০৮. অর্থ সারমেয় ঘটিত
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কাজল আবার তার কাহিনি শুরু করল, সমস্ত পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিয়ে সেই রাতে আমায় বিদায় দিল জোসেফ। একটা ট্যাক্সি নিয়ে গভীর রাত্রে সার্কাসের তাবুতে ফিরে এলাম। পরের দিন যৎসামান্য জিনিস নিয়ে জোসেফ এল আমার আস্তানায়। দুদিন পরে আমার খেলা শুরু হওয়ার কথা। শয়তানই আমার খেলার প্রধান আকর্ষণ। অথচ তখন পর্যন্ত জন্তুটাকে আমি ভালো করে বাগ মানাতে পারিনি। বেগতিক দেখলে ব্ল্যাক জাগুয়ারের খেলা বন্ধ করে দিতে পারি, তবে সেক্ষেত্রে আমার মান-মর্যাদা থাকবে না। কাজেই বেশ দুশ্চিন্তা ছিল। জোসেফের পরিকল্পনা যদি কার্যকরী হয়, তাহলে অবশ্য চিন্তার কারণ নেই, কিন্তু –
বাধা দিয়ে সীমা বলে উঠল, জোসেফের পরিকল্পনার বিষয় কিন্তু তুমি এখন পর্যন্ত কিছুই বলো নি।
যথাসময়ে জানতে পারবি,কাজল বলতে লাগল, এখন বাধা দিস না। সেদিন নৈশভোজন শেষ হওয়ার পর জোসেফকে আমার তাবুতে রেখে আমি রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। মনের ভিতর তখন ঝড় চলছে। পথে পথে ঘুরে বেড়ালাম। রাত এগারোটার পর ফিরে এলাম। তাবুর মধ্যে জোসেফকে দেখলাম। একটা বই-এর পাতায় ডুবে রয়েছে সে। বইটি সাধারণ বই নয়, হাতে-লেখা পুঁথি। অত্যন্ত জরাজীর্ণ, ভাষাও আমার কাছে দুর্বোধ্য। সার্কাসের অন্যান্য লোকজন অধিকাংশই শুয়ে পড়েছে। যারা এখনও শয্যা আশ্রয় করেনি, তারা শয়নের উদ্যোগ করছে। আমি এদিক-ওদিক ঘুরে তাবুর চারদিক পর্যবেক্ষণ করলাম, তারপর ফিরে এসে হাতে-লেখা পুঁথি সম্পর্কে জোসেফকে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম। নিরুত্তরে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার পুঁথির পাতায় মনোনিবেশ করল জোসেফ। একসময়ে বারোটা বাজল। আমি এগিয়ে গিয়ে জোসেফের কাঁধে হাত রাখলাম। জোসেফ জানাল এখনও সময় হয়নি। আমার তখন অসহিষ্ণু অবস্থা। জোসেফের পরিকল্পনা কার্যকরী হয় কি না জানার জন্য ছটফট করছি। কোনো রকমে সময় কাটানোর জন্য বরিস এডার নামে সোভিয়েত রাশিয়ার বিখ্যাত সার্কাস-খেলোয়াড়ের একটি বই নিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে আবিষ্কার করলাম আমার চোখ দুটো অর্থহীন ভাবে বই-এর পাতায় ঘুরেছে, লিখিত বক্তব্যের কিছুই বোধগম্য হয়নি!
