৭-৮. মিতিন স্নানটান সেরে তৈরি

সকাল নটার মধ্যে মিতিন স্নানটান সেরে তৈরি। মাসির তাড়া খেয়ে টুপুরও। পার্থ আজ অভিযানে অংশ নিতে পারছে না। প্রেসে বিস্তর কাজ আছে, কাকে-কাকে যেন জিনিস ডেলিভারি দিতে হবে। মুখে যতই টিপ্পনী কাটুক, আজও তাঁর নুরপুর যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। বাসনায় জল পড়ে যেতে সে যেন ঈষৎ ক্ষুব্ধ।

শেষ মুহূর্তেও পার্থ একবার বাগড়া দেওয়ার চেষ্টা করল, কাল পনেরোই অগস্ট, কালই চলো না। ভোর-ভোর বেরিয়ে পড়ব। বুমবুমকেও নেব সঙ্গে। চমৎকার একটা আউটিং হয়ে যাবে।

প্রস্তাবটা আমলই দিল না মিতিন। সরাসরি বলল, আমরা বেড়াতে যাচ্ছি না স্যার। তা ছাড়া, এখন একটা দিনও আমি নষ্ট করতে রাজি নই।

দিন তো তোমার এমনিতেই নষ্ট। বুনো হাঁসের পিছনে ছুটে বেড়ানোই তো অর্থহীন। মিতিনকে নিরস্ত করতে না পেরে পার্থর পুটুস হুল। পরক্ষণেই স্বরে উপদেশ, যাক গে, সাবধানে যেয়ো। গাড়িতে তেল বেশি নেই, ট্যাঙ্কি ভরে নিতে ভুলো না যেন!

আমরা তো গাড়ি নিচ্ছি না।

বাসে যাচ্ছ নাকি? ঝাঁকুনিতে কোমর খুলে যাবে কিন্তু।

তোমাকে টেনশান করতে হবে না। পারলে তাড়াতাড়ি ফিরে বুমবুমকে কোথাও একটা ঘুরিয়ে এনো। বলেই টুপুরকে নিয়ে মিতিন রাস্তায়। মোড়ে এসে ট্যাক্সি ধরল। সিটে বসে নির্দেশ, হাওড়া।

টুপুর অবাক, ও মা! হাওড়া যাব কেন?

আজ রুটটা একটু বদলাচ্ছি। হাওড়ায় ট্রেন ধরে বাগনান, সেখান থেকে গাদিয়াড়া। তারপর জলপথ।

এ যেন মেঘ না চাইতেই জল! কাল মনে-মনে গাদিয়াড়ার কথা ভাবছিল, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেই আশা পূরণ হতে চলেছে! টুপুর আহ্লাদিত মুখে বলল, হঠাৎ এই প্ল্যান?

দেখতে চাই, অন্যভাবে নুরপুর পৌঁছতে কেমন লাগে।

অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আছে মিতিনমাসির, তবে ভাঙতে না চাইলে টুপুরই বা জোরাজুরি করবে কেন? একসময় তো জানা যাবেই, এখন চুপচাপ মিতিনমাসিকে দেখে যাওয়াই ভাল।

বাগনান পৌঁছে একটা অটো নিয়ে নিল মিতিন। হাওড়ার এদিকটায় টুপুর আগে কখনও আসেনি। চারদিক এমনিতেই সবুজ, বর্ষায় ভিজে সেই সবুজ যেন ঝকঝক করছে। পড়ছে ছোট-ছোট গ্রাম, একটু ভিড়-ভিড় জনপদ। এক জায়গায় মেলাও চলছে জন্মাষ্টমীর। রঙিন পোশাকে অনেক কচিকাঁচা জড়ো হয়েছে সেখানে। শেষে বেশ খানিকটা ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে টুপুররা যখন গাদিয়াড়া পৌঁছল, ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটা ছুঁইছুঁই।

অটোর ভাড়া মিটিয়েই মিতিন নদীর পাড়ে ছুটল। সামনেই বয়ে যাচ্ছে রূপনারায়ণ। গঙ্গাও বেশি দূর নয়। কাল গঙ্গায় তেমন জল ছিল না, তুলনায় রূপনারায়ণ আজ থইথই। উঁচু পাড় ঢাল হয়ে নেমেছে নদীতে, জলে বাঁধা আছে সার সার নৌকো।

মিতিন পাড় থেকে চেঁচিয়ে এক মাঝিকে ডাকল, ও দাদা, জোয়ার কতক্ষণ চলবে?

হাওয়ায় উত্তর ভেসে এল, আরও ধরুন ঘন্টাখানেক।

ঠিক তো?

