৭-৮. মুন্নার টাউন

গাড়ি মুন্নার টাউন ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর সহেলি দুহাত কপালে ঠেকালেন, হে মা রক্ষাকালী, আর যেন এই জায়গায় না আসতে হয়।

মিতিন হেসে ফেলল, কেন গো? এত সুন্দর জায়গাটা কী দোষ করল?

দুর দুর, যত সব চোর-ডাকাতে ভর্তি!

আহা, একটা ছিঁচকে চোরের জন্য গোটা মুন্নারের বদনাম করে দিচ্ছ?

টুপুর বলল, একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ মিতিনমাসি, কেরলে আসার পর থেকে চুরি যেন আমাদের ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে। কোচিতে একটা চুরির মধ্যে পড়ে গেলাম, মুন্নারে আমাদের উপরই চুরির অ্যাটেমপ্ট হয়ে গেল…!

সহেলি বললেন, যাত্রাটাই এবার আমাদের শুভ হয়নি। দিনক্ষণ দেখে বেরনো উচিত ছিল। নিৰ্ঘাত মঘা কিম্বা অশ্লেষায় রওনা দিয়েছি, তাই পদে-পদে এত হয়রানি।

অবনী মুখ বেঁকিয়ে বললেন, ওফ, কুসংস্কারের ডিপো!.. শোনো, তোমার গ্রহ-নক্ষত্ৰ মানলে বলতে হয়, যে ট্রেনে আমরা হাওড়া থেকে কোচি পাড়ি দিয়েছিলাম, তার প্রতিটি যাত্রীই এখন ঝঞ্জাটে পড়ছে। কারণ সকলেই তো আমরা মোটামুটি একই সময়ে বাড়ি থেকে স্টার্ট করেছিলাম। অশ্লেষা, মঘা নিশ্চয়ই শুধু আমাদেরই টার্গেট করে রাখেনি। ঠিক কি না? তারপর ধরো, আমরা অশুভ লগ্নে বেরিয়েছিলাম বলেই কি সিনাগগে চুরি হল? যদি আমরা বাড়িতে শুয়ে-শুয়ে ঠ্যাং নাচতাম, তা হলে কি হাজার-হাজার মাইল দূরের গ্রেট স্ক্রল রক্ষা পেয়ে যেত? কেউ চাবির ড়ুপ্লিকেট করাতে পারত না? সিন্দুক খুলতে পারত না?

বক্তৃতা থামাও তো। সহেলি গোমড়া, চুরি হত কি হত না সে পরের কথা। অন্তত আমরা তো জড়াতাম না।

এখনই বা কী জড়িয়েছ? ফেঁসে থাকলে ফেঁসেছে তো সিনাগগের কর্তাব্যক্তিরা। তারা আবার ইহুদি, তোমার অশ্লেষা, মঘা, তারা জানেই না। আর এখানেই বা আমাদের কী ক্ষতিটা হল? একমাত্র ভোর রাতের ঘুমটুকু ছাড়া?

বার বার টেনশনে তো পড়ছি।

একটুআধটু টেনশন থাকা তো ভাল মা। টুপুর মন্তব্য জুড়ল, উত্তেজনা না থাকলে বেড়িয়ে সুখ আছে নাকি? পানসে-পানসে লাগবে না?

পার্থ বলল, আপনার একটা বড় টেনশন কিন্তু কেটে গেছে দিদি। গুঁফো-টাকমাথাকে আমরা মিছিমিছি আসামি বানাচ্ছিলাম।

লোকদুটোকে ঘরে না দেখে কাকভোরে জোর হল্লা জুড়েছিল পার্থ। চেঁচামেচির চোটে মুন্নার ক্লাবের কেয়ারটেকারবাবুটির ঘুম চৌপাট। তিনি তো ঘটনা শুনে হাঁ। ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলতে লাগলেন, এমন কাণ্ড মুন্নার ক্লাবের ইতিহাসে নাকি এই প্রথম। এবং মুন্নারের মতো শান্ত উপত্যকায় এভাবে তস্করের আগমন নাকি একান্তই অভাবনীয়। গুঁফো-টাকমাথা সম্পর্কে অভিযোগ তিনি তো হেসেই উড়িয়ে দিলেন। রাত্তিরে নাকি নিজে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন লোকদুটোর সঙ্গে। একজনের নাম বাসবন, অন্যজন উন্নিকৃষ্ণন। দুজনেই নাকি যথেষ্ট মালদার, পার্টনারশিপে ব্যবসা করে শুটকি মাছের, কোচির সম্ভ্রান্ত এম জি রোডে তাদের অফিসও আছে। বিশেষ কাজে কোচি থেকে মাদুরাই যাচ্ছে তারা, পথে মুন্নারে খানিক জিরিয়ে নিচ্ছিল। রাত তিনটেয় তারা ফের বেরিয়ে পড়বে একথাও নাকি জানিয়ে দিয়েছিল কেয়ারটেকারকে। এর পর সহেলির আর কী বলার থাকতে পারে?

পাৰ্থর কথার পিঠে টুপুর বলল, কিন্তু মেসো, চোর যে একটা ধাঁধায় ফেলেছে এতে তো কোনও সন্দেহ নেই।

কীসের ধাঁধা? কোথায় ধাঁধা?

বা রে, স্বচক্ষে তো দেখলে জুতোর ডগা আছে আগা নেই।

 এ তো জলবৎ তরলং। ব্যাটা নিৰ্ঘাত পা টিপে টিপে এসেছিল। যাতে কেউ টের না পায়।

 পা টিপে আসার জায়গা কোথায়? পাঁচিল টপকালেই তো জানলা। মাঝে বড়জোর হাত তিনেক স্পেস।

তা হলে…। পার্থ মাথা চুলকোল, ব্যাটা বোধ হয় গোটা জুতোর ছাপ রাখতে চায়নি। পাছে জুতো থেকে ধরা পড়ে যায়। এ থিয়োরিটা নিশ্চয়ই ভুল নয় ম্যাডাম শার্লক হোমস?

কোথায় শার্লক হোমস, কোথায় আমি! ওই তুচ্ছ ছাপ দেখে শার্লক হোমস কত কী বলে দিতে পারতেন জানো? লোকটা রোগা না মোটা, ফরসা না কালো, মাথায় টুপি ছিল কি ছিল না, দক্ষিণ আফ্রিকার লোক নাকি কানাডার, বাঁ হাতে দেশলাই জ্বালায় না ডান হাতে, সিগারেট খায় না চুরুট…। বলতে বলতে মিতিন ফিক-ফিক হাসছে, আমার অত বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাই নেই। তবে হ্যাঁ, এটুকু বলতে পারি, লোকটার হাইট সাড়ে পাঁচ ফিটের বেশি নয়। শরীরে কষ আছে, কিন্তু চেহারাটি ছিপছিপে।

অবনীর চোখ গোল গোল, কী করে বুঝলে?

