৬. বাঘা শীত আর হাকুচ অন্ধকারে

বাঘা শীত আর হাকুচ অন্ধকারে একজন লোক গোপালহাটির রায়বাড়ির পশ্চিম দিককার একটা ঘরের জানলার গ্রিল খুব মন দিয়ে আধঘণ্টার চেষ্টায় নিঃশব্দে খুলে সরিয়ে ফেলতে পারল। তার হাতযশ কিছু কম নেই। মহল্লায় তার বেশ সুখ্যাতি আছে। একটু দম নিয়ে মা কালী আর বাবা বিশ্বকর্মাকে একটা করে নমো ঠুকে সে ‘দুর্গা’ বলে জানলার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। কিন্তু ঢুকেই তার একগাল মাছি। সামনেই চৌকিতে উবু হয়ে বসা একটা লোক তাকে জুলজুল করে দেখছে। তার ন যযৌ ন তস্থৌ অবস্থা।

উবু হয়ে বসা লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল, “ছ্যাঃ ছ্যাঃ, এই তোর কাজের ছিরি! একটা গ্রিল সরাতে আধঘণ্টা, রেওয়াজ করিস না নাকি? অমন হাঁচোড়-পাঁচোড় করে কি গেরস্তর ঘরে ঢুকতে হয় রে আহাম্মক? যেন পদ্মবনে হাতির প্রবেশ! তার উপর হাপরের মতো হ্যাঁ হ্যাঁ করে হাঁফাচ্ছিস! এটুকু মেহনতেই দমসম হয়ে গেলি বাবা? এসব দেখেই তো মাঝে-মাঝে আমার কাশী চলে যেতে ইচ্ছে হয়।”

লোকটা কাঁচুমাচু হয়ে বলল, “কোথায় ভুলটা হল বলুন তো?”

“আগাগোড়াই ভুল! তোর মাথা থেকে পা পর্যন্তই তো ভুল! গায়ে ঝুড়ি-ঝুড়ি মাংস, চালচলতি গদাই লস্করের মতো, হাত-পায়ে চটপটে ভাবটাই নেই। ঘরে যে একটা জাগা-মানুষ বসে আছে, সেটা অবধি আগাম টের পেলি না। তার উপর এত কসরত করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ঢুকলি কিনা একটা ভুল ঘরে?”

চোরটা যেন একটু আঁতকে উঠে বলল, “ভুল ঘরেই ঢুকলাম নাকি?”

“তা ঢুকিসনি! এ ঘরে যে চোরের অম্বুবাচী! তা কার কাছে তালিম নিয়েছিলি?”

চোরটা ভারী জড়সড় হয়ে বলল, “আজ্ঞে, নমস্য নবকান্ত গুছাইতের কাছে।”

লোকটা ভ্রূ কুঁচকে বলল, “পলাশডাঙার নব নাকি?”

“আজ্ঞে, তিনিই।”

“তা নব তো হ্যাঁন্যাকা লোক নয়, পেটে বিদ্যে আছে। তোদের দোষ কী জানিস? ভাল করে কাজ না শিখেই রোজগার করতে নেমে পড়িস! ওতেই তো ওস্তাদের বদনাম হয়।”

চোর মাথা চুলকে বলল, “শেখার তো ইচ্ছেও ছিল মশাই, কিন্তু পাপী পেটের যে তর সয় না। পেটের জ্বালাতেই নেমে পড়তে হয়েছে।”

“তাতে লাভ কী হল বল? মেহনতটাই তো জলে গেল?”

