৬. রোদটা একটু পড়তেই

রোদটা একটু পড়তেই নন্দলাল বেরিয়ে পড়লেন। কর্তাবাবুকে খবরটা একটু দেওয়া দরকার। নকুল সর্দারের মতো লোক তো বিনা কারণে রাঘব চৌধুরীর বাড়িতে ঢোকেনি। পিছনে ল্যাংড়া শীতলের মতো সাঙ্ঘাতিক লোকও আছে।

বাড়ির পুবধারে বাবলা গাছের জড়ামড়ির ভিতর দিয়ে নির্জন সরু রাস্তা। এ-রাস্তায় লোক চলাচল নেই বললেই হয়। আরও খানিকটা গেলে বাঁশবন, তারপর খানিক পতিত জমি পার হলে রাঘববাবুর বাড়ির চৌহদ্দি শুরু হয়েছে।

সরু রাস্তায় পা দিতেই সামনে একটা লোক যেন মাটি ফুঁড়ে উদয় হল। রোগা চেহারা, সরু গোঁফ, তেলচুকচুকে চুলে নিখুঁত টেরি। মুখে সেইরকমই বশংবদ হাসি আর বিনয়।

“পেন্নাম হই ঠাকুরমশাই! চিনতে পারছেন?”

খুব চিনতে পেরেছেন নন্দলাল। চিনতে পেরে হাত পা-ঠাণ্ডা মেরে আসছিল তাঁর।

“কী চাও বাপু?”

“আজ্ঞে, আমি সুধীর বিশ্বাস। চিনতে পারলেন না? তেরো মাস আগে একবার এসেছিলুম, মনে আছে?”

কথাটার সরাসরি জবাব না দিয়ে একটা শ্বাস ফেলে নন্দলাল বললেন, “আমি একটা জরুরি কাজে যাচ্ছি হে। এখন সময় নেই। পরে এসো।”

“আজ্ঞে, আমার দরকারটাও বড্ড জরুরি। দাঁড়াবার দরকার নেই, হাঁটতে থাকুন, আমি পিছু পিছু যেতে-যেতেই কথাটা নিবেদন করতে পারব।”

“তুমি সেই ল্যাংড়া শীতলের লোক তো!”

“যে আজ্ঞে। এবার চিনেছেন।”

“দ্যাখো বাপু, আবার যদি পুজোআচ্চার ব্যাপারে এসে থাকো, তা হলে আগেই বলে রাখছি, ও আমি পারব না। অন্য তোক দেখে নাও গে যাও।”

সুধীর বিশ্বাস ভারী বিনয়ের সঙ্গে বলল, “সেবার ভারী অসুবিধেয় ফেলা হয়েছিল আপনাকে, জানি। দক্ষিণা প্রণামীটাও বোধ হয় আপনার পছন্দ হয়নি।”

“সেকথা নয় হে বাপু। দক্ষিণা প্রণামী তোমরা ভালই দিয়েছিলে। গ্রামদেশে কেউ অত দেয় না। কিন্তু আর আমি পারব না।”

লোকটা পিছু ছাড়ল না। শেয়ালের মতো পিছু পিছু আসতে-আসতে বলল, “কথাটা যদি একটু শুনতেন!”

“বলে ফেলল।”

“সেবার তো আপনি নরবলি রদ করে মোষবলি দেওয়ালেন। কাজটা খারাপও করেননি। একটা মানুষকে তো প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন। সেটা আমার পছন্দই হয়েছিল। নরবলিটলি আমিও বিশেষ পছন্দ করি না।”

“ওহে বাপু সুধীরচন্দ্র, তোমাদের হাতে নরবলি একভাবে না হলেও অন্যভাবে হয়ই। কখনও হাড়িকাঠে ফেলে খাঁড়া দিয়ে কাটো, কখনও হয়তো বোমা-বন্দুক ছুরি-ছোরা দিয়ে মারো। নরবলি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। শাস্ত্রমতো নরবলির বিকল্প ব্যবস্থাই করেছিলাম। কিন্তু ওসব আমার সয় না।”

“কিন্তু ঠাকুরমশাই, মোষবলি দিয়েই কি শীতলদার রিষ্টি কাটল? দিন দিন তাঁর শরীর শুকোচ্ছে, দুর্বল হয়ে পড়ছেন, চলতে ফিরতে হাতেপায়ে কাঁপুনি হয়। মোষবলির কথা শুনে আমাদের প্রাণায়াম শর্মা তো খেপে আগুন হয়ে গিয়েছিলেন!”

