৬. ভূতের মতো এমন গোলমেলে জিনিস

ভূতের মতো এমন গোলমেলে জিনিস আর দুটো হয় না। এই আছে, তো এই নেই। সাপটে ধরার জো নেই, ভাল করে নিরিখ-পরখ করার উপায় নেই, তেমন কাজেও লাগে না। তবে ভূতের সুবিধের দিক হল, থাক বা না থাক, তাদের অনেকেই ভয় খায়। এই ভয় খাওয়াদের মধ্যে কিছু কিছু নাস্তিকও আছে, যারা ভূতকে মোটেই বিশ্বাস করে না। কিন্তু কিছু তে-এঁটে নাস্তিক আছে, যারা ভূতকে বিশ্বাসও করে না, ভয়ও খায় না। মুকুন্দ রায় এরকমই একজন নাস্তিক। সে যখন মারা গেল তখন শরীর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এসে প্রথমে আড়মোড়া ভাঙল, তারপর হাই তুলল, আর তার পরই দেখতে পেল, তার সামনে নিশাপতি দাঁড়িয়ে ফ্যাকফ্যাক করে হাসছে। মুকুন্দ রায় বিরক্ত হয়ে বলল, “আ মোলো, অমন বোকার মতো হাসছ কেন? হলটা কী?”

“এবার ভায়া? চিরকাল তো ভূত নেই, ভগবান নেই বলে বুক বাজিয়ে তর্ক করে গেলে! এবার বিশ্বাস হল তো!”

“কী বিশ্বাস হবে?”

“কেন, ভূত!”

“কেন, ভূতে বিশ্বাস করতে যাব কেন? আমার কি ভীমরতি হয়েছে?”

নিশাপতি চোখ কপালে তুলে বলল, “বলো কী হে! এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না? এই যে আমি ভূত, এই যে তুমি ভূত, টের পাচ্ছ না। নাকি?”

মুকুন্দ রায় গরম হয়ে বলল, “যুক্তি আর বিজ্ঞান ছাড়া আমি কিছু বিশ্বাস করি না জানোই তো!”

“আমরা যে ভূত, এটা তো মানবে! নইলে মরার পরও আমরা আছি কী করে?”

“সেটা ভাবতে হবে। এটা হয়তো ভুল দেখা এবং ভুল বোঝার ব্যাপার। ভূতটুত কিছু নেই হে। ওসব কুসংস্কার!”

নিশাপতি গিয়ে জনাদশেক ভূতকে ডেকে আনল। তাদের মধ্যে লতা, যোগেন পালোয়ান, বাচস্পতিমশাই, নন্দদুলাল হাতি, বিস্তর চেনামুখ। সবাই নানাভাবে মুকুন্দকে বোঝানোর চেষ্টা করল যে, মুকুন্দ হেরে গিয়েছে এবং এবার তার ভূতে বিশ্বাস করা উচিত। মুকুন্দ সমান তেজে সকলের সঙ্গে লড়ে গেল এবং বিস্তর বিখ্যাত মানুষের কোটেশন ঝেড়ে প্রায় প্রমাণ করেই ছাড়ল যে, ভূত বলে কিছু থাকতেই পারে না, ওটা অন্ধ বিশ্বাস ছাড়া কিছু নয়।

সেই থেকে মুকুন্দ একটু একা হয়ে আছে। কারও সঙ্গে বিশেষ মেশেটেসে না। বসে বসে কেবল ভাবে, কখনও একটুআধটু পায়চারি করে।

কাল রাতে বগলাপতির মনটা ভারী প্রসন্ন ছিল। হবে না-ই বা কেন। পকেটে নগদ কড়কড়ে হাজার টাকা। তিনি বাড়িমুখো হাঁটতে হাঁটতে লালমোহনবাবুকে জীবনের অনিত্যতার কথা বোঝাচ্ছিলেন। বলছিলেন, “বুঝলে লালুভায়া, গীতায় আছে, বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়, মানে তো নিশ্চয়ই জানো, মরার পর বাসি ছেঁড়া কাপড় ফেলে দিতে হয়।”

