ফটিকবাবুর বারান্দাটা বেশ চওড়া। জগা তার চট আর ছেঁড়া চাঁদরখানা যত্ন করে পেতে বিছানা করে ফেলল। ঝোলাখানাকে বালিশ করে শুয়ে পড়লেই হল! আজ মহেশবাবুর মায়ের কী একটা পুজো ছিল। ভরপেট খিচুড়ি খাইয়েছে। পেট ঠাণ্ডা থাকলে ঘুমটাও বেশ ভাল হয়।
জগা একটা হাই তুলল, তারপর স্বপ্নের কলটা ঝোলা থেকে বের করে মাথার পাশে রেখে শুয়ে পড়ল। পরেশবাবু কলটা ভুলই দিয়েছেন। জিলিপির বদলে জিবেগজার কল। তা হোক, জিবেগজাও তার দিব্যি লাগে।
এসব সাত-পাঁচ ভাবতে-ভাবতে যখন ঘুমটা বেশ ঘনিয়ে আসছে সেই সময়ে লোকটা এল। “এই যে জগা! কী খবর?”
জগা বিরক্ত হয়ে বলল, “ইস জিবেগজার স্বপ্নটা এইবারই শুরু হতে যাচ্ছিল, তা দিলেন তো বারোটা বাজিয়ে?”
লোকটা অবাক হয়ে বলল, “জিবেগজা! জিবেগজা হবে কেন? জিলিপি নয়?”
জগা এবার টপ করে উঠে বসে বলল, “আপনি কি পরেশবাবু?”
“হ্যাঁ, আমিই পরেশবাবু, তবে অনেকে নফরচন্দ্রও বলে।”
জগা খুশি হয়ে বলে, “আজ্ঞে, কলটা আপনি ভুলই দিয়েছেন বটে! এটা মোটেই জিলিপির কল নয়, জিবেগজার কল।”
“এঃ হেঃ, বড্ড ভুল হয়ে গেছে তো তা হলে! দাও তা হলে ওটা বদলে দিই।”
“জিবেগজাও বেশ লাগছে কিন্তু!”
“আরে দূর! এবার তোমাকে রাজভোগের কল দিয়ে যাব। রাজভোগের কাছে কি আর জিবেগজা বা জিলিপি লাগে?”
“তা সত্যি! রাজুভোগ হলে তো কথাই নেই।”
“তা ইয়ে, সেই কলটা গগনবাবুর ঘরে রেখে আসতে পারোনি বুঝি!”
“আজ্ঞে কী করি বলুন! কুকুরে এমন তাড়া করল যে, পালিয়ে বাঁচি না, তা বাগানে ফেলে এসেছিলুম। তারপর কী যেন গণ্ডগোল হয়েছে।”
লোকটা ভালমানুষের মতো বলল, “তাতে কী? এবার এমন ব্যবস্থা করে দেব যে, আর কাজ ভণ্ডুল হওয়ার জো নেই। এই যে দেখছ আমার হাতে, এটা হল ভূতযন্ত্র।”
জগা অবাক হয়ে দেখল, লোকটার হাতে কালোমতো বিটকেল একটা যন্তর বটে!
জগা বলে, “আজ্ঞে দ্রব্যটা কী?”
“এর ভেতর থেকে ভূত বেরোয়।”
“ওরে বাপ রে!”
“ভয় পেয়ো না। যন্ত্র যার হাতে থাকে ভূত তার ক্ষতি করে।”
“বটে!”
“এই যন্তরটা নিয়ে রাত নিশুত হলে গগনবাবুর বাড়িতে যাবে। দক্ষিণের ঘরে গগনবাবু শোয়। জানো তো?”
