সুমিত সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এল। তারপর থমকে দাঁড়িয়ে চাপা স্বরে ডাকল, “নায়ার! নায়ার!”
নায়ার লবিতে বসে নীপার সঙ্গে কথা বলছিল। বিরক্ত হয়ে সাড়া দিল, “কী হল?”
“মাইরি! সোমনাথ সত্যি সত্যি ডিটেকটিভদ্রলোকের অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়েছে। শিগগির দেখে যা।”
নায়ার ভেতর থেকে বলল, “নরক্কাতিল পোট্টে!”
বিরক্তি, রাগ বা উত্তেজনার ঝোঁকে নায়ারের মুখ থেকে মাতৃভাষা বেরিয়ে আসে। সুমিত চটে গিয়ে লবিতে ঢুকে চ্যালেঞ্জের ভঙ্গিতে বলল, “অ্যাই ব্যাটা! তুই আমাকে গাল দিলি?”
নায়ার ফিক করে হেসে বলল, “তোকে নয়, ওই বুদ্ধিজীবীকে। গাল নয়। বললাম, গোল্লায় যাক। লেট হিম গো টু হেল। নরক্কাতিল পোট্টে।”
নীপা ব্যাপারটা দেখতে বারান্দায় গেল। সে দেখল, গেটের ওধারে সোমনাথ সেই কর্নেল ভদ্রলোককে হাত নেড়ে কী সব বোঝাচ্ছে।
সুমিত ও নায়ার এসে গেল। সোমনাথ একটা হাতের ওপর আরেকটা হাত আড়াআড়িভাবে ফেললে সুমিত বলল, “সেমিওটিকস বোঝাচ্ছে। মাইরি! শালুক। চিনেছে গোপালঠাকুর।”
নীপা আস্তে বলল, “আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না নায়ারদা। সোমনাথ কেন এত বেশি পাগলামি করছে?”
নায়ার বলল, “অবচেতনায় আক্রান্ত। সুমিত! ফেরার পথে আমরা ওকে রাঁচির কাঁকে মানসিক চিকিৎসালয়ে রেখে যাব।”
সুমিত বলল, “আরে। সোমনাথ যাচ্ছে কোথায়। গাড়ি আসার সময় হয়ে গেছে।”
নীপা বলল, “সোমনাথ বেড়াতে যাবে না। বলছিল, কোথায় যাবে, সেটা নাকি গোপনীয়। কাকেও বলা যাবে না।”
নায়ার বলল, “তুমি ওকে নিষেধ করলে না? আমার ধারণা, সে তোমার নিষেধ অগ্রাহ্য করতে পারত না। নীপা! তুমি গিয়ে ওকে বলো–”
“নায়ারদা! বাড়াবাড়ি কোরো না।” বলে নীপা দ্রুত চলে গেল লবির ভেতর দিয়ে করিডরের দিকে।
নায়ার ফিক করে হেসে অভ্যাসমতো গোঁফ ঢাকল। চাপা স্বরে বলল, “আমার ধারণা ছিল, প্রেম ক্ষণস্থায়ী। সেটা শেষ পর্যন্ত সত্য প্রমাণিত হল বলা চলে। সোমনাথনীপার ঘটনা ব্যতিক্রম ভাবতাম। দেখা গেল, প্রেমে ব্যতিক্রম নেই।”
সুমিত বলল, “ধুর ব্যাটা। ডুবে ডুবে জল খাওয়া কাকে বলে জানিস?”
কর্নেল এসে সম্ভাষণ করলেন, “হ্যালো!”
নায়ার বলল, “কর্নেলসায়েব। আমাদের বুদ্ধিজীবী বন্ধুকে কি আপনার সহকারী হওয়ার যোগ্য মনে হল?”
কর্নেল হাসলেন। “সোমনাথবাবুর থিওরিটা মন্দ নয় অবশ্য।”
সুমিত বলল, “ওর থিওরিটা আপনি বুঝতে পেরেছেন! সেমিওটিকস বোঝেন তো স্যার?”
কর্নেল বললেন, “আপনাদের বুদ্ধিজীবী বন্ধুর থিওরি হল, একটা বডি পড়েছে। এবার তার ওপর আড়াআড়িভাবে আরেকটা বডি পড়বে।”
নায়ার বলল, “উন্মাদ। কিন্তু ও গেল কোথায় আপনাকে বলেছে?”
কর্নেল পা বাড়িয়ে বললেন, “ইভনিং ভিলায় কুকুর আছে কি না জানতে গেলেন সোমনাথবাবু।”
সুমিত বলল, “কোনও মানে হয়। আমরা হাথিয়া ফলস দেখতে যাব। গাড়ি আসার সময় হয়ে গেল। আর ও গেল গোয়েন্দাগিরি করতে? কুকুর কামড়ে দিলে পেটে চৌদ্দখানা ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ ঢোকাতে হবে, জানে না?”
