কন্ধকাটাদের মুণ্ডু না থাকলেও তাদের কোনও অসুবিধে হয় না। শোনা যায় তাদের চোখ নাক কান সবই থাকে তাদের বুকে। বাঁশবনের দুই কন্ধকাটা দাবা খেলে খেলে ক্লান্ত হয়ে একটু বেড়াতে বেরিয়েছিল। গাছে গাছে মগডাল থেকে মগডালে ঝুল খেয়ে খেয়ে তারা মনসাপোতার জঙ্গলে এসে একটা গাছ থেকে ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে জিবরাচ্ছিল। তখন কন্ধকাটা ক কন্ধকাটা খ-কে বলল, “ওই দ্যাখ, ভুড়ি যাচ্ছে।”
কন্ধকাটা খ বলে, “কার ভুড়ি?”
“গজপতি দারোগার ভুড়ি।”
“তা গজপতি দারোগা কোথায়?”
“হুঁড়ির পেছনে পেছনে আসছে।”
“ও বাবা, সন্ধের পর গজপতি দারোগা আজ বেরোল যে! এ তো ঘোর দুর্লক্ষণ? দেশে অনাবৃষ্টি, মহামারী, ভূমিকম্প কিছু-না-কিছু হবেই।”
“হুঁ। সন্ধের পর গজপতিকে কেউ ঘরের বাইরে দেখেনি বটে। নিশ্চয়ই গুরুতর কারণ আছে।”
“থাকতেই হবে।”
“আয় তবে, মজা দেখি।”
কন্ধকাটা খ হঠাৎ বলল, “ওরে দ্যাখ, দ্যাখ, গড়াইবুড়ি তার বাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে!”
কন্ধকাটা ক-ও ভারী অবাক হয়ে গিয়ে বলে, “অ্যাঁ! তাই তো! এ যে খুবই অলক্ষুণে কাণ্ড! দেশে কি শেষে মড়ক লাগবে?”
কন্ধকাটা খ হাঁক দিয়ে বলল, “বলি ও গড়াইবুড়ি, বলি যাও কোথা?”
গড়াইবুড়ি একটা শিমুল গাছের মগডালে ডান পায়ের পাতায় ভর দিয়ে উঁচু হয়ে কী দেখছিল, কন্ধকাটাদের দেখে লজ্জা পেয়ে বলল, “পেন্নাম হই বাবাঠাকুরেরা। ছোঁড়াদুটোকে খুঁজছি।”
“কোন ছেঁড়াদুটো?”
“আর বলবেন না বাবাঠাকুরেরা, দুটি পুষ্যি এসে জুটেছে। বোকার হদ্দ। ডান বাঁ চেনে না। সাঁঝের পর কোথায় বেরুল। বড় ভাবনা হচ্ছে।”
“তুমি তো বাপু নিজের বাড়িটি ছেড়ে কখনও নড়োনি আজ অবধি।”
“নড়ার কি জো আছে বাবা! ও বাড়ির ওপর যে সবার বড় কুনজর। পাহারা না দিলেই দখল করে নেবে।”
“শেষ অবধি কি মায়ার বন্ধনে পড়লে নাকি গড়াইবুড়ি! মরার পর কারও কি ও বালাই থাকে?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গড়াইবুড়ি বলে, “সে তো আমারও ছিল। ছেঁড়াদুটোর মুখ দেখে কী যে হল কে জানে! বড্ড ভাবনা হচ্ছে।”
“আহা ওসব ছেড়ে একটা মজা দেখবে এসো। ওই দ্যাখো গজপতি দারোগা রোদে বেরিয়েছে।”
কিন্তু গড়াইবুড়ি দাঁড়াল না। গাছে গাছে ডিং মেরে হাওয়া হয়ে গেল।
