৬. বালিতে চিত হয়ে

০৬.

বালিতে চিত হয়ে পড়ে আছে অ্যানি। একটা হাত বুকের ওপর, আরেক হাত পাশে ছড়ানো। চাঁদের আলোয় ফ্যাকাসে লাগছে সাদা চামড়া। নিথর হয়ে পড়ে আছে সে।

কোন কিছুতে হাত দিয়ো না, মুসাকে সাবধান করল মহিলা অফিসার। সরে যেতে বলল।

অ্যানির দিকে তাকিয়ে আছে মুসা। খোলা চোখ দুটো নিপ্রাণ, শূন্য চাহনি মেলে যেন তাকিয়ে রয়েছে রাতের আকাশের দিকে। হাঁ হয়ে থাকা মুখ বালিতে ভরে গেছে। নাকের ফুটোয়ও বালি।

জানা দরকার কি করে মারা গেল ও। কাছে যেতে মানা করেছে তাকে। অফিসাররা। করুক। শুনবে না কথা। জানতেই হবে।

 দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে দুজনে। মুসার দিকে চোখ নেই। এই সুযোগে অ্যানির লাশের কাছে চলে গেল সে। বসে পড়ে হাত বাড়িয়ে গলার কাছের চুল সরিয়ে দিল।

চিৎকার করে উঠল দুই অফিসার। ওকে সরিয়ে নিতে এল একজন।

ততক্ষণে যা দেখার দেখে ফেলেছে মুসা। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা। গেল গলার শিরার ওপরের চামড়ায় দুটো ফুটো। দুই ফোঁটা রক্ত বেরিয়ে কালো হয়ে আছে।

এই জিনিস দেখারই আশঙ্কা করেছিল। তারমানে তার সন্দেহ ঠিক। লীলা আর জন ছাড়াও আরও ভ্যাম্পায়ার আছে এই এলাকায়। ওগুলোকে থামানো দরকার। নইলে রিকি আর অ্যানির মত আরও কত জীবন যে নষ্ট করবে ঠিক নেই।

চাপা রাগ ফুঁসে উঠতে লাগল ভেতরে ভেতরে। ওখানে দাঁড়িয়েই আরও একবার প্রতিজ্ঞা করল, সবগুলোকে ধ্বংস না করে ক্ষান্ত হবে না।

খুঁজে বের করবে!

খুন করবে একে একে!

কোনটাকে রেহাই দেবে না। স্যাভি হোলোকে পুরোপুরি মুক্ত করবে। ভ্যাম্পায়ারের কবল থেকে।

*

বালিতে বসে পড়ল মুসা। মাথার মধ্যে কেমন ঘোর লেগে আছে।

মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে আরও অনেক পুলিশ এসে হাজির হয়েছে। কাজে ব্যস্ত ওরা। লাশটা যেখানে পাওয়া গেছে, সাদা রঙের প্লাস্টিকের খুটি দিয়ে তার চারপাশ ঘিরে দিয়েছে। সূত্র খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিভাবে মারা গেল মেয়েটা বোঝার চেষ্টা করছে।

বসেই আছে মুসা।

অবশেষে কাজ শেষ হলো পুলিশের। ওকে ডাকল একজন। একটা গাড়িতে তুলে নিল।

চুপচাপ বসে রইল সে। কারও সঙ্গে কোন কথা বলল না। ওরাও তাকে জিজ্ঞেস করল না কিছু। থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওকে। অন্ধকার শহরটা ওর পাশ দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে যেন স্বপ্নের মধ্যে।

মেইন স্ট্রীট আর ওশন অ্যাভেনিউটা যেখানে ক্রস করেছে, তার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা। পাথরে তৈরি পুরানো বাড়ি। জানালায় মোটা। লোহার শিক লাগানো। জেলখানার মত। হাজত, না জেল?

অস্বস্তি বোধ করতে লাগল সে।

শেষবার ওর সঙ্গে দেখা গেছে অ্যানিকে। লাশটাও খুঁজে বের করেছে সে। তার জন্যে কি সন্দেহ করা হচ্ছে ওকে?

ওকারিশ নামে একজন ডিটেকটিভ তার অফিসে নিয়ে ঢোকাল মুসাকে। তারপর শুরু হলো মুষলধারে প্রশ্ন। একই প্রশ্ন বার বার। কখনও কণ্ঠস্বর চড়িয়ে, কখনও নামিয়ে; কখনও ধমকের সুরে, কখনও কোমল স্বরে–কোথায় দেখা হয়েছে অ্যানির সঙ্গে, কতদিনের পরিচয়, শেষবার ওর সঙ্গে কোনখানে ছিল, কতক্ষণ, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং আরও নানা প্রশ্ন।

জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেল মুসা।

ভোরের ঘণ্টাখানেক আগে ছাড়া পেল সে। হেঁটে চলল মেইন স্ট্রীট ধরে, বন্ধ দোকানগুলোর পাশ দিয়ে। একটা লোককেও দেখা গেল না এ সময়ে।

দ্রুত হাঁটতে লাগল সে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে যেতে চাইছে যেন। থানার কাছ থেকে। সে যে নির্দোষ এটা পুলিশকে বোঝাতে পেরেছে কিনা বুঝতে পারছে না।

মনে হয় পারেনি। ওকারিশ ওকে সন্দেহ করে বসে আছে। ছেড়ে দিয়েছে বোধহয় ওর গতিবিধির ওপর চোখ রাখার জন্যে।

দোতলার শিক লাগানো জানালাগুলোর কথা মনে পড়তে আবার কেঁপে উঠল সে। ওর মধ্যে আটকা থাকতে হলে মরেই যাবে।

আবার অ্যানির কথা ভাবল।

রিকির কথা ভাবল।

রাগটা মাথা চাড়া দিল আবার। মনে মনে আবারও কসম খেল, ভ্যাম্পায়ারের দলকে ধ্বংস না করে শান্ত হবে না।

কি করে খতম করতে হয় ওদের, ভালমতই জানে এখন সে। ড্রাকুলার বইতে পড়েছে। একজন পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করেছে। একজন মওলানাকে জিজ্ঞেস করেছে। পাদ্রী বলেছেন, কাঠের চোখা খুঁটি ঢুকিয়ে দিতে হবে। ভ্যাম্পায়ারের বুকে। ক্রুশ বাড়িয়ে ধরলে ভ্যাম্পায়ার আর এগোয় না। মওলানা বলেছেন, আল্লাহ-রসুলের নাম করলে কোন জিন-ভূতেরই সাধ্য নেই। কাছে এগোয়। দুজনেই একটা ব্যাপারে একমত রোদের আলো আর আগুন সহ্য করতে পারে না রক্তচোষা ভূত। রোদের মধ্যে বের করে নিয়ে এলে, কিংবা গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলে ধ্বংস হতে বাধ্য। বুকে কাঠের খুঁটি পোঁতার চেয়ে আগুন ধরানোটাই সহজ মনে হয়েছে ওর কাছে।

