৬. ম্যাজিশিয়ান, বারো ধাপ, ভূত ঘর

ম্যাজিশিয়ান, বারো ধাপ, ভূত ঘর নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাজা মহেন্দ্রর মাথাটায় আজ বায়ু চড়ে গেল। যখন তখন ঘুমিয়ে পড়া তাঁর অভ্যাস, অথচ আজ কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছে না, খাট ছেড়ে নেমে কিছুক্ষণ পায়চারি করলেন। ওই তিনটে শব্দকে মাথা থেকে তাড়ালে ঘুম আসবেও না। ঘাড়ে, মাথায় জলটল থাবড়ে তিনি ফের শুলেন। জড়লটা যথাস্থানে আছে এ-খবরটা পাওয়ার পর থেকে মনটা আরও চঞ্চল হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পরিণতি কী, সেটা ভেবে পাচ্ছেন না। এই তিনটে শব্দ কি কোনও সংকেত! কে জানে বাবা। শ্রীদাম লোকটা কীরকম তাও ভেবে কুল পাচ্ছেন না। লোকটাকে বিশ্বাস করা কি ঠিক হবে?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি চোখ বুজে বীজমন্ত্র জপ করতে লাগলেন। তাই করতে করতে একটু তন্ত্ৰামতো এল।

রাজা মহেন্দ্র স্বপ্ন দেখলেন, দরবার ঘরে রাজপরিবারের সবাই জড়ো হয়ে একটা ম্যাজিক শো দেখছে, একজন অল্পবয়সি ছোঁকরা ম্যাজিক দেখাচ্ছে। তাসের খেলা, মানুষ অদৃশ্য করার খেলা, রোপ ট্রিক। খেলাগুলো মন্দ নয়। কিন্তু শেষ খেলাটাই মারাত্মক। হঠাৎ ম্যাজিশিয়ান শূন্যে উঠে সারা দরবার ঘরে পাখির মতো উড়ে বেড়াতে লাগল। কখনও ছোঁ মেরে নেমে আসে, ফের সাঁ করে উঠে যায় আর সারা ঘরে পাক খায়…

স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে ধড়মড় করে উঠে বসেন, মহেন্দ্র। তাই তো! ঘটনাটা একেবারে ভুলেই গিয়েছিলেন। বহু বছর আগে তাঁদের বাড়িতে সত্যিই একজন ম্যাজিক দেখাতে এসেছিল। তার নামটা মনে আছে মহেন্দ্রর। ভজহরি।

ভজহরির শেষ খেলাটা দেখে সবাই ভারী তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল। মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম ভেঙে একটা মানুষ যে ওরকম উড়ে বেড়াতে পারে তা চোখে দেখেও যেন কারও বিশ্বাস হচ্ছিল না। সবাই জানে ম্যাজিশিয়ানরা যা দেখায় সবই কৌশলমাত্র। কিন্তু দরবার ঘরের ফাঁকা অভ্যন্তরে কোন কৌশলে ভজহরি উড়ে বেড়াল তা কারও মাথায় এল না। তবে সবাই গিয়ে ভজহরির পিঠটিট চাপড়ে দিল।

কিন্তু ভজহরি কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বিবর্ণ মুখে বসে ছিল। লোকে বাহবা দিচ্ছিল বটে, কিন্তু ভজহরি তেমন গা করছিল না। মুখে হাসি তো নেই-ই, বরং কাঁদো কাঁদো ভাব।

লোকজন সরে যাওয়ার পর মহেন্দ্র গিয়ে ভজহরিকে ধরলেন, “মশাই, আপনার শেষ খেলাটা কী করে দেখালেন বলুন তো! সাঙ্ঘাতিক খেলা মশাই।”

ভজহরি চমকে উঠে চারদিকে চেয়ে মাথা নেড়ে বলল, “আমি তো দেখাইনি!”

“সে কী!”

“হ্যাঁ মশাই, ও খেলা আমি জীবনে কখনও দেখিওনি, দেখাইওনি।

“তা হলে কী করে হল?”