সব কিছুরই শেষ আছে। একসময়ে আমার প্রতীক্ষারও শেষ হল। পুঁথি বন্ধ করে উঠল। জোসেফ। এবার সময় হয়েছে। ঘড়িতে দেখলাম কাটায় কাঁটায় একটা। জোসেফ আমায় ইঙ্গিত করতেই আমি তার দিকে একটা থলি এগিয়ে দিলাম। থলিটা খুলল জোসেফ, মস্ত বড়ো একটুকরো মাংস বেরিয়ে এল। পকেট থেকে একটা শিশি বার করল জোসেফ, তারপর ছুরি দিয়ে মাংসের টুকরোটাকে জায়গায় জায়গায় চিরে ফেলল। শিশির ভিতর থেকে এক ধরনের সাদা গুড়ো বার করে সে ছড়িয়ে দিল ছিন্নভিন্ন মাংসের টুকরোর উপর। আমি বুঝলাম মাংসের সঙ্গে মিশে গেল প্রাণঘাতী তীব্র বিষ। সেই বিষাক্ত মাংস নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে দেখলাম আমার বিছানার উপর টান হয়ে শুয়ে পড়ল জোসেফ।
ব্ল্যাক জাগুয়ার শয়তান তখন অস্থির চরণে পায়চারি করছিল খাঁচার মধ্যে। খাঁচাটার পাশে এসে দাঁড়ালাম। হিংস্র দন্তবিকাশ করে আমায় অভ্যর্থনা জানাল শয়তান।
মাংসের টুকরোটা খাঁচার ফাঁক দিয়ে ছুঁড়ে দিলাম। ক্ষুধার্ত শ্বাপদ সেটাকে লুফে নিল। জোসেফের পরামর্শে জন্তুটাকে আমি সারাদিন অভুক্ত রেখেছিলাম।
জোসেফের কাছে শুনেছিলাম। বিষটা অতি ভয়ংকর। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই তীব্র বিষের ক্রিয়া দেখতে পেলাম। শূন্যে থাবা বিস্তার করে হঠাৎ ছটফট করে উঠল জন্তুটা, তারপর নিঃশব্দে শুয়ে পড়ল। খাঁচার ফাঁক দিয়ে আবছা আলো-আঁধারির মধ্যে তার নিস্তব্ধ দেহটা কিছুক্ষণ লক্ষ করলাম, তারপর খাঁচার দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলাম। গায়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে বুঝতে পারলাম জন্তুটার মৃত্যু হয়েছে। তাড়াতাড়ি তাবুতে জোসেফের কাছে গিয়ে শয়তানের মৃত্যুসংবাদ দিলাম। জোসেফ আমাকে আবার ফিরে যেতে বলল শয়তানের কাছে। তাকিয়ে দেখলাম জোসেফের দুই চোখ বুজে গেছে। ফিরে এলাম শয়তানের খাঁচার মধ্যে, স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ করতে লাগলাম তাকে।
কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ তার দেহটা নড়ে উঠল। তারপরই জন্তুটা উঠে বসে আমার দিকে তাকাল। বুকের মধ্যে মুহূর্তের জন্য ভয়ের ধাক্কা লাগল। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না, নিজেকে সামলে নিয়ে পরবর্তী ঘটনার জন্য প্রস্তুত হলাম। ধীরে ধীরে এগিয়ে এল শয়তান, পিছনের পায়ে ভর করে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আমার কাঁধের উপর দুই থাবা তুলে দিল। তারপর ডান থাবা তুলে আমার বাঁ কাঁধে দুবার চাপড় মারল। আমরা যেমন করে কারও কাঁধ চাপড়ে আনন্দ জানাই অবিকল সেই ভঙ্গি!
আমি তাকে বসতে বললাম। বসল। দাঁড়াতে বললাম। দাঁড়াল। বাইরে বেরিয়ে এসে খাঁচার দরজায় চাবি দিলাম। শয়তান বাধা দিল না। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। চোয়ালটা একটু ঝুলে পড়ে আবছা আলোয় কয়েকটা দাঁত ঝকঝক করে উঠল। মনে হল জন্তুটা হাসছে!
