৬৮তম অধ্যায়
বৃহন্নলাসারথি উত্তরের যুদ্ধযাত্রায় বিরাটবিমর্ষ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! মহাত্মা বিরাটরাজ সংগ্রামে ত্ৰিগর্ত্তদিগকে পরাজয় করিয়া প্রভুত ধন ও সমস্ত গোধন অধিকারপূর্ব্বক পাণ্ডব চতুষ্টয়ের সহিত হৃষ্টমনে স্বনগরে প্রবেশ করিলেন। প্রকৃতিগণ [প্রজাপুঞ্জ] ব্ৰাহ্মণদিগের সহিত তথায় আগমন করিয়া বিরাটরাজের আরাধনা করিতে লাগিলেন। বিরাট তাঁহাদিগকে প্রতিনন্দন করিয়া বিদায় প্রদানপূর্ব্বক অনতিবিলম্বে অন্তঃপুরে প্ৰবেশ করিলেন।
অনন্তর তিনি অন্তপুরচারিণীগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার প্রিয় পুত্র উত্তর কোথায় গমন করিয়াছে?” তখন তাঁহার স্ত্রী, কন্যা ও অন্যান্য সকলে কহিল, “মহারাজ! ভীষ্ম, কৃপ ও কর্ণ প্রভৃতি কৌরবগণ আপনার উত্তম-গোগৃহের সমস্ত গোধন হরণ করিয়াছে শ্রবণ করিবামাত্র রাজকুমার অতিমাত্র ক্রোধাবিষ্ট হইয়া বৃহন্নলা-সমভিব্যাহারে কেবল সাহস সহকারে বিজয়লাভার্থ প্ৰস্থান করিয়াছেন। বিরাটরাজ এই কথা কৰ্ণগোচর করিয়া একান্ত সন্তপ্তমনে মন্ত্রিগণকে সম্বোধনপূর্ব্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে মন্ত্রিগণ! আমার বোধ হয়, কৌরবগণ ত্ৰিগর্ত্তদিগের প্রস্থানসংবাদ শ্রবণ করিয়া সে স্থানে কদাচ অবস্থান করিবেন না। যাহা হউক, যাহারা আমার সহিত রণস্থল হইতে অক্ষতশরীরে প্রত্যাগমন করিয়াছে, এক্ষণে সেই সকল যোদ্ধৃগণ উত্তরের প্রাণরক্ষা করিবার নিমিত্ত বিপুল সৈন্যমণ্ডলীসমভিব্যাহারে যাত্রা করুক।”
এইরূপে মৎস্যরাজ চতুরঙ্গিণী সেনাগণকে প্রেরণের অনুমতি প্ৰদান করিয়া কহিলেন, “হে সৈন্যগণ! তোমরা ত্বরায় কুমার জীবিত আছে কি না, এই সংবাদ অবগত হইয়া আমার কর্ণগোচর কর; বোধ হইতেছে, যখন ক্লীব সারথি হইয়া তাহার সমভিব্যাহারে গমন করিয়াছে, তখন সে কদাচ জীবিত নাই।” ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ঈষৎ হাস্য করিয়া কহিলেন, “মহারাজ! আজি বৃহন্নলা রাজকুমারের সারথ্য স্বীকার করিয়া গমন করিয়াছে, অতএব অন্য কেহ আপনার গোধন হরণ করিতে পরিবে না। আজি আপনার আত্মজ সেই একমাত্র সারথির সাহায্যেই দেব, দানব, যক্ষ, সিদ্ধ ও সমস্ত কৌরবগণকে অক্লেশে পরাজয় করিতে সমর্থ হইবেন, তাহাতে সন্দেহ নাই।”
