০৭.
লুইস সারনির মুখ গোমড়া কারণ কেনড্রিক চায় তার গ্যালারি শনিবার খোলা থাকুক, আর হেড সেলসম্যান হিসাবে শনিবার তার গ্যালারিতে হাজির থাকতে হবে। শনিবার যুবকরা বেশীর ভাগ ঐ গ্যালারি প্রদর্শন করতে আসে, ঐ দিন ভাল ব্যবসা হতে পারে। কেনড্রিক তাকে বোঝায় তুমি জানো চেরী,শনিবার গ্যালারির দরজা খোলা থাকলে হয়ত কোন সাকার ঢুকে পড়তে পারে। তাছাড়া তোমার তো রবিবার আর বৃহস্পতিবার ছুটি থাকছে।লুইসের মুখ গোমড়া করবার কারণ হল–তাকে গ্রেগের ভিলায় যেতে হবে। লুইস ল্যান্ডস্কেপ মোড়ক মুক্ত করে চমকে উঠল এবং সঙ্গে সঙ্গেই কেনড্রিকের উদ্দেশ্যে চীৎকার করে বলে উঠল–আমরা এর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পারব না। চেয়ে দেখুন!
কেনড্রিক ছবিটা নিরীক্ষণ করল-খুবই আধুনিক ছবি। যুবক খদ্দেরদের দারুণ পছন্দ হবে। তারপর সে নির্দেশ দিল ওটা জানলায় টাঙিয়ে দিতে। হ্যাঁ, আমি অবশ্যই জানি জোরে চীৎকার করে উঠল লুইস, ওটা আপনার গ্যালারির মান, ইজ্জত ধুলোয় লুটিয়ে দেবে।
কেনড্রিক এবার রেগে গিয়ে দৃঢ়স্বরে বলল–নিজেকে সংযত কর, তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে চেরী, গ্রেগ চল্লিশ হাজার ডলার ধার নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে। সেটা উসুল করতে হবে?
অগত্যা ক্রিমপিন গ্রেগের সেই অদ্ভুত ল্যান্ডস্কেপটা জানলার উপর টাঙ্গিয়ে রেখে লুইস একটু আগের অপ্রীতিকর প্রসঙ্গটা ভোলবার জন্য একটা ম্যাগাজিনের পাতায় চোখ রাখতে যাবে এমন সময় লেপস্কি গ্যালারিতে ঢুকল, লুইসের মুখটা কঠিন হয়ে উঠল, ওদিকে কেনড্রিকও চমকে উঠল। কোন অশ্লীল উত্তেজক ছবি নেই এই ভেবে সেস্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। যাই হোক, ভেনিসিয়ান মিররের সামনে দাঁড়িয়ে সে তার পরচুলাটা ঠিক করে নিল যদি প্রয়োজন হয় লেপস্কির মুখোমুখি হবে সে।
ওদিকে গ্যালারিতে লুইস তখন তার চেয়ার থেকে উঠেদাঁড়িয়ে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে বলল, আপনি তোমিঃ লেপস্কি?আপনি নিশ্চয়ই আপনার স্ত্রীকে উপহার দেবার জন্য ভাল কোন জিনিস খুঁজছেন, তাই না? আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন স্যার। আপনাকে আমরাকমদামে ভালো জিনিস দিতে পারি। উপহারের জিনিস দেখাই স্যার!
লেপস্কি তার কথার ভ্রূক্ষেপ না করে জানলার দিকে তাকাল, জানালার ওই ছবিটা, রক্ত লাল রঙের চাঁদ আঁকা ছবিটা
লুইস অবাক চোখে তাকাল, তারপর বলল–এই ছবিটা নিয়ে যান, আপনার স্ত্রীর খুব পছন্দ হবে। চোখ কান ঝুঁজে নিয়ে যান স্যার।
আমি ওটা কিনতে চাইনা, খিঁচিয়ে উঠে বলল লেপস্কি। আমি জানতে চাই, ওটা কার আঁকা?
লুইস তার কথায় গুরুত্ব দিল না। রিসেপসন রুম থেকে কেনড্রিক সব শুনছিল। সে এতক্ষণে আত্মপ্রকাশ করল–বলা তো যাবে না,–গ্যালারিতে ঢুকতে ঢুকতে কেনড্রিক বলতে থাকে, –আপনি নিশ্চয়ই ফার্স্ট গ্রেড ডিটেকটিভ লেপস্কি! সু-স্বাগতম। আমার এই ছোট্ট গ্যালারিতে আধুনিক শিল্প কলায় আপনার খুব আগ্রহ দেখছি ।
থামুন তো দেখছি লেপস্কি ধমক দিয়ে বলে উঠল, আধুনিক শিল্পে আমার আগ্রহের কথা হচ্ছে না, আমি জানতে চাইছি শিল্পীর নাম, আর ঠিকানা।
না জানার ভান করে কেনড্রিক বলে–আজকালকার শিল্পীরা নাম প্রকাশে তেমন আগ্রহীনয়, ঠিকানাও জানি না, ছবিতে কোথাও নাম লেখা নেই। বিক্রীর জন্য রেখে গেছে। কবে যে আবার আসবে তা বলে যায় নি।
জিজ্ঞাসাবাদ করে লেপস্কি জানতে পারল শিল্পী কয়েক সপ্তাহ আগে এটি রেখে গেছে। দোকানের কেউই তাকে জানাল না যে, সে দেখতে কেমন! এবং নির্দিষ্ট কার সঙ্গে লেন-দেন হয়েছিল? লেপস্কি জোর দিয়ে বলল এই পেইন্টিংটা জেনি ব্যান্ডলারের খুনের সঙ্গে জড়িত এবং সেই সঙ্গে সে খুনীর বিবরণ দিয়ে গেল এবং সে জানিয়ে গেল সোমবার আসবে।
লেপস্কি চলে যেতেই লুইসের দিকে ফিরে তাকাল কেনড্রিক।
এর সঙ্গে আমাকে জড়াবেন না।লুইস ভয় পাওয়ার মত করে বলে উঠল–দুটো খুনের জন্য দায়ী গ্রেগ। এসব জেনেও পুলিশের কাছে কেন তার নাম প্রকাশ করলেন না?