এবার ফিরে গেলাম জোসেফের কাছে। তার নাকে হাত দিয়ে বুঝলাম নিঃশ্বাস পড়ছে না। বুকে মাথা রাখলাম, হৃদপিণ্ডে স্পন্দন নেই। পরিকল্পনা অনুসারে ঘড়ি দেখলাম। রাত দেড়টা। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম শয্যাশায়ী জোসেফের প্রাণহীন দেহটার দিকে। হঠাৎ নড়ে উঠল মৃতদেহ! তারপর বন্ধ চোখ দুটো খুলে গেল, শুনতে পেলাম জোসেফের কণ্ঠস্বর, মিঃ চৌধুরী! এবার বিশ্বাস হচ্ছে? কথা বলার ক্ষমতা ছিল না। ঘাড় নেড়ে জানালাম বিশ্বাস হয়েছে।
কাজলের কথা শেষ হল। অস্বাভাবিক স্তব্ধতা ঘনিয়ে এল ঘরের মধ্যে। প্রথম নীরবতা ভঙ্গ করলেন শ্রীময়ী, কাজল, ব্যাপারটা তাহলে কী হল? জোসেফের আত্মা কি জন্তুটার দেহে প্রবেশ করেছিল? তাই যদি হয়, তাহলে জোসেফ জীবন্ত হয়ে উঠলে শয়তানের বেঁচে থাকার কথা নয়।
বেঁচে থাকে না, শুদ্ধস্বরে কাজল বলল, দিনের বেলা শুধু খাদ্য গ্রহণের সময় ছাড়া অন্য সময়ে সার্কাসের লোকেরা শয়তানকে ঘুমোতেই দেখে। আসলে ওটা ঘুম নয়, মৃত্যুর নামান্তর মাত্র। জোসেফ যখন দিনের বেলা চলাফেরা করে, শয়তানের মৃতদেহ তখন পড়ে থাকে খাঁচার মধ্যে। একটা কালো কাপড় দিয়ে খাঁচাটা ঢাকা থাকে। শয়তানকে দিনের মধ্যে একবার খাওয়ানো হয়। এই মাংস আমিই দিয়ে আসি। সেই সময় আমার বিছানায় শুয়ে থাকে জোসেফ। কেউ যদি তখন জোসেফকে লক্ষ করে, তাহলে তার দেহে জীবনের কোনো লক্ষণই খুঁজে পাবে না। অবশ্য আমার অনুমতি ছাড়া আমার নিজস্ব তাঁবুতে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। তাও যদি দৈবক্রমে কেউ আমার তাঁবুতে আসে, তাহলে শয্যার উপর জোসেফকে দেখলে তাকে নিদ্রিত মনে করে স্থানত্যাগ করবে। জোসেফ যে আমার অত্যন্ত অন্তরঙ্গ বন্ধু, এই কয়দিনে সার্কাসের সব লোকই তা জানতে পেরেছে। আমার বিছানায় তাকে শুয়ে থাকতে দেখলে কেউ কিছু মনে করবে না। কাজেই দুপুরবেলা শয়তানের খাওয়ার সময় জোসেফের জীবন্ত মৃতদেহ আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। রাতেও একই অবস্থা। শয়তানের খেলা শেষ হয়ে গেলে সে খাঁচায় ঢুকে মরণঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে, আর শয্যাশায়ী জোসেফের নিস্পন্দ দেহ হঠাৎ প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে আমার তাবু ছেড়ে রওনা দেয় তার হোটেলের দিকে।
এক মাসের মধ্যেই আমি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠলাম। দর্শকরা কালো বাঘের খেলা দেখে মুগ্ধ। হিংস্র শ্বাপদ থাবা দিয়ে আঁচড় কেটে সার্কাসের মাটিতে অঙ্কের সংখ্যা লিখতে পারে, যোগ-বিয়োগ করতে পারে এবং তার প্রভু, অর্থাৎ আমার আদেশ পালন করে নির্বিবাদে। তারা আশ্চর্য হয়ে যায় যখন দেখে আমার হাতে চাবুক পর্যন্ত নেই, শুধু মুখের কথাতেই আদেশ পালন করছে ভয়ংকর শ্বাপদা কালো বাঘকে ঘড়ি দেখতে বললে সে ঘড়ি দেখে মাটিতে আঁচড় কেটে সময় জানিয়ে দেয়। ধরো, ঘড়িতে দেখা গেল নয়টা পনের জন্তুটা নখের সাহায্যে সার্কাসের বালিভরা জমির উপর ইংরেজিতে নয় লিখে একটা লম্বা টান দিল, তারপর লিখল পনের। বলাই বাহুল্য, পরের সংখ্যাও সে ইংরেজিতেই লিখেছিল। এই রকম আরও অনেক খেলা আমরা আবিষ্কার করেছিলাম। জাগুয়ারের দেহে অবস্থান করে মানুষের আত্মা, অতএব