বিরাট নগরে বিজয়ঘোষণা
এই অবসরে দূত-সকল রাজসভায় সমুপস্থিত হইয়া রাজকুমার উত্তরের বিজয়-সংবাদ নিবেদন করিল। তখন মন্ত্রী বিরাটরাজকে বিজয় বার্ত্তা শ্রবণ করাইয়া কহিলেন, “মহারাজ! রাজকুমার উত্তর কৌরবগণকে পরাজয় ও গোধন-সকল গ্ৰহণ করিয়া সারথির সহিত আগমন করিতেছেন।” তখন রাজা যুধিষ্ঠির কহিলেন, “মহারাজ! আজি ভাগ্যবলে কৌরবগণ পরাজিত ও গোধন-সকল আনীত হইয়াছে। যাহা হউক, আপনার আত্মজ যে কৌরবগণকে পরাজয় করিয়াছেন, ইহা নিতান্ত অদ্ভুত ব্যাপার নহে; কারণ, বৃহন্নলা যাঁহার সারথি, নিশ্চয়ই তাঁহার জয়লাভ হইয়া থাকে।”
অনন্তর বিরাট নৃপবর হৃষ্টান্তঃকরণে দূতগণকে পারিতোষিক প্ৰদান করিয়া মন্ত্রিদিগকে কহিলেন, “এক্ষণে রাজপথে পতাকাসকল উড্ডীন ও পুষ্পোপহার দ্বারা দেবগণকে অর্চ্চনা কর। যোদ্ধা, অলঙ্কৃত গণিকা, বালক ও বাদকেরা উত্তরের প্রত্যুদ্গমন করুক। অধিকৃত [অধীন বিশ্বস্ত লোক] লোকেরা মত্তবারণে আরোহণ করিয়া চতুষ্পথে জয়-ঘোষণা করুক; আর উত্তরা উজ্জ্বল বেশবিন্যাস করিয়া কুমারীগণ সমভিব্যাহারে সত্বরে উত্তরকে আনয়ন করিবার নিমিত্ত গমন করুক।”
তখন রাজার আদেশক্ৰমে ভেরী, তূরী ও শঙ্খ সকল বাদিত হইতে লাগিল; প্রমদারা উত্তম-বেশে উত্তরের প্রত্যুদগমন করিল; সূত ও মাগধ-সকল রাজকুমারকে আনয়ন করিবার নিমিত্ত নগর হইতে বিনির্গত হইল। তখন মৎস্যরাজ প্রফুল্লমনে সৈরিন্ধ্রীকে আহ্বান করিয়া কহিলেন, “হে সৈরিন্ধ্রি! এক্ষণে অক্ষ আনয়ন কর; আমি কঙ্কের সহিত দ্যূতক্ৰীড়া করিব।” অনন্তর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির এই কথা শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “মহারাজ! শুনিয়াছি, হৃষ্ট ও ধূর্তের সহিত ক্ৰীড়া করা নিতান্ত অন্যায্য ও গৰ্হিত। আজ আপনাকে অতিশয় সন্তুষ্ট দেখিতেছি; অতএব আপনার সহিত কদাচ দ্যূতক্ৰীড়া করিব না। যদি অভিলাষ হয় বলুন, আমি অবশ্যই আপনার অন্য কোন প্রিয়ানুষ্ঠান করিব।”
