ভেজা চেহারাটা এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে। আমি তখন আমার ঘরে ছিলাম। আমাদের মালি হুকিন্‌সের চেঁচামেচিতে বাইরে বেরিয়ে এসে সব ব্যাপারটা জানতে পারি। রঞ্জন তার বন্ধুকে বাঁচাবার জন্যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাট ইট ওয়জ টু লেট। রেজিন্যাল্ডও চেষ্টা করেছিল দাদাকে বাঁচাতে, কিন্তু পারেনি।’

‘পিটারের পরের ভাই?’

‘হ্যাঁ। সে আমাদের পরের বছরই কেমব্রিজে ভর্তি হয়। সেই একই ছাঁচে ঢালা। ভারতীয়দের সঙ্গে প্রায়ই হাতাহাতি লেগে যেত। অনেকবার ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। রেজিন্যাল্ডের ধারণা ছিল রঞ্জন ইচ্ছা করলে পিটারকে বাঁচাতে পারত। এই কথা সে সারা কলেজে বলে বেড়াত—“হি ডেলিবারেটলি লেট হিম ড্রাউন।”’

‘রঞ্জন মজুমদার ত এক বছরের বেশি কেমব্রিজে পড়েনি?’

‘না। একটা বাইসিক্‌ল অ্যাক্সিডেন্টের পর সে দেশে ফিরে যায়।’

কথা শেষ, তাই সত্যনাথন উঠে পড়লেন। ওঁর কাছ থেকে একটা মুল্যবান তথ্য জানা গেল—নৌকোতে পিটারের সঙ্গে রঞ্জন ছিলেন, আর তিনি বন্ধুকে বাঁচাতে চেষ্টা করে পারেননি।

সত্যনাথন চলে যাবার পর থেকেই লক্ষ করলাম ফেলুদার ভুরুটা কুঁচকে গেল। লাঞ্চ খেতে খেতে লালমোহনবাবু বললেন, ‘আপনাকে যেন ডিস্‌স্যাটিসফায়েড বলে মনে হচ্ছে। কারণটা জানতে পারি কি?’

‘একটা ব্যাপারে খট্‌কা লাগছে।’

‘কী?’

‘মনে হচ্ছে হুকিন্‌স যা বলেছে তার চেয়ে বেশি ও জানে এবং ওর মনে আছে। কোনো একটা কারণে তথ্য লুকিয়ে যাচ্ছে।’

‘তা হলে কী করবেন?’

‘আরেকবার কেমব্রিজ যাওয়া দরকার। এবারে হুকিন্‌সের বাড়ি। রাস্তার নামটা ও বলেছিল। মনে আছে, তোপশে?’

মনে ছিল। বললাম, ‘চ্যাটওয়র্থ স্ট্রীট।’

‘ভেরি গুড। কেমব্রিজ গিয়ে রাস্তার একটা পুলিশকে জিজ্ঞেস করলেই বাতলিয়ে দেবে। এটাও জেনে রাখুন, লালমোহনবাবু—এখানকার পুলিশ, যাকে এরা বলে “ববি”—এদের মতো হেল্‌পফুল পুলিশ পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।’

লাঞ্চের পর ফেলুদা বলল ওর একটা কাজ আছে, ও একটু বেরোবে। ও ফিরলে তারপর আমরা কেমব্রিজ যাবো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় কেমব্রিজের ট্রেন ছাড়ে—কোনো অসুবিধা নেই।

সাড়ে চারটায় রওনা হয়ে আমরা যখন কেমব্রিজে পৌঁছলাম, তখন রাস্তার বাতি জ্বলে গেছে। আমরা একটা বড় রাস্তা ধরে এগিয়ে একটা পুলিশের কাছে গিয়ে হাজির হলাম।

‘চ্যাটওয়র্থ স্ট্রীট কোথায় বলতে পার?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল। পুলিশ প্রায় কাগজে নকশা আঁকার মতো করে বুঝিয়ে দিল।

আধঘণ্টা লাগল চ্যাটওয়র্থ স্ট্রীট পৌঁছতে। এটাকে গলি বললেই চলে, দেখে বোঝা যায় যে খুব অবস্থাসম্পন্ন লোকেদের পাড়া নয়। এটা বাড়ির সামনে একজন লোক রাস্তা থেকে একটা বেড়ালকে তুলে কোলে নিল। তাকেই ফেলুদা জিজ্ঞেস করল হুকিন্‌স কোন বাড়িতে থাকে।