গন্ধকাটা ক আর খ মিলে মজা দেখতে লাগল। কিন্তু তারা মজা পেলেও গজপতি দারোগা মোটেই মজা পাচ্ছিলেন না। সন্ধের পর তিনি বাড়ির বাইরে পা দেন না। ভূতপ্রেত, চোর-ডাকাত, খুনে-গুণ্ডা, সাপখোপ ইত্যাদি নানা অস্বস্তিকর ব্যাপার এই সন্ধের পরই মাথাচাড়া দেয়। তার বহুকালের অভ্যাস হল সন্ধের পর এক বড় বাটি ভর্তি ক্ষীর, দুটি মর্তমান কলা, একধামা খই দিয়ে মেখে খেয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে বসে লুডু খেলা। রাতে থানার কাজকর্ম সেপাইরাই সামলায়। আজ তাকে বেরোতে হয়েছে হেড কনস্টেবল রামভুজ পালোয়নের পাল্লায় পড়ে। একথা ঠিক যে, দোগেছেতে সতীশ দারোগা আসার পর থেকেই গজপতির বদনাম হচ্ছে। সতীশ দারোগা নাকি খুবই করিৎকর্মা, দুর্জয় সাহসী, তার দাপটে নাকি দোগেছেতে চুরি-ডাকাতি, খুনখারাপি বন্ধ। আর গজপতির এলাকায় নাকি অপরাধপ্রবণতা দারুণ বেড়ে যাচ্ছে। শোনা যায় সতীশ দারোগা বহুরূপী। কখনও পাগল বা সাধু, কখনও বা চোর কিংবা ডাকাত সেজে চোর-ডাকাতের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাদের ধরে। এমনকী বাঘ বা গাছ সেজেও নাকি সে জঙ্গলে ঘাপটি মেরে থাকে। প্রায়ই খবর পাওয়া যায় সতীশ আজ চার চোরকে ধরেছে, কিংবা দশ ডাকাতকে। রোজই রামভুজ গজপতিকে এসে বলে, “বড়বাবু, আপনি সতীশ দারোগার চেয়ে কম কীসে? তবু সতীশ দারোগার এত নাম হয়ে যাচ্ছে।”
তবু এতকাল গজপতি গা করেননি। কিন্তু আজ রামভুজ যে খবর দিয়েছে তাতে স্থির থাকা যায় না। রামভুজ বলেছে, বড়বাবু, আপনার নাম ডোবাতে আজ সতীশ দারোগা আপনার এলাকায় ঢুকে কিছু বদমাশকে ধরে নিয়ে যাবে বলে খবর আছে। এতে তো আপনার খুবই বদনাম হবে। আপনার চোর-ডাকাত যদি সতীশ দারোগা ধরে তা হলে তো একদিন আপনার গদিতেই এসে বসে যাবে। আপনাকে হয়তো টুলে বসে থাকতে হবে।
এই কথা শুনে গজপতি হুঙ্কার দিয়ে বললেন, “এত সাহস সতীশ দারোগার? আমার চোর-ডাকাত ধরার সে কে?না না, কিছুতেই এই অন্যায় বরদাস্ত করা যায় না।”
রামভুজ বলল, “শাবাশ হুজুর! তা হলে আজ সাঁঝের পর চলুন। পাকা খবর আছে আজ সতীশ দারোগা মনসাপোতার জঙ্গলে ঢুকবে।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গজপতি রাজি হলেন। কিন্তু রাজি হয়ে যে কী ভুলই করেছেন তা এখন পদে পদে বুঝছেন। প্রথম কথা, মনসাপোতার জঙ্গল অতি বিচ্ছিরি জায়গা। খানাখন্দে ভরা, কাঁটাওলা আগাছায় ভর্তি, শেয়াল, প্যাঁচা, নানারকম জীবজন্তুর আস্তানা, সাপখোপের ভয়। তা ছাড়া তিনি হাঁটতে পারেন তেমন। এই বিচ্ছিরি জঙ্গলে হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে তিনি হাঁসফাস করছেন। ঘামে সর্বাঙ্গ ভেজা।
গজপতি বললেন, “এ কোথায় এনে ফেললে হে রামভুজ?”