চোরটা এবার একগাল হেসে মাথা নেড়ে বলল, “না, জলে যাবে কেন? ঠিক জায়গায়, ঠিক মানুষটির কাছেই তো এসেছি।”

বটু সর্দার মিটমিটে চোখে চেয়ে বলল, “কী বলতে চাইছিস?” চোর হাত কচলে বলল, “ছেলেবেলা থেকে লোকের মুখে মুখে যার নাম শুনে আসছি, যাকে একবার চোখের দেখা দেখবার জন্য দশ মাইল দৌড় করতেও রাজি আছি, যার নাম শুনলে এখনও সাতটা মহল্লার লোক মাথা নিচু করে, সেই বটু সর্দারের কাছেই তো এসেছি, আজ্ঞে। একটু কেরানি দেখিয়ে আপনাকে ভেজাব বলে সোজা পথে না এসে একটু বাঁকা পথে আসতে হয়েছে।”

বটু সর্দার একটা বড় শ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে বলল, “বৃথাই হয়রান হলি বাবা! সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। তিন কুড়ি বয়স হল, বেজা মল্লিকের হুড়ো খেয়ে ভদ্রাসন ছেড়ে আলায় বালায় ঘুরে বেড়াচ্ছি, দলবল ভেঙে গিয়েছে। না রে, বটু সর্দার আর বেঁচে নেই।”

চোরটা টক করে বটুর পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে বলল, “আজ্ঞে, মরা হাতি লাখ টাকা।”

বটু গায়ের কম্বলটা আরও একটু জড়িয়ে বসে বলল, “তা তুই কে রে?”

“আজ্ঞে, আমার নাম কেদার। বাইরে আমার আরও এক বন্ধু আপনার শ্রীচরণ দর্শনের জন্য অপেক্ষা করে আছে। ফটিক। যদি অনুমতি দেন তো তাকেও ডাকি।”

“আর ধ্যাষ্টামো করতে হবে না। তুই কোন অনুমতি নিয়ে

ঢুকেছিলি? ডেকে আন, এই ঠান্ডায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।”

কিছুক্ষণ পরে আরও-এক ছায়ামূর্তি ঘরে ঢুকে একেবারে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করল বটুকে।

কেদার বলল, “আজ্ঞে, আমরা বেজা মল্লিকের লোক।”

বটু অবাক হয়ে বলল, “বেজা মল্লিক! সে তোদের পাঠিয়েছে নাকি? তা হলে আর দেরি কেন বাবারা, বন্দুক, পিস্তল, ছোরাছুরি যা

আছে বের করে ফ্যাল। আধমরা তো হয়েই আছি, বাকিটুকু তাড়াতাড়ি সেরে চলে যা। গয়েশপুরের গোরাং গনতকার বলেও ছিল বটে যে, তিন কুড়ি বয়সে আমার একটা জব্বর ফাঁড়া আছে।”

দু’জনেই পটাং করে তার পায়ের উপর পড়ে গেল। কেদার বলল, “না মশাই, না। আপনাকে মারলে যে আমাদের হাতে কুষ্ঠ হবে। বেজা মল্লিক আপনাকে খুন করতে পাঁচ হাজার টাকা কবুল করেছে বটে, কিন্তু আমরা ওর মধ্যে নেই।”

“তবে তোরা চাস কী?” কেদার গদগদ হয়ে বলল, “বিদ্যার জাহাজ আপনি। আমাদের একটু শিক্ষে-টিক্ষে দেন। রেচক, পূরক, কুম্ভক, বায়ুবন্ধন, সর্পভয়, সারমেয় ভয় নিবারণ, যোগিনীবিদ্যা, ঘুমপাড়ানি মন্তর, সর্পগতি, ব্যাঘ্রগতি, বানরগতি, হস্তলাঘব, পদলাঘব, কত কী জানা আছে আপনার! ওর ছিটেফোঁটাও যদি শিক্ষে করতে পারি, তা হলে কি আর বেজা মল্লিকের মতো পাষণ্ডের শাগরেদি করি? খুন, জখম, লুটপাট ছাড়া সে আর কিছু জানেই না। সত্যি বলতে কী, খুন-জখম, মারদাঙ্গা আমাদের মোটে সহ্য হয় না। এসব কাজে আর্ট নেই। মোটা দাগের কাজ।”

বটু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ওরে, আমার যে তিন কুড়ি…!”