“খুব জানি।”
পরেশবাবু খিকখিক করে হেসে বললেন, “এবার আর স্বপ্ন নয়, গগনবাবুর ঘরে একেবারে জ্যান্ত ভূত ছেড়ে দিয়ে আসবে। এই যে দেখছ নল, এটা গগনবাবুর মাথার দিকে তাক করে এই যে ঘোড়াটা দেখছ এটা টিপে ধরবে। অমনই দেখবে একটা ঝলকানি দিয়ে আর শব্দ করে যন্ত্র থেকে ভূতের পর ভূত গিয়ে ঘরের মধ্যে কেমন নাচানাচি আর লাফালাফি করে। ব্যস, ওখানে কয়েকটা ভূত ছেড়ে দিয়েই পালিয়ে আসবে।”
জগা মাথা চুলকে বলল, “কুকুরটা যে তেড়ে আসে মশাই। আমি কুকুরকে বড্ড ভয় পাই।”
“সেই ব্যবস্থাও আছে। এই যে প্লাস্টিকের ব্যাগে একটুকরো মাংস দেখছ, কুকুরটা এলেই মাংসের টুকরোটা বের করে ছুঁড়ে দিয়ো। খেয়েই কুকুরটা নেতিয়ে পড়বে। তারপর আর ভয়টা কাকে? ভূতটা ছেড়ে দিয়েই চলে আসবে, পারবে না? সোজা কাজ। আর এই নাও কুড়িটা টাকা, কাল ভূপতির দোকানে গরম-গরম লুচি আর হালুয়া খেয়ো।”
জগা খুশি হয়ে টাকাটা ট্যাঁকে খুঁজে বলল, “খুবই সোজা-সোজা কাজ দিচ্ছেন। মাঝে-মাঝে শক্ত কাজও দেবেন।”
“এক আর বেশি কথা কী? তোমার মতো যোগ্য লোক আর আছেটাই বা কে! তা আজ রাতেই একটা শক্ত কাজ করবে নাকি? যদি করো তো আরও কুড়িটা টাকা আগাম দিয়ে যাই।”
“আজ্ঞে, কী যে বলেন! শক্ত কাজ না পারার কী আছে মশাই! সারাদিন আমি কত শক্ত-শক্ত কাজ করে বেড়াই। এই ধরুন, গাছে উঠে পড়লুম, ফের নেমে এলুম। তারপর ধরুন এই এত বড় একটা ঢিল তুলে ওই দূরে ছুঁড়ে দিলুম। তারপর ধরুন, দুধসায়র থেকে ঘটির পর ঘটি জল তুলে ফের দুধসায়রেই ঢেলে দিলুম।”
“বাঃ, এসব তো অতি কঠিন কাজ।”
“তা হলেই বলুন।”
“বলেই ফেলি তবে, কেমন? গগনবাবুর ঘরে ভূত ছেড়ে দিয়েই তুমি ভূত-যন্ত্রটা নিয়ে সোজা রাজবাড়িতে চলে যাবে।”
“তা গেলুম।”
“গিয়ে হরুয়া আর তার ভাই কেলোকে দেখতে পাবে। রাতে দু’জনেই থাকে। যন্ত্রটা তুলে ঘোড়া টিপে ধরে থাকবে, দেখবে গোল্লা-গোল্লা ভূত গিয়ে ওদের এমন তাড়া করবে যে, ভয়ে দুজনে মাটিতে কুমড়ো-গড়াগড়ি যাবে। সেই ফাঁকে হয়ার ট্যাঁক থেকে চাবিটা সরাতে তোমার একটুও কষ্ট হবে না। হবে নাকি?”
“আরে না, না, এ তো সোজা কাজ।”
“ব্যস, তোমাকে আর কিছু করতে হবে না। চাবিটা হাতে নিলেই আমি হাজির হয়ে যাব।”
জগা একটু ক্ষুব্ধস্বরে বলল, “কেন, শুলটা নিয়ে গিয়ে দুধসায়রের দ্বীপে রেখে আসতে হবে না? বামাচরণবাবুর সঙ্গে সেরকমই তো কথা ছিল।”
“না, না, সেসব আমিই করব’খন।”
“তা হলে কাজটা যে বেজায় সোজা হয়ে যাচ্ছে!”
পরেশবাবু একটু চিন্তিত হয়ে বলেন, “আচ্ছা, ভেবে দেখব’খন।”
“ভাবাভাবির কী আছে পরেশবাবু? পটল জেলের নৌকোটা ঘাটে বাঁধাই থাকে। শুলটা নৌকোয় চাপিয়ে বৈঠা মেরে পৌঁছে দেব’খন।”
পরেশবাবু উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আর দেরি করা ঠিক হবে না হে জগা। রওনা হওয়া যাক।”
“এই যাচ্ছি। আচ্ছা পরেশবাবু, আপনি লম্বা না বেঁটে?”