“প্রাণায়াম শর্মাটি আবার কে হে?”

“মস্ত জ্যোতিষী। গ্রহ নক্ষত্র তাঁর দশ আঙুলে খেলা করে। সাক্ষাৎ কাঁচাখেকো দেবতা। গনৎকার হিসেবেও চমৎকার। বললেন, আমার দেওয়া বিধান উলটে দিয়েছে, তার ঘাড়ে ক’টা মাথা? তিনি ফের বিধান দিলেন, এবার দুটো নরবলি।”

“দুটো! নাঃ, লোকটা দেখছি ঘোর পাপিষ্ঠ। যাক, তিনি যে বিধানই দিয়ে থাকুন, তোমরা অন্য ব্যবস্থা দ্যাখো।”

“তাই কি হয় ঠাকুরমশাই?”

“খুব হয়। যে-কোনও পুরুতকে নিয়ে যাও। তা ছাড়া আমার এক জ্ঞাতিভাই মারা যাওয়ায় অশৌচ চলছে।”

“ওসব আমরা মানি না। আর অশৌচ হলে কি কেউ খেউরি হয় ঠাকুরমশাই? আপনার দাড়ি তো চকচকে করে কামানো!”

নন্দলাল বিরক্ত হয়ে বললেন, “সে যাই হোক বাপু, তুমি অন্য ব্যবস্থা দ্যাখো।”

“শীতলদাদা এই হাজার টাকা প্রণামী পাঠিয়েছেন। তা ছাড়া দক্ষিণাটাও এবার একটু মোেটারকমেরই দেবেন। রিষ্টিটা না কাটলেই নয় যে ঠাকুরমশাই! প্রাণায়াম শর্মার বিধান যে বেদবাক্য।”

নন্দলাল বললেন, “ওহে বাপু, আর কথা বাড়িও না। বিদেয় হও। নইলে কিন্তু আমি তোক ডাকব।”

ভারী ভয় পেয়ে এবং আরও সরু হয়ে সুধীর বিশ্বাস বলল, “কুপিত হবেন না ঠাকুরমশাই। শুনেছি আপনি শুদ্ধাচারী ব্রাহ্মণ। আপনার শাপটাপ লাগলে আমার কি সইবে? তবে আমি একা নই, এই এঁরাও সব আবদার নিয়ে এসেছেন। সবাইকে পায়ে ঠেলা কি ঠিক হবে ঠাকুরমশাই?”

নন্দলাল দেখলেন, সুধীর বিশ্বাসের পিছনে ঝোঁপঝাড় থেকে অন্তত দশ বারোজন দৈত্যের মতো চেহারার লোক নিঃশব্দে বেরিয়ে এসে পথ জুড়ে দাঁড়িয়েছে।

নন্দলাল বুদ্ধিমান মানুষ। বুঝলেন, এ সময়ে জেদাজেদি করে লাভ নেই। আপত্তিও টিকবে না।

তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “বাবা সুধীর, তুমি কি পরলোকে বিশ্বাস করো?”

“বলেন কী ঠাকুরমশাই! পরলোকে বিশ্বাস না করে উপায় আছে? ইহলোকটা তো ছ্যাঁচড়ামি করেই কাটল, আমি তো তাই পরলোকের ভরসাতেই আছি।”

“আর ভরসা কোরো না হে। তোমার পরলোকটা বড়ই অন্ধকার।”

দশ-বারোজন লোকে ঘেরাও হয়ে নন্দলাল নৌকোয় এসে উঠলেন। ইষ্টনাম স্মরণ করা ছাড়া তাঁর আর কিছুই করার রইল না।

.

