ঘরটির ছাদ নিচু, দেখে ঘর না মনে হয়ে একটি সুড়ঙের মতো মনে হয়। আমি স্বচ্ছ একটা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, আমার পাশে দুজন অস্ত্রোপাচারকারী রবেট নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষনের মাঝেই তারা আমার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার শুরু করবে। আমার কাছেই লেন দাঁড়িয়ে আছে, তার মুখমণ্ডল রক্তহীন। আমি আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত কয়টি একটি ভয়ংকর নৈরাশ্যে ড়ুবিয়ে দিতে চাইছিলাম না, প্রাণপন চেষ্টা করছিলাম লেনের সাথে আনন্দদায়ক কিছু বলতে। কিন্তু বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না এবং অনুভব করছিলাম ধীরে ধীরে দুজনেই আরো বেদনাতুর হয়ে উঠছি।
আমি মুখে জোর করে একটা স্বাভাবিক ভাব ফুটিয়ে রেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোটটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কী?
রবোর্টটি থমথমে গলায় বলল, আমার কোন নাম নেই। আমি মানুষ নই তাই আমার নামের প্রয়োজনও নেই।
সত্যি কথা। কিন্তু তুমি কি তোমার দায়িত্ব সত্যিকার ভাবে পালন করতে পার।
অবশ্যি পারি। আমি খুব অল্প সময় আগেই ছয়জনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেছি।
আমি ভাল করে রবোটটিকে আবার দেখলাম, সে নিশ্চয়ই মিয়ারা এবং অন্যান্য নেতাদের মাথায় অস্ত্রোপচার করেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কোথায়?
তাদের দেহটি পরিশোধনাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র মস্তিষ্কটি মহামতি গ্রাউলের মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
কোথায়?
এই ঘরেই রয়েছে। রবোটটি তার যান্ত্রিক হাত দিয়ে দেখালো, কাছাকাছি ছয়টি চতুষ্কোণ সিলিন্ডার সাজাননা।
আমি বুকের ভেতরে এক ধরনের আতংক অনুভব করলাম, কিন্তু সেটা প্রকাশ করে সহজ গলায় বললাম, আমি কী তাদের দেখতে পারি?
পার।
আমি এগিয়ে গেলাম, সিলিন্ডারের উপর স্বচ্ছ একটি ঢাকনা এবং তার নিচে অর্ধস্বচ্ছ এক ধরনের তরলে থলথলে একটি মস্তিষ্ক ভাসছে। এটি যে একজন মানুষের অবশিষ্ট সেটি বোঝার কোন উপায় ছিল না, কিন্তু দুটি চোখ তার, অপটিক নার্ভসহ অক্ষত রয়েছে এবং সেটি নিস্পলক চোখে উপরের দিকে তাকিয়েছিল। আমার ভুলও হতে পারে কিন্তু মনে হল আমাকে দেখে চোখ দুটির মাঝে এক ধরনের চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হল। আমি রবোটটিকে জিজ্ঞেস করলাম, এটি কার মস্তিষ্ক?
মিয়ারার।
আমি কি তার সাথে কথা বলতে পারি?
পার। বলে রকেটটি বুকে ঝুকে পড়ে কী একটা যন্ত্র চালু করে দিল। সাথে সাথে আমি মিয়ারার গলার স্বর শুনতে পেলাম। সে একধরনের উত্তেজিত গলায় বলল, কিহা! লেন! তোমরা?
হ্যাঁ। আমরা। তোমাকে এভাবে দেখব আমি কখনো ভাবি নি। আমি–আমি দুঃখীত।
একথা কেন বলছ? আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, তুমি তুমি তুমি কি ভাল আছ?
আমি অবশ্যি ভাল আছি। আমি চমৎকার আছি। আমি এর থেকে চমৎকার কখনো থাকি নি।
আমি হতবাক হয়ে বললাম, তুমি কেমন করে চমক্কার আছ? তোমার দেহই নেই–
মিয়ারা হাসির মতো একটা শব্দ করে বলল, মানুষের দেহ একটা বাহুল্য ছাড়া কিছু নয়। আমি এখন জানি। তোমাদের যে দেহ আছে সেই অনুভূতিটি তুমি পাও তোমার মস্তিষ্ক থেকে। যদি কারো দেহ না থাকে কিন্তু মস্তিষ্ক তাকে দেহের অনুভূতি দেয় তাহলে দেহের প্রয়োজন কী?