“পায়ে ঠেলবেন না মশাই, অনেক বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়েছে। বেজা মল্লিকের শাগরেদ শ্যামলাল আপনার খবর বেজা মল্লিককে পৌঁছে দিয়েছে। বেজা মল্লিক আমাদেরই পাঠিয়েছে আপনাকে নিকেশ করতে। আমরাও সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছি। আপনাকে একবার চোখের দেখা দেখতে পাব বলে।”

বটু অনিচ্ছের সঙ্গে বলল, “তোরা বড় মুশকিলে ফেললি দেখছি।”

.

লোকে বলে, শশীমুখী নাকি বিড়ালের পায়ের শব্দও শুনতে পান। তা কথাটা খুব একটা মিথ্যেও নয়। শশীমুখীর কান বড় সজাগ। কান সজাগ, চোখ সজাক, নাক সজাগ।

মাঝরাতে কাছেপিঠে একাধিক লোকের নিচু গলায় কথা হচ্ছে শুনতে পেয়ে স্বামী অজয়পদকে ঠেলা দিলেন শশীমুখী। কিন্তু অজয়বাবুর ঘুম ভাঙল না। শীতকাতুরে রোগাভোগা লোক, হাঙ্গামা হুজ্জুতে ভয় পান। কিন্তু শশীমুখীর ভয়ডর বলে কিছু নেই। দরজার বাটামটা খুলে সেটাই বাগিয়ে ধরে ভিতরের বারান্দায় বেরিয়ে এলেন। তারপর সন্দেহজনক ঘরটার দরজায় কান পেতে সব কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলেন।

কিন্তু যা শুনলেন, তাতে সাহসিনী শশীমুখীরও বুক ধড়ফড় করতে লাগল, মাথা ঝিমঝিম করে সরষেফুল দেখতে লাগলেন। প্রায় মূৰ্ছাই যান আর কী! কোনওরকমে গিয়ে অজয়পদকে ঠেলে তুলে বললেন, “ওগো, গুরুপদ পোড়ারমুখো ও কোন সব্বোনেশে লোককে বাড়িতে এনে তুলেছে? এ যে চোরেদের সর্দার, ডাকাতদের চাই, খুনে বদমাশ গুন্ডাদের গুরুঠাকুর! এ যে খাল কেটে কুমির এনেছে গো!”

“অ্যাঁ! কী সর্বনাশ!”

“নিশুতরাতে ঘরে চোর-ঠ্যাঙাড়েদের পাঠশালা বসিয়েছে। প্রথমদিন দেখেই বুঝেছিলুম ও একটা মিটমিটে ডান। ওই আহাম্মক গুরুপদকে ভুজুংভাজুং দিয়ে এ বাড়িতে সুচ হয়ে ঢুকেছে, এবার ফাল হয়ে বেরোবে। বিশ্বাস না হয় আমার সঙ্গে এসো, নিজের কানে শুনে যাও…!”

অজয়পদ সভয়ে শশীমুখীর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন, “পাগল নাকি? ওসব শোনা খুব খারাপ।”

শশীমুখী ধমক দিয়ে বললেন, “তা বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে নাকি? গিয়ে একটু হাঁকডাক করো!”

অজয়পদ কুঁকড়ে গিয়ে বললেন, “সেটা কি ভাল দেখাবে? অন্যের কথাবার্তার মধ্যে নাকগলানো কি ভাল? ওঁরা হয়তো ভারী অসন্তুষ্ট হবেন। ভাববেন, অজয়বাবুর এ কীরকম ব্যবহার!”

“ভাবলে ভাবুক। তোমাকে এখন ওসব নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে, ওঠো তো, ওঠো!”

অজয়বাবু সিঁটিয়ে গিয়ে বললেন, “আচ্ছা, আচ্ছা, আগে সকালটা হতে দাও, তারপর তোকজন জড়ো করে না হয়…!”