বিরক্ত কেনড্রিক বলে উঠল–তাকে বলা মানে আমার চল্লিশ হাজার টাকা গচ্চা দেওয়া। ঠিক আছে এ ব্যাপারে আমাকে জড়াবেন না,–লুইস তার কথার পুনরাবৃত্তি করে বলে উঠল–এসব দায়িত্ব আপনার, আর আপনাকেই একা বহন করতে হবে। কথা বলতে বলতে সে গ্যালারী থেকে উধাও হয়ে গেল।
সেদিন ছিল শনিবার, সন্ধ্যা সাড়ে ছটা।কারেন স্টার্নউড তার ডেস্ক পরিষ্কার করে উঠে দাঁড়ায়। অফিসে সে একা নিঃসঙ্গ। কারেন অফিস বন্ধ করে রাস্তায় নামে। এই মুহূর্তে সে কোন একজন পুরুষকে শয্যাসঙ্গী হিসাবে পেতে চায়। ব্রান্ডনও নেই। তার পুরানো বন্ধুরাও সঙ্গিনীদের ডেট দিয়ে রেখেছে আগে থেকেই। তাই সে সী-ভিউ অ্যাভিনিউ দিয়ে মিয়ামী হাইওয়ের দিকে এগিয়ে চলে। একটা তালগাছের নীচে এসে দাঁড়াল, উদ্দেশ্য চলমান গাড়িগুলো। গাড়ি থামিয়ে সুপুরুষ চালক দেখে লিফট দিতে বলা। ফোর্ড মারসিডিস কিংবা ক্যাডিলাক কোন গাড়ির চালককে পছন্দ হল না, শেষে দূর থেকে রোলস এর চালককে দেখা মাত্র কারেন এগিয়ে গেল। সোনালী চুল পুরুষ, একেই তার প্রয়োজন।
গাড়ি থামাতে কারেন জিজ্ঞাসা করল–আমার পথের দিকে যাচ্ছ? চালক তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবল-মেয়েটি তার পেইন্টিং-এর পক্ষে দারুণ হবে। মেয়েটির চোখে মুখে কামনা বাসনার উত্তেজিত ছাপ সুস্পষ্ট। সে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলল–তোমার কোন পথ, সুন্দরী? যাত্রী আসনে উঠে বসে স্মিত হেসে জবাব দিল কারেন–প্যাডলারস ক্ৰীক। স্টীয়ারিং-এর হুইলটা শক্ত হাতে ধরে রেখে ক্রিমপিন বলল–তার মানে সেই হিপি কলোনী, কিন্তু তুমি তো হিপি নও। কারেন জানাল সেখানে তার একটি কেবিন রয়েছে, নিজের নামটাও জানাল। বিস্ময় প্রকাশ করে ক্রিমপিন বলল–তুমি সেই বিখ্যাত বীমা কোম্পানীর মালিক, জেফারসন স্টার্নউডের কন্যা? মিঃ স্টার্নউডের সঙ্গে আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠতা অনেকদিনের।
কারেন তার মুখে বাবার নাম শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, তার নাম জানতে চাইল।
ক্রিমপিন গ্ৰেগ, আমার বাবা সিরাস গ্রেগ কয়েক মাস পূর্বে দুর্ঘটনায় মারা যান। তুমি তার ছেলে? একবার তোমার বাবার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল, আর আজ অদ্ভুতভাবে তার ছেলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তাই না? স্টিয়ারিং হুইলটা এক হাতে চেপে অন্য হাত দিয়ে সুলেমান । পেন্ডেন্টটা স্পর্শ করল আর সঙ্গে সঙ্গেই এক যৌন উত্তেজনা অনুভব করল। কারেন হাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল-ওটা কি? হাতের কাছে পেয়ে গেলাম, তুলে নিলাম। চোখ সরিয়ে নিয়ে ক্রিমপিন বলল-আমাকে কিছু একটা করতে হবে। কয়েক মিনিটের বেশী লাগবে না। তোমার কি খুব তাড়া আছে? সুন্দর সুপুরুষ চেহারা দেখে কারেনের দেহের রক্ত ইতিমধ্যেই চঞ্চল হয়ে উঠেছিল, সে একটু জোরে হাসল তার হাসির দমকে ব্ৰাহীন স্তন জোড়া ব্লাউজের নিচ থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল। বলল–আমরা দুজনে যৌথভাবে করলে হয়ত কাজটা ভাল হবে। সেই মুহূর্তেই তার ক্রিমপিনকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করল। এরপর ক্রিমপিনের গাড়ি হাইওয়ে ছেড়ে প্যারাডাইস অ্যাভিনিউ এর দিকে গতি নিল।
পেনডেন্টটা হাতে নিয়ে ক্রিমপিন প্রশ্ন করল-এর মধ্যে এমন একটা জিনিস আছে, যা, আমি এখনিই ব্যবহার করতে চাই। একটু থেমে জিজ্ঞাসা করল, কেনড্রিকের গ্যালারির জানালার ওপর টাঙান পেইন্টিংটা তোমার কেমন লাগল? কারেন নির্দ্বিধার উত্তর দিল–ওটা কোন ইডিয়েট শিশুর আঁকা কিংবা কোন বয়স্কের পাগল প্রায় আচরণের বহিঃপ্রকাশ, যা সুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করেনা, এটা হয়ত কেনড্রিকের তামাশা মাত্র। কারেনের বক্তব্য শুনে সুলেমান পেন্ডেন্টটা আঁকড়ে ধরল ক্রিমপিন। রুবির উপর চাপ দিয়ে ধারাল ছুরিটা খোলার এক অদম্য ইচ্ছা তাকে গ্রাস করল। নিজেকে সংযত করবার জন্য সে বলল–তুমি উইক এন্ডে কি কর? এখন আমাকে নিয়ে কি করতে চাও?
মোহিনী হাসি হেসেকারেন বলল–আমার কেবিনে চল, জায়গাটা খুব ভাল লাগবে। সেখানে কেবল তুমি আর আমি। এনজয় করা যাবে। তারা কেবিনের কাছাকাছি এসে পড়েছিল। কারেন সেখানে গাড়ি থামাতে বলল। রাস্তায় নেমে তারা পাশাপাশি হেঁটে যেতে লাগল। মাঝে মাঝে ক্রিমপিনের স্পর্শ লাগাতে যৌন উত্তেজনায় তার ইচ্ছা হচ্ছিল এই মুহূর্তে দীর্ঘদেহী ঐ সুপুরুষটিকে দৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে সুন্দর বিছানায় টেনে নিয়ে যেতে। ঝোঁপঝাড়ের পথ ধরে যেতে ক্রিমপিন প্রশ্ন করলে–এখানেই তো ঐ মেয়েটি খুন হয়েছিল? তোমার এই রাস্তা দিয়ে যেতে ভয় লাগছে না?