ভেরি সিম্পল লজিক। জানলাটা আমার মাথায়-মাথায়। অর্থাৎ মাটি থেকে পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। সুতরাং ঘরের ভিতরটা দেখতে গেলে চোরের চোখ পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির উপরে থাকতে হয়। তা নয় বলেই লোকটাকে বুড়ো আঙুলের ডগায় ভর দিয়ে, উঁচু হয়ে ঘরটাকে দেখতে হয়েছিল। চোখ থেকে মাথার মাপ মিনিমাম তিন ইঞ্চি। সওয়া পাঁচ ফুটের সঙ্গে এবার তিন ইঞ্চি। যোগ করে নিন। কত হল? আর যে লোক ওই সরু আঁকশি দিয়ে ব্যাগ-সুটকেস তোলার চেষ্টা করে, শরীরে তার তো কষ থাকতেই হবে। আর ছিপছিপে না হলে ওই এবড়োখেবড়ো ঢালু পথ বেয়ে তাড়াতাড়ি সে পালায় কী করে? প্লাস, চার ফুট উঁচু পাঁচিলও তাকে টপকাতে হয়েছে।

অবনী চমৎকৃত। গদগদ গলায় বললেন, আমরা কেন এভাবে ভাবি না?

টুপুর গর্বিত স্বরে বলল, এই জন্যই তো মিতিনমাসি ইজ গ্রেট।

মিতিন হেসে বলল, গ্রেট-ফেট কিছুই নই। শুধু চোখ-কানটা খোলা রাখি। মনের দরজাটাও। ভাবনাচিন্তা তৈরি হওয়াটাও একটা প্রসেস অবনীদা। এর জন্য প্রয়োজন চৰ্চা, অধ্যবসায়, আর নিষ্ঠা। আর-একটু কমনসেন্স।

গুণগুলো যে মিতিনমাসির পুরো মাত্রায় আছে সে তো টুপুর জানেই। অধ্যবসায় না থাকলে মাত্র কয়েক বছরে মিতিনমাসি গোয়েন্দা হিসেবে এতটা নাম করতে পারত। এখন তো পুলিশের উপরমহলের লোকরাও মাঝেমধ্যে মিতিনমাসির পরামর্শ নিতে আসে। অপরাধতত্ত্বের সমস্ত বিভাগ নিয়ে দিন-রাত চর্চা করে মিতিনমাসি। ফরেনসিক সায়েন্স, অপরাধীদের মনঃস্তত্ত্ব, নানারকম অস্ত্রশস্ত্রের খুঁটিনাটি, অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, এই আইন সেই আইন, কী না পড়ে। পুরনো জটিল সেগুলোকেও স্টাডি করে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে। আর নিষ্ঠায় তো মিতিনমাসি লা-জবাব। গত এপ্রিলে শ্যামপুকুরে মিত্তিরবাড়ির অষ্টধাতুর বিগ্রহ চুরি হওয়ার কেস নিয়ে যেভাবে খাটল, সে তো দেখার মতো। শেষমেশ প্রমাণ করে ছাড়ল তো পরিবারের প্রবীণা গৃহিণীই আসল খলনায়িকা। মিত্তিরবাড়ির কর্তাব্যক্তিরা তো হাল ছেড়েই দিয়েছিল, পুলিশও বাড়ির চাকরকে হাজতে পুরে নিশ্চিন্তা একমাত্ৰ মিতিনমাসি আদাজল খেয়ে লেগে না থাকলে থোড়াই জানা যেত প্রকৃত সত্য। মাত্র দশ হাজার টাকার জন্য টানা তিন মাস পরিশ্রম, ভাবা যায়? সাধে কি টুপুর মিনিমসির সঙ্গে সেঁটে থাকে।

টুপুর জানলার বাইরে চোখ রাখল। চা-বাগানের ঢল পেরিয়ে গাড়ি আরও উঁচুতে উঠছে এখন। একটার-পর-একটা পাহাড় টপকাচ্ছে। নীচে তাকালে দেখা যায় ফেলে আসা পথটাকে। অজগরের মতো। পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেড় দিয়েছে পাহাড়কে। হলুদ রোদ্দুর মেখে পড়ে আছে নিঝুম।

সামনের সিটে পার্থ এতক্ষণ কেরলের একটা ম্যাপ খুলে বসেছিল। পরশু কিনেছে কোচি থেকে। টুরিস্ট গাইড হিসেবে মানচিত্ৰখানা ভারী কাজের। রাস্তাঘাট, পাহাড় পর্বত, নদী-লেকজঙ্গল, সব কিছুরই হদিস মিলে যায়। ম্যাপটা দেখতে দেখতে পার্থ হঠাৎ বলে উঠল, তা তোমার কমনসেন্স এবার কি কিছু বলছে। ম্যাডাম?

কী ব্যাপারে? মিতিন চোখ ঘোরাল।

রিগার্ডিং এসব চোরফোর? এমন উপদ্রব কি মাঝে-মাঝেই হবে?

হওয়ার কোনও কারণ তো দেখি না। তবে কিনা…। মিতিন একটু থমকাল, দিদিকে যাই বলি না কেন, ছিঁচকে চোরটা কিন্তু ভাবাচ্ছেই।

 কিঁউ?

কারণ আমাদের উপর দিয়ে মুন্নার ক্লাবে চুরির উদ্বোধন হচ্ছে, এটা ঠিক আমার হজম হচ্ছে না।

কেয়ারটেকার ঢপ মেরেছে বলে মনে হয়?

কী জানি। তবে আমাদের উলটো দিকের রুমে কিন্তু চোরের পক্ষে হানা দেওয়া ঢের সহজ ছিল। মনে করে দ্যাখো, ওই ঘরের জানলা রাতে খোলাই ছিল। কষ্ট করে হুড়কো ভেঙে কেন যে লোকটা আমাদের উপর কৃপাদৃষ্টি দিল?

ওঘরে ছিল তো বাবা, মা আর মেয়ে। ওদের দেখে চোরের হয়তো মনে হয়েছে তেমন জিনিসপত্র নেই!

অর্থাৎ চোর আগে থেকেই দেখে নিয়েছিল কোন ঘরে বেশি জিনিস আছে?

হতেই পারে। মুন্নার ক্লাবের কর্মচারীরা তো সব ঘরেই যাতায়াত করছিল। ইনফ্যাক্ট, জিনিসপত্র তো তারাই ঘরে ঢুকিয়েছে। আর কর্মচারীদের কারও সঙ্গে চোরের যোগসাজশ থাকতেই পারে।

হুঁ। হতে পারে অনেক কিছুই। কেয়ারটেকারকেও আমি সত্যবাদী যুধিষ্ঠির বলে ধরে নিচ্ছি না।… তবে আমার সিক্সথ সেন্স বলছে সামথিং ইজ রং সামহোয়্যার।

কী রকম?