“চুপ হুজুর। বাতাসেরও কান আছে। সতীশ দারোগা যে কোথা দিয়ে কোন ছদ্মবেশে ঢুকবে তার কোনও ঠিক নেই। মনসাপোতার মোড়ে আমাদের সেপাইরা মোতায়েন আছে বটে, কিন্তু তাদের চোখে ধূলো দেওয়া সতীশ দারোগার কাছে জলভাত। বললে বিশ্বাস করবেন না হুজুর, আমাদের সেপাই বিরিঞ্চি একবার ভুল করে সতীশ দারোগাকে নিজের শ্বশুর ভেবে পেন্নাম করে ফেলেছিল।”
গজপতি একটা হুঙ্কার দিলেন, “বটে! তা হলে তো বিরিঞ্চিকে বরখাস্ত করা উচিত।”
“সেইজন্যই তো হুজুর, আজ আপনাকে নিয়ে এসেছি। আর যার চোখকে ফাঁকি দিক, আপনার চোখকে ফাঁকি দেওয়া তো সোজা নয়।”
গজপতি ঘাড় থেকে একটা শুয়োলোকা ফেলে দিয়ে জায়গাটা চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “আমার শ্বশুর সেজে এসে আমাকে ঠকানো অত সোজা নয়। আমার শ্বশুরকে আমি বিলক্ষণ চিনি। তিনি ফোকলা, ট্যারা, নুলো আর টেকো। কিন্তু কোথায় সেই ব্যাটা?”
“আসবে হুজুর, এই পথেই আসবে। একটু নজর রাখুন।” হঠাৎ গজপতি বলে উঠলেন, “আচ্ছা গাছের ওপর থেকে কে একজন হেসে উঠল বলল তো!”
রামভুজ বলল, “রাম রাম। আমিও শুনেছি হুজুর। ওসব না শোনার ভান করে থাকুন। মনে হচ্ছে বাঁশবনের কন্ধকাটা দু’জন।”
গজপতি তারস্বরে রামনাম করতে করতে বললেন, “বাড়ি চলো হে রামভুজ…”
“চুপ, চুপ হুজুর! কে যেন আসছে।”
জঙ্গলের সরু পথ ধরে একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছিল। গজপতি এক হাতে পিস্তল অন্য হাতে টর্চ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলেন, “না, না সতীশবাবু, কাজটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। এটা আমার এলাকা, আমার আশ্রিত সব চোর-ডাকাতকে আপনি ধরার কে?”
টর্চ জ্বেলে যাকে দেখলেন গজপতি তাকে দেখে তিনি স্তম্ভিত। লোকটা দাড়ি-গোঁফওলা, ফোকলা, টেকো, ট্যারা এবং বাঁ হাতটা নুলল। লোকটা ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “গজপতি বাবাজীবন নাকি?”
“এ কী! এ যে শ্বশুরমশাই!” বলে গজপতি গিয়ে তাড়াতাড়ি শ্বশুরমশাইয়ের পায়ের ধুলো নিয়ে একগাল হেসে বললেন, “কখন এলেন?”
“এই সন্ধেবেলাতেই এসেছি বাবা। এসে শুনি তুমি নাকি চোর-ডাকাত ধরতে বেরিয়েছ। কী সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড! এসব কি তোমার সহ্য হয় বাবা? শুনেই তো আমি আর থাকতে না পেরে তোমাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছি। চোর-ডাকাত যাদের ধরার তারা ধরুক তো। তুমি বাড়ি চলে। তোমার জন্য পরোটা আর মাংস রান্না হচ্ছে।”
গজপতি লজ্জার সঙ্গে মৃদু হেসে মাথা নিচু করে বললেন, “ও কিছু নয়। সামান্য কয়েকটা ছিচকে চোর আর আনাড়ি ডাকাতরা একটু গণ্ডগোল করছিল। তা বলছেন যখন, চলুন। তুইও চলে আয় রে রামভুজ।”
শ্বশুরমশাই বললেন, “চলো বাবা, তুমি আগে আগে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলো।”
কয়েক পা যাওয়ার পরই পেছন থেকে রামভুজ বলল, “বড়বাবু, আপনার শ্বশুরমশাই কোথায় গেলেন?”
“তার মানে?”
“উনি তো বিলকুল গায়েব।”
পেছনে টর্চ ফোকাস করে গজপতি অবাক হয়ে বলেন, “তাই তো। শ্বশুরমশাই গেলেন কোথায়?”