তোমার মত হিম্যান পাশে থাকতে ভয় কিসের? কারেন তার কেবিনের দরজা খুলে ক্রিমপিনকে আমন্ত্রণ জানাল। উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল ক্রিমপিন, কারেনের চোখে স্থির-দৃষ্টি ফেলে কেনিটার প্রশংসা করল। তারপর সুলেমান পেন্ডেন্টেটার উপর একটা হাত রেখে অপর হাত দিয়ে কারেনের শিরদাঁড়ায় বিলি কাটল। দারুণ যৌন উত্তেজনায় অস্থির হয়ে সে বলে উঠল–ওরকম আর একবার করো প্লিজ। কারেনের শিরদাঁড়ার উপর যতই হাতটা ঘোরাফেরা করে ততই তীব্র কামনার-আগুন কারেনকে গ্রাস করে। ক্রিমপিন একসময় তাকে বিছানার দিকে টেনে নেবার চেষ্টা করতেই কারেন একটু সময় চাইল। তারপর সে তার শরীর থেকে টি-শার্ট, জিনস, তারপর প্যান্টি খুলে ফেলে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে মুখ নিচে করে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে। শিরদাঁড়ায় বিলি কাটার জন্য ক্রিমপিনের কাছে আবেদন করে।
কারেনের নগ্ন পিঠ, নিতম্ব ও সুডৌল পা ক্রিমপিনের মনেও এক যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি করে। কিন্তু সে সুলেমান পেন্ডেন্টটার ওপর চাপ দিয়ে অধিক যৌন উত্তেজনা অনুভব করে। একসময় তার একটা হাত পেন্ডেন্টর রুবির ওপর পড়তে ধারাল ছুরিটা বেরিয়ে এল। এক হিংস্র উত্তেজনায় ক্রিমপিনের চোখ দুটো চিক চিক করে উঠল। ছুরিটা দিয়ে সেকারেনের শিরদাঁড়ার উপর বুলাল। নরম চামড়া কেটে রক্ত গড়ায় কিন্তু যৌন উত্তেজনায় কারেন সে কিছুই টের পেল না। অস্পষ্ট স্বরে, বলল-দাও, আর একবার দাও।
ক্রিমপিন এবার জোরে সেই ছুরিটা তার শিরদাঁড়ায় চেপে ধরতে রক্তের ধারা নামল তার পিঠ বেয়ে এবার যন্ত্রণা অনুভবকরে কারেন লক্ষ্য করল তার বিছানা লাল হয়ে গেছে। ক্রিমপিনের হাতে ধারাল ছুরি দেখেআর্ত চিৎকারকরেউঠলকারেন–তুমিআমার কি করলে?কেনকরলে?আর কিছু বলবার আগেই ক্রিমপিন তার হাতের ছুরিটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল কারেনের ওপর।
.
লুসিলের বাটিকের দোকানের ঢুকতেই সেলসগার্ল কাউন্টারের ওপর ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞাসা করল–বলুন, আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি?আমার স্ত্রীর জন্য একটা ভাল চামড়ার ব্যাগ চাই। কুমিরের চামড়ার ব্যাগ খুব ভাল হবে। ব্যাগটা নিরীক্ষণ করল লেপস্কি। ভালই লাগবে ক্যারলের। ব্যাগটা পাওয়ার পর ক্যারল চাইবে নতুন কোট, নতুন গ্লাভস, নতুন জুতো এর সঙ্গে ম্যাচিং করে।
লেপস্কি দাম জানতে চাইল।
আড়াইশ।
বড্ড বেশী দাম, সঙ্গে অতো নগদ নেই–লেপস্কি জিজ্ঞাসা করল–চেক দিয়ে দেব? মেয়েটি পরিচয় জানতে চাইল লেপস্কির। লেপস্কি তার পরিচয়পত্র মেলে ধরল। ডিটেকটিভ লেপস্কি। সিটি পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির চোখ দুটো বিস্ফারিত হল মিঃ লেপস্কি, আপনাকে বিশেষ ডিসকাউন্ট দিতে পারি। এটার মূল্য একশ সত্তর দিলেও হবে।
লেপস্কি অবাক হয়ে তাকায়। মেয়েটি বলে–আমার ভাই ডাস্টি লুকাস, সে প্রায়ই আপনার কথা বলে থাকে। আপনি নাকি পুলিশ ফোর্সে সব থেকে বেশী স্মার্ট।
ধন্যবাদ, তাহলে ব্যাগটা প্যাক করে দিন। লেপস্কি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল–আপনার মত এমন এক সুন্দরী বোন পেয়ে ডাস্টি নিশ্চয়ই ভাগ্যবান।
মেয়েটি কথাটার অর্থ জানতে চাইল। লেপস্কি মাথা নেড়ে জানাল সে পরে বলবে।
দোকান থেকে বেরল তখন পৌনে সাতটা। ফিরে এল হেডকোয়ার্টারে। সিড হাইনির রিপোর্ট টাইপ করে টেরেলের কাছে দিয়ে রাত এগারোটা পনেরই এ বাড়ি ফিরল লেপস্কি। টেলিভিশনে মধ্য রাতের ফিল্ম সবেমাত্র শেষ হয়েছে তখন সুইচ অফ করে ক্যারল তার দিকে মৃদু হেসে সম্ভাষণ জানাল–শুভ দিন শুরু হল। আর ঠিক এই সময়ই তোমাকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা-লেপস্কি ক্যারেলের হাতে হাত ব্যাগটা তুলে দিয়ে বলল-এটা তোমার জন্মদিনের উপহার।ও টম! আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ক্যারল বলল–আমি ভেবেছিলাম তুমি ভুলে গেছ। ফাস্ট গ্রেড ডিটেকটিভরা কিছুই ভোলে না।
হঠাৎ টেলিফোন বাজার শব্দে লেপস্কির ঘুমভাঙল,রাত আড়াইটাবাজে, হেডকোয়ার্টার থেকে বেইগলার ফোন করেছে। তার কাছ থেকেই লেপস্কি জানতে পারল কারেন স্টার্নউড খুন হয়েছে।
আতঙ্কে অ্যামেলিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিল সে। বিলাসবহুল শয়নকক্ষের মাঝেই সে চোখ মেলে তাকাল, খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল–বেলা নটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। বেল টেপামাত্রই রেনল্ডস হাজির হল।
কফি পরিবেশন করতে তার হাত কাঁপছিল, তুমি বড্ড বেশী মদ খেয়েছো বিরক্ত স্বরে অ্যামেলিয়া বলল। রেনল্ডস তা স্বীকার করে প্রশ্ন করল–আপনার ব্রেকফাস্ট দরকার? না, ক্রিমপিন কোথায়? তিনি তার অ্যাপার্টমেন্টেই আছেন। রেনল্ডস-এর কাছ থেকেই সে জানতে পারল ক্রিমপিন গতকাল রাত দশটার পরে বাড়িতে এসেছে। রেনল্ডসঅ্যামেলিয়ার নির্দেশে টিভি চালিয়ে দেয়। টেলিভিশনের পর্দায় প্রথমে হ্যামিলটনের চেহারা ভেসে উঠল, আর তার পরই কারেন স্টার্নউডের কেবিনের দৃশ্য, তার মৃতদেহের স্থির চিত্র। হ্যামিলটনের বিষাদপূর্ণ কণ্ঠস্বর–পাগল খুনী আবার এক মহিলাকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে এই নিয়ে একই সপ্তাহে তিনটি খুনহ্যামিলটনবলতে থাকে–পুলিশের দৃঢ় ধারণা, কেউ নিশ্চয়ই খুনীকে লুকিয়ে রাখছে। মিঃ জেফারসন স্টার্নউড তার কন্যার হত্যাকারীর হদিশকারীকে দুলক্ষ ডলার পুরস্কার দেবেন, ঘোষণা করেছেন।