কর্নেল ভেতরে ঢুকে যাওয়ার পর নায়ার বলল, “জানিস সুমিত? ওই বুদ্ধিজীবীর জন্য আমার ভয় হচ্ছে।”
“আমারও।” সুমিত একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “অকারণ এভাবে যেখানে সেখানে নাক গলানোর কোনও মানে হয়? কে একজন আজেবাজে লোক খুন হয়েছে, তার জন্য পুলিশ আছে। এই ডিটেকটিভদ্রলোক আছেন।”
ঈশিতা সেজেগুজে এসে বারান্দার চেয়ারে বসল। বলল, “কী হল তোমাদের? তুষোমুখে দাঁড়িয়ে আছ কেন?”
সুমিত শ্বাস টেনে বলল, “উঃ! জ্বলে গেলুম! পুড়ে গেলুম! একশোখানা বসন্তের সেন্ট।”
“মাইরি?” ঈশিতা হাসল।
“এই। তুমি দারুণ সেজেছ।” সুমিত তার পাশে বসে বলল। “তোমার ফুলপরি-মুখে এখন ভেংচিকাটা উচিত নয়। কী যেন সেন্টটার নাম?”
নায়ার বলল, “তোর স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ। সেন্টটার নাম স্কাউন্ড্রেল।”
ক্রিস্নান এসে বলল, “একটা পাঁচ বাজল। কিন্তু গাড়ি আসছে না কেন ঈশিতাদি?”
ঈশিতা বলল, “তুমি হঠাৎ দিদি-টিদি শুরু করলে কেন কৃষ্ণা?”
“তোমাকে পবিত্র দেবী ধারণা হচ্ছে।” ক্রিস্নান বসে বলল। “জানো? কোনও কোনও ভারতীয় নারীর মুখ দেখে আমার ধারণা হয়েছে, ভারতীয় দেবীদের প্রতিমূর্তি।”
“পাতালেশ্বরী দেবীকে দেখলে তোমার ধারণা বদলে যাবে কৃষ্ণা।”
নায়ার বলল, “এ বিষয়ে আমার বক্তব্য আছে। ভারতের সব দেবদেবী দেখতে সুন্দর নয়। আমাদের দক্ষিণে গেলে দেখবে দেবদেবীরা”
সুমিত বাধা দিয়ে বলল, “রামায়ণে তোদের দেশের কথা আছে। তোরা অনার্য আমরা আর্য।”
নায়ার ফিক করে হাসল। “তোরা আর্য? বাঙালিরা? যা, আয়নায় নিজের চেহারা দেখে আয়।”
নীপা এল। ঈশিতা তার হাত ধরে টেনে অন্য পাশের চেয়ারে বসিয়ে বলল, “সোমনাথটা জানবে না কী হারাল। হাথিয়া ফলস আমি একবার দেখেছি। ওয়েস্ট হলে এমন সুন্দর একটা ফলসবাহ! আমাদের গাড়ি আসছে।”
একটা কালো অ্যাম্বাসাডর চড়াইয়ে উঠলে সবাই দেখতে পেল। এই সময় লবি থেকে কর্নেল বেরিয়ে এলেন। ঈশিতা তাকে ‘হাই’ করে একটু হেসে বলল, “কী কর্নেলসাহেব? আমাদের সঙ্গে যাবেন নাকি? আমাদের সম্পর্কে ইনভেস্টিগেশনের একটা চান্স পেয়ে যাবেন কিন্তু। আমাদের মধ্যে মার্ডারার, স্মাগলার, ব্ল্যাকমেলর, ছিঁচকে চোর সবই পেয়ে যাবেন।”
কর্নেল হাসলেন। “সরি মিসেস ব্যানার্জি। আমি এখন ক্ষুধার্ত। বাই দা বাই, আপনাদের জানানো উচিত মনে করলুম, মিস ক্রিস্নানের ফিল্মরোলটা কীভাবে আলো পাস করে নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো ফিল্মটাই নষ্ট।”
বলে ফিল্মরোলটা হাত থেকে মেঝে পর্যন্ত ছড়িয়ে দিলেন। ক্রিস্নান মাতৃভাষায় কিছু বলে উঠেছিল। সবাই তার দিকে তাকালে সে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বলল, “অসম্ভব ঘটনা।”
নায়ার বলল, “তা হলে ফিল্মটাই খারাপ ছিল।”
কর্নেল বললেন, “ফিল্মটা নষ্ট না হলে কালো চিতাবাঘের পায়ের তলায় একটা হ্যাভারস্যাক তখন ছিল কি না, জানা যেত। একটা ইমপর্টান্ট ক্ল। সোমনাথবাবুর কথার সত্যতা যাচাই করা যেত।”
নীপা ফুঁসে উঠল, “সোমনাথ কখনও মিথ্যা বলে না।”
কর্নেল একটু হেসে বললেন, “সরি মিস সেন। আমি সোমনাথবাবুকে মিথ্যাবাদী বলিনি। উনি একটু আগে আমার কাছে স্বীকার করেছেন, উনি চোখ দিয়ে কিছু দেখেন না। মন দিয়ে দেখেন।”