লালমোহনবাবু ব্যস্তসমস্ত হয়ে বললেন, “সেটা কি ঠিক হবে বগলাদা? ছেঁড়া কাপড় দিয়ে তো আমার গিন্নি দিব্যি কাঁথা সেলাই করেন, পিদিমের সলতে পাকান, ঘর মোছার ন্যাতা করেন। তারপর ধরুন, পাঁচখানা পুরনো কাপড়ের বদলে ফিরিওলার কাছে একখানা বড় স্টিলের বাটি পাওয়া যায়।”

“বলো কী? আমার গিন্নি তো ভারী বোকা দেখছি! তিনি তো সেদিন সাতখানা পুরনো কাপড় দিয়ে স্টিলের বাটি নিয়েছেন।”

“তাই তো বলছি, বইয়ে-কেতাবে ভাল-ভাল কথা লেখা থাকে বটে, কিন্তু ওসব ধরতে নেই। তারপর ধরুন, মরার পরও কি জামাকাপড় লাগে না? নইলে লজ্জা নিবারণ হবে কী করে বলুন!”

“না হে, মরার পর আর জামাকাপড়ের বালাই নেই। বায়ুভূত অবস্থা তো, জামাকাপড় পরার উপায়ও থাকে না কিনা!”

লালমোহনবাবু মাথা নেড়ে বললেন, “কথাটা ঠিক হল না দাদা। এই তো গত মঙ্গলবার ভরসন্ধেবেলা নদীর ধারে বাচস্পতিমশাইয়ের সঙ্গে দেখা। হালে গত হয়েছেন। ক’দিন আগেই আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করে গিয়েছেন। তাড়াতাড়ি পায়ের ধুলো নিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম। দিব্যি হেঁটো ধুতি আর ফতুয়া পরে আছেন। নিজের চোখে দেখা।”

“ঠিক দেখেছ?”

“আজ্ঞে, একেবারে স্পষ্ট দেখা।”

“ইয়ে, তা তোমার ভূতের ভয়টয় নেই বুঝি?”

“তা থাকবে না কেন? খুব আছে। ওই যে দেখুন না, ষষ্ঠীতলায় বটগাছের নীচে মুকুন্দ রায় বসে আছেন। ওঁকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন যে, আমি ভূতকে বড্ড ভয় পাই।”

বগলাপতি থমকে দাঁড়িয়ে ঠাহর করে দেখলেন, বটগাছের তলায় একটা লোক বসে আছে বটে। আমতা-আমতা করে বললেন, “তা ওটা মুকুল রায়ের ভূত তোমাকে কে বলল? কেউ হয়তো ফাঁকায় এসে বসেছে হাওয়া খেতে।”

“মুকুন্দ রায়কে আমি বিলক্ষণ চিনি যে! ওইটেই ওঁর ঠেক।”

বগলাপতি দোনোমোনো করে বললেন, “দুর! ভূত নিয়ে কারবার করে বুড়ো হতে চললুম, আমি কি ভূত চিনি না!”

মুকুন্দ রায় হঠাৎ উঠে ফটফটে চাঁদের আলোয় এগিয়ে এসে ভারী বিরক্তির গলায় বলল, “কে রে, তখন থেকে ভূত-ভূত করছিস! আরে! ওটা সেই চিটিংবাজ বগলা না!”

বগলাপতি একটা আঁক শব্দ করে চোখ উলটে কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে পড়ে গোঁ গোঁ করতে লাগলেন।

মুকুন্দ রায় অসন্তোষের গলায় বলল, “ভূতে বিশ্বাস করিস নাকি তোরা? ছিঃ ছিঃ! এই বিজ্ঞানের যুগে ওই সব কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে পড়ে আছিস! ভূতটুত কিছু নেই! বুঝেছিস! তোদের জন্যই দেশটা অধঃপাতে যাচ্ছে।”

লালমোহনবাবু এতক্ষণ কিছু বলেননি, কিন্তু এ কথায় ভারী চটে উঠে বললেন, “এ আপনার কীরকম ব্যবহার মুকুন্দদা? এ তো ভারী অন্যায়! আপনি ভূত মানেন না, বেশ ভাল কথা। কিন্তু আমরা যারা ভূতটুত মানি, তাদের উপর চড়াও হওয়া কি আপনার উচিত?”

