সাত – শেষ রাতের আগন্তুক
কিন্তু সে—রাতে হেরু ইয়াকুবের ডেরায় যায়নি। আফতাব দারোগা ভোরঅব্দি সদলবলে ওঁৎ পেতে থাকার পর ভীষণ খাপ্পা হয়ে স্টেশনে চলে আসেন। স্টেশনে নতুন মাস্টার এক অস্ট্রেলিয়ান সায়েব। তার নাম জর্জ হ্যারিসন। গোরাসায়েব দেখলেই দারোগার সেলাম দেওয়া অভ্যাস আছে। সে সায়েবের সঙ্গে নিজস্ব ইংরেজিতে বাৎচিৎ চালিয়ে যেতে লাগল। সেপাইরা পিছনের অশত্থতলায় চরণের দেওয়া গাঁজা টানতে জমে গেল। রাতের ক্লান্তির সঙ্গে গাঁজার ঢুলুঢুলু আমেজ মিলে একসময় সবাই অশত্থতলায় গড়িয়ে পড়ল। আফতাব দারোগা বেটনে খোঁচাখুঁচি করে তাদের কোনোমতে ওঠাল। তখন কোনো অজ্ঞাত কারণে তারা কথামতো গোরাংবাবুর কাছে না গিয়ে মাঠের পথ ধরল। দারোগা ঘোড়া ছুটিয়ে আলপথেই ডাবকই গ্রামের দিকে চলেছে। চরণ যথাসাধ্য পিছনে দৌড়চ্ছে। সেপাইরা টলতে টলতে ঘুমের ঘোরে হাঁটছে। এমন জাতের লোকজন সঙ্গে নিয়ে হেরুকে ধরতে আসার কারণ আফতাব খানের ছিল একটাই : বখশিসের মোটা ভাগ আত্মসাৎ করা। টাকার প্রতি অস্বাভাবিক টানের জন্যে এই বিহারি ভদ্রলোকটি সম্পর্কে পুলিশ ও জনমহলে প্রচারিত ছিল যে ওরা নাকি সাতপুরুষ ধরে কসাই। তবে একথা সত্য, আফতাবের এক ভাই কলকাতার জেলে ফাঁসুড়ের পদে চাকরি করে।
সেদিন দুপুরে যখন সেরাজুল হাজির বাড়ি খাসি কেটে খানাপিনার চূড়ান্ত আয়োজন চলেছে, তখন গোরাংবাবুর ঘোড়াটা গেছে হারিয়ে। সকালে যথারীতি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল পাশের পুকুরে, তারপর আর পাত্তা নেই। গোরাংবাবু খুঁজে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। স্নান করেননি, খেতেও বসছেন না।
অবশ্য খেতে না বসার কারণ স্বর্ণের সঙ্গে অভাবিতভাবে ঝগড়া আর বাক্যালাপ বন্ধ। গোরাংবাবুর ভিতরটা দুঃখে লোভে হু হু করে জ্বলছিল গত রাত থেকে। কী বীভৎস দৃশ্য গতরাতে তাঁর ঘরেও তিনি দেখেছেন—যা রাঙির মড়ার চেয়েও সাংঘাতিক!
এ রাতে তেমন বৃষ্টি পড়েনি। বরং বেশ গুমোট গরম করছিল। ডাক্তারখানার মধ্যে যে তক্তাপোষে তিনি শোন, সেটা খুব মচমচ করেছে আজ। ঘনঘন পেছাব পাচ্ছিল ডাক্তারের। মাঝের বার উঠোনে এগিয়ে স্বর্ণর ঘরে আলো দেখতে পান। দরজা বন্ধ, উঠোনের দিকে জানালাটা খোলা ছিল। ডাক্তার দেখলেন, তাঁর বিধবা মেয়ে স্বর্ণলতা সেই সোনার গয়নাগুলো সারা গায়ে পরে তক্তাপোষের বিছানায় বসে রয়েছে!
