কে? একসাথে জিজ্ঞেস করল কিশোর আর মুসা।
ব্রড জেসন! অ্যাপ্রনের পকেট থেকে হলদে হয়ে আসা একটা খবরের কাগজ বের করল রবিন। স্থানীয় কাগজ, নাম ক্রনিকল। বাড়িয়ে ধরল সেটা কিশোরের দিকে।
গল্পটা ছয় মাসের পুরানো। কুপার র্যাঞ্চের মেহমানদের টাকা আর জিনিসপত্র চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল ব্রডকে। র্যাঞ্চ থেকে বের করে দিয়েছিলেন তাকে কুপার। কুপার র্যাঞ্চের কথাও বিশদ লেখা রয়েছে স্টোরিটায়। অনেক বড় জমজমাট র্যাঞ্চ। ওটার মালিক বিখ্যাত রোডিও খেলোয়াড় বেনি কুপারের বাবা ডবসি কুপার। টুরিস্ট জায়গা দেয়া ছাড়াও রোডিও খেলার উপযোগী ঘোড়ার প্রজনন করেন। বিচিত্র সব সরীসৃপের ছোটখাট একটা চিড়িয়াখানাও আছে র্যাঞ্চে।
বের করলে কি করে ওটা? জিজ্ঞেস করল মুসা।
বিছানার পাশে বসল রবিন। হাসল। প্যানট্রিতে একগাদা কাগজ দেখে কৌতূহল হল। গিয়ে দেখতে লাগলাম কাগজগুলো। কিছু পেয়ে যাব ভাবিনি, এমনিই দেখছিলাম। চোখে পড়ে গেল হেডলাইনটা।
ব্রড কেন ইউনিকর্নকে ছেড়ে দেবে? তার কি লাভ?
যেহেতু বেনি কুপার তার গার্লফ্রেণ্ড।
উজ্জ্বল হলো কিশোরের মুখ। ঠিক। লিলি প্রতিযোগিতায় নামলে বেনির সর্বনাশ। জিততে পারবে না।
কেরোলিন আন্টির কাছে শুনলাম প্রতিযোগিতাটা টেলিভিশনে দেখাবে, রবিন জানাল। যে জিতবে, তাকে নাকি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হবে।
বাপরে! গাল ফুলিয়ে ফেলল মুসা, বিরাট টাকার ব্যাপার!
সেই সঙ্গে সম্মান এবং খ্যাতি, কিশোর বলল।
সহজেই ধরে নেয়া যায়, রবিন বলল, বান্ধবীর জন্যে এসব অকাজ করছে। ব্রড। স্যাবোটাজ করে চলেছে ডাবল সিকে।
ওরকম জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না অবশ্য, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। কারণ কিছুই প্রমাণ করতে পারিনি আমরা এখনও।
রহস্যময় হাসি হাসল রবিন। পারিনি, করে ফেলব। ধবধবে সাদা একটা স্টেটসন হ্যাট খাঁটি কাউবয় কায়দায় মাথায় বসিয়ে দিয়ে বলল, চলো।
কোথায়? মুসার প্রশ্ন। পার্টিতে?
উঠে দাঁড়াল কিশোর। আমি যাচ্ছি ব্রড জেসন আর ডবসি কুপারের সঙ্গে কথা বলতে।
.
