ক্রমেই গতি বাড়ছে পিকআপের। মাটিতে গভীর খাঁজ, অনেকটা রেল লাইনের মত কাজ করছে। তাতে ঢুকে গেছে চাকা। ফলে খাজ যেভাবে এগিয়েছে সেভাবেই চলতে হচ্ছে গাড়িটাকে, আর কোন দিকে ঘোরানোর উপায় নেই।
শক্ত করে স্টিয়ারিং ধরে রেখেছে মুসা। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঝাঁকি খাচ্ছে পাশে বসা কিশোর। তার পাশে বসা রবিন আঁকড়ে ধরে রেখেছে প্যাসেঞ্জার ডোরের আর্মরেস্ট। মাঝে মাঝেই লাফিয়ে উঠছে তিনজনের শরীর, ছাতে মাথা বুকে যাওয়ার অবস্থা।
ইমারজেন্সি ব্রেক! চেঁচিয়ে বলল কিশোর।
সাংঘাতিক জোরে চলছে, জবাব দিল মুসা। কোন কাজই করবে না এখন!
তাহলে? রবিনও চিৎকার করেই বলল।
সামনে রাস্তা হয়তো ভাল, আশা করল কিশোর। ঝকির চোটে দাঁতে দাতে বাড়ি লাগছে তার।
গিয়ার নামানোর চেষ্টা করে দেখি, মুসা বলল।
ঘাম ফুটেছে মুসার কপালে। শক্ত করে চেপে ধরল স্টিকটা। দ্বিধা করল। পরক্ষণেই একটানে তৃতীয় গিয়ার থেকে নামিয়ে নিয়ে এল দ্বিতীয় গিয়ারে।
হঠাৎ এই পরিবর্তনে চাপ পড়ল ইঞ্জিনে, বিকট আর্তনাদ করে প্রতিবাদ জানাল। জোরে একবার দুলে উঠল গাড়ি, গতি কমে গেল।
খবরদার! চিৎকার করে উঠল রবিন, বাঁক! সামনে ডানে মোড় নিয়ে। পাহাড়ের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেছে পথটা।
তীব্র গতিতে মোড় নেয়ার সময় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল তিনজনেই। বৃষ্টিতে ধুয়ে মাটি ক্ষয়ে গিয়ে গাছের শেকড় বেরিয়ে আছে পাহাড়ের গা থেকে, লম্বা আঙুল বাড়িয়ে দিয়ে যেন চাকা আটকে গতি রোধ করতে চাইছে গাড়ির।
ডানে কাটল মুসা, পাহাড়ের দিকে।
কি করো! আঁতকে উঠে বলল রবিন।
পাহাড়ের গায়ে লাগিয়ে দিই! দেখি থামে কি না! জবাব দিল মুসা।
ঝটকা দিয়ে খাজ থেকে উঠে এল চাকা।
দেখো, আস্তে আস্তে! কিশোর বলল।
পথের কিনারে স্তূপ হয়ে আছে ধসে পড়া মাটি, ছোট ছোট পাথর। ঘ্যাঁচ করে ওগুলোর মধ্যেই ঢুকে গেল গাড়ি।
স্টিয়ারিং নিয়ে পাগল হয়ে গেছে যেন মুসা। হাত থেকে ছুটে যেতে চাইছে। বার বার। লাফাচ্ছে, ঝাঁকি খাচ্ছে, থরথর করে কাঁপছে পিকআপ।
আবার পাহাড়ের দেয়ালের দিকে গাড়ির নাক ঘোরানোর চেষ্টা করল মুসা। দেরি করে ফেলল। আলগা পাথরে পিছলে গিয়ে আবার খাজের মধ্যে পড়ল চাকা।
মরলাম আবার! মুসা বলল।
খাঁজ ধরে ছুটতে ছুটতে পরের বাকটার কাছে চলে এল গাড়ি, উড়ে পেরিয়ে এল যেন।
আরি! বলে উঠল রবিন, ওড়াল দেবে নাকি!