তা আমি কী করে বলব? আগেই তো বলেছি আমি শার্লক হোমস নই। আমার শুধু এটুকুই মনে হচ্ছে বেড়ানোর কটা দিন আমাদের বোধ হয় আরও সতর্ক থাকা উচিত।

কেন রে মিতিন? সহেলি বিপন্ন সুরে বললেন, চোর কি আমাদেরই পিছনে লেগেছে? কী হবে তা হলে?

ওফ, দিদি। দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফ্যালো তো! টুরটা এনজয় করে। বলেই সহেলির মুখটা বাইরে ঘুরিয়ে দিয়েছে মিতিন, ওই দ্যাখো আনাইমুড়ি পাহাড়।

একটা উঁচু পাহাড় দেখা দিয়েছে বটে। আকারে মোটেই সুদৃশ্য নয়, বরং বেঢপই বলা যায়। কেমন যেন ন্যাড়া ন্যাড়া লাগে, খাবলাখাবলা দাড়ির মতো গাছপালা লেগে আছে গায়ে।

ওই পাহাড়েই উঠতে-উঠতে এক জায়গায় থামতে হল টুপুরদের। এবার এরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্কে ঢুকবে গাড়ি, তার আগে টোল ট্যাক্স দিতে হবে। দুধারে বড় বড় হোর্ডিংয়ে লেখা আছে জন্তুজানোয়ারদের নাম। ছবি সহ। লেখা আছে অরণ্যের আচরণবিধি।

দেখেই ঝিমন্ত বুমবুম আচমকা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। জ্বলজ্বলে চোখে বলল, ওমা, এখানেও হাতি আছে? সারাণ্ডার মতো?

অবাক হওয়ার কিছু নেই বুমবুম। পার্থ বলল, কেরলে অজস্র হাতি। পেরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে দেখবি হাতি থিকথিক করছে। জলে লুটোপুটি খাচ্ছে।

টুপুর বলল, আরও কত কী আছে গো মেসো! শম্বর, গাউর, লংগুর… বাঘ, চিতাবাঘও!

দ্যাখ, কপালে থাকলে দর্শন মিলে যাবে। সারাণ্ডায় তো প্রায় কিছুই জোটেনি। হরিণ আর খরগোশ ছাড়া।

টিকিট কেটে আশায়-আশায় টুপুররা ঢুকল বটে, তবে ন্যাশনাল পার্কের ভিতরে পৌঁছে হতাশও হতে হল যথেষ্ট। রাজামাল্লি বলে একটা জায়গায় গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হয়েছে, হাঁটতে-হাঁটতে পাহাড় বেয়ে উঠে গেছে অনেকটাই কিন্তু কোথায় কী! জঙ্গলই তো নেই! পাহাড়ের গায়ে ঘাস আছে, কোথাও কোথাও ঝোপঝাড়ও, তবে তাদের অরণ্য বলে কল্পনা করাকঠিন। হাতি, বাঘ দূরস্থান, পাল পাল ছাগল ছাড়া আর কিছুই তো নজরে এল না! পার্থমেসো অবশ্য বলল, এ নাকি অতি বিরল প্রজাতির ছাগল, এদের নাম নীলগিরি টার। এদের ক্ষুরগুলো নাকি ভারী অদ্ভুত, অবলীলায় পাহাড় বেয়ে তরতরিয়ে উঠতে পারে এরা। তা শুধু ছাগল দেখে কি আর মন ভরে?

গাড়িতে ফিরে সহেলি বিরক্ত মুখে বললেন, দুর দুর, মিছিমিছি সময় নষ্ট।

পার্থ বলল, যা বলেছেন। মাঝখান থেকে চড়াই-উতরাই করে খিদে পেয়ে গেল। লাল ব্যাগে কিছু আছে কি?

স্রেফ পাউরুটি আর চানাচুর।

তাই দিন। মুখটা তো চলুক।

ম্যাথু স্টিয়ারিং-এ বসেছে। জিজ্ঞেস করল, নাউ হোয়্যার? মাটুপেট্টি?

আর সেখানে গিয়ে কী হবে? পাৰ্থ ঠোঁট ওলটাল, লেক ভেবে যাব, গিয়ে দেখব বড়সড় চৌবাচ্চা।

সহেলি বললেন, তা হলে বাদ দাও না। সোজা পেরিয়ার চলো।

না না, মাটুপেট্টি যেতেই হবে। অবনী বাধ সাধলেন, সুনীল আমায় বারবার করে মাটুপেট্টির কথা বলেছে। ড্যাম থেকে জঙ্গল দেখা নাকি ইউনিক এক্সপিরিয়েন্স।

অগত্যা গাড়ি ফিরল আবার মুন্নার অভিমুখে। টাউন ছুঁয়ে বয়ে ঘুরল, মিনিট চল্লিশের মধ্যেই এসে গেল মাটুপেট্টি।

নাহ্, পান্নিভাসাল নদীর উপর ড্যামটা সত্যিই বিশাল। বাঁধ পেরিয়ে গাছে গাছে ছাওয়া পথ পাক খেয়ে চলে গেছে জলাধারের কিনারে। উহুঁ, শুধু জলাশয় না বলে বড়সড় লেক বলাই শ্রেয়। ওপারে পাহাড় বেয়ে উঠে গেছে জঙ্গল, প্রায় একদম পাড় থেকেই। কী অপূর্ব যে লাগছে দূর থেকে।

বেলা বেড়েছে। লোকজন তেমন একটা নেই আশপাশে। রোদ বাঁচিয়ে এক ঝাঁকড়া গাছের ছায়ায় বসল সবাই। মোহিত হয়ে দেখছে জল, দেখছে জঙ্গল। লেকে স্পিডবোট চলছে। কয়েকটা, প্রকৃতির নির্জনতাকে ভেঙে বিকট শব্দ তুলে শা-শা ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক। বোটের ধাক্কায় উত্তাল ঢেউ উঠছে স্থির জলে।

গোটা তিনেক নৌকো ঘাটে দোল খাচ্ছিল। সেখান থেকে একটা লোক চেঁচিয়ে ডাকল, ওয়ান্ট এ জয়রাইড স্যার?

পার্থ জিজ্ঞেস করল, কী রে, চড়বি নাকি স্পিডবোটে?

লাজুকলাজুক মুখে টুপুর বলল, গেলে হয়।

 সহেলি হাঁ-হাঁ করে উঠলেন, কক্ষনও না। অত জোরে চলছে, একবার যদি গোঁত খেয়ে উলটে যায়!।

ভয় পাচ্ছেন কেন দিদি? কিছু হবে না, চলুন।

না বাপু, আমি ওতে নেই।

অবনী বললেন, আমারও অত গতি সহ্য হয় না। মাথা ঘোরে।

টুপুর বলল, তা হলে তোমরা এখানে বোসো, আমরা ঘুরে আসি। যাব?