“কেন বলো তো?”
“ঠাকুরমশাই জিজ্ঞেস করেছিলেন। তা আমি বললুম, বেঁটে। কিন্তু উনি বলছেন, লম্বা। কোনটা ঠিক?”
“তোমার কথাই ঠিক। আমি বেজায় বেঁটে। তা হলে এবার বেরিয়ে পড়ো হে।”
“যে আজ্ঞে।” বলে যন্ত্র হাতে নিয়ে জগা রওনা হতেই পরেশবাবু টপ করে ঝোলা থেকে বোমাটা বের করে নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন।
আরও মিনিটদশেক বাদে হাঁফাতে-হাঁফাতে রসময় এসে হাজির হলেন। একটু দেরিই হয়ে গেছে তাঁর। লোকটা তাঁকে ভুলিয়েভালিয়ে মেঠো রাস্তায় অনেকদূর নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল। আচমকাই রসময়ের খেয়াল হল, এটা একটা কৌশল নয় তো! তাঁকে বেকায়দায় ফেলে অন্যদিকে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার মতলব। বুঝতে পেরেই তিনি আর দাঁড়াননি। তবে পথে কয়েকবার হোঁচট খেয়ে পড়ে এবং রাস্তা ভুল করে একটু সময় বেশিই লেগে গেল।
রসময় জগাকে তার বিছানায় না দেখে আশপাশে খুঁজলেন। লণ্ঠনের তেল ফুরিয়ে অনেকক্ষণ নিভে গেছে। অন্ধকারে কোথায় আর খুঁজবেন!!
বেশ কয়েকবার, “জগা, জগা!” বলে হাঁক মারলেন। কারও সাড়া পাওয়া গেল না। তাড়াতাড়ি গিয়ে জগার ঝোলাটায় হাত ভরে দেখলেন, বোমাটাও নেই।
কপাল চাপড়ে রসময় আপনমনেই বললেন, “নিয়তি কেন বাধ্যতে।”
সঙ্গে-সঙ্গে একটা জোরালো টর্চের আলো এসে পড়ল রসময়ের পায়ের কাছে।
মদন হাজরা বলে উঠলেন, “কী শ্লোকটা বললেন ঠাকুরমশাই?”
“এই আজ্ঞে বলছিলুম কি, নিয়তি কেন বাধ্যতে।”
“আহা হা, অপূর্ব! অপূর্ব! এইসব ভাল-ভাল কথা ছাড়া কি আপনাকে মানায়! লাখ কথার এক কথা। আমিও তো তাই বলি, ওরে পাপীতাপীরা, নিয়তি কেন বাধ্যতে। তোদের নিয়তিই তোদের খাবে রে বাপু! তবে কেন যে আমাদের এত হয়রান করিস, এত দৌড়ঝাঁপ করাস, হেদিয়ে মারিস, তা বুঝি না বাবা। ঠিক নয় ঠাকুরমশাই?”
“আজ্ঞে, আপনি দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, আপনার মুখ থেকে কি ভুল কথা বেরোতে পারে?”
“তা আপনার জগা কোথায়? “সেটাই তো সমস্যা। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।”
“তার মানে! সে গেল কোথায়?”
রসময় সরু গলায় বললেন, “বড়বাবু, আমার মনটা বড় কু গাইছে।”
“কু গাইছে! তার মানে কী?”
“আজ্ঞে, খারাপ কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে।”
“ওঃ তাই বলুন! আমি ভাবলাম এই রাতে আপনার বুঝি গানবাজনার শখ হল। কিন্তু কু গাইছে কেন?”
