॥ ৮ ॥
আমরা দশ মিনিটে হোটেলে পৌঁছে গেলাম।
ফেলুদাকে খবরটা দিতেই সে তার খাতাটা ফেলে দিয়ে কোনও কিছু না বলে জ্যাকেটটা চাপিয়ে নিয়ে আমাদের দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তার ভুরু ভীষণ কুঁচকে গেছে।
সুকিয়াসের বাড়ি পৌঁছে সে প্রথমেই বেয়ারাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমাদের ড্রাইভার আছে?’
‘হ্যায় হুজুর, গাড়ি ভি হ্যায়।’
‘ড্রাইভারকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।’
ড্রাইভার আসতে ফেলুদা তাকে তৎক্ষণাৎ থানায় খবর দিতে বলল। ড্রাইভার চলে গেল।
এবার আমরা গিয়ে স্টাডিতে ঢুকলাম।
‘ছুরি মেরেছে ভদ্রলোককে’, বলল ফেলুদা, ‘অস্ত্রটা নিয়ে গেছে।’
তারপর টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে বলল, ‘ভদ্রলোক চিঠি লিখছিলেন।’
সেটা অবশ্য আমিও দেখেছিলাম। ইংরিজি চিঠির বেশ খানিকটা লেখা হয়ে গেছিল যখন ছুরিটা মারে।
‘একি—এ যে আমাকেই লেখা চিঠি?’ বলে উঠল ফেলুদা। তারপর বলল, ‘যদিও পুলিশ আসার আগে এখানে কিছু নড়চড় করা উচিত না, চিঠিটা যখন আমার তখন সেটার উপর আমার নিশ্চয়ই একটা ক্লেম আছে।’
এই বলে ফেলুদা চিঠিটা প্যাড থেকে ছিঁড়ে ভাঁজ করে পকেটে পুরে নিল।
তারপর জানালার কাছে গিয়ে বাইরে ঝুঁকে দেখল।
জানালার বাইরে একটা হাত চারেক চওড়া প্যাসেজ, তার পরেই বাড়ির পাঁচিল। সেই পাঁচিল টপ্কে লোক আসা খুব কঠিন নয়।
‘বোঝাই যাচ্ছে খুনটা কোনও ভদ্রলোক করেননি।’
ফেলুদা প্রায় আপনমনেই কথাটা বলল। তারপর বলল, ‘যতদূর মনে হয় এ হল লখ্নৌইয়া ভাড়াটে গুণ্ডার কাজ। আর এখানে ডাকাতির কোনও প্রশ্ন আসছে না, কারণ এই একটা ঘরেই অন্তত লাখ টাকার জিনিস রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই শয়তানটিকে কিনি এমপ্লয় করেছিলেন। অর্থাৎ লোকটি কার অ্যাকমপ্লিস।’
‘সেটা অবশ্য মিঃ সুকিয়াসের ব্যক্তিগত ইতিহাস না জানলে বোঝা যাবে না’, বললেন লালমোহনবাবু। তাই নয় কি?’
ফেলুদা বলল, ‘ভদ্রলোকের বিষয় যে আমরা একেবারেই কিছু জানি না তা নয়। অদ্ভুত লোক ছিলেন সেটা ত জানি। চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়ার সঙ্গে উঁচু দরের শিল্পদ্রব্যের সংগ্রহ গড়ে তোলা সাধারণ লোকের কম্ম নয়। আমার ধারণা চিঠিতেও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।’
‘সেটা একবার পড়বেন না?’ লালমোহনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
‘চিঠিটার উপরে “কনফিডেনশিয়াল্” লেখা ছিল সেটা বোধহয় আপনি দেখেননি। ওটা পড়ব যথাস্থানে যথা সময়ে। আততায়ীকে সুকিয়াস দেখেছিলেন বলে মনে হয় না। কাজেই তার আইডেনটিটি ত আর চিঠিতে থাকবে না।’
দশ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসে গেল। আবার ইনস্পেক্টর পাণ্ডে। ফেলুদার সঙ্গে করমর্দন করে বললেন, ‘আপনি ত আমাদের টেক্কা দিয়েছেন দেখছি।’
‘তা দিয়েছি, কিন্তু এখন থেকে এ কেসের ভার সম্পূর্ণ আপনাদের উপর। আমি আর এতে নাক গলাতে চাই না, কারণ তাতে কোনও লাভ হবে না। শুধু আততায়ীকে ধরলে পরে আমাকে একটা খবর দেবেন।’
‘আপনি তার মানে চললেন?’
‘হ্যাঁ। তবে আপনার সঙ্গে হয়তো দু’-একদিনের মধ্যেই আবার দেখা হবে। কারণ আমি সেই চুরির মামলাটা মোটামুটি সলভ করে এনেছি।’
‘বলেন কী!’
‘তাই ত মনে হচ্ছে।’
‘আমরা কিন্তু মিঃ বিশ্বাসের ছেলেকে সন্দেহ করছি। আপনিও কি তাই?’
‘সেটা এখনও বলতে পারছি না। আমায় মাপ করবেন।’
‘আমরা ডেফিনিট প্রুফ পেয়েছি ও ড্রাগসের খপ্পরে পড়েছে। ওর পিছনে একজন লোকও লাগিয়ে দিচ্ছি আমরা।’
‘ওয়েল, বেস্ট অফ লাক্। এখন ত আপনাদের হাতে আরেকটি ক্রাইম পড়ল। আচ্ছা, একটা প্রশ্ন আছে। গুণ্ডা লাগিয়ে খুন সবখানেই সম্ভব এবং সেটা লখ্নৌতেও সম্ভব বোধহয়।’
‘খুব বেশি মাত্রায়।’
‘থ্যাঙ্ক্স।’