নায়ার সায় দিল। “ঠিক, ঠিক।”
“কাজেই যখন সোমনাথবাবুকে বললুম, চিতাবাঘের পায়ের তলায় হ্যাভারস্যাকটা তিনি মন দিয়ে দেখেছিলেন, না চোখ দিয়ে, তখন উনি বললেন, তা অসম্ভব নয়। হয়তো অন্য কোথাও দেখে থাকতে পারি। দেখার পর সেটা। কালো চিতাবাঘের পায়ের তলায় আরোপ করে থাকতেও পারি। আরোপ। কথাটা বুঝে দেখুন। কর্নেল ফিল্মরোলটা জড়াতে জড়াতে বললেন, “সোমনাথবাবু আমাকে বলছিলেন, উনি একসময় ছবি আঁকতে পারতেন। সেই অভ্যাসটা মনে থেকে গেছে। আ সর্ট অব কোলাজ। আপনারা কোলাজ রীতির ছবি নিশ্চয় দেখেছেন? আমার মতে, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে খেলা করা। একটা হ য ব র ল। তবে তার পুরো চেহারা থেকে অবশ্যই একটা আর্ট বেরিয়ে আসে। এনিওয়ে, সোমনাথবাবু নাকি মনে মনে কোলাজরীতিতে ছবি গড়েন। হুঁ গড়েন’ই বলছিলেন। তাই একটা অদ্ভুত চেহারার হ্যাভারস্যাক কালোচিতার পায়ের তলায় এনে বসিয়ে দিতেও পারেন।”
গাড়িটা গেটে এসে হর্ন দিয়ে এক চক্কর ঘুরে বিপরীতমুখী হচ্ছিল। সবাই লনে নেমে গেল। ক্রিস্নান যেতে যেতে একবার ঘুরল। থমকে দাঁড়াল। কিন্তু ঈশিতা ওকে টানল। চাপা স্বরে বলল, “লেট দা ওল্ড হ্যাগার্ড স্ট্র্যাংগল হিমসেলফ টু ডেথ উইদ্দা গড্ড্যাম থিং। চলে এস।”
সুমিত বলল, “কৃষ্ণা ইংরিজি জানে না। বাংলায় ট্রানস্লেট করে দাও।”
গাড়ির ব্যাকসিটে ক্রিস্নান, নীপা ও ঈশিতা বসল। সুমিত সেখানে ঢুকতে যাচ্ছিল। ঈশিতা বলল, “তুমি বার বার বলেছ আমরা সাম্প্রদায়িক। কাজেই হবে না। দূর থেকে গন্ধ শুঁকেই সন্তুষ্ট থাকো।”
সামনে নায়ার ও সুমিত বসল। নায়ার বলল, “ঠাই নাই, ঠাই নাই, ছোট সে তরী/আমারই সোনার ধানে গিয়াছে ভরি।”
সুমিত বলল, “ধুস! সোমনাথটা থাকলে দারুণ হত মাইরি! গান গেয়েটেয়ে জমিয়ে তুলত।”
ঈশিতা বলল, “আসলে সোমনাথ থাকলে তোমার সুবিধে হত ভাবছ তো? এবার আমি সোমনাথকে বাহন করতুম। তাতে নীপু হয় তো–নাহ। নীপু কেমন চোখে তাকাচ্ছে। আমার ভয় করছে কিন্তু।”
গাড়ির ড্রাইভার প্রৌঢ়। বিনীতভাবে বলল, “ঔর কোই আনেবালা হ্যায় সাব?”
সুমিত বলল, “নেহি ভাই। চলো। সিধা হাথিয়া ফলস।”
গাড়ি চলতে থাকল। নায়ার ঘুরে ক্রিস্নানকে বলল, “কৃষ্ণা। তুমি অত্যন্ত চিন্তিত।”
ক্রিস্নান একটু হাসল। “হ্যাঁ। আমি সত্যই চিন্তিত।”
“তোমার চিন্তার কোনও কারণ নেই।” ঈশিতা বলল। তারপর সে কণ্ঠস্বর চাপা করল। চোখেমুখে কৌতুক। বলল, “বুড়োর ঘরের দরজার ফাঁকে মার্বেল পেপারের কয়েকটা কুচি ঢুকিয়ে দিয়ে এসেছিলুম।”
সুমিত হাসল। “মাইরি?”
“মাইরি।” ঈশিতা হাসতে লাগল। “বুড়োর চোখে পড়েনি মনে হচ্ছে। পড়লে বলত।”
নায়ার বলল, “আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে। কৃষ্ণা বিদেশি মেয়ে। কৃষ্ণা আমাদের সঙ্গে এখানে প্রমোদপর্যটনে এসেছে এবং তারপর এখানে একজন ডিটেকটিভের আবির্ভাব। নিশ্চয় গভর্মেন্ট ওকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওর ওই সাদা দাড়ি ছদ্মবেশ।”
সুমিত চাপা স্বরে সকৌতুকে বলল, “বুড়ো বলল হাথিয়া ফলসে দেখা হবে। নায়ার, আমরা ওকে তখন চিট করলে মন্দ হয় না। পেছন থেকে চুপি চুপি দুজনে ওকে জাপটে ধরে খি খি খি খি–দাড়ি-টাড়ি খুলে নিয়ে খি খি খি খি–এক্কেবারে হাথিয়া ফলসে খি খি খি খি-মাইরি!”