“আজ্ঞে, আমি বড় ভিতু মানুষ, আপনার মতো ডাকাবুকো নই। তো! অল্পেই বড় ঘাবড়ে যাই। তা ইয়ে, জগার ঝোলার মধ্যে বোমাটাও নেই।”
“অ্যাঁ! তা হলে কি সে বোমা নিয়ে খুনখারাপি করতে বেরিয়ে পড়েছে? এ তো বিপদের কথা হল মশাই! ওরে, তোরা সব চারদিকে ছড়িয়ে পড়, জগাকে খুঁজে বের করতেই হবে।”
সেপাইরা তাড়াতাড়ি যে যেদিকে পারে দৌড় লাগাল।
মদন হাজরা রসময়ের দিকে চেয়ে বললেন, “আচ্ছা ঠাকুরমশাই, ভূত বলে কি কিছু আছে?”
রসময় অবাক হয়ে বলেন, “আজ্ঞে, কখনও দেখিনি। তবে আছে বলেই তো শুনি। কেন বলুন তো বড়বাবু?”
মদন হাজরা মাথা নেড়ে বললেন, “আমি ভূতটুতে মোটেই বিশ্বাস করি না। কিন্তু কয়েকটা ছেলে গতকাল বাতাসা দ্বীপে পেয়ারা পাড়তে গিয়েছিল। সেখানে নাকি তারা একটা লম্বা সাদা ভূত দেখে ভয়ে পালিয়ে আসে। এদের মধ্যে আমার ছেলেও ছিল। কয়েকজন জেলেও বলছে, তারা দুধসায়রে মাছ ধরার সময় একটা ঢ্যাঙা ভূতকে বাতাসা দ্বীপে দেখতে পায় মাঝে-মাঝে। ভয়ে আর কেউ দ্বীপটার কাছে যায় না। ভাবছি, কাল একবার সরেজমিনে হানা দিয়ে দেখে আসি।”
“যে আজ্ঞে। গেলেই হয়। তবে কিনা আপনাকে যেতে দেখলে ভূত কি আর বাতাসা দ্বীপে ঠ্যাঙ ছড়িয়ে বসে থাকবে বড়বাবু? তারও কি ভয়ডর নেই।”
“পালাবে বলছেন?”
মাথা নেড়ে রসময় বললেন, “ভূতপ্রেত বলে তো আর তাদের ঘাড়ে দুটো করে মাথা গজায়নি যে, আপনার সঙ্গে মোকাবেলা করতে যাবে।”
কথাটায় বাড়াবাড়ি থাকলেও মদন হাজরা খুশিই হলেন। বললেন, “তা হলে আর গিয়ে লাভ কী?”
“কিছু না, কিছু না।”
বাতাসা দ্বীপের ভূতের কথা রসময়ও জানেন। তিনি এও জানেন, মদন হাজরা গিয়ে হাল্লা মাচিয়ে যা করবেন তাতে ভূতের কিছুই হবে না। বরং সাবধান হয়ে যাবে।
মদন হাজরা বিদায় নেওয়ার পর রসময় বারান্দায় বসে গভীর চিন্তা করলেন। তাঁর মনের মধ্যে একটা কিছু যেন টিকটিক করছে। ঠিক করতে পারছেন না।
জগাপাগলাকে পিস্তল দেওয়া হল বাঘ মারার জন্য? নাকি মানুষ মারার জন্য? শূলটা চুরি করতে গেলে জগাপাগলাকে গুলি চালাতেই হত। তা হলে কে মারা পড়ত? হরুয়া। বোমাটা গগনবাবুর ঘরে রেখে আসতে বলা হয়েছিল। কে মারা পড়ত? গগনবাবু। তা হলে একটা লোক কি আড়ালে থেকে দু-দুটো লোককে খুন করাতে চায়? তবে নিজে করছে না কেন? বোমা পিস্তল যখন আছে, তখন নিজেই তো খুন করতে পারে, জগাকে কাজে লাগাতে চাইছে কেন?
ভাবতে-ভাবতে মাথাটা বড্ড গরম হয়ে গেল।
জগা এখনও আসছে না। বোমাটাও ঝোলায় নেই। তা হলে কি জগাকে ফের কাউকে খুন করতে পাঠানো হল? এখানে এসে পৌঁছতে রসময়ের অনেক দেরি হয়ে গেছে। তার কারণ একটা লোক তাঁকে ভুলিয়েভালিয়ে অনেক দূরে নিয়ে ফেলেছিল। ওই লোকটাই কি পরেশবাবু? কিংবা বামাচরণ? ইতিমধ্যে পরেশবাবু কিংবা বামাচরণ এসে কি জগার মাথায় আরও একটা আষাঢ়ে গল্প ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে?