“সেইটেই তো ভাবছি।”

“যাঃ, আপনি বোধ হয় ঠাট্টা করছেন।” সবেগে মাথা নেড়ে ভজহরি বলল, “না, ঠাট্টা করার মতো মনের অবস্থা নয়। আচ্ছা মশাই, এই বাঁ দিকটায় যেসব মহারাজ বসে ছিলেন তাঁরা কারা বলুন তো!”

মহেন্দ্র অবাক হয়ে বললেন, “বাঁ দিকটায় তো কেউ ছিল না! ওদিকটা তো ফাঁকাই ছিল।”

ভজহরি গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে বলল, “তা হয় কেমন করে? ওই বাঁ দিকটায় সারি দিয়ে বারোজন মহারাজা বসে ছিলেন। নিজের চোখে দেখা।”

মহেন্দ্ৰ হেসে ফেলে বললেন, “একটা নয়, দুটো নয়, একেবারে বারোজন। কিন্তু আমরা তো একজনকেও দেখতে পাইনি।”

ভজহরি বিবর্ণ মুখে বলল, “সে কী মশাই! স্বচক্ষে দেখেছি যে! কী ঝলমলে জরির পোশাক, কী পাকানো গোঁফ, কারও কারও গালপাট্টাও ছিল। বাবরি চুল, লম্বাচওড়া টকটকে ফরসা চেহারা। কোমরে তলোয়ারও ছিল কয়েকজনের। গম্ভীর মুখে বসে খেলা দেখছিলেন। খেলার শেষে তাঁরা আমাকে বকশিশও দিয়ে গেছেন।”

“বকশিশ! কী বকশিশ দিয়েছে দেখি।”

ভজহরি তার কোটের পকেট থেকে একমুঠো মোহর বের করে দেখাল, “এই যে দেখুন, মোট বারোটা আছে। তার মানে ওঁরা বারোজনই ছিলেন। শো শেষ হওয়ার পর ওঁরা উঠে এসে আমাকে বকশিশ দিয়ে ওই বাঁ ধারের সিঁড়িটা দিয়ে ওপরে উঠে গেলেন।

মহেন্দ্র অবাক হয়ে বললেন, “সিঁড়ি! দরবার ঘরে তো কোনও সিঁড়িই নেই!”

ভজহরি বাঁ দিকটায় একদৃষ্টে চেয়ে থেকে বলল, “এখন নেই, কিন্তু একটু আগেও তো ছিল! ওঁরা সিঁড়ি দিয়ে উঠে একটা দরজা

খুলে ভেতরে চলে গেলেন।”

“দরবার ঘরে যে ওরকম দরজাও নেই। নিরেট দেওয়াল দেখছেন না।”

“কিন্তু একটু আগেও যে ছিল! কী হল বলুন তো দরজাটার। খুব কারুকাজ করা একটা কাঠের দরজা।”

লোকটা কী আবোল তাবোল বকছে তার মাথামুন্ডু কিছুই মহেন্দ্র বুঝতে পারলেন না। তবে এটা মনে আছে, সবাই চলে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ ফাঁকা দরবার ঘরে ভজহরি বজ্রাহতের মতো বসে ছিল। পরদিন সকালে আর তাকে দেখা যায়নি।

ঘটনাটা হঠাৎ মনে পড়ায় রাজা মহেন্দ্র মাঝরাতে উঠে বিছানায় ভূতগ্রস্তের মতো বসে রইলেন কিছুক্ষণ।

এই ঘটনার সঙ্গে কি ম্যাজিশিয়ান, বারো ধাপ আর ভূত ঘরের কোনও সম্পর্ক আছে? কিন্তু সম্পর্কটা কী হতে পারে তা মহেন্দ্র ভেবে পেলেন না। নাঃ, শ্রীদাম লোকটা যে কী বিদঘুঁটে কতগুলো কথা ঢুকিয়ে দিয়ে গেল মাথায়! কোনও মানেই হয় না। স্বপ্নটাই বা কেন দেখলেন কে জানে!