তবে সবার আগে, প্রথম কাজটা হলো ওদের খুঁজে বের করা

*

সাঁঝের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কণিকা। কেমন অসহায় বোধ করছে। কোথায় ওরা?–ভাবল। সব সময় এত দেরি করে কেন আসতে? শহরে গিয়ে ছেলেগুলোকে খুঁজে বের করার কথা ভাবল একবার।

চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিল উড়তে থাকা লম্বা কালো চুল। জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। ওর এত তাড়া থাকাটা উচিত না। ডলি আর কিমি কখনও তাড়াহুড়া করে না।

পা থেকে স্যান্ডেল খুলে নিল সে। ঠাণ্ডা বালি ঢুকে যাচ্ছে আঙুলের ফাঁকে। হাঁটতে গেলে লাফ দিয়ে দিয়ে উঠে আসছে পায়ের পাতার ওপরে।

মাথার ওপর ডানা ঝাপটানোর শব্দে মুখ তুলে তাকাল সে। অনেকগুলো বাদুড় একসঙ্গে উড়ে চলেছে পাহাড়ের দিকে।

বালিয়াড়ির পাশ দিয়ে চলার সময় খিলখিল হাসির শব্দে চমকে গেল। ফিরে তাকিয়ে দেখল টিলার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে কিমি আর ডলি। ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর ওপর।

ঘাবড়ে গেল কণিকা। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল দুজনকে। চিৎকার করে উঠল, এই, কি করছ!

রক্ত খাব, জবাব দিল ডলি।

কি যা তা বলছ! আমি তোমাদের স্বজন!

 স্বজনের রক্তই খাব আজ, কিমি বলল।

দুজনে যুক্তি করে এসেছে, বুঝতে পারল কণিকা। তারমানে আমাকে– বিশ্বাস করতে পারছ না?

না, পারছি না, ডলি বলল। তুমি যে আমাদের স্বজন, কি করে বুঝব?

কি করে বুঝতে চাও?

তোমার গলায় দাঁত বসাব। রক্তের স্বাদ থেকেই বুঝে যাব, তুমি আসল না নকল।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দুজনকে দেখতে দেখতে কণিকা বলল, কাউন্ট ড্রাকুলা বলেছেন বুঝি?

যদি বলি তাই?

একই কথা তো আমিও তোমাদের বলতে পারি। আমি যদি বলি, আমার সন্দেহ তোমরা নকল। কাউন্ট ড্রাকুলা আমাকে বলেছেন তোমাদের রক্ত খেয়ে দেখার জন্যে। তাহলে কি বলবে?

প্রশ্নের জবাব দিতে পারল না কিমি আর ডলি। পরস্পরের দিকে তাকাতে শুরু করল।

দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে ওদের বুঝতে পেরে চাপ দিল কণিকা, কই, দাঁড়িয়ে আছ কেন? এসো, রক্ত টেস্ট করো আমার। তারপর আমি তোমাদের রক্ত টেস্ট করব।

 ডলির দিকে তাকিয়ে আচমকা ধমকে উঠল কিমি, তখনই বলেছি, এসব চালাকির দরকার নেই। ও আমাদেরই লোক। জন যখন ঢুকিয়েছে, নকল। হতেই পারে না, কাউন্ট ড্রাকুলা যতই বলুন। নইলে আমাদের যা করতে বললেন, একই কাজ কণিকাকেও করতে বলবেন কেন? কণিকার দিকে তাকাল, থাক, নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করে আর লাভ নেই। কোথায় যাচ্ছিলে?

শহরে।

আমরাও যাব।

.

০৭.

 পরদিন সন্ধ্যায় রবিনকে ফোন করল মুসা। সারাদিন ওর খোঁজ পায়নি। আশা করেছিল, আসবে। আসেনি। সে নিজেও যোগাযোগ করতে পারেনি। সারারাত থানায় কাটিয়ে এসে ভোরের দিকে সেই যে শুয়েছিল, উঠেছে। দুপুরের পর। সাগরে গিয়ে সাঁতার কেটেছে অনেকক্ষণ। ফিরে এসে গোসল করে খাওয়াদাওয়া সারতে সারতে বিকেল শেষ। কাপড় পরে বেরোনোর জন্যে রেডি হয়ে এখন রবিনকে ফোন করল।

ফোন ধরল বোর্ডিং হাউসের অ্যাটেনডেন্ট। ওখানেই উঠেছে রবিন। মুসার শত চাপাচাপিতেও ওদের ভাড়া করা কটেজে ওঠেনি। লোক বাড়লে গাদাগাদি হয়ে যাবে, আঙ্কেল আর আন্টির অসুবিধে হবে। বেড়াতে আসা মানুষকে কোনভাবে বিরক্ত করা উচিত না।

রবিন কোথায়? জানতে চাইল মুসা। রবিন মিলফোর্ড?

ঘরে। আপনি কে?

আমি তার বন্ধু। মুসা আমান। ডেকে দেয়া যাবে, প্লীজ?

ধরো। দিচ্ছি।

রিসিভার নামিয়ে রাখার শব্দ শুনতে পেল মুসা। বেশ দেরি করে এসে ফোন ধরল রবিন।

কে, মুসা? অ্যানির খবর শুনেছ?

হ্যাঁ। কেবল শুনিইনি, নিজের চোখে লাশ দেখে এলাম, মুসা বলল। কাল রাতে সৈকতে গিয়েছিল আমার সঙ্গে। বেড়িয়ে-টেড়িয়ে সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে চলে গেল। রাত দুপুরে পুলিশ এসে ঘুম থেকে জাগাল আমাকে। বলল বাড়িতে ফিরে যায়নি সে। ওর মা নাকি খোঁজাখুঁজি করছে। আমাকে ওদের সঙ্গে যেতে হবে। সৈকতে লাশ খুঁজে পাওয়ার পর আমাকে থানায় ধরে নিয়ে গেল। তারপর প্রশ্নের পর প্রশ্ন। যেন খুনিটা আমিই।

মানুষের জীবনটা কি অদ্ভুত, তাই না? কাল দেখলাম বেঁচে আছে, হেসেখেলে বেড়াচ্ছে, অভিনয় করছে, আজ নেই। কোনদিন আর মঞ্চে উঠবে না, কথা বলবে না… একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রবিন।

মুসা চুপ করে আছে। অ্যানির গলার দাগগুলোর কথা বলবে কিনা ভাবছে। রবিন বিশ্বাস করবে না। এতদিন যেমন করেনি, এখনও করবে না।

মুসা, শুনছ?