নিজের আশ্চর্য আবিষ্কারের সাফল্যে হলধর নিজেই অভিভূত। বাঁশবনের ভিতরে অন্ধকারে বসে সে কিছুক্ষণ অশ্রুমোচন করল। আনন্দাশ্রুই। বাহবা দেওয়ার মতো কেউ কাছেপিঠে নেই বলে অগত্যা সে নিজেই নিজেকে বাহবা দিয়ে বলল, “না রে হলধর, তোর এলেম আছে বটে! তোর পেটে পেটে যে এত ছিল তা তো কেউ বুঝতেই পারেনি এতকাল! এ তুই যা করলি বাপ, ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কী বুদ্ধি রে তোর! কী ধৈর্য! কী অধ্যবসায়! মানুষের কাছে তুই একটা উদাহরণ হয়ে রইলি। শুধু কি তাই? ইস্কুলে-ইস্কুলে তোর জীবনী পড়ানো হবে একদিন। তোর নামে রাস্তা হবে। কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে তোর ওপর গবেষণা হবে। তোর জন্মদিনের দিন সারা দেশে জন্মজয়ন্তী হবে। না রে হলধর, তুই সামান্য লোক তো নোস…”।

কে যেন বলল, “তা তো নোস বাছা, কিন্তু তোর আক্কেলটা কী? বাঁশবনে বসে ফ্যাচফ্যাচ করে মেয়েমানুষের মতো কাঁদলেই তো হবে না।”

হলধর তাকিয়ে দেখল, একজন বুড়োমতো বিধবা মহিলা সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

হলধর ধরা গলায় বলল, “আজ আমার যে বড় আনন্দের দিন বুড়িমা! বেলুনে বেশি ফুঁ দিলে যেমন বেলুন ফুলে ফাটো-ফাটো হয়, আনন্দে আমার সেই অবস্থা। একটু কাঁদলে আনন্দের বাড়তি বায়ুটা বেরিয়ে যায় কিনা।”

“তা আর জানি না বাছা! তেঁতুলছড়া দিয়ে ভাত খেতুম বলে আমারও কি পেটে কম বায়ু হত? উদ্গার তুললে তবে স্বস্তি পেতাম। তা এই বাঁশবনে বসে অন্ধকারে মশার কামড় খেলেই তো হবে না। এবার যে একটু গতর নাড়তে হবে।”

হলধর আপ্লুত গলায় বলল, “আনন্দের ঠেলায় আমার হাত-পা যে বড় অবশ হয়ে পড়েছে বুড়িমা, হাঁটুতে যেন খিল ধরে আছে। এখন কি আর নড়াচড়ার অবস্থা?”

বুড়ি ফোঁস করে উঠে বলল, “তা বলে ঠুটো জগন্নাথ হয়ে উড়ুক্কু কল কোলে নিয়ে বসে থাকবি রে নিমকহারাম? বাড়িতে কী কাণ্ড হয়ে গেল সে খবর রাখিস? রাঘব চৌধুরী না তোর অন্নদাতা? তার দুটো ফুটফুটে ছেলে না তোকে এত বিশ্বাস করে? তাদের বিপদে যদি তোর ওই কল কাজেই না লাগল, তা হলে ভেঙেচুরে উনুনে গুঁজে দিগে যা।”

হলধর শশব্যস্তে বলে উঠল, “কেন, কী হয়েছে বুড়িমা?”

“বলব কী, ভাবলেই আমার হাত-পা হিম হয়ে আসছে। এতগুলো পুষ্যি তোরা, গাণ্ডেপিণ্ডে গিলছিস আর কূটকচালি করে সময় কাটিয়ে দিচ্ছিস! কোন সাহসে অতগুলো ডাকাত ভর সন্ধেবেলা বাড়িতে ঢুকে কচি ছেলেদুটোকে তুলে নিয়ে যায় রে? আস্পদ্দার কথা আরও শুনবি? একটা মর্কট এসে রাঘবকে ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চেয়ে গেছে। না দিলে কী হয় ভাবতেও ভয় করে। এখনও কি হাত-পা জড়ো করে বাঁশবনে বসে থাকতে লজ্জা হচ্ছে না তোর? লজ্জা যদি না হয় তা হলে কাল সকালে পাঁচজনকে মুখ দেখাবি কী করে? লোকে যে তোদের গায়ে থুতু দেবে?”

হলধর অবাক হয়ে বলে, “আজ্ঞে, আপনি কে বুড়িমা? ঠিক চিনতে পারছি না তো!”