হঠাৎ চিড়িক করে একটা শব্দ হওয়ায় মহেন্দ্র চমকে উঠে চারদিকে চাইলেন। কোথায় শব্দটা হল তা বুঝতে না পেরে কান খাড়া করে রইলেন। ফের চমকে দিয়ে আবার চিড়িক শব্দ! মহেন্দ্র ভারী অবাক হচ্ছেন। এরকম শব্দ তো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু হচ্ছে। কোথায় হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। তিনবারের পর ফের চিড়িক শব্দ হওয়ায় মহেন্দ্র ‘বাপ রে’ বলে দু হাতে নিজের মাথাটা ধরলেন। শব্দটা হচ্ছে তাঁর মাথায়। সর্বনাশ! সন্ন্যাস রোগটোগ হল নাকি?

তিন চিড়িকের পর কিছুক্ষণ মাথা অন্ধকার হয়ে রইল। তারপর হঠাৎ ফস করে অন্ধকার মাথার মধ্যে একটা আলো জ্বলে উঠল। ঠিক যেন শেজবাতি। আর সেই আলোতে মহেন্দ্র দিব্যি পদ্মলোচনকে দেখতে পেলেন।

পদ্মলোচন ছিল রাজবাড়ির বহু পুরনো কাজের লোক। একশোর কাছাকাছি বয়স। সারা বাড়ি ভূতের মতো ঘুরে বেড়াত। সাদা চুল, সাদা দাড়ি-গোঁফ। সবসময়ে বিড়বিড় করে আপনমনে কথা কইত। লোকে বলত, খ্যাপা লোচন।

রাজা মহেন্দ্র দেখতে পেলেন, তিনি সেই কুড়ি-বাইশ বছর বয়সেই যেন ফিরে গেছেন। ঘরে শেজবাতি জ্বলছে। তিনি বিছানায় শোওয়া, আর পদ্মলোচন বাইরে থেকে তাঁর মশারি গুঁজে দিতে দিতে আপনমনে বকবক করে যাচ্ছে। প্রথমটায় কথাগুলো খেয়াল করছিলেন না মহেন্দ্র। হঠাৎ ম্যাজিকওয়ালা’ কথাটা কানে আসায় জিজ্ঞেস করলেন, “কী বলছ লোচনদা?”

“ওই ম্যাজিকওয়ালার কথাই বলছি বাপু, অমন ভিরমি খাওয়ার কী হল তা বুঝি না। দরবার ঘরে তো তেনাদের নিত্যি আনাগোনা।”

মহেন্দ্র অবাক হয়ে বললেন, “কাদের আনাগোনা?”

“ওই যে তেনারা, যাঁরা আসেন।”

“তাঁরা কারা লোচনদা?”

“তোমাদেরই পূর্বপুরুষরা ছাড়া আর কে হবেন?”

“অ্যাঁ! তুমি তাঁদের দেখতে পাও নাকি?”

“নিত্যি দেখছি। দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে নামেন, পায়চারি করেন, চারদিকে ঘুরে সব দেখেন, সিঁড়ি বেয়ে উঠে যান।”

“দুর! কী যে বল! দরবার ঘরে সিঁড়ি কোথায়?”

“না থাকলে আছে কী করে?”

“তোমার যত গাঁজাখুরি গল্প।”

“গল্প কী গো! তেনাদের সঙ্গে যে আমার কথা হয়।”

মহেন্দ্ৰ হেসে ফেললেন, “কথাও হয়? তা কী বলেন তাঁরা?”

“কী আর বলবেন! আগের দিনকাল আর নেই বলে দুঃখটুঃখ করেন। তাঁরা লোকও বড্ড ভাল। গরিব দুঃখীদের জন্য প্রাণ কাঁদে। বুড়ো রাজা তো প্রায়ই জোর করেই আমার হাতে মোহর খুঁজে দেন। বলেন, ‘ওরে লোচন, কয়েকখানা মোহর নিয়ে কাছে রাখ। দুর্দিনে কাজে লাগবে।‘ তা আমি হাতজোড় করে বলি, না বাবা না, বয়স পাঁচ কুড়ি পেরোতে চলল, এখন মোহর দিয়ে কাজ কী? ‘তবু জোর করেই দেন।’”

মহেন্দ্র অবাক হয়ে বলেন, “তুমিও মোহর পেয়েছ?”