হ্যাঁ।

চুপ করে আছ কেন?

এমনি। তোমার কথা শুনছি। তোমার গলা এমন লাগছে কেন? শরীর খারাপ নাকি?

হ্যাঁ। খুব টায়ার্ড লাগছে সারাটা দিন ধরে। কেন এ রকম হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আর ঘুম! বিছানা থেকেই উঠতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে সাতদিন ঘুমাইনি।

অসুখটা কি?

সেটাই তো বুঝতে পারছি না। শরীরটা যেন একেবারে ভেঙেচুরে গেছে। আর দুর্বল কাকে বলে। আঙুল নড়াতেও ইচ্ছে করে না।

শঙ্কিত হয়ে উঠল মুসা। খারাপ ভাবনাগুলো মনে আসতে দিল না। অনিশ্চিত ভঙ্গিতে বলল, জুরটর আসবে হয়তো। রিহারস্যালে যাবে?

চেষ্টা করব। কণিকাকে কথা দিয়েছি ওর সঙ্গে কার্নিভল দেখতে যাব।

বন্ধুত্বটা তাহলে ভালমতই হয়ে গেছে, হাসল মুসা।

কি জানি! মেয়েটা যেন কেমন। এখনই ভাল, এখনই কেমন হয়ে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক। খুব অবাক লেগেছে আমার।

এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে মুসা বলল, ঠিক আছে, রাখি। থিয়েটারে দেখা হবে।

রিসিভার রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে। রবিনের ক্লান্তির কথা শুনে ভাল লাগছে না। ভ্যাম্পায়ারের খপ্পরে পড়ার পর রিকির ক্লান্ত লাগত, জিনারও লাগত। ক্লান্তি, ঘুম, বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে না করা, ফ্যাকাসে চেহারা, ঘোর লাগা ভাবভঙ্গি এ সব ভ্যাম্পায়ারে রক্ত খেয়ে যাওয়ার লক্ষণ। রিকি তো মরেই গেল। জিনা বেঁচেছে কপালগুণে। তবে ওই সময়কার কথা। কিছু মনে করতে পারে না। জিনা কিছু বলতে পারেনি বলেই কিশোর আর রবিনকে ভ্যাম্পায়ারের কথা বিশ্বাস করাতে পারেনি সে। ভূতের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছে কিশোর। অবিশ্বাসীর দৃষ্টিতে তাকিয়েছে রবিন। তবে এইবার ওদের ভুল ভাঙানোর সময় এসেছে। যা মনে হচ্ছে, রবিন নিজেই পড়েছে। ভ্যাম্পায়ারের কবলে।

রবিনকে সাবধান করে লাভ হবে না। ও কথা শুনবে না। সাবধান। থাকতে হবে মুসার নিজেকে। রবিনের ওপর চোখ রাখতে হবে। যাতে রক্ত খেয়ে খেয়ে ওকেও মেরে ফেলতে না পারে ভ্যাম্পায়ার।

ইস, রিকির ব্যাপারটাও যদি আগেভাগে বুঝতে পারত! তাহলে এভাবে অপঘাতে মরতে হত না বেচারাকে। অ্যানি যে এভাবে ভ্যাম্পায়ারের কবলে পড়বে, সেটাও আন্দাজ করতে পারেনি মুসা। ওকেই ভ্যাম্পায়ার ভেবে বসে ছিল।

সামনের টেবিলটায় এক কিল মারল সে। দাতে দাঁত চেপে চিৎকার করে বলল, রবিনকে আমি কোনমতেই মরতে দেব না! রিকিকে নিয়েছ, অ্যানিকে নিয়েছ, আর কাউকে পাবে না। আমার কোন বন্ধুকেই আর নিতে দেব না তোমাদের।

অস্থির ভঙ্গিতে ঘরের মধ্যে পায়চারি শুরু করল সে। রবিনের গলায় দাঁতের দাগ আছে কিনা দেখে শিওর হয়ে নিতে হবে।

কাজটা কার? কণিকার?

মেয়েটার চেহারা কল্পনা করল মুসা। আকর্ষণীয় চেহারা। লম্বা কালো চুল। মায়াময় দুটো চোখ।

কণিকার ওপর নজর রাখতে হবে, ভাবল মুসা। যত সুন্দর চেহারাই হোক, ভ্যাম্পায়ার হলে কোনমতেই বাঁচতে পারবে না আমার হাত থেকে।

টেবিলে পেপারওয়েট চাপা দেয়া কাগজটা একটানে তুলে নিল সে। নাটকের সংলাপ লিখে নিয়েছে ওতে। গটমট করে এগোল দরজার দিকে। ওপাশে গিয়ে দড়াম করে পাল্লা লাগাল। টনিদের বাড়ি হয়ে যাবে ঠিক করল। ওকে পেলে একসঙ্গে যাবে থিয়েটারে।

অন্ধকার রাত। চাঁদ তো বটেই, তারাও সব মেঘে ঢেকে দিয়েছে। কটেজগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ছায়াগুলোকে মনে হচ্ছে যেন ঘাপটি মেরে থাকা ভূত।

শিউরে উঠল মুসা। গা ছমছম করতে লাগল। এটা ভ্যাম্পায়ারের রাত! এমন চমৎকার রাতে রক্ত খেতে বেরোবেই ওরা।

নিরাপদে টনিদের বাড়িতে পৌঁছে হাঁপ ছেড়ে বাচল সে। বাড়িটা নতুন। ইটের দোতলা বাড়ি। যেন ভুল করে গজিয়ে উঠেছে স্যান্ডি হোলোতে। এখানকার সব বাড়ি হয় কাঠের, নয়তো পাথরের। বেশির ভাগই পুরানো। সৈকতের ধারে ওগুলোর পাশে বাড়িটা তাই একেবারে বেমানান।

বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা পার্কও আছে। গাছপালা আছে। দুটো দোলনা আর কয়েকজনে একসঙ্গে বসার ব্যবস্থা আছে।

এত অন্ধকার, কোনদিকে যাচ্ছে সে, ঠাহর করা কঠিন।

খুট করে শব্দ হলো।

দাঁড়িয়ে গেল মুসা। কান পেতে রইল। আর কোন শব্দ নেই। কিন্তু। শুনেছে যে তাতে কোন সন্দেহ নেই। লুকিয়ে আছে নাকি কেউ? মানুষ না

সব কিছুতে সবখানেই এখন ভ্যাম্পায়ার দেখছে সে। কারণ মন জুড়ে আছে রক্তচোষা ভূতের চিন্তা।

নিঃশব্দে বাড়িটার দিকে কয়েক পা এগোল। তারপর দাঁড়িয়ে গেল। অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি। মনে হচ্ছে আড়াল থেকে কেউ নজর রাখছে তার ওপর।

লীলা আর জনের দোসররা কি জেনে গেছে ওর কথা? বুঝেছে ওকে ঠেকাতে না পারলে সবাইকে ধ্বংস করে দেবে সে? তাই আগেভাগেই ওকে খতম করে দিয়ে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে চায়? 