“চেনার কি জো আছে বাছা? বায়ুভূত হয়ে থাকি। তবে সম্পর্ক খুব দুরেরও নয়। রাঘবের ঠাকুর্দা ছিল বিচরণ, আমি তার বিধবা পিসি। দেখিস, যেন শুনে আবার ভিরমি খাসনে। ভাল ভেবে নবকেষ্টকে বলতে গেলুম, তা সে চোখ উলটে পঁাত ছরকুটে মুচ্ছো গেল। তাই বলি বাছা, এখন কিন্তু মুচ্ছো টুচ্ছো যাসনে। বড্ড বিপদের সময় যাচ্ছে। মুচ্ছো পেলে চেপে রাখ। পরে সময়মতো মুচ্ছো যাস।”

হলধর তাড়াতাড়ি উবু হয়ে পায়ের ধুলো নিতে গেল। বলল, “আপনি কর্তামশাইয়ের ঠাকুর্দার পিসিমা! কী সৌভাগ্য! কী সৌভাগ্য!”

“পায়ের ধুলো নিলি বুঝি! তা ভাল। ভক্তিছেদ্দার পাট তো আজকাল উঠেই গেছে।”

“কিন্তু ঠাকুমা, হিসেবমতো আপনার বয়স তো দেড়শো দাঁড়াচ্ছে।”

“তা হবে।”

“এতদিন যে কারও বেঁচে থাকার কথা নয়!”

“দুর বোকা! তা হলে এতক্ষণ কী শুনলি? বেঁচে আছি কে বলল?”

“তবে কি ভূত নাকি আপনি ঠাকুমা?”

“ভূত কথাটা শুনতে বিচ্ছিরি, বরং আবছা মানুষ’ বল।” মাথা চুলকে হলধর বলল, “এ! তা হলে তো মুশকিলেই পড়া গেল! সায়েন্সে তো ভূতের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না! বড্ড গণ্ডগোলে ফেলে দিলেন ঠাকুমা।”

“বলি, গণ্ডগোলের কি শেষ আছে রে? যেখানে হাত দিবি সেখানেই গণ্ডগোল। তোর সায়েন্সও থাক, আমরাও থাকি। এখন যা বাছা, লোকজন জড়ো করে বেরিয়ে পড়। বাছাগুলোকে যেখানে নিয়ে গেছে সে হল ময়নামতীর জঙ্গল। ভারী দুর্গম জায়গা। তোর ওই উড়ুক্কু কল ছাড়া যাওয়াও যাবে না।”

হলধর চিন্তিতভাবে বলল, “সে না হয় যাচ্ছি। কিন্তু ঠাকুমা, এই উড়ুক্কু কল পলকা জিনিস। পাল্লাও বেশিদূর নয়। তা ছাড়া ছুঁচোবাজির মতো এদিক-সেদিক চলে যায়।

“ওসব নিয়ে ভাবিসনি। আমি আছি, পীতাম্বরমশাই আছেন, হরু বাবা আছে, পঞ্চা বিশ্বেস আছে। আমরা সব আবছা মানুষ বটে, কিন্তু ক্ষ্যামতা কিছু কম নেই।”

গদগদ হয়ে হলধর বলল, “আর একবার পায়ের ধুলো দিন ঠাকুমা।”

.

সন্ধের মুখে বাড়ির পিছনের পতিত জমিতে তিন-তিনটে মুশকো চেহারার লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল হাবু দাসের। তাদের দেখে হাবু দাস ভারী খুশি হল। পথ আটকে দাঁড়িয়ে খুব একচোট হেসে নিল সে।

লোকগুলো নিজেদের মধ্যে একটু মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।

হাবু হেসেটেসে বলল, “খুবই মজার কথা হে! ধরো যদি আমার নাম হয় হাবু, আর পাঁচুর নাম যদি হয় পাঁচু, আর এই বাড়িটা যদি রাঘববাবুর হয়…”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সামনের লোকটা তার হাতের খেটে ডাণ্ডাটা তুলে ঠাঁই করে হাবুর মাথায় বসিয়ে দিল।

হাবু গদাম করে পড়ে গেল মাটিতে।

কাজের লোক! হু বাবা, এরা যে খুবই কাজের লোক তাতে আর সন্দেহ রইল না গোলাপ রায়ের। বরাবরই সে এইসব কাজের লোককে এড়িয়ে চলে। আজও সে এদের দেখেই ঝোঁপের মধ্যে গা ঢাকা দিয়েছিল। গা-ঢাকা দিয়েই রইল।