আমি তখনো পুরো ব্যাপারটি বুঝে উঠতে পারি নি। একটু পরে আমি নিজেও এই ধরনের একটি বস্তুতে পরিণত হব, তখন কী আমার ভেতরেও এই ধরনের সুখী পরিতৃপ্ত একটা ভাবের জন্ম হবে? আমি একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি সত্যিই সুখী?
হ্যাঁ। আমি সত্যিই সুখী। সুখ আনন্দ এগুলি হচ্ছে মস্তিষ্কের এক ধরনের অনুভূতি। একজন মানুষ খুব কষ্টের মাঝে বা যন্ত্রণার মাঝে থাকতে পারে, সেই কষ্ট এবং যন্ত্রণার মাঝে থেকেও যদি তার মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি জাগানো যায় তাহলে সে সুখ অনুভব করবে। শুধু তাই নয় তার সেই সুখ হবে সত্যিকারের সুখ।
আমি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললাম, আমি তোমাকে দেখে খুব খুশি হলাম মিয়ারা। কাউকে সুখী দেখলে আমার খুব আনন্দ হয়।
তোমরা এখানে কেন এসেছ কিহা?
সেটি অনেক বড় একটি কাহিনী। তুমি নিশ্চয়ই জানবে। আমি তোমার পাশাপাশিই থাকব।
সত্যি?
সত্যি। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম এবং হঠাৎ করে পুরো ব্যাপারটিকে আমার কাছে অবাস্তব একটি দুঃস্বপ্নের মতো মনে হতে থাকে। আমি লেনের দিকে তাকালাম, তার রক্তশূন্য ফ্যাকাসে মুখে ধীরে ধীরে এক অবর্ণনীয় আতংক এসে ভর করতে শুরু করেছে।
হঠাৎ করে রববাটটি আমার কনুই স্পর্শ করে বলল, কিহা। তোমার অস্ত্রোপচারের সময় হয়েছে।
আমি চমকে উঠলাম, এখান থেকে ছুটে পালানোর একটা প্রবল ইচ্ছাকে অনেক কষ্টে আটকে রেখে আমি শান্ত গলায় বললাম, চল।
লেন পিছন থেকে এসে আমার হাত ধরে বলল, না কি এটা হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না।
আমি সাবধানে নিজেকে লেনের হাত থেকে মুক্ত করে বললাম, আমাদের আর কিছু করার নেই লেন।
লেন হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল, উপরের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল, গ্রাউল। গ্রাউল তুমি কোথায়? কোথায়?
আমি চমকে উঠে বললাম, কী করছ তুমি লেন?
লেনের মুখে হঠাৎ রক্তের ছটা দেখা যায়, তার চোখে জ্বল জ্বল করছে, নিঃশ্বাসের সাথে বুক উপরে উঠছে এবং নামছে মাথায় এলোমেলো চুল, তাকে অপ্রকৃতস্থের মতো দেখাতে থাকে। সে চিৎকার করে বলন, গ্রাউল। তুমি কোথায়?
এই যে আমি এখানে। মহামতি গ্রাউলের স্বর খুব কাছে কোনো জায়গা থেকে শোনা যায়।
লেন চিৎকার করে বলল, আমি তোমাকে দেখতে চাই, তোমার সাথে কথা বলতে চাই।
গ্রাউল প্রায় কোমল স্বরে বলল, তুমি এতক্ষণ এখানে কিহার সাথে ছিলে একটিবার একটি কথাও বললে না, এখন হঠাৎ করে কী বলতে চাও?
আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই?
কী প্রশ্ন?