‘ফ্রেড হুকিন্‌স?’ ভদ্রলোক বললেন। ‘নাম্বার সিক্সটীন।’

এখানে সব বাড়ির বাইরেই নম্বর লেখা থাকে, তাই যোল খুঁজে পেতে সময় লাগল না। এগিয়ে গিয়ে দরজায় নক্‌ করতে হুকিন্‌স নিজেই দরজা খুলল।

‘গুড ঈভনিং,’ বলল ফেলুদা।

আমাদের দেখে হুকিন্‌সের মুখ হাঁ হয়ে গেছে। ‘সে কি—তোমরা আবার…?’

‘একটু ভিতরে আসতে পারি?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।

‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।’

হুকিন্‌স এক পাশে সরে দাঁড়িয়ে আমাদের ঢোকবার জায়গা করে দিল। আমরা তিনজনে ঢুকলাম। এটাই বসবার ঘর, যদিও আয়তনে খুবই ছোট। আমরা দুটো চেয়ারে আর একটা সোফায় ভাগাভাগি করে বসলাম।

‘ওয়েল?’

ফেলুদার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিলে হুকিন্‌স।

‘তোমাকে দু’ একটা প্রশ্ন করার ছিল।’

‘অ্যাবাউট দ্য ড্রাউনিং?’

‘হ্যাঁ।’

‘আমি যা বলেছি তার বেশি ত আর কিছু জানি না।’

‘আমি নতুন প্রশ্ন করব।’

‘কী?’

‘মিস্টার হুকিন্‌স, যে নৌকো ধীরে চলছে, তাতে কেউ বসা অবস্থায় জলে পড়ে যেতে পারে এটা কি তোমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?’

‘যদি ঝড় থাকে তা হলে নৌকো নিশ্চয়ই উলটে যেতে পারে। দেয়ার ওয়জ এ হাই উইন্ড দ্যাট ডে।’

‘আমি আজই দুর্ঘটনার পরের দিনের খবরের কাগজ দেখেছি। তাতে পিটার ডেক্সটরের মৃত্যু সংবাদ আছে, কিন্তু ঝড়ের কোনো খবর নেই। ওয়েদার রিপোর্টে বলছে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৫ মাইল। সেটাকে কি তুমি হাই উইন্ড বলবে?’

হুকিন্‌স চুপ। ঘরে একটা টেবিল ক্লকের টিক্ টিক্ শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।

ফেলুদা বলল, ‘আমার ধারণা তুমি একটা কিছু লুকোচ্ছ। সেটা কী দয়া করে বলবে?’

‘এতদিন আগের ঘটনা…’

‘কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যে দু’জনকে নিয়ে ঘটনা, তার মধ্যে একজন ত তোমার বেশ কাছের লোক ছিল বলে মনে হচ্ছে।’

হুকিন্‌স ফেলুদার দিকে চাইল। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে তার দৃষ্টিতে সংশয় ঘনিয়ে আসছে।

‘হোয়াট ডু ইউ মীন?’

‘তোমার শেল্‌ফে আমি অনেকরকম জিনিসের মধ্যে একটা পিতলের গণেশ আর একটা আইভরির বুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি। ওগুলো কি করে পেলে জানতে পারি কি?’

‘রন দিয়েছিল আমাকে।’

‘রন মানে বোধ করি রঞ্জন।’

‘ইয়েস। ওকে আমি রনও বলতাম, জনও বলতাম।’

‘আই সী। এবার একটা কথা বল—পিটারের হেল্‌প হেল্‌প চিৎকারের আগে তুমি ওদের কোনো কথা শোননি? ইন্ডিয়ান গডদের সামনে মিথ্যা কথা বলা কিন্তু মহাপাপ।’

‘কী কথা বলছিল বুঝিনি—আই ওনলি হার্ড দেয়ার ভয়েসেস।’

‘তার মানে ওরা বেশ জোরে কথা বলছিল?’

‘পারহ্যাপ্‌স…পারহ্যাপ্‌স…’

‘আমার কী বিশ্বাস জান?’

হুকিন্‌স আবার ফেলুদার দিকে দেখল।

‘হোয়াট?’