কাজের লোকেরা ফাঁকা পতিত জমিটায় গিয়ে পরপর তিনটে তুবড়িতে আগুন দিল। তুবড়িও বটে! এমন তুবড়ি কখনও দেখেনি গোলাপ রায়। যেমন তেজ, তেমনি বাহার। নানা রঙের ফুলকি যেন ঠেলে দোতলাকেও ছাড়িয়ে গেল। তুবড়ি দেখে দুই ভাই দোতলার জানালায় এসে দাঁড়াতেই কাজের লোকের একজন মোলায়েম গলায় বলল, “তুবড়ি জ্বালাবে খোকারা? এসো না!”

দুই ভাই ছুটে নেমে এল। কাজের লোকেরা চোখের পলকে রুইতন আর হরতনের মুখ দুখানা রুমালে বেঁধে কাঁধে তুলে নিল। তারপর ভারী চটপটে পায়ে গায়েব হয়ে গেল।

খুব সাবধানে সন্তর্পণে বেরিয়ে এল গোলাপ রায়। চেঁচামেচি করল না। করে লাভও নেই। হাবু দাসকে একটু নেড়েচেড়ে দেখল সে। মাথার চোট খুব গুরুতর নয়। সে কয়েকটা গাদাল পাতা ছিঁড়ে হাতে একটু ডলে নিয়ে হাবুর নাকের কাছে ধরতে কিছুক্ষণ বাদে হাবু চোখ চাইল। তারপর ধড়মড় করে উঠে বসেই হুঙ্কার দিল,”কোথায় সেই শয়তানটা?”

“কার কথা কইছ? শয়তান কি একটা? চারদিকে মেলা শয়তান। গণ্ডায় গণ্ডায় শয়তান।”

“ওই যে শয়তানটা কাল রাতে আমাকে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছিল?”

“যাক বাবা, তুমি তা হলে পুরনো হাবু দাসেই ফিরেছ। পুনর্মুষিক ভব। তা কদম কোঙারকে আধঘণ্টা আগে দেখেছিলাম বটে!”

“কোথায় সে?” বলে উঠতে যাচ্ছিল হাবু।

গোলাপ মাথা নেড়ে বলল, “ব্যস্ত হোয়ো না। সে একজন কাজের লোক। কাজেই এ বাড়িতে এসেছিল, কাজ সেরে ফিরে গেছে। তার নাগাল পাওয়া মুশকিল।”

হাবু গম্ভীর হয়ে বলল, “কিন্তু আমার যে তার নাগাল পেতেই হবে!”

.

সামনের উঠোনে সন্ধে সাতটা নাগাদ মেলা লোক জড়ো হয়েছে। হাবু দাস, গোলাপ রায়, গুণেন সাঁতরা, ভূতনাথ, পাঁচু, নবকৃষ্ণ, খাজাঞ্চি মশাই, হলধর, কে নয়? কারও মুখেই কথা নেই।

হলধর, হাবু আর গোলাপ রায় মিলে শক্ত পাটের দড়ি দিয়ে দুটো লম্বা বাঁশ হলধরের উড়ুক্কু ঝাঁটার সঙ্গে আঁট করে বাঁধছিল।

নবকৃষ্ণ সন্দিহান হয়ে বারবার বলছে, “ও হলধরদাদা, এ জিনিস সত্যিই উড়বে তো! দেখলে বিশ্বাস হয় না।”

হলধর বলল, “ওহে নবকৃষ্ণ, এতে শুধু বিজ্ঞানই নেই, তেনারাও আছেন।”

বিশ্বাস রাঘববাবুরও হচ্ছিল না। তবু সামান্য একটু আশার আলো দেখার চেষ্টা করছিলেন মাত্র। শুধু একবার জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকেও যেতে হবে কী?”

হলধর মাথা নেড়ে বলল, “না কর্তামশাই, লোক বাড়িয়ে লাভ নেই। যদি উদ্ধার করা কপালে থাকে তা হলে আমরা তিনজনেই পরব।”

গুণেন বলল, “আমাকেও নিতে পারতে হে! দীপক গেয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে আসতাম।”