বিরাট কহিলেন, “কঙ্ক! যদি আমার অভিলষিত দ্যূতক্রীড়াই না হইল, তবে অকিঞ্চিৎকর স্ত্রী, গো, হিরণ্য প্রভৃতি সমস্ত ধনসম্পত্তিরক্ষা করিবার প্রয়োজন কি? দ্যূতক্রীড়ায় সর্ব্বস্ব প্রদান করিলেও আমার কিছুমাত্র ক্লেশবোধ হয় না; অতএব আইস, আমরা উভয়ে অক্ষক্রীড়া করি।” কঙ্ক কহিলেন, “মহারাজ! বহুদোষাকর দ্যূতক্ৰীড়া করিয়া আপনার কি উপকার দর্শিবে? বরং উহা পরিত্যাগ করাই বিধেয়। বোধ হয়, আপনি শ্রবণ করিয়া থাকিবেন, পাণ্ডুনন্দন ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির দ্যূতাসক্ত হইয়া সমস্ত রাজ্য ও অমরোপম ভ্রাতৃগণকে হারাইয়াছেন; অতএব দূতক্ৰীড়া আমার নিতান্ত অপ্রীতিকর। অথবা যদি আপনার একান্ত অভিলাষ থাকে, বলুন, আমি এইক্ষণেই দ্যূতে প্রবৃত্ত হইব।”
বিরাট-যুধিষ্ঠির পাশবক্ৰীড়া
অনন্তর দ্যূতারম্ভ হইলে মৎস্যরাজ রাজা যুধিষ্ঠিরকে কহিলেন, “কঙ্ক! আজি আমার আত্মজ মহাবীর কৌরবগণকে রণস্থলে অনায়াসে পরাজয় করিয়াছে।” যুধিষ্ঠির কহিলেন, “মহারাজ! বৃহন্নলা যাঁহার সারথি, সংগ্রামে অবশ্যই তাঁহার জয়লাভ হইবে।” মৎস্যরাজ বারংবার এই কথা শ্রবণপূর্ব্বক ক্ৰোধে নিতান্ত অধীর হইয়া কহিলেন, “কঙ্ক! আমার পুত্ৰ উত্তর ভীষ্ম, দ্রোণ প্রভৃতি কৌরবগণকে কি নিমিত্ত পরাজয় করিতে অসমর্থ হইবে? তুমি আমার পুত্ৰকে আগ্ৰহ করিয়া ক্লীবের প্রশংসা করিলে, তোমার বাচ্যাবাচ্যজ্ঞান নাই; তুমি এক্ষণে আমারই অবমাননায় প্রবৃত্ত হইয়াছ। যাহা হউক, আজি বয়স্যভাবপ্রযুক্ত তোমার এই অপরাধ মার্জনা করিলাম; কিন্তু যদি জীবিতলাভের অভিলাষ থাকে, তাহা হইলে আর কদাচ এরূপ করিও না।”
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “মহারাজ! আচাৰ্য্য দ্রোণ, ভীষ্ম, অশ্বত্থামা, কৃপ, কর্ণ, দুৰ্য্যোধন ও অন্যান্য মহারথ রাজগণ এবং সুরসমূহ পরিবৃত দেবরাজ ইন্দ্রও যদি রণস্থলে উপস্থিত হয়েন, তাহা হইলে বৃহন্নলা ব্যতিরেকে তাঁহাদিগের সহিত কেহই যুদ্ধ করিতে সমর্থ হয়েন না। তাঁহার তুল্য বাহুবলসম্পন্ন আর কেহ হয় নাই ও হইবে না; ঘোরতর সংগ্রাম দর্শন করিলে তাঁহার মনোমধ্যে সাতিশয় হৰ্ষসঞ্চার হইয়া থাকে। যে ব্যক্তি একত্ৰ সমবেত দেব, দানব ও মানবগণকে অক্লেশে পরাজয় করিতে সমর্থ হয়, তাঁহার সাহায্যে কোন ব্যক্তি সংগ্রামে জয়লাভ না করিবে?”