সামনে একটা ছোট পাহাড় দেখা গেল। ঢালটা খুব ধীরে ধীরে ওপরে উঠেছে, খাড়াই কম।
এইবার আরও মরলাম! ঘামে চকচক করছে কিশোরের মুখ।
গর্জন করতে করতে তীব্র গতিতে পাহাড়ের গোড়ার দিকে ধেয়ে গেল গাড়ি। উঠতে শুরু করল ঢাল বেয়ে। যেন সাগরের উথাল পাথাল ঢেউয়ে পড়েছে, দোল খেতে লাগল। ভয়াবহ গতিবেগ অব্যাহত রেখেছে।
স্টিয়ারিং ছাড়ছে না মুসা। চেপে ধরে রেখেছে প্রাণপণে। খোলা জানালার কিনার খামচে ধরেছে রবিন, যেন সারা জীবনের জন্যে ধরেছে, ছাড়ার ইচ্ছে নেই। দুজনের মাঝে বসে দরদর করে ঘামছে কিশোর। এক হাতে ড্যাশবোর্ডে, আরেক হাত ছাতে ঠেকিয়ে চাপ দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করছে নিজেকে।
অনেক পেছনে সরে গেছে আগের পাহাড়টা। সামনে পথের দুধারে ঘন হয়ে জন্মেছে ঝোপঝাড়। ওপরে উঠতে গিয়ে ধীরে ধীরে গতি কমে আসছে পিকআপের।
কিছুটা স্বস্তি বোধ করল তিন গোয়েন্দা। চূড়াটা.মালভূমির মত সমতল হয়ে। থাকলে হয়তো থেমে যাবে গাড়ি…
সর্বনাশ! গাড়ি চূড়ায় পৌঁছতেই চিৎকার করে উঠল কিশোর।
গতি অনেকটা কমেছে, কিন্তু তারপরেও যা রয়েছে, অনেক। চূড়াটা সমতল নয়। লাফ দিয়ে চূড়া পেরোল গাড়ি, আঁকুনিতে হাড়গোড় সব আলাদা হয়ে যাবে বলে মনে হলো অভিযাত্রীদের, ওপাশের ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করল। গতি বেড়ে গেছে আবার। সাট সাট করে পাশ দিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে যেন গাছপালা।
গাড়িটাকে বাগে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে মুসা। এরই মাঝে চিৎকার করে সঙ্গীদেরকে হুঁশিয়ার করল, শক্ত হয়ে বসে থাকার জন্যে।
কিন্তু থাকাটা মোটেও সহজ নয়। সীটবেল্ট নেই। ঝটকা দিয়ে দিয়ে এদিকে কাত হয়ে পড়ছে, ওদিকে কাত হয়ে পড়ছে, লাফ দিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে। গাড়িটার যেন ম্যালেরিয়া হয়েছে, এমনই কাঁপুনি। সেই সঙ্গে নাচানাচি তো আছেই। আবার খাজের মধ্যে পড়ে গেছে চাকা।
নাহ, আর বাঁচোয়া নেই! কিশোর বলল, খুলে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বডি!