আর তার পায়ের কাছে এক ঝাঁকড়া চুল আর গোঁফদাড়িওয়ালা প্রকাণ্ড জানোয়ার হেরু বাউরি।
মুহূর্তে মগজে আগুন ধরে যায় গোরাংবাবুর। দমাদ্দম কপাটে লাথি মারতে থাকেন। তখন হেরু দরজা খুলে দেয়। গোরাংবাবু পায়ের খড়ম খুলে ওকে মেরে চলেন। হেরু ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে হাসতে হাসতে বারান্দা ডিঙিয়ে উঠোনে পড়ে এবং অন্ধকারে বড়ো বড়ো পায়ের ছাপ রেখে পালিয়ে যায়।
স্বর্ণর দিকে তাকিয়ে গোরাংবাবু শুধু বলেন, ‘ছি! ধিক, শত ধিক!’
স্বর্ণ অপ্রস্তুত হেসে বলে, ‘ও বলল—তাই পরলুম। আমি কি গয়না পরি নাকি?’
এই অদ্ভুত দুর্ঘটনার পর ঘোড়া হারিয়ে যাওয়ায় গোরাংবাবু একেবারে ভেঙে পড়েছেন। দুপুরে ঘেমেতেতে ক্লান্ত হয়ে যখন বিছানায় চিৎ হয়েছে, স্বর্ণ এসে পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগল। তবু গোরাংবাবুর মন শান্ত হল না।
তখন স্বর্ণ তার পুরনো শাসানি প্রচার করল।…’বেশ, তাহলে আমি যেদিকে দু’চোখ যায়, চলে যাচ্ছি।’
সত্যিসত্যি সে বেরিয়ে পড়ল। তাতেও কাজ হল না। গোরাংবাবু চোখ বুজে পড়ে রইলেন। একটু পরে চাঁদঘড়ি এসে বলে গেল, ‘ডাক্তারবাবু আপনার ঘোড়াটা আঁরোয়ার জঙ্গলে দেখে এলাম।’
তার খানিক পরে নতুন সহকারী স্টেশনমাস্টার সুধাময়বাবু হন্তদন্ত এসে বলল, ‘ডাক্তারবাবু! আপনার মেয়ে ডিসট্যান্ড সিগনালের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল—হান্টার সায়েব ট্রলিতে আসতে আসতে…’
গোরাংবাবু লাফিয়ে উঠলেন।…স্বর্ণ, স্বর্ণ সুইসাইড করেছে?…হাঁউমাউ করে কেঁদে দৌড়তে শুরু করলেন—আটকানো গেল না।
কাছেই হান্টারসায়েবের ট্রলি সাইডিং—এ দাঁড় করানো আছে। প্রকাণ্ড ছাতার নিচে স্বর্ণ পা ঝুলিয়ে মুখ নিচু করে বসে রয়েছে। আর পাশে মাটিতে দাঁড়িয়ে হান্টারসায়েব ওকে হাতমুখ নেড়ে অনর্গল কিছু বোঝাচ্ছেন।
গোরাংবাবু স্বর্ণর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ‘মা আমার মা, মা গো!…
হান্টার বলেছিলেন যে আজ কাটোয়া ফিরছেন না—এইখানেই জর্জের কাছে রাত কাটাবেন এবং সন্ধ্যাবেলা এসে স্বর্ণলতাকে শেকসপিয়ারের গল্প শোনাবেন।
উপসংহার চোখের জলে চমৎকার স্নিগ্ধ হল। বাবামেয়ে মুখোমুখি বসে গেল। খেতে বসে স্বর্ণ মিষ্টি হেসে বলছে, ‘বাবা, তুমি কী ভেবেছিলে?’
গোরাংবাবুও মিষ্টি হেসে বলেছেন, ‘কীসের?’
‘আমার গয়না পরা!’
‘ছেড়ে দে মা!’
‘বাবা, ওগুলো কাঁদুনেদিঘিতে ফেলে দিয়ে আসব ও বেলা।’
‘তাই দিস।’
‘আর ঘোড়াটাও খুঁজে আনা হবে!’