জলই আমাদের জীবন দিদি। হিসেবে ভুল হয় না।

এবার যেন মিতিনের ছটফটানি একটু কমল। টুপুরকে বলল, চল, আগে কিছু খেয়ে নিই।

কাছেই পরপর বেশ কয়েকটা খাওয়ার হোটেল। বর্ষাকাল বলেই বোধ হয় ভ্রমণার্থী নেই তেমন, হোটেলগুলো প্রায় মাছি তাড়াচ্ছে। মোটামুটি পছন্দসই দেখে একটায় ঢুকল মিতিন। ইলিশমাছ আর ভাতের অর্ডার দিয়ে কর্মচারীটিকে জিজ্ঞেস করল, এখান থেকে লঞ্চঘাট কদ্দুর ভাই?

বেশি নয়। জোর হাফ কিলোমিটার।

ওখান থেকে কি নৌকো পাওয়া যাবে?

নদীতে ঘুরবেন? সামনে থেকেই নৌকো নিন না। চেনা মাঝি আছে, বলে দিচ্ছি। আপনাদের মায়াচর পর্যন্ত বেড়িয়ে আনবে।

না গো। আমরা নৌকোয় নুরপুর যাব।

শুধু টুপুরই নয়, ছেলেটিও এবার যথেষ্ট বিস্মিত। হাতের কাছে লঞ্চ মজুত, তবু নৌকোয় নুরপুর যেতে চায়, এমন যাত্রী বোধ হয় বড় একটা দেখেনি সে। তাও বাড়তি কৌতূহল না দেখিয়ে ছেলেটি বলল, তা হলে অবিশ্যি লঞ্চঘাটে গিয়েই নৌকো খোঁজা ভাল। ওদিক দিয়ে নুরপুর কাছে হবে।

এখান থেকেও নিতে পারি, যদি নুরপুরের কোনও নৌকো মেলে। মানে, যার মাঝি ওদিকেই থাকেন?

তেমন কাউকে পাব কি? ছেলেটা একটুক্ষণ ভাবল, ঠিক আছে, আপনারা ততক্ষণ খান, আমি দেখছি।

হ্যাঁ, মিলেছে একজন। সুস্বাদু ইলিশের ঝাল আর গরম-গরম ভাতে পেট টইটম্বুর করে ভোজনালয় থেকে বেরিয়ে টুপুর দেখল, এক বুড়োমতো লোক প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে। নুরপুরের বাসিন্দা, নাম সনাতন।

মিতিন তো মহাখুশি। বলল, আমরা কিন্তু সোজা নুরপুর ঘাটে যাব না। আগে গঙ্গা থেকে ভাল করে নুরপুরটা দেখব।

সনাতন বললেন, যেমন আপনাদের ইচ্ছে।

নৌকো থেকে সরু কাঠের তক্তা পেতে দিলেন সনাতন। ঢাল বেয়ে নেমে, তক্তায় পা রেখে, সন্তৰ্পণে নৌকোয় উঠল টুপুরমিতিন। পাটাতনে বাবু হয়ে বসার পর সনাতন নৌকো ছাড়লেন। এখনও জোয়ার চলছে, স্রোতের বিপরীতে যাচ্ছে নৌকো, কসরত করে এগোতে হচ্ছে সনাতনকে। বইঠা বাইছে এক ষোলোসতেরো বছরের তরুণ, সনাতন হাল ধরেছেন।

আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে গাদিয়াড়া। টুপুর দু চোখ মেলে তীরভূমিটা দেখছিল। পারের কাছে হাঁটুজলে কী যেন হাতড়াচ্ছে বাচ্চা ছেলেমেয়ের দল। সকলেরই কোমরে গামছা, জল থেকে কিছু তুলে খপাখপ পুরছে গামছায়।

টুপুর উত্তেজিত মুখে বলল, ওরা কী ধরছে গো মাঝিদাদা?

মীন গো দিদি।

মানে মাছ?

উঁহু, মাছের চারা। মিতিন হেসে বলল, জোয়ারের জলে অজস্র কুচিকুচি মাছ ভেসে আসে। পোনাগুলো ধরে ভেড়ির লোকদের বেচতে পারলে এদের টু পাইস ইনকাম হয়। কত মানুষ এই মীন ধরেই জীবিকানির্বাহ করছে। চিংড়ির বাচ্চাতেই রোজগার সবচেয়ে বেশি।

বড় কষ্টের জীবন গো দিদি। দুটো পয়সা আয় করতে মানুষের ঘাম ছোটার জোগাড়। সনাতন মাথা দোলালেন, তা, তোমরা বুঝি গাদিয়াড়া বেড়াতে এসেছিলে?

ওই আর কী। মিতিনই বলল, যাব নুরপুর। একবার গাদিয়াড়া ছুঁয়ে গেলাম।

এখানকার কেল্লাটা দেখেছ?