“ঠিক বলেছিস।” নায়ার সায় দিল। “প্রমোদ-পর্যটনে সব সময় অস্বস্তি নিয়ে ঘোরার মানে হয় না। ব্যাটাচ্ছেলে বাইনোকুলার তাক করে ঘুরছে। আমাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ!”
সুমিত বলল, “আর প্রাইভেসি? প্রাইভেসি নষ্ট হচ্ছে না?”
নায়ার আরও গম্ভীর হয়ে গেল। বলল, “সমস্যা হল আরিফ। আরিফের সঙ্গে ওর খাতির।”
“আরিফ কিছু বলবে না।” সুমিত বলল। “আরিফকে বুঝিয়ে বলব, বড্ড বেশি তাঁদড়ামি করছিল। কাজেই ইন্সটান্ট রি-অ্যাকশনে ওকে জব্দ করেছি। কেন? তুই তো একবার গল্প করছিলি, শান্তিনিকেতনে কোন অধ্যাপককে আরিফ আর তুই কেমন জব্দ করেছিলি!”
নায়ার বলল, “কৃষ্ণা। তুমি চিন্তা কোরো না। বুড়ো তোমার পেছনে লাগতে এলে আমরা ওকে জব্দ করব।”
ঈশিতা গুন গুন করে গাইছিল। গাড়ি ডাইনে সংকীর্ণ একটা রাস্তায় জঙ্গলের ভেতর ঢুকছিল। গান থামিয়ে সে ক্রিস্নানকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “চিয়ার আপ বেবি। চিয়ার আপ। সুমিত। নায়ার। ওই বুড়োকে যদি ওখানে সত্যিই দেখি, আমি কী করব জানো?”
সুমিত হাসল। “আর যাই করা ঈশু, প্রেম নিবেদন কোরো না। আমার কষ্ট হবে।”
সুমিত বলল, তারপর ওটা নদীতে ছুঁড়ে ফেলল কে?”
নায়ার গম্ভীরমুখে বলল, “সেটা তদন্তসাপেক্ষ। আমরা প্রাইভেট ডিটেকটিভদ্রলোকের সাহায্য নিতে পারি। আমি তাকে বলব।”
“সর্বনাশ! ওই হোমোর পাল্লায়” বলে সুমিত থেমে গেল।
ঈশিতা তার চিবুকের দাড়ি টেনে দিয়ে বলল, “সব সময় সেক্স আর সেক্স!”
নীপা বলল, “একটা ব্যাপার আমার আশ্চর্য লাগছে।”
নায়ার বলল, “ফিল্মরোলটা নষ্ট করে দেওয়া ইচ্ছাকৃত। তাই না?”
“হ্যাঁ। সে-ও একটা ব্যাপার।” নীপা বলল, “তা ছাড়া ক্রিস্নান হাথিয়াগড় আসতে এককথায় রাজি হয়ে গেল কেন? ঈশিতাদি ফোনে প্রোপোজালটা দেওয়ার পর আমি ওকে বলমাত্র নেচে উঠল। এখন মনে হচ্ছে, ক্রিস্নানের পক্ষে হঠাৎ কলকাতা ছেড়ে চলে আসাটা স্বাভাবিক ছিল না। কারণ সজোর্ড ওকে দিল্লি থেকে ট্রাঙ্ককল করতে পারে। পরের ফ্লাইটে ফিরে এসে খোঁজ করতেও পারে। ক্রিস্নানকে তখন সে পাবে না। এমনও তো হতে পারে, সজোৰ্ড, ধরো, পুলিশ কলকাতা ফেরামাত্র ওকে অ্যারেস্ট করল।” নীপা শ্বাস ফেলে মাথা নাড়ল। “কিছু বুঝতে পারছি না। আমি ক্সিস্নানকে তার সেফটির জন্য সঙ্গে নিয়ে আসতে চাইতে পারি। কিন্তু ক্রিস্নানের পক্ষে কলকাতায়। আমাদের বাড়িতে থেকে সজোর্ডের জন্য অপেক্ষা করাটাই কি স্বাভাবিক ছিল না?”
ঈশিতা তার কাঁধে হাত রেখে বলল, “তুমি বড্ড বেশি ভাবছ নীপু! কৃষ্ণা কিছু কুকর্ম করলে তোমার কোনও ক্ষতি হবে না, সো মাচ আই অ্যাসিওর য়ু।”
নায়ার বলল, “আরিফ আছে। এত চিন্তার কিছু নেই। আরিফকে আমি বলব। আগে দেখা যাক, কৃষ্ণা বাংলোয় ফিরেছে কি না।”
নীপা বলল, “বাংলোতে ওর ব্যাগ আছে।”
সুমিত বলল, “ঘরের চাবি?”
