এ রাতে কোনও বনমানুষ বা চোরের উৎপাত হয়নি। কর্নেলের নির্দেশে ব্যাগ গুছিয়ে রেখে প্যান্ট-শার্ট পরেই শুয়েছিলাম। শেষ রাতে আজ একটু বেশি হিম পড়েছিল। মশারির ভেতর চাদর খুঁজছি, কর্নেল মশারি তুলে চুপিচুপি বললেন, উঠে পড়ো। সাড়ে চারটে বাজে।
উঠে পড়তে হলো। বারান্দার আলো কর্নেল কখন নিভিয়ে দিয়েছিলেন। বাইরে তখন আবছা আঁধার আর কুয়াশা। বারান্দার দিকে দরজা খুলে সাবধানে দুজনে বেরিয়ে গেলাম। আমরা যখন শিশিরভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, পেছনে কোথাও টম যেন ঘুমের ঘোরে একবার চাপা গর্জন করেই থেমে গেল।
পুবদিকের পাঁচিল ফুট ছয়েকের বেশি উঁচু নয়। দুজনে একে-একে ডিঙিয়ে গেলাম। দিনে দেখেছিলাম, ওপাশে পোড়োজমিতে একটা বাড়ির সবে ভিত উঠেছে। ইটের পাঁজা, পাথরকুচি, লোহালক্কড় আর বালির স্তূপের আড়াল দিয়ে আমরা রাস্তায় পৌঁছুলাম। তারপর কর্নেল বললেন, আমরা কিন্তু কান্দ্রা বাজারে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছি না।
তা হলে কোথায় যাবেন?
পার্বতীর মন্দিরে।
সেখানে কেন?
কোনও প্রশ্ন নয়। চুপচাপ আমার পেছন পেছন এস।
মৃন্ময়ীভবনের গেটের সামনে দিয়ে আমরা কাল বিকেলে যে পথ দিয়ে রুহা প্রপাতে গিয়েছিলাম, সেই পাহাড়ি পথে হেঁটে গেলাম। শিশিরে ঝোপঝাড় ভিজে আছে। ক্রমাগত চড়াই-উত্রাইয়ে ওঠানামা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। কর্নেল বারবার সতর্ক করে দিচ্ছিলেন। পা পিছলে গেলে পাহাড়ের ঢাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ার বিপদ আছে। ততক্ষণে আঁধার অনেকটা কেটে গেছে। লক্ষ্য করলাম, বাঁদিকে নিচে লেকের ওপর কুয়াশা ঝুলছে। পাখিরা ঘুমঘুম স্বরে ডাকাডাকি করছে। আমরা চলেছি লেকের সমান্তরালে। কতক্ষণ পরে পুবের আকাশে সূর্যের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল। তারপর দেখি একটা ভাঙাচোরা মন্দিরের কাছে এসে পড়েছি। অজস্র নানা গড়নের পাথর পড়ে আছে। মন্দিরের ভেতর থেকে একটা বিশাল বটগাছ মাথা তুলেছে। কর্নেল বললেন, এই সেই পার্বতীর মন্দির। এস। ওই পাথরটায় বসে জিরিয়ে নেওয়া যাক।
ঘড়ি দেখলাম। সাড়ে পাঁচটা বাজে। তার মানে, আমরা প্রায় এক ঘণ্টা হেঁটেছি। বুঝতে পারলাম, দিনের আলোয় হেঁটে এলে বড় জোর আধঘণ্টা সময় লাগত।
কর্নেল তার কিটব্যাগ থেকে ফ্লাস্ক বের করে বললেন, সুদেষ্ণাকে ধন্যবাদ দাওঁ জয়ন্ত। সে রাত চারটেয় উঠে চুপিচুপি কিচেনে গিয়ে কফি করেছে। তারপর আমার ফ্লাস্ক ভর্তি করে দিয়েছে। গত রাতেই দুজনে এই চক্রান্ত করে রেখেছিলাম। তুমি বেসিনে হাত ধুচ্ছিলে। টের পাওনি।
ভেতরের দরজা তো বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
আমিও চারটেয় উঠেছি। চক্রান্ত অনুসারে দরজাটা খুলে ভেজিয়ে রেখেছিলাম।
কর্নেলের এই ফ্লাস্কে দুটো কাপ থাকে। বাসি মুখে কফি খেতে খারাপ লাগল না। তবে চায়ের মতো নয়। বেড-টির স্বাদই আলাদা।
কফি খেতে খেতে বললাম, আপনার প্ল্যানটা কী বুঝতে পারছি না।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। বুঝতে পারবে।
কর্নেল চুরুট ধরিয়ে বাইনোকুলারে চারদিক দেখে নিলেন। ততক্ষণে দিনের আলো ফুটে উঠেছে। এটা পাহাড়ের শীর্ষস্থান বলে সূর্যের দেখা পেতে দেরি হলো না। বললাম, আর কতক্ষণ এখানে থাকবেন?
