দ্যূতে গান্ধারীর নিষেধে ধৃতরাষ্ট্রের উপেক্ষা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর শোকনিমগ্ন ধর্ম্মপরায়ণা গান্ধারী পুত্ৰস্নেহের বশবর্তিনী হইয়া ধৃতরাষ্ট্রকে কহিলেন, “মহারাজ! দুৰ্য্যোধন জন্মগ্রহণ করিলে মহামতি বিদুর কহিয়াছিলেন, এই কুলপাংশুল শিশুকে অবিলম্বে সংহার কর, মঙ্গল হইবে।” আর দুৰ্য্যোধন জাতমাত্র গর্দভের ন্যায় চীৎকার করিয়াছিল। দুৰ্য্যোধন আমাদিগের কুলান্তক। ফলতঃ এক্ষণে আপনি আত্মদোষে বিপদসাগরে নিমগ্ন হইবেন না, দুর্বিনীত বালকের কথায় কদাচ অনুমোদন করিবেন না। এই ঘোরতর কুলক্ষয়কর বিষয়ে কেন হস্তাপর্ণ করিতেছেন? সেতু নিবদ্ধ হইলে স্বেচ্ছাক্রমে কে ভেদ করিয়া থাকে? নির্ব্বাণপ্ৰায় অগ্নিও প্রজ্বলিত হইতে পারে। এক্ষণে অবিরোধী শান্তস্বভাব পাণ্ডবদিগকে কে কুপিত করিবে? হে মহারাজ! আপনার অবিদিত কিছুই নাই,
তথাচ আমি আপনাকে কিছু উপদেশ দিব। জ্ঞানশাস্ত্ৰ নিতান্ত নির্বোধের অন্তঃকরণে কদাচ শুভাশুভ ফল অঙ্কিত করিতে পারে না। বালস্বভাবে বৃদ্ধভােব অবলম্বন করা একান্ত অসঙ্গত। এক্ষণে আপনার সন্তানেরা আপনারই আজ্ঞা পালন করিবে, ভগ্নমনাঃ হইয়া যেন তাহারা আপনাকে পরিত্যাগ না করে। এক্ষণে আমার বাক্যানুসারে আপনি ঐ কুলপাংশুল দুৰ্য্যোধনকে পরিত্যাগ করুন। হে নরনাথ? আপনি পুত্ৰবৎসলতাবশতঃ তৎকালে বিদুরবাক্যে উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাঁহারই কুলান্তক ফল উপস্থিত হইয়াছে। শান্তি, ধর্ম্ম ও মন্ত্রিবর্গের পরামর্শানুসারে আপনার যেরূপ বুদ্ধি জন্মিয়াছে, তাহা অবিকৃতভাবেই থাকে; অসমীক্ষ্যকারিতা [অবিমৃষ্যকারিতা—অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া কাৰ্য্যানুষ্ঠান] আপনার নিতান্ত দোষাবহ। দেখুন, ক্রূর-হস্তে নিপতিত হইলে রাজলক্ষ্মী ক্ষণধ্বংসিনী হয়; কিন্তু সকলের রাজশ্ৰী পুরুষপরম্পরাক্রমে পুত্রপৌত্ৰগামিনী হইয়া থাকে।”
মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র ধর্ম্মার্থদর্শিনী সহধর্মিণী গান্ধারীর উপদেশবাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “প্রিয়ে! যদি বংশনাশ হয়, তাহা নিবারণ করিতে পারিব না; কিন্তু পুত্রেরা যেরূপ ইচ্ছা করিতেছে, তাহার অন্যথা না হউক; পাণ্ডবদিগের সহিত পুনরায় তাহাদিগকে দ্যূতারম্ভ করিতে হইবে।”