৭০তম অধ্যায়
বৈবাহিক-পৰ্ব্বাধ্যায়
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! অন্তর প্রতিজ্ঞামুক্ত পাণ্ডবগণ তৃতীয় দিবসে স্নানানন্তর শুক্লবসন ও নানাবিধ আভরণ পরিধানপূর্ব্বক বিরাটরাজের সভায় আগমন করিয়া রাজসিংহাসনে আসীন হইলেন। যেমন মদমত্ত মাতঙ্গগণ দ্বারদেশে সুশোভিত হয়, যেমন গৃহমধ্যে অগ্নিসকল অপূর্ব্ব শোভা ধারণ করে, সেইরূপ মহাতেজঃ পাণ্ডবগণ তথায় শোভা পাইতে লাগিলেন। ইত্যবসরে বিরাটরাজ রাজকাৰ্য্য পৰ্য্যালোচনা করিবার নিমিত্ত সভায় আগমন করিয়া পাবকসন্নিভ পাণ্ডবগণকে নয়নগোচর করিয়া রোষাভিভূত হইলেন। পরে মুহূর্ত্তকাল চিন্তা করিয়া দেবগণপরিবৃত দেবরাজ সদৃশ যুধিষ্ঠিরকে কহিলেন, “হে কঙ্ক! আমি তোমাকে দূতকারী সভ্যরূপে বরণ করিয়াছিলাম; তুমি এক্ষণে কি নিমিত্ত অলী্কৃত হইয়া রাজসিংহাসনে উপবেশন করিলে?”
পাণ্ডবগণের আত্মপ্ৰকাশ
অর্জ্জুন বিরাটের বাক্য শ্রবণ করিয়া সহাস্যবদনে পরিহাসবাসনায় কহিলেন, “হে রাজন! এই মহাতেজা দেবরাজের অৰ্দ্ধাসনে আরোহণ করিবার উপযুক্ত; ইনি অতি বদান্য, মূর্ত্তিমান ধর্ম্ম ও অলৌকিক বুদ্ধিশালী; এই ধারামণ্ডলে ইহার অপেক্ষা অস্ত্রবেত্তা আর কেহই নাই। ইনি পৌর ও জনপদগণের প্রীতিপত্র, ধনসঞ্চয়ে যক্ষরাজের সমকক্ষ, মহাতেজা মনুর ন্যায় প্ৰজাগণের অনুগ্রাহক ও প্রতিপালক; ইনি কুরুবংশবংস ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির। ইঁহার কীর্ত্তি সমুদিত সূৰ্য্যপ্রভার ন্যায় চতুর্দ্দিক উদ্ভাসিত করিয়াছে। ইনি যৎকালে কুরুমণ্ডলে অধিবাস করিতেন, তখন দশসহস্ৰ মত্ত-মাতঙ্গ, ত্রিংশৎ সহস্ৰ অশ্বসংযোজিত ও সুবর্ণমণ্ডিত রথ ইঁহার অনুযাত্র [পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমনকারী] ছিল। যেমন ঋষিগণ পুরন্দরের উপাসনা করেন, তদ্রূপ মণিকুণ্ডলমণ্ডিত অষ্টশত সূত মাগধগণের সহিত মিলিত হইয়া ইঁহার স্তুতিবাদ করিত; যেমন অমরগণ সর্ব্বদা কিঙ্করের ন্যায় কুবেরের উপাসনা করেন, সেইরূপ কুরুরাজগণ ইঁহার উপাসনা করিত; ইনি স্বাধীন ও পরাধীন সমুদয় মহীপালকেই বৈশ্যের ন্যায় করপ্ৰদ করিয়াছিলেন; অষ্টাশীতি সহস্ৰ স্নাতক ইঁহার নিকটে জীবিকালাভ করিত; ইনি বৃদ্ধ, অনাথ, পঙ্গু, অন্ধ ও প্ৰজাগণকে অপত্যনির্বিশেষে প্রতিপালন করিতেন; ইনি দান্ত ও জিতক্ৰোধ; ইঁহার শ্ৰী ও প্রতাপে দুৰ্য্যোধন, তাহার অনুচরগণ, কর্ণ ও শকুনি নিরন্তর পরিতাপিত হইতেছে। এইরূপ অসীমগুণসম্পন্ন রাজা যুধিষ্ঠির কি নিমিত্ত আপনার সিংহাসনের যোগ্য হইবেন না?”