আজ হয়ে উঠল না। মিতিন টুপুরের দিকে ফিরল, জানিস তো, গাদিয়াড়ায় লর্ড ক্লাইভের একটা দুর্গ আছে। উঁহু, ছিল। ফোর্ট মর্নিংটন। ব্রিটিশরা বহুকাল আগেই দুর্গটা পরিত্যাগ করে। নদীর বাঁকে প্রায় হানাবাড়ির মতো পড়ে থাকত দুর্গটা। উনিশশো বিয়াল্লিশের বন্যায় প্রায় চুরমার হয়ে যায়। এখন ওটা শুধুই ধ্বংসস্তূপ।

কথায় কথায় রূপনারায়ণ আর গঙ্গার সঙ্গমস্থল এসে গিয়েছে। দুটো নদনদীর ধারাকে দিব্যি চিহ্নিত করা যায়। যেখানে নদনদী দুটো মিশেছে, সেখানে স্রোতটাও কেমন এলোমেলো। ঘূর্ণিতে নৌকো প্ৰায় পাক খেয়ে যাচ্ছিল। দক্ষ হাতে সামলে নিলেন সনাতন। এবার ভাগীরথী বেয়ে চলেছেন। ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে নুরপুর, কাছে আসছে। পশ্চিমে দামোদর নদও দৃশ্যমান। ভাগীরথী যেখানে বাঁক নিয়েছে, তার খানিক আগে দামোদরের মোহনা।

হঠাৎই টুপুরের নজরে পড়ল, তীব্ৰবেগে ধেয়ে আসছে একটা স্পিডবোট। ডায়মন্ডহারবারের দিক থেকে। ভাগীরথীকে চিরে শাঁ শাঁ ঢুকে গেল রূপনারায়ণে। উথলে ওঠা ঢেউ এসে ছলা ধাক্কা মারল টুপুরদের নৌকোয়, টলমল দুলে উঠল তরণী। ঝলক জলও ছিটকে এল টুপুরদের মুখে-চোখে।

সনাতন বিরক্ত মুখে বললেন, এই এক কায়দা হয়েছে। আজকাল বোটগুলোর ছোটাছুটির কোনও বিরাম নেই।

স্পিডবোটটাকে চোখ কুঁচকে দেখছিল মিতিন। বলল, সংখ্যায় এরা বুঝি বেড়ে গিয়েছে?

হ্যাঁ গো দিদি। সময় নেই, অসময় নেই, সারাক্ষণ দাপাচ্ছে। রাতেও তো চরে বেড়ায়।

ওগুলো কাদের বোট? পুলিশ?

না গো। পেরাইভেট পার্টির। আমোদ-ফুর্তি করতে আসে নদীতে। সনাতন হাল সামান্য ঘোরালেন, তোমরা নুরপুরঘাটেই নামবে তো?

এক্ষুনি নামছি না। মিতিন ফের গুছিয়ে বসল, আগে নুরপুরের আশপাশটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখি।

নুরপুরে দেখার কী-ই বা আছে গো দিদি! ওই এক লাইটহাউস, আর বাঁধের মুখটায় কন্ধকাটা সাহেব-মেমসাহেবের সমাধি। তা, সেই সমাধি দেখতে হলেও তো নৌকো থেকে নামতে হবে। তখন খ্রিস্টানদের অনাথ আশ্ৰমটাও ঘুরে আসতে পার।

গঙ্গার ধারে একটা প্রাচীন বাড়ি আছে বলে শুনেছি?

কোনটা? কলকাতার বাবুদের বাড়িটা? যেখানে কদিন আগে ধনরত্ন নিয়ে হুলস্থূল হয়ে গেল?

হ্যাঁ গো। ওই বাড়িটাও একবার নদী থেকে দেখব।

কেন?

এমনিই।

বুঝেছি, তুমি খবরের কাগজের লোক। হঠাৎ যেন গোপন কিছু আবিষ্কার করে সনাতনের চোখ জ্বলজ্বল, বেশ তো, চলো। একদম ধার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

জোয়ার শেষ, জল এখন প্রায় স্থির। নৌকো চলেছে নিনহো অভিমুখে। সনাতনের সহকারী কিশোরটি বইঠা টানছে ছপাৎ-ছপ। হঠাৎ উৎসাহিত মুখে চেঁচিয়ে উঠল, হুই বাড়িটা দেখা যায়।

টুপুরেরও গোচরে এল। অঙ্কুটে বলল, বাড়িটা নদী থেকে কতটা উঁচুতে গো মিতিনমাসি!।

ভ্যানিটিব্যাগ খুলে ছোট্ট বাইনোকুলার বের করল মিতিন চোখে লাগিয়ে বলল, হুঁ, একটু বেশি উঁচুতে।

হাইটের জন্যই কি বাড়িটা গঙ্গার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে?