তার আগে আমি তোমাকে দেখতে চাই। শেষবার দেখতে চাই।
বেশ।
সাথে সাথে সুড়ঙের মতো ঘরটির এক কোণায় আমরা মহামতি গ্রাউলকে দেখতে পেলাম, ঈষৎ সবুজ বর্ণে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষের মাথা। একটু আগে। দেখা গ্রাউলের সাথে তার কোন মিল নেই। এই মানুষটির চেহারা কুর এবং নিষ্ঠুর।
লেন ভয় পাওয়া গলায় বলল, তুমি গ্রাউল।
সবুজ রংয়ের মাথাটি হিংস্র গলায় বলল, হ্যাঁ।
লেন একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলাম অসংখ্য নক্ষত্র জ্বল জ্বল করছে। আমি জানতাম সেই নক্ষত্রের পিছনে রয়েছে আরো নক্ষত্র, আরো নীহারিকা। তার পিছনে আরো নক্ষত্র, অরো নীহারিকা, তার কোন শেষ নেই। আমার সামনে এই অসীম মহাকাশ যার শুরু নেই শেষ নেই।
লেন এক মুহূর্তের জন্যে চুপ করল, মহামতি গ্রাউল স্থির হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, লেন সেই দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, অসীম মহাকাশের ব্যাপারটি আমার ছোট মস্তিষ্ক সহ্য করতে পারল না। আমি ব্যাপারটি চিন্তা করতে পারলাম না। আমার মাথা ঘুরে উঠল, আমি চিৎকার করে আমার মায়ের কাছে ছুটে গেলাম। আমার মা আমাকে বুকে জড়িয়ে বলল, ভয় কি মা আমার! এই তো আমি।
গ্রাউলকে হঠাৎ কেমন জানি বিভ্রান্ত দেখায়। ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, তুমি প্রশ্ন কর–
করছি। প্রশ্ন করছি। লেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গ্রাউলের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার ছোট মস্তিষ্কটি যখন বিশাল একটি ব্যাপার সহ্য করতে পারছিল না আমি সেখান থেকে বের হয়ে এসেছিলাম আমার মায়ের বুকের মাঝে আশ্রয় নিয়ে। আমি তার কথা শুনেছি, তার মুখের কোমল চেহারা দেখেছি, তার দেহের ঘ্রাণ, তার স্পর্শ অনুভব করেছি। আমার সমস্ত ইন্দ্রিয়–আমার মস্তিষ্ককে সেই ভয়ংকর চিন্তা থেকে মুক্ত করে নিয়ে গেছে–
গ্রাউল হঠাৎ ভয়ংকর চিৎকার করে বলল, তুমি কী বলতে চাও?
লেনের চোখ হঠাৎ শ্বাপদের মতো জ্বলতে থাকে। সে হিংস্র স্বরে বলল, তোমার চোখ নেই কান নেই। তোমার ঘ্রাণ নেয়ার নাক নেই, স্পর্শের অনুভূতি নেই। তোমার রয়েছে শুধু এক ভয়ংকর মস্তিষ্ক। মানুষের মস্তিষ্ক থেকে সেই মস্তিষ্কের ক্ষমতা সহস্রগুণ বেশি দুর্বলতাগুলিও সহস্র গুণ বেশি। নিশ্চয়ই বেশি। সেই মস্তিষ্কে যদি হঠাৎ লাগামছাড়া ভয়ংকর একটা ভাবনা এসে হাজির হয় তুমি কী করবে? কী করবে? কোন ইন্দ্রিয় তোমাকে রক্ষা করবে? কোন ইন্দ্রিয়?
গ্রাউলের চেহারা হঠাৎ ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার সবুজ মুখাবয়ব বিকৃত হয়ে যায়, মুখ গহ্বর থেকে ধারালো দাত, লকলকে জিব বের হয়ে আসে। জড়ানো গলার স্বরে সে চিৎকার করে বলল, আসবে না–কোন ভয়ংকর ভাবনা আসবে না, আসবে না–
আসবে। নিশ্চয়ই আসবে। তাই তুমি মহাকাশযানের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষকে তোমার পাশে এনে হাজির করেছ। যদি কখনো সেই ভয়ংকর ভাবনা এসে হাজির হয় তুমি তোমার আশে পাশে আটকে রাখা মস্তিষ্কের সাহায্যে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে। তারা হবে তোমার মায়ের চেহারা? ঘ্রাণ? তার গলার স্বরে? তার স্পর্শ!
লেন হঠাৎ হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মত হাসতে শুরু করে। তার অপ্রকৃতস্থ হাসি সুড়ঙের মতো সেই ঘরে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে। মহামতি গ্রাউলের চেহারা আরো ভয়ংকর হয়ে উঠে তার মুখাবয়ব বিস্তৃত হতে হতে ঘরের ছাদ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সেই ভয়ংকর চেহারা থেকে এক অবিশ্বাস্য আক্রোশ ফুটে বের হতে শুরু করে। লেন সেই ভয়ংকর চেহারার দিকে ছুটে গিয়ে চিৎকার করে বলল, তুমি। ভেবেছ আমি তোমাকে ভয় পাব? তোমার দানবের চেহারা দেখে আমি আতংকে শিউরে উঠব? না। আমি তোমাকে ভয় পাই না। এতটুকু ভয় পাই না। কারণ আমি জানি তুমি তোমার নিজের ভেতরের সেই ভয়ংকর ভাবনার ভয়ে থরথর করে কাপতে থাক। তুমি ভীতু কাপুরুষ–তুমি অসহায় দুর্বল–তুমি তুচ্ছ! ইচ্ছে করলে আমি তোমাকে ধ্বংস করে দিতে পারি। ধ্বংস করে দিতে পারি
না! গ্রাউল হঠাৎ আর্তনাদ করে বলল, না!