‘আমার বিশ্বাস ওদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। পিটার দাঁড়িয়ে উঠেছিল, আর—’

‘ইয়েস, ইয়েস!’ হুকিন্‌স হঠাৎ বলে উঠল। ‘আর ও রনকে আক্রমণ করতে যায়, আর টাল সামলাতে না পেরে জলে পড়ে যায়।’

‘তার মানে পিটার তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী?’

‘অফ কোর্স!’

‘তোমাদের এই যে ক্যাম নদী, আমাদের দেশে এটাকে বলে কেন্যাল। এতে একটা লোক সাঁতার না জানলেও এত সহজে ডুবে যেতে পারে—বিশেষ করে যখন তাকে একজন বাঁচাবার চেষ্টা করছে?’

‘ডুবল যে সে ত চোখের সামনে দেখলাম।’

‘তুমি এখনো সত্যি কথা বলছ না, মিস্টার হুকিন্‌স। আই ওয়ান্ট দ্য ট্রুথ। আমি এত দূর থেকে এসেছি শুধু এই ট্রুথের সন্ধানে। পিটার কেন এত সহজে ডুবে গেল?’

হুকিন্‌সকে দেখেই বুঝতে পারছিলাম যে সে ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছে। এবার সে হঠাৎ ভেঙে পড়ে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি বলছি কেন পিটার ডুবে যায়। তার কারণ ও যখন জলে পড়ে তখন ওর জ্ঞান ছিল না।’

‘জ্ঞান ছিল না?’

ফেলুদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে হুকিন্‌সের দিকে। তারপর চাপা স্বরে বলল, ‘বুঝেছি। নৌকো বাইছিল রঞ্জন, তাই না?’

‘ইয়েস।’

‘তার মানে তার হাতে দাঁড় ছিল।’

‘ইয়েস।’

‘অর্থাৎ একটা অস্ত্র ছিল, যেটা দিয়ে সে পিটারকে আঘাত করে। তার ফলে পিটার সংজ্ঞা হারিয়ে জলে পড়ে যায়। অর্থাৎ সে কোনো স্ট্রাগ্‌লই করেনি। আর রঞ্জন যে তাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিল সেটা একটা অভিনয়। অর্থাৎ রঞ্জনই পিটারের মৃত্যুর জন্য দায়ী।’

হুকিন্‌স মাথা চাপড়ে বলল, ‘আমি তোমাদের আঘাত দিতে চাইনি। তাই সত্য গোপন করছিলাম। রঞ্জনের জায়গায় আমি থাকলে আমিও ওরই মতো করতাম। পিটার ওকে অশ্রাব্য ভাষায় গাল দিচ্ছিল। বলছিল তোমার চামড়া সাদা হলে কী হবে, আঁচড় কাটলেই দেখা যাবে নিচে কালো। ইউ আর নাথিং বাট এ ডার্টি ব্ল্যাক নেটিভ। এতে কার মাথা ঠিক থাকে বলো!’

‘তুমি ছাড়া এই ঘটনার সাক্ষী আর কেউ ছিল?’

‘ইয়েস। ওনলি ওয়ান।’

‘কে?’

‘রেজিন্যান্ড।’

‘রেজিন্যাল্ড ডেক্সটর?’

‘আমরা দু’জন একসঙ্গেই বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম। সমস্ত ঘটনাটাই আমরা দু’জন একসঙ্গে দেখি। পরে আমি রনকে বাঁচাবার জন্যে বলেছিলাম পিটার রনকে আক্রমণ করতে গিয়ে জলে পড়ে যায়। এদিকে রেজিন্যান্ড অনবরত সত্যি ঘটনাটা বলে বেড়াচ্ছিল। সৌভাগ্যক্রমে সকলেই জানত যে রেজিন্যাল্ড ইন্ডিয়ানদের ঘৃণা করে, তাই তার কথা কেউ বিশ্বাস করেনি। থ্যাঙ্ক গড ফর দ্যাট—রন ওয়জ সাচ এ নাইস বয়, সো জেনারাস, সো কাইন্ড।’

‘এ ব্যাপারে তদন্ত হয়নি? ইনকুয়েস্ট হয়নি?’

‘হয়েছিল বৈ কি।’

‘তুমি সাক্ষী দিয়েছিলে?’

‘ইয়েস।’

‘মিথ্যে সাক্ষী ত?’