হতে পারে। বাইনোকুলারে দৃষ্টি রেখেই মিতিন সনাতনকে জিজ্ঞেস করল, ও বাড়ির কারওর সঙ্গে আপনার পরিচয় আছে নাকি?

একজনকে তো নুরপুরের সবাই চেনে। পুরুমশাই। বড় অমায়িক মানুষ গো! সবার সঙ্গে গপ্পো করে।

ও বাড়ির ইতিহাস কিছু জানা আছে?

বড় মানুষদের ঘরের কাহিনি আমরা গরিবগুরবোরা কোত্থেকে জানব দিদি? তবে দেশে-ঘরে তো অনেক উপাখ্যানই বাতাসে ভাসে। শুনেছি, যে-সাহেবের কাছ থেকে বাবুরা বাড়িটা কেনেন, তিনি মোটেই সুবিধের লোক ছিলেন না।

কীরকম?

সাহেব নাকি খুব অত্যাচারী ছিলেন। দলবল নিয়ে যেই না গাঁয়ে ঢুকতেন, অমনি লোকে দুদ্দাড়িয়ে পালাত। কচিকাঁচারা এত ভয় পেত যে, একবার দৌড় লাগালে আর ঘরেই ফিরত না।

তা অত্যাচারটা কী করতেন?

অত বলতে পারব না। লুঠপাট চালাতেন বোধ হয়।

 কলকাতার বাবুরা নিশ্চয়ই সেরকম নন?

তেমন কোনও বদনাম কানে আসেনি। ওঁরা তো আর থাকেনও না। তবে ইদানীং নাকি এক বাবু এসে রয়েছেন।

নৌকো পৌঁছে গিয়েছে বাড়ির একদম কাছে। কালকের কাদাভরা তীর জলে থইথই। লকগেট পর্যন্ত চলে গিয়েছে জল। লোহার দরজার অন্তত ফুটপাঁচেক এখন জলের তলায়।

মিতিন জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা মাঝিভাই, লকগেটটা কি পুরোপুরি ডোবে কখনও?

খুব কম। বছরে জোর এক-আধদিন। ওই…বড় বান-টান এলে।

তখন কি লকগেট এরা খুলে দেয়?

 কই আর? বন্ধই তো আছে বরাবর।

কখনও খুলতে দেখেননি? ভাল করে স্মরণ করুন।

না গো দিদি। কম করে পঞ্চাশ বছর নৌকো বাইছি, গেট কখনও খোলা হয়েছে বলে তো মনে পড়ে না। তবে সামনেটা কাদা জমে একেবারে শক্ত হয়ে গিয়েছিল, পরিষ্কার করার পর চেহারা ফের খোলতাই হয়েছে।

কবে পরিষ্কার হল?

সনাতন একটু ভেবে বললেন, তা এক বছর তো হবেই। গত জষ্টিতে। জল তখন অনেক কম ছিল নদীতে। দশ-বারোটা শ্ৰমিক তিনদিন ধরে কাদাটাদা ছাড়াল। সেই মাটি গেল পাশে রতনবাবুর ইটভাঁটায়।

অলস গতিতে দুলে-দুলে বাড়িখানা পেরোল নৌকো। অল্প একটু এগিয়ে মিতিন বলল, এখানেই পাড়ে নৌকো ভেড়ানো যায় না মাঝিভাই?

কেন, ঘাটে যাবেন না?

থাক। অদ্দুর আর টানার দরকার নেই। আবার পিছনে যাওয়া…!

তবে রতনবাবুর ঘাটেই বাঁধি?

 সে আপনার যেমন সুবিধে।

নৌকো থেকে নেমে সামান্য অস্বস্তিতে পড়ে গেল টুপুর। ইটভাঁটার কর্মীরা কাজ থামিয়ে হাঁ করে দেখছে তাদের। দুজন ফিটফাট শহুরে মহিলা নদীপথে এসে ইটভাঁটায় অবতরণ করছে, এমন দৃশ্য তাদের কাছে বোধ হয় অভাবনীয়।

মিতিনের ভ্রূক্ষেপ নেই। সনাতনের টাকা মিটিয়ে উঠল পাড়ে। গায়েই মীনধ্বজদের পাঁচিল, চলল তার গা ঘেঁষে। তিরিশ-চল্লিশ পা গিয়ে থামল হঠাৎ। ঝুঁকে মাটি থেকে দুখানা জীর্ণ পলিথিনের বস্তা তুলল। ভুরুতে ভাঁজ পড়ল। বস্তা দুটো দেখল উলটে-পালটে।

টুপুর চোখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী আছে গো এতে? ৬৬

গিতিনের ঠোঁটে অর্থপূর্ণ হাসি, মাটি!