তাই তো মনে হচ্ছে! জানালার ধার থেকে হাত সরায়নি রবিন।
হঠাৎ রাস্তার ডানপাশটা অদৃশ্য হয়ে গেল। গাছের মাথা চোখে পড়ছে, বেরিয়ে আছে নিচে থেকে, পথের ওপরে এসে পড়েছে ডাল পাতা। খানিক পরে আর তা-ও থাকল না। একশো ফুট নিচে খাড়া নেমে গেছে ওখানে পাহাড়ের দেয়াল, ঢাল নেই যে গাছ জন্মাবে। নিচে জন্মে রয়েছে পাইন, কাঁটাঝোপ। মাঝে মাঝে বেরিয়ে আছে পাথরের চাঙড়। ওগুলোর কোনটায় গিয়ে যদি আছড়ে পড়ে গাড়ি, ছাতু হয়ে যাবে।
যে খাজকে এতক্ষণ গালাগাল করছিল মুসা, সেটাকেই এখন আশীর্বাদ বলে। মনে হচ্ছে। বের করার তো এখন প্রশ্নই ওঠে না, ভেতরে রাখার জন্যেই যেন যত চিন্তা।
এই দেখো দেখো! উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করল মুসা।
সামনেই দেখা গেল ওটা, ওদের এই দুঃস্বপ্ন-যাত্রার অবসান ঘটাতেই যেন। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে গ্র্যানিটের উঁচু দেয়াল। পুব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত। ডানে মোড় নিয়ে ওটার পাশ দিয়ে চলে গেছে পথ। যে গতিতে চলছে, যদি নাক ঘোরাতে না পারে, যদি সোজাসুজি গিয়ে…আর ভাবতে চাইল না মুসা। বলল, গাড়ির পাশটায় ঘষা লাগালে কেমন হয়? থেমেও যেতে পারে।
পাগলামি! স্রেফ পাগলামি! বিড়বিড় করে বলল কিশোর। গাড়ির পাশ ছিঁড়ে খুলে রয়ে যাবে!
আর ঘষা লাগলেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুটবে, বলল রবিন। একটা কণা যদি গিয়ে লাগে ট্যাঙ্কে, ব্যস, ভ্রম!
আর কোন ভাল বুদ্ধি দিতে পার? রেগে গিয়েই বলল মুসা।
চুপ হয়ে গেল রবিন আর কিশোর। গাড়িটাকে রোখার আর কোন উপায়ই বলতে পারল না। পথের বাঁয়ে যেন আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে গ্র্যানিটের দেয়াল, চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে দুজনে।
খেপা জানোয়ারের মত গর্জন করতে করতে ছুটছে ফোর্ড। জোরাজুরি করে আরও একবার খাজ থেকে চাকা তুলে আনল মুসা।
ঘাঅ্যাস করে দেয়ালে ঘষা লাগল পিকআপের এক পাশ। ঝনঝন করে উঠল। শরীর। আগুনের ফুলকি ছিটাল একরাশ।
চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
আর কোন দিকে নজর নেই মুসার, দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে ধূসর দেয়ালের দিকে। আবার সামান্য বাঁয়ে স্টিয়ারিং কাটল সে। এ্যানিটে ঘষা খেল পিকাপের নাক। আবার ফুলকি ছুটল। আবার লাগাল। আবার ফুলকি।
গাড়ির ভেতরে টানটান উত্তেজনা।
যা করছ করে যাও, কিশোরও বুঝতে পারছে এছাড়া আর কোন উপায় নেই।
পারবে! আশা বাড়ছে রবিনের। মনে হচ্ছে পারবে এভাবেই। চালিয়ে যাও।
সাহস পেল মুসা। আবার কাটল স্টিয়ারিং। দেয়ালে তো লাগাল পিকআপ, এ্যানিটে ঘষা লেগে ছেড়ে যাওয়ার সময় তীক্ষ্ণ আর্তনাদ তুলল গাড়ির ধাতব শরীর, নাগাড়ে ফুলকি ছিটিয়ে চলেছে।
দরদর করে ঘামছে তিন গোয়েন্দা।
গতি কমে এল পিকআপের। এগোনর চেষ্টা করেও পারছে না। প্রচণ্ড চাপে গুঙিয়ে উঠছে বডি।
অবশেষে থামতে বাধ্য হলো গাড়ি। ইঞ্জিন চলছে। বন্ধ করে দিল মুসা। বা দিকের সামনের ফেণ্ডার ঠেকে রয়েছে দেয়ালে।
সীটে হেলান দিয়ে জোরে জোরে দম নিচ্ছে তিন গোয়েন্দা। হঠাৎ যেন বড় বেশি নীরব হয়ে গেছে সব কিছু। বাতাসে ধুলোর ঘূর্ণি। কেউ নড়ছে না, কোন, কথা বলছে না।
শেষে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে কিশোর বলল, মুসা, গাড়িটা তো গেল!