“জোর করে দিলে কী করব বলো!”

“তা মোহরগুলো তুমি কর কী?”

“কী আর করব। বাক্সে রেখে দিই।”

“বাক্স! তোমার আবার বাক্সপ্যাঁটরা ছিল কবে? কখনও তো দেখিনি!”

“আহা, আমার বাক্স আসবে কোত্থেকে? বুড়ো রাজাই বাক্স দিয়েছেন। ভারী সুন্দর বাহারি বাক্স। সেখানা রোজ রাতে মাথায় দিয়ে শুই।”

খ্যাপা লোচনের কথা কেউ বিশ্বাস করে না। মহেন্দ্রও করলেন না। পাগলের প্রলাপ মনে করে উড়িয়ে দিলেন।

হঠাৎ এতদিন পরে যেন ঘটনাগুলোর ভেতরে একটা অর্থ ভেসে উঠতে চাইছে, ঠিক যেমন ঘোলের মাথায় মাখন।

মহেন্দ্র একটু উত্তেজিত হয়ে টর্চবাতিটা নিয়ে খাট থেকে নামতে নামতে আপনমনেই বলে উঠলেন, “নাঃ, দরবার ঘরখানা ভাল করে দেখতে হচ্ছে।”

কে যেন খুব মোলায়েম গলায় বলে উঠল, “আজ্ঞে, কাজটা ঠিক হবে না।”

চমকে উঠে মহেন্দ্র বললেন, “কে?”

“আজ্ঞে, আমি শ্রীদাম খড়খড়ি।”

নিশ্চিন্তির শ্বাস ফেলে মহেন্দ্র বললেন, “তাই বলো! তা এত রাতে কী মনে করে হে বাপু?”

“আজ্ঞে, আমার তো রাতবিরেতেই কাজ।”

“তাও তো বটে! খেয়াল ছিল না। তা কী বলছিলে যেন?”

“আজ্ঞে, বলছি এখন দরবার ঘরে যাওয়াটা আপনার ঠিক হবে না।”

“কেন বলো তো বাপু?”

“আজ্ঞে, ওনারা সব রয়েছেন কিনা!”

আঁতকে উঠে রাজা মহেন্দ্র বললেন, “কারা?”

“আজ্ঞে, রাজকুমার নবেন্দ্রর চেলাচামুণ্ডারা।”

“অ্যাাঁ, তা তারা এত রাতে কী করছে সেখানে?”

“রোজ যা করেন।”

“রোজ কী করে তারা?”

“কী যেন খোঁজেন।”

“কী খোঁজেন বলল তো!”

“গুপ্তধনটনই হবে বোধ হয়। কে আর জিজ্ঞেস করতে গেছে। বলুন। কার ঘাড়ে ক’টা মাথা!”

“তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু এ তো বড় চিন্তার কথা হল। তোমার কি মনে হয় এ বাড়িতে গুপ্তধন আছে?”

“আজ্ঞে, না মহারাজ। এ-বাড়ি আমার রগে রগে চেনা।”

“যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। হঠাৎ করে গুপ্তধনটন বেরিয়ে পড়লে একটা গণ্ডগোল পাকিয়ে উঠবে হয়তো। বুড়ো বয়সে গুপ্তধনের ধকল কি আর আমার সইবে।”

“যে আজ্ঞে মহারাজ। মাঝে মাঝে আমারও মনে হয় গুপ্তধন জিনিসটা বোধ হয় খুবই খারাপ। টাকাপয়সা, সোনাদানা যদি গা ঢাকা দিতে থাকে তা হলে বড়ই অসুবিধে। খোলামেলা আলো হাওয়ায় থাকলে আমাদের মেহনত অনেক বেঁচে যেত। দেখছেন না রাজপুত্তুরের স্যাঙাতদের কেমন গলদঘর্ম হতে হচ্ছে!”

রাজা মহেন্দ্র একটু ভয়-খাওয়া গলায় বললেন, “তা ওরকম তেড়েফুঁড়ে খুঁজলে কিছু আবার বেরিয়ে পড়বে না তো হে শ্রীদাম? অত খোঁজাখুঁজি কি উচিত হচ্ছে?”