বারণ করলে কী তোমরা শুনবে? সহেলির স্বরে অসন্তোষ, যাও, তবে বেশি নড়াচড়া কোরো না, মেসোর হাত ধরে বোসো। …মিতিন, তুইও বুমবুমকে ভাল করে সামলে রাখবি।

আধ ঘণ্টা ঘোরাবে বোট। মাথাপিছু পঞ্চাশ টাকা। পার্থ খানিক দরদস্তুরের চেষ্টা করল, জপাতে পারল না লোকটাকে। বুমবুমেরও পুরো ভাড়াই লাগবে।

ক্যামেরা লাল ব্যাগে পুরে নিল পার্থ। যাতে জল ছিটকে এসে লেন্সে না লাগে। ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বুমবুমকে নিয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়ল স্পিডবোটে। মিতিন আর টুপুরও কোমর বেঁধে চড়ে পড়েছে। সামনে পিছনে মিলিয়ে জনাপাঁচেকই বসতে পারে বোটে। মিতিন আর টুপুর পিছনের আসন দখল করল, পার্থ আর বুমবুম সামনে। নৌকোর লেজে বসেছে চালক, সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করবে ইঞ্জিন। আর নৌকোর অভিমুখ। পার্থর সামনে একটা স্টিয়ারিং আছে বটে, তবে সেটি নেহাতই শো-পিস।

গোঁ-গোঁ শব্দ বাজিয়ে ছুটতে শুরু করল স্পিডবোট। পলক ফেলতে না ফেলতে পাড় সরে গেছে দূরে। টুপুর আর বুমবুম হাত নাড়ল অবনী-সহেলিকে, তারা দেখতে পেলেন না।

লেকের মধ্যিখানে এসে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল চালক। অল্প-অল্প দুলছে নৌকো। খুশি-খুশি মেজাজে চতুর্দিক দেখছিল টুপুর। জলাশয়টা বেশ খানিকটা গিয়ে ডাইনে ঘুরেছে, সেখানে আরএকটা ঘাট থেকে ছাড়ছে স্পিডবোট। তার ওপাশে সুইস গেট, জল বেঁধে রাখার জন্যে।

বুমবুম হঠাৎ উল্লাসে চিৎকার করে উঠল, দিদিভাই, ওই দ্যাখ হাতি…হাতি!

কই? কোথায়?

 ওই তো। তর্জনী তুলে ওপারের জঙ্গলটা দেখাল বুমবুম, ওই তো, গাছের পাশে দাঁড়িয়ে! একটা.. দুটো… না না, তিনটে!

টুপুর তবু দেখতে পাচ্ছে না। চোখ সরু করে খুঁজছে জঙ্গলময়। সহসা মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। পেয়েছে দেখতে পেয়েছে।

মিতিন আঙুল নেড়ে বলল, ভাল করে দ্যাখ। মনে হচ্ছে না হাতি তিনটের মাথার ওপর আরও একজোড়া হাতি?

তাই তো। ঠিকই তো। দুটো হাতি পাহাড়ের একটু উপরে, বাকি তিনটে নীচে। দূর থেকে মনে হয় সত্যিই হাতির মাথায় হাতি!

বুমবুম বলল, তিগুলো পাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে আছে কী করে বাবা? গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে না কেন?

পার্থ বলল, বুঝতে পারছিস না? পাহাড় হাতিদের টানছে, হাতিরা পাহাড়কে। একে বলে মাধ্যাকর্ষণ।

কী কৰ্ষণ?

মিতিন হালকা ধমক দিল পার্থকে, আই, ভুলভাল শেখাচ্ছ। কেন? না রে বুমবুম, একটা হাতিও পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে নেই। ওরা যেখানটায় আছে সে জায়গাটা মোটামুটি প্লেনই। দূর থেকে দেখছি বলে ওরকম লাগছে।

পার্থ ইঞ্জিনচালককে বলল, এই ভাই, আর-একটু কাছে যাওয়া যায় না?

যাবেন? চলুন।

আবার ইঞ্জিনের গোঁ-গোঁ। ভীম বেগে জল চিরে ছুটল স্পিডবোট। জঙ্গলের ধার ঘেঁষে গর্জন করতে করতে ঘোরাচ্ছে টুপুরদের। পার্থ ক্যামেরা বের করে ফেলল। টেলিলেন্স লাগিয়ে ফোকাস করে ফেলেছে হাতিগুলোকে। বুমবুম আনন্দে হাতোলি দিয়ে উঠল। টুপুর আর মিতিনও হাতিতে বিভোৱ।

ঠিক তখনই ঘটনাটা ঘটল।

তীব্র গতিতে হঠাৎই ধেয়ে এল আরএকটা স্পিডবোট। একেবারে কাছে এসে, টুপুরদের স্পিডবোটকে ধাঁই করে ধাক্কা মেরেই পার্থর কাঁধে হ্যাঁচকা টান। পার্থ টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিল, মিতিন টেনে ধরে নিয়েছে তাকে। কিন্তু ততক্ষণে পাৰ্থর কাঁধের ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে আক্রমণকারী।

ঘটনার আকস্মিকতায় চালক হতভম্ব থামিয়ে দিয়েছে ইঞ্জিন। নার্ভাস গলায় জিজ্ঞেস করল, ইউ ওকে স্যার?

পার্থ দম নিতে নিতে বলল, হুঁ।

ক্যামেরা সেভড। গুড লাক।

নিকুচি করেছে গুড লাকের। মিতিন চেঁচিয়ে উঠল, ফলো করুন লোকটাকে। এক্ষুনি।

মাঝে বড়জোর সময় গেছে পনেরো সেকেন্ড, তার মধ্যেই হানাদার স্পিডবোট আরও দূরে। টুপুররা যখন মাঝ দরিয়ায়, সে তখন পৌঁছে গেছে অন্য ঘাটটায়। নিমেষে লোকটা লাফ দিল বোট থেকে, নিমেষে উবে গেল কর্পূরের মতো। টুপুরদের নৌকো যখন ঘাটে গিয়ে ভিড়ল, তখনও পাড়ের কেউ জানেই না জলে কী ঘটে গেছে এইমাত্ৰ।

নেমেই জব্বর একটা হইচই বাধিয়ে দিল টুপুরদের চালক। হাউমাউ করে ছিনতাই বৃত্তান্ত শোনাচ্ছে মলয়ালমে। মিতিন অবশ্য নেমেই রাস্তা ধরে দৌড়েছিল, খানিকটা গিয়ে ফিরে এসেছে। হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল, নাহ্, পাখি উড়ে গেল।

টুপুর বলল, এত তাড়াতাড়ি?

গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। অ্যাম্বাসাডার।

নাম্বার নোট করেছ?

পারলাম না। হুশ করে বেরিয়ে গেল। একঝলক চোখে পড়ল নাম্বারপ্লেটটা। ভাড়ার গাড়ি।

হলুদের ওপর কালোয় লেখা?