শব্দটা আবার কানে আসতে চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল মুসা। গাছপালার মধ্যে কোন কিছু থেকে থাকলেও চোখে পড়ল না। শুধুই অন্ধকার।

নাহ, কিছু না। কিছু শুনিনি। সব কল্পনা। মনকে বোঝানোর চেষ্টা করল সে।

বাড়ির আশেপাশে গভীর ছায়া। যেখানে সবচেয়ে বেশি অন্ধকার, সেই জায়গাটুকু পার হয়ে টনিদের সদর দরজার কাছে যেতে হবে।

এগোতেই আবার কানে এল ঘষার শব্দ। টেনে টেনে এগোনো পায়ের শব্দের মত। মাত্র কয়েক ফুট দূরে।

 ও কিছু না! ফিসফিস করে বলে নিজেকে অভয় দিতে চাইল সে। আবার পা বাড়াল দরজার দিকে।

আবার শব্দ।

ঘষার!

নখ ঘষছে নাকি! বাদুড়ের ডানাতেও ধারাল, বাঁকা নখ থাকে। ভ্যাম্পায়ার বাদুড়ের রূপ নিতে পারে।

চলমান ছায়াটা চোখে পড়ল হঠাৎই। কিছু করার আগেই ওর গায়ের ওপর এসে পড়ল ওটা।

আতঙ্কে গলা চিরে চিৎকার বেরিয়ে এল ওর।

হি-হি হাসি শোনা গেল অন্ধকারে। হাততালি দিয়ে সুর করে বলতে লাগল সিসি, পেয়েছে। পেয়েছে! ভয় পেয়েছে।

চেপে রাখা দমটা ধীরে ধীরে ছাড়ল মূসা। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি জীবনে কমবে কিনা ভেবে অবাক হলো। বিড়বিড় করে বলল, কে বলল ভয়। পেয়েছি? আমি জানতাম, তুমিই!

মোটেও জানতে না। তুমি ভেবেছিলে ভ্যাম্পায়ার।

অন্ধকারে অস্পষ্ট ছায়ার মত লাগছে সিসির চেহারা। হাসিতে ওর দাঁত যে সব বেরিয়ে পড়েছে, না দেখেও অনুমান করতে পারছে মুসা।

মানুষকে এভাবে ভয় দেখানো ঠিক না, গলার কাঁপুনি এখনও বন্ধ হয়নি। মুসার।

কেন?

কারণ ব্যাপারটা মজার নয় মোটেও, বলে আবার দরজার দিকে রওনা দিল মুসা।

আমার কিন্তু বেশ মজা লাগে। এমন চমকে যায় সবাই, উ, যা মজা। লাগে না তখন!

জবাব না দিয়ে বেল বাজাল মুসা।

কয়েক সেকেন্ড পর দরজা খুলে দিল টনি।

ইস্, তোমার বোনটা না একটা পাজির পা ঝাড়া! অভিযোগ করল মুসা।

.

০৮.

নীরবে থিয়েটার হাউসের দিকে এগিয়ে চলেছে দুজনে। মুসা আর টনি।

অ্যানির কথা ভাবছে মুসা। দুঃখ হচ্ছে ওর জন্যে। কাল সবার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সে, আজ আর থাকবে না। কত সহজেই না একজন জলজ্যান্ত মানুষ হারিয়ে যায় চিরকালের জন্যে!

রবিনের জন্যেও দুশ্চিন্তা হতে লাগল।

স্যান্ডি হোলোর দক্ষিণ ধারে সামান্য উঁচু একটা ঘাসে ঢাকা জমিতে দাঁড়িয়ে আছে থিয়েটার হাউসটা। আয়তাকার কাঠের বাড়ি। দেয়ালে সাদা রঙ। জানালাগুলো সবুজ।

মুসা আর টনি একসঙ্গে হলে ঢুকল। অনেকেই এসেছে। সবার মধ্যে চাপা উত্তেজনা। মঞ্চের কাছে জড় হয়েছে। অ্যানির কথাই আলোচনা করছে সবাই।

সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল মুসা। ওদের মধ্যে কোনজন ভ্যাম্পায়ার? কণিকাকে খুঁজল তার চোখ। কোথাও দেখতে পেল না ওকে।

ওই যে কিমি, উনি বলল। আমি যাই। পরে কথা বলব তোমার সঙ্গে।

মঞ্চ থেকে নামার সিঁড়ির কাছে কয়েকটা মেয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। কিমি। টনিকে ওর দিকে আসতে দেখে হাসল।

অন্য দিকে ভিড়ের মধ্যে রবিনকে খুঁজল মুসা। দেখতে না পেয়ে থিয়েটার। হাউসের আরেক দিকে রওনা হলো।

স্যান্ডি হোলোরই কেউ খুন করেছে অ্যানিকে, পাশ কাটানোর সময় বাদামী-চুল একটা মেয়ের মন্তব্য কানে এল মুসার। এমন কেউ, যাকে আমরা চিনি।

অ্যাই, মুসা, মুখ তিলে ভরা একটা ছেলে ডেকে বলল, নাটকটা আর হবে কিনা, কিছু শুনেছ?

মাথা নাড়ল মুসা। ছেলেটার মুখের দিকে তাকাল। এমন ফ্যাকাসে চামড়া কেবল ভ্যাম্পায়ারেরই হতে পারে। দিনের বেলা বেরোতে পারে না, রোদে যেতে পারে না, অন্ধকার ঘরে কফিনের মধ্যে শুয়ে থাকতে হয়–তাই এ অবস্থা। একে মনে রাখতে হবে, ভাবল সে।

থিয়েটারের দরজা খুলে গেল। ফিরে তাকাল মুসা। ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঢুকছে রবিন।

চমকে গেল মুসা। রীতিমত করুণ রবিনের অবস্থা। বিধ্বস্ত চেহারা।

ঘুমের ঘোরে হাটছে যেন রবিন। মেঝের দিকে চোখ রেখে পা টেনে টেনে এগোচ্ছে মঞ্চের দিকে।

ভিড় ঠেলে ওর দিকে এগোল মুসা। কিন্তু সে রবিনের কাছে পৌঁছার আগেই ছায়া থেকে বেরিয়ে এল কণিকা। পৌঁছে গেল রবিনের কাছে। হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল ওকে সীটের দিকে। কথা বলতে বলতে হাসছে।