“আমিও তাই ভাবছি মহারাজ। যেরকম আদাজল খেয়ে লেগেছেন তাতে গুপ্তধনের কপালে কষ্ট আছে।”

“তাই তো হে। আমি ভাবছি কেঁচো খুঁড়তে আবার না সাপ বেরিয়ে পড়ে! তা ইয়ে, বাপু শ্রীদাম।”

“আজ্ঞা করুন মহারাজ।”

“একটা কথা ভাবছি।”

“কী কথা মহারাজ?”

“ইয়ে, তুমি কি ভূতটুতে বিশ্বাস কর?”

“বিশ্বাস না করলে ভূতেরা যে ভারী দুঃখ পান মহারাজ। দুঃখ পেলে তাঁদের ভারী অভিমান হয়, আর অভিমান হলে তাঁরা আর মুখ দেখান না। সেইজন্যই যারা ভূতে বিশ্বাস করে না তারা কখনও ভূত দেখতে পায় না।”

“তার মানে কী হল বাপু শ্রীদাম? তুমি কি বলতে চাও যে তুমি ভূত দেখেছ?”

“আপনার আশীর্বাদে তাঁদের সঙ্গে আমার বেশ দহরম মহরম।”

“বল কী হে?”

“আজ্ঞে, সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় না রাখলে কি আমাদের কাজ কারবার চলে রাজামশাই? এই তো পরশুদিনই ফটিক হাজরার বাড়ির পশ্চিমের ঘরের দরজার কবজাটি খসিয়ে ঢুকতে গেছি, অমনি ফটিক হাজরার বুড়ি ঠাকুমার ভূত একেবারে করালবদনী কালীর চেহারায় এসে পথ আটকে দাঁড়াল। সে কী তড়পানি মহারাজ! তা সঙ্গে সঙ্গে সাষ্টাঙ্গে পেন্নাম করে পায়ের ধুলো নিয়ে বললুম, “ঠাকমা, ই কী চেহারা হয়েছে আপনার! শুকিয়ে যে আমসি হয়ে গেছেন! এঃ হেঃ, যমরাজার ডেরায় তো আপনার মোটেই যত্ন আত্তি হচ্ছে না। তাতে বুড়ি ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আর বলিস না বাছা, সেখানে বড়ই অব্যবস্থা। এই বলে সাতকাহন দুঃখের কথা ফেঁদে বসল। তারপর নিজেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে ফটিকের ঘরে কোথায় কী লুকোনো আছে দেখিয়ে দিল। তাই বলছিলুম মহারাজ, সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় না রাখলে কি আমাদের চলে?”

“তা ইয়ে, বাপু শ্রীদাম, রাজবাড়িতেও তো তোমার খুব যাতায়াত, না কী বল!”

“যে আজ্ঞে।”

“তা এ-বাড়িতে কখনও কিছু দেখেছটেখেছ?”

“কী যে বলেন মহারাজ! এই তো ঢুকবার মুখেই লোচন দাদুর সঙ্গে দেখা। ভারী বেজার মুখে বিড়বিড় করে কাকে যেন শাপশাপান্ত করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন। তা বললুম, ও লোচনখুড়ো, বলি বাক্সখানার হদিস পেলে? তা আমার দিকে কটমট করে চেয়ে বললেন, “ও বাক্স হজম করে এমন লোক এখনও জন্মায়নি, বুঝলি! ও বাক্স ফেরত আসবেই।”

রাজা মহেন্দ্র সটান হয়ে বসে বললেন, “বাক্স! কীসের বাক্স!”

“আজ্ঞে, লোচনখুড়ো পাগলছাগল মানুষ।কী বলেন তার ঠিক নেই। তবে অনেকদিন ধরেই একটা বাক্স খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তা মহারাজ, বাক্সের কথায় কি আপনি একটু চমকে উঠলেন?”

মহেন্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “বাপু শ্রীদাম।”

“আজ্ঞা করুন মহারাজ।”

“তোমার সঙ্গে আমার একটু গুরুতর কথা আছে।”

“যে আজ্ঞে।”

“কথাটা না বললেই নয়। তাই বলছি।”