সংবাদ দাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে। টিভি সুইচ অফ করে দিতেই এক অদ্ভুত নীরবতা ঘরটাকে গ্রাস করল। রেনস ভাবছিল-সেএই পাগল খুনীর কথা ফাস করে দেবে। অ্যামেলিয়া তার মনের কথা টের পেয়ে বলে উঠল-রেনল্ডস! আমরা কিছুই বলব না। এক কোটি ডলার পেলেও বলব না। আমার কথা তুমি একবার ভেবে দেখ, আমার ছেলে পাগল খুনী জানাজানি হলে আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমার আনুগত্যের উপর আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। রেনল্ডস তার মনের ভাব চেপে গিয়ে বলল-হ্যাঁ ম্যাডাম, আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
অ্যামেলিয়া তার মাইনে বাড়িয়ে দেবার আশ্বাস দিল। রেনল্ডস তার ঘরে চলে গেল।
ওদিকে শহরের এক প্রান্তে কেনড্রিক প্রোগ্রাম দেখে তার বিলাসবহুল ঘরে বসে ভাবতে লাগল–এক লক্ষ ডলার পুরস্কার। সে নিজেকে পুরস্কারের সম্ভাব্য দাবীদার ভাবতে লাগল কিন্তু তার কাছে নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ নেই। আর গ্রেগের মত সোনালী চুলের অনেক লোকই তো শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খদ্দেরদের ব্যাপারে গোপন থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। লুইসকে ফোন করে জানতে ওদিকে টিভির সুইচ অফ করে ক্রিমপিন ভাবল–কারেনের মত এক সুপরিচিত গণিকাকে হত্যা করে সে মস্ত বড় ভুল করেছে। তাঁর খবর কারা জানে? কেবল তার মা আর রেনল্ডস। তার মায়ের সামাজিক প্রতিষ্ঠা তাঁর কাছে সব কিছু। আর রেনল্ডস একটা মাতাল। মদের জন্য আর টাকার জন্য বিশ্বাসঘাতকতা সে অবশ্যই করতে পারে। রেনল্ডস এখন রান্নাঘরে। ক্রিমপিন সেই সুযোগে রেনল্ডস এর ঘরে ঢুকে টেলিফোনের এক্সটেনসন লাইনটা কেটে দিল সুলেমান পেনডেন্টের ছুরি দিয়ে। তারপর তার ঘরের তালা থেকে চাবিটা খুলে নিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে এল করিডোরে।
রেনল্ডস রান্নাঘর থেকে ফিরে ঘরে গেল। আর তৎক্ষণাৎ ক্রিমপিন তার ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে রেনল্ডসকে ঘরবন্দী করে রাখল।
এতক্ষণ ক্রিমপিনের সব কার্যকলাপ ক্রিসি তার ঘর থেকে উঁকি মেরে দেখছিল। সেও হ্যামিলটনের অনুষ্ঠান দেখেছে। খুনের বৃত্তান্ত বুঝতে না পারলেও দুলক্ষ ডলার পুরস্কারের প্রতি সে আগ্রহ প্রকাশ করল।
ওদিকে রেনল্ডস ঘরে ঢুকে মনের সুখে প্রথমে স্কচ গলাধঃকরণ করে। তারপর খবর দেবার জন্য পুলিশকে ফোন করে কিন্তু ডায়াল টোন পায় না। নিচের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখে এক্সটেনশন লাইন কাটা। সঙ্গে সঙ্গে তার সারা দেহের মধ্যে ভয়ঙ্কর হীমশীতল শিহরণ খেলে যায়, তার দিন এবার ফুরিয়ে এল কি? সে কি খুনীর চতুর্থ শিকার? স্কচের নেশায় তার পা দুটো টলছে। সেই অবস্থাতেই সে দরজা খুলতে গেল আর তখনি বুঝল সে বন্দী হয়েছে।
অ্যামেলিয়াকারেনেরকথাভাবছিল। সেতার স্বামীর সঙ্গেঅনেকবার তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। পার্টিতে কারেনকে অনেকবার দেখেছে।কারেনের জন্য সেদুঃখ প্রকাশকরল। রেনল্ডস-এরসিদ্ধান্ত তারমনে ভেসেউঠল সেইসময়। আর ঠিক সেই মুহূর্তেইক্রিমপিন ঘরেঢুকল, একটা চেয়ারেবসল। তার হাতের আঙুলগুলো সুলেমান পেনডেন্টের উপর বিলি কাটতে লাগল।
অ্যামেলিয়ার চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে ক্রিমপিন বলল-আমার মত তোমারও মনে নিশ্চয়ই একটা সমস্যা জন্ম নিয়েছে আর সেটা হল রেনল্ডস। তাই আমাদের দুজনের স্বার্থেই রেনল্ডসকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত। তাতে আমার যেমন ভয় থাকবেনা, তুমিও তোমার তথাকথিত সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। ক্রিমপিনবাছা আমার-ভয়ে ভয়ে অ্যামেলিয়া বলে উঠল-একাজ তুমি করতে যেওনা। তুমি অসুস্থ, ডঃ বেইসনের পরামর্শ নাও। সে তোমাকে সাহায্য করতে পারবে।
মায়ের কথা শুনে ক্রিমপিনের মুখে এক জ্বর হাসির রেখা ফুটে উঠল। তার জ্বলন্ত চোখ দুটোতে ঘাতকের চাহনি। অ্যামেলিয়া ভয়ে-শিউরে উঠল। সেই মুহূর্তেই টেলিফোনটা বেজে উঠল। দূরভাষে কেনড্রিকের গলা। সে জানতে চাইছে যে পুলিশের কাছে পেইন্টিং এর পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পীর অর্থাৎ তার নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করবে কিনা। সোমবার পুলিশ আমায় জিজ্ঞাসাবাদ-এর জন্য আসবে কারণ তাদের ধারণা তার এই আঁকাগুলো খুনের অর্থ বহন করছে। দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিমপিন বলে উঠল–পুলিশকে আপনি জানিয়ে দেবেন, আপনি কিছুই জানেন না। আমার কথামত কাজ না হলে চিরদিনের মত আপনাকে সরিয়ে দেব।
.