এক ঘণ্টা পরে বারবিকিউ সস, সদ্য বেক করা কর্নব্রেড আর স্ট্রবেরি পাইয়ের সুবাস ভুর ভুর করতে লাগল বাতাসে। খোলা একটা নিচু জায়গায় হাজির হল মেহমানেরা, যেখানে এই বিশেষ পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বারবিকিউ হয়। খোলা জায়গায়। মূল খাবার হয় আস্ত গরু, ভেড়া কিংবা শুয়োরের ঝলসান মাংস। গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে চামড়া ছাড়ানো, নাড়িভুড়ি বের করে ফেলে দেয়া আস্ত এক গরু। নিচে আগুন জ্বলছে। সেই আঁচে সেদ্ধ হচ্ছে মাংস, চর্বি গলছে চড়চড় শব্দ করে, কাবাবের জিভে-পানি-আসা গন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। গাছের ডালে ঝুলছে অনেকগুলো লণ্ঠন। সেই সাথে অনেক মানুষের কথাবার্তার গুঞ্জন এক বিচিত্র পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
ওখানে হাজির হলো তিন গোয়েন্দা। ডাবল সির মেহমানরা তো রয়েছেই, আশেপাশের অনেক র্যাঞ্চ থেকেও অনেকে এসেছে। নিয়ম হলো যার যার খাবার। প্লেটে তুলে নিয়ে খেতে হবে। কিশোরও নিল। চঞ্চল দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে পরিচিতি অপরিচিত মানুষের ওপর। বেনিকে দেখতে পেল। লণ্ঠনের আলোতেও ঝলমল করছে চুল। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন লম্বা, বলিষ্ঠ একজন মানুষ। চুল সাদা। ভারি কণ্ঠস্বর, হাসিটাও তেমনি ভারি।
আমি যাচ্ছি, রবিনের কানে কানে বলল কিশোর। লোকজনের ভেতর দিয়ে এগোল বেনির দিকে। কাছে গিয়ে হেসে হাত নেড়ে স্বাগত জানানোর ভঙ্গিতে বলল, হাই।
হাই। কিশোর পাশা না? এমন ভঙ্গিতে তাকাল, বেনি, যেন চিনতে পারছে না কিশোরকে।
হ্যাঁ, জবাব দিয়ে পাশের ভদ্রলোকের দিকে তাকাল কিশোর।
আমি ডবসি কুপার, বেনির বাবা, গমগম করে উঠল ভদ্রলোকের গলা। হাত বাড়িয়ে কিশোরের হাতটা চেপে ধরে ঝাঁকি দিলেন। ওয়েলকাম টু মনটানা।
থ্যাঙ্ক ইউ।
শুনলাম, তুমি ডিটেকটিভ?
ঝট করে বাবার দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল আবার বেনি।
ঠিকই শুনেছেন, দরাজ হাসি হাসল কিশোর। ইউনিকর্নকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি আপাতত। রাতের বেলা আস্তাবল থেকে পালিয়েছে।
শুনেছি, কুপার বললেন। বেনির কাছেই শুনলাম। পরে আমার র্যাঞ্চের পশ্চিম ধারে ওরকম কালো একটা ঘোড়াকে দেখেছিও। এখন মনে হচ্ছে ওটা ইউনিকর্ন নয়। অন্য ঘোড়া। ভুলটা কিভাবে করলাম বুঝতে পারছি না। ঘোড়ার ব্যাপারে তো এরকম ভুল আমি করি না। তবে, ইউনিকর্ন আর হারিকেনকে আলাদা করে চিনতে পারব না, এটা ঠিক। দুটো ঘোড়াই অবিকল এক রকম। এত মিল কমই দেখা যায়।
আপনি কেন, বাইরের কেউই পারবে না, কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ব্রড, কিশোর কিংবা কুপার কেউই টের পাননি। ঘুরে তাকাল কিশোর। ব্রডকে যেন আর এখন চেনাই যায় না। পরিষ্কার জিনস, প্রেইড শার্ট আর রুপার বাক্স ওয়ালা বেল্ট পরেছে। ঠিক এরকম বাকলসওয়ালা বেল্টের বাড়িই সেদিন আস্তাবলে খেয়েছিল কিশোর, মনে আছে। তাহলে কি ব্রডই তাকে মেরেছিল? নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। এখানে অনেকেই বেল্টে রুপার বাস লাগায়। ইউনিকনের চুরির দায়টা ওর ওপর চাপানর মতও কোন প্রমাণ তার হাতে নেই।
ব্রডকে দেখেই কঠিন হয়ে গেল কুপারের চেহারা। কিন্তু তোয়াক্কা করল না ব্রড।
মুসা তোমাকে খুঁজছে, কিশোরকে বলল সে। বেনির দিকে তাকিয়ে কোমল হল দৃষ্টি। দ্রুত হেঁটে চলে গেল আরেক দিকে।
কিশোরও সরে গেল ওখান থেকে। তবে মুসার কাছে না গিয়ে পিছু নিল ব্রডের। আস্তাবলের দিকে চলেছে লোকটা। ডাক দিল সে, এই যে, শুনুন।
থেমে গেল ব্রড। বুটের গোড়ালিতে ভর দিয়ে ঘুরল। কর্কশ গলায় বলল, এখানে নয়, তোমার বন্ধু পার্টিতে।
জানি। আমি আপনার সঙ্গেই কথা বলতে চাইছি।
কথা বলার মোটেও ইচ্ছে নেই ব্রডের। কি কথা?