যতক্ষণ রাজেনবাবু না আসেন।
ওঁর সঙ্গে আপনি কখন যোগাযোগ করলেন?
করিনি। করলে তুমি জানতে পারতে।
তা হলে উনি এখানে আসবেন তা—
চুপ। উনি আসছেন। ওঁর অভ্যাস। এস। আমরা গা-ঢাকা দিই।
দুজনে পোড়োমন্দিরের পেছনে গিয়ে গুঁড়ি মেরে বসে রইলাম। প্রায় পনেরো মিনিট পরে দেখি, রিটায়ার্ড জজসায়েব ছড়ি হাতে এগিয়ে আসছেন। আমরা যেখানে বসেছিলাম, সেখানে এসে উনি সেই পাথরটাতে বসে পাশে ছড়ি রেখে করজোড়ে সূর্যপ্রণামে রত হলেন।
প্রায় তিন-চার মিনিট পরে সূর্যপ্রণাম শেষ করে রাজেনবাবু গুনগুন করে। হিন্দিতে কী একটা দোঁহা আবৃত্তি করতে থাকলেন। তারপর ওঁর পাশের একটা ঝোঁপ ঠেলে একটা ভয়ঙ্কর চেহারার গরিলা জাতীয় প্রাণী আচমকা বেরিয়ে এল। তার লোমশ হাতে ধারালো নখ। প্রাণীটাকে দেখামাত্র রাজেনবাবু হতবুদ্ধি হয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন।
আমিও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছি। ভয়ঙ্কর প্রাণীটা অদ্ভুত শব্দে গর্জন করে এক লাফে রাজেনবাবুর কাছে যেই গেছে, কর্নেল রিভলভার বের করে ছুটে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালেন। তারপর চাপা গলায় বলে উঠলেন, এক পা নড়লে মুণ্ডু ফুটো করে দেব। জয়ন্ত! এখানে শিগগির এস!
প্রাণীটি ছবিতে দেখা দানবের মতো প্রকাণ্ড। সে পালানোর চেষ্টা করতেই কর্নেল তার পায়ের কাছে এক রাউন্ড ফায়ার করলেন। অমনি সে মানুষের ভাষায় বলে উঠল, আই বাপ। কর্নেল একলাফে তার কাছে গিয়ে গলার কাছে রিভলভারের নল ঠেকিয়ে বললেন, হরি সিং পালোয়ান/এক কিলো ছাতু খান।
ততক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি প্রাণীটি কে। সে কর্নেলের পায়ের কাছে। উপুড় হয়ে পড়ে দুর্বোধ্য দেহাতি হিন্দিতে কাকুতিমিনতি শুরু করল। কর্নেল ধমক দিয়ে বললেন, চুপসে বৈঠো হরিয়া। জলদি ইয়ে জানোয়ারকা পোশাক উতারো!
নিজেই পিঠের দিকের জিপ টেনে ভয়ঙ্কর বনমানুষের খোলস খুলে হরি সিং পালোয়ান করজোড়ে বলল, মাফ কিজিয়ে সার! হামকো কই কসুর নেহি। তার পরনে পালোয়ান কুস্তিগিরের জাঙ্গিয়া এবং গায়ে হাতকাটা গেঞ্জি।
রাজেনবাবু তার ছড়িটা কুড়িয়ে নিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, ওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলাম। ওঃ। এবার বুঝতে পেরেছি, রুহা প্রপাত এলাকায়। বনমানুষের গুজব তা হলে মিথ্যা ছিল না।
কর্নেল বললেন, মিঃ দ্বিবেদী! একে কি আপনি চেনেন?
রাজেনবাবু বললেন, দেখেছি মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ। সেনসায়েবের বাড়িতেই একে দেখেছি।
এই লোকটা আজ এখানে আপনাকে নিছক ভয় দেখাতে আসেনি। এসেছিল আপনাকে মেরে ফেলতে।
রাজেনবাবু আঁতকে উঠে বললেন, কেন? কেন? আমি ওর কী ক্ষতি করেছি? নরেশ ভার্মার স্যাঙাত নাকি লোকটা?