০৮.
দুলক্ষ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করবার পরিপ্রেক্ষিতে প্যারাডাইস সিটি পুলিশের হেডকোয়ার্টার যেন একটা পাগলা-গারদে পরিণত হল। টেলিফোনের লাইনও প্রত্যেকটি ডিটেকটিভ সাক্ষাৎকার নেবার জন্য ব্যস্ত। একটি মোটাসোটা যুবক জানাল–শনিবার সন্ধ্যায় কারেন চলমান গাড়িতে লিফট পাওয়ার চেষ্টা করে। সে লিফট দেবার জন্য গাড়ির গতি কমিয়ে এনেছিল কিন্তু তার চেহারা কারেনের বোধহয় পছন্দ হয়নি।
এই রিপোর্ট থেকে টেরেল বা অন্যান্যরা নিশ্চিত হয় যে, কারেন সেদিন তার ঘাতকের গাড়িতেই লিফট পেয়েছিল।
জ্যাকবি লেপস্কির উদ্দেশ্যে বলে–আমার ধারণা চতুর্থজ্যাকেটটি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। বোধহয় মিসেস গ্রেগ মিথ্যে বলেছেন যে, সেটা স্যালভেসন আর্মিতে দান করেছেন।
কিন্তু কেন, সে অমন মিথ্যে ভাষণ দিতে যাবে? জ্যাকবি বলল-লেভিনের কাছ থেকে জানা গেছে মিঃ গ্রেগের সঙ্গে মিসেস গ্রেগের ভাল সম্পর্ক ছিল না। তাদের একটি পুত্র সন্তান আছে।মিসেস গ্রেগ নাকি তার স্বামীর তুলনায় পুত্রটিকে অত্যধিক স্নেহ করেন, তার প্রতি ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু সেই ছেলেটি মাঝে মাঝে এমন কাজ করে বসে, যা অস্বাভাবিক গোছের, তবে লেভিন ছেলেটিকে এখনও দেখেনি। লেপস্কি জ্যাকবির কথায় সায় দিয়ে বলল–তুমি ঠিকই ধরেছ। ধরো, ওর ছেলেই খুনী।মিসেস গ্রেগ মা হিসাৰে নিশ্চয়ই তাকে আড়াল করতে চাইবে। একটু থেমে বলল আমাদের এখন জানা দরকার মিঃ গ্রেগের পুত্র কেমন দেখতে?
কিন্তু এখানে মিসেস গ্রেগকে নিয়ে যত ঝামেলা, বলল জ্যাকবি-মেয়রের সঙ্গে ওঁর খুব দোস্তি আছে ম্যাক্স, কাউকে বলো না এবিষয়ে। এর মোকাবিলা আমি করব। ও, কে?
এদিকে অ্যামেলিয়া ভাবছিল রেনল্ডস-এর শেষ পরিণতির দৃশ্য সে নিজের চোখে দেখবেনা। ক্রিমপিন হয়ত আজ রাতে ওকে খতম করে ফেলবে। ক্রিমপিন বাড়ি থেকে বেরোবার পরই সে ঠিক করল স্প্যানিশ বে হোটেলে সে সঙ্গীদের সঙ্গে দুদিন কাটিয়ে আসবে।
স্যুটকেস গুছিয়ে নিয়ে বেরোতে যাবে অ্যামেলিয়া, এমন সময় ক্রিমপিনের মুখোমুখি হল সে। –এটা খুব বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে অ্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসল সে-দুদিন পরে তোমাকে ফোন করে আসার জন্য জানিয়ে দেব। ততক্ষণে সব কাজ আমি শেষ করে ফেলছি।
ক্রিমপিন তার নিজের রোলস গাড়িটা মাকে ব্যবহারকরার জন্য দিল। ছেলের সঙ্গেকরমর্দন করে কাঁপাকম্পিত পদব্রজে অ্যামিলিয়া বেরিয়ে গেল। কাঁপা কাঁপা হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং চেপে ধরল।
ফ্লয়েড কেনড্রিকের কাছ থেকে ফোন পেয়েই লুইস কয়েক মিনিটের মধ্যে ছুটে এল তাঁর গ্যালারিতে। দীর্ঘ সময় ধরে দুজনের মধ্যে আলোচনা হল।–কোন কিছু গোপন করতে সে না চাইলে নাম প্রকাশেই বা অনিচ্ছুক হবে কেন?–বিরক্ত লুইস বলল।
এতক্ষণ কেনড্রিক জানত লুইস পুরস্কারের ব্যাপারে কিছু জানে না। কিন্তু লুইস যখন বলল–এখানে আসার আগে সে রেডিওতে পুরস্কারের কথাটা শুনে এসেছেকথাটা শুনে কেনড্রিকের চোখ দুটো পাথর হয়ে গেল। নেড্রিক তাকে বোঝাবার চেষ্টা করল–পুলিশের একবার ইনফরমার হওয়া মানে চিরদিনের মত ইনফরমার বনে যাওয়া। ক্রিমপিন গ্রেগকে আমি কথা দিয়েছি। আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারিনা। তুমি কি চাও, আমরা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলি?