কণিকার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুসা। রবিনের অসুস্থতার জন্যে সে-ই দায়ী কিনা বোঝার চেষ্টা করছে।  রবিনের গলায় দাঁতের দাগ আছে নাকি আগে দেখতে হবে। তারপর অন্য কথা।

পাশ থেকে কে যেন হাত চেপে ধরল, হাই, মুসা।

ডলি। পরনে ডেনিম কাটঅফ আর একটা নীল হলটার টপ। লম্বা চুলগুলোকে পেছনে কষে বেঁধেছে, ঘোড়ার লেজের মত ঝুলছে ঘাড়ের ওপর। হাঁ করে তাকিয়ে রইল মুসা। সুন্দর লাগছে ডলিকে। তবে কোনখানে যেন একটা খুত আছে। চোখে নাকি? মনে হলো। শীতল চাহনি। কেমন লোভাতুর।

খবর শুনেছ? জিজ্ঞেস করল ডলি।

নীরবে মাথা ঝাঁকাল মুসা।

সাংঘাতিক কাণ্ড। কালকের এতবড় ঘটনার পরেও সবাই রিহারস্যালে এল, অবাকই লাগছে আমার। আমি তো ভাবলাম ভয়ে আজ রাতে বাড়ি থেকেই বেরোবে না কেউ।

তুমিও তো বেরিয়েছ।

খিলখিল করে হাসল ডলি, কোন কিছুতে ভয় পাই না আমি।

ওরাও হয়তো পায় না।

মঞ্চে উঠলেন মিসেস রথরক। মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত তুললেন চুপ করার জন্যে। অ্যাটেনশন, প্লীজ! এই, আমার কথা শোনো তোমরা।

কথা বন্ধ করে দিল সকলে।

মিসেস রথরক ঘোষণা করলেন, নাটক চলবে। সেটাকে উৎসর্গ করা হবে অ্যানির নামে। তারপর জানালেন, অ্যানির জায়গায় এখন ডলি অভিনয় করবে।

শুনেই উজ্জল হলো ডলির মুখ। মুসার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, এবার তোমার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পাব আমি।

জবাব দিল না মুসা। হিংসুক মেয়েটার ওপর বিরূপ হয়ে গেল মন। মিসেস রথরকের দিকে নজর ছিল বলে এতক্ষণ খেয়াল ছিল না। এখন ফিরে তাকিয়ে দেখল রবিন আর কণিকা নেই সীটে। অদ্ভুত ব্যাপার! রিহারস্যাল শুরুর আগেই কেটে পড়ল! কণিকা কি ওকে রক্ত খাওয়ার জন্যে ধরে নিয়ে গেল নাকি?

তাহলে শুরু করা যাক, মিসেস রথরক বলছেন। প্রথম পর্ব।

 মুসার হাত ধরে টানল ডলি, আমাদের দিয়েই শুরু।

মনে রবিনের জন্যে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ডলির পেছন পেছন মঞ্চের দিকে এগোল মুসা। মঞ্চে উঠল। কোথায় কোন ভঙ্গিতে দাঁড়াতে হবে দেখিয়ে দিলেন মিসেস রথরক। তারপর বললেন, রেডি। স্টার্ট।

মঞ্চের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল মুসা। নজর পেছনে ব্যাকড্রপের আঁকা বিল্ডিঙের দিকে। বিড়বিড় করে বলল, টোয়েন্টি সেভেন ব্র্যাকার স্ট্রীট।…কোথায় ওটা?..পাচ্ছি না কেন?…খুঁজে বের করতে না। পারলে পিঠের চামড়া রাখবেন না আমার মিস্টার কর্কলি।

ওর হাতে একটা ছোট বাক্স। মুদি দোকানের কর্মচারি সেজেছে। ডেলিভারি বয়ের বেশে খদ্দেরের বাড়িতে মাল সরবরাহ করতে এসেছে। ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না।

ছায়া থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে এল ডলি। কানের কাছে বলে উঠল, কি খুঁজছ?

এমন চমকে গেল মুসা, আরেকটু হলে হাত থেকে ছেড়ে দিচ্ছিল বাক্সটা।

পথ হারিয়েছ বুঝি? ডলির ঠোঁটে শয়তানির হাসি।

আঁ… ইয়ে..ইয়ে… কথা সরছে না মুসার মুখ থেকে।

 ইয়ে ইয়ে করছ কেন? হারিয়ে গেছ নাকি, সেটাও বলতে পারছ না?

আ-আমি ব্র্যাকার স্ট্রীটের সাতাশ নম্বর বাড়িটা খুঁজছি। তুমি চেনো?

চিনব না কেন? এসো, হাঁটতে শুরু করল ডলি।

পেছন পেছন চলল মুসা। বুক কাঁপছে। এত ভয় পাচ্ছি কেন? মনে মনে নিজেকে ধমক লাগাল সে। এটা তো আর আসল নয়। নাটক।

তবে আসল বিপদও আছে স্যান্ডি হোললাতে। পথ হারানো মানুষের কাছে এভাবেই আচমকা এসে উদয় হয় ভ্যাম্পায়ার। সেটা ভেবে নিজেকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করল। মনে হলো তার, তাতে অভিনয়টা জমবে ভাল।

হঠাৎ মুসাকে চেপে ধরল ডলি।

হাত থেকে বাক্স ফেলে দিল মুসা। ধাক্কা দিয়ে ডলিকে সরানোর চেষ্টা করল।

আসুরিক শক্তিতে তাকে জাপটে ধরল ডলি। ফাঁক হয়ে গেল ঠোঁট। দুদিকের কোণা সরে গিয়ে বেরিয়ে এল মারাত্মক শ্বদন্ত। মঞ্চের আলোয় ঝকঝক করে জ্বলছে দাঁত দুটো। মুসার গলায় দাঁত বসিয়ে দিতে গেল।

 ভূ-ভূ-ভূত! বলে চিৎকার করে উঠল মুসা। কিছুতেই ডলির বাহুমুক্ত হতে না পেরে চেঁচাতে শুরু করল, বাবাগো! খেয়ে ফেলল! বাঁচাও! বাঁচাও!

ডলির আলিঙ্গন থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ছটফট করতে লাগল।

আরে করছ কি? আবার চিৎকার করে উঠল মুসা। চিৎকারটা আগের চেয়ে বাস্তব মনে হলো। অভিনয় নয়। এত জোরে দাঁত ফোঁটাচ্ছ কেন? কেটে যাবে তো!

হাসি শোনা গেল দর্শকদের।

কিন্তু কানেই তুলল না ডলি। দাঁতের চাপ কমাল না সামান্যতম। বরং বাড়াতে শুরু করল।

.

০৯.