যুধিষ্ঠিরললাটে পাশকাঘাত
বিরাট কহিলেন, “কঙ্ক! আমি বারংবার তোমাকে নিষেধ করিতেছি, তথাপি তুমি বাক্যসংযম করিতেছ না। বোধ হইতেছে, নিয়ন্তা না থাকিলে কোন ব্যক্তিই ধর্ম্মপথে প্রবৃত্ত হয় না। যাহা হউক, তুমি আর কদাচ এরূপ বাক্য প্রয়োগ করিও না।” মৎস্যরাজ এইরূপ ভৎসনা করিয়া ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের মুখমণ্ডলে অক্ষাঘাত [পাশা দ্বারা প্রহার] করিবামাত্র তাঁহার নাসিকা হইতে রুধিরধারা নিৰ্গত হইতে লাগিল, কিন্তু ঐ রুধিরধারা ধরাতল স্পর্শ করিতে না করিতেই তিনি অঞ্জলি দ্বারা গ্ৰহণ করিলেন। অনন্তর পার্শ্ববর্ত্তিনী দ্রুপদনন্দিনীর প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করিবামাত্র তিনি তাঁহার অভিপ্রায় অবগত হইয়া বারিপূর্ণ এক সুবৰ্ণপাত্রে সেই শোণিতধারা ধারণ করিলেন।
ইত্যবসরে রাজকুমার উত্তর বিবিধ পবিত্র গন্ধমাল্যে ভূষিত হইয়া স্বচ্ছন্দে নগরপ্রবেশ করিলেন। পুরবাসী ও জনপদবাসী স্ত্রীপুরুষগণ তাঁহাকে অর্চ্চনা করিতে লাগিলেন। এইরূপে রাজকুমার স্বীয় ভবনদ্বার সমুপস্থিত হইয়া পিতাকে সংবাদ প্ৰদান করিবার নিমিত্ত দ্বারবানকে আদেশ করিলেন। দ্বারী রাজপুত্রের আদেশানুসারে সত্বর মৎস্যরাজ-সমীপে গমনপূর্ব্বক কহিল, “মহারাজ! রাজকুমার উত্তর বৃহন্নলা সমভিব্যাহারে দ্বারে সমুপস্থিত হইয়াছেন।”
মৎস্যরাজ পুত্রের আগমনবার্ত্তা-শ্রবণে সাতিশয় প্রীত হইয়া কহিলেন, “দ্বারপাল! সত্বর উত্তর ও বৃহন্নলাকে আনয়ন কর; উহাদিগকে অবলোকন করিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ। হইতেছে।” তখন ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির দ্বারবানের কর্ণকুহরে [গোপন—কানের নিকটে] কহিলেন, “তুমি একাকী উত্তরকে আনয়ন কর; বৃহন্নলা যেন এ স্থানে আগমন না করেন। মহাবাহু বৃহন্নলা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন যে, সংগ্রাম ব্যতিরেকে যে ব্যক্তি আমার কলেবর হইতে শোণিত নিষ্কাশন বা আমার অঙ্গ ক্ষত করিবে, তিনি তাহাকে কদাচ জীবিত রাখিবেন না। অতএব বৃহন্নলা যদি এ স্থানে আসিয়া আমার অঙ্গে শোণিত সন্দর্শন করেন, তাহা হইলে অবশ্যই বিরাটকে অমাত্য ও বল-বাহনের সহিত সংহার করিবেন।”
অনন্তর উত্তর সভামণ্ডপে প্রবেশপূর্ব্বক পিতার চরণবন্দনা করিয়া কঙ্ককে প্ৰণাম করিলেন এবং দেখিলেন, তিনি শোণিতসিক্ত-কলেবরে ব্যগ্রচিত্তে একান্তে ধরাসনে আসীন রহিয়াছেন; সৈরিন্ধ্রী তাঁহার শুশ্রূষা করিতেছেন। তখন তিনি নিতান্ত সন্তপ্ত হইয়া সত্বর পিতাকে কহিলেন, “মহাশয়! কে ইহাকে প্রহার করিয়াছে? কোন ব্যক্তি এই প্রকার পাপানুষ্ঠান করিল?”