কিন্তু তাই বলে একজন খুনীকে আড়াল করতে হবে?লুইস প্রতিবাদ করে উঠল। এ ব্যাপারে আমি নিজেকে জড়াতে চাই না পুলিশকে যা মিথ্যে বলবার তা আপনিই বলবেন।
শান্ত হওয়ার চেষ্টা করো চেরী–মৃদু হেসেশান্ত গলায় কেনড্রিক তাকে বোঝাল-উত্তেজিত হয়ো না। যদি প্রয়োজন হয় লেপস্কির কাছে তোমাকেও মিথ্যে বলতে হবে।
.
কেন ব্রান্ডন সোমবার সকালে অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখে তার প্রাক্তন অফিস সেক্রেটারী মেরী গুড আন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মধ্যবয়স্কা, মোটাসোটা, গোলগাল চেহারা এবং বেশ অভিজ্ঞ সে, কেনের মনে হল তার কাছে ঈশ্বরের দূত রূপে যেন মেরীকে পাঠান হয়েছে।
কুশল বিনিময়ের পর মেরীবলল–গতকাল মিঃ স্টার্নউডের সেক্রেটারী আমাকে নির্দেশ দেয় যে কারেনের স্থানে আমাকে কাজ করতে হবে। মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনে মিঃ স্টার্নউড দারুণ ভেঙ্গে পড়েছেন, বেচারা স্টার্নউড! মেয়ের প্রশংসায় সবসময় পঞ্চমুখ হয়ে থাকতেন।
অফিসের দরজা খুলে কিছু কথা বলার পরে কেন তাকে নির্দেশ দেয় ফাইলগুলো দেখবার জন্য। আর সে দিনের ডাকগুলো পরীক্ষা করতে।
.
গতকাল রবিবারটা কেনের কাছে দুঃস্বপ্ন বলে মনে হয়েছিল। কারেনের মৃত্যুর খবরে সে বিচলিত হয়ে গেছিল। জেফারসন স্টার্নউডকে সে ফোন করে। জেফারসনের অনুপস্থিতিতে কেনের সঙ্গে কথা হয় তার সেক্রেটারীর। কেটির বাবা জাজ লেসি এখন অনেকটা সুস্থ। ডঃ হেইঞ্চ কেটিকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন তার বাবার বিপদ কেটে গেছে। তাই কেটি কেনের সঙ্গে চলে এসেছে। প্লেনে কেনের পাসে বসে তাঁর হাত ব্যাগ খুলতেই চোখে পড়ে গল বোতমটা। কেটি সেটা তার হতে তুলে দিয়ে বলল–এই নাও তোমার বোতাম। কেনের সেই মুহূর্তে মনে পড়ল কারেনের কথা। কারেন একটা ডুপ্লিকেট বোম জোগাড় করবার জন্য কি চেষ্টা না করেছিল। বেচারী, ওর ভালবাসার প্রতিদান কোনদিনও সে দিতে পারবে না। ওর প্রেম চিরন্তন। কেটির বিছানায় ওকে উপভোগ করার মানসিক যন্ত্রণাটা এখন তার মন থেকে উধাও। কারেনের প্রতি ঘৃণার বদলে শ্রদ্ধায় তার হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
শহরের অপর প্রান্তে কেনড্রিকের গ্যালারিতে লেপস্কি ও সে আলোচনা করছিল। লুইস মার্নি পাশের ঘর থেকে আড়ি পেতে তাদের কথা শোনবার চেষ্টা করছিল।
কেনড্রিক সাফ কথা জানিয়ে দিল সে শিল্পীর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার নাম ঠিকানা সে কিছুই জানাতে পারবে না। যদি লেপস্কি তাকে নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ দেখায়, যে শিল্পী এই তিনটি খুনের সঙ্গে জড়িত, তবেই সে মুখ খুলবে। লেপস্কি বুঝতে পারেনা সে কি করে কথা বার করবে। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে কেনড্রিক বলল–মিঃ লেপস্কি, আমার মনে হয় চীফের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমার অসুবিধাটা বুঝতে পারবেন।
পরাজিত লেপস্কি উঠে দাঁড়ায়। যাবার আগে বলে যায়–ঠিক আছে। আপনি মুখ খুললেন না। আপনি যখন ঝামেলায় পড়বেন, সেটা হবে আপনার আসল ঝামেলা।দ্রুত পদক্ষেপে লেপস্কি দোকান থেকে বেরিয়ে আসে।
লুইস এঘরে এল। তাকে দেখে রাগে ফুঁসে উঠল কেনড্রিক–দেখলে চেরী, এই স্টুপিড পুলিশটা কিরকম ব্লাফ দিয়ে গেল আমাকে।
.
সাড়ে দশটার মধ্যে কেন তার অফিসের যাবতীয় কাজ সেরে ফেলল। এবার সেনতুন বিজনেস সংগ্রহ করবার জন্য বাইরে বেরোতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে ডিটেকটিভ লেপস্কি তার অফিসে এল। তার পূর্ব ব্যবহারে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করল কেন।
হাসি-খুশী মেজাজে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর জানাল–সে তাঁর জ্যাকেটটা ফেরৎ দিতে এসেছে।
কেন একটু হেসে বলল-আশা করি আর কোন ঝামেলায় জড়াতে হবেনা।
তাকে মিথ্যে ঝামেলায় জড়ানোর জন্য লেপস্কি দুঃখ প্রকাশ করল।
তারপর কোনরকম ভূমিকা ছাড়াই বলল-কারেন ও অন্যান্য খুনের আসামীকে ধরবার জন্য কেনের কাছ থেকে সে সাহায্য পাবার আশায় এসেছে।
ব্রান্ডন জানতে চাইল তাকে কি করতে হবে! লেপস্কি বলল-আপনি সিরাস গ্রেগের নাম শুনেছেন? অবাক চোখে লেপস্কির দিকে তাকিয়ে কেন বলে–তিনি আমার মক্কেল ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি মারা যান।
ওর ছেলে ক্রিমপিন গ্রেগ সম্বন্ধে কিছু জানেন?-না, তাঁর সঙ্গে কারবার হয়নি এখনো। তাঁকে চোখেও দেখিনি। কিন্তু ওর ব্যাপারে এত কৌতূহল কেন বলুন তো?