“ক্রিস্নানের কাছে।” নীপা বলল। “কারণ আমি রুম থেকে বেরুনোর বেশ কিছুক্ষণ পরে ও বেরিয়েছিল।”
সুমিত কপট গাম্ভীর্যে উদাস চোখে তাকিয়ে বলল, “ফিরে গিয়ে কী দেখব কে জানে!”
নায়ার ধমকের ভঙ্গিতে বলল, “কী দেখবি রে ব্যাটা?”
ঈশিতা বলল, “এই চতুষ্পদ প্রাণীকে কে বোঝাবে, সোমনাথের মতো আঁতেলের পক্ষে ওই কাঠখোট্টা ডেনিশ মেয়ের চেয়ে ইভনিং ভিলার এঞ্জেল অব বিউটি বেশি প্রেফারেবল?”
সুমিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “পাত্তা পাবে না রে ভাই! কুকুরের তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসবে। অবশ্যি ইভনিং ভিলাতে কুকুর আছে কি না, তা-ই নিয়ে সোমনাথের মাথাব্যথা একটা চালাকি।”
বলে সে ঈশিতার দিকে ঘুরল। ঈশিতা ভুরু কুঁচকে বলল, “আর কিছু বলার আছে?”
“আছে।”
“বলে ফেলো!”
“তুমি কি এই পোশাকেই ককটেল-ডিনারে যাবে?”
“গেলে তোমার আপত্তি আছে?”
“বীতশোক তার বউ হারাবে। কারণ পার্টিতে কে এক মাফিয়ালিডার আসছে। ঈশু, আমার পরামর্শ শোনো। বঙ্গবন্ধু হয়ে যেও। ফর ইওর সেফটি। আর দেখ ঈশু! বীতশোক বউ হারালে বউ পাবে। কিন্তু আমি যে মাইরি– ওঃ! ভাবতে আমার ভয় করছে।”
ঈশিতা ওকে কাতুকুতু দিয়ে অস্থির করে তুলল। নায়ার ফিক করে হেসে গোঁফ ঢাকল। নীপা বিরক্ত হয়ে উইন্ডো দিয়ে হাওয়াই আড্ডির জঙ্গলে ভাঙা টাওয়ারটার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরে গাড়ি বাঁদিকে মোড় নিয়ে জঙ্গলের রাস্তায় ঢুকলে হঠাৎ তার মনে হল, ঈশিতা ও সুমিতের ধারণা যদি সত্যি হয়? সোমনাথ আর ক্রিস্নান তার অগোচরে কোনও সম্পর্কে পৌঁছুতেও তো পারে! নীপার মনে হল, এই কালোরঙের গাড়িটা তাকে একটা চরম কোনও মুহূর্তের দিকে পৌঁছে দিতে চলেছে। একটু পরে বাংলোগামী রাস্তার চড়াইয়ে ওঠার পর নীপা হঠাৎ মরিয়া হয়ে গেল।
চৌকিদার হর্ন শুনে বাংলোর গেট খুলে দিল। কালো অ্যাম্বাসেডর বারান্দার নীচে গিয়ে থামল। নায়ার এবং সুমিত একইসঙ্গে ব্যস্তভাবে নামল। দুজনেই লবির দিকে চলে গেল।
ড্রাইভার মোতি সিং বলল, “মেমসাব! হম জারা ঘুমকে আতা। চায়উয় পিয়েঙ্গে। আভি সাড়ে পাঁচ বাজা। আধাঘণ্টেকি বাদ লোটেঙ্গে।”
ঈশিতা নেমে বলল, “ঠিক আছে। আমরা এখান থেকে সওয়া ছটায় বেরুব কিন্তু।”
গাড়িটা চলে গেল। ঈশিতা বারান্দার চেয়ারে বসে বলল, “নীপু! এখানে চুপটি করে বসো।”
নীপা বসল না। দাঁড়িয়ে রইল।
সুমিত ও নায়ার ফিরে এল। সুমিত শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বলল, “ঘণ্টাদুই আগে কৃষ্ণা এসেছিল। তারপর বেরিয়ে গেছে। ম্যাথুকে চাবি দিয়ে গেছে। বোঝো ব্যাপারটা।”
নায়ার বলল, “দুপুরে আমরা ম্যাথুকে চটিয়ে দিয়েছি। নীপার ঘরের চাবি চাইলাম। দিল না। নীপা! তুমি চাবি নিয়ে তোমাদের ঘর খুলে দেখ, তোমার কিছু হারিয়েছে নাকি।”
নীপা চলে গেল।
ঈশিতা বলল, “আশ্চর্য! ম্যাথু ওকে যেতে দিল?”
নায়ার বলল, “ম্যাথু কেমন করে জানবে যে সে পালিয়ে যাচ্ছে?”