 তা ইটভাঁটায় তো মাটিই থাকবে।

মিতিন আর কিছু বলল না। মাথা নিচুকরে হাঁটছে ফের। ইটভাঁটার সীমানা পেরিয়ে উঠল বাঁধের রাস্তায়। বাঁয়ে ঘুরে মীনধ্বজদের গেটে গেল।

মোবাইল ফোনে ডাক দিতেই মীনধ্বজ সশরীরে হাজির। বস্তভাবে বললেন, এ কী, আজ আবার আসছেন, জানাননি কেন?

মিতিন একগাল হাসল, সারপ্রাইজ ভিজিটের মজাই আলাদা।

গেট খুলে মীনধ্বজ ইতিউতি তাকালেন, আপনাদের গাড়ি কোথায়?

অম্লানবদনে মিথ্যে বলল মিতিন, আজ বাসে এলাম।

.

০৮.

পাক্কা বারো ঘণ্টার সফর সেরে টুপুর আজ কুপোকাত। ওঃ, একখানা দিন গেল বটে! সেই সকালে রওনা দিয়ে গাদিয়াড়া হয়ে নুরপুর, তারপর মীনধ্বজবাবুর বাড়ি ঘণ্টাতিনেক নানান অনুসন্ধান চালাল মিতিনমাসি। টুপুরকেও শাগরেদি করে যেতে হল। শেষে সত্যিসত্যি বাস ধরে প্রত্যাবর্তন। একই দিনে ট্যাক্সি, ট্রেন, অটোরিকশা, নৌকো, বাস—শুধু উড়োজাহাজটাই যা হয়নি। বাসেই ধকল গেল সবচেয়ে বেশি। বড় ঢিকুর-ঢিকুর চলে, একবার দাঁড়ালে আর নড়তেই চায় না। নুরপুর থেকে তারাতলা প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাগিয়ে দিল। তারাতলায় ট্যাক্সি নিয়ে টুপুর যখন ঢাকুরিয়া পৌঁছল, তখন সব দম নিঃশেষ।

পাৰ্থ আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। আরতিকে ছুটি দিয়ে নিজেই বানিয়েছে রাতের খানা। আলুর দম, চিকেন-ভর্তা আর পরোটা। বুমবুমকে খাইয়েও দিয়েছে সময়মতো। টুপুর-মিতিনের বিধ্বস্ত দশা দেখে বুঝি মায়া জাগল, ঝটপট সাজিয়ে ফেলল টেবিল। টুপুরকে বলল, আয় রে, ওস্তাদ শেফের হাতের রান্না খেয়ে আজ তোদের ক্ষুন্নিবৃত্তি হোক।

চিকেন-ভর্তাটা পার্থমেসো ভালই বানায়, আগেও খেয়েছে টুপুর। আলুর দমটাই তাই চাখল প্রথমে। জিভে ঠেকিয়েই বলল, দারুণ! নারকোল তো দিয়েছ, সঙ্গে পোস্ত আছে মনে হচ্ছে?

ইয়েস। এটা মুঘলাই আলুর দম। জানিস তো, মুঘলদের সব খানাতেই অল্পবিস্তর পোস্ত থাকত?

আমি তো জানতাম আফগানিস্তানে খুব পোস্তর চাষ হয়।

আরে, সেই জন্যই তো! মুঘলরা কোন রাস্তা দিয়ে ভারতে ঢুকেছিল, অ্যাঁ? বাবর তো অরিজিনালি কাবুলেরই রাজা ছিলেন। পার্থ মুখে একটা গাম্ভীর্য ফোটাল, যাক গে, আজ তোদের এক্সপিডিশন কেমন হল বল?

সংক্ষেপে বর্ণনাটা সারল টুপুর। নৌকোয় বসে লকগেট দর্শন, ইটভাঁটা হয়ে মীনধ্বজদের গৃহে প্রবেশ, মীনধ্বজ-করুণা-অনঙ্গমোহনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব, খোঁড়াখুড়ির জায়গাটা আবার পর্যবেক্ষণ, বেসমেন্টে মিতিনমাসির উত্তেজিত পদচারণা, বেরনোর মুখে সন্দীপনের সঙ্গে ঝলক মোলাকাত সবই বলল আলগা-আলগা ভাবে। শুধু ইলিশ ভক্ষণটাই চেপে গেল, পাছে পার্থমেসো দুঃখ পায়।

কথার মাঝেই মিতিনও স্নান সেরে হাজির। চিকেনটা শুঁকল একটু, তারপর একখানা পরোটা আঙুলে ঝুলিয়ে নিরীক্ষণ করল।

পার্থ ভুরু নাচিয়ে বলল, কেমন দেখছ?