আরে! করছ কি! ছাড়ো! ছাড়ো! চিৎকার করতে লাগল মুসা। যখন কোনমতেই ছাড়ল না ডলি, এক ধাক্কায় ওকে সরিয়ে দিল।

হাসি বাড়ল দর্শকদের।

পিছিয়ে গেল ডলি। প্লাস্টিকের দাঁত দুটো খুলে নিল।

গলায় হাত বোলাতে লাগল মুসা। রক্ত বেরোয়নি। তবে দাঁতের চাপ আরেকটু জোরে লাগলে যেত ফুটো হয়ে। বাপরে বাপ! আসল দাঁতের চেয়ে কম শক্ত নয় ওই প্লাস্টিকের দাঁত।

 সরি, ডলি বলল, অভিনয়ে এতটাই মনোযোগ দিয়ে ফেলেছিলাম, তুমি যে ব্যথা পাবে সেটাও মনে ছিল না।

আহত জায়গা ডলতে লাগল মুসা। ডলির সরি বলাও তার গোমড়া মুখে হাসি ফোঁটাতে পারল না। ভোতা স্বরে বলল, তবে স্বীকার করতেই হবে তুমি ভাল অভিনেত্রী।

উজ্জল হলো ডলির চোখ। থ্যাংকস।

ভেরি গুড। চমৎকার অভিনয় করেছ, মিসেস রথরক বললেন। পরের দৃশ্য। রবিন, এসো।

দুর্বল ভঙ্গিতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল রবিনকে। অন্য মানুষ লাগছে আজ ওকে। সেই প্রাণচঞ্চল রবিন নয়।

সংলাপও বলতে পারল না ঠিকমত। নীরস কণ্ঠ। তাতে প্রাণ নেই। যা করল সেটাকে আর যাই বলা যাক, অভিনয় বলা যাবে না।

বাতিল করে ফেলেছে ওকে! আনমনে বিড়বিড় করল মুসা।

শুনে ফেলল ডলি। কণিকার সঙ্গে বেরিয়েছিল না একটু আগে?

অ্যাঁ!…হা! কি মনে হতে ঝট করে তাকাল ডলির দিকে। কণিকার সঙ্গে বেরোনোয় কি হয়েছে?

না, কিছু না, অন্য দিকে চোখ ফেরাল ডলি।

ওর আচরণ রহস্যময় মনে হলো মুসার কাছে। ডলি কিছু জানে মনে হচ্ছে। ভ্যাম্পায়ারের ব্যাপারটা সে-ও সন্দেহ করেছে নাকি!

রিহারস্যালের পর মুসা আর ডলির সঙ্গে টনি আর কিমিও এগোল দরজার দিকে।

বাড়ি যাবে এখন? মুসাকে জিজ্ঞেস করল টনি।

এই সময় রবিন আর কণিকাকে আসতে দেখে মুসা বলল, না, এত সকাল সকাল যাব না। কণিকার ওপর নজর রাখতে চায় সে। চলো, প্রিন্সেসে যাই। খিদে পেয়েছে।

রবিনের দিকে তাকাল ডলি, তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে ঘুমাওনি।

উল্টোটা বললে, রকিন বলল। সারা দিনই ঘুমাই এখন। জেগে উঠে দেখি, ঘুমানোর আগে যেমন ছিলাম, তার চেয়ে দুর্বল লাগছে।

তাকিয়ে আছে মুসা। রিকি আর জিনার সঙ্গে রবিনের অসুস্থতার মোলো আনা মিল। গলায় দাগ আছে কিনা দেখার চেষ্টা করল। নেই।

দ্বিধায় পড়ে গেল সে। রবিন কি আসলেই কোন রোগের শিকার? ভ্যাম্পায়ারের নয়?

পোলা শার্ট পরেছে রবিন। উঁচু কলার। গলার নিচের দিকটা দেখা যায় না। ওখানে দাগ থাকতে পারে। পুরো গলা না দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।

রবিনের হাত ধরে টানল কণিকা, চলো, বেরোই।

 কোথায় যাব?

 প্রিন্সেসে। মুসা বলল না?

হাই তুলতে তুলতে জবাব দিল রবিন, আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি বাড়ি যাব।

হতাশ মনে হলো কণিকাকে। এক ঘণ্টার জন্যেও পারবে না?

ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল রবিন। মুসার দিকে তাকাল, মুসা, আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবে? একা যেতে ভরসা পাচ্ছি না।

চলো।

 কিন্তু মুসা.. বলতে গেল ডলি।

বাধা দিল মুসা, না, ডলি, আজ আর তোমার সঙ্গে যেতে পারলাম না। কাল দেখা যাবে। রবিনকে দিয়ে আসা দরকার। ও অসুস্থ

এই না বললে প্রিন্সেসে যাবে?

বলেছি। রবিন বাড়ি যেতে চাইবে, জানতাম না। তোমরাও চলে যেতে পারো। আজ আর প্রিন্সেসে যাওয়া হবে না।

সে তো দেখতেই পাচ্ছি, কণিকার মতই হতাশ মনে হলো ডলিকেও।

 মুসার দেখাদেখি টনিও যদি মত পাল্টায়, এই ভয়ে তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে টান দিল কিমি, চলো, ওরা না গেলে নাই। আমরাই যাই।

মাথা ঝাঁকিয়ে, মুসা আর রবিনকে পরে দেখা হবে বলে কিমির হাত ধরে বেরিয়ে গেল টনি।

একা যেতে যেন ভাল লাগছে না কণিকার। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। পাশ থেকে বলে উঠল একটা কণ্ঠ, কি ব্যাপার, একা নাকি?

ফিরে তাকাল সবাই। মুসা দেখল, সেই তিল-পড়া ছেলেটা।

কণিকার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল ছেলেটা। হেসে বলল, আমি ইমি। কার্নিভলে যেতে ইচ্ছে করছে। একা একা যেতে ভাল লাগছে না। একজন সঙ্গী পেলে যেতাম। ভয় নেই, খেলাধুলার খরচা সব আমিই দেব।

কি ভেবে রাজি হয়ে গেল কণিকা। রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে, তুমি বাড়ি যাও। আমি এর সঙ্গে চলে যাচ্ছি।

হা-না কিছু বলল না রবিন। বলার শক্তিও যেন নেই।

 ইমির সঙ্গে বেরিয়ে গেল কণিকা।

রবিনের দিকে তাকাল মুসা, এসো।

সারাটা পথ ক্লান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে এল রবিন। উঁচু-নিচু জায়গাগুলোতে তাকে ধরে ধরে পার করল মুসা।

বোর্ডিং হাউসের গেটের কাছে এসে রবিন বলল, থাক, আর আসতে হবে না। যাও এখন। কাল দেখা হবে। থ্যাংক ইউ।

সামান্য উসখুস করে মুসা বলল, রবিন?