সেদিন রাতে, আমি যখন আস্তাবলে..
মনে আছে। অনেক প্রশ্ন করেছিলে। আমি তখন হারিকেনকে ঠাণ্ডা করছিলাম।
না না, তার পরে। আমি যখন আবার একা গেলাম…
ভয়ানক বোকামি করেছ! এবারেও কথা শেষ করতে দিল না কিশোরকে ব্রড। হারিকেনের মেজাজ তখন চরমে!
হাল ছাড়ল না কিশোর, সেদিন রাতে ওই সময় আপনার লেকে থাকার কথা, ক্যানু রেস হচ্ছিল।
শক্ত হয়ে গেল ব্রডের চোয়াল। সরু হয়ে এল চোখের পাতা। তুমি তখন। আস্তাবলে কি করছিলে?
সূত্র খুঁজছিলাম।
অ্যাঁ! ও, শুনেছি, তোমার নাকি ধারণা ইউনিক চুরি হয়েছে, কে করেছে সেটা জানার জন্যে তদন্ত চালাচ্ছ। হেসে উঠল ব্রড। বড়ই যেন মজা পাচ্ছে এরকম। একটা ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, এখানে কোনই রহস্য নেই কিশোর পাশা, কাজেই রহস্যভেদের চেষ্টা বৃথা। আমার পরামর্শ শুনলে, বাদ দাও এসব…
ব্রডের বেশি কথাও ভাল লাগছে না কিশোরের, বলল, মেরে আমাকে বেশ করে ফেলা হয়েছিল। পেছন থেকে কে জানি এসে মাথায় বাড়ি মারল।
এতক্ষণে হাসি বন্ধ হল ব্রডের। বলো কি? কই, আমি তো কিছু শুনিনি?
কার কাছে শুনবেন? কাউকে বলিনি তো।
এরকম কিছু ঘটতে পারে না, এটাই বোধহয় বলার জন্যে মুখ খুলেও থেমে গেল ব্রড। জিজ্ঞেস করল, তারপর?
আমার বন্ধুরা গিয়ে বেহুশ দেখতে পেল আমাকে।
লোকটাকে দেখেছ?
না। তবে রুপার বাল্সওয়ালা বেল্ট দিয়ে বাড়ি মেরেছিল, দেখেছি, আপনি যেটা পরেছেন সে রকম।
রেগে গেল ব্রড, তুমি বোঝাতে চাইছ আমি মেরেছি? নিজের বেল্টের দিকে আঙুল তুলে বলল, এটা আমি পুরস্কার পেয়েছি কয়েক বছর আগে রোডিও খেলায়। অনেকেই পেয়েছে। আজ রাতে পাটিতেই অন্তত দশবারোজনের কোমরে দেখতে পাবে।
কার কার?
লিলি, জন, লুক, ভাবছে ব্রড, এই র্যাঞ্চের দুজন শ্রমিক। বাইরের তো আছেই।
কুপার র্যাঞ্চের?
আছে।
বেনি কুপারের?
কয়েকটা আছে। বেনির কথা বলার সময় কোমল হল ব্রডের কণ্ঠ, পরের কথাটা বলতে গিয়েই নিমের তেতো ঝরল যেন, ওর বাবারও আছে।
চমৎকার, ভাবল কিশোর। ব্রডের কথা ঠিক হলে এ এলাকার অর্ধেক মানুষেরই আছে রুপার বাক্স। ওটাকে সূত্র হিসেবে ধরে তদন্ত করতে যাওয়া আর খড়ের গাদায় সুচ খোঁজা একই কথা।
আস্তাবলের দিকে আবার পা বাড়িয়ে ব্রড বলল, দেখো, আমার সত্যিই কাজ আছে। ঘোড়াগুলোকে খাবার দিতে হবে…
আর একটা কথা, তাড়াতাড়ি হাত তুলল কিশোর, আপনি কুপারের ওখানে চাকরি করতেন, তাই না?