ভারতের ম্যাপ হয়নি। মেরেকেটে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র বলা যায়।

শুধু শেপটাই দেখলে? পাৰ্থ রীতিমতো আহত, কীরকম মুচমুচে হয়েছে দ্যাখো!

ছোট্ট একখানা টুকরো দাঁতে ছিঁড়ে অনেকক্ষণ ধরে পাকলেপাকলে খেল মিতিন। অধীর চোখে মতামতের জন্য অপেক্ষা করছে পার্থ। মিনিটদুয়েক পর মিতিনের উদাসীন তারিফ, ওকে! খিদের মুখে চলে যাবে।

পার্থ ক্ষুব্ধ গলায় বলল, এই তো তোমাদের দোষ। প্রাণ খুলে প্রশংসা পর্যন্ত করতে পার না। রান্নাটা তো ছেলেদের হাতেই বেশি খোলে, এটা মানতেও মেয়েদের আপত্তি!

মিতিন খিলখিল হেসে উঠল। ওই হাসিই বুঝি বলে দিল, তার সারাদিনের ক্লান্তি কেটে গিয়েছে। গপগপ খাওয়া সেরে ঝপাঝপ বানিয়ে ফেলল তিনকাপ কফি। টুপুর বিছানায় যাওয়ার উদযোগ করছিল, তাকে পাকড়াও করে বসাল সোফায়। হাতে গরম কফি ধরিয়ে দিয়ে বলল, এক্ষুনি শুলে চলবে? পরীক্ষা দিতে হবে না?

কীসের পরীক্ষা?

সারাদিন যে সঙ্গে ঘুরলি, কদ্দুর কী বুঝলি শুনি?

টুপুর ঈষৎ চাঙা বোধ করল। মিতিনমাসি তাকে গুরুত্ব দিলে নিজেকে বেশ ওয়াটসনের মহিলা সংস্করণ বলে মনে হয়। ঠোঁট কামড়ে বলল, অনেক নতুন তথ্যই ভাঁড়ারে এল আজ। কোত্থেকে শুরু করি?

যেখান থেকে খুশি।

 প্রথমে করুণার প্রসঙ্গে বলি?

বল।

করুণা আগের দিন জানায়নি মীনধ্বজবাবুর বাড়িতে ওর বরের যাতায়াত আছে।

বরের নামটা কী?

গোবিন্দ। সন্দীপনবাবু ওকে দিয়েই বাড়ির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করান।

সুতরাং বাড়ির চারপাশটা গোবিন্দ ভালই চেনে। অভিমত ছুড়ে পাৰ্থ কফি নিয়ে বলল, তাই তো?

অবশ্যই। আর সেই কারণেই অন্ধকারে খোঁড়াখুঁড়ির স্পটটা খুঁজে পাওয়া তার পক্ষে কঠিন নয়। অতএব পরেরবার যে দুটো লোক হানা দিয়েছিল, গোবিন্দ তাদের একজন হলেও হতে পারে।

হুম। মিতিন মাথা দোলাল, তারপর?

অনঙ্গমোহনবাবুর ঠাকুরদার বাবা নিনহো-তে বছরকয়েক বাস করেছিলেন। সিংহধ্বজের সঙ্গে তাঁর ভালই ঘনিষ্ঠতা ছিল। ভুজঙ্গমোহন ছিলেন একজন জ্যোতিষী, অনেক ব্যাপারেই সিংহধ্বজ তাঁর পরামর্শ মেনে চলতেন। সিংহধ্বজকে পাকাপাকি বসবাসের দিনটা তিনিই স্থির করে দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ওখানে প্রবেশের আগে সিংহধ্বজের মৃত্যু হয়।

পার্থ ফোড়ন কাটল, এই জায়গাটায় একটু প্যাঁচ আছে মনে হচ্ছে!

মিতিন চোখ নাচিয়ে বলল, কী প্যাঁচ?

সিংহধ্বজের মৃত্যুটা অস্বাভাবিক নয় তো? হয়তো ভুজঙ্গমোহনই তাঁকে…।

তুত, গুলিয়ে দিয়ো না তো! সিংহধ্বজ মারা যান বাগবাজারের বাড়িতে। হৃদরোগে। মোরওভার, ভুজঙ্গমমাহন তাঁকে অযথা খুন করবেনই বা কেন?