 ঘুরে দাঁড়াল রবিন, কি?

 রবিন, সাবধানে থেকো।

হাসল রবিন। বাড়ির বারান্দা থেকে এসে পড়া আলোয় মলিন দেখাল। হাসিটা। দেখো, রোগ হওয়াটা কারও হাতে নয়। সাবধানেই তো থাকি…

আমি সেকথা বলছি না…

তাহলে? …ও, ভ্যাম্পায়ার। তোমার মাথা থেকে এখনও গেল না সেটা। কই, হপ্তা তো পেরিয়ে গেল এখানে এসেছি। ভ্যাম্পায়ারের ছায়াও তো চোখে পড়ল না।

কিন্তু আমি দেখে ফেলেছি…।

পরে কথা বলব। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না…

ঠিক আছে, যাও। পরেই কথা বলব। তুলে দিয়ে আসব বারান্দায়?

না, লাগবে না।

*

বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করল না মুসার। সঙ্গী হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে না। এখন আর। ডলিও চলে গেছে। একা একাই সৈকতে রওনা হলো সে।

চলে এল ডক হাউসের কাছে। দ্বীপটার দিকে তাকিয়ে গা ছমছম করে উঠল। ফিরে তাকাল পেছনের কালো পাহাড়ের দিকে।

বাদুড় উড়ে যাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে। দ্বীপ থেকে আসছে। যাবে ওই পাহাড়টায়। খেয়েদেয়ে পেট ভরিয়ে অন্ধকার থাকতে থাকতেই আবার দ্বীপে ফিরে যাবে।

একা একা থাকতে ভাল লাগল না বেশিক্ষণ। ফিরে চলল। এতক্ষণ কৃষ্ণপক্ষের হলুদ চাঁদ ছিল আকাশে। এখন সেটাও মেঘে ঢাকা পড়েছে। সাগর থেকে এসে ঝাঁপটা দিয়ে গেল একঝলক ঠাণ্ডা বাতাস। গায়ে কাঁটা দিল।

অন্ধকার। চাঁদ-মেঘের খেলা। ভ্যাম্পায়ার আসার উপযুক্ত সময়।

সাবধানে এগিয়ে চলল মুসা।

ভয় লাগছে তার। দোয়া-দরূদ পড়তে পড়তে এগোল।

 হাঁটতে হাঁটতে বালিয়াড়িটার কাছে চলে এল। কিছু ঘটল না।

মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল চাঁদ। ভূতুড়ে ঘোলাটে আলো ছড়িয়ে ৩ দিল আবার।

বালিয়াড়ির কাছ দিয়ে চলার সময় কালো কি যেন পড়ে থাকতে দেখল সে।

আবার কালো জিনিস! ধড়াস করে উঠল বুক। মানুষ না তো!

পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ওটার দিকে।

মানুষই! পড়ে থাকার ভঙ্গিটা ভাল না। আরও কাছে এসে দেখল উপুড় হয়ে পড়ে আছে।

বুকের মধ্যে দুরুদুরু করছে ওর। পকেটে হাত দিল। এখনও আছে। রিকির বুটেন লাইটারটা। দ্বীপে গিয়ে জিনাকে আনার সময় একবার কাজে লেগেছে ওটা। তারপর থেকে আর কাছছাড়াই করে না।

আলো জ্বেলে পড়ে থাকা মানুষটার মুখ দেখে চমকে গেল সে।

ইমি!

একবার নাড়ি টিপেই বুঝে গেল, বেঁচে নেই।

বালিতে মাখামাখি মুখ। গলায় ঝাক বেঁধে রয়েছে মাছি। নিশাচর মাছিও আছে তারমানে। রক্ত খায় নাকি! হাত দিয়ে প্রায় ডলে সরাল সেগুলোকে।

গলার চামড়ায় স্পষ্ট দেখা গেল ফুটো দুটো। এক ফোঁটা করে রক্ত লেগে রয়েছে সেগুলোর ওপর। মুখের চামড়া ময়দার মত সাদা।

শুষে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলা হয়েছে ওকে। এক ফোঁটা রক্ত থাকতে। ছাড়েনি। একেবারে রিকির মত।

কে করল কাজটা? বেরিয়েছিল তো কণিকার সঙ্গে।

সন্দেহটা সরাসরি কণিকার ওপরই পড়ে। তবে সে না-ও হতে পারে। মাত্র আগের দিন একইভাবে অ্যানি খুন হয়েছে এখানে। সে তো আর কারও সঙ্গে বেরোয়নি। তারমানে খুন করার পদ্ধতি বদল করেছে ভ্যাম্পায়ার। রাতে এসে ওত পেতে থাকে শিকারের আশায়। কাউকে একা পেলেই…

ঝট করে মাথা তুলে চারপাশে তাকাতে শুরু করল মুসা। নির্জন সৈকতে কোন মানুষের সাড়াশব্দ নেই। সে একা! তার রক্ত খাওয়ার জন্যেও আসবে না তো ভ্যাম্পায়ার!

একটা মুহূর্তও আর থাকতে সাহস করল না। লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ছুটতে শুরু করল লোকালয়ের দিকে।

.

১০.

পরদিন রাতে। পিজ্জা কোভে দুটো টেবিলে বসেছে টনি, রবিন, কিমি, ডলি, কণিকা আর মুসা। আলোচনা হচ্ছে ইমির মৃত্যুরহস্য নিয়ে।

মেইন স্ট্রীটের একটা পে ফোন থেকে থানায় ফোন করলাম, মুসা বলছে। মাথাটা তখন পুরো খারাপ আমার। ভয়ে, উত্তেজনায় থরথর করে। কাঁপছে হাত-পা। কথাও বলতে পারছিলাম না ঠিকমত।

যাই হোক, পুলিশ এল। নিয়ে গেলাম লাশের কাছে। ওদের কাজ শেষ হওয়ার পর আবার আমাকে নিয়ে গেল থানায়। চলল একটানা জিজ্ঞাসাবাদ। ডিটেকটিভ অফিসার ওকারিশের সন্দেহ আরও বেড়েছে আমার ওপর। বাড়বেই। দু দুটো খুন হলো। একজনের সঙ্গে শেষ দেখা গেছে আমাকে। তা ছাড়া দুজনের লাশই খুঁজে পেলাম আমি। ওকারিশের বোধহয় সন্দেহ, খুন করে রেখে এসে খুঁজে বের করার অভিনয় করেছি।

কথা শেষ করে সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল মুসা।

 কোন ভাবান্তর নেই ডলির।

রবিনকে আগের দিনের চেয়ে ক্লান্ত লাগছে। কণিকার পাশে বসে আছে চুপচাপ। চোখ লাল। মাথা সোজা রাখতেও কষ্ট হচ্ছে।

বার বার ওর গলার দিকে তাকাচ্ছে মুসা। পোলো শার্টের কলারের জন্যে আজও দেখা যাচ্ছে না দাঁতের দাগ।

কণিকার দিকে তাকাল সে। একটা পেপার ন্যাপকিন ছিঁড়ে কুটি কুটি করে এক জায়গায় জমাচ্ছে কণিকা। হাত কাঁপছে ওর। ভয়ে নাকি?