‘ঠিক বলেছিস।’ গোরাংবাবু জল খেয়েছেন, ফের বলেছেন, ‘জঙ্গলে বেশিদূর যাস নে। পেলি ভালো—না পেলি চলে আসবি। আজকাল হিজলবিল ডুবে রাজ্যের জন্তুজানোয়ার এসে জুটেছে ওখানটায়। আরে স্বর্ণ! চাঁদঘড়ি বলছিল, ঘোড়াটা জঙ্গলে দেখেছে। ভুলেই গিয়েছিলুম। একবার চাঁদঘড়িকে জিগ্যেস করে যাস।’
বিকেল নেমেছে ততক্ষণে। স্বর্ণলতা উঠোনের উনুন থেকে গয়নাগুলো সাবধানে বের করে আঁচলে রাখল। তারপর বেরোল। চাঁদঘড়ির কাছে যাওয়া দরকার মনে করল না। ওর রোগা বউটার পাল্লায় পড়লে রাজ্যের দুঃখের ঘটনা না শুনে রেহাই পাওয়া যাবে না।
হান্টারসায়েব তখন ডাক্তারখানায় এসে গোরাংবাবুর সঙ্গে গল্প করছেন। ইয়াকুবের প্রসঙ্গে ছেলেধরা সাধুদের কথা এসে গেছে। হান্টার একবার একটা ছেলেধরা সাধু দেখেছিলেন—কানপুরের ওদিকে। লোকেরা মেরেছিল ওকে। ভারতবর্ষ সাধুর দেশ। সাধুদের প্রতি লোকের দারুণ ভক্তি এখানে। অথচ হুট করতেই সাধুদের সবাই সন্দেহবশে খুব মারধোর করে। হান্টারের এই অভিযোগ শুনে হাসতে লাগলেন গোরাং ডাক্তার। তখন হান্টার একটা খবর দিলেন ইয়াকুব সম্পর্কে। আফতাব দারোগা আজ ভোরবেলা নাকি তাকে বেদম ঠেঙিয়ে এসেছে। হেরুকে ধরতে পারেনি—সেই রাগ দারোগার খুব সহজে যাবে মনে হয় না।
গোরাংবাবুর কষ্ট হল শুনে। শুধু বললেন, ‘আফতাব দারোগার বাপ নির্ঘাৎ কসাই ছিল।’
ওদিকে স্বর্ণ গ্রাম ছাড়িয়ে কয়েকটা ধানের জমি পেরিয়ে জঙ্গলে গিয়ে ঢুকেছে। প্রথমে সে কাঁদুনেদিঘির ধারে যায়। বিশাল জংলা দিঘিতে ঘন দাম আর শ্বেতপদ্মর ঝাঁক। পানকৌড়ি আর গাঙচিল উড়ছে। চারপাড়ে ঘন গাছপালা। আঁচল থেকে একটার পর একটা সোনার গয়না সে যথাশক্তি ছুঁড়ে মারে। সবগুলো পদ্মপাতার ফাঁকে ডুবে যায়। শুধু একটা অনন্ত পদ্মপাতায় আটকে পড়ে। তখন সে কাদার তাল ছোঁড়ে এবং সেটাকে ডুবিয়ে দ্যায়।
তারপর সে কতকটা উদ্দেশ্যহীনভাবে জঙ্গলে উঠে আসে। গাছপালা ঝোপঝাড়ের ভিতর হেঁটে যায়। ঘোড়াটা এভাবে খুঁজে পাওয়া মুশকিল, জেনেও পুবে রেললাইন লক্ষ্য করে পা চালায়। এবার তার দম আটকে আসছিল। ভিজে স্যাঁতসেতে মাটি, থকথকে পচাপাতা, কোথাও কোথাও সতেজ ঘাস, আর বিকেলের জঙ্গলে পাখিরা প্রচণ্ড ডাকতে লেগেছে, আলো কমে যাচ্ছে দ্রুত—কোনোভাবে ফাঁকা জায়গা আবিষ্কার করতে পারে না সে। সোজা পূর্বদিকে গেলেই তো ফাঁকা একটা ছোট্ট মাঠের পরে রেললাইন পড়বে। এখনও পৌঁছনো যাচ্ছে না কেন?
গত বোশেখের ঝড়ে উপড়ে যাওয়া একটা প্রকাণ্ড অশত্থ গাছ এড়িয়ে ওলটানো শেকড়ের পাশ দিয়ে যেতেই তার বুক ধড়াস করে ওঠে। কে দাঁড়িয়ে রয়েছে সামনে। আর ছায়ার মধ্যে প্রথমে চিনতে পারেনি, তারপর চিনে আশ্বস্ত হয় স্বর্ণ। খুশিতে ফেটে পড়ে সে—হেরু!