“বলো কী? ততক্ষণে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে! এক্ষুনি লোকটাকে বাড়ি থেকে ঝেটিয়ে বিদেয় না করলেই নয়!”

“সেটা কি ঠিক হবে? শত হলেও অতিথি নারায়ণ!”

“নারায়ণ না বিভীষণ! এরকম অতিথিকে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদেয় করতে হয়।”

“তোমার তো ওই দোষ! চট করে উত্তেজিত হয়ে পড়ো। এমনও তো হতে পারে যে, বটুবাবু একটা চোরকে ধরে ফেলেছেন। ধরে এখন তাকে ঘরে বসিয়ে নানারকম সদুপদেশ দিচ্ছেন। তাতে চোরটার হয়তো ভারী অনুশোচনা হচ্ছে। সে হয়তো এখন চোখের জল ফেলতে ফেলতে কৃতকর্মের জন্য জ্বলেপুড়ে মরছে। তাতে হয়তো লোকটা ধীরে ধীরে ভাল হয়ে যাচ্ছে…?”

ঠিক এই সময় দরজার বাইরে থেকে কে যেন ভারী বিনয়ের গলায় বলে উঠল, “বড়কর্তা কি জেগে আছেন নাকি?”

অজয়পদ আঁক করে খানিকটা বাতাস গিলে ফেললেন। গলা দিয়ে স্বর বেরোল না। শরীরে স্তম্ভন। শশীমুখী তেড়ে উঠে বললেন, “কে রে?”

“আজ্ঞে মাঠান, আমি বটু সর্দার। বলছি কী, একগাছ দড়ি হবে মাঠান?”

“দড়ি! এত রাতে দড়ি দিয়ে কী হবে?”

“আর কবেন না মাঠান! দুটো অপোগণ্ড, এসে জুটেছে। আনাড়ির হদ্দ। তাদের একটু শিখিয়ে-পড়িয়ে দিচ্ছি আর কী। বন্ধন মোচন বিদ্যের কথা কি শুনেছেন মাঠান?”

“না বাপু, শুনিনি।”

“ভারী কাজের জিনিস মাঠান। পিছমোড়া করে বা হেঁটমুক্ত করে বেঁধে রাখলে কোন কায়দায় তা খুলে ফেলা যায় সেইটাই শেখাচ্ছি আর কী।”

“না বাপু, এ ঘরে দড়িদড়া নেই।”

“আছে বই কী মাঠান, খুব আছে। আপনার খাটের পায়ের দিকে ডান দিকের কোণে আলনার পিছনে দেওয়ালের পেরেকে ঝোলানো একটা চটের থলির মধ্যে হাত ঢোকালেই একগাছা মজবুত পাটের দড়ি পেয়ে যাবেন, আজ্ঞে।”

শশীমুখী চোখ কপালে তুলে বললেন, “কী সব্বোনেশে লোক দেখেছ!”

অজয়পদ ফাসফেসে গলায় বললেন, “দিয়ে দাও, চায় সব দিয়ে দাও, শুধু দড়ির উপর দিয়ে গেলে তবু রক্ষে।”

শশীমুখী কম্পিতবক্ষে উঠে দড়িগাছা জানলা গলিয়ে বারান্দায় ফেলে দিয়ে এসে অজয়পদর পাশে বসে বললেন, “ভয়ে আমার মাথা ঝিমঝিম করছে, আমি বোধ হয় মূৰ্ছাই যাব।”

অজয়পদ খিঁচিয়ে উঠে বললেন, “মূৰ্ছা যাবে মানে? গেলেই হল? আমার অনেকক্ষণ আগেই মূৰ্ছা পেয়েছে, এতক্ষণ চেপেচুপে ছিলুম। আগে আমারটা হয়ে যাক, তারপর তুমি!” বলেই অজয়পদ বিছানায় চিতপাত হয়ে মূৰ্ছা গেলেন।