হাঁ।

ভ্যাবাচাকা খাওয়া পাৰ্থ আর বুমথুমকে ঘিরে ছোট্ট একটা জটলা। আছে মোটরবোটের চালকরা, দু-চারজন যাত্রীও। লোকটা যার মোটরবোট নিয়ে গিয়েছিল, সেও রয়েছে ভিড়ের মধ্যে।

মিতিন তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি লোকটাকে একা ছেড়ে দিয়েছিলেন?

অল্পবয়সি চালক হাত কচলাচ্ছে, চাইল যে। অনেকে এরকম নেয় ম্যাডাম। একা বোট চালিয়ে মজা পায়।

কখন নিয়েছিল ভাড়া?

 দশ মিনিটও হয়নি।

এই ঘাটে এসেছিল কখন?

এসেই তো বোট নিল।

একাই ছিল? নাকি সঙ্গে কেউ…?

আর কাউকে তো দেখিনি ম্যাডাম।

 চকিতে ঘটনাটা ঘটে যাওয়ায় টুপুর ভালভাবে লক্ষ করতে পারেনি লোকটাকে। তাড়াতাড়ি মিতিনকে বলল, লোকটার চেহারার ডিটেল ডেসক্রিপশন নিয়ে নাও।

প্রয়োজন নেই। মিতিনের মুখ থমথমে, ওই বসন্তের দাগওয়ালা মুখ আমি জীবনে ভুলব না।

.

০৮.

দুপুরের পর থেকে মেঘ জমছিল আকাশে। ছটা বাজতে না বাজতে নিভে গেল দিনের আলো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আছড়ে পড়ল বৃষ্টি। দমাদম ড্রাম পেটাচ্ছে গাড়ির চালায়।

ম্যাথু গতি আরও কমিয়ে দিল। এমনিতেই পার্বত্য পথে যথেষ্ট ধীরে চালাচ্ছিল, বর্ষণ শুরু হতে কোয়ালিস এখন কচ্ছপ। প্রতিটি বাঁক অতি সন্তৰ্পণে ঘুরছে ম্যাথু, পাছে গাড়ির চাকা পিছলে যায়।

মাটুপেট্টির ঘটনায় তার যাত্রীরা থম মেরে গেছে, নতুন আতান্তর ডেকে এনে সে আর তাদের উত্ত্যক্ত করতে চায় না।

সব কটা জানলার কাচ বন্ধ। সাত-সাতটা মানুষের নিশ্বাসে গরম হয়ে উঠছে ভিতরের বাতাস। কথাও বিশেষ বলছে না কেউ। সহেলি তো আগাগোড়াই গুম। অন্ধকার পাহাড়ি জংলা-জংলা। রাস্তায় আকাশ ভেঙে পড়ার পর তিনি যেন আরও গুটিয়ে গেছেন। মাঝে-মাঝে মেঘ ডাকছে গুড়গুড়, চিকন বিদ্যুতে ফালা-ফালা হচ্ছে। চরাচর, কেঁপে-কেঁপে উঠছেন সহেলি। ইষ্ট নাম জপ করাও ভুলে গেছেন বোধ হয়।

ভিতরের গুমোট ভাবটা কাটাতেই যেন অবনী হঠাৎ বলে উঠলেন, সাউথে বেড়ানোর এই এক ঝামেলা। দুটো করে মনসুন। জুন-জুলাইতেও ভোগান্তি, অক্টোবর-নভেম্বরেও।

সহেলি ক্ষীণ স্বরে বললেন, বৃষ্টিকে দুষে কী হবে? আমরা তো এমনিই ভুগছি। এখন ভালয়-ভালয় বাড়ি ফিরতে পারলে হয়।

টুপুরের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, বাড়ির তো এখন ঢের দেরি মা। পেরিয়ার আলেপ্পি কোভালাম-টোভালাম সেরে কোচি, তারপর তো কলকাতা।

খুব হয়েছে, আর কোথাও নয়। পেরিয়ারই শেষ, পেরিয়ার থেকেই ফেরা। …পাৰ্থ, পেরিয়ার থেকে সোজা ট্রেন ধরা যায় না?

ম্যাপ ঘেঁটে-ঘেঁটে কেরল সম্পর্কে এখন অনেকটা সড়গড় হয়েছে পার্থ। ব্যাগ হারিয়ে মনমরা থাকলেও সে হেসেই উত্তর দিল, না দিদি। ট্রেন ধরতে হলে সেই কোট্টায়াম, নয় মাদুরাই, নয় কোচি। সবই হরেদরে সওয়াশো থেকে দেড়শো কিলোমিটারের ধাক্কা।

ও। সহেলি ফের মিইয়ে গেলেন, তা তোমাদের পেরিয়ার আর কদ্দূর?

ম্যাথুর ইংরেজিতে ম্যাথুকে প্রশ্ন করল পাৰ্থ, পেরিয়ার হাউ ফার ম্যাথু?

উইন্ডস্ক্রিনে ওয়াইপার চলছে, তবু জলীয় বাষ্পে কাচ ঝাপসা। বাঁ হাতে কাচ মুছতে-মুছতে ম্যাথু জবাব দিল, কুমিলি নিয়ার। ওনলি সেভেন কিলোমিটার। থেক্কাডি থারটিন।

থেক্কাডি আর পেরিয়ার তো সেম, তাই না?

ইয়েস স্যার। গাঁও কা নাম থেক্কাডি, ফরেস্ট পেরিয়ার। হিন্দি ইংরেজির জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলল ম্যাথু, কুমিলি গুড় স্যার। হোটেল হ্যায়।

পার্থ ঘাড় ঘোরাল, কী গো, দুটো জায়গাই তো কাছাকাছি। কোথায় থাকবে?

মিতিন অন্যমনস্ক ছিল। বলল, উ?

বলছি পেরিয়ার অবধি এগোবে? না কুমিলিতেই বডি ফেলব?

আগেই থামো। দিদি কাহিল হয়ে পড়েছে। সাড়ে তিন ঘণ্টা গাড়িতে ঠায় বসে থাকা বলে কথা?

মাটুপেট্টি ড্যাম থেকে কাছাকাছি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গাড়ি। দেবীকুলমে। ছিনতাইয়ের রিপোর্ট লেখানোর পর দেবীকুলমেই কোনওরকমে সারা হয়েছিল মধ্যাহ্নভোজ। তারপর থেকে গাড়ি চলছে।তো চলছেই। জলদি-জলদি পেরিয়ার পৌঁছতে হবে বলে চায়ের জন্যও দাঁড়ানো হয়নি কোথাও। টুপুরের তো বসে বসে পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে যাচ্ছিল। কতবার যে কানে চিমটি কেটে ছাড়াল অসাড় ভাবটাকে।

বৃষ্টির তেজ কমছে। জানলার কাচ সামান্য ফাঁক করল টুপুর। হাওয়া আসুক। তা শুধু হাওয়া নয়, সঙ্গে একটা আধচেনা মিষ্টি গন্ধও যেন ঝাপটা মারল নাকে।

জোরে নাক টেনে টুপুর বলল, কীসের গন্ধ আসছে বলো তো মিতিনমাসি?