থমকে গেল ব্রড। ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি করে জানলে?
কাগজে পড়েছি।
পুরানো ইতিহাস! বিড়বিড় করল ব্রড। তাহলে নিশ্চয় জানো, চুরির অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছিল আমাকে?
বড় শাস্তি দিতে পারেননি বলে নিশ্চয় হতাশ হয়েছিলেন মিস্টার কুপার?
আঙুল মুঠো করে ফেলল ব্রড। ওর সঙ্গে আমার কোনদিনই বনিবনা ছিল না। আমাকে পছন্দ করেনি। বেনির সঙ্গে নাকি আমাকে একেবারেই মানাবে না। মেহমানদের জিনিস চুরি করি আমি, একথাটা যেই জানল, সুযোগ পেয়ে গেল। বের করে দিল আমাকে র্যাঞ্চ থেকে। শাসিয়ে বলল; আর যেন কখনও বেনির। সঙ্গে দেখা না করি।
রাগটা ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়েছে ব্রডের।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, তারপর এখানে চাকরি নিলেন?
দেখ, উল্টোপাল্টা কিছু ভেবে বসো না। লিলির সঙ্গে আমার কোন মন। দেয়ানেয়ার ব্যাপার নেই। আমাকে আর দশজন কর্মচারীর মতই কাজে নিয়েছে। কেরোলিন আন্টি বলেকয়ে রাজি করিয়েছে তাকে। তারপর থেকে আমি সৎ হয়ে গেছি। ঠিকমত কাজ করছি। সবাইকে বোঝানোর জন্যে যে, যা করেছি তার জন্যে আমি অনুতপ্ত, আর কোনদিন করব না ওরকম কাজ।
লোকটাকে বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর। তাহলে আপনি বলতে পারবেন না ব্যানারদের জিনিস চুরি করে কে আমার ব্যাগে রেখে গেল?
তোমার ধারণা আমি করেছি? মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি তোমার? এখানেও ওরকম কোন বদনাম হলে র্যাঞ্চে চাকরির আশা আমার শেষ। কেউ আর আমাকে কাজ দেবে না। তাছাড়া এই চাকরিটা খুব ভাল। বোকামি করে মরার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। ইয়ে, ওদের ব্যাগ থেকে টাকাপয়সা চুরি গেছে নাকি কিছু?
প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে কিশোর বলল, আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল।
আমি নই, এটুকু বলতে পারি। আর দাঁড়াল না ব্রড। দুপদাপ পা ফেলে আস্তাবলের দিকে রওনা হয়ে গেল।
দরজা দিয়ে ওকে ঢুকে যেতে দেখল কিশোর। ভাবছে, সত্যি বলেছে লোকটা? চুরির অভ্যাস ছিল একসময়। ইউনিকর্নকে ও-ই চুরি করল? তাহলে হারিকেনের ব্যাপারটা কি? ঘোড়াকে সত্যিই ভালবাসে ব্রড, এরকম একজন লোক ওষুধ খাইয়ে ক্ষতি করবে একটা ঘোড়ার, আতঙ্কিত করে তুলতে চাইবে? নাকি লুক বোলানের কথাই ঠিক, বদ রক্ত রয়েছে শরীরে তাই খারাপ হয়ে গেছে। হারিকেন? ইউনিকর্ন এখন কোথায়? পাহাড়ে, বনের ভেতরে লুকিয়ে আছে, নাকি কোথাও আটকে রাখা হয়েছে তাকে?
কি ব্যাপার, পার্টিতে ফিরে আসার পর মুসা জিজ্ঞেস করল কিশোরকে, মনে হয় এই দুনিয়ায় নেই?