রামভুজ বলে, “উনি মোটেই আপনার শ্বশুরমশাই নন। ওই লোকটাই সতীশ দারোগা।”
“বলিস কী? দ্যাখ দ্যাখ, কোনদিকে গেল!”
চারদিকে খুঁজেও লোকটাকে পাওয়া গেল না। গজপতি দুঃখ করে বললেন, “একটু সন্দেহ আমারও হচ্ছিল। লোকটা যেন ঠিক ফোকলা নয়, কালো কালো দাঁতের মতো কী যেন দেখা যাচ্ছিল মুখে। আর নুলো ভাবটাও যেন ইচ্ছে করে করা। টাকটাও যেন কেমন সন্দেহজনক।”
গাছের ওপর থেকে ফের চাপা হাসির শব্দ শুনে গজপতি কঁপা গলায় বললেন, “কে?”
রামভুজ বলল, “রামনাম করুন বাবু, রামনাম করুন।”
দু’জনে দৌড়ে খানিক তফাত হলেন। গজপতি হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন, “রামভুজ, এক রাত্তিরের মতো অনেক হয়েছে বাবা। এবার বাড়ি চল।”
“আপনার নাম যে খারাপ হয়ে যাবে বড়বাবু।”
এই সময়ে হঠাৎ সামনের দিকে খটাখট করে একটা শব্দ পাওয়া গেল। কে যেন সেইসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল, “খুন! খুন করে ফেলল। বাঁচাও..বাঁচাও…”
গজপতিবাবুর হাত-পা কাঁপতে লাগল। ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বললেন, “কী, কী হচ্ছে বল তো!”
রামভুজ বলল, “খুনখারাপি কিছু হচ্ছে বলে মনে হয়।”
গজপতিবাবু সবেগে মাথা নেড়ে বললেন, “খুন! কক্ষনো নয়। আমার এলাকায় কম্মিনকালেও খুনটুন হয় না। যা দু-একটা লাশ পাওয়া যায় সেগুলো সব সতীশ দারোগার এলাকায় খুন করে আমার বদনাম করার জন্য এই এলাকায় ফেলে যায়।”
“তবু হুজুর, আপনিই তো এলাকার দণ্ডমুণ্ডের মালিক। একটু এগিয়ে দেখে আসবেন চলুন।”
“পাগল নাকি? খুনটুন আমি একদম পছন্দ করি না। চোখের সামনে ওসব দেখলে রাতে আমার খাওয়াই হবে না। ঘুমেরও বারোটা বাজবে। ও খুনটুন নয়, কেউ আমাকে ভয় দেখাতে চাইছে। চল, তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাই।”
হঠাৎ সামনের অন্ধকার থেকে কে যেন গম্ভীর গলায় বলল, “সেটা খুবই কাপুরুষের মতো কাজ হবে গজপতিবাবু!”
গজপতি টর্চ ফোকাস করে কাউকেই দেখতে পেলেন না। বললেন, “আপনি কে?”
“সেটা অবান্তর। দোগেছে থেকে দুটো নিরীহ ছেলেকে ভুলিয়েভালিয়ে ডেকে এনে এখানে খুন করার ব্যবস্থা হয়েছে। অন্তত দশজন লাঠিয়াল তাদের ওপর চড়াও হয়েছে। আর এদের পেছনে কে আছে জানেন? দুলুবাবু। দুলাল রায়।”
“ও বাবা! সে যে সাঙ্ঘাতিক লোক।”
“হ্যাঁ, খুবই সাঙ্ঘাতিক লোক। নটবর রায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে ওঁর মাথা গরম হয়ে গেছে।”
গজপতি একটু পিছিয়ে গিয়ে বললেন, “তা খুনটা হচ্ছে কেন?”
“কারণটা খুব সোজা। নটবর রায়ের ছেলেপুলে নেই। দুলাল রায়কে পুষ্যিপুত্তুর নিয়েছিলেন, কিন্তু দুলাল বড় হয়ে কুসঙ্গে মিশে উচ্ছন্নে যায়। পনেরো বছর বয়সেই সে জেল খেটেছে। তাই নটবর রায় তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন। নটবর রায় অবশেষে তাঁর স্ত্রীর ভাইপোকে সব লিখে দেবেন বলে পায়রাডাঙা থেকে আনিয়েছিলেন।”
রুমালে কপালের ঘাম মুছে গজপতি বললেন, “তারপর?”