কাকভোরে শশীমুখীর চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকের ঘুম ভাঙল। পাড়া-প্রতিবেশীরাও ছুটে এল দুদ্দাড় করে।

শশীমুখী উঁচু গলায় বলছিলেন, “ও গুরুপদ, এ কোন সব্বোনেশে লোককে বাড়িতে এনে তুলেছিস? এ যে চোরের সর্দার, ডাকাতের চাঁই, খুনে-গুন্ডাদের গুরুঠাকুর! খাল কেটে কুমির এনেছিস পোড়ারমুখো? সব যে ছারখার হয়ে যাবে রে!”

সদ্য ঘুম থেকে উঠে আসায় সবাই খানিকটা তটস্থ, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হতবুদ্ধি।

পাড়া-প্রতিবেশীদের দিকে চেয়ে শশীমুখী করুণ গলায় বললেন, “ওগো, তোমরা সব দাঁড়িয়ে দেখছ কী? শিগগির এই বজ্জাতকে বিদেয় করার ব্যবস্থা করো! নিশুতরাতে ঘরে চোর-ঠ্যাঙাড়েদের পাঠশালা বসিয়েছে গো! যত রাজ্যের চোর-ডাকাত নিশুতরাতে এসে জড়ো হচ্ছে।”

ব্যাপারটা বুঝে উঠতে লোকের একটু সময় লাগল বটে, কিন্তু তারপরই চারদিকে একটা চেঁচামেচি হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। গাঁয়ের মাতব্বররাও সব এসে জুটলেন। সব শুনে তাঁরাও আঁতকে উঠলেন, “সর্বনাশ! গোপালহাটিতে কি শেষে চোর-ডাকাতের আঁতুড়ঘর তৈরি হবে! কোথায় সেই বদমাশ? ধরে আন তাকে!”

দশ-বারোজন ছেলে-ছোঁকরা মুহূর্তের মধ্যে গিয়ে বটু সর্দারের ঘর থেকে তাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে এল।

“কী হে বটু, এসব কী শুনছি?”

বটু জুলজুল করে মাতব্বরদের মুখের দিকে চেয়ে মাথা নেড়ে বলল, “আজ্ঞে মাঠান, সত্যি কথাই বলছেন।”

“তোমার ঘরে রাতবিরেতে চোর-ডাকাতরা আসে?”

“যে আজ্ঞে।”

“তুমি তাদের চুরি-ডাকাতি শেখাও?”

“আর কী শেখাব, অন্য বিদ্যে তো জানি না।”

“সর্বনাশ! দেশ যে রসাতলে যাবে! ওরে, তোরা থানায় খবর দে।”

লোক থানায় খবর দিতে গেল বটে। কিন্তু তার আগেই বটুর উপর বিস্তর চড়চাপাটি, ঘুসি আর লাথি শুরু হয়ে গেল। কে যেন একবার চেঁচিয়ে বলার চেষ্টা করল, “ওরে, বুড়োমানুষ! মরে না যায়, দেখিস!”

কিন্তু কে শোনে কার কথা! হাটুরে মার যখন শুরু হয় তখন তাকে ঠেকানো ভারী শক্ত। বটুও ঠেকানোর কোনও চেষ্টা করল না। খানিক পর বারান্দার নীচে উঠোনে গড়িয়ে পড়ে গেল। কষ দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে, চোখ উলটে গিয়েছে, মুখে-চোখে রক্তাভা। দড়ি দিয়ে অচৈতন্য বটুকে বারান্দার থামের সঙ্গে ঠেস দিয়ে বেঁধে রাখা হল। লোকজন ঘিরে রইল পাহারায়।

একটু বেলার দিকে সেপাই নিয়ে যতীন দারোগা এলেন। সব শুনলেন মন দিয়ে। তারপর বটুকে গ্রেফতার করে নিয়ে চলে গেলেন।