দামটা দিয়ে দিতে হবে! বলল রবিন।
ভাল ড্রাইভার বলে তোমার সুনাম আর থাকবে না!
কোন কথারই জবাব দিল না মুসা। কেবল ঘুরে তাকাল দুই বন্ধুর দিকে।
তবে যত যা-ই হোক, হেসে মুসার কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বলল কিশোর, তোমাকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমাদের নেই।
দেখালে বটে! রবিনও হাসল। চাপড় দিল মুসার বাহুতে।
হাসতে আরম্ভ করল মুসা। বাচলাম তো, কিন্তু বাঁচার আনন্দে সারাদিন বসে থাকলে চলবে না। কতটা ক্ষতি হয়েছে দেখা দরকার।
নেমে পড়ল ওরা।
বডির বাঁ পাশে রঙ বলতে আর কিছু নেই, ঘষা খেয়ে উঠে গেছে। মরচেও নেই। চকচক করছে ইস্পাত। লম্বা কাটা রয়েছে অনেকগুলো। ধারাল পাথরে লেগে ওই অবস্থা হয়েছে। দরজার হাতলটা গায়েব। সামনের ফেণ্ডারের একটা মাথা বেঁকে গেছে।
চমৎকার! ফিরে এসে আবার গাড়িতে উঠল মুসা।
তার পেছনে এল কিশোর।
মেঝেতে প্রায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল মুসা। মাথা চলে গেছে স্টিয়ারিং হুইলের নিচে। ফুট পেড়ালের রডটা পরীক্ষা করল। একটা বোল্ট তুলে নিল মেঝে থেকে।
কি ব্যাপার? অধৈর্য কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
স্টিয়ারিঙের নিচ থেকে বেরিয়ে এসে মাথা তুলল মুসা। নীরবে বোল্টটা তুলে দিল কিশোরের হাতে।
কিশোরও ভাল করে দেখল জিনিসটা। লোহাকাটা করাতের দাগ দেখতে পেল ওতে। অনেকটাই কেটেছে। দেখে তুলে দিল রবিনের হাতে। ব্রেক কেন কাজ করছিল না, বোঝা গেল এতক্ষণে।
ঠিক, আঙুল তুলল মুসা। ব্রেক পেডাল একটা শ্যাফটের সঙ্গে লাগানো থাকে, যেটার সঙ্গে মাস্টার সিলিণ্ডারের যোগাযোগ। পেডালে চাপ দিলেই সিলিণ্ডারের পিস্টন ব্রেক লাইনের ব্রেক ফ্লুইডের ওপর চাপ বাড়ায়…
আসল কথা বলো, বাধা দিয়ে বলল রবিন, কি বলতে চাও?
বলছি, বলছি। শ্যাফটের সাথে পেডালটাকে আটকে রাখতে এই বোল্টটা দরকার।
এবং কেউ এটাকে এমন ভাবে কেটে রেখেছে, যোগ করল কিশোর, যাতে বেশি জোরে চাপ পড়লেই ভেঙে যায়।
তা-ই করেছে, মাথা দোলাল মুসা।
গুঙিয়ে উঠল রবিন। ওর বাবাকে খুঁজতে যাওয়ার পথে আবার বিরাট বাধা এসে হাজির।
একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল তিনজনে।
কে করল কাজটা? রবিনের প্রশ্ন।
ইনডিয়ানদেরই কেউ হবে, জবাব দিল কিশোর।
মোড়ল? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল মুসা। আমাদের পছন্দ করেনি, এটা বোঝা গেছে তখনই। কিন্তু এতটাই অপছন্দ যে খুন করার চেষ্টা করল?