সুমিত বলল, “ম্যাথুকে আমি বললুম কথাটা। ম্যাথু বলল, সব রুম মিঃ ব্যানার্জির নামে বুক করা আছে। কাজেই কেউ চেক আউট করলে লিগ্যালি ম্যাথুর কিছু করার নেই। বিল পেমেন্টের ব্যাপারে দায়ী তো বীতশোক। আমরা হিজ হিজ হুজ হুজ শেয়ার করব কি না ম্যাথুর তা জানার কথা নয়।”
ঈশিতা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চলো তো নীপুর কী অবস্থা দেখি। বেচারি ভীষণ আঘাত পেয়েছে মনে।”
নীপা ক্রিস্নানের বেডের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। ঈশিতাদের দেখে সে একটু হাসল। এই হাসিতে কেমন একটা স্বস্তির ছাপ ছিল।
ঈশিতা ব্যস্তভাবে বলল, “তোমার জিনিসপত্র ঠিক আছে তো?”
নীপা বলল, “আমার জিনিসপত্র নিয়ে ক্রিস্নান কী করবে?”
“আহা, তোমার টাকাকড়ির কথা বলছি!”
নীপা তার হ্যান্ডব্যাগটা দেখাল।
সুমিত বলল, “হ্যাঁ। বাইরে গেলে সবাই টাকাকড়ি সঙ্গে নিয়েই ঘোরে। চোরের জন্য ঘরে রেখে যায় না। কিন্তু আমাদের এখনই একটা কিছু করা দরকার।”
নায়ার ক্রিস্নানের বেড ওলট-পালট করছিল।
ঈশিতা বলল, “নায়ার কি জুয়েল খুঁজছ? স্মাগলার মেয়েরা অত বোকা নয়।”
সুমিত হাসল। “ভাল করে খুঁজে দ্যাখ, দু-একটা হাত ফসকে পড়ে থাকা অসম্ভব নয়। রাজা হয়ে যাবি রে।”
ঈশিতা হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেল। আমার ধারণা, মেয়েটা এখনও হাথিয়াগড় ছেড়ে যেতে পারেনি। আরিফকে ফোন করে জানিয়ে দিই।”
সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
নায়ার খাটের তলায় উঁকি মেরে বলল, “সুমিত আলো জ্বেলে দে।”
সুমিত ঘরের আলো জ্বেলে দিল। তারপর নিজেও উঁকি দিয়ে দেখার পর বলল, “উঁহু! টর্চ নিয়ে আসি।”
নীপা তার হ্যান্ডব্যাগ থেকে ছোট্ট এক টর্চ বের করে দিল। একটু হেসে বলল, “এই পেন্সিল টর্চটা কিন্তু ক্রিস্নানেরই উপহার।”
“মাইরি!” বলে খি খি করে হেসে সুমিত টর্চটা নিল। সে টর্চ জ্বেলে দুটো খাটের তলা তন্নতন্ন খুঁজতে ব্যস্ত হল। নায়ার গিয়ে ঢুকল বাথরুমে।
বাথরুমের আলো জ্বলে উঠল। একটু পরে নায়ারের মাতৃভাষায় চিৎকার শোনা গেল। “আইয়ো! আইয়ো”।
সুমিত ও নীপা বাথরুমের দরজায় গিয়ে দেখল, নায়ার কয়েকটা রঙিন মার্বেল পেপারের ভিজে কুচি কুড়িয়ে নিচ্ছে কোমোডর পেছনদিক থেকে। তারপর আবার সে কী একটা কুড়িয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ফাঁসফেঁসে গলায় বলল, “রত্ন। সবুজ রত্ন!”
তার হাতের তালুতে একটা ‘সবুজ পান্না’! নীপা চমকানো গলায় বলল, “আশ্চর্য! আমার তো চোখে পড়েনি।”
নায়ার সোমনাথের ক্যারিকেচার করে বলল, “এরকুল পোয়ারোর লিটল গ্রে সেলস! মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র ধূসরবর্ণের কোষগুলি! তবে সহজে চোখে পড়ার মতো জায়গায় এগুলো ছিল না। অতি দ্রুত ব্যস্ততাবশত রত্নপাচারকারিণীর হস্তচ্যুত হয়েছিল।”
“ধুর ব্যাটা!” সুমিত চটে গেল। “ওই মেয়েছেলেটার মতো অখাদ্য বাংলা বলছে। আবার ওকেই বাংলা ইউসেজ শেখাতে চেয়েছিল। বেরিয়ে আয় বলছি বাথরুম থেকে। মেয়েছেলের বাথরুমে দাঁড়িয়ে পণ্ডিতি ফলাতে হবে না।” বলেই সে নীপার দিকে তাকিয়ে জিভ কাটল। “সরি! অফুল্যি সরি নীপু!”