হেরু হাসে। ‘তুমি ইখানে ক্যানে গো স্বন্নদি?’
‘আর বোলো না!’ স্বর্ণ হেরুর সাহায্য নেবার তাগিদে বলে। ‘ঘোড়াটা হারিয়ে গেছে সকাল থেকে। তাই খুঁজতে বেরিয়েছি। চলো না হেরু, তুমিও ‘খুঁজে দেবে।’
হেরু বলে, ‘ঘোড়া খুঁজতে? কিন্তুক দিঘির জলে ওইগুলো কী ফেলে দিলে স্বন্নদি?’
স্বর্ণ চমকে ওঠে। ‘তুমি দেখেছ?’
‘হাঁ, দেখেছি। ই জঙ্গলে আমি থাকি—আমার চোখ সবঠাঁই থাকে স্বন্নদি।’
‘ফেলে না দিয়ে কী করব বলো?’ স্বর্ণ তাকে বোঝায়। ‘বাবা কী কাণ্ড করল সে তো দেখেছ। তারওপর কখন পুলিশটুলিশ এসে হাঙ্গামা করে। বাবার তো শত্রুর অভাব নেই।’
‘হাঁ—হাঁ। তা ঠিক বটে। তবে’ হঠাৎ থেমে হেরু কেমন দৃষ্টিতে স্বর্ণর দিকে তাকায়।
স্বর্ণ প্রথমে অবাক, পরে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। কতদিন থেকে হেরুকে সে দেখেছে—কিন্তু এই সন্ধ্যাবেলার জঙ্গলে এই লোকটা হয়তো সে নয়। তার রক্ত অস্থির হতে থাকে। পরক্ষণে কতদিনের ছোটখাটো ঘটনা মনে পড়ে যায়। হেরুর এই চাহনিটা কি একেবারে নতুন? আর, হেরু বাউরি প্রথমে মেরেছিল আঁরোয়ার পালিতবাবুকে, কারণ সে এক দুপুরে স্বর্ণকে ধর্ষণ করতে যাচ্ছিল। আর, কাল রাতে সে বোকার মতো কী খেয়ালে হেরুর কথায় গয়নাগুলো যখন পরেছিল, তখন পায়ের কাছে সে বোকার মতো কী খেয়ালে হেরুর চাহনিও কি নতুন ছিল? কী যেন ছিল তাতে—অস্বাভাবিক কিছু, মারাত্মক—স্বর্ণ যেন অবচেতনে তার গন্ধ টের পাচ্ছিল এবং অবচেতনেই উপভোগ করছিল। অতি দ্রুত একটা রেলগাড়ির মতো নিঃশব্দ মস্তিষ্ক কাঁপিয়ে এইসব ব্যাপার এসে পড়ে স্বর্ণর মধ্যে।
হেরু কয়েকপা এগিয়ে স্বর্ণর দিকে নিষ্পলক তাকায়। তারপর আচমকা তার দুটো বাহু চেপে ধরে একেবারে শূন্যে তুলে ফেলে। স্বর্ণ চেঁচিয়ে ওঠে, ‘হেরু, হেরু! এই বাঁদর!’ তার বুকে লাথি মারতে চেষ্টা করে সে।
কিন্তু হেরু আস্তে আস্তে নামিয়ে দেয় স্বর্ণকে। হাত ছাড়ে। অমনি স্বর্ণ দিশেহারা হয়ে পালিয়ে যায়। ঝোপজঙ্গল ভেঙে বিভ্রান্তভাবে ছুটতে থাকে সে। কোনোদিকে তাকানোর সাহস হয় না। কাঁটা ফুটে ক্ষতবিক্ষত হয় সারা শরীর। শাড়ি ছিঁড়ে যায়। কতদূর যাবার পর পথ চিনতে পারে সে।
হান্টার সাহেব গোরাংবাবুর সঙ্গে তখনও গল্প করছেন স্বর্ণকে দেখে গোরাংবাবু উদ্বিগ্নমুখে বলেন, ‘পেলিনে? মরুক গে। তা এত দেরি করে?’ পরক্ষণে ওর চেহারা দেখে ঘাবড়ে যান। ‘তোর মুখে—হাতে রক্ত! স্বর্ণ, কী হয়েছে? সর্বনাশ, সর্বনাশ!’