মুকুন্দ রায়ও সমান তেজে গলা চড়িয়ে বলল, “আলবাত উচিত। লোকের ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়াটা আমার পবিত্র কর্তব্য। যারা বলে যে ভূত দেখেছে, তারা হয় ভুল দেখেছে, নইলে মিথ্যে কথা বলে। খুব যে বড় বড় কথা কইছিস, দেখাতে পারবি আমাকে ভূত? দেখাতে পারলে বুঝব তোর মুরোদ।”

অত্যন্ত অভিমানের সঙ্গে লালমোহনবাবু বললেন, “চোখ থাকতেও যে দেখতে পায় না তাকে ভূত দেখিয়ে আমার কাজ নেই। আপনি দেহ রেখেছেন, তাও বছর ঘুরতে চলল। এত দিনেও যদি ভূত না দেখে থাকেন তা হলে আর আমার বলার কিছু নেই।”

মুকুন্দ রায় চোখ পাকিয়ে বলল, “মুখ সামলে! ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!”

লালমোহনবাবু মিইয়ে গিয়ে বললেন, “না, এই বলছিলাম কী, আপনার স্ত্রী, অর্থাৎ আমাদের বউদি যে বছরটাক ধরে বৈধব্য পালন করছেন সেটা খেয়াল রাখবেন তো! ছেলেরা ঘটা করে আপনার শ্রাদ্ধ-শান্তি করেছে, আমরা কবজি ডুবিয়ে খেয়ে এসেছি, সেটাও তো মিথ্যে নয়!”

মুকুন্দ রায় গম্ভীর গলায় বলল, “আমি বৈধব্যের ঘোর বিরোধী। তবু যদি কেউ সাধ করে বিধবা হয়, আমি কী করতে পারি? আর শ্রাদ্ধ-শান্তি তো কুসংস্কার, অনর্থক পয়সার অপচয়, পুরোহিততন্ত্রের হাত শক্ত করা। ওসব আগডুম বাগড়ম বকে কোনও লাভ নেই। ওই চিটিংবাজটা তোর মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে।”

লালমোহনবাবু আর উচ্চবাচ্য করতে সাহস পেলেন না। ধুতির খুঁট দিয়ে বগলাপতির মাথায় হাওয়া দিতে দিতে শুধু বললেন, “যে আজ্ঞে। তবে কিনা, সব জিনিসেরই তো একটা নিয়ম আছে দাদা। মরার পরেও জ্যান্ত থাকাটা কি ভাল দেখায়?”

মুকুন্দ রায় চোখ পাকিয়ে বলল, “চোপ রও বেয়াদব! আমাকে বাঁচা-মরা শেখাতে এসেছে!”

ক্রুদ্ধ, উত্তেজিত এবং বিক্ষুব্ধ মুকুন্দ রায় লাফ মেরে বটগাছের একখানা খুব উঁচু ডালে উঠে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়ল, “নাঃ, এ দেশটার কিচ্ছু হবে না। কোথায় গেল এদের যুক্তিবোধ, কোথায় গেল বিজ্ঞানমনস্কতা, কোথায় গেল কমন সেন্স! রাজ্যের কুসংস্কার, অজ্ঞানতা আর অন্ধ বিশ্বসে ডুবে আছে সব। বলে কিনা ভূত! কোথায় যে ভূত, কীসের যে ভূত, সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না!”

.

পরদিন সকালে বগলাপতি কাহিল মুখে বাইরের ঘরে সাধনচৌকিতে বসে ছিলেন। মুখচোখে থমথমে ভাব, চোখে এখনও আতঙ্ক। কাল রাতে জ্ঞান ফিরে আসার পর লালমোহনের কাঁধে ভর দিয়ে টলতে টলতে বাড়ি ফিরেছেন। সারা রাত আতঙ্কে ভাল করে ঘুম হয়নি। সকালে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়নি, খাওয়ায় রুচি নেই, পুজোপাঠটাও ভাল করে করা হয়নি, বসে বসে আকাশ-পাতাল ভাবছেন।

এমন সময় দুটি লোক এসে গুটিগুটি সামনে দাঁড়াল। মুখে গ্যালগ্যালে হাসি। হাত কচলাতে কচলাতে বলল, “বগলাঠাকুর, একবার ডাক্তারবাবুর বাড়িতে যেতে হবে যে! গিন্নিমা খবর পাঠিয়েছেন।”

“কেন রে?”