মোটিভ তৈরি করাই যায়। পাৰ্থ নড়েচড়ে বসল, যদিও গুপ্তধনের তত্ত্বে আমি এখনও বিশ্বাস করছি না, তবু ধরো, পর্তুগিজ বণিকটি তাঁর সব সোনাদানা নিয়ে যেতে পারেননি। জলদি-জলদি কেটে পড়ার তাড়ায় কিছু হয়তো গোপন জায়গায় রয়েই গিয়েছে। হয়তো সিংহধ্বজ কোনওভাবে সেই স্থানটির সন্ধান পেয়েছিলেন। এবং বিশ্বাস করে ভুজঙ্গমোহনকে বলেও ফেলেছিলেন, অবশ্যই স্থানটির সঠিক অবস্থান না জানিয়ে। ভুজঙ্গমোহন হয়তো তখন ওই বাড়িতেই ছিলেন, অথবা নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনিই হয়তো লোভে পড়ে সিংহধ্বজকে হত্যা করে…। পরে নিজেও তিনি ওই গুপ্তধন খুঁজে পাননি। তাই মরার আগে ছেলেকে গল্পটা বলে যান। সেই ছেলে বলেন তাঁর ছেলেকে…। এভাবেই হয়তো বংশপরম্পরায় কাহিনিটি চলছে। অনঙ্গমোহনের বাপ-ঠাকুরদা হয়তো রাষ্ট্র করে বেড়াননি, এখন পেটপাতলা অনঙ্গমোহনের দৌলতে সবাই জেনেছে।

খুবই কষ্টকল্পনা। তবে উড়িয়ে দিচ্ছি না। মাথায় রাখব। মিতিন কথাটা ভাসিয়ে ফের টুপুরে ফিরল, আর কী কী জানলি আজ?

চোদ্দো মাস আগে লকগেটের কাদা সাফ হয়েছে।

আর?

লকগেট আদৌ খোলা হয় না। জল বাড়লেও ক্কচিৎ কখনও পুরোটা ডোবে।

নেক্সট?

সন্দীপনবাবু দায়িত্ব নিয়ে কাদা পরিষ্কারের কাজটা করিয়েছিলেন। তবে তার আগে ফোনে মীনধ্বজবাবুর অনুমতি নিয়ে নেন। কাদা সরাতে সন্দীপনবাবুর সাত হাজার মতো টাকা খরচ হয়েছিল। আর কাদামাটি বিক্রি করে তিনি আটশো টাকা পান। পাশ বইয়ে হিসেব আছে।

হুঁ। তারপর?

আর কী? টুপুর মাথা চুলকোল, তেমন কিছু তো…?

স্মৃতিশক্তিকে আরও প্রখর কর। তোর মেসোর মতো শুধু শব্দজব্দ করে কিস্সু হবে না। প্রতিটি ডাটা পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে রাখার একটা প্রসেস আছে। সময়ের উলটো দিকে ধাপে ধাপে এগোতে হয়। অর্থাৎ দিনের শেষ থেকে ক্রোনোলজিক্যালি শুরুতে যাওয়ার চেষ্টা করব। প্রথমে শুধু আজকের দিনটা। তারপর আজ আর গতকাল। তারপর আজ কাল পরশু। বুঝলি?

হুঁ।

এবার বল, মীনধ্বজবাবু আজ কী জানালেন?

কী?

কানাডার বাড়িটা এখনও বিক্রি করেননি। সেপ্টেম্বর মাসে আবার ওয়াটারলু যাচ্ছেন। তখন বাড়িটাও বেচবেন, ছেলেমেয়ের কাছেও মাস তিন-চার কাটিয়ে আসবেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ, বলছিলেন তো। কিন্তু এই কেসের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক?

হয়তো আছে। হয়তো নেই। তবে তথ্যটা তো মাথায় রাখতে হবে। মিতিন ভুরু কুঁচকে কী যেন ভাবল, আচ্ছা, একটা ব্যাপার তুই লক্ষ করেছিস?

কী গো?

খুব ইন্টারেস্টিং। পিছনের ফটক থেকে গঙ্গার দিকে মুখ করলে লকগেটখানা বেশ খানিকটা বাঁয়ে।

পার্থ বলল, ও তো কালই দেখেছি।

আর যে স্পটটা খোঁড়া হয়েছিল, সেটা কিন্তু একদম লকগেটের সোজাসুজি।

তাই নাকি? তো?

ভাবছি কোনও কার্যকারণ সম্পর্ক কি একেবারেই নেই?

এ তো আমার গল্পের চেয়েও আষাঢ়ে কল্পনা ম্যাডাম ডিটেকটিভ। সুযোগ পেয়ে পার্থ একটু খোঁচা দিয়ে নিল, ভুতুড়ে শব্দ-টব্দের ব্যাপারে আর এগোতে পারলে? কাল আর নতুন কিছু ঘটেছে?

নাঃ। ডিটেকটিভ দেখলে ভূতরা তফাতে সরে যায়। সাপেনেউলে সম্পর্ক তো!