লেপস্কি বলল–এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি তো জানেন, গলফ বল বোম লাগানো জ্যাকেটটার মালিক চারজন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সিরাস গ্রেগ। মিসেস গ্রেগ জানান, সেটা স্যালসেভন আর্মিতে দান করা হয়েছে কিন্তু তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ধারণা, মিসেস গ্রেগের রহস্যময় পুত্র ক্রিমপিন গ্রেগ সম্ভবতঃ খুন করে থাকবে ঐ জ্যাকেটটা পরে।
স্তম্ভিত ব্রান্ডন বলে–এ ব্যাপারে আমার কি করবার আছে? এতো পুলিশের কাজ… জানি মিঃ ব্র্যান্ডন, লেপস্কি বলে–আমরা পুলিশের লোক বলে অসুবিধাটা বেশী। স্বয়ং মেয়র মিসেস গ্রেগের সহায় আর শহরের সব থেকে শক্তিশালী ও স্মার্ট অ্যাটর্নির মক্কেল এই গ্রেগ পরিবার। আমরা নির্দিষ্ট কোন প্রমাণ পাইনি ক্রিমপিন গ্রেগের বিরুদ্ধে। তাই পুলিশী অভিযান চালাবার পর যদি আমাদের ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে গ্রেগ পরিবার আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশের বিরুদ্ধে।
ব্রান্ডন লেপস্কির কথা বুঝতে পারলেও তার কার্যকরী ভূমিকা সম্পর্কে কোন ধারণা করতে পারেনা।
লেপস্কি তাকে বুঝিয়ে বলে–আপনি তার কাছে যাবেন মূল্যবান ল্যান্ডস্কেপগুলো ইনসিওর করানোর প্রস্তাব নিয়ে। আর কথা বলার সময় দেখে নেবেন–তার লম্বা সোনালী চুল কিনা, গুচ্চি জুতো ব্যবহার করে কিনা। কিন্তু ব্রান্ডন তাতে রাজি হল না।
তখন লেপস্কি ধূর্ত নেকড়ের হাসি হেসে কেনের দিকে ছুঁড়ে দিল তার শেষ হাতিয়ার-মিঃ ব্রান্ডন, আপনি যদি ক্রিমপিন গ্রেগের হদিশ করে দিতে পারেন, তাহলে মিঃ স্টার্নউডের ঘোষিত দুলক্ষ ডলার পুরস্কার আপনি জিতে নিতে পারেন। এতেই কাজ হল। বিস্মিত কেন অবাক চোখে লেপস্কির দিকে তাকাল, সত্যি! আপনার কথা আমি বিশ্বাস করতে পারি তো?
অত টাকা পাবার আশায় সে রাজি হয়ে গেল। তার কাছ থেকে সাড়া পাওয়া মাত্র লেপস্কি হেড কোয়ার্টারে ফোন করে জানায় জ্যাকবি যেন এখনি গাড়ি নিয়ে কেনের অফিসে চলে আসে।
লেপস্কি, জ্যাকবি ও কেন একাসিরা ড্রাইভের দিকে অগ্রসর হল।
আগে কেনের গাড়ি ছুটে চলেছে, তারপর লেপস্কি ও জ্যাকবির গাড়ি। জ্যাকবিকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছিল।
ব্রান্ডনের কথা একবার ভেবে দেখ, যদি বিপদে পড়ে? ধরো, গ্রেগ যদি আমাদের অনুমান মত সত্যই খুনী হয়? আমরা জানি, এই খুনী একজন সাইকোপ্যাল। ধরো, সে যদি ব্র্যান্ডনকে খুন করে? ওকে কাজে লাগানোর আগে চীফের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ ছিল।
তুমি অহেতুক ভাবছ ম্যাকস ব্রান্ডন স্বইচ্ছায় বিপদ বরণ করেছে। পুরস্কারের অর্থটা সে একাই ভোগ করবে।
লেপস্কি বলতে লাগল আমি তাকে সেই জ্যাকেটটা পরে যেতে বলেছি কারণ সেটা দেখলে গ্রেগের মধ্যে ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলে আমরা বুঝব সেই খুনী তবে, আমি ব্রান্ডনকে সতর্ক করে দিয়েছি সে যেন ভিলার ভেতরে প্রবেশ না করে।
ইতিমধ্যে একাসিরা ড্রাইভে তারা পৌঁছাল। পূর্বের কথামতই গ্রেগ ভিলা থেকে একশ গজ দূরে গাড়ি থামিয়ে কেন হাঁটা পথে এগোচ্ছিল। লেপস্কি, জ্যাকবি তাকে অনুসরণ করে। এখানে এসে শেষবারের মত লেপস্কি কেনকে সাবধান করে দিল।
কেন ব্রান্ডন ভিলার মধ্যে প্রবেশ করল। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর প্রবেশ পথের দরজা খুলে গেল। কেনের সামনে যে লোকটি দাঁড়িয়ে তাকে দেখে কেনের দেহে আতঙ্কের-শিহরণ খেলে গেল। দীর্ঘ দেহী সোনালী চুলে মাথা ভর্তি পরনে গুচ্চি জুতো। লোকটি কেনকে দেখে হাসল, তার ক্রুর হাসিটা সহ্য করতে পারল না কেন। তাড়াতাড়ি বলে–আপনাকে বিরক্ত করবার জন্য আমাকে মাফ করবেন। আপনিই কি মিঃ গ্লেগ?