আমার কথা বুঝে কাজ করতে অসুবিধা হয় না। কালো জাগুয়ারের অত্যাশ্চর্য খেলা দেখতে ভিড় জমে ওঠে সার্কাসের প্রদর্শনীতে। আমার কমিশন বাড়তে থাকে। অবশ্যই তার একটা অংশ যায় জোসেফের পকেটে। অর্থের আগমন বন্ধ হলে জোসেফের রাগ হওয়ারই কথা। তোমাদের প্রতি, বিশেষ করে মায়ের প্রতি আমার আকর্ষণ বুঝতে পারত জোসেফ। তার ভয় ছিল একসময় হয়তো সব ছেড়ে দিয়ে আমি মায়ের কাছে চলে যেতে পারি। সেই জন্যই আমার সঙ্গে সংস্রব রাখতে তোমাদের নিষেধ করেছিল সে,। তার কথা না শুনলে কী হবে স্পষ্ট করে বলেনি জোসেফ, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি সে তোমাদের হত্যা করার চেষ্টা করবে। তার অর্থের লালসা যতদিন তৃপ্ত না হবে, ততদিন সে আমাকে মুক্তি দিতে চাইবে না।
কাজলের অদ্ভুত বিবরণী শ্রীময়ী আর সীমাকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। একটু চুপ করে থেকে কাজল আবার বলল, ছোটোবেলায় মাকে হারিয়েছি, বাবাকেও খুব বেশিদিন পাইনি। মনে একটা অতৃপ্তি রয়েছে।
একটু থেমে শ্রীময়ীর মুখের দিকে তাকাল কাজল, কয়েকটা বছর আমি তোমার আশ্রয়ে থাকতে চাই, মা! জোসেফের ইচ্ছার দাস হয়ে স্বর্ণগর্দভে পরিণত হতে আমি চাই না। আমি সার্কাসের তাঁবুতে ফিরে গেলে তোমরা নিরাপদ হবে, কিন্তু এতদিন পরে তোমাদের কাছে পেয়ে সার্কাসের জীবনে আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
কেন ফিরে যাবি? শ্রীময়ী আর্দ্রকণ্ঠে বললেন, আমাদেরই বা কে আছে বল? আর বিপদই বা হবে কেন? আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা তুই করতে পারবি না?
পারব। তবে—
কাজল হঠাৎ চুপ করল। দক্ষিণ করতল চিবুকে রেখে কী যেন ভাবতে শুরু করল।
শ্রীময়ী বলে উঠলেন, তবে বলে থামলি কেন? কি বলতে চাস তুই?
কাজল বলল, মা, তোমার কাছে বাবা ত্রিশ হাজার টাকা আমার জন্যে রেখে গেছেন এটা আমি জানতাম না। এতদিনে সুদে-আসলে টাকার অঙ্কটা নিশ্চয়ই আরো বেড়েছে। ওই টাকায় আমার প্রয়োজন নেই। টাকাটা তুমি রেখে দিও। দরকার হলে টাকাটা তুমি সীমার বিয়েতে খরচ করতে পারবে। দরকার হলে বলছি কেন দরকার তো হবেই- আমিও বোনের বিয়ের জন্য একটা মোটা অঙ্কের টাকা তোমার হাতে দিয়ে কাল সকালেই এখান থেকে চলে যাব।
তার মানে? একটু আগে বললি আমার কাছে থাকবি। এখন বলছিস চলে যাবি? এই তোর ভালোবাসা? মায়ের প্রতি, বোনের প্রতি কর্তব্য নেই তোর? টাকা দিলেই সব কর্তব্য করা হল।
আমার বিয়ের জন্য তোমায় ভাবতে হবে না, সীমা ঝংকার দিয়ে উঠল, তুমি তো প্রথম দিন থেকেই আমাদের দুরে ঠেলে দিতে চাইছ। মা যা-ই বলুক আমি তোমায় থাকতে বলব না। আমাদের ভাগ্যে যা হওয়ার হবে, তুমি স্বচ্ছন্দে চলে যেতে পারো।
কাজলের মুখে করুণ হাসি ফুটল, আমি সার্কাসে ফিরে গেলে তোদের বিপদের ভয় নেই। তোদের স্নেহ-ভালোবাসা, মা-বোনের আদর পাওয়ার লোভই আমায় টেনে এনেছে তোদের কাছে। কিন্তু ভেবে দেখছি তোদের বিপন্ন করা উচিত হবে না। আমি তো তোদের কাছে থাকতেই চাই, শুধু জোসেফের ভয়ে
বাধা দিয়ে সীমা বলল, জোসেফ কী করতে পারে দাদা? এটা বিংশ শতাব্দী। দেশে সরকার আছে, পুলিশ আছে। তুমিও একটা নিরীহ নির্জীব গোছের মানুষ নও। একটা জাদুকরের ভয়ে তুমি মা-বোনকে ফেলে চলে যাবে?