রসময় তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন। তিনি কি আগে হরুয়ার কাছে যাবেন? না কি গগনবাবুর কাছে? রসময় প্রথমটায় হরুয়ার কাছে যাবেন বলে রাজবাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন। তারপর ভাবলেন হরুয়া ডাকাবুকো লোক, রাত জেগে পাহারা দেয়। সুতরাং তার তো ভয় নেই। কিন্তু গগনবাবু বুড়ো মানুষ, ঘুমোচ্ছেন, তাঁরই বিপদ বেশি।
রসময় ফিরে গগনবাবুর বাড়ির দিকেই দ্রুতবেগে হাঁটতে লাগলেন। লণ্ঠন নেভানো, পথও অন্ধকার বলে রসময় খুব তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারছেন না। তবুও যথাসাধ্য পা চালিয়ে প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়লেন।
তারপরই হাঁক মারলেন, “জগা?”
সঙ্গে সঙ্গে কে একটা লোক উলটোদিক থেকে এসে তাঁর ঘাড়ে সবেগে পড়ল। ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেলেন রসময় চক্রবর্তী। মাজায় এমন মট করে উঠল যে, বলার নয়। কনুই। দুটোও ব্যথায় ঝনঝন করে উঠল।
অন্ধকারে লোকটা বলে উঠল, “দেখতে পান না? কানা নাকি?”
রসময়ের কানে গলার স্বরটা চেনা-চেনা ঠেকল। কার গলা এটা? আরে! এই লোকটাই না তাঁকে লক্ষ্মীপুজোর নাম করে ভুলিয়ে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল?
রসময় লোকটাকে একবার দেখতে চান। তাই কৌশল করে কাতর কণ্ঠে বললেন, “ওঃ বড্ড লেগেছে। একটু ধরে তুলবেন মশাই?”
“আহা! আমার কি কম লেগেছে নাকি?”
লোকটাকে ভাল করে চিনে রাখা দরকার। তাই রসময় বললেন, “অন্তত দেশলাই-টেসলাই থাকলে দিন না! লণ্ঠনটা একটু জ্বালি।”
“না মশাই, দেশলাই আমার কাছে থাকে না।”
রসময় আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। ব্যথা-বেদনা উপেক্ষা করে হঠাৎ লাফিয়ে উঠে লোকটাকে জাপটে ধরতে গেলেন। যা থাকে বরাতে!
কিন্তু লোকটা হঠাৎ নিচু হয়ে মাথা দিয়ে তাঁর পেটে সজোরে একটা ছুঁ মেরে হাওয়া হয়ে গেল। রসময় ফের পড়ে গিয়ে কাতরাতে লাগলেন। এবার দুনো চোট।
আর পড়ে থেকেই শুনতে পেলেন, গগনবাবুর বাড়ির দিক থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ আসছে। ট্যারারা-ট্যাট-ট্যাট … ট্যারা রা-ট্যাট-ট্যাট …। সঙ্গে একটা কুকুরের ভয়ঙ্কর চিৎকার।
কিসের শব্দ তা তিনি বুঝতে পারলেন না। তবে এ যে ভাল জিনিসের শব্দ নয়, তা বুঝতে বেশি বুদ্ধি লাগে না। শব্দটা অবশ্য মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হল না। তারপরেই কে একটা হুড়মুড় করে ধেয়ে এল এবং চোখের পলকে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।
রসময় কপাল চাপড়ালেন। যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। কণ্ঠেসৃষ্টে উঠলেন রসময়, সর্বাঙ্গে ব্যথা, তবু যথাসাধ্য ল্যাংচাতে-ল্যাংচাতে তাড়াতাড়ি হেঁটে গিয়ে গগনবাবুর বাড়ির বাগানের ফটক খুলে ঢুকলেন।