নায়ার বাথরুম থেকে দাপটে বেরিয়ে এল।
নীপা আস্তে বলল, “বুঝতে পেরেছি। গত রাত্তিরে ক্রিস্নানকে কেউ জুয়েল পাচার করেছিল। বাথরুমে গিয়ে জুয়েলগুলো বের করে নেওয়ার সময় একটা পড়ে গেছে। টের পায়নি। অথবা টের পেলেও খুঁজে পায়নি। নায়ারদা তখন ঠিকই বলছিল। জুয়েল বের করে নিয়ে সে হ্যাভারস্যাকটাবুঝলে নায়ারদা? তোমাদের বাথরুমে পাচার করে এসেছিল!”
সুমিত বলল, “কিন্তু আমাদের বাথরুমে কেন? বাউন্ডারিওয়াল পার করে ছুঁড়ে ফেললেও পারত! একেবারে নদীতে গিয়ে পড়ত।”
নায়ার বলল, “পারেনি। রাত্তিরে বাংলোর চারদিকে আলো জ্বলে। চৌকিদারের চোখে পড়ার রিস্ক ছিল। কাজেই করিডরের শেষে ব্যাকডোর খুলে আমাদের বাথরুমে পাচার করা খুবই সহজ। কয়েকটি পদক্ষেপ মাত্র। চল, দেখাচ্ছি।”
ওরা দরজা খুলে বেরিয়ে করিডরে ঈশিতাকে দেখতে পেল। ঈশিতা বলল, “আরিফকে পেলুম না। সে বহুক্ষণ আগে বেরিয়েছে। থানায় ফোন করলুম। লাইন পাওয়া গেল না। এক্সচেঞ্জ অপারেটর বলল, এনগেজড। পরে ট্রাই করবেন।”
নায়ার হাত বাড়িয়ে তালুতে রাখা ভিজে কয়েকটা রঙিন মার্বেল পেপারের কুচি আর সবুজ পান্না দেখিয়ে বলল, “আমার আবিষ্কার!”
ঈশিতা চমকে উঠে বলল, “কোথায় পেলে? ওম্মা! মেয়েটা তোমাকেও ফাঁসানোর তাল করে পালিয়ে গেছে দেখছি।”
নায়ার বলল, “না। আমার সিদ্ধান্ত, গত রাত্তিরে বাথরুমে রত্নগুলো বের করার সময় একটা রত্ন পড়ে গিয়েছিল। আর একটা রত্ন হ্যাভারস্যাকের তলায় আত্মগোপন করেছিল। সেটা ওই প্রাইভেট ডিটেকটিভদ্রলোকের কাছে আমরা দেখেছি।”
সুমিত বলল, “আমার মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। চলো, বারান্দায় কিংবা লনে বসে চা-ফা খাই।”
চৌকিদার বেতের টেবিল-চেয়ার লনের সবুজ ঘাসে পেতে দিল। ওরা বসল। একটু পরে চায়ের ট্রে রেখে গেল একজন ক্যান্টিনবয়। ঈশিতা পট থেকে কাপগুলোতে চা ঢালতে ঢালতে বলল, “মেয়েটাকে পালানোর জন্য প্রচুর সময় দেওয়া হল। কিন্তু কী আর করা যাবে? চা খেয়ে আরেকবার ফোনে ট্রাই করব। আমাদের দিক থেকে যতটা ক্লিয়ার থাকা যায়, থাকব। তবে আমি শুধু ভাবছি সোমনাথটার কথা।”
নায়ার চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, “বুদ্ধিজীবী সম্ভবত হাওয়াই আড্ডির জঙ্গলে গুপ্তধন খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমরা জলপ্রপাত থেকে ফেরার পথে ওকে ওখানে। নিশ্চয় আবিষ্কার করতে পারতাম।”
সুমিত বলল, “নাহ্। সোমনাথ ইভনিং ভিলায় যেভাবে হোক ঢুকেছে। পাঁচিল ডিঙিয়েও ঢুকে থাকতে পারে।”
ঈশিতা হাসল। “তা হলে বুলডগটা ওকে এতক্ষণ হজম করে ফেলেছে। কারণ ইভনিং ভিলায় সত্যিই বুলডগ আছে।”
সুমিত বলল, “মিসেস বোস সোমনাথকে বাঁচাবেন। কাল সন্ধ্যায় ভদ্রমহিলার সঙ্গে ওর একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়ে গেছে।”
ঈশিতা ঘড়ি দেখে বলল “ছ’টা বেজে গেল। মোতি সিং এলে আমরা বেরুব। সওয়া ছটায় বেরুলেই চলবে। নীপু! তুমি বরং শাড়িটা বদলে এস। বুঝলে না? হোমরাচোমরা লোকেরা সব আসবে। অল দা ডালহেডেড ফুলস অ্যান্ড ড্যান্ডিজ। আফটার অল আমাদের একটা প্রেসটিজ আছে। ক্যালকাটা প্রেসটিজ বলো, কিংবা বাঙালি প্রেসটিজ বলোনা, না। আমি আপস্টার্ট কিংবা ফ্যাশানেবল কিছু মিন করছি না। ট্রাডিশনাল বাঙালি কালচারের একটা বৈশিষ্ট্য আছে। আসছি। ফোনে আরেকবার চেষ্টা করে দেখি।”
বলে সে হাল্কা পায়ে বারান্দায় গিয়ে উঠল। তারপর লবিতে ঢুকে গেল। বাংলোর আলোগুলো জ্বলে উঠল এতক্ষণে। নীপু বসে রইল।
নায়ার ভুরু কুঁচকে বলল, “আমার মতে, নীপার সাজগোজের প্রয়োজন নেই। ঈশিতার মধ্যে কিছু স্মবারি আছে।”
সুমিত হাসল। চাপা স্বরে বলল, “কোম্পানি এগজিকিউটিভের বউ। ওসব একটু-আধটু থাকতেই পারে। তবে বীতশোকের পাল্লায় পড়ে ঈশুর ভবিষ্যৎ কোনদিকে গড়াচ্ছে কে জানে! হা রে, বীতশোক ওকে নিয়ে ক্যাপিটালিজম করছে না তো?”