জন করেনি তো? ভুরু কোঁচকাল রবিন।
কিংবা মালটি? বলল কিশোর।
নাহ, ও করবে বলে মনে হয় না, মুসা বলল।
যে-ই করে থাকুক, রবিন বলল, সাহায্যের জন্যে আর ওখানে যাওয়া যাবে না।
প্রশ্নই ওঠে না, বলল কিশোর। খুন করতে চেয়েছিল আমাদের, আবার যাব? যেতে হবে ডায়মণ্ড লেকে, যে করেই হোক। ব্রেকটা ঠিক করতে পারবে?
নতুন একটা বোল্ট পেতে পারি। কিন্তু পাব কোথায়?
ট্রাকের ভেতরে খুঁজে এল সে আর রবিন। কিছুই পেল না। একটা জ্যাকও না, সাধারণত যে টুলসটা সব গাড়িতেই রাখা হয়।
সেসনাতে পাওয়া যাবে না তো? মুসার দিকে তাকিয়ে বলল কিশোর, পেছনের জিনিসপত্রের মাঝে টুলস দেখেছি বলে মনে পড়ে। বলেই আর দাঁড়াল না। পাহাড়ের দিকে রওনা হয়ে গেল।
হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল মুসা আর রবিন।
আরি, ওই পাহাড়টাই তো! অবাক হয়ে প্রায় চিৎকার করে বলল মুসা।
মনে তো হচ্ছে, ওর দিকে না তাকিয়েই বলল কিশোর। ওটা ধরে তৃণভূমিতে যেতে পারব আমরা, বোল্ট নিয়ে ফিরে এসে ব্রেক মেরামত করে চলে যৗব ডায়মণ্ড লেকে, সাহায্য নিয়ে খুঁজতে বেরোব আঙ্কেলকে। খুব সহজ ভাবেই কথাগুলো বলল বটে কিশোর, কিন্তু আবার পাহাড় ডিঙিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই সিটিয়ে গেল মন। আরেকবার ওই ভয়ানক পরিশ্রম করতে মন চাইছে না।
ট্রাকের পেছন থেকে পানির বোতলটা নামিয়ে আনল রবিন। যার যার জ্যাকেট কোমরে জড়িয়ে নিল, ঠাণ্ডা পরলে গায়ে দেবে। এগিয়ে গেছে কিশোর। তার পেছনে চলল দুজনে। যে পথে এসেছে ওই পথ ধরেই পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে। পিকআপের ঘষায় গ্র্যানিটের দেয়ালের গভীর আঁচড়গুলো দেখতে পেল ওরা। এক জায়গায় পড়ে থাকতে দেখল দরজার হাতলটা। এক লাথিতে রাস্তার পাশের এক ঝোপে পাঠিয়ে দিল ওটাকে রবিন।
কিছুদূর এগোনোর পর যেখানে রাস্তাটা দক্ষিণে ইনডিয়ানদের গায়ের দিকে চলে গেছে, সেখানে এসে পশ্চিমে মোড় নিয়ে বনের ভেতরে ঢুকে পড়ল ওরা।
খানিক পরেই ঘন হয়ে এল পাইন, উঁচু মাথাগুলোর ওপরটা বাঁকা হয়ে আছে। ধনুকের মত। পাখি ডাকছে প্রচুর। হালকা বাতাস দোলা দিয়ে গেল ডালে ডালে। বাইরে বিকেলের রোদ, অথচ বনের ভেতরে এখানে বেশ ছায়া, ঠাণ্ডাও।
হঠাৎ গুলির শব্দ হলো।
মুসার কানের পাশ দিয়ে চলে গেল বুলেট। থ্যাক করে বিধল একটা গাছে। কলরব করে উড়ে গেল একঝাঁক পাখি।
গুলির পর পরই ঝাঁপ দিয়েছে তিনজনে। উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছে মাটিতে।
আবার গুলি হলো। মাথার ওপর দিয়ে বাতাস কাটার শব্দ তুলে বেরিয়ে গেল বুলেট। শুয়ে শুয়েই তাকাল ওরা পরস্পরের দিকে।
কেউ গুলি করছে ওদের লক্ষ করে!