না, আছি। ভাবছিলাম, আশপাশের র্যাঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
ওর কথার শেষ অংশটা শুনে ফেলল লিলি। বলল, যাওয়ার আর দরকার কি? এখানেই অনেকে আছে। বলে ফেললেই পারো।
কয়েকজনের সাথে কথা বলল কিশোর, লাভ হলো না, জানতে পারল না। নতুন কিছু। পালিয়ে যাওয়ার পর ইউনিকর্নকে দেখেইনি কেউ। তবে এলসা কারমল নামে এক বিধবা মহিলা একটা মূল্যবান কথা বললেন। স্বামীর রেখে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির মালিক। কুপার র্যাঞ্চের পশ্চিমে তাঁর জমি। বললেন, দেখো, ইউনিকর্নের মত শয়তানেরও দিনে দুবেলা খাবার দরকার পড়ে। বড় জানোয়ার, বেশি খাবার দরকার। ওদিকে, যেদিকে ঘোড়াটা লুকিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেদিকে হাত তুলে তিনি বললেন, খাবার খুবই কম। ঘোড়ারা বুদ্ধিমান জানোয়ার, লুকিয়ে পড়ার ওস্তাদ, কোথায় গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে, কে জানে। ওই যে, ব্যাণ্ড শুরু হলো।
একটা কাঠের মঞ্চে উঠে বাজনা শুরু করেছে তিনজন স্থানীয় বাজনদার। সেদিকে এগিয়ে গেল কিশোর। বেনির সঙ্গে কথা বলছে ওখানে লিলি। বেনি বলছে, সত্যিই আবার রোডিওতে ফেরত যাবে?
চাইছি তো। ভাবছি, ইনডিপেনডেন্স ডে থেকে শুরু করব।
বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না? এক বছর ধরে প্র্যাকটিস নেই, পারবে?
পারতে হবে। টাকা দরকার আমার।
বড় বেশি ঝুঁকি নিতে যাচ্ছ। একটা পাগলা ঘোড়ার পিঠে চড়ে…
হারিকেন পাগল নয়।
আব্বাকে লুক বলেছে ঘোড়াটা পাগল হয়ে গেছে। ব্রডও বলেছে। আমি হলে ওরকম একটা বদমেজাজী ঘোড়ার পিঠে কখনই চড়তাম না।
আর কোন কথা হল না। চলে গেল বেনি।
কিশোরের ওপর চোখ পড়ল লিলির। বলল, দেখলে, কেমন করে চলে গেল?
দেখলাম। বেনির ওপর নজর কিশোরের। ব্রডের হাত ধরেছে গিয়ে মেয়েটা। কাছেই রয়েছেন তার বাবা, পরোয়াই করল না। গম্ভীর হয়ে গেছেন কুপার, ভূতপূর্ব কর্মচারীর সঙ্গে নিজের মেয়ের এই আচরণ সহ্য করতে পারছেন না। তিনি। লিলির দিকে ফিরল কিশোর। শুনলাম, কুপার র্যাঞ্চে নাকি কাজ করত ব্রড।
মাথা ঝাঁকাল লিলি। কেন বের করে দিয়েছে জানো?
জানি।
ও, জান। আমি আরও ভাবলাম, তোমাকে বলব, ওর চুরির স্বভাব ছিল। তবে এখন ও ভাল হয়ে গেছে। ব্যানারদের জিনিস ও চুরি করেনি। ইউনিকের নিখোঁজ হওয়ার পেছনেও তার হাত নেই। অহেতুক আর এখন ওর অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করাটা ঠিক হবে না।
পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে বাজনা। আঞ্চলিক গানের সুর বাজাচ্ছে। কয়েক সেকেণ্ড চুপচাপ শুনে আবার বলল লিলি, এই বাজনার পরেই আমি রেডিওতে যোগ দেয়ার কথা ঘোষণা করব।
গুড লাক, শুভেচ্ছা জানাল কিশোর। হঠাৎ বলে উঠল, আরি!
কি? কিশোরের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে লিলিও দেখতে পেল লম্বা সাদা সেডান গাড়িটা, র্যাঞ্চে ঢুকছে। আবার এল!