“আজ্ঞে, ঝাড়ফুঁকের ব্যাপার আছে!”

বগলাপতি সবেগে মাথা নেড়ে বলে উঠলেন, “ওরে না, না। বুজরুকি আমি ছেড়ে দিয়েছি। ও পথে আর নয়। যা জমিজমা আছে তাইতেই চাষবাস করে চালিয়ে নেব। ওসব ঝাড়ফুক-টাড়ফুক স্রেফ চিটিংবাজি। ওসব ছেড়ে দিয়েছি রে!”

লোকটা ভারী অবাক হয়ে বলল, “আজ্ঞে, আপনি ওসব ছেড়ে দিলে আমাদের চলবে কীসে? বুজরুকি ছাড়া কি আমাদের চলে?”

বগলাপতি মাথা নাড়া থামাননি। সেটাই চালিয়ে যেতে-যেতে বললেন, “না রে, না, ওসব আর আমাকে বলিসনি। আমার খুব শিক্ষা হয়ে গেছে। ও সবের মধ্যে আমি আর নেই।”

“কিন্তু বগলাঠাকুর, বুজরুকিতে যে মাঝে-মাঝে কাজ হয়। আপনার ঝাড়ফুক, জলপড়ায় বেশির ভাগ রুগিই ভাল হয় না বটে, কিন্তু মাঝেমধ্যে এক-আধটা তো দিব্যি গাঝাড়া দিয়ে উঠেও পড়ে!”

“হ্যাঁ রে, তোরা তৃতীয় নয়ন বুঝিস?”

“আজ্ঞে, তিন নম্বর চোখ তো!”

“হ্যাঁ। আমার তৃতীয় নয়ন খুলে গেছে রে। সারা জীবন যত অপকর্ম করেছি, সব দেখতে পাচ্ছি। তোরা যা বাপু, আমাকে এখন একা-একা বসে ভাবতে দে। আমি রোগটোগ সারাতে পারি না, আমার কোনও পোষা ভূত নেই, আমি মারণ-উচাটন বশীকরণ জানি না। এত দিন ভাঁওতাবাজি করে লোক ঠকিয়ে খেয়েছি। এখন প্রায়শ্চিত্ত করব।”

.

“সে আর নতুন কথা কী? আপনি যে ভাওতাবাজ, ভণ্ড, চিটিংবাজ, এ তো সবাই জানে। হাটে বাজারে বলাবলিও হয়। তা বলে কি বিপদে পড়লে লোকে আপনার কাছে এসে ধরনা দেয় না? আপনি জালি, দু’নম্বরি হলেও বিপদেআপদে লোকে তো আপনার উপরেই ভরসা করে, নাকি? সেটা কি কিছু কম কথা?”

হাপুস নয়নে, মুখে হতাশার ছাই মেখে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন বগলাপতি। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধরা গলায় বললেন, “লোকে ওসব বলে বুঝি! বেশ করে, এবার থেকে আমিও সবাইকে বলে বেড়াব যে, বগলাপতি একটা ভন্ড, চিটিংবাজ, জোচ্চোর, ভাওতাবাজ… আর কী বাকি রইল রে?”

“আজ্ঞে, ওতেই হবে। কিন্তু এবার যে গা না তুললেই নয়, বগলাঠাকুর। গিন্নিমা যে আপনার আশায় বসে আছেন।”

“কার বাড়ি যাওয়ার কথা বললি যেন?”