টুপুর হেসে ফেলল। মীনধ্বজদের বাড়ির একটা দৃশ্য মনে পড়ল হঠাৎ। জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা মিতিনমাসি, তুমি বেসমেন্টে তখন ওভাবে হাঁটছিলে কেন? প্যাসেজের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পা গুনে-গুনে যাচ্ছ, ফিরছ? বেসমেন্টের চাতালে নেমেও ঘাড় উঁচিয়ে ঘর তিনখানা বারবার করে দেখছিলে?

নির্মাণের কারিকুরিটা বুঝতে চাইছিলাম। কপালে টকটক টোকা মারল মিতিন। ঝপ করে তর্জনী তুলে বলল, ওয়ান মোর থিং। মীনধ্বজবাবুর বাড়ি আর রতনবাবুর ইটভাঁটার মাঝের পাঁচিলটা কিন্তু কমন।

টুপুর বলল, হ্যাঁ তো!

 এবং পাঁচিলের হাইট সাত-আট ফুটের বেশি নয়।

তুমি কি বলছ চোর দুটো ওই পাঁচিল ডিঙিয়েই গুপ্তধন খুঁজতে এসেছিল?

কীসের সন্ধানে এসেছিল, তা এখনও জানা যায়নি। তবে স্পটটায় পৌঁছনোর ওটাই সহজতম রুট। নয় কি? আর পালানোর সময় তো দৌড়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে, হাত পনেরো-বিশ সাঁতার কেটে, ইটভাঁটায় উঠে হাওয়া মারা যায়।

ওঃ, তোমাদের গবেষণা এবার থামাবে? পাৰ্থ কফির কাপ সিঙ্কে রেখে এসেছে। লম্বা হাই তুলে বলল, যেখানে গুপ্তধনই নেই, সেখানে কে ঢুকল, কে বেরোল, কে খুঁড়ল, কে পালাল, তাতে কী যায় আসে? সবই তো মিনিংলেস।

গুপ্তধন মানে কি শুধু সোনাদানা আর মোহর? মিতিন পালটা প্রশ্ন হানল, অন্য কিছু কি হতে পারে না?

দুনিয়ায় আর কী বহুমূল্য আছে ম্যাডাম?

সেটাই তো ঠাহর করার চেষ্টা করছি।

চালিয়ে যাও। পার্থ আবার হাই তুলল, আমি শুতে চললাম।

এই দাঁড়াও, দাঁড়াও কথা আছে। মিতিন তাড়াতাড়ি পার্থকে আটকাল, তোমার বন্ধু অরুণাভ পুরনো নিউজপেপার জমায় না?

ওটাই তো ওর রিসার্চের টপিক। ভারতের সংবাদমাধ্যমের ক্ৰমবিকাশ। অরুণাভ তো হিকির গেজেটেরও ফটোকপি রেখেছে।

গুড। কাল তো ছুটি, সকালে ওর বাড়ি গিয়ে পুরনো দিনের নিউজ একটু ঘেঁটে এসো তো। নাইনটিন্থ সেঞ্চুরিতে অলমিডা নামের কোনও ব্যবসায়ী…!

বলতে হবে না, বুঝে গিয়েছি। পাৰ্থ তৃতীয় হাইটি তুলল। ঘরে যেতে-যেতে বলল, ডোন্ট ওরি, কিছু যদি থাকে, ঠিক জোগাড় করে আনব।

পার্থ চলে যাওয়ার পরও মিতিন বসে থাকল চুপচাপ। টুপুরেরও ঘুম পাচ্ছিল, কিন্তু মিতিনমাসিকে ছেড়ে উঠতে পারল না। কী ধরনের গুপ্তধনের কথা ভাবছে মিতিনমাসি? কোনও যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা? হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন পুঁথি? অথবা বিখ্যাত শিল্পীর দুষ্প্রাপ্য কোনও ছবি? কিন্তু সেসব কি মাটিতে পুঁতে রাখা সম্ভব? এক, যদি কোনও বাক্সে পুরে… অলমিডার সময় থেকেই কি রাখা আছে? নাকি শিখিধ্বজ বা সিংহধ্বজ…?

ভাবনাটাকে চমকে দিয়ে হঠাৎ মিতিনমাসির গলা, আমার মোবাইলটা নিয়ে আয় তো।

এত রাতে কাকে ফোন করবে গো?

আমাদের ভেল্টুদাকে। গেঁওখালির যে ছেলে দুটো ধরা পড়েছিল, তাদের একটু ট্রেস করতে চাই।

কেন? ওরা আর কী কাজে লাগবে?

কিছু কি বলা যায় রে! হয়তো ওরাই এই রহস্যের মিসিং লিংক।

অর্থটা ঠিকঠাক হৃদয়ঙ্গম করতে পারল না টুপুর। কোন মিসিং লিংকের কথা বলছে মিতিনমাসি?