না। আসলে সমস্যা হলো, আইনত প্রমাণ করা যাবে না যে, এই হরি সিং পালোয়ানই ডাক্তার পাণ্ডেকে ধাক্কা দিয়ে পাথরের ওপর ফেলে দিয়েছিল এবং তার ফলে ডাক্তার পাণ্ডে মারা যান। কাল রুহা প্রপাতের ওপর থেকে এই লোকটাই প্রকাণ্ড একটা পাথর উপড়ে নিচে ফেলেছিল, যাতে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আর একটা লোক মারা পড়ে। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা সম্ভবত সেই নরেশ ভার্মা, যাকে আপনি এখানে দেখতে পেতেন।
হ্যাঁ। কালও নরেশ ভার্মাকে আসতে দেখে আমি ওই মন্দিরের আড়ালে। লুকিয়ে পড়েছিলাম।
তা হলে বোঝা যাচ্ছে, নরেশ ভার্মা আগের কথামতো রুহা প্রপাতের কাছে সেনসায়েবের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিল। সে খুব ধূর্ত লোক। তাই প্রাণে বেঁচে পালিয়ে যায়। নইলে ঠেলে ফেলে দেওয়া পাথরের আঘাতে তার শরীর থেঁতলে যেত। অ্যাকসিডেন্ট! যেমন ডাক্তার পাণ্ডের মৃত্যুকে অ্যাকসিডেন্ট ভাবা হয়েছিল।
রাজেনবাবু করুণ মুখে বললেন, আমাকে কেন মারতে এসেছিল বলুন তো?
কারণ ডাক্তার পাণ্ডে যেমন জানতেন, ডাঃ বি কে সেন মারা যাননি, আপনিও তেমনি জানেন ডাঃ বি কে সেন এখনও জীবিত।
প্রেতাত্মা! প্রেতাত্মা!
কর্নেল হাসলেন। ঠিক আছে। প্রেতাত্মা! তো ডাক্তার পাণ্ডে টাকার লোভে ডঃ বি কে সেনের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বলে মিথ্যা ডেথ-সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন।
আমি বললাম, কিন্তু শ্মশানে তা হলে কার লাশ পোড়ানো হয়েছিল?
অন্য একজনের। মিঃ দ্বিবেদী! আপনি কি বলতে পারেন, সেই লাশটা কার?
রাজেনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, নাহ্। আমি তো ডঃ বি কে সেনের মৃত্যুসংবাদ পরে জানতে পেরেছিলাম।
ডঃ সেনের প্রেতাত্মার দর্শন প্রথম কবে পেয়েছিলেন?
মাসখানেক পরে। এই পার্বতীর মন্দিরে।
সশরীরের দর্শন পেয়েছিলেন?
হ্যাঁ। সশরীরে ঘুরে বেড়ান উনি।
কথা মানুষকে অন্যমনস্ক করে। একটুখানি অন্যমনস্কতার সুযোগে পালোয়ান হরি সিং আচমকা কর্নেলকে এক ধাক্কায় ধরাশায়ী করে ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে উধাও হয়ে গেল। রাজেনবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন, পাকড়ো! পাকড়ড়া!
কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, সমস্যার সমাধান আপনাআপনি হয়ে গেল। পালোয়ানটাকে নিয়ে সমস্যা ছিল। ওকে পুলিশে দিয়ে লাভ হতো না। প্রমাণ করা যাবে না কিছু। বনমানুষের খোলস কোনও প্রমাণ নয়। কারণ ও বলবে, মিঃ দ্বিবেদীকে ভয় দেখিয়ে মজা করছিলাম।
রাজেনবাবু বললেন, তাহলে এবার একা বাড়ি ফিরব কী করে? আপনারা অনুগ্রহ করে আমার সঙ্গে আসুন।
আপনার আর ভয়ের কারণ নেই। আপনি এই বনমানুষের খোলসটা হাতে নিয়ে সোজা মৃন্ময়ীভবনের গেটে গিয়ে সেনসায়েবকে ডাকবেন। তারপর এখানে যা-যা ঘটেছে সব খুলে বলবেন। মিঃ দ্বিবেদী! আপনি একজন রিটায়ার্ড জজ। আপনি হুমকি দিয়ে ওঁকে বলবেন, আপনার কোনও ক্ষতি হলে সেনসায়েব দায়ী হবেন। কিন্তু একটা কথা। আপনি ভেতরে ঢুকবেন না। বাইরে দাঁড়িয়ে খুব চ্যাঁচামেচি করে এসব কথা বলবেন। সেনসায়েবকে আরও বলবেন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার সব গোপন কথা জেনে গেছেন। এই নিন আমার নেমকার্ড। এটা ওঁকে দেখাবেন।
কার্ডটা পকেটে ভরে রাজেনবাবু বললেন, ঠিক আছে। কিন্তু ওই নোংরা জিনিসটা আমি ছোঁব না।
কর্নেল বনমানুষের খোলসটা গুটিয়ে বললেন, উপায় নেই মিঃ দ্বিবেদী। এটাই আপনাকে বাঁচাবে। আপনি এটা সেনসায়েবকে কখনও যেন দেবেন না। দরকার হলে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন।
রাজেনবাবু বাঁ হাতে খোলসটা অনিচ্ছার ভঙ্গিতে তুলে নিলেন। তারপর পা বাড়িয়ে বিড়বিড় করে বললেন, এবার আমাকে নরেশ ভার্মাকে বেকসুর খালাস দিতে হবে। সনৎ সেনকেই জেলে ঢোকাতে হবে। ডঃ বিকাশ সেনের প্রেতাত্মার সঙ্গে দেখা হলে আমি বলব, আপনার ভাই বনমানুষ পোষে।
রাজেন্দ্রলাল দ্বিবেদীর বাকি কথাগুলো শোনা হলো না। কর্নেল বললেন, এখানে আর নয়। চলো জয়ন্ত! আমাদের প্রায় পাঁচ-ছ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। কাল সকালে দেখে গেছি, এই পাহাড়ের নিচের দিকে একটা পায়ে-চলা পথ আছে। রুহা প্রপাত থেকে পথটা এদিকে এসেছে। আমাদের ব্যাগ দুটো নিয়ে এস।
ব্যাগ নিয়ে কর্নেলকে অনুসরণ করে বললাম, পাঁচ-ছ কিলোমিটার দূরে। কোথায় যাবেন?
