৬৪তম অধ্যায়
হিমালয়স্থ ধনসংগ্রহে যুধিষ্ঠিরাদির যত্ন
বৈশম্পায়ন বলিলেন, এইরূপে পাণ্ডবগণ কিরণজালমণ্ডিত আদিত্যগণের ন্যায় অসংখ্য সৈন্যসমভিব্যাহারে পুর হইতে বহির্গত হইয়া রথনির্ঘোষে বসুন্ধরা প্রতিধ্বনিত করিয়া পরমানন্দে হিমালয়ের অভিমুখে গমন করিতে লাগিলেন। সূত, মাগধ ও বন্দিগণ স্তুতিবাদ করিতে করিতে তাঁহাদিগের সমভিব্যাহারে গমন করিতে লাগিল। ঐ সময় ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের মস্তকে শ্বেতচ্ছত্র সুশোভিত হওয়াতে তিনি পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় শোভা ধারণ করিলেন; অনুযাত্রিকগণ পুলকিত হইয়া ‘মহারাজের জয় হউক’ বলিয়া আশীর্ব্বাদ করিতে লাগিল এবং সৈনিকগণের কোলাহলে নভোমণ্ডল প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল।
অনন্তর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির ক্রমে ক্রমে অসংখ্য সরোবর, নদী, বন ও উপবন অতিক্রমপূৰ্ব্বক সেই সুবর্ণরাশিসম্পন্ন পৰ্ব্বতের সমীপে সমুপস্থিত হইয়া তপোবলসমন্বিত ব্রাহ্মণগণ ও বেদবেদাঙ্গপারদর্শী পুরোহিত ধৌম্যকে অগ্রসর করিয়া, তাঁহাদিগের আজ্ঞানুসারে উহাতে আরোহণ ও শিবির সংস্থাপন করিলেন। তখন মহর্ষি ধৌম্য ও অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ সেই শিবিরে শান্তিকাৰ্য্য সমাধানপূর্ব্বক রাজা, অমাত্য ও সৈনিকগণের যথোচিত বাসস্থান নির্দ্দেশ করিয়া আপনারা যথাস্থানে বাস করিতে লাগিলেন। ঐ সময় ধৰ্ম্মরাজের আজ্ঞানুসারে মদোন্মত্ত মাতঙ্গদিগের নিমিত্ত একটি স্বতন্ত্র শিবির সন্নিবেশিত হইল।
অনন্তর ধর্ম্মপরায়ণ যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণদিগকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “মহাশয়গণ! আমাদিগের এ স্থানে অধিককাল বাস করা কর্ত্তব্য নহে; অতএব আপনারা অবিলম্বে দেবদেব মহাদেবের আরাধনা করিবার এক শুভনক্ষত্রযুক্ত পবিত্র দিন নিরূপণ করুন। ধৰ্ম্মরাজ এই কথা কহিলে, তাঁহার হিতচিকীর্ষু ব্রাহ্মণগণ তাঁহার বাক্য-শ্রবণে আহ্লাদিত হইয়া তাঁহাকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! আজ অতি উত্তম দিন। অতএব আজ আমরা সলিল পান করিয়া অবস্থান করি; আপনারাও উপবাসী থাকুন।” ব্রাহ্মণগণ এইরূপ আজ্ঞা করিলে পাণ্ডবগণ তাঁহাদের বাক্যানুসারে সেই দিন উপবাস করিয়া কুশশয্যায় শয়নপূর্ব্বক বিপ্রগণের শাস্ত্রীয় আলাপ শ্রবণ করিতে করিতে রজনী অতিবাহিত করিলেন।