এলাচ। সম্ভবত এলাচ বনের পাশ দিয়ে যাচ্ছি।

দুধারে তো কফিগাছের জঙ্গল ছিল, এলাচ বাগান এসে গেল?

এই রিজিয়নটাই তো এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনির আর গোলমরিচের। শুনেছি থেক্কাডি থেকে কোট্টায়াম যেতে একটা পাহাড় পড়ে, পাহাড়টার নামই কার্ডামম হিল। এলাচ পাহাড়। সাধে কি কেরলে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল ইউরোপিয়ানরা!

কথার মাঝেই গাড়ি চলে এসেছে সমতলে। গতিও বেড়েছে খানিক। শুরু হয়েছে জনপদ। দুদিকে দেখা যায় দোকানপাট, ঘরবাড়ি, মানুষজন। বৃষ্টিও এখন টিপটিপ-টিপটিপ।

ম্যাথু ঘাড় দুলিয়ে বলল, দিস ইজ কুমিলি স্যার।

পার্থ বলল, আমরা এখানেই থাকব। একটা ভাল দেখে হোটেলে নিয়ে চলো।

 ও কে স্যার।

এক তেমাথার মোড়ে এসে ডাইনে গাড়ি ঘোরাল ম্যাথু। বাজারমতো জায়গা। একটা চার্চও আছে। দুচারটে হোটেলও। সেখান থেকে আর-একটু এগিয়ে থেমেছে।

বাঁয়ে এক ঝকঝকে হোটেল। মাইকেলস ইন। ম্যাথু বলল, সেফ প্লেস স্যার অ্যান্ড দিস রোড অলসো গোজ টু পেরিয়ার।

নামে সরাইখানা হলেও হোটেলটা বেশ জবরদস্ত। চমৎকার বন্দোবস্ত, নিজস্ব রেস্তোরাঁ আছে। দক্ষিণী খানার পাশাপাশি চাইনিজ, মোগলাইও মেলে।

ব্যস, পাৰ্থর মনমেজাজ খোলতাই হয়ে গেল।

পাওয়া গেছে মুখোমুখি দুখানা ঘর। দোতলায়। বৃত্তাকার প্যাসেজে ঘরগুলো এমনভাবে সাজানো যে মুখোমুখি না বলে একটু কোনাকুনিও বলা যায়। আবার পাশের পাশেরটাও বলা চলে।

জিনিসপত্র এবার আর এক জায়গায় নয়, রাখা হল ভাগাভাগি করে। ব্যাগ, সুটকেস বয়ে আনা বেয়ারাটিকে খর চোখে জরিপ করে নিলেন সহেলি। লোকটা যেতেই তাড়াতাড়ি লটবহর ঢোকানোর চেষ্টা করলেন খাটের তলায়। কিছুই সেখানে গলল না। বিফল মনোরথ হয়ে মিতিনকে বললেন, আমার তো মনে হয় সিংগল খাটদুটোকে আলাদা-আলাদা করে ফেলা উচিত। পার্থদেরও বলে আয় সুটকেস-টুটকেস যেন দুটো খাটের মধ্যিখানে রাখে।

মিতিন বিছানায় আধশোওয়া হয়েছে। বলল, কেন এত মাথা খারাপ করছ দিদি? দোতলার জানলা দিয়ে লগি গলানো কি সোজা কাজ?

অসাধ্য তো নয়। কার্নিসে তো ওঠাই যায়।

চিন্তা কোরো না। আমি সারারাত জেগে থাকব।

 দ্যাখো, যা ভাল বোঝ। দাসীর কথা বাসি হলে মিঠে হয়। তখন অত করে বললাম ওই অক্ষুণে স্পিডবোটে উঠো না, বিপদ ঘটার পর শিক্ষা হল তো?

আগেই বুঝি টের পেয়েছিলে কেউ একজন ঝাঁপিয়ে পড়বে?

কিছু একটা অমঙ্গল হবে, মনে তো হচ্ছিল। ডান চোখ খুব নাচছিল তখন।

চেয়ারে হেলান দিয়ে মা-মাসির চাপান উতোর শুনছিল টুপুর। এবার হেসেই ফেলল।

দেখেই সহেলির চোখ কটমট, তুমি বসে বসে লেজ নাড়াচ্ছ কেন? রাস্তার জামাকাপড়টা ছাড়ো না। আজ তো স্নানও হল না, ঘাড়ে-মুখে ভাল করে জল দাও।

তাড়া খেয়ে একসেট সালোয়ার-কামিজ বের করে লাগোয়া বাথরুমে ঢুকল টুপুর। মুন্নারের মতো না হলেও এখানে একটু শীতশীত ভাব আছে। সম্ভবত বৃষ্টি হল বলেই। বেসিনের জল ঠান্ডা কনকনে। তবে জলের ছোঁয়ায় আরামই লাগল। পোশাক বদলে বেরিয়ে এসে দেখল মিতিনমাসি নেই, ঘরে এখন বুমবুম আর পার্থমেসো। বুমবুম টিভির সামনে। উদ্দাম কার্টুন চ্যানেল চলছে।

পার্থর হাতে হোটলের মেনুকার্ড। পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করল, কী রে টুপুর, কিছু খাবি তো এখন? স্ন্যাক্স-ট্যাক্স?

খিদে খানিকটা পেয়েছে বটে। টুপুর মাথা চুলকোল, পকোড়া পাওয়া যাবে?

সিওর। চিকেন প্রন চিজ ভেজিটেবল. কোনটা নেব?

প্রনই বলো।

অবনী চেয়ারে চোখ বুজে বসেছেন। বলে উঠলেন, আমার জন্য ভাজাভুজি নয়। স্যান্ডুইচ।

সঙ্গে গরমাগরম কফি? চলেগা?

চলেগা কী গো? টুপুর বলল, দৌড়েগা।

ফোন তুলে রুম সার্ভিসকে অর্ডার দিল পার্থ। বুমবুমের জন্য দুধ বলার সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জুড়েছে বুমবুম। দুধ নয়, তার আইসক্রিম চাই।

পার্থমেসোর ম্ৰিয়মাণ ভাব কেটেছে দেখে ভাল লাগছিল টুপুরের। একটা ছিনতাইয়ের জন্য বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে এ তার মোটেই পছন্দ হচ্ছিল না। তবে হ্যাঁ, ব্যাপারটা যে রোমহর্ষক তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু ক্যামেরার জন্য অত বড় ঝুঁকি নিল লোকটা? বিশ্বাস হয় না। গাড়ি ভাড়া করে এসে, স্পিডবোটের চালককে কড়কড়ে পাঁচশো টাকা খুঁজে দিয়ে, শেষ পর্যন্ত স্রেফ একটা ব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে গেল? কী আজব কাণ্ড! নাকি অন্য কোনও স্পিডবোট নিশানা ছিল লোকটার? ভুল করে অ্যাটাক? ওই সময়ে গোটা পাঁচ-সাত বোট ছোটাছুটি করছিল জলে, হয়তো লোকটা গুলিয়ে ফেলেছে? কথাটা একবার তুলবে নাকি এখন? থাক গে, যা হওয়ার তো হয়েই গেছে, পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আর কী লাভ?