“খবরটা পেয়েই দুলালবাবু নটবর রায়ের মাথা গুলিয়ে দেওয়ার জন্য পনেরোজন লোককে পর পর ফটিক ঘোষ সাজিয়ে ওঁর কাছে পাঠান। আসল ফটিক ঘোষের কাছ থেকে তার পিসির দেওয়া চিঠিটা লোপাট করেন। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হবে না বুঝে ফটিককে ধরাধাম থেকে সরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। ওই যে লাঠিবাজির শব্দ শুনছেন ওটাই হল সেই আয়োজন। আপনার উচিত ওখানে গিয়ে হাজির হয়ে দুজনকে বাঁচানো।”
“ও বাবা! দুলুবাবুর সঙ্গে কি আমি পেরে উঠব? দশজন লেঠেলও রয়েছে যে!”
“কিন্তু আপনার কোমরে তো পিস্তলও রয়েছে।”
“পিস্তল! আমি জীবনে কখনও পিস্তল ছুঁড়িনি। ওর শব্দে আমার পিলে চমকে যায় যে!”
“তা হলে দুটো নিরীহ ছেলে কি আপনার চোখের সামনেই মরবে?”
“না, না, চোখের সামনে মরবে কেন? চোখের সামনে তো মরছে! আমি তো কিছু দেখতেই পাচ্ছি না। যা হচ্ছে তা চোখের আড়ালেই তো হচ্ছে।”
একটু হাসির শব্দ শোনা গেল। লোকটা বলল, “তা হলে আপনি সতীশ দারোগাকে টেক্কা দেবেন কী করে?”
“ওসব মরাটরা যে দেখতে আমি পছন্দ করি না। ওসব দেখলে আমার খাওয়ায় অরুচি হয়, ঘুম হতে চায় না। কিন্তু আপনি কে বলুন তো?”
“আমিই সতীশ দারোগা।”
“অ্যাঁ! না, না সতীশবাবু, এটা আপনার ঠিক হচ্ছে না। দেশে আইন আছে, নিয়ম আছে, ভদ্রতাবোধ আছে। আপনি আমার এলাকায় ঢুকে সেসবই যে লঙ্ঘন করছেন! এটা কি ভাল হচ্ছে সতীশবাবু?”
“একটু আগেই আপনি আমাকে আপনার শ্বশুর ভেবে প্রণাম করেছেন। যে লোক নিজের শ্বশুরের সঙ্গে অন্য লোককে গুলিয়ে ফেলে সে অতি অপদার্থ লোক।”
কথাটা গজপতি একটু ভেবে দেখলেন। তাঁর মনে হল, সতীশ দারোগা খুব একটা ভুল কথা বলেনি। তিনি একটু ঘাড় চুলকে বললেন, “তা আপনি যখন আমার এলাকায় ঢুকেই পড়েছেন তখন আপনিই বা কেন ছেলে দুটোকে মরতে দিচ্ছেন?”
সতীশ দাবোগা বলল, “মরতে দিতুম না, যদি না একটা অদ্ভুত কাণ্ড দেখতে পেতুম। আপনিও দেখতে পারেন। কোনও ভয় নেই। এগিয়ে আসুন।”
“কিন্তু মরা টরা–”
“আসুন না। এলেই দেখতে পাবেন।”
“আয় রে রামভুজ।” বলে পায়ে পায়ে গজপতি দারোগা এগিয়ে গেলেন। শিবমন্দিরের চাতালে তখন আটটা লোক পড়ে আছে। আর দু’জন মুশকো চেহারার লোক দুটো রোগাভোগা ছেলের সঙ্গে লাঠালাঠি করছে। টর্চের আলো জ্বালতেই স্পষ্ট দেখা গেল ছেলে দুটোর হাতে লাঠির বেদম মার খেতে খেতে লোক দুটো টলছে। তারপর দমাস দমাস করে দু’জন পড়ে গেল।”
অন্ধকার থেকে সতীশ দারোগা বলল, “লড়াই শেষ।”