নীপা চটে গেল। “আড়ালে কারও সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করা উচিত নয়।”
সুমিত হাসতে লাগল। “তুমি ভাবছ ঈশুকে সামনা-সামনি এ কথা বলতে পারি না?”
“সে যখন তুমি একা থাকবে, তখন ওকে বোলো।”
“যা বাব্বা! তোমার হলটা কী? তোমাদের সবার সামনেই তো ওকে কত–যাক গে। সিগারেট টানি।” সুমিত সিগারেট ধরানোর জন্য হাওয়া আড়াল করতে গেটের দিকে ঘুরল। তারপর বলল, “গাড়ি আতা হ্যায়। হেডলাইট দেখা যাতা হ্যায়।”
নায়ার বলল, “ধুর ব্যাটা! হিন্দিতে গাড়ি স্ত্রীলিঙ্গ। আতি হ্যায়।”
সুমিত বলল, “আচ্ছা নায়ার! তোদের দক্ষিণীদের দুটো সাবজেক্টে মাথা ভাল খোলে দেখেছি ল্যাঙ্গুয়েজ আর ম্যাথমেটিকস। এর কারণ কী রে? এ পর্যন্ত যত দক্ষিণী আমি দেখেছি, বাংলা তো জানেই, আরও এক ডজন ভাষা জানে। তারপর ধর, শকুন্তলা দেবী–”
ঈশিতা বারান্দায় এসে বলল, “লাইন পেলুম না। এক্সচেঞ্জ অপারেটর বলল, কোথায় কী হাঙ্গামা হয়েছে। থানার লাইন নাকি ‘হেভিলি এনগেজড’ বুঝি না বাবা!” বলেই সে হাতে তালি দিল। “বাহ্! মাই হাজব্যান্ড’স কামিং! সুমিত! আমি কিন্তু আমার হাজব্যান্ডের গাড়িতে যাব। তোমরা যাবে মোতি সিংয়ের ব্ল্যাকহোলে।”
“তুমি পতিপ্রাণা সতী। তাই যেও। কিন্তু আমাদের এই খুকি অধ্যাপিকা হঠাৎ কেন এত নীতিবাগীশ হয়ে উঠল বলো তো?” সুমিত নীপার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল। তারপর নায়ারের দিকে ঘুরল। “নায়ার, তুই তো লিঙ্গ-টিঙ্গ বুঝিস! নীতিবাগীশের স্ত্রীলিঙ্গ কী রে? না, না! থাক্। নীপু চোখ কটমট করে তাকাচ্ছে।”
চৌকিদার দৌড়ে গিয়ে গেট খুলে দিল। বীতশোকের গাড়ি এসে বারান্দার নীচে থামল। গাড়ি থেকে নেমে এসে সে লনের একটা চেয়ারে ধপাস করে বসল। মুখে অস্বাভাবিক গাম্ভীর্য। ঈশিতা বাঁকা মুখে বলল, “কৃষ্ণা কী কেলেঙ্কারি করেছে জানো?”
নায়ার হাতের মুঠো খুলে বলল, “রত্নপাচারকারিণীর হস্তচ্যুত রত্ন।”
সুমিত হাসল। “এতক্ষণ রত্নপাচারকারিণী আকাশচারিণী!”
বীতশোক হঠাৎ ফুঁসে উঠল। “শি ইজ অ্যারেস্টেড। প্রাইভেট ডিটেকটিভটি মহা ধড়িবাজ। কখন পুলিশকে তাতিয়ে রেখেছিল। স্টেশনে ওকে অ্যারেস্ট করেছে। কিন্তু এদিকে একটা সাংঘাতিক মিসহ্যাপ হয়ে গেছে।”
নীতা চমকে উঠে বলল, “সোমনাথ”
“সোমনাথও অ্যারেস্টেড।”
“সে কী! কেন?”
“মিঃ বোস ইজ মার্ডার্ড।”
ঈশিতা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “মার্ডার্ড! মিঃ বোস? ও মাই গড! কখন? কোথায়?…
.