খাবার এসে গেল। পিছন-পিছন মিতিনমাসিও। টুপুর উৎসুক মুখে জিজ্ঞেস করল, কোথায় গেছিলে গো?

হোটেলের আশপাশটা ঘুরে দেখে এলাম। মিতিনের ঠোঁটে মৃদু হাসি, উলটো দিকে একটা আয়ুর্বেদিক ম্যাসাজ সেন্টার আছে। ভাবছি কাল সকালে ভাল করে একটা ম্যাসাজ নিয়ে নেব।

সহেলি নড়েচড়ে বসলেন, গায়ের ব্যথা কমবে?

একদিনে কী কমে! তবে নিয়ে দেখতে পারো, আরাম হবে। কেরলের এই ম্যাসাজের দুনিয়াজোড়া নাম। অজস্র ধরনের নির্যাস দিয়ে তেল বানায়। বহু ফরেনার এখানে ম্যাসাজ করাতে আসে। মিতিনের হাসি চওড়া হল, আর-একটা সংবাদ তোমায় দিতে পারি। পাশে একটা গিফট শপও আছে।

শঙ্কা ভুলে সহেলির চোখ ঝিকঝিক, কথাকলি নাচের মুখোশ পাওয়া যাবে?

ভিতরে থাকতে পারে। সামনাসামনি তো দেখলাম না। তবে কাজের জিনিস যদি কাউকে উপহার দিতে চাও, এখান থেকে ভাল মশলা নিতে পারো। টাটকা এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, গোলমরিচ প্যাকেট করে করে বিক্রি করছে।

সহেলি রীতিমতো পুলকিত। পারলে এক্ষুনি বেরিয়ে পড়েন। বুঝিয়েসুঝিয়ে নিরস্ত করা হল তাঁকে। কালকের দিনটা তো থাকাই হচ্ছে, আজ ক্লান্ত হয়ে এসে বেরনোর দরকার কী?

পার্থ বলল, নিন, এখন পকোড়া খান। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। অবনীদা, আপনার স্যান্ডুইচও তো পড়ে রইল!

হুঁ। খাই।

অবনী স্যান্ডুইচে কামড় বসালেন বটে, কিন্তু মুখখানা কেমন যেন ভেজা বিস্কুটের মতো মিয়োনো।

লক্ষ করে মিতিন বলল, আপনি এত চুপ করে গেছেন কেন অবনীদা? দুপুরের শকটা কি এখনও সামলাতে পারেননি?

আরে, যেতে দিন, যেতে দিন। পার্থ টম্যাটো সসে পকোড়া ডোবাচ্ছে, গেছে তো একটা ফাউতে পাওয়া ব্যাগ। এখন থেকে আপনি আমি ইকুয়াল। আপনার ব্যাগ নেই, আমারটাও গন।

উহুঁ, অবনীদারটা আছে। মিনি কফিতে চুমুক দিল, সুনীল নিয়ে গেছে রেবতী ইন্টারন্যাশনাল থেকে। কালই ফোনে জেনে নিয়েছি।

সে যাই হোক, এখন তো কাছে নেই। পার্থ হাসল, আমি একটা অন্য কথা ভাবছিলাম, বুঝলে। যে ব্যাটা ব্যাগটা লুঠ করল, সে নিশ্চয়ই আমায় প্ৰাণ ভরে গাল পাড়ছে। যা ডাহা ঠকল বেচারা। কী লোকসান, কী লোকসান!

অবনী ভারী গলায় বললেন, লোকানটা তো আমাদেরই হল পার্থ। ওই ব্যাগে তুমি দাবার বোর্ডটাও রেখেছিলে।

সহেলি বললেন, তাই বলো। এই জন্যই তোমার মুখ এমন তোলো হাঁড়ি!

স্বাভাবিক। আমি বেটার পজিশানে ছিলাম। একবার বসতে পারলেই চেকমেট হয়ে যেত।

বললেই হল? চেকমেট অত সোজা?

দেখতেই পেতে সোজা কিনা।

বেশ তো চলুন, এক্ষুনি একটা বোর্ড কিনে আনি। বাজার তো খোলাই আছে।

যাবে? চল। একটা শেভিং সেটও কিনব সঙ্গে। কাল থেকে দাড়ি কামানো হয়নি, গাল কুটকুট করছে।

ঢকঢক কফি গিলে দুই ভায়রাভাই বেরনোর জন্য প্রস্তুত, দরজায় বেল।

পার্থই গিয়েছিল খুলতে। বিস্মিত মুখে বলল, আরে, আপনি?

দরজার ওপারে পি কে জি কুরুপ হাসছেন মিটিমিটি, কথা দিয়েছিলাম পেরিয়ারে দেখা করব, এই দেখুন চলে এলাম।

কী আশ্চর্য, আপনি জানলেন কী করে আমরা এই হোটেলে আছি?

ফিমের রোল ওয়াশ করতে দিয়ে ফিরছিলাম, আপনাদের ড্রাইভারকে দেখতে পেয়ে গেলাম হোটেলের সামনে।

মিতিন ডাকল, বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন কেন? ভিতরে আসুন।

স্মিত মুখে ঢুকলেন কুরুপ। চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, অসময়ে এসে ডিসটার্ব করলাম না তো?

কী যে বলেন। আমরা তো আড্ডাই মারছিলাম। ..কফি খাবেন?

নো থ্যাঙ্কস। কতক্ষণ এসেছেন আপনারা?

এই তো, ঘন্টাখানেক। আপনি?

জাস্ট বৃষ্টির আগে। কাছেই উঠেছি। হোটল কুমিলি।

লঙ্গুরের ছবি তোলা হল?

নিলাম গোটাকতক স্ন্যাপ।

 আপনি টেলিলেন্স ইউজ করেন? নাকি জুম?

ঠিক নেই। যখন যেটা সুবিধে হয়। ..বাই দ্য বাই, আপনাদের মর্নিং ট্রিপ কেমন হল?

খুব খারাপ। পার্থ বলে উঠল, সেই ভোররাত্তির থেকে যা আরম্ভ হয়েছে!

কেন? কী হল?

 মুন্নার মাটুপেট্টি দুটো এপিসোডই সবিস্তারে বর্ণনা করল পার্থ। শুনে কুরুপ তাজ্জব, এ হেহে, আপনাদের তো দেখছি খুব ট্রাবল। যাচ্ছে! …যদি ধরে নেওয়া যায় মাটুপেট্টিতে গুন্ডাটা ভুল মোটরবোট টার্গেট করেছিল…কিন্তু মুন্নার ক্লাবে তো এরকম হওয়ার কথা নয়! আই মাস্ট সে, মুন্নারেই পুলিশে খবর দেওয়া উচিত ছিল।

অবনী বললেন, কিছু তো নিতে পারেনি, তাই ভাবলাম সাতসকালে আর পুলিশের ঝক্কিতে যাই কেন?