হ্যাঁ। লেন হিংস্র গলায় বলল, হ্যাঁ। হ্যাঁ। হ্যাঁ। আমি তোমাকে এখন সেই প্রশ্নটি করব। যে প্রশ্নটির ভয়ে তুমি থর থর করে কাপছ। যে প্রশ্নটি করলে তুমি আমার চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাবে আমি তোমাকে সেই প্রশ্নটি করব। লেন এক মূহুর্ত থেমে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে তীব্র স্বরে বলল, তুমি আমাকে বল, তোমার সেই ভয়ংকর ভাবনাটি কী? বল।
গ্রাউলের মুখাবয়ব হঠাৎ এক অবর্ণনীয় আতংকে বিকৃত হয়ে যায়। চোখের মণি ঘোলাটে হয়ে আসে, মুখের মাংশপেশী থরথর করে কাঁপতে থাকে, তার লকলকে জিভ মুখ থেকে বের হয়ে আসে, মুখের কষ থেকে লোল গড়িয়ে পড়ে। সেই বিকৃত কাতর চেহারায় ভাঙা গলায় বলল, না–না–না–আমি সেটা ভাবতে চাই না–ভাবতে চাই না
তোমাকে ভাবতে হবে! লেন চিৎকার করে বলল, ভাবতে হবে। ভাবতে হবে। ভেবে ভেবে আমাকে বলতে হবে। বলতে হবে।
না। হ্যাঁ। হ্যাঁ। হ্যাঁ। আমাকে বল। লেন হিংস্র গলায় চিৎকার করে বলল, বল।
গ্রাউল হঠাৎ পুরোপুরি ভেঙে পড়ল। অবর্ণনীয় আতংকে থর থর করে কাপতে কাঁপতে বলল, একটা শিশু হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। সামনে একটা রাস্তা। সেই রাস্তা দূর দিগন্তে গিয়ে এক বিন্দুতে মিলে গেছে। শিশুর হাতে একটা ফুলের ঝাপি। সেই ঝাঁপিতে সে রাস্তার পাশে থেকে বুনোফুল তুলছে। সেই ফুল নিয়ে সে ছুটে গিয়েছে সামনে আর দিগন্ত তখন আরো দূরে সরে গিয়েছে। শিশুটি আবার ফুল তুলেছে ঝাপিতে। আবার ছুটে গিয়েছে সামনে দিগন্ত আরো দূরে সরে গিয়েছে। গ্রাউল হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, শিশুটির বুনোফুলের ঝাপি থেকে হঠাৎ সব ফুল ঝড়ে গেছে নিচে, শিশুটি ফুল তুলতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আবার চেষ্টা করছে। তারপর আবার ছুটে গেছে সামনে। তখন সেই দিগন্ত আবার সরে গেছে দূরে। শিশুটি ছুটে যেতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। পারছে না। হঠাৎ ফুলের ঝাপি থেকে সব ফুল ঝড়ে গেল নিচে। শিশুটি সেই ফুল কুড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। চেষ্টা করছে–চেষ্টা করছে–চেষ্টা করছে! পারছে কিন্তু পারছে না। ছুটে যাচ্ছে কিন্তু যেতে পারছে না। পারছে না–পারছে না
গ্রাউলের কথা জড়িয়ে যায়, গোঙানোর মতো শব্দ করতে থাকে সে। চোখের মণি চোখ থেকে ঠিকরে বের হয়ে আসতে থাকে, ঘোলাটে কালচে বেগুনি রংয়ের মতো চেহারা হয়ে আসে তার নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। থর থর করে কাপছে। থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে সে অস্পষ্ট হয়ে আসতে থাকে। অস্পষ্ট হয়ে আসতে থাকে।
আমি লেনের দিকে তাকালাম, সে নেশাগ্রস্থ মানুষের মতো টলছে, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। তাল সামলে কোনভাবে দুই পা এগিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না, জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিল সে। আমি ছুটে গিয়ে তাকে জাপটে ধরলাম। সাথে সাথে সমস্ত মহাকাশযান নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে গেল।
আমি লেনকে বুকে চেপে ধরে রেখে ফিস ফিস করে ডাকলাম, লেন, জেগে উঠো। দেখ তুমি গ্রাউলকে ধ্বংস করে দিয়েছ! দেখ! দেখ!
লেন জেগে উঠল না। আমার বুকে অচেতন হয়ে পড়ে রইল।