ওইখানেই তো আমার পৌরুষে লাগছে সীমা। তবে জোসেফকে তুই তুচ্ছ ভাবিস না। ইউরোপে একসময় ব্ল্যাক ম্যাজিক বলে একধরনের জাদুবিদ্যা প্রচলিত ছিল। ওই বিদ্যা যে-সব জাদুকর আয়ত্ত করতে পেরেছিল, তারা অসাধ্যসাধন করতে পারত। আমার মনে হয় ওই গুপ্তবিদ্যা এখনও পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যায়নি। যে ভাবেই হোক ব্ল্যাক ম্যাজিক নামে কুখ্যাত জাদু নিয়ে অনুশীলন করেছে জোসেফ। সাধনায় কিছুটা সিদ্ধিলাভ যে তার হয়েছে, তা তো আমি স্বচক্ষেই দেখেছি, সেইজন্যেই তো ভয় পাচ্ছি।
–বাজে কথা ছাড়ো। তোমার কোথাও যাওয়া হবে না দাদা। একটু আগেই তুমি বলছিলে আমাদের নিয়ে ভারত-ভ্রমণে বেরিয়ে পড়বে, এখন আবার অন্য সুর গাইছ কেন? না, না, তুমি আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না।
–বলছিস?
–হ্যাঁ। বলছি।
কিন্তু সীমা, তুই তো খুব বেশিদিন আমাদের সঙ্গে থাকতে পারবি না।
–কেন? কেন?
–যখন এসে পড়েছি, তখন দাদার কর্তব্য তো করতেই হবে। একটা ভালো ছেলে দেখে তোর বিয়ে দিতে হবে না?
হঠাৎ বিয়ের প্রসঙ্গ অপ্রত্যাশিত। সীমা কয়েক মুহূর্ত হাঁ করে দাদার মুখের দিকে চেয়ে রইল। তারপরই মুখ লাল আর চোখ নিচের দিকে, ধ্যেৎ! বাজে কথা বোলো না তো।
হেসে উঠে কী যেন বলতে যাচ্ছিল কাজল, বলা হল না। আচম্বিতে মধ্যরাতের স্তব্ধতা বিদীর্ণ করে জাগল এক প্রচণ্ড জান্তব কোলাহল! অনেকগুলো কুকুর তারস্বরে চিৎকার করে উঠেছে বাড়িটার খুব কাছেই!
কাজলের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল, তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল সে।
সীমা বলল, কুকুরের ডাক শুনে এমন ভড়কে গেলে কেন দাদা?
শুনতে পাচ্ছিস না কুকুরগুলো কেমন উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছে?
তাতে ভয় পাওয়ার কি আছে? কুকর তো কত কারণেই চাঁচায়। হয়তো পাড়ায় চোর ঢুকেছে।
–নারে সীমা, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। জানোয়ার নিয়ে বহুদিন কাটিয়েছি। সার্কাসে কুকুরের খেলাও দেখিয়েছি। কুকুরের স্বভাব-চরিত্র আমি ভালোভাবেই জানি। কুকুরগুলো কিছু দেখে খেপে গেছে, কিন্তু ভয়ও পেয়েছে সেইজন্যই ওইভাবে ডাকছে।
হঠাৎ একটা তীব্র আতাঁরব উঠল, স্পষ্টই বোঝা গেল আর্তনাদ করতে করতে কুকুরগুলো বাড়ির সামনে থেকে সরে যাচ্ছে…
মাথার উপর ছাতে একটা শব্দ হল- ধপ!
গুরুভার কোনো বস্তু যেন ছাতের উপর ছিটকে এসে পড়েছে।