কিন্তু দুটো লোকের ওপর আপনাদের তো সন্দেহ হয়েছিল। অস্তুত সেটুকুও রিপোর্ট করতে পারতেন। ধরে নিচ্ছেন কী করে, কেয়ারটেকারকে তারা প্রকৃত পরিচয় দিয়েছে? কেয়ারটেকারের বক্তব্যও বেদবাক্য বলে মেনে নেওয়ার কোন অর্থ হয় না।

মিতিন বলল, কিন্তু লোকদুটো হঠাৎ আমাদের টার্গেট করবেই বা কেন?

কিছু বলা যায় না ম্যাডাম। কত লোকের কত রকম উদ্দেশ্য থাকে। …বাই দ্য বাই, ছিনতাই হওয়া ব্যাগে কোনও দামি জিনিস ছিল না তো?

লাকিলি জাস্ট পাঁচ মিনিট আগে আমার ক্যামেরাটা বের করে কাঁধে নিয়েছিলাম। আর যা ছিল, বলার মতো কিছু নয়।

অবনী আহত মুখে বললেন, কেন, দাবার বোর্ডটা কি ফ্যালনা? যথেষ্ট প্রেশাস।

কোনও স্পেশ্যালিটি ছিল বুঝি? আইভরি-টাইভরির গুটি?

সেটটা প্লাস্টিকেরই। তবে দাম অন্য কারণে। অবনী ফোঁস করে শাস ফেললেন, জানেন, আমি একেবারে জেতার মুখে ছিলাম। আর মাত্র তিনটে চাল, তার পরেই পার্থকে হাত তুলে দিতে হত।

অবনীর গভীর ক্ষতিটাকে কুরুপ সেভাবে অনুধাবন করতে পারলেন না যেন। গম্ভীর মুখে বললেন, মাটুপেট্টির গুন্ডাটা গাড়ি করে পালিয়েছিল বললেন, তাই না?

টুপুর বলল, হ্যাঁ। অ্যাম্বাসাডার।

নাম্বার নোট করেছিলেন?

চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। তবে লোকটাকে এক ঝলক দেখেছি। মিতিন আলগা হাসল, তাতে আর লাভ কী বলুন?

আমার কিন্তু খুব খারাপ লাগছে। কেরলে এসে আপনাদের এসব আজেবাজে ব্যাপার ফেস করতে হচ্ছে..!

সহেলি স্নান মুখে বললেন, ভাগ্যে আরও কী লেখা আছে কে জানে!

ঘাবড়াবেন না ম্যাডাম। মাইকেলস ইন অত্যন্ত সম্ভ্ৰান্ত হোটেল, এখানে মুন্নার ক্লাবের মতো ঘটনা ঘটবে না। আর কাল সারাটাদিন আমি আছি আপনাদের সঙ্গে। দেখি, কে আপনাদের কী ক্ষতি করে!

মিতিন হাসি হাসি মুখে বলল, অভয় দিচ্ছেন তা হলে?

আপনাদের তো বলেইছি ম্যাডাম, আমার বাবা ছিলেন শিকারি। রাইফেল হয়তো ধরিনি, তবে বুনো রক্ত তো কিছু আমার মধ্যেও আছে। এটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি, আমি থাকতে আপনাদের ধারেকাছে কেউ ঘেঁষতে পারবে না।

অবনী প্রায় গলে গেলেন, সো কাইন্ড অফ ইউ, সো কাইন্ড অফ ইউ।

নিড নট মেনশন। কুরুপ ঘড়ি দেখলেন, এখন চলি। কাল ভোর পাঁচটার মধ্যে রেডি হয়ে যান, আমি এসে পড়ব।

অত ভোরে? পাৰ্থ আঁতকে উঠল, ঘুম ভাঙবে?

জাগতেই হবে। ফার্স্ট ট্রিপ সাড়ে ছটায়, আমরা ফার্স্ট ট্রিপই অ্যাভেল করব। ভোরবেলা জীবজন্তু দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। রোদ উঠে গেলে শুধু জঙ্গল দেখাই সার হবে।

কুরুপ চলে যাওয়ার পর সহেলি বললেন, দ্যাখে বাপু, একটা কথা বলি। যে যতই গ্যারান্টি দিক, হোটলের যতই সুনাম থাক, আমি কিন্তু ভরসা পাচ্ছি না। আমার মনে হয় আজ রাত্তিরে শোওয়ার অ্যাঞ্জেমেন্টটা একটু বদলানো দরকার। মিতিন, পার্থ আর বুমবুম এই ঘরে শোবে, আমি, টুপুর আর টুপুরের বাবা ওই ঘরে।

কেন? তাতে কী সুরাহাটা হবে?

 দুটো ঘরেই ব্যাটাছেলে রইল। চোর এলে তারা ফেস করতে পারবে।

টুপুর ঝনঝন করে উঠল, কী বলছ মা? মিতিনমাসি থাকতে কীসের ভয়?

মিতিন হাসতে হাসতে বলল, এক কাজ করা যাক দিদি। পুরুষমানুষ থাকলে যদি তুমি সাহস পাও, আমরা ঘরে বুমবুমকে নিয়ে নিই! সেও তো ব্যাটাছেলে, না কি?

ঠাট্টা কোরো না। যা বলছি তাই করো।

সহেলিকে আরও কিছুক্ষণ খেপানো চলল। জোর হাসাহাসি হচ্ছে ঘরে। তার মধ্যেই উশখুশ করছিলেন অবনী। হঠাৎ বললেন, এই পাৰ্থ, দোকানে যাবে না?

পার্থ অলস মেজাজে বলল, ছাড়ুন না অবনীদা, আজ সকলে মিলে একটু গপ্পো করি। দাবা নয় আজকের মতো থাক।

দাড়িও থাকবে?

 থাকুক না। একদিনে আর কফুট বাড়বে? বলতে বলতে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল পার্থ। দেশলাই জ্বালিয়ে ধরিয়েছে সিগারেট। কাঠি ফেলার জন্য অ্যাশট্রে খুঁজছে।

উঠে টেবিল থেকে ছাইদান এনে দিল টুপুর। চিনেমাটির সুদৃশ্য বস্তুটি নাড়াচাড়া করতে করতে পার্থ বলল, মাইকেল্স ইনের তো দেখি খুব কেতা!

কেন?

অ্যাশট্রের গায়ে পর্যন্ত হোটেলের ইনিশিয়াল! এম আই!

ভুরু কুঁচকে কথাটা শুনল মিতিন। ভুরুটা তার কুঁচকেই রইল।