‘তা বটে। আই ওয়জ ডিটারমিন্‌ড টু সেভ রঞ্জন। সেও অবশ্য সাক্ষী দিয়েছিল। আমি যা বলেছিলাম, সেও তাই বলেছিল।’

‘আর রেজিন্যাল্ড? সে সাক্ষী দেয়নি?’

‘হ্যাঁ—এবং সে সত্যি ঘটনাই বলেছিল। তবে তার কথায় ভারতীয় বিদ্বেষ এত প্রকাশ পাচ্ছিল যে জুরি তার কথা বিশ্বাস করেনি। তারা রায় দিয়েছিল ডেথ ব্যাই অ্যাক্সিডেন্ট।’

ফেলুদা উঠে পড়ল।

‘থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার হুকিন্‌স। আমার আর কোনো প্রশ্ন নেই।

হোটেলে ফিরলাম ডিনারের ঠিক আগে। রিসেপশন থেকে ঘরের চাবি নিচ্ছি, এমন সময় একজন কর্মচারী ফেলুদার দিকে চেয়ে বলল, ‘মিস্টার মিটার?’

‘ইয়েস।’

‘তোমার একটি টেলিগ্রাম আছে।’

ফেলুদা টেলিগ্রামটা নিয়ে খুলে পড়ল। পাঠিয়েছেন রঞ্জন মজুমদার। তিনি বলছেন—‘ক্যান রিকল এভরিথিং। রিটার্ন ইমিডিয়েটলি।’

‘পারফেক্ট টাইমিং,’ বলল ফেলুদা। ‘এখানের মামলা শেষ, কাল আমাদের রিটার্ন বুকিং, আর মিস্টার মজুমদারের স্মৃতি ফিরে এসেছে।’

প্লেনেই ফেলুদা বলছিল যে দমদম থেকে সোজা মিস্টার মজুমদারের বাড়ি যাব। আমরা কলকাতায় পৌঁছাচ্ছি দুপুর একটা পাঁচে।

মনে গভীর উৎকণ্ঠা। রঞ্জনবাবু জানেন তিনি খুন করেছিলেন; এখন তিনি কী করবেন?

আমাদের ফেরার তারিখ আর সময় আগে থেকেই জানা ছিল, তাই লালমোহনবাবুর গাড়ি এয়ারপোর্টে হাজির ছিল।

রোল্যান্ড রোডে পৌঁছে বুকটা ধক্‌ করে উঠল। রঞ্জনবাবুর বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি কেন?

গাড়ি থেকে নেমে গেটের ভিতর ঢুকতেই আমাদের চেনা ইনস্পেকটর মণ্ডল গম্ভীর মুখে এগিয়ে এলেন।

‘আজ সকাল আটটায় ব্যাপারটা ঘটেছে।’

‘কী ব্যাপার?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।

‘মিস্টার মজুমদার খুন হয়েছেন। সকালে নাকি একজন সাহেব এসেছিল ওঁর সঙ্গে দেখা করতে। সে কে তা জানা যায়নি। আপনি কোনো এনকোয়ারি করবেন?’

‘না।’

পরদিন সকাল সাড়ে সাতটায় লালমোহনবাবু এসে হাজির। ভদ্রলোক অত্যন্ত উত্তেজিত।

‘পাঁচ নম্বরের পাতার খবরটা দেখেছেন?’

‘কোন কাগজ?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।

‘স্টেটসম্যান—আবার কোন কাগজ।’

‘না, এখনো দেখিনি।’

‘প্রথম পাতায় ত মজুমদারের খবরটা রয়েছে—এবার পাঁচের পাতা দেখুন।’

ফেলুদা কাগজটা নিয়ে পাঁচের পাতা খুলল। ‘নিচে বাঁ দিকে,’ বললেন জটায়ু।

খবরটা বার করে ফেলুদা পড়ে শোনাল। তার বাংলা করলে এই দাঁড়ায়—

॥ হোটেলে আত্মহত্যা ॥

সদর স্ট্রীটের একটি হোটেলে গতকাল রাত্রে গুলির আওয়াজ পেয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায় সাত নম্বর ঘরে একটি সাহেব মৃত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন। তাঁর হাতে রিভলভার। হোটেলের খাতা থেকে জানা যায় সাহেবের নাম রেজিন্যাল্ড ডেক্সটর। ইনি এসেছিলেন দার্জিলিং-এর নিকটবর্তী খয়রাবাড়ি চা বাগান থেকে।

——

|| সমাপ্ত ||