আরও খানিকটা এগিয়ে থামল গাড়িটা। বেরিয়ে এল ফিলিপ নিরেক। অন্য পাশের জানালা দিয়ে মুখ বের করে রেখেছে পাইক, নামল না। সোজা লিলির দিকে এগিয়ে এল নিরেক। কাছে এসে একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলল, যা বলেছিলাম। এটাই ঘটবে।
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল লিলি।
কি আর? ব্যাংক সময় দিতে পারবে না। এক মাসের সময় আছে আর। এর। মধ্যে হয় সব টাকা শোধ করবে, নয়ত জায়গা ছাড়বে। এই যে, চিঠি।
এসব আপনি করেছেন! সব আপনার শয়তানী! লিলির চিল্কারে বাজনা থামিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে রইল বাদর্কেরা। মেহমানদের চোখও ঘুরে গেল এদিকে।
বেশ, আমি করেছি, তাতে কি? নির্লজ্জের মত বলল নিরেক। ইনসিওরেন্স কোম্পানির সঙ্গেও কথা বলেছি। ওরা বলেছে, ইউনিকনের জন্যে পয়সা দেবে না। যে যে কারণে টাকা দেয়ার কথা তার কোনটাই ঘটেনি বলে তাদের বিশ্বাস। মরেনি, জখম হয়নি, চুরি যায়নি। ওদের ধারণা, তুমিই কোথাও নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছ।
শক্ত হয়ে গেছে লিলির কাঁধ। টাকা কি চাইতে গেছি নাকি আমি ওদের কাছে? কথাই বলিনি।
বললেও দেবে না। ঘুরে গাড়ির দিকে রওনা হলো নিরেক।
তাড়াহুড়া করে লিলির কাছে এসে দাঁড়ালেন কেরোলিন। একটা গোলমাল হয়ে গেছে। বিকেলে দোকান থেকে সোডা আনতে ভুলে গেছে ব্রড। চা-ও নেই। ডেরিককে ফোন করেছিলাম। দোকান বন্ধ করে দিচ্ছিল, বলেছে আমাদের জন্যেই খোলা রাখবে।
মেহমানদের ওপর চোখ বোলাল লিলি। বেশ, যাচ্ছি।
যেতে আসতে কতক্ষণ লাগে? জানতে চাইল কিশোর।
এই মিনিট বিশেক।
তাহলে আমিই যাই। আপনার বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসেছে, আপনার। এখানে থাকা দরকার।
তুমি যাবে?
যাই না, অসুবিধে কি?
বেশ। দোকানদারের নাম ডেরিক লংম্যান। শহরের ধারেই দেখতে পাবে। মার্কেটটা। জিনসের পকেট থেকে চাবি বের করে দিয়ে লিলি বলল, আমার স্টেশন ওয়াগনটা নিয়ে যাও। ফিরে তাকিয়ে বাদকদেরকে ইশারা করল। মাথা ঝকাল দলপতি। আবার শুরু হল বাজনা।
রবিনকে কাছাকাছি দেখে সেদিকে এগোল কিশোর। তোমরা থাকো, আমি আসছি।
কোথায় যাচ্ছ?
দোকানে। কয়েকটা জিনিস ফুরিয়ে গেছে।
চলো, আমিও যাব।
যাবে? ঠিক আছে। মুসাকে বলে এসো। নইলে আবার খোঁজাখুঁজি শুরু করবে। আর আসতে চাইলে আসুক। আমি গাড়ি বের করিগে।
মুসা এল না। খেতে ব্যস্ত। রবিন আর কিশোরই চলল। পার্টির জায়গা থেকে বেশ অনেকটা দূরে রাখা হয়েছে গাড়িটা। পুরানো ঝরঝরে একটা স্টেশন ওয়াগন। গায়ে আঁকা রয়েছে ডাবল সি র্যাঞ্চের নাম আর মনোগ্রাম–একটা কালো ঘোড়ার ছবি।
ভাবছি, কিশোর বলল, ইচ্ছে করে ভুল করেনি তো ব্রড? সোডা আনতে ভুলে যায়নি তো?
তা কেন করবে?
জানি না, গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল কিশোর। হয়তো গোলমাল আরও বাড়ানর জন্যেই। ইগনিশনে মোচড় দিল সে।
কেশে উঠে চালু হয়ে গেল ইঞ্জিন। গিয়ার দিল কিশোর। একটা অদ্ভুত শব্দ কানে এল। মাথার ভেতর বেজে উঠল ওয়ার্নিং বেল। খপ করে রবিনের হাত চেপে ধরে আরেক হাত বাড়াল দরজা খোলার জন্যে। চেঁচিয়ে উঠল, জলদি বেরোও…!
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই বোমা ফাটার মত আওয়াজ হলো।