প্রশ্নটা এড়িয়ে ক্রিমপিন বলল-আপনার পরনের জ্যাকেটটা খুব সুন্দর। এরকম একটা জ্যাকেট আমার বাবারও ছিল।ভয়ে কেনের গলা শুকিয়ে গেছে, পালাতে পারলে বাঁচে,–কিন্তু তাকে কোন সুযোগই ক্রিমপিন দিল না।
পকেট থেকে একটা অটোমেটিক পিস্তল বার করে ক্রিমপিন গর্জে উঠল–আমি যা বলছি তাই করুন। যদি গুলি না খেতে চান তো ভেতরে আসুন।
কেন ভেতরে ঢুকে ক্রিমপিনের নির্দেশ মত দরজায় খিল লাগিয়ে দিল। ও সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। কেনের কাছ থেকে কোন বিপদের আশঙ্কা নেই ভেবে ক্রিমপিন এবার তাঁর হাতের পিস্তল নামিয়ে তার পরিচয় জানতে চাইল।
কেন স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে বলার চেষ্টা করল,আমার নাম কেন ব্রান্ডন, প্যারাডাইস সিটি অ্যাসুরেন্সের প্রতিনিধি আমি। আপনি যদি আপনার পেইন্টিংগুলোইনসিওরেন্স করান, তার ব্যবস্থা আমি করতে পারি। আপনি কি করে জানলেন, আমি ছবি আঁকি? কেনড্রিক আপনাকে বলেছে? কেন আবার ভয় পেল। লেপস্কি প্রথমে খোঁজ নিতে বলেছিল যে মিঃ গ্রেগ ছবি আঁকে নাকি?
কেন কোনরকমে বলল–কেনড্রিক বলছিল, আপনার কাছে নাকি কয়েকটা মূল্যবান পেইন্টিং আছে, সেগুলো আপনি ইনসিওর করতে চান? হ্যাঁ, সেগুলো সত্যই খুব মূল্যবান–তারপর পিস্তলটা পকেটে চালান করে দিয়ে বলল–আপনাকে সন্দেহ করবার জন্য সত্যি, আমি খুব দুঃখিত! ঠিক আছে, আপনি তাহলে আমার স্টুডিওতে চলুন, ছবিগুলো দেখে আপনিই সেগুলোর দাম ঠিক করে দেবেন।
দেখার কোন প্রয়োজন নেই। আপনি কত ইনসিওর করবেন বলুন। আমরা সেই পরিমাণ অর্থের পলিসি করে দেব। ক্রিমপিন তার কথায় গুরুত্ব দিল না, বলল–খুব বেশী সময় লাগবে না, আমি কতকগুলো জরুরী বিষয় স্টাডি করছি, আমি জীবন্ত ছবি আঁকতে চাই।
সুলেমান পেনডেন্টটা হাতের মুঠোয় চেপে ধরতেই ক্রিমপিন এক তীব্র যৌন উত্তেজনা অনুভব করল। তার চোখদুটো ঘোলাটে হয়ে গেল। আঁতকে উঠল কেন–আমি বরং কাল একবার আসব। আপনি ততক্ষণ একটা তালিকা তৈরী করে রাখুন। । ততক্ষণে ক্রিমপিনের চোখ দুটো উত্তেজনা ও রাগে চিকচিক করে জ্বলে উঠতে লাগল। ততক্ষণে সে সুলেমানের পেন্ডেন্টটা প্রায় খোলার উপক্রম করে ফেলেছিল। তার দুচোখে খুনের নেশা। এমন সময় একটি টেলিফোন এল-সার্জেন্ট বেইগলারের ফোন, ক্রিমপিনের মা অ্যামেলিয়া একটি মোটর দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
সংবাদটা তাকে বেশ সন্তুষ্ট করেছে বলেই মনে হয়, ক্রিমপিনের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। এদিকে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাবার পর লেপস্কি ও জ্যাকবি ভিলায় ঢুকে কলিং বেল বাজাল। এক নিগ্রো মহিলা (ক্রিসী) দরজাটা খুলে দিল। ইশারায় তাদের উপরে যেতে বলল। তারা রেনল্ডের ঘরে উঁকি মেরে তার দলাপাকান মৃতদেহটা দেখতে পেল। আরও একটা খুন! এরপর তারা ক্রিমপিনের স্টুডিওতে পৌঁছাল। হাতের রিভলবার উঁচিয়ে অতর্কিতে লেপস্কি বলে উঠল–আমরা পুলিশের লোক, যেমন:আছেন, দাঁড়িয়ে থাকুন।
ক্রিসী আপনাদের দরজা খুলে দিয়েছে। ওকে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। আসুন, আমাদের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়ে যাক। আপনারা তো সকলেই মাইনে করা কর্মচারী আমি আপনাদের তিনজনকে দুমিলিয়ন ডলার দিচ্ছি, রিপোর্ট বদলে দিন।
কেন চিৎকার করে উঠল–ওর পকেটে রিভলবার আছে, বার করে নিন।
লেপস্কির নির্দেশে ক্রিমপিন হাত তুলে দাঁড়িয়ে ছিল। জ্যাকবি তার পকেট থেকে রিভলবার বার করে নেয়।
তা হোক, ক্রিমপিন এবার দর চড়াল, তিন মিলিয়ন ডলার। তাতেও রাজি নই?
যেখানে আছেন সেইখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন–গর্জে উঠল লেপস্কি।
ক্রিমপিন হেসে বলল–আমি তো এখন অস্ত্র মুক্ত, তাইনা? তার একটা হাত সুলেমান পেনডেন্টের রুবির উপর চেপে বসল, আর সে ঝাঁপিয়ে পড়ল লেপস্কির উপর। তবে তার আগেই লেপস্কির গুলি লক্ষ্যভেদ করেছিল।
দুদিন পরের কথা। প্যারাডাইস সিটি ক্লিনিকের একটি ঘরে আহত লেপস্কি ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠল। কেমন লাগছে টম?-জ্যাকবি প্রশ্ন করল। এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম,শয়তানটা আর একটু হলে খতম করে ফেলছিল।
জ্যাকবি জানাল–সাংবাদিকরা বাইরে অপেক্ষা করছে তার সাক্ষাৎকার নেবার জন্য। হ্যামিলটন টিভির স্ক্রীনে হাজির করতে চায় এই হীরোকে। জ্যাকবি আরো জানাল–তার প্রমোশন হয়েছে, সে এখন সেকেন্ড গ্রেড ডিটেকটিভ। আর ব্রান্ডন দুলক্ষ ডলার পুরস্কার পাচ্ছে। দুমিনিট বাদেই ক্যারল ছুটে এল–ও টম ডার্লিং। হাই হানি। লেপস্কি রসিকতাকরে বলে উঠল–আমার শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার মত সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে!
ওসব রসিকতা থাক—তুমি নাকি প্রায় মারা যাচ্ছিলে?
তাতে কি হয়েছে? এই দ্যাখো না, আমি তো মরিনি, তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে আমি খুব খুশী।