কর্নেল পিঠে তার ব্যাগ আঁটতে আঁটতে বললেন, কান্দ্রা এলাকার মানচিত্র পেয়ে গেছি। আমরা হাঁটতে হাঁটতে বাসরাস্তা পেয়ে যাব। বাস ধরে চোরডিহা। চোরডিহা রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে আসানসোল। তারপর সোজা হাওড়া।
মানচিত্র কোথায় পেলেন?
এক্স ফাইলের সঙ্গে।
তার মানে–
কর্নেল হাসলেন। তুমি কাল দুপুরে আমাকে পাঁচিল ডিঙিয়ে আসতে দেখেছিলে। আমি পাঁচিল ডিঙিয়ে ঘাটের দিকে গিয়েছিলাম। কারণ পরশু সকালে এই পাহাড় থেকে বাইনোকুলারে এক ভদ্রলোককে ঘাটে ঝোপের ভিতর ঢুকতে দেখেছিলাম। তাই না?
হ্যাঁ। বলেছিলেন কথাটা।
কাজেই আমার জানার দরকার ছিল, ওখানে তিনি কী করছিলেন। তো ঝোপে ঢুকে দেখি, একটা কালো মোড়কে ঢাকা প্যাকেট। মোড়ক খুলে অবাক হয়ে গেলাম। তাড়াহুড়ো করে বাংলায় লেখা সম্বোধনহীন এবং বেনামী একটা চিঠি। চিঠির সারমর্ম হলো : আর যোগাযোগ রাখা সম্ভব হবে না। নরেশ টের পেয়ে গেছে। স্লিনিসটা যত শিগগির সম্ভব যেন খনিকর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয় ইত্যাদি। তো জিনিসটা আর কিছু নয়, একটা ডায়েরি বই। তার ভেতর কান্দ্রা এলাকার মানচিত্র, মানচিত্রে কয়েকটা জায়গায় লাল বিন্দু দিয়ে সম্ভবত স্থাননির্দেশ করা হয়েছে। ব্যস! এবার আমাদের ঊধ্বশ্বাসে পালিয়ে যাওয়ার পালা। পাখি না, প্রজাপতি না, অর্কিড না–যতক্ষণ না নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছুচ্ছি।
শুধু একটা কথা জানতে চাইছি। তারপর মুখ বুজে থাকব। সেই ভদ্রলোক কি–
কর্নেল আমার কথার ওপর বললেন, ডঃ বি. কে সেন।
দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা। কখনও চড়াই, কখনও উৎরাই। আদিবাসীদের বসতিও চোখে পড়ছিল। মাঝে মাঝে রুহা নদী দেখতে পাচ্ছিলাম। এঁকেবেঁকে পাহাড় ও জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে। ক্রমশ বুঝতে পারছিলাম, কান্দ্রা লেক সত্যি প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনও আগ্নেয়গিরির ক্রেটার। কারণ রুহা নদীর সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই।
বাসরাস্তায় পৌঁছুতে প্রায় নটা বেজে গেল। একটা ছোট্ট বাজার এবং বসতি চোখে পড়ল। জায়গাটার নাম সুলতানপুর। খুব খিদে পেয়েছিল। একটা দোকানে গরম গরম পুরি আর জিলিপি খেয়ে খিদে মিটল। কর্নেল কফির বদলে মাটির ভাঁড়ে তারিয়ে তারিয়ে চা খেলেন। তারপর চুরুট ধরিয়ে বললেন, তুমি বুরুডির বন-বাংলোয় বলেছিলে, বড্ড একঘেয়ে লাগছে। কারণ তুমি তোমার কাগজের জন্য একটা চমকপ্রদ স্টোরির প্রত্যাশা করেছিলে। প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। তবে না-কলকাতা ফিরেই কিছু লিখতে যেও না।