স্বর্ণ বলে, ‘কিছু না। কাঁটায় ছড়ে গেছে।’
স্বর্ণ খিড়কি দিয়ে পুকুরের জলে নামে। একগলা অন্ধকার জলে বসে নিঃশব্দে হু হু করে কাঁদে। সে রাতে হান্টার সায়েবের আর শেকসপিয়ারের গল্প শোনানো সম্ভব হল না।
গোরাংবাবুর মনে দুঃখ, যা হবার সব হল—ঘোড়াটা হারিয়ে রইল। আজ কোনো কল আসেনি। কল এলে খুব অসুবিধেয় পড়া যাবে। স্বর্ণর তেমন কোনো ভাবান্তর তিনি লক্ষ্য করলেন না। দিনের তরকারি গরম করল, রাঁধল। মুখোমুখি বসে খেলও। তবে এবেলা একটু কমই খেল। বলল, ‘মাথা ধরে আছে। বমি—বমি লাগছে।’
‘ওষুধ খাস’খন। বলে গোরাংবাবু কেবল ঘোড়াটার কথাই ভাবতে থাকেন। তাঁর মাথার ভিতর বাদামি রঙের টাট্টুটা ঘাস খেতে—খেতে মাঠে—মাঠে দৌড়চ্ছে, তাকে ধরতে পারছেন না। শোবার পরও এই উপদ্রব সমানে চলেছে। কখনও দেখলেন ঘোড়াটা সর্বাঙ্গে ভীষণ জ্যান্ত, উজ্জ্বল সবুজ রঙ, বড়ো বড়ো টানা চোখের পাপড়ি লাল। কখনও দেখলেন ঘোড়াটা কর্ণসুবর্ণর টিলায় একটা যাত্রাদলের রাজাকে পিঠে চাপিয়ে কদম ফেলছে। অকৃতজ্ঞ জীবটা তার দিকে একবার ফিরেও তাকাল না। দুঃখে স্বপ্নের ভিতর ফুঁপিয়ে উঠলেন গোরাংবাবু।
শেষ রাতে আফতাব দারোগার হাঁকাহাঁকিতে ঘুম ভেঙে গেল তাঁর।
দরজা খুলে দ্যাখেন লন্ঠন জেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আফতাব দারোগা আর কয়েকজন মোড়লগোছের লোক। বারান্দার নিচে ও বটতলায় আরও কিছু লোক গুজগুজ করছে। আফতাব দারোগা কাকে ডেকে বলল, ‘এ গিড়ধড়িয়া! ইয়ে শালা লোককো বাঁধো।’
গোরাংবাবু বুঝতেই পারেন না—কাকে এই কসাইপুত্র শালা বলে বাঁধবার হুকুম দিচ্ছে।
আফতাব দারোগা সদলবলে ঘরে ঢুকে পড়ে। গোরাংবাবুর কাঁধে হাত রেখে কে ধাক্কা মেরে বারান্দা থেকে ফেলে দেয়। এবং কোমরে শক্ত রশির ফাঁসটা গোরাংবাবুকে আরও ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দ্যায়। আর কিছু করার না পেয়ে তিনি শুধু চ্যাঁচাতে থাকেন, ‘হান্টার সায়েব! হান্টার সায়েব!’
বাড়ির ভিতর আফতাব দারোগার আওয়াজ শোনা যায়। ‘এই মৌগি! দরবাজা খুল জলদি। এই খানকি কুত্তিন কাঁহেকা!’
শেষরাতের আগন্তুকরা এক সুপ্রাচীন ভদ্রতা করুণা ও মানবতাবোধের ওপর এইভাবে মুহুর্মুহু পেচ্ছাব করতে থাকে। কারণ, হেরু ডাকাত পাঁচিল ডিঙিয়ে এ বাড়ি ঢুকবার সময় ওৎপেতে থাকা দারোগার হাতে ইতিমধ্যে ধরা পড়েছে।