বিরাট কহিলেন, “বৎস! আমি তোমার বিজয়বার্ত্তাশ্রবণে পরম আহ্লাদিত হইয়া তোমার প্রশংসা করিতেছিলাম; তখন কুটিলস্বভাব এই ব্রাহ্মণ তাহাতে অনুমোদন না করিয়া কেবল বৃহন্নলার প্রশংসা করিল; আমি তন্নিমিত্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঁহাকে প্রহার করিয়াছি।”
উত্তর কহিলেন, “মহারাজ! আপনি ইহাকে প্রহার করিয়া নিতান্ত অকাৰ্য্য করিয়াছেন; শীঘ্ৰ প্ৰসন্ন করুন; নচেৎ দারুণ ব্ৰাহ্মবিষে [ব্রাহ্মণের রোষারূপ বিষে] সমূলে নির্মূল হইবেন, তাহাতে সন্দেহ নাই।
বিরাটের উত্তরবাক্যে যুধিষ্ঠির ক্ষমাপণ
মহারাজ বিরাট পুত্রের বাক্য-শ্রবণানন্তর ভস্মাচ্ছন্ন হুতাশনসদৃশ ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলে তিনি কহিলেন, “মহারাজ! আমি অনেকক্ষণ ক্ষমা করিয়াছি; আমার আর ক্ৰোধ নাই। যদি আমার রুধির ভূতলে নিপতিত হইত, তাহা হইলে আপনি অবশ্যই বিনষ্ট হইতেন, আপনার রাজ্যও উৎসন্ন হইয়া যাইত; আপনি আমাকে নিরপরাধে প্রহার করিয়াছেন, বটে, কিন্তু আমি তন্নিমিত্ত আপনার অণুমাত্র অপরাধ গ্ৰহণ করি না। ইহা প্ৰসিদ্ধই আছে, বলবান প্রভুরা সহসা অধিকৃতের উপর ক্রোধাপরবশ হইয়া উঠেন।”
যুধিষ্ঠিরের নাসিকানিঃসৃত শোণিত অপনীত হইলে বৃহন্নলা তথায় প্রবেশপূর্ব্বক বিরাট ও তাঁহার অভিবাদন করিলেন। মৎস্যরাজ বৃহন্নলাকে অভিনন্দন করিয়া তাঁহার সমক্ষেই সংগ্রামসমাগত উত্তরকে প্রশংসা করিতে লাগিলেন, “হে বৎস! তোমা হইতেই আমি পুত্রবান হইয়াছি; তোমার সমান পুত্ৰ আমার আর হয় নাই ও হইবে না। যিনি অহোরাত্ৰ যুদ্ধ করিয়া কদাচ শ্ৰান্ত বা ক্লান্ত হয়েন না, তুমি কি প্রকারে সেই মহাবীর কর্ণের সহিত সংগ্রাম করিয়াছিলে? এই মনুষ্যলোকে যাঁহার সমক্ষ যোদ্ধা বিদ্যমান নাই, তুমি কি প্রকারে সেই মহাবীর ভীষ্মের সহিত সংগ্ৰাম করিয়াছিলে? যিনি যাদব, কৌরব ও অন্যান্য ক্ষত্ৰিয়গণের আচার্য্য, তুমি কি প্রকারে সেই মহাবীর দ্রোণের সহিত সংগ্রাম করিয়াছিলে? যিনি সমস্ত অস্ত্ৰধারীর অগ্রগণ্য তুমি কি প্রকারে সেই মহাবীর অশ্বত্থামার সহিত সংগ্রাম করিয়াছিলে? যাঁহাকে নিরীক্ষণ করিলে হৃতসর্ব্বস্ব বণিকের ন্যায় অবসন্ন হইতে হয়, তুমি কি প্রকারে সেই মহাবীর কৃপের সহিত সংগ্রাম করিয়াছিলে? যিনি শর দ্বারা পর্ব্বত বিদীর্ণ করিতে পারেন, তুমি কি প্রকারে সেই মহাবীর দুৰ্য্যোধনের সহিত সংগ্রাম করিয়াছিলে? যাহা হউক, বলশালী কৌরবগণ আমার যে সমস্ত গোধন আত্মসাৎ করিয়াছিল, তুমি আমিষহর [মাংসাহারী-গো-মহিষাদি-গ্ৰহণকারী] ব্যাঘ্রের ন্যায় তাহাদিগকে দূরীকৃত করিয়া তৎসমুদয় প্রত্যাহৃত করিয়াছ; অতএব অরাতিগণ অবসন্ন হইয়াছে এবং সুখসেব্য অনুকূল সমীর প্রবাহিত হইতেছে, সন্দেহ নাই।”