“আজ্ঞে, আমাদের নমস্য করালীডাক্তার।”

বগলাপতি আঁতকে উঠে বললেন, “সর্বনাশ! তার চেয়ে কেউটে সাপের গর্তে হাত ঢোকাতে বল, খ্যাপা ষাঁড়ের সামনে লাল জামা পরে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে বল, বাঘের দুধ দুইয়ে আনতে বল, রাজি আছি। তবু করালীডাক্তারের চৌকাঠ ডিঙোতে পারব না রে বাপু।”

শঙ্কাহরণ গলা নামিয়ে বলল, “একটু ভেবে দেখুন কর্তা, বুজরুকি তো আর বারবার ফেল হতে পারে না। দশবারের মধ্যে হয়তো একবারই লেগে গেল। যদি লেগেই যায় তা হলে করালীকর্তাও আপনাকে দোবেলা সেলাম ঠুকবেন।”

বিপদভঞ্জন পাশ থেকে বলল, “করালীকর্তার আপনার উপর ভরসা নেই বটে, কিন্তু মা ঠাকরোনের আছে। তিনি বলেছেন, বগলাঠাকুরপো ছাড়া ওই ছোঁকরার ব্যায়ো কেউ সারাতে পারবে না। ওষুধের কর্ম নয় মশাই। ভাল তেজিয়ান মন্তর ঝাড়লে কাজ হতে পারে। আর কাজ যদি হয় তা হলে চাই কী? মা ঠাকরোন হয়তো আপনার কালীমন্দির বাবদ হাজার পাঁচেক টাকাই ফেলে দেবেন।”

“প্রাণ বড় না পাঁচ হাজার টাকা বড় রে?”

শঙ্কাহরণ ঘাড় চুলকে বলল, “এই তো ধন্দে ফেলে দিলেন। যদি সত্যি কথা বলতে হয় তো বলি, প্রাণের আর দাম কী? হালকাপলকা ফঙ্গবেনে জিনিস, হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়। তার চেয়ে পাঁচ হাজারের পাল্লা ঢের ভারী।”

বগলাপতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “তোরা একটা ছোঁকরার কথা বললি যেন!”

শঙ্কাহরণ বলল, “আজ্ঞে, ঠিকই শুনেছেন।”

“করালীর রুগি নাকি?”

“তা একরকম বলতে পারেন।”

“করালীর রুগি আমি সারাতে যাব এ কথা ভাবলি কী করে?”

“ভয় নেই মশাই, ডাক্তারবাবু এখন চেম্বারে। ঘণ্টা দুই নিশ্চিন্ত। পা চালিয়ে গেলে তিনি ফেরার আগেই কাজ সেরে ট্যাঁকে টাকা গুঁজে ফিরে আসতে পারবেন।”

বগলাপতি দোনোমোনো করে উঠলেন, বললেন, “কাজটা ঠিক হচ্ছে না রে। কাল রাতে মুকুন্দ রায় আমাকে চিটিংবাজ বলেছে। ভয়ে আর মনস্তাপে আমার দাঁতকপাটি লেগেছিল। ভূতের কথা বিস্তর শুনেছি বটে, মুখোমুখি এই প্রথম দেখা, ধাক্কাটা সামলাতে পারিনি।”

“বলেন কী কর্তা! আপনার যে দু’টি পোষা ভূতের কথা শুনি?”

“দুর দুর! ওসব মিথ্যে কথা। আমার কোনও ভূত নেই। জীবনে কোনও ভূতের সঙ্গে দেখাও হয়নি। কালই প্রথম দেখলাম। ওঃ, কী ভয়ংকর!” শঙ্কাহরণ আর বিপদভঞ্জন হেসে গড়িয়ে পড়ে আর কী। শঙ্কাহরণ হাসি সামলে বলল, “ভয়ংকরের কী আছে বগলাবাবা? ষষ্ঠীতলার মুকুন্দ রায়কে আমরা তো রাতবিরেতে প্রায়ই দেখি। নিশাপতি, যোগেন পালোয়ান, হালে বাচস্পতিঠাকুর– কাকে না দেখি বলুন! ওসব তো আমাদের গা-সওয়া। মুকুন্দকর্তাকে দেখে প্রথম দিন রাম নাম করে ফেলেছিলুম বলে পিলে-চমকানো ধমক ছেড়েছিলেন। রামটাম সব নাকি বুজরুকি। ভগবান- টগবান নাকি কেউ নেই। নাস্তিক মানুষ, বলতেই পারেন, তা বলে কি রাম নাম করব না মশাই? সত্যি হোক, মিথ্যে হোক, রাম নাম করলে একটু যেন বল-ভরসা হয়, না কী বলেন?”