ভয় না কচু! মনে মনে রেগে গেল মুসা। অভিনয় করছে। দেখাচ্ছে আমাদের যে ওর কোন দোষ নেই।

মৃত্যুর আগে অ্যানির হয়েছিল তোমার সঙ্গে শেষ দেখা, বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল কণিকা, আর ইমির হলো আমার সঙ্গে। বিশ্বাসই করতে পারছি না।

এক টুকরো পিজ্জা বাড়িয়ে দিল রবিন। নাও।

আমি এখন কিচ্ছু মুখে দিতে পারব না, জোরে জোরে মাথা নাড়ল কণিকা। মনটা ভীষণ খারাপ।

ওর দিকে তাকিয়ে রইল মুসা। জানে, ভ্যাম্পায়াররা রক্ত ছাড়া কিছু খেতে পারে না। কণিকার চামড়া মোমের মত সাদা। যেন রক্তশূন্যতায়। ভুগছে। দিনের বেলা না বেরোতে পারলে, চামড়ায় রোদ না লাগলে এ রকম মড়ার মত সাদা হয়ে যায় মানুষের চামড়া।

 দীর্ঘশ্বাস ফেলল টনি। এখানে এসেছিলাম ছুটি কাটাতে। ভেবেছিলাম চমৎকার কাটবে দিনগুলো। কিন্তু কারোর মনেই আর আনন্দ নেই। সৈকতে টহল দিচ্ছে পুলিশ। লোকে আতঙ্কিত। সবার মুখে কেবল খুনের আলোচনা। ভ্যাম্পায়ারকে দোষ দিচ্ছে অনেকে।

ওফ, চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল কিমি, এক কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল! ভ্যাম্পায়ার বলে কোন কিছু থাকলে তো খুন করবে।

হায়রে কপাল, এখনকার দিনেও এই কুসংস্কার, আড়চোখে মুসার দিকে তাকাল ডলি। ভূত বলে কিছু নেই, সবাই জানে। তা-ও ভূতকে দোষ দেয়। বেকুব ছাড়া আর কি বলব ওদের।

বেকুব বলো আর যাই বলো, আমি ভূত বিশ্বাস করি, জোর গলায় বলল মুসা। সেটাকে আমি কুসংস্কারও বলব না। ভূত আছে এটা যেমন প্রমাণ। করতে পারেনি কেউ, নেই এটাও পারেনি। তবে, আছে, এটা আমি প্রমাণ করেই ছাড়ব এবার।

কণিকা তাকাল ওর দিকে। ভাবলেশহীন শূন্য দৃষ্টি। যেন মুসার কথায়। কোন আগ্রহ নেই ওর। বিরাট অভিনেত্রী। ভাবল মুসা। ডলিকে না দিয়ে নাটকের প্রধান চরিত্রটা ওকে করতে দেয়া উচিত ছিল।

সত্যি ভূত বিশ্বাস করো তুমি? কিমি জিজ্ঞেস করল।

করে, মুসার হয়ে জবাবটা দিল রবিন। ভূতের কথা শুনলেই চোখ উল্টে দেয়। অথচ ক্ষ্যাপা মোষের সামনে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দাও, ভয় পাবে না। এ এক আজব চরিত্র, আমাদের মুসা আমান।

দুনিয়াটা, সত্যি, আজব মানুষে বোঝাই।

চুপ করে রইল মুসা। মনস্থির করে নিয়েছে কারও ব্যঙ্গ, কারও হাসাহাসিতে কান দেবে না। তর্কও করবে না। যে যা বলে বলুক। তার কাজ সে করে যাবে।

উঠে দাঁড়াল কিমি। টনির হাত ধরে ওকে টেনে তুলল চেয়ার থেকে। চলো। আমাকে কার্নিভলে নিয়ে যাবে বলেছিলে।

সেটা কাল বলেছি। মনমেজাজ আজ ঠিক নেই।

চলো। গেলেই মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে। এখানে বসে এসব ফালতু আলোচনা করতে থাকলে বরং বিগড়াবে আরও।

তোমরা কেউ যাবে? সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল টনি।

কেউ যেতে চাইল না। টনিকে নিয়ে কিমি বেরিয়ে গেলে কণিকার দিকে ফিরল মুসা।

রবিনের সঙ্গে কথা বলছে কণিকা। কালো চুল। কালো চোখ। ফর্সা গাল। সুন্দর চেহারা। ওকে ভ্যাম্পায়ার ভাবতে কষ্ট হলো।

কিন্তু লীলাও সুন্দর ছিল।

তাই বলে কি ভ্যাম্পায়ার ছিল না?

আবার এক টুকরো পিজ্জা নিয়ে কণিকার দিকে বাড়িয়ে দিল মুসা, নাও।

বিরক্ত ভঙ্গিতে টুকরোটার দিকে তাকাল কণিকা।

মুসা জানত, এ রকমই করবে সে।

না, আমি খাব না, মাথা নাড়ল কণিকা। বললামই তো, খেতে পারব না।

খাও না, কণিকার মুখের কাছে টুকরোটা নিয়ে গেল মুসা। জোর করে। গুঁজে দেবে যেন। খুব ভাল বানানো হয়েছে। দারুণ টেস্ট।

না! বলে ঝটকা দিয়ে পেছনে মাথা সরিয়ে নিল কণিকা।

এক কামড় খেয়ে দেখো, চাপাচাপি শুরু করল মুসা।

খেতে যখন চাইছে না, থাক না, রবিন বলল, শুধু শুধু জোর করছ কেন ওকে?

আস্তে করে টুকরোটা প্লেটে নামিয়ে রাখল মুসা। চোখ কণিকার দিকে। ও বুঝে ফেলেছে, আমি ওকে চিনে ফেলেছি, ভাবছে মুসা। এখন নিশ্চয়। আমার মুখ বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাববে।

চিন্তায় পড়ে গেল সে। ভ্যাম্পায়ারকে সরাসরি যুদ্ধে আহ্বান! কাজটা কি ঠিক হলো? অ্যানি আর ইমির সৈকতে পড়ে থাকার দৃশ্যটা কল্পনা করে শিরশির করে উঠল মেরুদণ্ডের ভেতর।