৬. আমি জনি স্যার

আমি জনি স্যার।

হ্যাঁ জনি, বলো।

আপনি যেরকম বলেছিলেন সেরকমই করেছি। অ্যানসারিং মেশিন চালু রেখেছিলাম, একটা ভয়েস রেকর্ড করা আছে। কিন্তু ভদ্রমহিলা আমাকে মোবাইলে ফোন করেননি।

কী রেকর্ড করতে পেরেছ?

শুধু একটা কথা, জনি আছে? তারপর সাইলেন্স।

 নম্বরটা দাও। আর টাইমটা।

জনি নম্বরটা দিল। এবং আধ ঘণ্টার মধ্যে শবর হানা দিল বালিগঞ্জের একটা এসটিডি বুথে।

আমি পুলিশের লোক। কাল রাত আটটার পর সাড়ে আটটার মধ্যে এই বুথ থেকে এক ভদ্রমহিলা কাউকে ফোন করেছিলেন। খুব কম সময়ের জন্য। সেই ভদ্রমহিলাকে কি মনে আছে?

বুথের ছোকরাটা ঘাবড়ানো মুখে বলে, না স্যার। মনে পড়ছে না।

 ভয় পেয়ো না, ঠান্ডা মাথায় ভাবো। খবরটা জরুরি।

ছেলেটা একটু ভেবে বলল, হ্যাঁ স্যার।

তাকে চেনো?

এ পাড়ারই মানুষ। তবে নাম ঠিকানা জানি না।

তোমার বুথ থেকে প্রায়ই ফোন করেন কি?

 খুব কম!

চেহারাটা কেমন বলতে পারো?

লম্বাচওড়া চেহারা স্যার, খুব ফরসা।

কোন দিক থেকে এসেছিলেন?

ওই পাশের গলিটা দিয়ে, ফোন করে গলিতে ঢুকে গেলেন।

উনি ছাড়া আর কোনও মেয়ে এসেছিল?

না স্যার। এখন চারদিকে অনেক বুথ খুলে গেছে, কাস্টমার নেই।

 ঠিক আছে।

আরও চল্লিশ মিনিট ধরে গলির বিভিন্ন দোকান আর বাড়িতে হানা দিল শবর। শেষে সোমা রায়ের নামটা জানা গেল। ঠিকানাও।

কলিং বেল টিপতেই একজন বাচ্চা মেয়ে দরজা খুলে বলল, কী চাই?

সোমা রায়।

এখন দেখা হবে না।

কেন?

বাথরুমে আছেন।

শবর দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকে বলল, ওকে বলো পুলিশের লোক এসেছে। জরুরি দরকার।

 মেয়েটা ভয় পেয়ে ছুটে গেল ভিতরে। শবর চারদিকে চেয়ে দেখল, বেশ সাজানো গোছানো রুচিশীল বৈঠকখানা। পয়সাওয়ালা মহিলা বলে মনে হয়।

একটু অপেক্ষা করতে হল। তারপর মুখে এক রাশ বিরক্তি আর থমথমে রাগ নিয়ে ফরসা, লম্বা, স্বাস্থ্যবতী এবং বেশ সুন্দরী ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকেই বেশ উঁচু গলায় বললেন, কে বলুন তো আপনি? কী চাই?

কয়েকটা কথা জানতে চাই।

কী কথা? শুনলাম আপনি পুলিশের লোক। পুলিশের কী দরকার আমাকে?

ঠান্ডা হয়ে বসুন ম্যাডাম। অত উত্তেজিত হবেন না। আমি তো আপনাকে অপমান করিনি।

আমার সময় নেই। এখনই বেরোব।

সেক্ষেত্রে আপনাকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করা হবে। সেটা কি সুবিধাজনক হবে বলে আপনার মনে হয়?

দাঁতে ঠোঁট চেপে কিছুক্ষণ রাগটাকে সামলে নিয়ে সোমা বলল, কিন্তু আমার অপরাধ কী?

 আপনার টেলিফোন আছে?

আছে। কেন?

ফোনটা কি ডেড?

না।

তা হলে কাল রাতে আপনি জনিকে ফোন করার জন্য কষ্ট করে টেলিফোন বুথে গিয়েছিলেন কেন?

পলকে ফ্যাকাশে হয়ে গেল সোমার মুখ।

কে বলল আমি বুথে গিয়েছিলাম?

 বুথের ছেলেটা আপনাকে দেখলেই চিনতে পারবে।

বাজে কথা।

জনির সঙ্গে আপনার কীসের দরকার?

জনি নামে আমি কাউকে চিনি না।

সুব্রত বকশি নামে কাউকে চেনেন কি? নাকি তাও না।

এসব কী হচ্ছে বলুন তো? রঙ্গ-তামাশা নাকি?

না, বরং খুব সিরিয়াস ব্যাপার।

আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।

 ঠিক আছে ম্যাডাম। আমি থানায় জানিয়ে দিচ্ছি যাতে তারা আপনাকে হাতকড়া পরিয়ে প্রকাশ্যে টেনে নিয়ে যায়। থানায় কাঠের বেঞ্চে বসে কথা বলতে বোধহয় আপনার সুবিধে হবে।

সোমার মুখে আচমকা রক্তোচ্ছ্বাস দেখা গেল। সিঁটিয়ে গিয়ে বলল, কেন এসব করছেন?

 স্পিল দা বিন। সুব্রত বকশিকে চেনেন?

সোমা দাঁতে ঠোঁট কামড়াল। তারপর হঠাৎ দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁপতে লাগল।

আমি কিচ্ছু জানি না… আমি কিচ্ছু জানি না।

আপনার পাসপোর্টটা নিয়ে আসুন।

সোমার অনেকক্ষণ সময় লাগল সামলাতে। তারপর গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে এল।

 বছরে আপনি ক’বার আমেরিকা যান?

বিজনেস পারপাসে ঘনঘন যেতে হয়।

বুঝলাম।

সুব্রতর সঙ্গে আমার একটা জয়েন্ট বিজনেস আছে।

হ্যান্ডিক্র্যাফটস?

হ্যাঁ। আর শাড়ি।

অরুণিমা বকশি কি আপনাকে চিনতেন?

হ্যাঁ।

কীরকম রিলেশান ছিল?

ভালই তো।

তা হলে তাকে মারতে হল কেন?

সোমা চুপ।

ডিভোর্স করলে অরুণিমার সম্পত্তি সুব্রতর হাতছাড়া হত বলে?

আমাকে ওসব জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ!

নয় কেন? আপনি একজন অ্যাকসেনসরি টু মার্ডার। একটা নয়, দুটো মার্ডার। মিহিরকে খুন করার জন্য আপনি জনিকে ফের ফোন করেছিলেন। অ্যানসারিং মেশিনে ওর মোবাইলে ফোন করতে বলায় আপনি ভয় পেয়ে ফোন কেটে দেন, কারণ মোবাইলে কলার-এর নম্বর উঠে যায় তাই না?

প্লিজ!

কী লাভ হল বলুন? অরুণিমা তার সব সম্পত্তি মিহিরের নামে ট্রান্সফার করে গেছে।

আমি কিছু জানি না। আমাকে ছেড়ে দিন।

সুব্রত আর আপনি দু’জনেই জেল খাটবেন, যদি ফাঁসি নাও হয়, কী লাভ হবে বলুন। সুব্রতবাবুর পাসপোর্টও এতক্ষণে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। আমি আপনারটা করছি। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।